একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-১১+১২

0
389

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১১.
#writer_Mousumi_Akter

‘লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কথা শুনছেন,কেনো শুনছেন?আমার ব্যাক্তিগত কথা থাকতেই পারে কারো সাথে আপনি কান পাতবেন কেনো?

রোশান স্যার হাতা গোটাতে গোটাতে আড়চোখে আমাকে পরখ করে বললেল,

‘তোমার পারসোনাল কথা কি সব সময় আমাকে নিয়েই থাকে।আমি জেলাস ফিল করি,আমি রোমান্টিক, তোমাকে রাতে ঘুমোতে দিচ্ছিনা এসবের মানে কি সারাহ সিদ্দিকী।’

‘যা সত্য তাই ই বলেছি,আপনি কি কারো বর হওয়ার যোগ্য নাকি।’

‘বর হওয়ার যোগ্য হতে হলে কি করতে হবে আমাকে?রোমান্টিক হতে হবে।’
উনি ভ্রু উচিয়ে কথাটা বললেন।

‘বরেরা এরকম গম্ভীর,মুডি, থমথমে হয়ে থাকে না।আর অবশ্যই রোমান্টিক হতে হবে।’

উনি দু’পা এগিয়ে এসে থমথমে কন্ঠেই বললেন,

‘বর হবার যোগ্যতা আছে কিনা প্রুভ দেই।’

