কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-০১

0
6389

কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব:০১

— দদেখুন ,,সসরুন ,, ককি ককররছেএ টা কি,,আমাকে যেতে দিন!!( কাঁপা কাঁপা গলায় আমি)

— কেন বেইবি,, তুমি না আমাকে ভালোবাসো,, তাহলে যেতে কেন চাইছো।। তার চেয়ে বরং একটু কাছে আসো।।( আমার দিকে এগুতে এগুতে সামনে থাকা লোকটি)

— হ হে ,, ভভালোবাসি ,, ককিন্তু!!( কাঁপা কাঁপা গলায় আমি)

— কিন্তু কি ?? ( বাঁকা হেসে লোকটা)

— দদেখুন ,, এএখন করোনার সিজন,, পিলিস দূরে সরুন!!( করুন সুরে আমি)

আমার কথায় সামনে থাকা লোকটার কোনো ভাবাবেগ হলো না।।সে ক্রমে ক্রমে আমার দিকে বাঁকা হেসে এগিয়ে আসতে লাগলেন।। আমিও ক্রমে ক্রমে পিছিয়ে যেতে লাগলাম।। পিছুতে পিছুতে পেছনে থাকা দেওয়ালটার সাথে বাড়ি খেলাম।। একদিকে অন্ধকার ফাঁকা ক্লাস রুম তো অন্যদিকে সামনে থাকা লোকটার এগিয়ে আসা ,, আমি তো ভয়ে রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছি।। হঠাৎ সামনে থাকা ছেলেটি আমার ওরনাটা টেনে নিয়ে গেল।।ভয়ে আমি এক হাত সামনে দিয়ে চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে দীর্ঘ,,অন্যহাত দিয়ে পরনের জামাটাকে মুচরে রেখেছি আমি।।
অনেকক্ষন পরে সামনে থাকা লোকটার কোনো রেশপনস না পেয়ে চোখ খুলে দেখি…

সে সামনে থাকা বেঞ্জ এ বসে পা দোলাচ্ছে,,আর ওরনাটাকে গলায় পেঁচিয়ে বাঁকা হেসে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।যে দৃষ্টিতে নেই কোনো নেশা,, নেই কোনো বাঁকা চাওনি,, শুধু আছে এক রাশ মুগ্ধতা।।যা আমাকে কেমন জানি গায়েল করছে।। এতোক্ষণে আমি খেয়াল করলাম,, লোকটার পড়নে একটা ব্লাক জিন্স,, ব্লাক শার্ট,, যেটার বোতাম বুক পর্যন্ত খোলা।। শার্টের হাতাটা ফোল্ড করা,, ঠোঁট দুটি হালকা গোলাপি রঙের,, দেখে মনে হচ্ছে লিপস্টিক লাগিয়েছে।। ঠোঁটের একটু উপরের তিলটা গরমের লালচে আকার ধারণ করেছে।।সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে।। ছেলেরা যে এতো সুন্দর হতে পারে,, একে না দেখলে তা বিশ্বাস ই করতে পারতাম না।।আমি এই প্রথম বার কোনো ছেলের উপর ক্রাশ খেলাম।।আমি এক ধ্যানে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে,,তাকে দেখতে ব্যস্ত।। কোনো কিছুর আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসি।। তাকিয়ে দেখি…
ছেলেটি তুরি বাজাচ্ছে,, অন্য দিকে ফিরে ভাব নিয়ে বললেন….

— আই নো ,, আমি দেখতে অনেক সুন্দর,, তো এভাবে দেখার কি আছে!!!

