#ক্যামেলিয়া
#ফারহানা_চৌধুরী
[পর্ব ১৬] {ইউ কমপ্লিট মি…}
❌কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ❌
ঘুমের মাঝে পুরুষালী সুঘ্রাণ পেয়ে ইনায়া ভ্রু কুঁচকে নিলো। নড়েচড়ে উঠলো। ঘুরে শুলে আলিঙ্গন আরো দৃঢ় হলো। ইনায়া পিটপিট করে চোখ মেলে চাইলো৷ ধ্রুবকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো কিঞ্চিৎ। ঘুমু ঘুমু গলায় জিজ্ঞেস করল,
-“কোথায় ছিলেন আপনি?”
ধ্রুব কিছু বললো না। হাতের বেষ্টনী শক্ত করে মেয়েটার কাঁধে মুখ গুঁজে শুয়ে রইলো। ইনায়া হাত রাখলো ধ্রুবের পিঠে। হালকা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-“কিছু হয়েছে?”
ধ্রুব তার কাঁধে মুখ গুঁজেই মাথা নাড়ালো দুপাশে। ইনায়া আবার জিজ্ঞেস করলো,
-“তাহলে এমন করছেন কেন?”
-“কেমন করলাম?”
-“আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?”
বলতে বলতে ডান হাতের উল্টো পিঠ ছোঁয়ালো ধ্রুবের কপালে। ধ্রুব কিছু বললো না। চুপচাপ তাকিয়ে রইলো মেয়েটার মুখের দিকে৷ ইনায়ার কেমন অসহায় লাগলো। সে কাতর গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-“কি হয়েছে বলুন না! এমন লাগছে কেন চোখ-মুখ?”
ধ্রুব আবারও জড়িয়ে ধরলো ইনায়াকে। হালকা স্বরে বলল,
-“আমার ভালো লাগছে না, সোনা।”
ইনায়ার কেমন যে লাগল! সে ফ্যাসফ্যাসে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-“বেশি খারাপ লাগছে?”
ধ্রুব আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে,
-“খুব খারাপ লাগছে।”
ইনায়া চিন্তিত গলায় ফটফট করে বলতে লাগলো,
-“হঠাৎ এমন লাগছে কেন? জ্বরও তো নেই৷ কিছু খাবেন ধ্রুব?”
-“হুম!”
ইনায়া ভ্রু গুটিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“কোনো কিছু বানিয়ে দেবো? কি খাবেন?”
-“উম্… তোমাকে।”
একদম যা-তা অবস্থা। তবে ইনায়ার চক্ষুচড়কগাছ! এতক্ষণ ধরে এই লোক মজা করেছে ওর সাথে! কতো বড়ো ভন্ড এই লোক! ইনায়ার রাগ হলো। খুব করে বলতে মন চাইলো,
-“এই ব্যাটা? এতক্ষণ ধরে তোর অসুস্থতার খোঁজ নিচ্ছি, আর তুই আমার সাথে মশকরা করিস? তোর উচিত নুডলসের মধ্যে গুইসাপের মাংস রেঁধে খাওয়া। অসহ্যকর লোক!”
তবে স্বীয় ব্যক্তিত্বের আবরণে আবৃত চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে হওয়ার ফলে ইনায়া তা বলতে পারলো না। ইনায়া ধ্রুবের বুক থেকে সরে আসতে চাইল, কিন্তু ধ্রুব ছাড়লো না তাকে। সরতেও দিলো না। বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। ইনায়া নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে বলল,
-“ছাড়ুন তো! আপনি সত্যিই একদম… একদমই অসহ্য।”
চুপচাপ বললেও ধ্রুব বুঝলো, বউ রাগ করেছে। ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি লুকিয়ে বলল,
-“রাগ করেছো?”
-“না। আমি তো খুশিতে নাচছি! একজন সুস্থ মানুষকে জ্বর আছে ভেবে যত্ন করতে গিয়েছিলাম, আর সে কিনা শেষে বলে আমাকে খাবে!”