বলেই আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে উনার দিকে টেনে নিলেন।সাথে সাথে গিয়ে উনার বুকে আচড়ে পড়লাম আমি।ওষ্টদ্বয় গিয়ে উনার বুক স্পর্শ করল।হঠাত অজানা এক অনুভূতিতে শিউরে উঠলাম ।শরীরের লোমকূপ মুহুর্তের মাঝে জেগে উঠেছে।উনার গায়ে শার্ট থাকা সত্ত্বেও যেনো উনার শরীরের উষ্ণতা আমার ওষ্ট সম্পূর্ণভাবে অনুভব করেছে।আমি স্পষ্ট অনুভব করেছি আমার সামনে থাকা পুরুষটিকে আচমকা ভাবে চুমু খাওয়ার স্বাদ।কাউকে চুমু খেলে কি অনুভূতি এমন ই হয়।হঠাত ই লজ্জারা এসে দু’ঠোঁট জুড়ে নৃত্য শুরু করে।অস্বাভাবিক লাগে সব।বুকের মাঝে দুরু দুরু শব্দ হয়।শরীর অবস হয়ে আসে।এটা কি সবার ক্ষেত্রেই হয় নাকি শুধু উনার ক্ষেত্রেই এমন হল।শ্বাস-প্রশ্বাস সবটায় যেনো ভারী হয়ে এসছে।এক একটা নিঃশ্বাসের ওজন অনেক বেশী।উনি কি বুঝতে পেরেছেন আচমকা একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।আমার এতকিছু অনুভব হয়ে যাচ্ছে, উনার কি কিছুই অনুভব হচ্ছেনা।উনার হাতের আড়ষ্ট বাঁধন আমার কোমর চেপে ধরে রেখেছে। এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।যার গভীরতা অনেক।এই দৃষ্টিতেই আমাকে পুড়িয়ে ফেলতে যথেষ্ট। ওই চোখে আর বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাবেনা।সর্বনাশ হয়ে যাবে।এমনিতেও আমার আজন্মের ক্রাশ উনি,আমার প্রথম ভাল লাগা,প্রথম অনুভূতি, সবটাই উনি।আমার কিশোরি মনে প্রথম বার প্রেমাবেগের সৃষ্টি হয়েছিলো উনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ফলে।প্রেমান্দোলনের ঝড় উঠেছিলো মনে।আমার থেকে বয়সে এতটা সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমার হৃদয় ব্যাকুল হয়েছে উনার প্রতি।উনার প্রতি আমার দুইটা অনুভূতি এক বাইরের,দুই ভেতরের।বাইরের অনুভূতিতে আমি বিরক্ত, চরম বিরক্ত উনার প্রতি।ঝ’গ-ড়া করে জিতে যাচ্ছি আমি।অথচ ভেতরের অনুভূতিতে রয়েছে সুক্ষ্ম এক অনুভূতি, সুক্ষ্ম এক ভাল লাগা।যেখানে আমি হেরে বসে আছি।থর থর করে কাঁপতে থাকা হৃদস্পন্দন এর ভয়ানক গতি উনাকে বুঝতে দিবোনা বলে সরে আসার চেষ্টা করলাম কিন্তু ব্যার্থ আমি।পুরুষালি হাতের শক্ত বাঁধন আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।সরে আসার চেষ্টা করতেই আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন।উনার আর আমার মাঝে চুল পরিমাণ জায়গা নেই,যেখান দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবো।ভারী আর অবস হয়ে আসা কন্ঠ নিয়ে রিনরিনিয়ে বললাম,
‘আমাকে ছেড়ে দিন,ধরে রেখেছেন কেনো?’
উনি আমার কথার উত্তর দিলেন না।সেই চাহনিতে তাকিয়েই আছেন।
‘দেখুন ছাড়ুন,আর মিথ্যা কথা বলব না।সত্যি বলব না।আপনার নামে আর একটা কথা ও বলব না।’
‘এত ছটফটে মেয়ে হঠাত নিশ্চুপ হয়ে গেলে কেনো?’
‘আর ছটফট করব না ছাড়ুন আমাকে এইবার।’
‘ছাড়ব কেনো?’
‘কারণ আমার..’
‘কারণ কি?’
‘বললাম তো আর কিছুই বলব না,ছাড়ুন।’
‘তার আগে বলো এত নার্ভাস কেনো তুমি?কি সমস্যা। ‘
‘কি..কি..কিছুই না।’
‘যা ভাবছ তা নয় ওমেন,অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা টি আমিও টের পেয়েছি।’
সাথে সাথে আমার চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেলো।কি টের পেয়েছেন উনি।এরই মাঝে উনি আমাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে বললেন, ‘আজ তোমার এমন অবস্থা করব, জীবনে আমাকে নিয়ে আর মিথ্যা বলবেনা।’
উনি যে আমাকে কোলে তুলতেও পারেন এটা আমার কল্পনাশক্তির বাইরে ছিলো।এই লোকটার ব্যবহারে তো রীতিমতো থমকে গেলাম আমি।উনি কি সত্যি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেন নাকি অন্য কিছু।কি বোঝাতে চাইছেন উনি আমাকে।অন্য কিছু করার প্লান করছেন নাকি।সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলাম,
‘দে’খুন আমার সাথে কি উল্টা পালটা করার প্লান করছেন নাকি।বাংলা সিনেমার ভিলেন দের মতো।’
উনি আরো গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
‘ন্যারো মাইন্ডেড কথাবার্তা ছাড়া মাথায় আসেনা তাইনা?’
‘আপনি আমার মাইন্ড ন্যারো বললেন।’
‘তো কি বলব।আমি তোমার কে হই।বাংলা সিনেমার ভিলেন।’
‘না।’
‘তাহলে?’
‘বলব না আমি।’
‘না বললে ছাড়ব না আমি।’
‘আপনি জানেন না আপনি কি হন।আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেনো?’
‘আমি তোমার মুখে শুনতে চাই।’
‘আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেনো?’
‘তুমি আমাকে লজ্জা পাও।’
সাথে সাথে লজ্জায় দুইহাতে মুখ ঢাকলাম।আমাকে লজ্জামিশ্রিত হতে দেখে রোশান স্যার বলে উঠলেন,
‘উফফ!এই মেয়ে আমাকে খু’ন করে ফেলবে।একদম ফাঁসিয়ে ফেলছে এসব করে করে।’
আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে এক চোখ খুলে উনার মুখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম।আমি আবার কিভাবে ফাঁসালাম উনাকে কি অদ্ভুত।