— সুন্দর না ছাই,, যওসব !!( ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকিয়ে আমি)

— তোমাকে আমার সৌন্দযের প্রশংসা করতে বলি নি,, আর আমার অপমান করতেও বলি নি।।দেখো আমি কাউকে কখনো অসম্মান করি নি।। বিশেষ করে মেয়েদের,, মেয়েরা মায়ের জাত।।তাই তোমাকেও অসম্মান করবো না,, শুধু তোমাকে বোঝাতে এখানে এনেছি।।যা বলার সোজা সোজা বলছি,, এই সব চ্যালেঞ্জ বন্ধ করে পড়াশোনায় মন দাও।।এতে তোমার ই ভালো হবে।। ( একটু থেমে আবার) আমি জানি,, তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রপোজ করেছো ।।তাই বলছি,, অন্যর মন নিয়ে খেলো না।।তার ও খারাপ লাগতে পারে।।আমি আবির তা এক্সসেপ্ট করবো না,, এই ভার্সিটিতে।। আনডাসটেন্ড !!(এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো )

এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম,, ছেলেটার নাম,আবির ।। কি আর করার যেহেতু ভার্সিটির সিনিয়র ভাই তাই চুপ করে সব সহ্য করলাম।।একটু এগিয়ে আবির আমার গলায় ওরনাটাকে পেঁচিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।।আমি এক ধ্যানে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।। একটু এগিয়ে গিয়ে বেঞ্জ এ উপরে উঠে বসে ভাবতে লাগলাম,, এখন কি করবো,, এখন যদি নিচে যাই তাহলে ঐ শহীদ মিনারের সামনে এক পা তুলে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।। কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে দোতলা থেকে মাঠের উদ্দেশ্য এ বেরিয়ে এলাম আর নিজের করা চ্যালেঞ্জ টার কথা ভাবছি।।

________ ফ্লাশ ব্যাক_________

( আমি হানি,, পুরো নাম আলিয়া আহমেদ হানি।।এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে এডমিশন নিয়েছি।। তাও ৩ মাস হলো ।। কিন্তু একদিন ও ভার্সিটিতে যাই নি।।আগে থেকেই কথা ছিল যে,,আমি ৩ মাস রেস্ট নিবো।। পড়াশোনায় আমি বড়াবড়ই ভালো।।আমি সবসময় সবার আগে থাকতে চাই।।এর পাশাপাশি আমার আরেকটা হবি আছে,, সেটা হলো চ্যালেঞ্জ।।আমি চ্যালেঞ্জ ধরতে ভালোবাসি।।আজ পর্যন্ত আমি একটাও চ্যানেল হারি নি।। বিশেষ করে কাউকে ইমপ্রেস করা।। আর হে লাইফে অনেক বাঁদরামি করেছি আর এখনো করি,,, অনেক বকা খাই তবুও করি,,,ভবিষ্যতে ও করবো,,হি হি হি)

লাইফে প্রথম বার ভার্সিটিতে যাবো একটু সেজেগুজে না গেলে হয়।। তবুও সাজতে পারছি না,, একটার পর একটা ফোন দিচ্ছে আমার ফ্রেন্ডেরা।।তাই হালকা একটু লিপস্টিক দিয়ে , কোনো রকম চুল গুলো বেঁধে নিলাম।। তারপর স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্য।। একটু দূরে আসতেই গলায় টান অনুভব করলাম।। তাড়াতাড়ি স্কটি থামিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই,, মুখটা ছোটো হয়ে গেল।। আমার গলার ওরনাটা স্কুটির চাকার সাথে পেঁচিয়ে গেছে,, যার কারনে বারবার আমার গলায় টান অনুভব করেছি।। অনেক চেষ্টা করেও ছোটাতে পারি নি,, তাই ভাইয়াকে ফোন দিয়ে স্কুটিটা নিয়ে যেতে বললাম।।নিজের চুল গুলো ছেড়ে দিলাম।।
অনেক চেষ্টা করেও একটা রিক্সা পেলাম না,,তাই হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে পৌঁছে গেলাম।। পুরো শরীর ঘামে ভিজে পুরো একাকার।।চুল গুলো ‌ছাড়ার কারনে একটু বেশি গরম লাগছে।। কিন্তু কিছু করার নেই।। ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতেই একটা ঠান্ডা হাওয়া আমার সব ক্লান্তি দূর করে দিলো।।আমি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে হাওয়াকে অনুভব করার চেষ্টা করছি।। নিমিষেই সব কান্তি দূর হয়ে আমার ঠোঁটের একটু কোনে হাসি ফুটে উঠল।।
একটু এগিয়ে সামনে যেতেই আমার জানের দোস্ত গুলোর সাথে দেখা হলো,, ওদের সাথে কুশল বিনিময় করলাম।। তারপর ক্লাস করার উদ্দেশ্যে চলে গেলাম।। কিছু ক্লাস করে বাড়ি ফিরে এলাম।
ডিনার করে একমনে ভাবছি ,,ঐ অচেনা ছেলেটিকে কিভাবে ইমপ্রেস করবো।। তাসফি আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে,, ভার্সিটিতে নাকি একটা ছেলে আছে,, যাকে আমি ইমপ্রেস করতে পারবো না।। সে নাকি সকলের ক্রাশ+ সিনিয়র।। ছেলেটা দেখতে কেমন কিংবা নাম কি সেটা পর্যন্ত জানি না।।তাই সারারাত জেগে কিছু ডাইলোক মুখস্থ করেছি,, আর কীভাবে প্রপোজ করবো ,, তার রিয়ারছেল করেছি।।