ধ্রুব নিঃশব্দে হাসলো। একটু পরে হালকা গলায় বললো,
-“আমার সত্যিই খারাপ লাগছে, ইনায়া।”
ইনায়া থেমে গেল। চোখে চোখ পড়লো ধ্রুবের। ও চোখে রসিকতা নেই, ছিল শুধু একরাশ ক্লান্তি আর কিছু অপার স্পষ্টতা। সে জিজ্ঞেস করল,
-“কেন খারাপ লাগছে?”
-“জানি না, সোনা। বুকটা কেমন যেনো খালি খালি লাগছে।”
বলতে বলতে জল গড়িয়ে পড়লো তার চোখ থেকে। ইনায়া বিস্ময়ে হতবাক। দ্রুত হাতে ধ্রুবর গাল ধরলো। ব্যগ্র গলায় জিজ্ঞেস করল,
-“এ্যাই! ধ্রুব? কি হয়েছে আপনার? বেশি খারাপ লাগছে? আম্মুকে ডাকব? কাঁদছেন কেন?”
ধ্রুব চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো। কিছু বললো না। গলা কেঁপে উঠল। আচমকা আতঙ্ক পিষে মারছে তাকে। আরাফের খবর ইনায়া জানলে তখন? কি করবে ও? ধ্রুবকে ছেড়ে দেবে? না, না! এতো ভাবছে কেনো সে? বউ হয় তো তার। স্ত্রী হয়। তাহলে ছাড়বে কেন? ধ্রুব চুপ থেকে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে উঠে বসলো৷ ইনায়াও তার দেখাদেখি বিছানায় উঠে বসলো৷ ধ্রুব তড়িঘড়ি করে বলে বসলো
-“ইনায়া? আমাদের বাড়িতে চলে আসো প্লিজ?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
-“আপনাদের বাড়িতেই তো আছি।”
-“আরে! পার্মানেন্টলি চলে আসো। প্লিজ ইনায়া।”
-“হঠাৎ এসবের ভূত মাথায় চাপলো কেন মশাইয়ের?”
-“ম্যাডামকে হারানোর ভয়ে।”
-“ম্যাডামের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন নো চান্স!”
-“ইশ! বললেই হলো! ইনায়ায়ায়ায়া।”
ধ্রুবর বাচ্চামো আহ্লাদ দেখে ইনায়া হেসে ফেললো। তর্জনী আর বৃদ্ধাঙুলের মাঝে ধ্রুবর থুতনি ধরে টেনে টেনে বলল,
-“জনাবের হঠাৎ এমন ভয় পাওয়ার কারণ কি?”
ধ্রুব হাসিমুখে চেয়ে ফোড়ন কেটে বলল,
-“জনাবের বউ তো খুব সুশীল। তাই তাকে নিয়ে জনাব উঠতে বসতে ভয়ে থাকে।”
ইনায়া মিছে রাগ দেখালো,
-“কতো খারাপ আপনি! ওমনি ধাম করে বলে দিলেন উল্টাপাল্টা? অসভ্য লোক!”
বলে ধুপধাপ শুয়ে পড়লো বিছানায় ইনায়া৷ কম্ফোর্টার গলা অবধি টেনে পাশ ফিরে মরার মতো পড়ে থাকলো। যেন তার গায়ে আস্ত জ্যান্ত টিকটিকি পড়লেও তার কিছুই হবে না। বরং সে সেটা তুলে আরামসে চিবোবে। ইশ! কি বিদঘুটে চিন্তা!
ধ্রুব ইনায়ার এমন হুটহাট রাগের কারণ হাবাতের মতো চেয়ে চেয়ে দেখো। বুঝলো না সে বললোই বা কি? এতো ক্ষেপছেই বা কেন মেয়েটা? আজব!
সে কিছুটা গা ঘেঁষে শুলো ইনায়ার। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি করে ডাকলো,
-“বউ?”
ইনায়া মৃদুস্বরে ধমক দিলো,
-“চুপ করেন! কোনো বউ নাই। বউ পালাইছে!”
ধ্রুব মাথা এলিয়ে দিলো ইনায়ার কাঁধে। তার চুলের জন্য ইনায়ার গলায় কেমন কাতুকুতু লাগলো। তবুও সে শ্বাস আটকে গরুর মতোই পড়ে থাকলো। না নড়লো, না চড়লো। এই লোকটা কত ভারি! ইনায়া সহ্য করে আছে কি করে? একটু চ্যাংড়া-পাতলা, রোগা হলে কি জাত যেতো? অদ্ভুত! আল্লাহ, রহম করো তুমি!
