একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-১৩+১৪

0
346

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১৩.
#writer_Mousumi_Akter

খুব বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে খা’বে’ন নাকি? তাতে একটা মানুষের ছবি।সে মুঠোভর্তি নুডুলস নিয়ে বিরাট বড় হা করে নুডুলস মুখে দিচ্ছে।তার পাশে আরেকটা মেয়ে বিরিয়ানির প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে।প্লেট ভর্তি মুরগির আটটা লেগ পিস।দেখেই জিভে জল চলে আসার উপক্রম।মুরগির লেগ পিস দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা আমার।তার উপর বিরিয়ানি হলে তো কথাই নেই।ক্ষুধার্ত পেটে আমাকে এখন এই বিরিয়ানি খেতেই হবে।এটা না খেতে পারলে আজীবন বিরিয়ানি খাওয়ার আফসোস আমার থেকে যাবে।

রোশান স্যার আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“ভেতরে প্রবেশ করো।খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে, না হলে বাকি পথ মুখ চালাবে কিভাবে?”
বলেই উনি ভেতরে প্রবেশ করলেন।ওনার সাথে সাথে বাকিরাও প্রবেশ করল।তরীকে রোশান স্যার বললেন,
“কী খাবে তরী?”
আমি কিছু খাবোনা ভাইয়া।
খাবেনা বললে তো হবেনা।তুমি বলো কী খাবে?
সাদা ভাত আর মাছ খাবো।
ওকে।
সবার লক্ষ্য সাদা ভাতের দিকে কেনো?এখন কী করা যায়?কিভাবে বিরিয়ানি খাওয়া যায় তাই ভাবছি।রোহান কে ইশারা দিয়ে কাছে ডেকে নিয়ে আসলাম।রোহানের কানে ফিসফিস করে বললাম,
‘রোহান বাবু তুমি গিয়ে বলো আমরা সবাই বিরিয়ানি খাবো।খুব ভাল ভাবে জেদ ধরবা বুঝলা?
ঠিক আছে নতুন আম্মা।
রোহান ছুটে গিয়ে তার বড় পাপ্পার হাতের আঙুল ধরে ঘ্যানঘ্যান করে বলল, বড় পাপ্পা আমি কিন্তু বিরিয়ানি খাবো।
রোশান স্যার রোহান কে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে বললেন ব্যাটা এসব খেলে রাস্তায় গাড়িতে ব” মি হতে পারে।তুমি ইলিশের ডিম দিয়ে খাও।লেগ পিস খাও।
না আমি বিরিয়ানি খাবো পাপ্পা।
তরী একটু ধমক দিয়ে বলল, কী ব্যাপার রোহান? পাপ্পা কী বলছে তুমি শুনতে পাচ্ছোনা?
রোহান এবার জোরে ঘ্যান ঘ্যান করে উঠল না আমি বিরিয়ানি ই খাবো।
দুই দাদু এসে বললেন তোমরা যা খাবে খাও।আমাদের সাদা ভাত আর সবজি দাও খেতে।
তরী বলল, আমিও বিরিয়ানি খাবো না ভাইয়া।
রোহান বলল তোমরা কেউ ভালো না।আমার নতুন আম্মা আর আমি খাবো।
রোশান স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি কী খাবে?’
মিনমিন করে বললাম, ‘রোহান যখন বলছে আমি ওর সাথেই খাচ্ছি।’
টেবিলে গোল হয়ে বসে সবাই খাচ্ছি।বাকিরা মাছ, মাংস খাচ্ছে,আমি আর রোহান বিরিয়ানি খাচ্ছি।কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই বাটি খাসির মাংস দিয়ে গেলো।দেখে ভীষণ অবাক হলাম।বাহ!এখানকার রেস্টুরেন্ট গুলো কি দারুণ! আমাদের ওদিকে তো ১৮০ টাকা নেয় মাটান বিরিয়ানি, আর মোরগ পোলাও ১৪০।আর এদিকে তো দেখছি ফুল প্লেট মাটান এর সাথে এক বাটি করে খাসির মাংস এক্সট্রা দিচ্ছে।ছোঁয়া,মৃন্ময়,আর তন্ময় কে এখানকার খোঁজ দিতেই হবে।ইচ্ছা করছে এখনি ডেকে নিয়ে আসি।জীবনে প্রথম এত লাভে কিছু খাচ্ছি।রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম কোক হলে ভাল লাগত।
উনি আমার দিকে চোখ তুলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন বলেছি,দিচ্ছে।
ওয়েটার কোক দিতে আসলে রোশান স্যার বললেন
বিল টা হিসাব করোতো।
ওয়েটার দাঁড়িয়ে দঁড়িয়ে হিসাব করে বলল, বিরিয়ানি দুই প্লেট মাংস সহ ১০০০। আর আপনাদের ১০০০।
সাথে সাথে আমার মাথায় বজ্রপাত হলো।মাথার সেন্স হারিয়ে ফেলে চট জলদি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি?বিরিয়ানি ১০০০ কেনো?.ম্যাম খাসির বাটি ৩২০ করে, বিরয়ানির প্লেট ১৮০ করে।
এই দাঁড়ান।ফাইজলামি পাইছেন তাইনা?আপনারা বড় বড় অক্ষরে লিখে ঝুলিয়ে রেখেছেন মাটান ১৮০ ফুল প্লেট। আমরা তো তাই দেখেই অর্ডার দিয়েছি।চেয়েছি মাটান বিরিয়ানির প্লেট সাথে এক্সট্রা মাংস কেনো দিয়েছেন?যে কেউ ই ভাববে আপনারা বিরিয়ানির প্লেটের সাথেই দিচ্ছেন।
আপা আমরা দিয়ে রাখি,যার পোষায় সে খায়,না হলে ফিরিয়ে দেয়।’
ধান্দাবাজি খুলেছেন রেস্টুরেন্টের নামে?মানুষ না বুঝে খে’য়ে ফে’ল’বে আর আপনারা পরে টাকা নিবেন।শুনুন আমি সারাহ আমার সাথে এসব করে জিততে পারবেন না।আমি মাংসের টাকা দিবোনা।আমি চেয়েছি বিরিয়ানি মাংস কেনো দিয়েছেন? আমার লাগলে চেয়ে নিতাম।
‘আপা আপনার না লাগলে ফিরিয়ে দিতেন।’
‘নিন ফিরিয়ে নিন আপনাদের মাংস।’
‘আপা এঁটো করেছেন ফিরিয়ে নেওয়া যাবেনা।’
‘মাত্র দুই পিস খেয়েছি এঁটো হয়ে গিয়েছে তাতে?নিন আগে আপনাদের মাংস।৪২০ রেস্টুরেন্টের কিছু না বলে।মানুষ কে ধোঁকা দিয়ে টাকা নেওয়া।