ঘুম থেকে উঠে একবার নিজে নিজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করে রেডি হয়ে ব্রেক ফাস্ট করে স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম।।

ভার্সিটিতে ঢুকেই আমার দোস্তদের কাছে গিয়ে ছেলেটার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিলাম।। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম ছেলেটার দিকে।। একটু ইনোসেন্স ভাব নিয়ে কালকের মুখস্থ করা ডায়লোক গুলো ঢালতে শুরু করলাম।। জানি না,, ছেলে টা কিভাবে নিবে কিন্তু কোনো দিকে না তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম।।

— দেখুন কে আপনি আমি জানি না,,আর জানতেও চাই না।। চিনি না আর এখন চেনার দরকার ও মনে করছি না।।হে এটা নয় যে আমি আপনাকে চিনতে চাই না,, জানতে চাই না ।। চিনতে চাই,, জানতে চাইলে শুধু আমার করে।। কালকে প্রথম ভার্সিটিতে এসেছি,, তাতেই আমি আপনিকে দেখে ওউক হয়েছি,,যে আপনাকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পারছি না।।আমি জানি না,, আপনি কি বলবেন,,কি করবেন।। তবুও আমি ভাবতে চাই ,,, যদি একটি বার একটা মাএ সুযোগ পাই।।না পেলে সমস্যা নেই,, আমি নিজে আপনাকে নিয়ে ভাববো। কিন্তু সেটা হবে আপনার অজানা,, নাদেখা।।হবে শুধু আমার একার,, এবং একান্ত নিজের।।আমি আপনার নাম জানি না,,তাতে কি আমার নিজের দেওয়া নামেই না হয় আমার কাছে রইলেন।।( সব আবেগ একসাথে এনে,, হাসার চেষ্টা করে,, করুন সুরে,,ছলছল দৃষ্টিতে আমি)

তাকিয়ে দেখি ওখানে থাকা ৫ জনই আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।আমি আর কিছু বলবো,,তার আগেই আবির আমার হাত ধরে টানতে টানতে দোতলায় একটা ফাঁকা ক্লাস রুম এনে দরজাটা লক করে দিয়ে আমার দিকে এগুতে লাগলো।।।।।

_________ বর্তমানে____________

এক পায়ে কানে ধরে শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি,, আর ঐ আবিরের পুরো গোষ্ঠী কে বোকে উদ্ধার করছি।।এক ঘন্টার মধ্যে ৫০ মিনিট হয়ে গেছে।। মাএ ১০ মিনিট বাকি ।।আমি করুন দৃষ্টিতে আমার ফ্রেন্ড দের দিকে তাকিয়ে আছি,, আর ওরা দাঁত কেলিয়ে হাসছে ।।যা দেখে আমার মেজাজ আরো গরম হয়ে যাচ্ছে ।।

চলবে……💞💞

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,,, ধন্যবাদ)