তার এতসব ভাবনার মাঝে ধ্রুব আবারো ডেকে উঠলো ইনায়াকে। সে জবাব দিলো না। ধ্রুব এবার হাসলো। অত্যন্ত মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-“ম্যাডাম রেগে আছেন? রাগের কারণটা তো এই অধমকে বলুন। দেখি ঠিক করতে পারি কি না!”
-“কোনো কারণ নেই। ঘুমান।”
ইনায়া চুপ করে থাকলো তারপর। ধ্রুব অনেক্ষণপর আবার ডাকলো তাকে,
-“ইনায়া?”
ইনায়া গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে জবাব দিলো,
-“কি চাই?”
ধ্রুব মেয়েটার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
-“উম্…তোমাকে।”
ইনায়া কাঁথার ভেতর থেকেই গড়গড় গলায় বললো,
-“আবার শুরু করলেন? বললাম না ঘুমান?”
ধ্রুব নিঃশব্দে হেসে ফেললো। এবার আর কিছু বললো না। শুধু ওর পিঠে একটা আলতো চুমু খেয়ে চুপচাপ পড়ে রইলো। কিছুক্ষণ পার হতেই ইনায়া বিরক্ত হয়ে মুখ থেকে কাঁথা সরালো। চোখ-মুখ কুঁচকে ধ্রুবর দিকে তাকালো। বিরক্তি নিয়ে বলল,
-“আজব তো! চুপ করে মরার মতো পড়ে আছেন কেন?”
ধ্রুব ভড়কে তাকালো,
-“তুমিই তো বললে চুপ থাকতে।”
ইনায়ার বিরক্তি যেন উথলে পড়লো,
-“আমি বললেই শুনতে হবে? আশ্চর্য! এমনি তো কতো কথা শুনে দুনিয়া উল্টে ফেলে।!”
ধ্রুব থতমত খেলো। আজব মানুষ! নিজেই চুপ থাকতে বললো, আবার চুপ থাকলেও তেঁতে উঠছে! এই মেয়েকে নিয়ে ও কই যাবে! ধ্রুব ভ্রুতে আঙুল বুলিয়ে হেসে ফেললো। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
-“হাসছেন কেন আপনি? আরে! আমি কি হাসার মতোন কিছু বলেছি?”
ধ্রুব হাসি থামালো। মাথা নাড়িয়ে বলল,
-“না, একদম না!”
ইনায়া বাঁকা চোখে তাকিয়ে ঘুরে শুলো আবার। ধ্রুব তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। পেটে হাত গলিয়ে কোমড় ধরলো। টেনে আনলো নিজের কাছে। ইনায়া চুপ করে মিশে থাকলো ধ্রুবের সাথে। ধ্রুব হাসলো। এরপর আচানক মুখ দাবালো মেয়েটার গলায়। ছোট চুমুতে একপর্যায়ে অতিষ্ঠ করে তুললো তাকে৷ ইনায়া পিছু ঘুরে শুলো। স্বীয় স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে রাখলো। ধ্রুব দু’আঙুলে তার মুখ তুললো। স্ব শব্দে মেয়েটার ঠোঁটে চুমু খেলো। একপর্যায়ে ইনায়ার কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে অনুমতি চাইলো,
-“মে আই?”
ইনায়া চমকে চোখ তুলে তাকালো। ব্যাপারটা টের পেতেই সরে যেতে চাইলে ধ্রুব তার হাত টেনে ধরলো। কাতর গলায় বলল,
-“জান প্লিজ।”
ইনায়া লজ্জায় হাসফাস করে উঠলো। আজকাল এতো বেশি লজ্জা পাচ্ছে সে! লজ্জা ঢাকতে ইনায়া হালকা গলায় বলল,
-“রাত হয়েছে ধ্রুব, ঘুমান এখন।”
-“ইনায়া?”