এরই মাঝে রোহান ছুটতে ছুটতে আমাদের রুমে প্রবেশ করল।উনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে লজ্জায় স্বাভাবিক ভাব রাখতে হাত চালালেন চুলে।রোহান কে কোলে তুলে নিয়ে বললেন,

‘কি ব্যাটা বল খেলা শেষ।’

‘বড় পাপ্পা আমি আর বল খেলব না।’

‘কেনো?’

‘আমি বিয়ে করব বড় পাপ্পা।’

রোশান স্যার রিতীমত ভড়কে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি হেসে দিয়ে বললাম,

‘তোমার বড় পাপ্পা বুড়ো হয়ে বিয়ে করেছে।আর তুমি মায়ের পেটে থেকেই বিয়ে কর।’

‘বড় পাপ্পা বুড়ো নয়, নতুন আম্মা।বড় পাপ্পা নায়ক।’

‘তোমার নতুন আম্মার ধারণা আমি বুড়ো। ‘

‘বড় পাপ্পা তোমার বয়স কত?’

‘ত্রিশ হবে হয়ত।’

‘নতুন আম্মা তোমার?’

‘২১- ২২ চলে আমার।’

‘তাহলে আমি যাকে বিয়ে করব তার বয়স কত হবে?’

‘তোমাকে বিয়ের কথা কে বলেছে ব্যাটা।’

‘দাদু ভাই বলেছে,তোমার শ্বাশুড়ির সাথে আমার বিয়ে দিবে।’

আমি রোশান স্যার কে বললাম,

‘আম্মাকে গিয়ে বলুন তরী আমাদের সাথে যাবে।’

‘তাহলে বাড়িতে রান্না কে করবে?’

‘আপনি এতদিন বিয়ে করেন নি,নিয়ম অনুযায়ী আপনার ভাই এর ও বিয়ে করার কথা নয়।তাহলে কে রান্না করত এতদিন শুনি।’

‘আম্মা ই করত।’

‘দু’দিন আম্মা রান্না করলে কি খুব অসুবিধা হবে।’

‘না বাট,আম্মা আগুনের কাছে যেতে পছন্দ করেনা।’

‘ওহ আর তরী খুব পছন্দ করে তাইত।’

‘সেটাও না।’

‘আপনার যে না হওয়া প্রেমিকা ছিলোনা জিনাত।আম্মার ভাতিজি তাকে ফোন করে ডাকুন আর বলুন এসে রান্নাকরে দিয়ে যেতে।তবে শর্ত আছে, আপনি এ বাড়ি ত্যাগ করার বিশ মিনিট পরে সে এ বাড়িতে ঢুকবে।আবার আপনি ব্যাক আসলে বিশ মিনিট আগে বেরিয়ে যাবে।’

‘বিশ মিনিট আগে- পরে কেনো?’

‘কারণ আপনার শরীরের ঘ্রাণ যে এ বাড়িতে বাতাসে ছড়িয়ে থাকবে।সেটা ২০ মিনিটে বিলীন হয়ে যাবে।আমি চাইনা আপনার বাতাস ও ওর গায়ে লাগুক।আবাত জিনাত এ বাড়িতে থাকলে ওর বাতাস ও এ বাড়িতে থাকবে।তাই ও বেরিয়ে যাবার বিশ মিনিট পরে আপনি ঢুকবেন।তাহলে জিনাত ফিনাত এর দূষিত বাতাস ও আপনার গায়ে লাগবেনা।’

‘আল্লাহ কি ডা’কি’নী র হাতে ফেলেছো আমায়।’

ঘর থেকে বেরিয়ে শুনি তরী কাঁদতে কাঁদতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।তরীর হাত টেনে ধরে বললাম,

