ওড়নার দোষ (৪+৫) অংশ

0
899

গল্পঃ ওড়নার দোষ
৫ম অংশ
Israt Jahan

পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা মেঘার মধ্যে খুব ভালোই কাজ করে।রুবেল মেঘার এই গুণটা দেখে সবসময়ই খুব অবাক হয়। এইটুকু মেয়ের মধ্যে এত দ্রুত ম্যাচুরিটি যে কবে এল সেটাই রুবেল বুঝে পায়না। রাতে খাবার টেবিলে বসে রুবা তার ভাতিজিকে অনেকবার খুঁজল।মল্লিকা বলল,
“ও নাকি ঘুমিয়ে পরেছে আপা।আফিয়া ডাকতে গিয়ে দ্যাখে বই মুখে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।”
“এবার তো আমার ফুলকলিটা এইচ.এস.সি দিবে তাইনা?”
মল্লিকা মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিল।রুবার মেয়ে রুশা কৌতূহল চোখে জিজ্ঞেস করল,
“এই ফুলকলিটা আবার কে মম?একে তো চিনলাম না।”
রুমেন সাহেব রুশার মাথায় হাত রেখে স্নেহেজড়ানো কন্ঠে বলল,
“ও আমার বড় মেয়ে মা।এ বাড়ির সবার চোখের তারা।ঘুমিয়ে পরেছে তো।কাল তোমার সঙ্গে ঘুম থেকেই উঠেই দেখা করতে আসবে।”
মামার কথা শুনে শুধু হাসি দিল রুশা।রুবেল খেতে খেতে রুবার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে রুবাকে জিজ্ঞেস করল,
“তো ভাগ্নে আমার কী করছে আপা?”
“সেটা ওর কাছে প্রশ্ন কর।”
“মামনি! একটু প্রশংসা করলেও তো পারো।”
“প্রশংসা করার মত কী আছে তোমার মধ্যে?”
রুমেন সাহেব বোনকে একটু বিনয়ের সুরে বলল,
“এভাবে কেন বলছিস ওকে?হীরের টুকরো ছেলে হয়েছে তোর।এমন ছেলে জন্ম দেওয়াও তো ভাগ্যের ব্যাপার।ওকে দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।”
বড়ভাইয়ের এমন কথা শুনে রুবেল খাবার খেতে গিয়ে খাবার গলায় আটকে গেল প্রায়।দ্রুত পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিল রুবেল।
“মূলত আমার পেশা আমি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার।কিন্তু আমি খুব জঙ্গলপ্রেমী একজন মানুষ।”
রুমেন সাহেব বাহবা দিয়ে বলল,
“বাহ্ বাহ্ ভাগ্নে তো আমার মনের মত একদম।আমার মেঘা মা টার সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া গেল তোমার।ও কিন্তু খুব পাহাড়-জঙ্গলপ্রেমী মানুষ।ওর সঙ্গে তোমার গল্প বেশ জমবে।”
***************************
“ফুপি?”
“আমার ফুলকলি যে।ঘুম ভাঙল?”
“স্যরি।কাল ঘুমিয়ে পরেছিলাম কীভাবে যেন।কী রান্না করছো?”
“রান্না হলেই দেখতে পাবে।তুই এখন যা তোর বোনের সঙ্গে গিয়ে দেখা কর গিয়ে।কাল ও তোর সাথে দেখা করার জন্য প্রচন্ড ছটফট করছিল।আমি বলেছি ঘুম ভাঙলে ও নিজেই চলে যাবে তোর রুমে।”
“সিরিয়াসলি?আচ্ছা আমি এক্ষণি যাচ্ছি ফুপি।”
উপরে উঠে রুশার রুমে যাওয়ার সময় একটা ভারী পুরুষালী কন্ঠে ডাক পরল।
“লিসেন গার্ল।”
মেঘা এগিয়ে তার রুমের সামনে দাঁড়ালে সে এসে ওর সামনে দাঁড়াল।তারপর দু মিনিট সময় নিয়ে মেঘাকে ভালো করে দেখে সেই ঘায়েল করা হাসিটা দিয়ে বলল,
“তোমার সঙ্গে এভাবে দেখা হবে ব্যাপারটা সত্যি অকল্পনীয় ছিল।নাম কী তোমার?”
“মেঘা।”
“কিউট নেম।আর মামনির ফুলকলি।
“হুম।আপনার নামটা কী ভাইয়া?”
“এতক্ষণে আমার নাম শোনার ইচ্ছা হলো?”
“আসলে দু’বার ই তো আপনার সঙ্গে কোনো দুর্ঘটনার মাধ্যমে দেখা হয়েছে। ওই সময় আর নাম শোনার বিষয়টা মাথাতে আসেনি।”
“ছন্ন।”
“স্যরি..?”