ছেলেটার কাতর অনুরোধ ফেলতে পারলো না সে। মুখ তুলে চাইলো ছেলেটার দিকে। তার চোখে। পরক্ষণেই মুখ নামিয়ে ছোট করে ঠোঁট ছড়িয়ে হাসলো। ধ্রুব জবাব পেয়েছে তাতেই। হ্যাঁচকা টানে মেয়েটাকে বুকে ফেললো। ইনায়া ঝুঁকে পড়লো তার দিকে। চুলগুলো সামনে এসে জড় হলো। ধ্রুব তা সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজলো। দু’হাতে ইনায়ার মুখ তালুতে ধরে চুমু বসালে তার কপালে। তারপর দু’চোখে চুমু, নাকে চুমু, দু’গালে চুমু, সবশেষে ঠোঁটে চুমু। ইনায়া তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব চরম আদরের সহিত তার মুখ ধরে তাকিয়ে বলল,
-“আমার বউ! কতো সুন্দর তুমি!”
ইনায়া লাজে হাসলো। ধ্রুব তার ঠোঁটে চুমু খেলো আবারো। ধীরে ধীরে স্পর্শ গভীর হলো। আবেশে গা ভাসালো দু’জন। আদুরে স্পর্শে মিশে একাকার হলো দু’টো প্রাণ।
_____
ইনায়া শুয়ে আছে ধ্রুবর বুকে। বক্ষের একাংশ জুড়ে তার দখলদারি। ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়েছে। ইনায়া দেখলো তাকে। খুব মন দিয়ে। ইশ! লোকটা তার স্বামী। তার ব্যক্তিগত পুরুষ! একান্তই তার! ইনায়া কেমন যেন লাগলো। খুব সুখ সুখ অনুভব হলো। সে মুখ বাড়িয়ে ছেলেটার কপালে চুমু খেলো। পরপরই দ্রুত সরে এসে ওয়াশরুমে গেলো।
বাথরুমে ঢুকে কাপড় রাখার বাস্কেটের দিকে তাকিয়ে চমকালো সে। লালে মাখামাখি সাদা একটা শার্ট। শার্টটা ধ্রুবর। সে সাথে ছিলো এটা কেনার সময়। ইনায়া ঝুঁকে শার্টটা হাতে নিলো। উল্টে-পাল্টে দেখে নাকের কাছে নিলো। বিদঘুটে রক্তের গন্ধ নাকে যেতেই গা গুলিয়ে উঠলো ওর। সেখানেই শার্টটা ফেলে পাশের বেসিন গিয়ে থুথু ফেললো। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে বেসিন ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। শ্বাসটাও ভারী হয়ে উঠেছে যেন। বুকের ভেতরে কেমন যেন ধুকপুক ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। ধ্রুবর শার্টে রক্ত! কিন্তু কেন? কীভাবে? ইনায়ার মাথা কাজ করছে না ঠিকঠাক। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ধ্রুবর মুখ মনে করার চেষ্টা করলো—একটা ক্লান্ত, বিষণ্ন মুখ। কিছু একটা লুকোচ্ছে সে। খুব বড় কিছু!
ইনায়া আয়নায় নিজের চোখে চোখ রাখলো। ভাবলো, কী করবে এখন? এই শান্ত রাতের গভীরে হঠাৎ এত ভয় কেন? এত অস্থিরতা? ইনায়া তাকিয়ে রইলো আয়নায়। তারপর কিছু একটা ভেবে পিছু ফিরে তাকালো শার্টটার দিকে।
______
ধ্রুবর ঘুম ভাঙলো কিছুক্ষণ পর। বিছানা হাতড়ে ইনায়াকে পেলো না সে। ঘুমের মাঝেই ভ্রু কুঁচকে গেলো তার। ঘাড় উঁচিয়ে পিটপিট করে চোখ খুললে দেখলে বিছানা খালি। এদিক-সেদিক তাকিয়ে খেয়াল করলো ইনায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে। মেজাজ খিঁচড়ে এলো সাথে সাথে। ধীর-স্থিরভাবে উঠে বসলো সে। গায়ের থেকে কম্ফোর্টার সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শরীরের উপরিভাগে কাপড়ের ছিটেফোঁটাও নেই। সেভাবেই এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো ইনায়ার পিছনে।
ইনায়া তার উপস্থিতি টের পেলেও সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। দূরে তার চোখ। তাদের বারান্দার সামনে জঙ্গলের মতো প্রচুর গাছপালা। খানিকটা জঙ্গলই বলা চলে। সেখানে দূরে কিছু একটা পুড়ছে। সেদিকেই তাকিয়ে আছে ইনায়া। ধ্রুব পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। মুখ গুঁজলো তার ঘাড়ে। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এখানে কি করছো?”
