#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব ৪২(অন্তিম)
— আমি মরে গেলে হয়তো আপনার কাছে ভালোই হতো।। আমাকে আপনার সময় দিতে হতো হতো না।। আমি দুঃখিত,, আমি আমার সন্তানদের মৃত্যু কখনোই কামনা করতে পারি না।। তাই নিজের জীবন দিয়ে হলেও ওদের রক্ষা করার চেষ্টা করব।।(একটু থেমে আবার আমি) জানেন আবির,,, যখন আদ্র,, আদ্রিতা আমাকে বলেছিলো ,, আমি কোমায় থাকা সময়।। ওরা যখন অন্য কোনো মায়ে তার সন্তানদের আদর করতো ,, তখন ওদের খুব কষ্ট হতো ।। আমার কাছে গিয়ে আমার হাত ধরে কাঁদতো আর বলতো মাম্মা তুমি কবে আমাদের কাছে ফিরে আসবে।। কবে আমাকে কোলে নিয়ে আদর করবে ।। কবে আমাদের স্কুলে যাবে ,, তখন আমি সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলল ,,, দেখ আমার মাম্মা আছে ,,আর সে আমাকে অনেক ভালোবাসে।। এই কথাটা শোনার পর কতোটা কষ্ট হয়েছিলো।। জানেন আবির,,, বাচ্চারা সবার প্রথমে মা বলে ডাকে আর জন্মের সময় তার কান্নাটা মাকে ১০ মাসের যন্ত্রনা ভুলিয়ে দেয়।। দেখুন আমি কি অভাগা,, এর কোনোটাই আমার ভাগ্য এ জুটলো না।। (কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি)
— হানি তোমার কি মনে হয় ,, শুধু তোমার মেয়েরাই তোমায় জন্য অপেক্ষা করছে।। আমার এই হাতটা দেখতে পারছো ( হাতটা দেখিয়ে আবির) এই হাতের রক্তের জোরে তুমি ফিরে এসেছো।। সেদিন যখন আমি তোমার কাছে যাওয়ার জন্য নিজের হাতের শিরা কেটে ছিলাম। সেই রক্ত তোমার মুখে আঁচরে পড়ছিল।। তখন তোমার চোখে পাতা টিপটিপ করছিল।। ডাক্তার বললো ,,, তুমি তখনও বেঁচে ছিলে।। অনেক চিকিৎসা করেও তোমাকে ফেলাতে পারি নি।। কোমায় চলে গেছি ।। জানো প্রতিদিন তোমাকে দেখতে যেতাম।। সেখানেই থাকতাম ।। কিন্তু তোমার বেবী হসপিটালে থাকলে কষ্ট হবে তাই একবার যেতাম।। আর যেদিন বাড়িতে ঝগড়া করতাম ,, সেদিন তোমার আগে কবরের কাছে গিয়ে নিজের মনবল বাড়াতাম।। একজন ভালোবেসে মরতে পারে,, আর আমি ভালোবেসে তার জন্য অপেক্ষা করতে পারবো না।।।।(আমার চোখ মুছিয়ে ,,বুকে টেনে আবির)
— সেটা নাহয় বুঝলাম।। বাড়ির সবার সাথে মেয়েদের ঝগড়া করতেন কেন?? আর বাচ্চাদের কাছে সবাইকে আসতে বারন করতেন কেন??( বুকে মাথা রেখে আমি)
— তো কি করবো ।। সবাই আমাকে বলছিলো বিয়ে করতে ।। যখন আমি রাগারাগি করতাম।। তখন আদ্র আদ্রিতাকে বলতো ,,, ওদের জন্য যেন একটা মা এনে দেই ।। তাই তো !!( একটু থেমে আবার আবির) মিষ্টি জানো ,, এতো গুলো দিন আমি একদম শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি।। আজ একটু ঘুমাতে চাই ।।দেবে ??
