কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-৮+৯

0
3720

#কতোবার_বোঝাবো_বল
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০৮

চোখ খুলতেই নিজেকে হসপিটালের বেড়ে আবিস্কার করলাম।। কিন্তু আমি কি করে এখানে আসলাম।।কালকে রাতের কি হয়েছিল মনে করতে লাগলাম।। অবশেষে মনেও পড়ে গেল।। নিজের দিকে তাকিয়ে পুরো হা হয়ে গেলাম।। হাতে ব্যান্ডেজ,,পায়ে ব্যান্ডেজ ইভেন্ট মাথাও ব্যান্ডেজ।।হাতে স্যালাইন চলছে ।।উঠে বসার ও শক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।। সারা শরীরে ব্যাথা অনুভব করলাম।। আর জ্ঞান ফিরেছে দেখে নার্স আমার বাড়ির লোকদের খবর দিতে গেছে।। কিছুক্ষণ এর মধ্যে তাঁরাও ভেতরে চলে এসেছে।। সবার চোখে আমাকে হারানোর ভয় আমি খুঁজে পেয়েছিলাম।। সবার চোখের কোনে অশ্রু।। পাপার পাশে চোখ পড়তেই দাদু- দিদাকে দেখতে পেলাম।। কিন্তু দাদু দিদা তো গ্ৰামে থাকে ।।গ্ৰাম থেকে আসতে কম করে হলেও ৮-১০ ঘন্টা লাগে ।। আমি বাহিরে তাকিয়ে সময় অনুভব করার চেষ্টা করছি।। বাহিরে এখনো রাত ,, কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব।। তখন তো রাত ১ কিংবা ২ ছিলো।। যদি তখন শুনে তাহলে আসতে আসতে সকাল ১০ টা কিন্তু এখনো রাত আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।। আমি আর কিছু না ভেবে উঠে বসার চেষ্টা করছি।।

— একদম উঠবি না,,শুয়ে থাক !!আমাদের টেনশন দিয়ে কি পাস বলবি তো ?? যদি আজকে জানভি ইমপ্রটেন্ট কাজে ঐদিকটায় না যেতো ,,তাহলে কি হতো ভাবতে পারছিস !!( কড়া কড়া গলায় রাইসা)

এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম,, আমি যাকে আবছা আবছা দেখেছিলাম,,সে আর কেউ না জানভি ছিলো ।।

— একদম ঠিক,, যদি তোর কিছু হয়ে যেতো ,, ১ টা দিন ধরে কেউ কিছু খাচ্ছে না ।। তোর চিন্তায় বিভোর।। বাবা মা তোর খবর শুনে সেই সকালে ছুটে এসেছে,, এখন পর্যন্ত দাঁতে একটি কুটোটিও কাটে নি।।( তানজিম)

কি বলবো ,, বুঝতে পারছি না।। সত্যি ই তো আমার জন্য,,যদি আমি ঐ লোকটার বিপদে পাশে না দাড়াতাম তাহলে এমন কিছু হতো না।। কিন্তু আন্যর বিপদে তাকে সাহায্য না করে কিভাবে মাথা নিচু করে থাকি ।। হঠাৎ ও লোকটার কথা মাথায় আসতেই,,আমি তার কথা জিজ্ঞাসা করলাম….

— বলছিলাম কি,,ঐ লোকটা??

— তোর ঐ লোকটার কথা চিন্তা করতে হবে না,, তখন তোর ঐ অবস্থায় দেখে আমি আর তিনি তোকে এই হসপিটালে এডমিট করি ।। তিনি সকাল হতে না হতেই এখন থেকে চলে গেছে।। একবার ভেবে দেখ কেমন লোক ।। তারপর তোর আর একবার ও খবর নেই নি।। আরো ভাব এইসব দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষের কথা।।( জানভি)

— আরে থামবি তোরা আমার দিদিভাই অসুস্থ ‌। আর তোরা এইসব কথা কথা ওকে বলছিস ।। ও তো আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে ।। তোরা সবাই যা এখান থেকে।।( ধমকিতে অরিদুল)

( অরিদুল আমার দাদু,, অরনিমা আমার দিদা )

তারপর সবাই চলে যাই আমি দিদার কোলে মাথা রাখি ।। দিদা কে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অনেক গল্প করলো ।। সাথে দাদুও ।।