‘কি হয়েছে বেবি তরী।’

‘কিছুনা ভাবি।’

‘কথা লুকাও ক্যান। বলো আমায়।’

‘আম্মা পায়ে মালিশ করিয়েছেন এক ঘন্টা ধরে।মালিশ শেষ খাবার চাচ্ছেন।বললাম আম্মা একটু দেরি হবে এক ঘন্টা তো এখানেই কেটে গিয়েছে।আম্মা কাশার বাটি ছুড়ে মে’রে’ছেন।বিশ্রি গালি গুলো তো আছেই।খাওয়ার জন্য পড়ে আছি এই খোটা শুনে খাবার পেটে যায় না ভাবি।’

তরীর কপাল ফুলে উঠেছে খানিকটা।দেখেই র’ ক্ত টগবগ করে উঠল আমার।কোনো কথা না বলে রান্নাঘরে গিয়ে সমস্ত খাবারের ঢাকনা উঠিয়ে অতিরিক্ত লবন,মরিচের গুড়া,হলুদেদ গুড়া দিয়ে ভরে ফেললাম।ভাতে ও অতিরিক্ত লবন মেশালাম।আমাকে এমন পা’গ’ল পানা করতে দেখে তরী আমাকে বারবার আটকানোর চেষ্টা করল।কিন্তু আমার মাথা ঠিক নেই।সব ভেঙে চুরে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে।র’ক্ত টগবগ করে জ্বলছে।চোখে ভয়ংকর চাহনি,ঠোঁট জোড়া কাঁপছে।রাগে ফুসতে ফুসতে বললাম,

‘আজ খাওয়া ই বন্ধ সবার।’

‘ভাবি দাদু কি খাবেন।’

‘দাদু দুজন ই আমাদের সাথে যাবেন।হোটেলে খাওয়াবো।আগে এই শ্বাশুড়ি কে দেখে নেই আমি।’

খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।রোশান স্যার তার আম্মাকে বললেন,

‘আম্মা তরী রোহান আর দাদু আমাদের সাথে যাবে।’

‘কথাটা শুনেই শ্বাশুড়ির চোখ কপালে।সাথে সাথে বলে উঠলেন।না না বাবা।তরী গেলে কিভাবে হবে।ও যেতে পারবেনা।রান্না বান্না ঘর সামলানো এসব কে দেখবে।’

‘মাত্র দুজনের রান্না পারবেনা তুমি।জিনাত কে আমি ফোনে বলে দিবো।ও এসে হেল্প করবে।’

‘তরীর ভাল শাড়ি নেই।নতুন আত্মীয়ের বাড়ি যা তা পরে গেলে ইজ্জত থাকবেনা।’

‘কেনো নেই কেনো আম্মা।’

‘আমি তো টাকা দিয়ে দেই ওর হাতে।ও কি করে আমি জানিনা।ব্যাংক ব্যালেন্স গোছাচ্ছে।’

‘তরী ব্যাংক ও চিনে। ‘

তাদের কথা থামিয়ে দিয়ে বললাম,

‘তরী আমার শাড়ি পরবে।আর পথে গিয়ে ওর জন্য শপিং করব।’

ওশান বলল, ‘ও যেখানে যাবে আনকালচার এর মত চলাফেরা করবে।ওর যেতে হবেনা।’

রোশান স্যার চোখ তুলে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালেন ওশানের দিকে।ওশান মাথা নিচু করে রইলো।

এরই মাঝে সবাই খাবার মুখে দিয়ে শিটকে পড়ল।এমন জঘন্য স্বাদের খাবার আগে কেউ খায়নি বোঝায় যাচ্ছে।সবাই তরীকে কিছু বলার আগে বললাম,

‘আমি রান্না করেছি কেমন হয়েছে।’

রোশান স্যার বললেন,

‘অদ্ভুত।’

আমার দাদু বললেন, ‘দিদি তুমি এটা রান্না করেছো বিশ্বাস হয়না।’