আমি আবিরের মাথাটা কোলে রাখতেই আবির উঠে বসে আমার মাথাটা তার বুকে রেখে ।। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো ,,, আমিও আবিরকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।।।।।।।।
🌅 🌅 🌅
বাচ্চাদের স্কুলের জন্য বেডি করিয়ে দিচ্ছি ।। এদিকে আমি ভিজে একাকার ।। গোসল করার নামে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ছোড়াছুড়ি খেলছে।। সেখান থেকে আনতে গিয়ে পুরো ভিজে গেছি।। বাবার কাছে থাকলে কি হবে এই অভ্যসটা ঠিক আমার মতো হয়েছে।। এখন পড়েছি মহা বিপদে ।। একজনের চুল আঁচড়ে দিচ্ছি তো আরেকজন চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে।। আবার তার চুল আচরে দিচ্ছি ,, আরেকজন এলোমেলো করে দিচ্ছি।। ওদের এমন বিহেব আমাকে ক্লান্ত করে দিয়েছে।। আমি হেয়ার ব্রাশটা রেখে বেলকেনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।। আল্লাহ মালুক,, আবির কিভাবে এদের তৈরি করে দিতো।।।
কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি আবির।। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,আমাকে টেনে বাচ্চাদের কাছে নিয়ে গিয়ে দাড় কড়ালো।।তারপর আরেকটা হেয়ার ব্রাশ নিয়ে ওদের চুল দুই হাতে আঁচড়ে দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো…..
— মাম্মার সাথে কেউ এমন করে ।। আমার তো তোমাদের বিহেবে অভ্যস হয়ে গেছে ,, কিন্তু মাম্মার তো না !!!
— সরি মাম্মা এমন আর করবো না ,,, এইযে কান ধরছি !!! ( কানে হাত দিয়ে আদ্র আদ্রিতা)
তারপর আমরা একসাথে আদ্র আদ্রিতাকে স্কুলে দিয়ে হসপিটালে গিয়ে চেক আপ করে নিলাম।। ওরা আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।। গাড়ি থেকে নেমে ,, যাকে পাচ্ছে তাকেই বলছে ,,,দেখ এটা আমার মাম্মা ,, কতো সুন্দর দেখেছো।।আমি তো সারাক্ষণ ওদের বিহেবগুলো দেখেছি।। এখন আমার রিপোর্ট নরমাল এসেছে।। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে করবস্থানে চলে এলাম।। আজ প্রায় ৫ বছরের কবর টা ।। কিন্তু এই প্রথম আমি এসেছি।। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমি বেঁচে থাকার অবস্থায় আমাকে এইসব দেখতে হবে।।
— সরি জানভি ,,,, আসতে দেরি হয়ে গেলো।। আমি জানি তুমি আমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবে ।। তাহলে কেন করলে না ।। তুমি তোমার কথা রাখলে।। বলেছিলে ,,, একসাথে বাঁচতে না পারলে একসাথে মরে যাবে ।। কিন্তু দেখো ,,আমি তো মরি নি।। তাহলে এমন কেন করলে।। একবারও ভাবলে না ,, তোমার মিষ্টি জানে কি হবে ।। আমাকে তো আর মিষ্টিজান বলে ডাকবে ই।। রইলো না আমার জান ডাকার মতো কেউ।। কে আমার বিপদে এসে সাহায্য করবে ।। কে আমার জন্য সবার বিরুদ্ধে যাবে ।। জান…….!!! প্লিজ ফিরে এসো।। প্লিজ ।।।।।।।( কাঁদতে কাঁদতে কবরের পাশে বসে ,,কবরে হাত বোলাতে বোলাতে বললাম আমি)
— মিষ্টি প্লিজ শান্ত হও।। (আমার কাঁধে হাত রেখে আবির)
