কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-১২+১৩

0
2809

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::১২

হঠাৎ কোথা থেকে আবির এসে আমার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।। চড়টা এতোটাই জোরে ছিলো যে,,আমি ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেলাম।। সাথে সাথে সবার নাচ অফ হয়ে যায় ।।সাথে গানও ।। সবাই এক নজরে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।।
উঠার শক্তিটুকুও নেই ।। কিছুক্ষণ পর মাথাটা একটু হেলিয়ে হাত দিয়ে টেনে চোখ দুটো বড় করে সামনে থাকা মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি ।। চোখের সামনে সব ঝামসা ।। একটু আগে ৮ গ্লাস ড্রিঙ্কস শেষ করেছি তাই হয়তো এমন হচ্ছে।।

একটু আগে বাড়ি থেকেই কে বেরিয়ে একটা রিক্সায় করে ক্লাবে চলে আসি ,,, স্কুটি নিয়ে আসবে সবাই সন্দেহ করবে তাই । ক্লাবে এসে সবাইকে একসাথে দেখতে পেলাম।।ওরা তখন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।। আমিও তাড়াতাড়ি ওদের কাছে গেলাম ওরা ওরাও হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো ।। আমি ওদের কাছে যেতেই ওরা আমাকে নিয়ে সোজা কেক কাটতে চলে গেলো ।। কেক কাটার পরে আমরা একে অপরকে খায়িয়ে দিতে লাগলাম।। সবাই আমার মুখে এতো গুলো কেক দিয়েছিলো ,,যে আমার গলায় তা আটকে যায় ।। আমি তাড়াতাড়ি করে ওয়েটারের কাছ থেকে একটা গ্লাস নিয়ে খেতে থাকি।। কি খাচ্ছি তা জানার চেয়ে সমস্যা টা থেকে বেরুনোটাই আমার কাছে প্রধান ছিলো। প্রথমে গ্লাসে থাকা পানিটা আমার ভালো না লাগলেও একটু পর খুব ভালো লাগে।।তাই খেতে খেতে ,,একটা একটা করে ৮ গ্লাস শেষ করে দেয় ।। এতো খাওয়ার পর ও আমার খাওয়ার ইচ্ছেটা কিছুতেই কমেনি ।। তাই আরো ২ টা গ্লাস তুলে নিলাম।। তখন খুব ডান্স করতে ইচ্ছে করছিলো তাই ডান্স ফ্লোরে গিয়ে সেখানে ডান্স করতে লাগলাম।। আর হাতে থাকা গ্লাস থেকে তার তালে তালে পড়ছিলো নিচে।।এর মধ্যে কোথা থেকে আবির চলে এসে আমাকে থামানোর চেষ্টা করে ,, কিন্তু আমি কিছুতেই থামছি না।।

( পরের যা ঘটেছে,, তা তো আপনারা জানেনই)

এখন আমি ফ্লোরে বসে হাত দুটো নাচাচ্ছি ।। মুখে বিরবির করে হাসছি।। আবির এসে আমাকে তুলে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো …

— এই মেয়ে এখানে এসেছো ,,,বাড়িতে কাউকে জানিয়ে এসেছো। কতোটা চিন্তায় আছে তোমার বাড়ির লোক তোমার ধারনা আছে।।চলো এখন বাড়ি চলো( চেঁচিয়ে )

— কে ,, চিন্তা করলো ,,না করলো ।। তাই তুমি আমাকে মারবে ।। তুমি খুব পঁচা ।। তুমি একবারে ঐ খচ্চর আবিরের মতো ।। আমার কেউ হয়না ,, তবুও আমাকে মারে ।। তো তুমি কে হও আমার ,,আর কেনোই বা তোমার সাথে যাবো আমি??যাবো না ……. ( ফ্লোরে বসে নাকে কান্না করে আমি )

আমাকে কাদতে দেখে আবিরও আমার পাশে বসলো।।তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো….

— আমাকে চিনতে পারছো না,, আমি তোমার হবু জামাই হই ,,সোনা !!

