এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব-০১

0
580

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_১
#নিশাত_জাহান_নিশি

বান্ধবীর ছোটো বোনের জন্মদিনে এসে আস্ত এক পা’গ’ল, নে’শা’খো’র এবং মা’স্তা’ন টাইপ ছেলের খপ্পড়ে পড়তে হবে বুঝতে পারেনি অয়ন্তী! বাড়ির নিচতলার সিঁড়িতে থাকা টিউব লাইটের টিমটিমে আলোতে ছেলেটির আবছা মুখমণ্ডল অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে! হাতের তালু কেটে গড়গড়িয়ে র’ক্ত পড়ছে ছেলেটির! দেখে মনে হচ্ছে যেন একটু আগেও সু’ই’সা’ই’ড করার চেষ্টা করেছিল সে! নে’শা’খো’র’দে’র মত সর্বাঙ্গ আলুথালুভাবে কাঁপছে তার। বিপুল বেগে শ্বাস-নিঃশ্বাস ফেলছে। ক্রমশ যেন হাঁপিয়ে উঠছে সে। পা’গ’লা’গা’র’দ থেকে পালিয়ে এসেছে দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে! এমন ভ’য়ং’কর পরিস্থিতির মুখোমুখিতে পড়ে ভয়ে কাকভেজা হয়ে অয়ন্তী দু’কদম পিছু হঁটতেই ছেলেটি এক ঝলকে দৌঁড়ে এসে অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়ালো! নিশ্চল চাহনী তার। তবে একঢাল উৎসুক ভঙ্গি! কেমন যেন অধীর গলায় সে অয়ন্তীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আচ্ছা আপনাদের এলাকায় কোনো বা’র-টা’র নেই? যেখানে নিশ্চিন্তে বসে একটু নে’শা ভা’ন করা যাবে?”

ছেলেটির বেফাঁস কথাবার্তায় ভড়কে উঠল অয়ন্তী! অবিন্যস্ত দৃষ্টিযুগল ফেলল ছেলেটির গোলন্দাজ দৃষ্টি জোড়ায়। জীবনে প্রথমবার এরকম উদ্ভট প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তাই পরিস্থিতি বুঝে উঠতে খানিকটা বেগ পেতে হলো তার! নিজেকে কিঞ্চিৎ ধাতস্থ করে অয়ন্তী ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। কম্পিত গলায় শুধালো,,

“মামামানে?”

দাঁতে দাঁত চেপে সামনে চুলগুলো টেনে ধরল ছেলেটি। র’ক্তে’র আংশিক ফোঁটা তার চুলেও টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল। অপ্রত্যাশিতভাবেই ছেলেটি তার বাম হাতের কা’টা অংশটিতে ডান হাত দ্বারা সজোরে এক চা’প দিলো! পৈ’শা’চি’ক আনন্দের ছাপ দেখা গেল ছেলেটির বিস্তীর্ণ মুখমণ্ডলে। তাজ্জব হয়ে অয়ন্তী তাকিয়ে রইল ছেলেটির নিষ্ক্রিয় দৃষ্টির পানে। ব্যথা, বেদনা কী নেই ছেলেটির দেহে? কা’টা জায়গাটিতে এভাবে নির্দ্বিধায় এতটা বি’চ্ছি’রিভাবে আঘাত করতে পারল? বিপরীতে তবু উহ্ আহ্ শব্দটুকুও করলনা? কিঞ্চিৎ মুখভঙ্গিও পাল্টালো না? বিন্দুমাত্র অনুভূতি শক্তিও কী নেই তার মধ্যে? এ আবার কেমন ধরনের মানুষ হ্যাঁ? যার মধ্যে কোনো অনুভূতি শক্তি-ই নেই! এমন পা’গ’লা’টে ধরনের পুরুষ মানুষ তো অয়ন্তী তার জীবদ্দশায় দেখেনি। তালু থেকে হাত সরিয়ে ছেলেটি রুদ্ধশ্বাস ফেলল। অধৈর্য গলায় জবাবে বলল,,

“মানে, আমাকে এক্ষণি বা’রে যেতে হবে। এট অ্যানি কস্ট। ম’দে’র নে’শা চড়ে বসেছে মাথায়। এই সময়ে আমার মাথা ঠিক থাকেনা। প্লিজ হেল্প মি। মাথা গরম হয়ে গেলে আই ডোন্ট নো কী থেকে কী করে বসি!”