— আবির প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যায় ।। আমি কেমন শ্বাস নিতে পারছি না দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।। ( আমি)
আর কিছু বলার আগেই মাথা ঘুরিয়ে সেখানেই পড়ে গেলাম আমি ।। আবির আমাকে তুলে নিয়ে সামনের হাঁটা দিলো।।
সেদিন হানির মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় শক পেয়েছিলো জানভি ।। প্রথম প্রথম যখন হানি কোমায় ছিলো ,,,জানভি এসে ওর পাশে বসে থাকতো ,, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো ।। কিন্তু ১ মাস পড়েও যখন হানির জ্ঞান ফিরলো না।। তখন আস্তে আস্তে জানভি ড্রিপিশনে চলে যায়।। একসময় সুইসাইড করে।।।।
🍂 🍂 🍂
জ্ঞান ফিরার পর থেকে নিজেকে যথাসম্ভব ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছি।। আদ্র আদ্রিতাকে নিবিড় ভাইয়া আসার সময় রিসিভ করে এনেছে।।আজকে লান্ধ আমি তৈরি করেছিলাম।। তারপর থেকে সবার সাথে গল্প করছি ।। এই ৫ বছরে কি কি হয়েছিলো সব জেনেছি ।।
এখন রাত ১২ টা বাজে ।। সবাই ডিনার করে নিজেদের রুমে চলে গেছে ।। আমিও রুমে চলে গেলাম।। কিন্তু রুমে কেউ নেই।। তাই রুমটাকে গোছাচ্ছি ।। আদ্র আদ্রিতা রুমের নাজেহাল অবস্থা করে রেখেছে।।
হঠাৎ কোনো শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখি আবির।। তাই আবার গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। আবির এসে পেছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরে,,, চুলগুলো সরিয়ে কাঁধে থুতনিটা রাখলো।।
— কি হচ্ছে টা কি দেখতে পারছেন না ,, ঘর গোছাচ্ছি ।। সরুন গোছাতে দিন ।। আর আপনার টি শার্ট কোথায় ।। এইমাত্র তো দেখলাম।।।(কৌতূহল নিয়ে আমি)
— আজকে একটু ভিন্নভাবে রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে তাই খুলে রেখেছি ।। আচ্ছা তুমি টি শার্ট কে পড়েছো ।।
— এখন শাড়ি পড়ে থাকতে প্রবলেম হয় তাই ।।।
— ও আচ্ছা।।।
বলেই আমার টি শার্ট টা টান দিয়ে নিজেও ঢুকে পড়লো
। এমনিতে লেডিস টি শার্ট তার উপরে আমার ফিট হয় ।। সেখানে একসাথে দুজন।। আমি আবিরকে বের করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।। নিজে বেরিয়ে আসবো তার কোনো উপায়ও পাচ্ছি না।। হঠাৎ জোরে একটু টান পড়াতে দুজনে একসাথে বেডে পড়ে গেলাম
। আবির আমার দিকে তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে আনছে দেখেই চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে বললাম…
— ঐদিকে তাকান ,,আদ্র আদ্রিতা চলে এসেছে।।
— তোমাকে কি আমার বোকা মনে হয়।। আমি ওদের সামনে তোমাকে আদর করবো!!তাই নিবিড়ের কাছে ওদের রেখে এসেছি।।।( আবির)
— ছিঃ নিলজ্জ কোথাকার।।ওরা কি ভাবছে আর কেমন ভাষা এইসব ।।সরুন উঠুন ভালো লাগছে না।।।
— ঠিক আছে ,, উঠছি ।। একবার তোমার কথা না শুনে তোমাকে ৫ বছরের জন্য হারিয়েছি ।। আর হারাতে পারবো না।।