“ছন্ন!”
মেঘা ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“মজা করতে ইচ্ছে করল?”
“মজা করলাম কখন?”
মেঘা আর কিছু না বলে জিজ্ঞেস করল,
“তো কিছু প্রয়োজন ভাইয়া?”
“হ্যাঁ একটু মামনিকে দরকার ছিল।”
“আচ্ছা….কিন্তু ফুপি তো কিচেনে।যদি কোনো আপত্তি না থাকে আমাকে বলতে পারেন।”
“আবার কোনো বিপদে পরতে হবে।”
“বিপদে পরতে হবে কেন আপনাকে?”
“আমাকে না তোমাকে।”
মেঘা স্বাভাবিক ভঙ্গীতেই বলল,
“আর্জেন্ট কিছু হলে বলুন।আর না হলে আমি যাই রুশা আপুর সাথে একটু দেখা করব।”
“ও তো এখন ঘুমোচ্ছে।ডেকেও ওঠাতে পারবেনা।মাঝখান থেকে ঝাড়ি খেয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।তার থেকে বরং আমাকে একটু হেল্প করে যাও।”
বলেই ছন্ন ভেতরে চলে গেল।মেঘা বাইরে দাঁড়িয়েই বলল,
“বলুন কী হেল্প করতে হবে?”
ছন্ন ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
“বাইরে দাঁড়িয়ে হেল্প করবে কীভাবে? ভেতরে এসো।অবশ্য তোমার দ্বারা কাজটা হবে কিনা সন্দেহ।”
মেঘা এবার একটু চটে গেলো।
“না হলে আর কী করার?আমি আসছি।”
চলে যেতে গেলেই ছন্ন পেছন থেকে ডেকে বলল,
“স্যরি ফুলকলি ম্যাম।দয়া করে আমাকে শাওয়ার নেওয়ার ব্যবস্থাটা করে দিয়ে যান।”
মেঘা পুরো অবাক হলো ওর কথা শুনে। একে তো ওকে ফুলকলি বলে ডাকছে। আবার বলছে শাওয়ার নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে।মানে কী?ছেলে কী এখনো মায়ের হাতে গোসল করে নাকি? মেঘা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“এই নামে আমার ফুপি আমাকে আদর করে ডাকে।আপনি ডাকবেন না।”
“ও আচ্ছা আমি তো জানতাম না তোমাকে আদর করে ডাকা হয়।তুমি কিছু মনে করোনা আমি কিন্তু তোমাকে আদর করে ডাকিনি।”
কথার সাথে হাসির ফুলঝুড়ি ছুটছে ছন্ন’র।হাসার সময় চোখদুটো একদম কুটি কুটি হয়ে যায়।এই হাসিটা দেখলে মেঘার মাথাও নষ্ট হয়ে যায়।হাসিটা একদমই দেখা যাবেনা। মারাত্বক এই ছেলেটার হাসি।
“বাথরুমের দরজাটা খুলছেনা।”
“এটা খুলে দেওয়ার জন্যও কী ফুপিকে প্রয়োজন হয়?”
ছন্ন মেঘার অনেকটা কাছে এসে ওর দিকে খানিকটা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে বলল,
“তোমাকে ফুলকলি নয় পুচকেকলি বলে ডাকা উচিত।”
এত কাছ থেকে ছন্ন’র মুখটা দেখে এবার বোধহয় মেঘার বেহুঁশ হওয়ার সময় চলে এসেছে।ছন্ন’র সিল্কি চুলগুলো কপালের ওপর এলোমেলো হয়ে পরে আছে।চোখের পাপড়িগুলো এত ঘন হয়তো মেঘার চোখের পাপড়িগুলোও এত ঘন না।চোখদুটোও যে হাসির মত মারাত্বক সুন্দর।নিজেকে সামলে মেঘা রেগে তাকাল ছন্নের দিকে।বলল,
“পুচকেকলি মানে?”
“বুদ্ধিটা এখনো পুচকেদের মত।বাথরুমের দরজাটা লক হয়ে আছে খুলছেনা।একটু খোলার ব্যবস্থা করো।”
মেঘা বাথরুমের সামনে গিয়ে দেখল দরজার ছিটকিনিটায় একটু মরীচা ধরে গেছে।একটু লজ্জায় পরতে হলে মেঘার। ওকে বলল,
“আসলে বাড়িতে তেমন কোনো রিলেটিভ আসেনা তো।রুমগুলো ফাঁকা পরেই থাকে। তাই আর কী খেয়াল হয়নি লকটার দিকে।”
ছন্ন শুধু হাসল ওর কথা শুনে।মেঘা আর তাকালোনা ওর মুখের দিকে।”এত হাসি যে কোথায় পায় ছেলেটা?”নিজের মনে বিড়বিড় করলো মেঘা।তারপর ছন্নকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“একটু ওয়েট করুন।আমি খোলার ব্যবস্থা করছি।”
পাঁচমিনিট পর মেঘা তেল জাতীয় কিছু একটা নিয়ে এসে লকের মধ্যে দিল।দু তিন মিনিট পর লকটা ইজি হলো।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেঘা ছন্নকে বলল,
“এখন খুলবে।”
“তাই?”