বলেই মাথা জাঁকালো ছেলেটি। মনে হচ্ছিল যেন এক্ষুণি মাথা টাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে। কোনো ভাবেই তাকানো যাচ্ছেনা তার মুখের দিকে। মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রায়। এই মুহূর্তের তার কামনা বাসনা পূরণ করতেই হবে। চোখ গরম করে উঠল অয়ন্তী। ঝাঁজালো গলায় বলল,,

“আপনার মাথা গরম হয়ে গেলে আমি কী করব হ্যাঁ? তাছাড়া এই খারাপ কাজটার জন্যই কী আপনি আমাকে এভাবে রিকুয়েস্ট করছেন? আর ইউ ক্রে’জি ম্যান? মাথায় গ্যাস্ট্রিক ট্যাস্ট্রিক আছে নাকি আপনার? আজব পাবলিক তো!”

কিঞ্চিৎ দম নিলো অয়ন্তী। ভয়-ভীতি কাটিয়ে ওঠে সন্দেহজনক দৃষ্টি ফেলল ছেলেটির দিকে। তৎপর গলায় পুনরায় শুধালো,,

“বাই দ্যা ওয়ে, হু আর ইউ ম্যান? আমার ফ্রেন্ডের বাড়িতে আপনি কী করছেন হুম? এর আগে তো আপনাকে কখনও এই বাড়িতে দেখিনি। এই? আপনি আবার কোনো হা’ই’জ্যা’কা’র টাইজেকার নন তো? বা চো’র/ডা’কা’ত? ডা’কা’তি করতে এসেছেন আমার বান্ধবীর বাড়িতে? ঠিক বলছি তো আমি?”

অয়ন্তীকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলোনা ছেলেটি। বিক্ষুব্ধ হয়ে মুখ চে’পে ধরল অয়ন্তীর! মুহূর্তের মধ্যেই ঘাড় এবং কপালের রগগুলো টান টান হয়ে উঠল ছেলেটির। অব্যক্ত কিছু যন্ত্রণার ছাপ প্রগাঢ়ভাবে ফুটে উঠল তার স্বীয় মুখমণ্ডলে! নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে উত্তপ্ত শ্বাস বইতে লাগল। হাতের তালু থেকে র’ক্তের ঢেউ স্রোত হতে লাগল। ভয়ে জর্জরিত থাকা অয়ন্তীর প্রকাণ্ড লোচনদ্বয়ে তার গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তটস্থ গলায় বলল,,

“আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে সাহায্য কর! আসার পর থেকেই এই বাড়ির লোকগুলো আমাকে একঘরে করে রেখেছে। তুই এক্ষণি এই মুহূর্তে আমাকে বা’রে নিয়ে যাবি। নয়তো আমি এক্ষণি তোকে রে’প করব! আই রিপিট তোকে রে’প করব! বুঝতে পারছিস তো কী বলতে চাইছি আমি? এই “রাফায়াত” কিন্তু এক কথার মানুষ হ্যাঁ? যা বলে ঠিক তাই করে।”