ইনায়া তার কথার জবাব দিলো না। ধ্রুব মুখ তুললো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
-“কি হয়েছে?”
-“আপনি কোথায় ছিলেন রাতে?”
সরাসরি প্রশ্নে ধ্রুবর মুখ থমথমে হয়ে এলো। গম্ভীর গলায় বলল,
-“কেন?”
-“উত্তর চাইছি, প্রশ্ন না।”
ধ্রুব জবাব দিলো না। ইনায়া এবার ঘুরে তাকালো তার দিকে। আবার জিজ্ঞেস করল,
-“আপনার শার্টে রক্ত কেন ছিলো?”
-“তুমি দেখেছো শার্ট?”
-“না দেখলে জিজ্ঞেস করছি না নিশ্চয়ই? এবার বলুন, কার রক্ত ওগুলো?”
ধ্রুব পেছনের দেয়ালে হেলান দিলো। ফিচেল হেসে বলল,
-“হঠাৎ এতো জেরা কেন করছো?”
-“নিজের হাজবেন্ডকে জেরা করি আর যা-ই করি, সমস্যা কিসের?”
-“হাজবেন্ড মানো তবে?”
-“কথা ঘোরাচ্ছেন ধ্রুব?”
ধ্রুব হাসলো,
-“আরাফের।”
‘আরাফে’র নামে ইনায়া চমকালো খানিক। তবে প্রতিক্রিয়া দেখালো না তেমন। কিছুটা এগিয়ে এসে দাঁড়ালো। হালকা গলায় জিজ্ঞেস করল,
-“শুধু কি হাত-ই তুলেছেন? মানে এক্সট্রিম কিছু না তো?”
ধ্রুব কাঁধ ঝাঁকাল,
-“না, মেরে ফেলেছি।”
ইনায়ার প্রতিক্রিয়া এলো না। সে বলল,
-“কেন?”
-“তোমাকে ছুঁয়ে ছিলো না? এতোটুকু প্রাপ্য ছিলো।”
বলতে বলতে ধ্রুবর চোয়াল শক্ত হলো। ইনায়া মুখ ঘুরিয়ে হেসে ফেললো। মজা লাগছে তার। তার হাজবেন্ড তাকে নিয়ে এতো পজেসিভ যে, মানুষই মেরে ফেললো! বাহ!
ইনায়ার নির্লিপ্ততায় ধ্রুব অবাক না হয়ে পারলো না। একজনের মৃত্যুর কথা শুনেও কোনো রিয়েকশন নেই ইনায়ার? অবশ্য তারই তো বউ!
ইনায়া এগিয়ে এসে ধ্রুবর গলা জড়িয়ে ধরলো। পা উঁচু করে তার গালে চুমু খেলো। হালকা হেসে ফিসফিস করে বলল,
-“থ্যাংক ইউ।”
ধ্রুব হাসলো৷ বলিষ্ঠ হাতে মেয়েটার ছোটখাটো কোমড় জড়িয়ে ধরলো। ইনায়া জিজ্ঞেস করল,
-“উম… মারার ভিডিও আছে? বা ছবি?”
-“আছে। ঘাটতে হবে একটু।”
-“আমাকে দেখাবেন।”
ধ্রুব হেসে ফেললো। মাথা দুলিয়ে বলল,
-“আচ্ছা, দেখাবো।”
জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো,
-“ওখানে কি পুড়ছে?”
-“আপনার ওই শার্টটা।”
-“তুমি পুড়িয়েছো?”
ইনায়া ধ্রুবর বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
-“হুম।”
ধ্রুব মাথা এগিয়ে তার গালে চুমু খেলো। মিষ্টি হেসে স্নিগ্ধ গলায় বলল,
-“থ্যাংক ইউ ফর বিইং মাই ওয়াইফ। ফর ইউ আ’ম লাভিং সামওয়ান দিস হার্ড!”
ইনায়া হেসে ফেললো,
-“এন্ড ইউ কমপ্লিট মি!”
#চলবে…