কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব-০৬

0
357

#কলঙ্কিত_প্রেমের_উপন্যাস {৬}
#Rawnaf_Anan_Tahiyat

সারাটা দিন স্কুলে আর কোচিং এ দৌড়াদৌড়ি করে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলো প্রিয়া।ড্রাইভার আঙ্কেল গিয়ে নিয়ে এসেছে তাকে। বাসায় ঢুকতেই নাজিম সাহেব প্রশ্ন করলেন,,

‘ মামণি, তামিম নাকি আমাদের বাসায় এসেছিল তোমার কাছে?”

‘ হ্যা,বাবা। উনি এসেছিলেন আর আমাকে লিফট ও দিয়েছেন।’

নাজিম সাহেব আর কোনো প্রশ্ন করলেন না যেমন খবরের কাগজ পড়ছিলেন তেমন পড়তে থাকলেন।প্রিয়া ও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

____________________________________________________________ 🌼

সময় সময়ের গতিতে এগিয়ে চলছে । দেখতে দেখতে ই দুই মাস কেটে গেল। সেদিনের ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই শ্রেয়ার থেকে পাঁচ বছর বেশি বয়সী এক লোকের সাথে ওর বিয়ে দিয়েছেন হুমায়ূন সাহেব।যেই কান্ড ঘটিয়েছে মেয়ে, এরপর আর তাকে বাসায় রাখা সম্ভব ছিল না, চারদিকে ছিঃ ছিঃ পড়ে গেছে।শ্রেয়া যদিও বিয়েতে রাজি ছিল না কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে নি।যার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে প্রেগন্যান্ট হয়েছে সেই ওকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে অন্য আরেকটা মেয়ে কে নিয়ে। তামিমের সাথে সম্পর্ক টা নিয়ে কখনোই খুশি না শ্রেয়া,ওমন রোগা পাতলা বয়ফ্রেন্ড তার একদমই পছন্দ ছিল না। উপরে উপরে তামিম কে খুব ভালোবাসি বললেও তামিমের আড়ালে অন্য একটা ছেলের সাথে রিলেশনশিপ এ জড়ায়।যার ফলাফল সে এখন পাচ্ছে। বিয়ের দু’দিন পর তামিমের সাথে দেখা হয়েছিল হসপিটালে, ভেবেছিল তামিম ওর সাথে কথা বলবে ‌কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে তামিম ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেল।বুঝলো না শ্রেয়া,যে ছেলে তাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারতো না সে ছেলে আজ তাকে ইগনোর করছে।কি আশ্চর্য!!!!

_________________________________

আজ প্রিয়ার স্কুলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান।প্রিয়া এমনিতেই পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো বলে ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব ওর হাতেই পড়েছে। স্কুল সাজানো, সবাইকে ইনভাইটেশন কার্ড দেওয়া,সবকিছুর আয়োজন করা স্কুল কেবিনেট আর ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব। সেজন্য প্রিয়া আজকে খুব সকালে ঘুম উঠে পড়লো।ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হচ্ছে এমন সময় রাওনাফ ওকে ভিডিও কল করলো।প্রিয়া কলটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করল,,

‘ আপাই, কেমন আছো তুমি?’

‘ আমি ভালো আছি।আরে এটা কি আমাদের প্রিয়ু নাকি রে, আমি তো চিনতেই পারছি না।’

‘ কেন?’

‘ কতদিন ধরে তোকে দেখি না।এর মাঝে তুই তো খুব কিউট হয়ে গেছিস প্রিয়ু।’

প্রিয়া রাওনাফের কথা শুনে মুচকি হাসলো।আর কিছুক্ষণ কথা বলে কলটা কেটে দিল এরপর রেডি হতে লাগলো। আগে নিজের প্রতি কোনো যত্ন নেয়নি কিন্তু সেদিনের পর থেকে পড়াশোনা প্লাস নিজের প্রতি ফুলফিল যত্ন নিয়েছে। একটু পরেই নাজিম সাহেব ডাকলেন,,

‘ মামণি তাড়াতাড়ি এসো, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।’