“খুলে দেখুন।”
“ওকে।”
ছন্ন লকটা খুলে বলল,
“বাহ্ পুচকেকলির দেখছি গুণ ও আছে।”
মেঘা রেগে তাকালেই ছন্ন মুচকি হেসে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।আর এবারও আরো একবার ওড়নাটাকে বাথরুমের দরজার ফাঁকে আটকে যেতে হলো।
“এটা কী হলো?এই ওড়না নিয়ে আমাকে আজকাল এত মসিবতে পরতে হচ্ছে কেন?তাও আবার শুধু ওনার সামনেই।”
মেঘা অনুনয়ের সুরে বাথরুমের দরজাতে নক করে ছন্নকে ডাকতে শুরু করল।
“এই ভাইয়া শুনছেন?”
“আমাকে ডাকছো?”
বাথরুমের ওপাশ থেকে ছন্ন উত্তর নিলো।
“অদমভূত তুই ছাড়া আর আছে কে ওখানে?”
ভ্রু কুঁচকে মনে মনে ঝারলো ছন্নকে।তারপর বলল,
“আমার ওড়নাটা…”
“তোমার ওড়নাটা মানে?”
“দরজাটা খুলুন।ওড়নাটা আটকে গেছে। টান দিলে ছিড়ে যাবে।”
ছন্ন দরজাটা খুলে খালি গায়ে এসে মেঘার সামনে দাঁড়াল।ছন্ন’র মেদবিহীন ফিট বডিতে মেঘার চোখ আটকে এবার একটা মিনিস্ট্রোক করার মত অবস্থা। কী হচ্ছে তার সাথে এসব।ছন্ন’র সবকিছুই ওকে এভাবে পাগল করে দিচ্ছে কেন? মাথা আর মন দুটোই নষ্ট হয়ে গেছে ওর।নিজেকে সংযত রাখা উচিত।ছন্ন ওড়নাটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ওড়না জিনিসটা তোমার এখন সত্যিই এভোয়েড করা উচিত।অন্তত আমার সামনে।”
কথাগুলো বলেই বাথরুমের দরজাটা লাগিয়ে দিল ছন্ন।ছন্ন’র কথা শুনে মেঘার লজ্জাতে মরে যাওয়ার মত অবস্থা।মেঘার যে কী বলা উচিত আর কিছুই খুঁজে পেলোনা।ওর সামনে এসেই কেন শুধু ওড়না নিয়ে প্রবলেমে পরতে হয়?ওড়নাকে না এখন থেকে ওকেই এভোয়েড করতে হবে যতদিন আছে এখানে।
সন্ধ্যার সময় ছন্ন’র বিয়ে নিয়ে লিভিংরুমে একটা ছোট খাটো মিটিং বসেছে।কেমন মেয়ে ছন্ন’র জন্য উপযুক্ত সেটাই আলোচনা করা হচ্ছে।টিউশন শেষ করে মেঘা বাসায় ফিরতেই রুশা মেঘাকে টেনে এনে ওর পাশে বসাল।আজ সকালের মধ্যেই দুজনের মধ্যে বেশ ভাব জমে গেছে।প্রথমে মেঘাকে দেখে একটু ধাক্কা খেয়েছিল রুশা।তারপর খিলখিল করে হেসে ওর সঙ্গে একটা জাপ্পি করে নিয়েছিল।রুশা মেঘাকে বলল,
“এই মেঘা তোমার কোনো ভালো ফ্রেন্ড আছে?”
“আছে তো।কেন কী করবে?”
“আরে ছন্ন ভাইয়ার বউ করব।যে ভাইয়াকে একদম মানুষ করে দিবে।”
ছন্ন’র মুখে ওর নামটা শুনে মেঘার তখন বিশ্বাস হয়নি।ওর নাম যে সত্যি ছন্ন হতে পারে সেটা মেঘার ধারণার বাইরে ছিল।কী অদ্ভুত মিল দুটো মানুষের নামের মাঝে। দুটো নাম একসঙ্গে জুড়লেই অদ্ভুতভাবে একটা শব্দের সৃষ্টি হয়।
“এক মাসের মধ্যে আমি ওকে বিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিব।ওকে বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হচ্ছেনা।”
“ফুপি তুমি বরং বাবার সাথে কথা বলো। বাবার সাথে যারা ওঠাবসা করে ওনাদের ঘরেও তো মেয়ে থাকতে পারে।”
“না একদম সংসারী টাইপের একটা মেয়ে চাই।আর সংসারী বলতে টিপিকাল ক্লাসের সাংসারিক মেয়ে নয়।যে মোটামোটি ভালোভাবে ওর সঙ্গে চলাফেরা করতে পারবে,ওর পছন্দ অপছন্দের সাথে মিল থাকতে হবে তার আর সেই সঙ্গে সংসার গুছিয়ে রাখার গুণটাও থাকতে হবে।”
“মম তাকে সুন্দরী হতে হবেনা?”