তরী হেসেই যাচ্ছে,দাদুরাও হাসতেছে।রোশান স্যার ওয়েটারের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন যাও তুমি।আমি রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম টাকা দিলেন কেনো?ভুল ওদের ওরা টাকা পাবেনা।
আচ্ছা মানছি ওদের ভুল।চারদিকে মানুষ তাকিয়ে আছে খেয়ে নাও।তাছাড়া টাকা আমি দিচ্ছি।তুমি রাগ করছো কেনো?’
রাগ করব না?স্বামী হন আমার।
রোশান স্যার সাথে সাথে ঝলমল চোখে তাকালেন আমার দিকে।কাশি শুরু হলো উনার।নাকে ঝাল ঢুকে গেলো।আমার কথা কি উনার গলায় আটকে গেলো? আমি দ্রুত উনার মাথার তালুতে হাত রেখে পানি এগিয়ে ধরলাম উনার মুখে।উনি পানি খেয়ে বললেন,
“ধন্যবাদ।”
টেবিলে রাখা টিসু বক্স থেকে সবাই টিসু নিয়ে হাত মুখ মুছছে। আমার বরাবর অভ্যাস, রেস্টুরেন্টে গিয়ে বক্স থেকে টিসু গায়েব করা।
বক্সের অর্ধেক টিসু এদিক—সেদিক তাকিয়ে ব্যাগে নিয়ে নিলাম। কেউ আমার দিকে খেয়াল না করলে রোশান স্যার ঠিকই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। আমার দিকে ঝুঁকে এসে ফিস ফিস করে বললেন, ‘টিসু যত লাগে আমি কিনে দিবো। এখান থেকে রাখো।’
আমিও ফিসফিস করে বললাম, ‘এর মাঝে একটা মজা আছে আপনি বুঝবেন না। আপনিও কিছু নিয়ে নিন।’
‘তুমি যে আসলে কী! বুঝতে পেরেছি। এসবই সারাজীবন সহ্য করতে হবে।’

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পেটের মাঝে কেমন যেনো খারাপ লাগছে। রোশান স্যারকে বললাম, ‘একটা পান খাওয়ান আমাকে। খারাপ লাগছে খুব।’
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
‘তুমি পান খাবে?’
‘হ্যাঁ, আমি তো পান খাই। তিনবেলা করেই পান খাই। ভাত খাওয়ার পরে সুপারি আর জিরা খাই আমি। খেলে ভাল লাগে। না খেলে বমি হয়। কেনো তা জানি না।’
‘আস্তে বলো। বিবাহিত মেয়ে এভাবে বমির কথা বললে মানুষ কী ভাববে?’
‘কী ভাববে শুনি!’
‘ভাববে, যা ঘটার তা ঘটে গিয়েছে।’
‘আশ্চর্যজনক কথা!’