— এটা তুমি আগে বলবে না,,জামাই ।। চলো আমরা বাসাই চলে যায়।। ( হাত তুলে ইনোসেন্স ফেইস করে আমি) কোলে নাও ,, আমি হাঁটতে পারবো না।।

আবির কিছু একটা ভাবছে ,,যেটা আমার জানার বাহিরে।।আমাকে অনেকবার হেটে যেতে বলেছে ,,,কি কে যায় হেঁটে ।। আমার তো একটাই কথা ,, আমি আমার জামাইয়ের কোলে উঠবো ।।হিহিহি।।
অবশেষে আবির আর না পেরে আমাকে কোলে নিয়েই নিলো ।। আমিও আবিরের গলাটা এক হাত দিয়ে ধরে আছি ।। আবির আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ,,দরজা লক করে কারো সাথে একটা কথা বলছে ,, কিন্তু তা আমি শুনতে পারছি না।। দরজা খুলে যে বাহিরে যাবো ,,তার কোনো উপায় ও নেই।।
ফোনে কথা শেষ করে সে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।। একটা গাড়ি আমরা দুজনে ড্রাইভ করছি।। আসলে আবির ড্রাইভ করছে আর আমি বাচ্চাদের মতো ভুম ভুম করছি আর তিনি যেমন করছে আমিও তেমন করছি ।। যাতে তার ড্রাইভ করতে সমস্যা হচ্ছে।। তাই কি জানো একটা সামনের ড্রয়ার থেকে বের করে আমার মুখে ঢুকিয়ে দিলো।। আমি তো কিছুতেই খাবো না ,,তাই আমার মুখ চেপে ধরেছে।। তাতে কি আমি হাত দিয়ে ওর গুঁতো দিচ্ছি।। হঠাৎ সে আমাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পেছনের ডিকি থেকে কি জানো একটা এনে আমার নাকের কাছে ধরলো ।। নেশাগ্ৰস্থ থাকার কারনে আমি শিউর জানি না হয়তো তেল টাইপের কিছু।। স্মেল টা এতোটা বাজে ছিলো যে ,, সাথে সাথে আমি বমি করে পুরো শার্ট মেখে ফেলেছি ।। তারপর ডিকি থেকে একটা পানির বোতল বের আমার মুখ মুছিয়ে দিলো ।। আমাকে ফন্ট সিটে এনে ড্রয়ার থেকে একটা টি শার্ট বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে চেন্জ করতে বললো ।। কিন্তু কে চেন্জ করে,, অবশেষে আবির নিজেই আমাকে চেন্জ করিয়ে দিলো।
কিন্তু একবার ও আমার দিকে তাকায় অবধি নেই ।। হয়তো এটাই ওর নারীদের প্রতি সম্মান।।
আমার হাতে তার ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে সে ড্রাইভ করছে,, আর আমাকে গেমস খেলতে বলেছে।। কিন্তু আমার একদম খেলতে ইচ্ছে করছে না।। তাই আস্তে আস্তে সিট বেল্টটা খুলে ,, আবিরের কোলে উঠে বসে পড়লাম।। তবুও তার ড্রাইভ কিছুতেই থামছেনা।। না আমার দিকে তাকাচ্ছে।। তাই চাবি দিয়ে গাড়ির স্টাট অফ করে তাড়াতাড়ি আমার পকেটে ঢুকিয়ে দিলাম।। এখন আবির তো আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম ..

— আমার সোনা আমার উপর রাগ করেছে ,,,দাঁড়াও আমি রাগ ভাঙিয়ে দিচ্ছি।।

বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে আমার আর আবিরের কিছু ক্লোজ পিক তুলে নিলাম।। পিক তুলতে তুলতে কখন যে ভিডিও টা অন হয়ে গেলো আমি খেয়াল ই করি নি।।

— দেখো ,, তোমার ফোন পঁচা ,, পিক উঠছে না।। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ

ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললাম আমি।। আবির আর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রেখে দিলো ।। আমার আবার জোরে জোরে নেকা কান্না শুরু হয়ে গেলো।। আবির আমাকে থামতে বলছে ,, কিন্তু আমি কিছুতেই থামছি না,, হঠাৎ আমার চোখ গেলো আবিরের ঠোঁটের দিকে।।