মাথা ঘুরে এলো অয়ন্তীর। ছেলেটির ভাবমূর্তি খানা দেখে এসব অবিশ্বাস্য কিছু মনে হচ্ছেনা। চাইলে এক্ষণি ছেলেটি অয়ন্তীর বড়ো সড়ো কোনো ক্ষতি করে দিতে পারে! বিপুল হারে আক্রমনাত্নক হয়ে আছে ছেলেটি। পুরুষ মানুষের এমন হিংস্র রূপ অয়ন্তী এর আগে কখনও মোকাবেলা করেনি! গাঁয়ের লোম শিরশিরিয়ে উঠল তার! দাঁতে দাঁত সংঘর্ষিত হতে লাগল। উটকো ঝামেলায় পড়ে গেলে বাড়ির এই নির্জন জায়গাটিতে কেউ অয়ন্তীকে বাঁচাতেও আসবেনা। কারণ বাড়ির সব সদস্যরা এখন ব্যস্ত জন্মদিনের অনুষ্ঠানে! অয়ন্তীর সাথে যা ঘটার সব নিচতলায় ঘটছে। উপরের তলায় পুরো বাড়ির সদস্যরা এখন জটলা বেঁধে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মশগুল হয়ে আছে। উচ্চ শব্দে বাজতে থাকা গানের আওয়াজটুকুনিই কেবল তার কর্ণতলে বিকট শব্দে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই অবস্থায় চিৎকার চেঁচামেচি করলেও কেউ কিচ্ছুটি টের পাবেনা! ঘাবড়ে ওঠে অয়ন্তী ছেলেটির দিকে উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি ফেলল। পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার শতভাগ চেষ্টা করল। শুকনো ঢোঁক গিলে ভীরু গলায় বলল,,

“শুশুশুনুন মিমিমিস্টার…..”

“মিস্টার রাফায়াত!”

“হ্যাঁ মিস্টার রাফায়াত। প্লিজ কুল ডাউন। আমার মনে হচ্ছে আপনি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন! নতুবা কোনো সুস্থ সবল মানুষের পক্ষে আদোতেই সম্ভব নয় চেনা নেই জানা নেই সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মেয়েকে হুট করেই এমন কুরুচিমূলক প্রস্তাব দেওয়ার কিংবা হুমকি-ধামকি দেওয়ার। প্লিজ আপনি শান্ত হয়ে বসুন। আমরা বসে কথা বলছি।”

রাগে নাক টানল রাফায়াত! মুখশ্রী টগবগে লাল বর্ণ ধারণ করল। পেছনের চুলগুলো টেনে ধরে সে রক্তশূল দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে মৃদু আওয়াজে বলল,,

“এই শোন? তোর সাথে বসে কথা বলার সময় নেই আমার। এসব আ’জা’ই’রা প্যা’চাল বন্ধ কর। তোরা মেয়েরা শুধু এটাই পারিস। ন্যা’কা’মি করে ছেলেদের ফাঁ’সা’তে পারিস! চেনা হয়ে গেছে তোদের! মধু মাখিয়ে কথা বললেও এই রাফায়াত আর কোনো মেয়ের কথায় গলবেনা! আর শোন? আমি জানি মেইন গেইটের চাবি তোর কাছে-ই আছে। চাবিটা দে বলছি। আদারওয়াইজ তোকে আমার রে’প করতে বেশী সময় লাগবেনা!”

উপায় বুদ্ধি খুঁজে না পেয়ে অয়ন্তী এবার গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠতেই রাফায়াত অয়ন্তীর গ’লার টু’টি চে’পে ধরল! মা’রাত্মক হিং’স্র রূপ ধারণ করে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,,

“একদম চালাকী করার চেষ্টা করবিনা। হাফ মা’র্ডা’র করার অভিজ্ঞতাও কিন্তু আছে আমার! রাফায়াত পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। যা বলছি তা মন দিয়ে শোন। আমাকে হেল্প কর এই বাড়ি থেকে বের হতে। নে’শা কেটে গেলেই আমি আবার ফিরে আসব। কেউ কিচ্ছু জানতে পারবেনা।”

“আমি জানিনা চাবি কোথায়!”

“আবারও মিথ্যে বলছিস তুই হ্যাঁ? আবারও মিথ্যে বলছিস? ফর দ্যা গড সেইক। আমার মাথা গরম হওয়ার আগেই কুইকলি চাবিটা দিয়ে দে আমাকে। আদারওয়াইজ এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা!”