গাড়ি চলছে, রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। হাড়ি হঠাৎ হঠাৎ থেমে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খাচ্ছি বারবার।প্রচণ্ড অশান্তি লাগছে শরীরের মাঝে। চোখ—মুখ লাল হয়ে এসছে। মাথার মাঝে ঘুরছে। সাথে সাথে সুপারি মুখে দিলাম, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এখুনি সব বেরিয়ে আসবে পেট থেকে।ওদিকে রোহান বমি করেই যাচ্ছে। তরী রোহানকে বকা দিয়ে বলল,
‘আমি জানতাম, এসব খেয়ে পেট খারাপ হবে।নিজে তো অসুস্থ হলেই। তোমার জিদের জন্য তোমার নতুন আম্মার ও অসুস্থ লাগছে।
এরই মাঝে রোহান কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘আমার কী দোষ? সব দোষ নতুন আম্মার।আম্মাই তো আমাকে শিখিয়ে দিলো, রোহান তুমি কিন্তু বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য বায়না ধরবা। এবং আমাকে সাথে নিয়ে খাবে। আম্মা না শেখালে কি আমি বলতাম? আম্মারই খেতে ইচ্ছা করছিল।তাই আমাকে দিয়ে বলিয়েছে।
তরী রোহান কে বলল, ‘আর একটাও মিথ্যা বলবি না কিন্তু আম্মার নামে।’
রোহান আমার ইজ্জতটা এভাবে নষ্ট করে দিলো! রোহানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। এই বিচ্চু আমার ইজ্জত আর রাখল না। কী লজ্জার কথা! রোশান স্যার কী অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। এরই মাঝে হুড়হুড় করে বমি করে ভাষিয়ে দিলাম স্যারের গায়ের উপর। আমি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বমি যে কোথায় করছি; তার হিসাব নেই। রোশান স্যারের যে কী একটা অবস্থা! মুখের অদলে কী অদ্ভুত চাহনি! তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আল্লাহ জানে; উনার মনের অনুভূতি কী এই মুহুর্তে। কী অদ্ভুত উনার চোখের দৃষ্টি। ইতিহাসে রেকর্ড হওয়ার মতো ঘটনা।

চলবে?..