🌿🌿🌿

৩ দিন হসপিটালে আর ৪ দিন বাড়িতে থাকার পর এখন আমি অনেকটাই ফিট ।। তবে হাতে ,পায়ে আর মাথায় থাকা ব্যান্ডেজ এখনো সম্পূর্ণ খোলা হয়নি ।। প্রতিদিন নতুন নতুন ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়।। সপ্তাহে একবার করে চেক-আপ করতে বলেছে।। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে টিস্যু ডেমেজ হয়ে গেছে।। যদি প্রপার চিকিৎসা না নেই তাহলে পড়ে বড় সমস্যা দিতে পারে ।।এই কয়দিনে আমাকে একদম একা ছাড়ে নি কেউ।। সারাক্ষণ কেউ না কেউ পাশে ছিলো ।। ফোনটা তো একদম দেয় নি ।। ফোনের কারণে হাতের ব্যাথা টা বাড়তে পারে তাই ডাক্তার দিতে বারন করেছে।।তবে আজকে দিয়ে গেছে।। এই কয়দিনে আমাকে দেখতে অনেক বার আমার ফ্রেন্ডরা এসেছে।। অনেক কথা হয়েছে ওদের সাথে।।
আজকে আপিকে দেখতে পাএ পক্ষ আসবে ।। আসবে বললে ভুল হবে।। বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে আসবে।। তাই সবাই ব্যস্ত।। আমার পাশে কেউ নেই।। আমার একা একা বোরিং লাগবে তাই ফোনটা আজকে দিয়ে গেছে।। বেডের পাশ ফোনটা হাতে নিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন টা অন করলাম।। কিন্তু কোনো মেসেজ বা কল নেই আমার সেই মিষ্টি প্রেমিকের।। হয়তো আমি তার কথা রাখতে পারি নি,,তাই অভিমান করেছে ।। আমিও ফোনটা রেখে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।।

হঠাৎ একটা মেসেজ এর আওয়াজে পেছনে থেকে ফোনটা নিয়ে দেখি…
আমার সেই মিষ্টি প্রেমিক।।না চাইতেও ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল।। তাড়াতাড়ি সিন করে নিলাম।।

“” কোথায় ছিলে তুমি,,হে।। জানো কতো টেনশনে ছিলাম।। আমি অভিমান করেছি,,তুমি ভাঙাবে ।। না ,,, তুমি কি করলে।। ৭ দিন ধরে না অনলাইনে আসছো ,,না ভার্সিটিতে””

কি রিপ্লাই দিবো ভেবে পাচ্ছি না।। তাই রিপ্লাই না দিয়ে ফোনটা রাখতেই আবার নোটিফিকেশন চলে এলো ।।সিন করে দেখলাম…

“” এতো এটিটিউট কিসের,, হে তোমার।। রিপ্লাই দিচ্ছো কেন””

— আমি কাউকে এটিটিউট দেখাই না ,, দেখান তো আপনারা ,, এই যে আড়ালে আড়ালে থেকে আমাকে ফলো করেন “”( আমি টেক্সট করলাম)

— এটাকে এটিটিউট বলে না ,,এটাকে বলে সেইভ থাকা ,, বুঝলে।। তোমার সামনে গেলে যদি তুমি আবার আমাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ধরো।””( অন্যপাশের টেক্সট)

— ও আচ্ছা,,তাই বুঝি!!( আমি টেক্সট করলাম)

সাথে ,, সাথে ওপার থেকে একটা রিপ্লাই আসলো ,,সিন করবো ,,,তার আগেই রুমের দরজায় নক করলো।। তাকিয়ে দেখি,,, ঋতু আর তাসফি এসেছে।। তার আর মেসেজেটা সিন না করেই রেখে দিলাম।।

— এখন কেমন আছিস,, দোস্ত!!( ঋতু)

— এই তো আলহামদুলিল্লাহ!!তোরা??(আমি)

— আলহামদুলিল্লাহ!!

তারপরে একে অপরের সাথে আলাপ করতে করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।।

২ঘন্টা ধরে সেজে তৈরি হয়ে নিলাম পারফেক্ট আমার দিদার মতো ।। একদম সাজটা তেমন হয়নি তবে একটু বুড়ো বুড়ো লাগছে ।। জানভিকেও সাজিয়ে দিলাম আমার দাদুর মতো ।। আর ঋতু আর তাসফিকে পাঠিয়েছি,,দাদু দিদার সাথে গল্প করতে ।। আর বারবার বলে দিয়েছে,,যাতে কিছুতেই রুমের বাহিরে না বেরুতে পারে ।।
মাথায় ঘোমটা টা একটু টেনে দিয়ে দিলাম ,,যাতে ব্যান্ডজটা দেখা না যায় ,,হাত দিয়ে ভালোভাবে আঁচলটা পেঁচিয়ে রেখেছি যাতে হাতের ব্যান্ডজটা দেখা না যায়।। শাড়িটা একটু নিচে নামিয়ে পড়েছি যাতে পায়ের ব্যান্ডেজ টা দেখা না যায়।।