পরিস্থিতি আর জটিল করতে চাইলনা অয়ন্তী। নিজের পায়ে নিজে কুঁড়োল মারতে কেই বা চায়? হাত থেকে চাবিটা ফ্লোরে ছুড়ে মারল অয়ন্তী! রাফায়াতের দিকে ভ’য়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সঙ্গে সঙ্গেই রাফায়াত অয়ন্তীর গলাটা ছেড়ে দিলো। নিচু হয়ে চাবিটা হাতে তুলে নিলো। গলায় হাত দিয়ে অয়ন্তী রুদ্ধশ্বাস ফেলতে লাগল। ঘাড়ের আশপাশটাও কেমন ব্যথা হতে লাগল তার। নিঃশ্বাস নিতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন কেবলমাত্র ম’রণ পথ থেকে ফিরে এসেছে সে! উপর ওয়ালা তাকে আরও একবার বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। টলমলিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো অয়ন্তী। চট জলদি রাফায়াত বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। এরমধ্যেই মনে হলো দুতলা থেকে কেউ নামছে! ধপাধপ পায়ে হাঁটার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দিশা খুঁজে পেয়ে অয়ন্তী ঘাড় ঘুরিয়ে দুতলার সিঁড়ির দিকে আশ্বস্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই রাফায়াত এক ঝটকায় অয়ন্তীকে নিয়ে বাড়ির স্টোররুমে ঢুকে গেল! বদ্ধ ঘরে পুনরায় অয়ন্তীর মুখ চে’পে ধরল। কর্ণতলে দাঁতে দাঁত চে’পে ফিসফিসিয়ে বলল,,

“শাট ইউর মাউথ ওকে? একদম চিৎকার চেঁচামেচি করার চেষ্টা করবিনা। চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাক। এই বদ্ধ ঘরে তোকে গলা টি’পে মে’রে রেখে দিলেও কিন্ত কেউ টের পাবেনা! সো শাট ইউর মাউথ ওকে?”

রাফায়াতের শক্তির সাথে না পেরে হাঁপিয়ে উঠল অয়ন্তী। দমটা যেন তার এবার ক’ব’রে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করছিল। এবার হয়তো তার পক্ষে আর বেঁচে ফেরা সম্ভব নয়! আ’জ’রা’ই’ল যেন তার সম্মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে মৃ’ত্যু’র যন্ত্রণা আর চোখের জল ফেলা ছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায় নেই! হুট করেই স্টোররুমের দিকে অয়ন্তীর বান্ধবী আলিজার গলার স্বর শোনা গেল! গলা ছেড়ে সে হাঁকডাক করে বলল,,

“এই অয়ন্তী? কোথায় তুই? আমাকে না জানিয়ে কোথায় চলে গেলি?”