‘চুপ করোতো দাদু।’

শ্বাশুড়ি বললেন, ‘আমি কি আজ না খেয়ে থাকব।এ খাবার তো খাওয়া যাচ্ছেনা।’

শ্বাশুড়িকে বললাম,

‘আম্মা লবন একটু বেশী হতে পারে কষ্ট করে খেয়ে নিন।খেতে খারাপ হয়নি।’

দাদু বললেন, ‘ হ্যা বউমা খেয়ে নাও।’ বলেই হেসে দিলেন।

মনে মনে লা লা লালালা গান গাইতে গাইতে ডায়নিং ছেড়ে উঠলাম।তরীকে আমার একটা শাড়ি পরিয়ে দিলাম।রওনা হলাম আমার আম্মু-বাবার কাছে।আমার প্রশান্তির শহরে।

চলবে?..

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১২.
Writer_Mousumi_Akter

সূর্যের তে*জ* স্ক্রীয় উত্তাপ চারদিকে, ঝলমল করছে ধরণী।সবুজ প্রকৃতির শিশির বিন্দু কণা শুকিয়ে গিয়েছে।সতেজ, প্রাণবন্ত লাগছে প্রকৃতি ।আকাশের বুকে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সারি সুপারি গাছ।গাছের নিচ টা সাদা চুনে ডিজাইন করা,দেখে মনে হচ্ছে কোনো পার্কের পাশ দিয়ে যাচ্ছি।সাদা রঙের প্রাইভেট কারটা দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে এই সারিবদ্ধ গাছের পাশ দিয়ে।তরী খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।শীতল বাতাস, আর মুক্ত পরিবেশ তরী ভীষণ ভাবে উপভোগ করছে।মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের পিপাসিত হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি নেমেছে,শীতল করেছে হৃদয় কে।মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব কিছু।তরীর ফর্সা শরীরে নীল রঙা শাড়িতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।মেয়েটার ভেতরে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে ছিলো, কেউ কোনদিন খেয়াল ই করেনি।এরা হলো আসল সুন্দরী, যার গায়ে নেই কৃত্তিম প্রসাধনীর কোনো অংশ,ন্যাচারাল ই নজরকাড়া রুপের অধিকারী।রোহান তরীর কোলে বসে চিপ্স খাচ্ছে।তরীর পাশে রোশান স্যারের দাদু বসে আছেন।ড্রাইভারের পাশে বসে আছেন আমার দাদু।আমি আর রোশান স্যার পেছনের সিটে বসে আছি।রোশান স্যার জানালার পাশে বসেছেন,এক হাত জানালায় কনুই ঠেকিয়ে আরেক হাত দিয়ে ফোন স্ক্রল করছেন।ওনার পরণে আকাশি রঙের পাঞ্জাবি। শ্যামবর্ণের শরীরে সুন্দরের কোনো কমতি নেই।আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।পাঞ্জাবীর হাতা ঘোটানো,কালো ফিতার ঘড়িটার দিকে নজর গেলো।হাতের লোমকূপের মাঝে ঘড়ি টার জন্য হাতের সৌন্দর্য্য যেনো বহুগুন বেড়ে গিয়েছে।এই শ্যামসুন্দর পুরুষ আমার স্বামি ভেবেই এক শিতল অনুভূতি হৃদয়ে নাড়া দিলো।সারাহ তুই অনেক ভাগ্যবতী, জীবনে যাকে ভাল লেগেছিলো তাকেই স্বামি হিসাবে পেয়েছিস।ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ছোটাছুটি করছে যেনো এক্ষণি বড় আকারে প্রকাশ পাবে।ভেতরের ভাল লাগা ভেতরে চেপে রাখতে ভীষণ ক*ষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে ইচ্ছে একটা খোলা জিপে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে পাখির মত ডানা মেলে বলি রোশান স্যার আপনার ব্যাক্তিত্ত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছিলো,আমার কিশোরী মনে প্রমান্দোলনের ঝড় তুলেছিলো,আপনি সেই পুরুষ যাকে দেখে বারেবারে মুগ্ধ হয়েছি আমি,নিজ যত্নে আপনার জন্য ভালবাসার ঘর বানিয়েছি হৃদয়কোণে।সেই ঘরে আপনার বসবাস।আমি রোজ যত্ন করি সেই ঘরের।রোশান স্যার ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন।কি ভ* য়া* ন* ক সেই চাহনি,কি স’*র্ব*’না’*শা সে চাহনি।সাথে সাথেই চোখে চোখ পড়ে গেলো দুজনের।আমি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম,উনিও দৃষ্টি ঘুরালেন।মিনিট খানিক পরে আমি আবার তাকালাম তাকিয়ে দেখি উনি ও তাকিয়েছেন আমার দিকে।আবার ও চোখে চোখ পড়াতে লজ্জা পেয়ে গেলাম।ইশ!কি লজ্জাটায় না পাচ্ছি।আমার না হয় উনাকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু উনি কেনো তাকিয়ে আছেন।এরই মাঝে উনি ভ্রু উচিয়ে তাকালেন,বাম ভ্রু নাচালেন।ভ্রু উচিয়ে বুঝালেন, ‘ তাকিয়ে আছো কেনো?’
ইশ!কি সাং *ঘা*তি*ক লজ্জা।কি বলব ভাবছি।উনি আবার ও ভ্রু ইশারা করলেন।কি বলব বুঝতে না পেরে বললাম, ‘ব”#মি আসছে।’
কথাটা শুনেই উনি অতি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, ‘হোয়াট।’
‘হ্যাঁ,আমি এসব মাইক্রো তে উঠতে পারিনা।মাথা ঘুরায় ব”@মি আসে।’
‘আগে বলবে না তুমি।ব”@মি’র ওষুধ নিতে পারতাম।’
‘ওসব এ ও কাজ হয় না আমার।সাং@ঘা@তি@ক ব’* মি হয়।’
‘পৃথিবীর কততম আশ্চর্যজনক ওমেন তুমি বলতে পারো।’
‘দেখুন আজে বা* জে কথা বললে কিন্তু আপনার উপর ক**রে দি*বো।’
‘এর চেয়েও নি*কৃ*ষ্ট কাজ বাসর ঘরে করেছো,এটাও পারবা তুমি।তোমার পক্ষে সব ই সম্ভব।’
‘আপনি কেমন স্বামি বলবেন?’
‘কি করলাম আবার।অভিযোগ বলা হোক।’
‘সকালে দেখলেন কিছুই খেলাম না।একবার ও জিজ্ঞেস করলেন না আমার ক্ষু-দা লেগেছে কিনা।আমার কষ্ট হচ্ছে কিনা।আমার বান্ধবীর হাজবেন্ড সেদিন কি পরিমান কাঁন্নাটায় না করল।শুধু মাত্র বান্ধবী না খেয়ে এসছিলো বলে।নিজেও না খেয়ে ছিলো।আবার ফোন করে বেসামাল কাঁন্নায় ভেঙে পড়ল।’
‘বউ না খেলে তার জন্য কাঁন্না করাটা সহজ নাকি বউ এর রান্না অখাদ্য খে* য়ে হ*জ*ম করা সহজ সারাহ সিদ্দিকী।’