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১৪.
#writer_Mousumi_Akter

রোশান স্যার নাক সিটকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে,কি অদ্ভুত সে চাহনি!আমার তখন বেহাল অবস্থা।ড্রাইভার সীটের পেছন থেকে দ্রুত পলিথিন বের করে দিলো।তরী আমার মুখের সামনে পলিথিন ধরে বলল
‘ভাবি পলিথিন এ মুখ দিন।’
কে শোনে কার কথা আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্তি হারিয়ে রোশান স্যারের গলা জড়িয়ে ধরে যা করার তা উনার শরীরেই করেছি।ব” মি শেষ হবার পর মনে হলো যে বিষাক্ত কিছু পাকস্থলি থেকে বেরিয়েছে।খানিকটা দূরে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে ড্রাইভার গাড়ি থামাল।তরী আমার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভাবি মুখে চোখে মুখে পানি দিন। ভাল লাগবে।’
পানির বোতল হাতে নিয়ে আমার পাশে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ ছুটে যাচ্ছে।কি অদ্ভুত আর গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছেন!যেনো চোখ দিয়েই গি” লে ফেলবেন।আমি তো উনার দিকে তাকাতেই সাহস পাচ্ছিনা।পঞ্জাবীর বুকের কাছে কি বিশ্রী ভাবে ময়লা লেগে আছে।রোশান স্যারের দাদু বললেন,
‘কি দাদু ভাই বউকে কি বেশী প্রেম ভালবাসা দিয়ে ফেলেছো যে বদ হজম হয়ে গিয়েছে?
রোশান স্যার এবার তীব্র রাগী চোখে তাকালেন উনার দাদুর দিকে।দাদু বুঝতে পারলেন যে তার পোতা ভ* য়া* ন* ক ভাবে রেগে গিয়েছে।দাদু তার মোটা ফ্রেমের চশমা টা ঠিক করে নিয়ে সামনে তাকিয়ে হাসছেন।আমার দাদু এবার আমাকে বললেন, ‘এটা কী করলে তুমি? আমার ই তো রোশান কে দেখে বমি আসছে।এমন বিশ্রী কান্ড কেউ ঘটায়!
আমি দাদুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘দাদু আমার ও না বিশ্রি ভাবে ঘে*ন্না করছে।’
‘কেনো?’
‘উনাকে দেখে।উনার গায়ে বমি লেগে আছে।দেখলেই কেমন ওয়াক আসছে।’
আমার এই কথা শুনে রোশান স্যার যে কি অদ্ভুত রাগী চোখে তাকালেন তা কেউ না দেখলে বুঝতে পারবেনা।আমি আস্তে করে উনার পাশ থেকে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন সীটের সাথে।ভেবেছিলাম সীট চেঞ্জ করে দাদুকে এখানে দিয়ে আমি সামনে গিয়ে বসব।কিন্তু এই লোকটার মতিগতি কী? আমার হাত চেপে ধরে কি কঠিন ভাবে তাকিয়ে আছে।ড্রাইভার হেসে দিয়ে বলল,
‘ভাবি ভাইয়ের শরীরে ব’মি করে এখন বলছেন ভাইয়ের পাশে বসতে ঘৃণা করছে।’
‘তা ঘৃণা করলে কী করব?
‘এই হলো মানবতা।’
‘সব দোষ আপনার!আপনি দেখলেন আমার বমি ভাব হচ্ছে তবুও গাড়ি থামালেন না কেনো?’
‘গাড়ি তো থামাতেই গিয়েছিলাম কিন্তু স্যার ইশারা করলেন যেনো গাড়ি না থামায়।’
রোশান স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম
‘এমন ড্যাবড্যাব করে বিশ্রী চোখের ভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে আছেন কেনো?গাড়ি থামালেই তো জানালা দিয়ে বাইরে ফেলতে পারতাম।’
রোশান স্যার এবার চোয়াল শক্ত করে বললেন,
‘তোমার কি মনে হয় তুমি কোনো অঘটন না ঘটিয়ে থাকতে পারো?
‘কেনো কী করেছি আমি?
‘ওখানে একজন টেকো মাথার লোক ছিলো জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই উচ্ছিষ্ট গিয়ে ওই লোকের টাকের উপর পড়েছে।ওখানে গাড়ি থামালে কী হতো বুঝতে পারছো?
‘ওই লোকের ওখান দিয়ে যাওয়ার কী দরকার ছিলো? একটু পরে গেলে কী হতো?
‘এত কথা বলো কেনো তুমি?’
‘দেখুন আপনি আমাকে বাচাল মনে করতেই পারেন।এটা কোনো ব্যাপার না;যেহেতু আমি একটু কথা বলি বেশি।বাট বাচাল মানে এই না যে আমি ন্যাকা টাইপ কোনো মেয়ে।অনেকেই ভাবতে পারে আমি ন্যাকা।যারা ভাবে তারা জানেই না ন্যাকা আসলে কাকে বলে।
রিয়েলি তুমি ন্যাকা?জন্মগত কারো মাথায় প্রব্লেম না থাকলে তোমাকে ন্যাকা ভাববে না কখনো।ন্যাকা মানেই হয়ত জানেনা।যে মেয়ে এক রাতে আমাকে টাইট দিয়ে ফেলেছে সে মেয়ে ন্যাকা;যে মেয়ে কথায় কথায় প্রতিবাদ করে সে মেয়ে ন্যাকা।নাইস জোকস।’
‘এখান আপনি কী করবেন?এই পোশাকেই যাবেন?
এর চেয়ে যদি ড্রেনের নোংরা পানিতেও পড়তাম তাও বেটার হত।এই মুহুর্তে আমাকে গোসল করতে হবে,ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।’
‘ড্রেস চেঞ্জ করে কী পরবেন এখন?
উনি আমার কানের কাছে ঠোঁট এনে চাপা কন্ঠে বললেন
‘তুমি যদি আমার আন্ডারওয়্যার পরতে পারো তাহলে আমি কেনো তোমার শাড়ি পরতে পারব না।’
‘আরে বাহ!পরবেন?দারুণ হবে!ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে যাবে, প্রথম কোনো বর শাড়ি পরে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে।প্লিজ স্যার পরুন।
দাদু বললেন, আহা!আর ঝ’গ’ড়া করোনা কেউ।দাদু তুমি গাড়িতেই চেঞ্জ করে নাও। আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি।’
তরতর করে সবাই বেরিয়ে গেলো। আমি বের হতে গেলেই উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,
‘তুমি কোথায় যাচ্ছো?এখানে বসো,আর আমাকে সাহায্য করো।’
‘কী সাহায্য?
‘পাঞ্জাবী খুলতে সাহায্য করো।’
‘কেনো আপনি পারেন না?
‘পারি, তবুও তোমাকেই খুলে দিতে হবে।এটা তোমার জন্য শাস্তি।’
‘আমি কিভাবে খুলব?
‘যেভাবে খুলতে হয় সেভাবে।নাউ কুইক।’
আমি আস্তে করে উনার বুকের কাছে এগিয়ে গেলাম।পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো একটা একটা করে খুলতে শুরু করলাম।উনি নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন আমার চোখের দিকে।কাজটা তো নিজেও পারত।তবুও আমাকে দিয়েই করাচ্ছেন।ইচ্ছা করেই করাচ্ছেন।পাঞ্জাবীর বোতাম খুলতেই উনার পশমে আবৃত উন্মুক্ত বক্ষস্থলে দৃষ্টি গেলো।কেমন যেনো না চাইতেই আমি তাকিয়ে আছি সেদিকে।চোখ বার বার উনার বুকের দিকে গিয়ে আটকে যাচ্ছে।ইশ! কি লজ্জা। মুহুর্তের মাঝেই আমার মুখশ্রী লজ্জামিশ্রিত রূপ ধারণ করলো।উনার বুকে হাত রেখেই আমি অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরালাম।আড়চোখে পরখ করলাম রোশান স্যার নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।কি ভয়ানক সে চাহনি!হঠাৎ হৃদপিন্ড ধুক করে উঠল,শিউরে উঠলাম আমি।উনার বুকে আমার হাত;উনি উনার হাত আমার হাতের উপর রাখলেন আর আলতো করে উনার বক্ষস্থলে চেপে ধরলেন।মুহূর্তের মাঝেই সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল আমার।কি অদ্ভুত এক অনুভূতি!যা আমার শরীরে ভয়ংকর এক ভাললাগার শিহরণ ছড়িয়ে দিলো।আমার হৃদয়ে প্রথম এমন তুফানের মত অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে।তোলপাড় করছে হৃদয়ের মাঝে।ওষ্টদ্বয়ে ভাললাগার এক হাসি,যাতে লজ্জার মিশ্রণ ।লুকায়িত অনুভূতি কি এখনি উনি বুঝে ফেলবেন!