বিপুল আশা ভরসা নিয়ে অয়ন্তী উহ্ আহ্ শব্দ করতে লাগল! রাফায়াতকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। মুখ থেকে রাফায়াতের হাতটা সরানোর অন্তঃপ্রাণ চেষ্টা তার। তবুও যেন টনক নড়ছিলনা রাফায়াতের। নাছোড়বান্দা রাফায়াত তার বলিষ্ঠ শরীরের সমস্ত শক্তিটুকুনি দিয়ে অয়ন্তীর মুখ চেপে ধরতে ব্যস্ত। কোনোমতেই সে আলিজার কাছে ধরা পড়তে রাজি নয়! যেভাবেই হোক তাকে বাড়ি থেকে বের হতেই হবে। এরজন্য সামনে যাকে পাবে তাকেই সে ব’লি’র পা’ঠা বানাবে! অয়ন্তীর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আলিজা জায়গা পরিত্যাগ করল। কিছুক্ষণ অয়ন্তীকে খুঁজে ফিরে আলিজা নিরাশ হয়ে উপরে ওঠে গেল! আলিজার কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে রাফায়াত এবার অয়ন্তীর মুখটা ছাড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই অয়ন্তী মাথা ঘুরিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল! ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা অন করে রাফায়াত অয়ন্তীর মুখে লাইটের আলোটা ধরতেই খানিক ঘাবড়ে উঠল। ম’রা’র মত পড়ে আছে অয়ন্তী! উদ্বিগ্ন হয়ে ধপ করে অয়ন্তীর পাশে বসে পড়ল রাফায়াত। কম্পিত হাতে কিছুক্ষণ অয়ন্তীর শরীরটাকে ঝাঁকালো। পালস রেট চেক করে দেখল খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নাক থেকেও ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস পড়ছে! অতিরিক্ত ভয়ের কারণেই অয়ন্তী অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। এখন এতকিছু খতিয়ে দেখার সময় নেই তার। বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই এখন তার মূল প্রায়োরিটি! অয়ন্তীকে এই মুমূর্ষু অবস্থায় রেখেই রাফায়াত দৌঁড়ে স্টোররুম থেকে বের হয়ে গেল। বাড়ির মেইন গেইট খুলে চাবিটা তালার মধ্যে ঝুলিয়ে রেখেই মেইন রাস্তায় ওঠে গেল! এরপর আর কে পায় তাকে? বাঁধার গরু ছাড়া পেয়েছে যে! ছুটে চলল সে বা’রে’র সন্ধানে। নে’শা ছাড়া তার জীবনটা যেন পুরোপুরি অন্ধকার! অতীত জীবন তাকে ভুলে থাকতেই হবে। যে শহর ছেড়ে এসেছে সে শহরের মায়া তাকে ত্যাগ করতে-ই হবে!

_______________________________

ঘুম ঘুম চোখেই রাফায়াত তার আশেপাশে তুখোর চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই সে ফট করে চোখ জোড়া মেলে ধরল। উবুড় অবস্থাতেই দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল নয়টা বাজছে ঘড়িতে! বিবর্ণ নে’শা’ক্ত চক্ষুজোড়ায় সে রুমের দরজার দিকে তাকালো। আওয়াজটা ঠিক কোথা থেকে আসছে তা খুুঁজে বের করার চেষ্টা করল। দরজার বাইরে থেকেই চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হাতের ব্যথাটা এখনও সাড়েনি তার! রক্তের সাথে সাথে বিষাক্ত সাদা জাতীয় পুঁজ বের হচ্ছে। অথচ সেদিকে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই তার! এসব ব্যথা যেন তার নিত্যদিনকার অভ্যাস! একরাশ বিরক্তি নিয়ে রাফায়াত শোয়া থেকে ওঠে দাঁড়ালো। খাটের কর্ণারে জোরে এক লা’থ মারল। হ্যাঙার থেকে গাঁয়ে লাল রঙের একটি টি-শার্ট গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো। হন্তদন্ত হয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো। তিক্ত গলায় বলল,,

“ড্যাম ইট! এই বাড়িতে আসার পর থেকেই আমার সকালের ঘুম চাঙে উঠে গেছে। রোজ সকাল হলেই এই বাড়ির ডিসগাস্টিং মানুষগুলো চিড়িয়াখানার পশু-পাখিদের মত উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে।”

দরজা খুলে ড্রয়িংরুমে পা বাড়াতেই রাফায়াত দেখতে পেল দুটো অপরিচিত মুখ। একজন মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা এবং একজন মাঝবয়সী পুরুষ। তাঁরা দুজনই বেশ অস্থির হয়ে আছে। চুপসে যাওয়া মুখমণ্ডল দেখে বেশ আঁচ করা যাচ্ছে! আলিজা তাদের দুজনের সম্মুখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদছেও! বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা একজোট হয়ে তাদের দুজনকে বিভিন্নভাবে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই পর্যায়ে এসে কান্না থামালো আলিজা। নত স্বরে সেই পুরুষ এবং মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“আমি জানিনা আঙ্কেল-আন্টি অয়ন্তী কোথায়! প্লিজ বিশ্বাস করুন আমায়। কাল রাতে আমি ওকে খুঁজে না পেয়ে ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে গেছে হয়ত। এরপর আর কল করার সময় হয়ে ওঠেনি। বাড়িভর্তি এত গেস্ট ছিল। আসার পর থেকেই অয়ন্তী বলছিল তার শরীরটা নাকি খুব খারাপ করছে। বাড়ি ফিরে যাবে। ভেবেছিলাম সত্যিই হয়ত বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু অয়ন্তী যে সত্যিই কাল রাত বাড়ি ফিরেনি আমি ঘুনাক্ষরেও জানতাম না আন্টি-আঙ্কেল। জানলে এত বড়ো ভুলটা আমার দ্বারা হতো না। আপনারা তো চিনেন আমাকে বলুন?”