— কি রে তুই রেডি তো,,??( জানভি)

— হম,,আমি রেডি ।। তোমাকে আর কতবার বলবো তুই না তুমি বলবে ,, বুঝতে পারো না।।যদি ধরা পরে যাই তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন!!( অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে আমি)

— আচ্ছা ঠিক আছে,,,আগে তো ওখানে যাই ,,,তারা তো এসেছে আরো অনেকক্ষণ আগেই এসেছে ‌। আর আপিকেও নিয়ে গেছে।।( জানভি)

— জানি ,, আর হে একদম আমার নাম ধরে ডাকবে না।।ওগো ,,হে গো বলে ডাকবে মনে থাকবে !!(আমি)

— হে মনে থাকবে গো !!( জানভি)

— চুপ এখন না ,,ওখানে গিয়ে ,,চলো??(আমি)

তারপর আমরা একসাথে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলাম।। আমি হাঁটতে পারছি না,,জানভি আমাকে ধরে নিয়ে হাঁটছে ।। বেচারা পরেছে মহামুসকিলে ।। ও একদম রাজি হতে চাই নি।। আমি জোর করে রাজি করিয়েছি‌।
ওখানে যেতেই সবাই আমাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে,,,ভুত দেখেছে ।। তাকিয়ে থাকবেই না বা কেন ।। আমাদের তো এর আগে কখনো দেখে নি।। কিন্তু তাদের চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি আমি ।।কারন সামনে থাকা মানুষটিকে কখনো আমি আমাদের বাড়িতে আশা করি নি।। শেষ পর্যন্ত কিনা নিজের ক্রাশকে আমার জিজু ডাকতে হবে ।।

চলবে…..💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০৯

সবাই আমার পড়নে এমন উদ্বোর পোশাক দেখে,, আমার দিকে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছে।এখন আমি কি করবো,,কিছুই বুঝতে পারছি না।। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,,,তাই জোরে জোরে রাগি গলায় বললাম….

— তোমাদের কি কোনো আদব কায়দা শেখায় নি কো !! বড়দের যে সালাম দিতে হয় সে জানা নেই বুঝি,, ( জানভিকে উদ্দেশ্য করে আমি) ওগো ,, শুনছো তুমি,,, এমন ঘরে আমি আমার দিদি ভাইকে কিছুতেই বিয়ে দেবো না কিন্তু বলে দিলাম!!( দিদার মত করে নাক টেনে আমি)

সবাই আমার কথা শুনে অবাকের চুরান্ত সিমায় পৌঁছে গেছে।। কেউ কিছু বলার আগেই আমি জানভিকে একটা খোঁচা দিলাম।। জানভি ও আমার তালে তাল মিলিয়ে বললো…..

— আমিও তো তাই দেখছি ।। তুমি যা বলবে তাই হবে ,, এই ছেলের সাথে কিছুতেই আমাদের বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিবো না!( জানভি)

জানভির কথা শুনে নিহাল দাঁড়িয়ে বললেন….

— আসসালামুয়ালাইকুম চাচা,,, কিছু মনে কইরেন না,,চাচাজান ।। আসলে আমি বুঝতে পারি নাই ।।( নিহাল আবিরের বাবা,,নিলিমা আবিরের মা)

এতোক্ষণে খেয়াল করলাম,,,এই লোকটা আমার পরিচিত।। কোথাও একটা দেখেছি ,,,, কিন্তু কোথায় দেখেছি ,,,ঠিক মনে করতে পারছি না।। আর এখন মনেও করতে চাইনা।।তাই বললাম…

— সেটা না হয় বুঝলাম বাপু,,, গুরুজনদের যে পা ধরে সালাম করে হয় এটা জানো না বুঝি । বুঝলাম তখন বুঝতে পারো নি ,, এখন তো পেরেছো,, এখন তো করতেই পারো!!(আমি)

আমার কথা শুনে, নিহাল উঠে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে আসি ,,, আমার তাড়াতাড়ি সেখান‌ থেকে সরে এসে পরিস্থিতি সামলাতে কড়া কড়া গলায় বলি….