— আমি চুমু খাবো !!( ইনোসেন্স ফেইস করে আমি)

— মিষ্টি তুমি এখন নেশার ঘোরে আছো,, পরে যখন তুমি এইসব জানবে তখন খারাপ লাগবে ,, বুঝতে পারছো !!( আমার গালে হাত ছুয়িয়ে আবির)

— আমি ওতো কিছু জানি না চুমু খাবো এতো টুকু জানি।।

আবির আর কিছু বলার আগেই আমি শার্টের কলার চেপে ধরে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেই ।। আবির আমাকে থামানোর চেষ্টা করেও পারি নি।। একে তো আমি তার কোলের উপর বসা ,,তার উপর তাকে শক্ত করে ধরে আছি ।। কখন যে আবিরের ঠোঁটের সাদ নিতে নিতে ঘুমিয়ে গেছি ,,তা আমার নিজের ই অজানা।।থাক না কিছু অজানা ,,,সব জেনেই বা কি করবো ।।

“”সব কিছু জানার অধিকার আমাদের নেই
থাক না কিছু অজানা,,,
সব জানা মানুষের জীবন হয় রংহীন
হারিয়ে যায় জীবনের মানে !!
—– ইফা🌿🌿

🍂🍂🍂

ঘুম থেকে জেগে নিজেকে কারো বাহু ডোরে আবদ্ধ পেলাম।। যার থেকে ছোটার ক্ষমতা আমার নেই।।চোখ খুলে আবিরের মুখটা দেখতে পেলাম।। কিন্তু কিভাবে এখানে এলাম কিছুই মনে পড়ছে না।।‌ মাথায় ব্যাথায় জিমজিম করছে ।।
আবিরকে ধাক্কা দিতে গিয়েও পারলাম না।।তাই আমার মুখ তার কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে আবিরকে ডাক দিলাম।। ডাক দিতেই একটু নোড়েচড়ে উঠল ।সাথে হাতে বাঁধন একটু হতেই ,,আমি সরে আসলাম।। আবির ওঠে আমার দিকে তাকিয়ে গুড মর্নিং বললো।।

— আমি এখানে কি করে এখানে এলাম!!( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— নিজেই মনে করার চেষ্টা করো !!( সিটে হেলান দিয়ে আবির)

আমি ভাবতে গিয়ে কিছুই মনে পড়লো না ,, হঠাৎ নিজের দিকে তাকাতেই আতকে উঠলাম।।

— আআমার শার্ট কোথায়,,,আর এটা কার !!(আমি)

— এটা আমার ,,আর তোমারটা ফেলে দিয়েছি ।। বমি করে তো পুরো মেখে ফেলেছিলে ।।তাই !!( আবির)

— আমার জামা আপনি ফেলে দিয়েন !! আর এইটা কে পরিয়েছে ।।(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমি)

— আমি ,,

— আপনি আমার কাপড় চেঞ্জ করে দিয়েছেন ।। এখন আবার কি হবে ।। আমি আমার হবু জামাকে কি জবাব দিবো ।। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ 🥺 ( কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে আমি)

— এই মেয়ে একদম চুপ ,, আমি তোমার কিছুই দেখি নি।। বরং তুমি আমার সতিত্ব নষ্ট করে দিয়েছো ।। এখন তো কোনো মেয়েই আমাকে বিয়ে করবে না।।আমি তোমার নামে পুরুষ নির্যাতন মামলা দায়ের করবো ।।( ইনোসেন্স ফেইস করে আবির)

মুহুর্তের মধ্যে আমার কান্না অফ ওয়ে গেলো বলে কি ,, পুরুষ নির্যাতন মামলা দায়ের করবে।।

— আমি আবার কি করলাম,,যে আপনি আমার নামে পুরুষ নির্যাতন মামলা দায়ের করবেন।। (কৌতূহল নিয়ে আমি)

চলবে ……💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::১৩

— দেখো ,, নিজের চোখেই দেখো ।। কিভাবে তুমি আমার ওর শ্রীলতা হানী করার চেষ্টা করেছো।।আমি তোমার নামে পুরুষ নির্যাতন মামলা দায়ের করবো !!( আমার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে আবির)