“সে তো হতেই হবে।তাই বলে যে চাঁদের থেকেও সুন্দরী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।”
“ফুপি এক মাসের মধ্যে এমন মেয়ে খুঁজে পেতে বেগ লাগবে।তাও পাবে কিনা সন্দেহ।”
“পাওয়া যাবেনা।”
ছন্ন রুবেলের সঙ্গে বাইরে থেকে এসে লিভিংরুমে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনে উত্তর দিলো।রুবা বলল,
“পাওয়া যাবেনা কেন?”
ছন্ন ওর মায়ের পাশে বসে মেঘার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“তার জঙ্গলে থাকার অভ্যাস থাকতে হবে। ওখানে সংসার করে ওখানেই বাচ্চা-কাচ্চা পয়দা করে ওখানেই পালতে হবে।”
ছন্ন’র কথা শুনে রীতিমত সবাই হেসে উঠল শুধু মেঘা ছাড়া।কথাটা ওর কাছে যেন একটু কেমন শোনাল।এমন ধরনের কথা বড় মানুষদের সামনে বলতে কী একটু লজ্জাও করলনা ছন্ন’র?একটু বেশিই বেহায়া। কথাগুলো ভেবে ছন্ন’র দিক থেকে বিরক্তিভরা চোখ ফিরিয়ে নিল মেঘা।রুবা ছন্ন’র গায়ে একটা চাপড় দিয়ে বলল,
“তুই একদম বাজে কথা বলবিনা।এখানে তোর মামিরা রয়েছে, দাদীবু বসে আছে।একটু সামলে কথা বল।”
“ভাইয়া তুই তাহলে আফ্রিকান জঙ্গলবাসীদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করে নে।”
এলিনা মেঘাকে বলল,
“এই মেঘা কাল তুই তোর সবকয়টা মেয়ে ফ্রেন্ড কে বাসায় ইনভাইট কর।”
“কেন চাচি?”
“কেন আবার মেয়ে পছন্দ করব।”
“ছিঃ এটা কোনো পছন্দ করার সিস্টেম হলো? আর আমার বান্ধবীদের দাম নেই বুঝি যে যেচে পরে ছেলের সামনে চলে আসবে?”
“আরে ওরা জানবে কেন যে ওদের কে আমরা পছন্দ করার উদ্দেশ্যে আসতে বলেছি?আর আমাদের যে ছেলে ওকে দেখলে তোর বান্ধবীগুলো হুমড়ি খেয়ে পরবে।আগে আমরা তোর বান্ধবী থেকেই শুরু করব।”
ছন্ন দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে এলিনাকে বলল,
“স্বয়ম্বরের আয়োজন করে ফেলতে পারেন মামি।ওটা বেশি বেটার হবে।”
বলছি চাচ্চু তুমি কাগজে বিজ্ঞাপন দাও একটা।বিজ্ঞাপন হবে খাদ্য মন্ত্রী রুমেন মাহমুদের একমাত্র ভাগ্নের স্বয়ম্বর আয়োজিত হবে ড্যাশ ড্যাশ তারিখে।সাথে একটা থ্রি ডি ফটো ছাপিয়ে দিবে ওনার।দেখবে ফিল্ম স্টাররাও দৌঁড়ে চলে আসবে।”
“প্ল্যানটা মন্দ নয় মেঘা।কী বলো ছন্ন?উফ তোমার নামটাও তো জোস।সবকিছু মিলিয়ে তোমাকে দেখে তোমার উপর যে কী পরিমাণ ধাক্কা খাবে মেয়েগুলো!”