— আমি বলে কয়ে আদব কায়দা পছন্দ করি না!!(আমি)

— আমাদের কিন্তু আদব কায়দা শিখাতে হয় না,,,আমরা কিন্তু সব আগে থেকেই জানি !!( আমার দিকে এগুতে এগুতে আবির)

আবিরের কথা শুনে আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখি,,,সে
আমার দিকে নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ,,, ক্রমে ক্রমে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।। তারপর আমার কাছে এসে আমাকে টেনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলো।। তার এক হাত আমার পিঠের পেছন থেকে ,, শাড়ির ফাঁক দিয়ে আমার পেট চেপে আছে ,, অন্য হাত আমার কাঁধে রেখেছে।।এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল আমার সারা শরীর।। কিছু বলতে পারছি ,,, সব কথা আটকে গেল যেন গলায়।। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবির বলে উঠলো……

— আরে দাদিমা ,,চুপ করে আছেন কেন ?? কিছু বলবেন না!!

— বেশি কিছু বলবো না,,, আমার ৩ টা প্রশ্ন করার আছে ,, তার উওর দিলেই হবে !!(আমি)

— জি ,,, অবশ্যই!!বলুন দাদিমা!!( আমার গালে একটা টাইট কিস করে আবির)

— আপনি,,না সরি আই মিন ততুমি কি করো ??(আমি)

— আমি এখনো পড়াশোনা করি ,,, অনার্স ফাইনাল ইয়ার!!২য় টা ।।(আমার কাঁধে আবিরের থুতনিটা রেখে )

শরীরে যেনো প্রতি মুহূর্তে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে।। আবির যতোই আমার কাছে আসছে ততোই যেন আমার সারা শরীর শিহরিত হচ্ছে।। কিছুতেই কমছে না।। বরং বেড়েই চলেছে।।

— রান্না করতে পারো তুমি!! (আমি)

— হ্যাঁ পারি তো!! সব কিছুই!!( আমার আঙ্গুলের ফাকে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে আবির)

এবার যেন আমি নিজেই বিদ্যুৎ হয়ে গেলাম।।কেউ কিছু বলছে না।। কারন সবটা সবার দেখার বাহিরে ।। আমি একবার জিভ দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বললাম…

— বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করতে পারো ??(আমি)

— সেটা পারি না,, আগে তোমাকে বিয়ে করে নেই।। তারপর নাহয় আমাদের বাচ্চা মানুষ করবো ।। শুধু মানুষই করবো না।। পুরো একটা ক্রিকেট টিম বানাবো।।আর আগামী ওয়ার্ল্ড কাপ আমরাই জিতবো ।। যদি তুমি চাই ।।( এবার আর তার হাতটা আমার পেটেই শুধু চেপে নেই ,,, সেটা ক্রমে ক্রমে আমার পেটে স্লাইড করছে।। কখনো উপর থেকে নিচে তো কানো ডান থেকে বামে)

একদিকে আর পেটে তার স্পর্শ তো অন্যদিকে আমার কাঁধে তার থুতনি ।। আবার আমার হাতের আঙ্গুলের ফাকে তার আঙ্গুল।। সাথে তার নেশা ভরা বাঁকা চাওনি।। সব কিছু যেনো মিলে মিশে একাকার হয়ে আমাকে কন্ট্রোল লেস করে দিচ্ছে।। আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে ,, তাকে আমার থেকে সরাতে সরাতে বললাম….

— মমমমানে!!( তুতলিয়ে আমি)

— নো ,,,মানে ।। দাদিমা।। তুমি বলেছিলে ৩ কে প্রশ্ন করবে ।। চারটা নয় !!তাহলে এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও !!( আবির)

— তোমার আবার কি প্রশ্ন।।(আমি)

— দাদাজান তোমাকে খুব ভালোবাসে ,,,,তাই না দাদিমা!!( আবির)

আবিরের কথা শুনে আমি একবার জানভির দিকে তাকালাম।। সেখনো দাঁড়িয়ে আছে।। সব জেনো তার মাথায় ওপর দিয়ে যাচ্ছে।।আমি দৃষ্টি সরি জানভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম….