‘ আসছি বাবা।’

রুম থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়া।সাদা স্কুল ড্রেস,সাদা কেডস তার সাথে স্কুল ড্রেস হিসেবে সাদা এপ্রোন, খুব সুন্দর দেখতে লাগছে তাকে। নাজিম সাহেবের সাথে গাড়িতে করে স্কুলের দিকে রওনা দিলো।

🍂

সেমিস্টার শেষের দিকে রাওনাফের, ফাইনাল এক্সাম আর বেশি দিন দূরে নয়। কঠোর পরিশ্রম করছে সে,যাই হয়ে যাক না কেন ভালো রেজাল্ট তাকে করতেই হবে। সকাল এগারোটায় একটা কাজে কলেজ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো রাওনাফ। একটু এগোতেই কেউ তাকে নাম ধরে ডাকলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে শ্রেয়া দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে এগিয়ে গেল রাওনাফ,শ্রেয়াকে আজকাল বেশ গুলুমুলু লাগে।

‘ কি ব্যাপার শ্রেয়া, তুই এখানে কি করছিস?’

‘ তোর সাথে দেখা করতে এলাম। আজকে বিকালেই নিউ ইয়র্কের ফ্লাইট আমার,তোর দুলাভাইয়ের ওখানে কি যেন একটা কাজ পড়ে গেছে সেজন্য আমাকেও নিয়ে যাবে। ভাবলাম যাওয়ার আগে তোর সাথে দেখা করে যাই একবার। ভালো কথা প্রিয়া কেমন আছে রে? তার সাথে সেদিন যা করেছি তার শাস্তি আজোও পেয়ে চলেছি আমি। তামিম কি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে?’

‘ আমার দুলাভাই? ওহহহ আচ্ছা তোর যার সাথে সেদিন বিয়ে হলো সেই নাকি।’

‘ হ্যা।’

‘ প্রিয়া খুব ভালো আছে,আর সেদিন তুই কোন ভুল করিস নি আমার মনে হচ্ছে।কজ তুই সেদিন না থাকলে প্রিয়ার তার থেকে দ্বিগুণ বয়সী একজনের সাথে বিয়ে হয়ে যেতো আর ওর জীবনটা শেষ হয়ে যেতো। সেখানে তুই ছিলি তাতে ও সাময়িক কষ্ট পেলেও আখেরে লাভ ওরই হয়েছে। আসলে কি জানিস তো,ওয়াদা দেওয়া খুবই খা/রা/প জিনিস। সামান্য একটা মুখের কথা রাখার জন্য প্রিয়ার সাথে তামিম স্যারের বিয়ে হতে যাচ্ছিল, কতটা অসামাঞ্জস্য বিষয় টা একবার ভেবেছিস?’

শ্রেয়া রাওনাফের কথায় হাসলো শুধু কিছু বললো না।কোথা থেকে কি ঘটে গেল তাদের জীবনে, সেটা ভেবেই অস্থির হয়ে পড়ে।

‘ তুই চিন্তা করিস না,প্রিয়া একদম ঠিক আছে।ওর তোর প্রতি কোনো রাগ নেই। তামিম স্যার মনে হয় তোকে ক্ষমা করে দিয়েছে, বুঝতে পেরেছে হয়তো যে কাউকে প্রয়োজনের বেশি ভালোবাসা উচিত নয়। আচ্ছা আমি এখন আসি, নাহলে দেরি হয়ে যাবে রে।’

রাওনাফ চলে গেল।শ্রেয়া ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সবাই ওর থেকে দূরে সরে গেছে, সেটা ওর নিজের দোষেই।প্রিয়া ওকে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু এখন ওর সাথে কোন কথাই হয়না।বাবা এক ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে দিয়ে দিল,যাকে ওর একটুও পছন্দ না। তারপরও ওর সাথে সংসার করতে হচ্ছে তাকে,এই অবস্থায় তো আর কেউ তাকে বিয়েও করতো না।বলা চলে লোকটা তাকে বিয়ে করে উদ্ধার করেছে সমাজের চোখে আরো বেশি খা/রা/প হওয়া থেকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল নিজের গন্তব্যে, একটু দূরেই ওর স্বামী গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ওর জন্য।