আমি আবিরের ফোনটা হাতে নিয়ে ভিডিও টা খেকেই থমকে গেলাম।। যেখানে এমন ছিলো যে,,
আবির আমার হাত থেকে ফোনটা নিতেই আমি কাঁদতে শুরু করলাম।।‌হঠাই ই আবিরের ঠোঁটে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলাম আর চুমু খেতে চাইলাম।। কিন্তু আবির আমাকে বারবার বোঝাচ্ছে ,,আমি বুঝছি না,, অবশেষে আমি নিজেই আবিরকে ওর শার্টের কলার ধরে টেনে নিজের ঠোঁট দুটি ওর ঠোঁটে বসিয়ে দিলাম।। আবির আমাকে অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারেনি।। এক ইঞ্চি ও সরাতে পারি নি ওর থেকে।। আর না পেরে নিজেই হাল ছেড়ে দেয় ।। আমি আবিরের ঠোঁটের শাদ নিতে গিয়ে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যাই ।। তখন আবির আমাকে সরিয়ে তার বুকের টেনে নিয়ে ,,,আমার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে তার মাতাল করা গোলাপি ঠোঁট দুটি ছুঁয়ে দেয় আমার কপালে।। তারপর তিনি নিজেই আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।।

আমি তো এক বার আবিরের দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার ভিডিও টার দিকে তাকাচ্ছি।। আমি যে এমন কাজ করতে পারি ,, বিশ্বাসই হচ্ছে না।। তার উপর আমি আবিরকে তুমি বলে সম্মোধন করছি।। ভাবা যায় এইসব।। আবার জামাই বলেও ডাকছি ।।।
হঠাৎ করেই আবির আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।। কিন্তু কেন নিলো বুঝতে পারছি না।।

— এই ভিডিও টা যদি তুমি ডিলেট করে দাও তাই নিয়েছি ।। প্রথম বার কোনো মামলা করবো ,,,প্রূভ লাগবে না।। ( দাঁত কেলিয়ে আবির)

আমি যতোদূর জানি পুরুষ নির্যাতন কোনো মামলা আজ পর্যন্ত নেই।। তাই ভাব দেখিয়ে আমি বললাম…

— পুরুষ নির্যাতন মামলা এখনো কোনো আইনে তৈরি হয়নি ।। ওয়েট করেন হলে তখন দায়ের কইরেন !!

— তৈরি হয়নি তাতে কি,,আমি তৈরি করবো।। আর যদি না পারি তাহলে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিবো।। সব পুরুষ জাতি এক হয়ে বিচার চাইবো ।।(আবির)

— হে ,, আমিও আপনার নামে বিচার দিবো ,,আপনি কেন আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছেন।। বাড়ি নিয়ে যেতে পাড়তেন!!একটা কাজ করুন এখন থানায় চলুন।।(আমি)

— এই যে মেডাম গাড়ির চাবিটা আপনার জিন্সের পকেটে রেখেছেন।। তাহলে গাড়ি ড্রাইভ করবো তোমার মাথা দিয়ে নাকি ,, তোমার পকেট থেকে বের করতাম।।
(আবির)

আমি বুঝতে পেরেছি,,যে এখানে সম্পূর্ণ দোষটা আমারই তাই আর কোনো কথা না বলে পকেট থেকে চাবিটা বের করে আবিরের হাতে ধরিয়ে দিলাম।।চাবি পেয়ে আবির ও গাড়ি ড্রাইভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর আমিও সিটে হেলান দিয়ে কালকে ঘটনা গুলো জোর করে মনে করার চেষ্টা করতে থাকি ।।

বাড়ি ফিরে একটা লম্বা শাওয়াল নিয়ে নেই।। কালকে রাতে যা পাগলামি করেছি তাই ।। ফিরে তাড়াতাড়ি ব্রেক ফাস্ট করে নিয়েছি।।বাড়িতে কেউ কিছু বলে নি।। হঠাৎ যা বলার আবিরই বলে দিয়েছে।। এখনো একবার রিভার্স দিতে হবে।। কিন্তু কিছুতেই মন পড়তে বসতে চাইছে না।। তাই বেডে একটু গা হেলিয়ে দিলাম।।