এটুকু বলেই উনি ড্রাইভার কে বললেন,
‘ভাই বড়বাজারে গাড়ি থামান।’
‘ভাই আমার মনে আছে, আপনি তো প্রথমেই বলেছিলেন ভাল রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়াতে।’
রোশান স্যার এর কথায় ভেতর টা কেমন আ*ত*কে উঠল।বউ এর রান্না অখাদ্য মানে।উনি সকালের সেই জ*ঘ* ন্য খাবার খেয়েছিলেন।কিন্তু কেনো?আমি শ্যামসুন্দর পুরুষটির দিকে আবার ও তাকালাম।সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।গুরুগম্ভীর মানুষ কথা কম বলেও কেমন করে যেনো শ্রেষ্ঠ অনুভূতির জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।এই মানুষটাকে কি সৃষ্টিকর্তা বিশেষ কিছু দিয়েছেন।না আমার সাথে এখনো ভাল কথা হয়েছে না অন্য কিছু তবুও আমার রান্না খা*রা*প খাবার খে*য়ে হ*জ*ম করল। অথচ আমাকে ইমপ্রেস করতে একবার ও বলল না যে তোমার রান্না মানেই অমৃত আমার কাছে।
একটা শপিং মলের কাছে যেতেই রোশান স্যার বললেন, ‘ভাই গাড়ি থামান।’
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,
‘কেনো?’
‘তরীর শপিং করতে হবে বাড়ি থেকে একশ বার বললে টাকা বেশী করে নিন।আর এখন ভুলে গেলে।’
‘ওহ হ্যাঁ তাইতো।’
গাড়ি থেকে নামার সময় গাড়ির দরজা একশ বার টানাটানির পর ও খুলতে পারছি না।নিজের কাছে ল*জ্জা লাগছে যে উনি ভাববেন সামান্য গাড়ির দরজা ও খুলতে পারিনা।ড্রাইভার এসে বলল, ‘আপা দরজা লক ওভাবে খুলবেনা।আমি খুলে দিচ্ছি।’
ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই ওরা সবাই নামার পরে আমি নামলাম।পেছন থেকে মনে হচ্ছে শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছেন রোশ্যান স্যার।শুনেছি মানুষ বিয়ে করলে দারুণ বে-হা-য়া হয়ে যায়।লাজ ল*জ্জা সব বিসর্জন দিয়ে দেয়।যতই কঠিন পুরুষ হোক সুযোগ পেলেই বউ এর সাথে রোমান্টিকতা করতে চায়।উনিও কি পরিবর্তন হয়ে গেলেন।তাই বলে রাস্তাঘাটে এসব করবেন।দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
‘কি হচ্ছে কি এসব, অ*স*ভ্য*তা*র একটা লিমিট আছে।আপনি রাস্তা ঘাটে শাড়ির আঁচল ধরে টানাটানি করছেন।ছা*ড়ু*ন বলছি।’
এরই মাঝে দেখি রোশ্যান স্যার আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন মুখভর্তি বি-র-ক্তি নিয়ে।চোখে মুখে বি*র*ক্তি*র ছড়াছড়ি।ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ বি*র*ক্ত মুখে তাকিয়ে থেকে সামনে হাঁটা দিলেন।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখিয়ে আমার শাড়ির আঁচল গাড়ির দরজায় আটকে আছে।অতঃপর আরেক টি বাঁ#শ খাওয়ার গল্প।