🍂

সারাটা দিন খুব আনন্দ করে কাটিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলো প্রিয়া। ফুরফুরে মেজাজে বাগানে হাঁটাহাঁটি করছে এসময় তামিম ওদের বাসায় এলো। পুরো বাসা ফাকা দেখে তামিমের সন্দেহ হলো, আদৌও কেউ আছে কি এই বাসায় নাকি প্রিয়া ভুত প্রেতের সাথে থাকে।গেটের সামনে ওকে দেখে মালিয়া দৌড়ে গিয়ে প্রিয়া কে ডেকে নিয়ে এলো। তামিম কে দেখে প্রিয়া যতোটা অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হলো তামিম প্রিয়া কে দেখে ।চেনাই যাচ্ছেনা প্রিয়াকে,দিনে দিনে সুন্দর হচ্ছে।

‘ আপনি এখানে কি করছেন?’

তামিম এর জবাবে কি বলবে ভেবে উঠতে পারল না।সে এসেছিল প্রিয়াকে ওদের বাসায় ইনভাইট করতে,কাল সারাহর এংগেজমেন্ট।সারাহ্ ওর একমাত্র ছোট বোন, এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
সেদিনের পর সোবহান চৌধুরীর আর এমুখো হওয়ার সাহস হয়না তাই তিনি তামিম কে পাঠিয়েছেন প্রিয়া আর নাজিম সাহেব কে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

‘ আঙ্কেল বাসায় আছেন? উনার সাথে আমার একটা দরকার ছিল।’

‘ আমার সাথে তোমার কি দরকার তামিম?’

‘ আঙ্কেল, কালকে সারাহর এংগেজমেন্ট।বাবা বলেছেন আপনি না গেলে নাকি তিনিও থাকবেন না অনুষ্ঠানে। আমি সেদিন যা করেছি এরপর জানি ক্ষমা চাওয়ার কোনো উপায় নেই তারপরও আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনি প্লিজ আর আমাদের উপর রাগ করে থাকবেন না।’

‘ হুম, চেষ্টা করবো যাওয়ার।প্রিয়া মামণি তোমার কোন অসুবিধা হবে কি গেলে?’

প্রিয়া শুধু মাথা নেড়ে না বলল, তার কোনো সমস্যা হবে না। তামিম সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে চলে গেল।

______________________________________

‘আম্মাজান, আমি কোন শাড়িটা পরমু?’

সবাই মিলে কালকে অনুষ্ঠানের জন্য ড্রেস সিলেক্ট করছে তখন রোজিনা মাঝখান থেকে বলে উঠলো। আইরিন বেগম যারপরনাই বিরক্ত হয়ে গেছেন রোজিনার এইসব কর্মকাণ্ড দেখে।যখন তখন সবার সামনে আম্মাজান বলে উঠে, আগে তামিম কে ভাইজান বলে ডাকতো কিন্তু এখন ডাক্তার সাব ছাড়া ডাকেই না। বাসায় মেহমান আসলে এমন ভাব ধরে যেন সে কাজের মেয়ে না, বাসার বউ।বেশ বিরক্ত হয়ে আজকে জিজ্ঞেস করলেন,,,,

‘ রোজিনা, তুই কোন শাড়ি পরবি সেটা আমি পরে বলছি।তার আগে তুই আমাকে বল, তুই আমাকে আম্মাজান বলে ডাকিস কেন? তুই কি এই বাড়ির বউ?’

রোজিনা আইরিন বেগমের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল। ওড়না টা মুখের সামনে টেনে আনলো, লাজুক স্বরে বলল,,,

‘এইসব কি কথা যে কন আম্মাজান, আমি বুঝি লজ্জা পাইনা? আমি ই তো এই বাড়ির ভাবি বউ। সেদিন না আপনে কইলেন ডাক্তার সাবের সাথে আপনে আমার বিয়া দিবেন।’

‘ কিইইইইইই?’

#চলবে…..……………. ইনশাআল্লাহ