ছন্ন বেশ উৎসাহ দেখিয়ে বলল,
“মামনি আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ না।আমি বরং এখনি গিয়ে পত্রিকার অফিসগুলোতে কথা বলে আসি।মেঘা যেহেতু আইডিয়াটা দিয়েছে ওকেই সঙ্গে করে নিয়ে যাই।”
*সংশোধন অংশ*
১ম অংশঃ “কী আর করার।আপাতত মাথা থেকে তাকে ঝেড়ে ফেলে ম্যাথ নিয়ে বসলাম। পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো বাবা আর দাদীবুর চেঁচামেচিতে।চেঁচামেচির কারণ জানতে পারলাম আমার ভাই মিশুর থেকে।ফুপি দেশে ফিরেছে।এখানে একটা হোটেলে এসে উঠেছে।এ বাড়িতে এসে সে কিছুদিন থাকতে চাইছে।কিন্তু বাবা আর দাদীবু তাতে নারাজ।ফুপামশায়কে ভালোবেসে ফুপি তার হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল।”
২য় অংশঃ “ওদেরকে ঘরে নিয়ে গেল মেঘার ফুপি রুবা জান্নাত।সেই তখন থেকেই মেঘাকে জড়িয়ে ধরে বসে কাঁদছে রুবা।মেঘার জন্মের পর ওকে ছবিতে দেখে রুবা আদর করে ওকে ফুলকলি নামে ডেকেছিলো।”
৩য় অংশঃ “তোমরা সেই ত্রিশ বছর আগের স্মৃতি মনে রেখে ভেতরে জেদ পুষে,রাগ পুষে এখনো তাকে কষ্ট দিচ্ছো।”
ওড়নার দোষ
৪ র্থ অংশ

Israt Jahan
মেঘা হতচকিত হয়ে তাকাল ছন্ন’র দিকে।ছন্ন ওর হাতটা ধরে টেনে উঠিয়ে বলল,
“চলো এখনি যাব।শুভ কাজে দেরী করতে নেই।”
রুশা আর রুবা তাকিয়ে হাসছে।মল্লিকা বলল,
“আপা তোমার ছেলে কী সিরিয়াস নিলো?”
“আরে না।ও একটু মেঘাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেল বোধহয়।”
“মম ভাইয়া আমাকে নিয়ে গেলোনা কিন্তু।”
“তুমি গেলেই পারতে ওদের সাথে।”
“হুহ….”
“ও একটু এমন পাগলাটে ধরনেরই মল্লিকা।”
মল্লিকা হেসে দিয়ে বলল,
“আপা তোমার ছেলেটা একটু অন্যরকম হয়েছে আর অনেক মিশুকও।যদিও কম কথা বলে।তাও ওকে আমার ভালোই লাগে।”
গাড়িতে উঠে মেঘা একদম জড়সড় হয়ে বসে আছে।ড্রাইভিংটা ছন্ন নিজে করছে।ছন্ন’র এমন কান্ডের জন্য মেঘা একটুও তৈরি ছিলনা। ভেবেছিল পারতি পক্ষে মেঘা কোনোভাবেই আর ছন্ন’র সামনে যাবেনা।আর সেই ছেলেই ওকে হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসাল। নিরবতা ভেঙে ছন্ন কথা বলল।
“কী যেন বলছিলে?পত্রিকাতে আমার স্বয়ম্বরের বিজ্ঞাপন দিবে।তা কোন পত্রিকা থেকে দিবে বলো?”
“কী আশ্চর্য!আপনি কথাটা সিরিয়াসলি নিয়েছেন নাকি?”
“কেন তুমি কী মজা করে বলেছো?”
“আপনার এমন একটা কথা সিরিয়াস কেন মনে হল বুঝলাম না।”
ছন্ন নিশ্চুপ হয়ে থাকল কিছুক্ষণ।তারপর বলল,
“রাতে কোন প্লেসটা বেশি ভালো লাগে তোমার?”
“কী?”
“কথা বুঝোনি?”
“মধুবাগ।”
“গ্রেট। তাহলে মধুবাগ ই যাই।”
“আপনি এর আগে কখনো দেশে এসেছেন?”
“আসবনা কেন?”
“ফুপি তো কখনো আসেনি।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
ছন্ন আবারও চুপ হয়ে গেল।ওর কোনো মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছেনা মেঘা।হঠাৎ করে ওকে নিয়ে বাইরে ঘোরার শখ হল কেন মেঘা সেটা ভেবেই ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।ছন্ন বেশ কয়েকবার মেঘাকে আড়চোখে দেখল।মেঘা একদম রোবটের মত সিটে চুপটি করে বসে আছে।মেঘার কপালে ঘাম ছুটতে দেখে ছন্ন বলল,
“গাড়ির গ্লাসটা খুলে দাও।”
“হঠাৎ?”
“এসির মধ্যেও বসে ঘেমে যাচ্ছো।”
“লাগবেনা।”
সামনে তাকিয়েই কথা বলছে মেঘা।মনে মনে পণ করে নিয়েছে ও।ভুলবশতও ও ছন্নের দিকে তাকাবেনা।ওকে এই মুহূর্তে দেখলেই মেঘার ভেতরটা তোলপার হয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ করে ছন্ন মেঘার দিকে ঝুঁকে এসে ওর পাশের গ্লাসটা খুলে দিল।সেই মুহূর্তে ছন্ন মেঘার বুকে মাথা রাখলে ও হয়তো গুণতে পারত মেঘার হার্ট বিট করার আওয়াজ।ঠোঁট গলা একদম পুরো শুকিয়ে আসছে মেঘার।বার বার জিহ্বার ডগা দিয়ে ঠোঁটদুটো ভিজিয়ে নিচ্ছে।সেটাও চোখে পরল ছন্ন’র।
“তুমি কী তৃষ্ণার্ত?”