আমাকে চুপ দেখে রোশান স্যার বললেন,

“হঠাৎ এমন নিশ্চুপ হয়ে গেলে কেনো?তাকাও এদিকে।’

‘হাত টা ছাড়ুন।’

‘কেনো ছাড়ব;যা করলে আমার সাথে ছাড়া কি উচিত?’

‘আমি ইচ্ছা করে করিনি।’

‘তাহলে পাঞ্জাবী চেঞ্জ করিয়ে দাও।’

‘মানুষ দেখলে কী ভাববে বলুন তো?’

‘কী ভাববে?’

‘ভাববে যে রাস্তাঘাটে..’

‘রাস্তাঘাটে কী?’

‘কিছুনা।আপনি আমাকে ছোট পেয়ে লজ্জা দেন শুধু।’

‘লজ্জা পাবে কেনো তুমি?লজ্জা পাওয়ার কারণ কিন্তু বুঝলাম না।’

‘কিছুই বুঝতে হবেনা।চেঞ্জ করুণ আপনি।’

উনি পাঞ্জাবী খুলতেই আমি একবার উনার দিকে তাকালাম।খালি গায়ে এই শ্যামসুন্দর পুরুষের দেহে চোখ লেগে গেলো আমার।মুহুর্তের মাঝেই চোখ সরিয়ে নিলাম। উফ!আমার এত লজ্জা করছে কেনো?
উনি পাঞ্জাবী চেঞ্জ করে অন্য আরেকটা পাঞ্জাবী সুটকেস থেকে বের করে পরে নিলেন।আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কিছুই না বলে উনার দুই হাত দিয়ে আমার হাত দুটো ধরে উনার বুকের কাছে নিয়ে বললেন, ‘বোতাম লাগিয়ে দাও।এটা শাস্তি তোমার।’
লজ্জায় উনার মুখের দিকে না তাকিয়ে বোতাম গুলো লাগিয়ে দিলাম।আর উনি তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।আমি আর কথা বলতে পারলাম না।সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে,হৃদপিন্ড দ্রুত বেগে কাঁপছে।তরীরা আবার গাড়িতে উঠল।গাড়ি চলছে আবার নিরিবিরি গতিতে।দুই দাদু, ড্রাইভার আর রোশ্যান স্যার গল্প করছেন।আর আমি হারিয়ে গিয়েছি যেনো অন্য কোনো এক জগতে।

চলবে?..