বিকেল হতেই বই নিয়ে পড়তে বসে গেলাম।।‌ একটা পড়া বারবার পড়ছি ।। এই এক সপ্তাহে যা পড়া পরেছি ,,তা আমি ৬ মাসে পড়েও শেষ করতে পারবো না।। আগের থেকে প্রিপারেশন এখন অনেক ভালো ।।
পড়তে পড়তে কখন যে ৩ টা বেজে গেল,,সেটা আমার ধারনার বাইরে।। কিছুতেই ঘুম হচ্ছে না।। পড়ার চিন্তায়।। আমার রুমে হঠাৎ ই মাম্মামের আগমন।।

— কি রে হানি ।।এতো রাত জেগে পড়ছিস কেন ,, শরীর অসুস্থ করবে তো।। কিংবা কালকে যখন পরিক্ষা দিতে যাবি ,,তখন দেখবি তোর ঘুম হচ্ছে।। আর এক্সাম দেওয়া হবে না ।।( রাইসা রুমে ঢুকতে ঢুকতে)

মাম্মাম এসেছে দেখে আমিও তাড়াতাড়ি উঠে মাম্মামের পাশে বেডে বসে পড়লাম।। তারপর মাম্মামের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম….

— কি করবো ,, তুমিই বলো।।। আমার কিছুতেই ঘুম হচ্ছে না,, আমার মনে হচ্ছে আমি সব ভুলে যাচ্ছি।। (আমি)

— তুই চিন্তা করছিস তাই এমন মনে হচ্ছে,, এই নে হা কর আমি তোকে নুডুলস টা খায়িয়ে দেই।। তারপর আমার কোলে মাথা রাখ। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।। দেখবি তোর ঘুম চলে আসবে ।।( কাঁটা চামচ দিয়ে নুডুলস আমার মুখে দিতে দিতে )

আমি হা করে নুডুলস টা মুখে দেবো তার আগেই পাপা রুমে ঢুকে ঢুকতে বলতে লাগলো ।।

— আমার বউয়ের হাতের নুডুলস খাচ্ছিস ,,আমি কি ভাগ পারো না।। আর তুই যে আমার বউয়ের কোলে মাথা রাখবি,, তাহলে বিয়ে করেছি কি তোর মাকে তোর কাছে রেখে একলা ঘুমাবো তাই ।।(তানজিম)

— আমি কি তোমার বউকে বেঁধে রেখেছি নাকি ।। এটা আমার মা ।। তার মানে আমার মা আমার কাছে থাকবে ,,তাতে তোমায়ই বা কি হে ।। ( উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে আমি) আর আমি চাইলে আমার বাবাকেও এখানে রাখতে পারি !

— তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।।

বলেই পাপা আমাদের পাশে বসে পড়লো ।। আমরা একে অপরকে নুডুলস খায়িয়ে দিলাম । তারপর মাম্মাম আমাকে মাঝখানে রেখে দুজনে দুইপাশে শুয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।।আমি পাপা আর মাম্মামকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।।মনে হচ্ছে কতোদিন পর পাপা মাম্মামকে এভাবে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছি।। কিন্তু না আমার প্রতি পরিক্ষার সময় এভাবে একসাথে আমরা ঘুমাই ।। আর কিছু ভাবার আগেই তলিয়ে গেলাম অতল ঘুমের দেশে।।

🌿🌿🌿

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কোনো বিষ ফ্রোন ঘটেছে আমার রুমে।। তাকিয়ে দেখি আপি আর ভাইয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,, আর পাপা মাম্মাম বেডে বসে আছে।।‌ কি হলো ,,কিছুই বুঝতে পারছি না।। আমি কিছু বলবো তার আগেই ভাইয়া বলে উঠলো….