বলেই আবির উঠে যেতে নেই।। আমি আবিরকে আবার আমার উপর ফেলে দেই।।
— ঠিক আছে ,,, আপনার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্টেড।। ( ভাব নিয়ে আমি)
— সত্যি ।।
— হম।।।।
নতুন করে আমার ভেসে গেলাম ভালোবাসা সাগরে ।। আজ শুরু হবে আমাদের নতুন জীবন ।।।।
🍁 🍁 🍁
আজ আদ্র আদ্রিতার জন্মদিন ।। ওরা অনেক খুশি।। এই কয়দিনে আমি যতো কেয়ার করেছি। তারচেয়ে বেশি কেয়ার ওরা আমাকে করেছে।। কিন্তু একটা ব্যাপারে আমার খুব রাগ লেগেছিলো।। ওরা কেক কেটে সবার প্রথমে ওদের পাপাকে খাইয়ে দিয়েছে ।। তখন আমি গাল ফুলিয়ে বসে ছিলাম তখন ওরা বলেছিলো,,,
— মাম্মা তুমি রাগকরো না।। এটা পাপা রিটার্ন গিফট ।। পাপার কাছে আমার বারডে গিফ্ট হিসেবে তোমাকে চেয়েছিলাম।। আর পাপা তোমাকে এনে দিয়েছে।। পাপার জন্য তোমাকে পেয়েছি ,, কিন্তু সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখবো মাম্মা।।।
ছোট দুটো বাচ্চাদের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে চোখ ভরে এসেছিলো আমার।। কিন্তু ওদের শুভ দিন বলে অশ্রু ফেলিনি।।তাই ভাবলাম আবিরের জন্য কিছু করি …..!!!
সারা রুমে বেলুন দিয়ে সাজিয়েছি ।। সব বেলুন গুলো লাল রঙের । তার ভেতরে লেখা ধন্যবাদ।।আবির ঘরে আসতেই তার চোখে বেঁধে দিয়ে আমার সামনে বসলাম।। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম ওর সামনে ,,,তার হাত দুটি ধরে চুমু খেলাম।।। তারপর বলতে লাগলাম….
— ধন্যবাদ আবির আমার জীবনে আসার জন্য।। আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য।। আমার ছোট বাচ্চাদের সামলানোর জন্য।। আমি কোমায় যাওয়ার পর আমার আমার জিনিসগুলো আঁকড়ে বেঁচে থাকার জন্য।। আমি ধন্য আপনার মতো একজন জীবন সঙ্গী পেয়ে সারাজীবন প্লিজ পাশে থাকবেন আমার।।
আর কিছু বলার আগেই আবির হাত দিয়ে ইশারায় থামিয়ে দিলো ।। চোখের বাঁধন খুলে বলতে লাগলো…
— আমি নিজের ভুলের মাসুল দিয়েছি মাএ।। এর চেয়ে বেশি কিছু না ।।
— সে যাই হোক।। থাকবেন পাশে….!!!
— থাকতে পারি যদি একটা মিষ্টি গান শোনাও আমাকে ।। (আমি)
–;ঠিক আছে ,,তাহলে আপনাকেও গাইতে হবে
বলেই গাইতে শুরু করলাম……..!!!!
🎶🎶 কতোবার বোঝাবো বল
কতোবার জানাবো বল…..
নিঃস্ব এ জীবনে শুধু তুই আমার সম্বল ….. (২)
আমার আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ,, গলায় একটা চুমু খেলো ।। তারপর আবির গাইতে শুরু করলো…..
🎶🎶 এক পা দু’পা করে তুই এলি এমনে
সেখালি আমাকে ভালোবাসার মানে ..!!
একপা দু’পা করে তুই এলি এমনে
সেখালি আমাকে ভালোবাসার মানে…!!
স্বপ্নে দেখেছি তোকে দুচোখ ভরে
তোর ছোঁয়া না পেলে এই মন বরই চন্ধল..🎶🎶
🎶🎶 কতোবার বোঝাবো বল
কতোবার জানাবো বল….
নিঃস্ব এ জীবনে শুধু তুই আমার সম্বল..🎶🎶
এইটুকু গেয়ে থেমে আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।। আবিরও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো!!
______________ সমাপ্ত_______________