“না।”
সর্টকাট উত্তর একদম মেঘার।
“তোমার কী মনে হয় মামনি আমার জন্য যে ধরনের মেয়ে খুঁজছে আর আমি যেমন মেয়ে পছন্দ করি এমন মেয়ে কী পাওয়া সম্ভব?”
“ফুপি যে ধরনের মেয়ে খুঁজছে সেটা পাওয়া সম্ভভ তবে সময় লাগবে।”
“আর আমি যেমন মেয়ে চাই?”
“আপনি কেমন মেয়ে চান?”
“ওই যে বললাম।অবশ্য আরো কিছু ব্যাপার আছে।”
“কী?
“সে আমাকে গভীর জঙ্গলে গিয়েও চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে আমার সঙ্গে সময় কাটাবে। আমার সবকিছুই তাকে মুগ্ধ করবে।আর সবথেকে বড় কথা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার প্রতি আমার একটা উইকনেস বিষয় কাজ করতে হবে।”
“তার জন্য তো আগে তার সঙ্গে আপনার একটু গভীরভাবে মেলামেশা করতে হবে।”
“হ্যাঁ তারজন্যই তো নিয়েলাম।”
“মানে?”
“তোমাকে কিছু বলিনি।তো বলো এমন মেয়ে কী পাবো?”
“মনে হয় না।”
“একদম সরাসরি না?”
“জঙ্গলপ্রেমী হলেও সে কোনোদিন জঙ্গলে সংসার করতে চাইবেনা।”
“তাই?”
“হ্যাঁ।”
“দেখা যাবে।”
মধুবাগ যাওয়ার পর ব্রিজের ওপর গাড়ি থামিয়ে ওরা গাড়ির মধ্যে বসে রইল।মেঘা প্রশ্ন করল,
“নামবেন না?”
“না।”
“তো কী এভাবে বসে থাকবেন?”
“তোমার নামতে ইচ্ছা হলে নামো।”
মেঘা কিছু বললনা।চুপচাপ ওর পাশে বসে থাকল কিছুক্ষণ।কোনো কথা বলছেনা দেখে মেঘা গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের ওপর গিয়ে দাঁড়াল।এই ব্যস্ততম শহরে কোনোকিছু ভালো না লাগলেও রাতের বেলার ব্রিজের ওপর এই নিস্তব্ধ পরিবেশটা মেঘার কাছে দারুণ লাগে। মেঘা রেলিং এ হাত রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে একদম পুরো সাদা সেলোয়ার স্যুট পরেছে ও।চুলটাও ছেড়ে দেওয়া।এলোমেলো বাতাসগুলো মেঘার গায়ে আছড়ে পড়ে চুলগুলোকে উড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।ওড়নার আঁচলটাও এক পাশে বেশ খানিক ঝুলে পরেছে।ছন্ন’র নজরটা ঠিক মেঘার ওড়নার ওই আঁচলের দিকেই।গাড়ি থেকে নেমে ছন্ন মেঘার আঁচলটা উঠিয়ে ওর মাথার ওপর দিয়ে দিল কিছু অংশ।ওর পিছে একদম ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে ছন্ন। মেঘা পিছু ফিরে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা। বুকের ভেতরে সেই হাতুড়ি পেটানোর অনুভূতি হচ্ছে আবারো।ইচ্ছা করছে পিছু ফিরে ছন্ন’র বুকে ঝাপিয়ে পরে ওকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব না ওর পক্ষে।মেঘা ছুটে চলে আসতে গেল ঠিক তখন ছন্ন ওর হাতটা টেনে ধরে ওর কাছে নিয়েলো।এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে জানলে মেঘা ভুলেও ওর সঙ্গে আসতোনা। আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার।একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে রেলিং ঘেসে আগের জায়গাতেই পিছু ফিরে দাঁড়াল মেঘা।ছন্ন মেঘার পিঠের সঙ্গে বুক লাগিয়ে ওর দু পাশে রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়াল।ছয় ফুট লম্বা মানুষটার বুকের সাথে মাথা লাগিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘা।মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন ঘুরছে ফিরছে।কিন্তু কিছুই প্রকাশ করতে পারছেনা।কেন এমন করছে এই মানুষটা?কী চাই সে?
“মামনি আমার ছন্ন নামটা কেন রেখেছে জানো?”
চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে আছে মেঘা। ছন্ন বলতে থাকল,
“শুধু আমার ছন্নছাড়া হয়ে চলাফেরা করার জন্য।তার আগে আমার আরো একটি নাম রাখা হয়েছিল দিপ্র।কিন্তু এই নামটার থেকে আমার ছন্ন নামটাই এত বেশি পছন্দ হয়েছিল যে আমি সবার কাছে আমার এই নামে পরিচয় দিই।মামনিকেও বলি সে যেন আমাকে এই নামেই ডাকে।এরপর থেকে আমাকে সবাই এই নামেই জানে।জানতে চাইবেনা কেন আমার এই ছন্নছাড়া জীবন?”
মেঘা নিরবে মাথা এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে ‘না’ জানাল।ছন্ন মেঘাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাল।মেঘার চোখের পাতা কাঁপছে সেই সাথে গোলাপি ঠোঁটজোড়াও।ছন্ন’র নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পরছে মেঘার মুখে এতটা কাছাকাছি ওরা।ছন্ন’র নিঃশ্বাসের ঘ্রাণটাও কেমন যেন পাগল করা।এই মুহূর্তে মেঘার মনের মধ্যে এক অজানা কষ্ট উঁকি দিচ্ছে।কষ্টটা ঠিক অজানা বললে মিথ্যে হবে।ছন্নকে না পাওয়ার কষ্টটা মেঘার হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করছে।ছন্ন কী তা বুঝতে পারছে?মেঘার কষ্টটা কী ও উপলব্ধি করতে পারছে?
“কেন জানতে চাওনা বলো?”
চোখদুটো বন্ধ করে মেঘা বলল,”বাসায় চলুন।”
“আমার দিকে তাকাও মেঘা।”
মেঘার গাল ছন্ন’র দুহাতের মধ্যে।এই স্পর্শ মেঘাকে একদম ঘায়েল করে ছাড়ছে।বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে মেঘা নির্ঘাত একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।এই ছেলের জন্য মেঘার মনটা একদম পঁচে গেছে।যা তা করে বসতে পারে ছেলেটার সাথে এই মুহূর্তে।যেভাবেই হোক এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হবে ওকে।
“চোখ বন্ধ করে আছো কেন?”
“(নিশ্চুপ)”
“মাথা উচুঁ করে আমার দিকে তাকাও মেঘা।”
“পারবোনা আমি।”
“কেন পারবেনা?”
“জানিনা।”
“জানো।তুমি সব জানো।বলো আমাকে।”
“পারবোনা বলতে আমি।”
“বলতে হবেনা।আমার দিকে তাকাও।আমি বুঝে নিবো।”
“আমি বাসায় যাব প্লিজ।”
“আমার দিকে না তাকানো পর্যন্ত বাসায় যেতে পারবেনা।”
“(নিশ্চুপ)”
“মেঘা?”
“(নিশ্চুপ)”
“সারারাত কী এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে?”
মাথা নাড়িয়ে “না” জানাল মেঘা।
“তাহলে জলদি আমার চোখের দিকে তাকাও।”
“অসম্ভব।”
“অসম্ভব কেন?”
“বললাম তো অসম্ভব।”
ক্ষিপ্তভাবে বলল ছন্ন,”আমি কিন্তু সত্যি তোমাকে যেতে দিবোনা।”
“কেন এমন করছেন?”
“তোমার তাকাতে কী সমস্যা?”
“খারাপ কিছু হয়ে যাবে।”
ধমক দিয়ে বলল ছন্ন,
“হোক।তবুও তোমাকে তাকাতে হবে।অনেক কিছু বলার আছে আমার।তাকাও বলছি। এবার কিন্তু খুব খারাপ……. ”
কথা শেষ করার সুযোগ দেয়নি মেঘা।ছন্ন’র ঠোঁটে মেঘার গোলাপি লিপস্টিকের ঠোঁটজোড়া লেপ্টে গেল।অঘটনটা ঘটিয়েই ফেলল মেঘা।তবুও চোখদুটো খুলেনি ও। বন্ধ চোখজোড়ার ফাঁক থেকে বর্ষণের ধারা গড়িয়ে পরছে মেঘার।আর ঠোঁটদুটো লেপ্টে আছে ছন্ন’র ঠোঁটে।মেঘার গালটা আগের মতই দুহাতের মাঝে ধরে আছে ছন্ন।একশো বিশ সেকেন্ডস পর মেঘা ছন্ন’র ঠোঁটজোড়াকে মুক্তি দিয়ে ছুটে গিয়ে গাড়িতে বসল।ছন্ন তখন ঠোঁটদুটো চেপে দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশের মানুষের দিকে খেয়াল হলে ছন্নও দ্রুত গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট করল।মেঘা দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে আছে।ছন্ন মেঘার ওড়নার আঁচল দিয়ে ঠোঁট মুছছে আর বলছে,
“ইয়াক কী বাজে ফ্লেভার লিপস্টিকের।এর থেকে তো লরিনের অরেঞ্জ লিপস্টিকের ফ্লেভারটাও ইয়াম্মি ছিল।কীসব লিপস্টিক ইউজ করো হ্যাঁ?স্বাদটা একদম পেটের ভেতর ঢুকে গেছে।বমিটা বোধহয় করেই ফেলব।”
“বুলডগের প্যাঙা তোকে আমি স্ট্রবেরির ফ্লেভার খাওয়াব।না নিমপাতার ফ্লেভার খাওয়াব।একদম ঢেলে দিব তোর মুখের মধ্যে। লরিনের অরেঞ্জ ফ্লেভারটাও ইয়াম্মি ছিল হুহ! তো যা তোর লরিনের মুখের মধ্যে অরেঞ্জ দিয়ে চুষে খা।আমার লিপস্টিকের ফ্লেভার তোকে কে খেতে বলেছে রে?”