অয়ন্তীর মা এবার মুখ চেপে কেঁদে উঠলেন। ঘন ঘন ফুঁপিয়ে ওঠে বললেন,,

“আর আমি তো কাল ইচ্ছে করেই অয়ন্তীকে কল করেনি। ভেবেছিলাম তোমার সাথে আছে। তাই বিরক্ত করতে চাইনি। কিন্তু আমার মেয়েটা যে হুট করে এভাবে হারিয়ে যাবে কে জানত বলো? কেমন মা হলাম আমি? যে মা কিনা নিজের মেয়ের খবর -ই রাখতে পারেনা!”

রাফায়াতের টনক নড়ল এবার! নে’শার ঘোরে সে ভুলেই গিয়েছিল কাল রাতে অয়ন্তীকে সে স্টোররুমে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল! গভীর অনুশোচনা বোধ কাজ করছে তার মধ্যে। মনে মনে নিজেই নিজেকে গালমন্দ করছে! আর এক মুহূর্তও ব্যয় করলনা রাফায়াত। দৌঁড়ে স্টোররুমে চলে গেল। খট করে দরজাটা খুলতেই দেখতে পেল অয়ন্তী আগের মতই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে! শুকনো ঢোঁক গিলল সে। মুখমণ্ডলের প্রখর আতঙ্কের ছাপ ফুটিয়ে তুলল। নিচতলার ট্যাব ছেড়ে কোষ ভর্তি পানি এনে অয়ন্তীর চোখে-মুখে ছিটাল। বেশ কয়েকবার পানি ছিটানোর পর অয়ন্তী পিটপিট করে চোখ খুলল! স্বস্তির শ্বাস ফেলল রাফায়াত। আগ্রাসী দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। উগ্র কণ্ঠে গড়গড় করে বলল,,

“কাল রাতে তোমার সাথে ঠিক কী কী ঘটেছে এসব যেন পাঁচ কান না হয় ওকে? বি কেয়ারফুল।”

শরীরের ব্যথায় নাক-মুখ কুঁচকে নিলো অয়ন্তী। চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করল। ব্যথাযুক্ত গলায় হাত রেখে মৃদু খরখরে গলায় বলল,,

“এই? কেমন ধরনের মানুষ আপনি হ্যাঁ? একটা মেয়েকে এতটা বি’চ্ছি’রিভাবে আঘাত করলেন, তাকে বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে চলে গেলেন এখন আবার এই আ’হ’ত মেয়েটাকেই কোনো সেবা শুশ্রূষা ছাড়াই শাসাতে চলে এসেছেন? এতটা নির্দয় কেন আপনি হ্যাঁ? দয়া মায়া নেই আপনার মনে?”

“না নেই! রাফায়াতের মনে কোনো দয়া মায়া নেই। রাফায়াত শুধু স্বার্থ বুঝে স্বার্থ! আবারও তোমাকে ওয়ার্ণ করছি, কাল রাতে কী কী ঘটেছে তা যেন তৃতীয় ব্যক্তি জানে।”

বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো রাফায়াত। হনহনিয়ে রুম পরিত্যাগ করল। উপরে ওঠে অয়ন্তীর মা এবং বাবাকে উদ্দেশ্য করে নম্র স্বরে বলল,,

“আপনাদের মেয়ে স্টোর রুমে আছে। যান, গিয়ে দেখে আসুন।”

#চলবে….?