গাড়ির দরজা থেকে শাড়ি বের করে নিয়ে উনার পেছনে হাঁটতে শুরু করলাম।ভেতরে যেতেই প্রত্যোক টা দোকানদার ডাকছে।এমন ভাবে ডাকছে যেনো ভিআইপি গেস্ট তাদের।যেনো কত আপ্যায়ন করবে।বিষয় টা আমার ভীষণ বি*র*ক্ত লাগছে।একজন পাঞ্জাবীর দোকানদার করুণ সুরে ডাকছে, ‘আপা, ও আপা। আসেন ভেতরে আসেন।’
প্রচন্ড বি*র*ক্ত হয়েই ভেতরে প্রবেশ করলাম আর বললাম, ‘বলুন কেনো ডেকেছেন?’
‘কি লাগবে আপা।’
‘শাড়ি আর থ্রী পিছ দেখান।’
‘সরি আপা।এটা শাড়ি-থ্রী পিছ এর দোকান না।’
তে** ড়ে গিয়ে বললাম, ‘এটা যখন শাড়ি-থ্রী পিছ এর দোকান না তাহলে ওভাবে কা*ঙা*ল এর মতো একজন মহিলাকে ডাকছিলেন কেনো?মহিলাদের কালেকশন নেই যখন মহিলাদের কেনো ডাকবেন।আমার কি সময়ের মূল্য নেই, আপনি আমাকে ডেকে আমার সময় নষ্ট করালেন।এখন আপনি যে জায়গা থেকে হোক শাড়ি এনে দিন।আমি শাড়ি না নিয়ে যাবো না।’
এরই মাঝে রোশান স্যার এসে থমথমে মুডে আমার হাত ধরে টেনে বললেন, ‘এসো আমার সাথে।’
দোকানদের কে বললেন, ‘ভাই সরি!কিছু মনে করবেন না।’
‘ভাই আল্লাহ জানেন আপনার সাথে কি করেন।’
দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে তরী আর দুই দাদু হেসে যাচ্ছেন।
অন্য একটা দোকানে গিয়ে শাড়ি দেখছি।শাড়ি সব পছন্দ হয়েছে।তরীর জন্য কতগুলো থ্রীপিছ আর শাড়ি নিলাম।এরই মাঝে দোকানদার বলে উঠল,
‘আরে আপা আপনি তো আর নতুন না।আমাদের দোকানে তো নিয়মিতই আসেন।দাম তো জানেন ই।’
সাথে সাথেই বলে উঠলাম,
‘আপনি কবে দেখেছেন আমাকে আপনাদের দোকানে।আমার জীবনে আজ প্রথম ই এসছি।এসব কি আপনাদের কমন ডায়লগ নাকি যে আসবে তাকেই এসব বলবেন।’
দোকানদার দারুণ লজ্জা পেয়ে বলল,
‘মনে হচ্ছে আপনি এর আগেও এসেছেন।’
‘না আসিনি,আপনাদের মনে হলে তো হবেনা ভাই।’
রোশান স্যার আড়চোখে আবার ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পরখ করে মুচকি হেসে দোকানদের কে টাকা দিয়ে বেরোনোর সময় বললেন,
‘ভাই নতুন কিছু চালু করেন।এখনের মেয়েরা বুঝে গিয়েছে আপনারা সবাইকেই সেইম কথা বলেন।’
হঠার একটা দোকানে টাঙানো মেরুণ কালারের পাঞ্জাবীর দিকে নজর গেলো।দোকানে গিয়ে পাঞ্জাবীর দাম দর ঠিক করার পর বলল,
‘আপা বিক্রি করি ৪০০০ টাকা আপনার জন্য ৩০০০ টাকা।কেনা দামেই দিচ্ছি।’
আবার ও মেজাজ খারাপ হল।আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এসব বলবে ঝ*গ*ড়া করব।তেজস্রী মুডে বললাম,
‘কেনো আমার জন্য কম কেনো?আমি কি বিশেষ কেউ।আপনার আত্মীয়, আপনার পরিচিত,আপনার বন্ধু না অন্য কিছু।কেনো কেনা দামে দিবেন সেই কইফত দিন।’
‘না আপা সবার সাথে তো ব্যবসা করা যায় না।কিছু কাস্টমার স্পেশাল। ‘
‘আমি স্পেশাল ওকে ফ্রিতে দেন।’
দাদু বললেন, ‘ভুলেও আর যাকে তাকে এসব বলে ব্যবসা করোনা ভাই।’
পাঞ্জাবীর টাকাটা রোশান স্যার দিতে গেলেও নিষেধ করলাম।নিজের টাকাতেই কিনলাম।রোশ্যান স্যার বললেন, ‘কার জন্য এটা।’
‘আমার প্রেমিকের জন্য।’
উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।

চলবে?