— ককে বলেছে !!( তুতলিয়ে আমি)

— তুমি তো এখনো সাজগোজ করো ।। এটা বুঝি আমার দাদাজানকে ইমপ্রেস করার জন্য!!( হাতের ফাঁক থেকে আঙ্গুল বের করে আমার ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে আবির)

এখন আমি ভালো ভাবে বুঝে গেছি,,যে আবির আমাকে সত্যি ধরে ফেলেছে ।। তাই আর কোনো কথা না বলে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড় লাগালাম।। আমার দৌড় দেখে জানভিও দৌড় লাগালো।। কিন্তু আমি বেশি দূর যেতে পারলাম না।। নামিয়ে শাড়ি পড়ার কারনে ,, শাড়িতে বেঁধে ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে যাই ।। এমনিতেই মুখ থেকে আহহহ বেরিয়ে যায়।।আমাকে পড়ে যেতে দেখে জানভি দৌড়ে আমার কাছে আসে ।।

— কি হয়েছে মিষ্টি জান ,, বেশি ব্যাথা লেগেছে। দাড়া আমি বরফ নিয়ে আসছি!!( আমার পায়ে হাত বোলাতে বোলাতে জানভি )

এই ঘটনার পর আমাদের চিনতে আর কারো বাকি রইল না।। সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে গেলো ।। ফুফা জোরে বললো….

— তোরা কি জীবনেও ভালো হবি না ,,,এমনিতেই ফাটা ফুটা হয়ে আছিস।। এবার পড়ে পুরো ভেঙ্গে গেছিস।। আর এই যে ছোটোরাজ( জানভিকে উদ্দেশ্য করে অজয়) তুই তো দেখতে পারছিস ওর এই অবস্থা,,, তাহলে তো অন্তত ওকে ,,এইসব করতে না করতে পারতিস!!( অজয়)

— একদম ঠিক,,ও তো বাচ্চা।। তুই তো আর বাচ্চা নস ।।( জেরিন)

— হে যতো দোষ নন্দ ঘোষ,, আমার কোনো দোষ নাই।। তোমার ভাইঝিকে কিছু বলছো না,,,আমাকে কেন বলছো !!( জানভি)

আর কোনো কথা না বলে জানভিকে ওখান থেকে নিয়ে এলাম।।আমরা আসতেই ড্রয়িং রুম থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল।।এসে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রুমে পায়চারী করছি আর জানভি কে কথা শোনাচ্ছি।। ভাবলাম কি আর হলো কি ।। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে জানভি উঠে দরজা খুলে দেয়,, তাকিয়ে দেখি,,, ভাইয়া এসেছে।। আমাদের নিচে যেতে বলেছে।। আমি আর জানভি ভয়ে ভয়ে নিচে গিয়ে মাথা নিচু করে আছি ।।

— আরে হানি যে ।। আমার আগেই ভাবা উচিত ছিলো,,,এইরকম দুষ্টু বুদ্ধি যে শুধু তোমার মাথায় থাকে ।।(আয়ান)

এতোক্ষণ পরে খেয়াল করলাম আয়ানও আছে।। আবির যা আমাকে চেপে ধরেছিল।।

— হানি তুমি এখানে,, কি করছো।। এতোক্ষণ তো তোমার সাজের জন্য তোমাকে চিনতে পারি নি।।( নিহাল)

আমি আয়ানের থেকে চোখ ফিরিয়ে তার দিকে দিতেই চমকে উঠলাম।। এনি তো সে যার ব্যাগ বাঁচাতে গিয়ে আজ আমার এই অবস্থা।। তাই তো এতোক্ষণ তাতে চেনা চেনা লাগছে।।
তারপর তার সাথে অনেক কথা বললাম।। সে তো আমার অনেক প্রশংসা করলো ।। সাথে শাড়িতে বেল্ট পড়ার বিষয় টা নিয়ে মাম্মামেরও অনেক বাহবা দিবো ।। সবাই তো অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো ।তারা এই প্রথম বার শাড়ির সাথে বেল্ট পড়ার কথাটা জানলো।।

___________

বেডে শুয়ে শুয়ে আজকের করা দুষ্টামির কথাগুলো ভাবছি ।। সাথে আবিরের করা প্রতিটি স্পর্শ চোখ বন্ধ করে অনুভব করার চেষ্টা করছি।। যতোবারই চোখ বন্ধ করি ,,ততবারই মনে হয় আবির এখনো আমাকে ছুঁয়ে আছে ।। সত্যি ই তখনকার মুহূর্তটা অনেক স্পেশাল ছিলো ।।যাতে রয়েছে কিছু ভালোলাগা,, কিংবা আনন্দ।। এইসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখনো যে পাড়ি জমালাম ঘুমের রাজ্যে তা আমার নিজের ই জানা নেই।।

চলবে ……💞💞