— জানিস ,,আলু ( ভাইয়া আমাকে আলিয়া এর সংক্ষেপে 🥔 বলে ডাকে)যখন আমি ছোটো ছিলাম তখন আমার ইচ্ছা ছিলো ,,যদি আপি আমার ছোটো বোন হতো ,,,তাহলে ওকে কতো ভালোবাসা দিতাম।। কখনো হাঁটতে দিতাম না,,কোলে কোলে রাখতাম।। যখন তুই হলি ,,তখন আমি সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছিলাম।। তাই তো তোর নাম দিয়েছিলাম আলিয়া।। আর তুই কি না …( হিয়ান)

— আমিও ভেবেছিলাম ,, আমার একটা ছোট বোন হবে ।। আমি তাকে সারাদিন সাজাবো ….!! আর তুই…(হিয়া)

— আরে চুপ করবি তোরা …..!! কি করেছি সেটা তো বল…!!(আমি)

— কি করেছিস মানে ।। পাপা ,, মাম্মামের আদর যে একা একা খেলি তার বেলায়।। (হিয়ান)

— এই কথা ,, আমি তো আমার মায়ের আদর খেয়েছি!!(আমি)

— আর আমি তো আমার মেয়ের কাছে এসেছি ।।( রাইসা)

— তোরা একদম ঠিক বলেছিস ,,হিয়া -হিয়ান ।। আর আমি কি হানির কাছে এসেছি ।। আমি এসেছি আমার বউয়ের কাছে ।।( ফিসফিস করে তানজিম)

তারপর এরকম ঝগড়া আরো অনেকক্ষণ চলতে থাকে ।।ঝগড়া করে আমরা একসাথে ব্রেক ফাস্ট করে নিলাম।। তাড়াতাড়ি রুমে এসে তৈরি হয়ে নিলাম।। হোয়াইট শার্ট,, ব্ল্যাক জিন্স।। চুলগুলো উঁচু করে বেঁধে নিলাম।। এটা আমার এক্সাম ড্রেস।। এক্সামের সময় যাতে কোনো সমস্যা না হয় তাই এই ড্রেস আমি সবসময় পড়ি ।।রেডি হয়ে ভাইয়ার সাথে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলাম।।

ভাইয়া আর আমি ক্যান্টিনে বসে আছি।।‌ ভাইয়া আমাকে জুস খায়িয়ে দিচ্ছে আর আমি মুখ দিয়ে খাচ্ছি,,হাত দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি আর চোখ দিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ বল্লাচ্ছি।। আমার এক্সামের সময় সবসময় ভাইয়া আমার সাথে আসে কারন আমি সবসময় এতোই বিজি থাকি যে কখন এক্সাম দেওয়া সময় হয়ে যায় সেটাই জানি না ।। একদিন তো আমি এক্সাম দিতেই পারি নি।।
এক্সামের সময় হতেই ভাইয়া আমাকে ভেতরে যেতে বলে চলে গেল।। আমিও এক্সাম হলে চলে গেলাম।।

এক্সাম অনেক ভালো হয়েছে।। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেক টেনশন হচ্ছে। ভার্সিটিতে প্রথম এক্সাম দিচ্ছি।। আমার পেজ কপি করে আমার ফ্রেন্ডদের ও এক্সাম ভালো হয়েছে।।
হঠাৎ কোথা থেকে আহাদ এসে আমার সামনে দাড়ালো ।। আমাকে চ্যালেঞ্জ করলো আমি নাকি পরিক্ষার ভয়ে ফুচকা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি ।। আমি নাকি৮ প্লেট ফুচকা খেতে পারবো না।। আমি ওর দেওয়া চ্যালেঞ্জ টা এক্সেপ্ট করে নিয়ে ফুচকা খাওয়া জন্য ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এলাম ।। ফুচকা ওয়ালাকে ৮ প্লেট অর্ডার করলাম।।১ প্লেট ফুচকা আমার হাতে দিতেই আমি মুখে দিয়ে দিলাম।। প্রচুর ঝাল ।। তবুও চ্যালেঞ্জ জেতার জন্য একটা একটা করে ৫ প্লেট ফুচকা খেতে নিলাম।। ঝালে আমার মুখের লাল রঙের আকার ধারণ করেছে।। এর মধ্যে কোথা থেকে আবির এসে আমার প্লেট থেকে একটা ফুচকা তুলে মুখে দিয়ে বলতে লাগলো……

চলবে …..💞💞

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)