নাকের দু’পাশ ফুলিয়ে মনে মনে ছন্নকে যাচ্ছেতাই গালাগাল করে যাচ্ছে মেঘা।একে তো একটা সিরিয়াস অঘটন ঘটিয়ে তারপর ওকে ছাড়ল। তারউপর আবার লরিনের অরেঞ্জ ফ্লেভারের লিপস্টিকের কথা বলে মেঘার মাথা খারাপ করে দিলো।ছন্ন’র মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে মেঘার।বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই মেঘা লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বের হতে গেলে ছন্ন থাবা দিয়ে মেঘার ওড়না টেনে ধরল।
“কী করছেন?ওড়না ছাড়ুন।”
“আমি তোমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলেছি? গাড়িতে উঠো।”
“মানে কী?আমি আর কোথাও যাবনা আপনার সঙ্গে।”
“পুচকেকলি আমি তোকে আর কোথাও নিয়ে গেলে কী বাড়ির সামনে আনতাম?”
“তো কী বলবেন বলেন?”
“গাড়িতে উঠতে বলেছিনা?”
“পারবোনা।”
ছন্ন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে রেগে গিয়ে হ্যাঁচকা টানে মেঘার ওড়নাটা একদম টেনে নিয়ে নিলো।মেঘা মোটেও এমনকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলনা।দু’হাত বুকের ওপর রেখে ওকে বলল,
“এটা কী করলেন আপনি?”
“কথা বলবেনা একদম।চলে যাও।”
“ওড়নাটা দিন।এভাবে গেলে সবাই কী ভাববে?আপনাকেও ভুল বুঝতে পারে।”
ছন্ন মেঘার ওড়নাটা মুড়িয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।তারপর গাড়ি থেকে নেমে বলল,
“আমাকে ভুল বোঝার কোনো চান্স ই নেই।”
বলেই গট গট করে বাসার ভেতর ঢুকে গেল। মেঘা ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকল ছন্ন’র যাওয়ার দিকে।অগত্যা মেঘা রুশার নাম্বার ডায়াল করে একটা ওড়না নিয়ে বাসার সামনে আসতে বলল।রুশা একটা ওড়না নিয়ে বাইরে আসল।
“আজকেও তোমার ওড়না মার্ডার হয়েছে?”
“না।হাইজ্যাক হয়েছে।”
বলেই বাসার ভেতর ঢুকে গেল মেঘা।ছন্ন তখন খাবার টেবিলে বসে পরোটা হাতে নিয়ে ভাবলেশহীন চোখে তাকাল মেঘার দিকে।
“ইচ্ছে করছে মুখের মধ্যে গিয়ে পরোটা গুজে দিয়ে লুইচ্চামি বের করে দিই।নাহ্ আর এক মুহূর্ত ওর দিকে তাকিয়ে থাকা যাবেনা।”
ছন্ন’র দিকে তাকিয়ে একপাশ থেকে ইচ্ছামত মনেমনে কুৎসিত গালাগাল করল মেঘা।তারপর উপরে গিয়ে রুমের দরজা আটকে ঠাস করে বিছানায় বসে পরল। আজকের ঘটনার পর ও কীভাবে ছন্ন’র সামনে যাবে?মরেই যাবে ওর চোখের দিকে তাকালে। আসলেই ছেলেটা ছন্নছাড়া করে ফেলল মেঘার মনটাকে।নামটা সার্থক হয়েছে ওর।মল্লিকা এসে অনেকবার খেতে ডাকল মেঘাকে।খিদে নেই বলে জানিয়ে দিল।এখন একটা ফ্রেশ ঘুম দরকার।না হলে মাথা ঠান্ডা হবেনা। রুমের লাইট অফ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরল মেঘা।