গল্পের নাম তোমাকে চাই পর্ব-১৫

0
528

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৫
শওকতের পুরো শার্ট আমের আচারে মাখামাখি ইরা তা দেখে একটু ভয়ই পেলো।ইরা আমতা আমতা করে বললো,
~আমি ইচ্ছে করে করিনি আসলে পা পিচলে এই অবস্থা হয়েছে সরি।
শওকত ইরার নরম কন্ঠের কথা শুনে হালকা হেসে বললো,
~কোনো সমস্যা নেই আমি শার্ট চেঞ্জ করে নিচ্ছি।
ইরা আলতো হেসে বললো,
~আপনি শার্ট খুলে আমার রুমে রেখে দিয়েন আমি ধুয়ে দিবো নে।
শওকত মুচকি হেসে ইরাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো ইরা সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলো।সবাই ছাদের মাঝ বরাবর বসে আছে পাটি বিছিয়ে নানান রকমের খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।অধরা নাদিয়া একসাথে বসে আড্ডা করছে অধরা বললো,
~সিয়াম ভাইয়া দেশে কবে ফিরবেন(সিয়াম হচ্ছে অধরার বড় মামার ছেলে)।
নাদিয়া বললো,
~আমাকে বললো আগামী মাসে এখন তো কিছুই বলছেনা এসব বিষয়ে।
অধরা বললো,
~তোদের বাসাটা খালি খালি লাগে তুইও কোচিং, কলেজ এতে ব্যস্ত থাকিস আর সিয়াম ভাইয়া তো নেই।ছোট মামা-মামীরও কোনো সন্তান হলো না
নাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ছোট চাচীর জন্য খারাপ লাগে বেচারি সারারাত জায়নামাজে বসে কাঁদতে থাকে।আমরা সবাই থাকলেও তার নিজেকে একা লাগে মনটা বড্ড পোড়ায় এ কথাগুলো ভাবলে।
অধরা বললো,
~চিন্তা করিসনা দেখবি আল্লাহ তার কথা অবশ্যই শুনবে।
হঠাৎ শাওন বলে উঠলো,
~নাদিয়া তোমাদের বাসায় না তেঁতুল গাছ ছিল আগে?
নাদিয়া বললো,
~ভাইয়া কেটে ফেলেছে তার ঘর নতুন ভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই তেঁতুল গাছটা মাঝখানে বাঁধ সাজছিল তাউ কেটে ফেলেছে।
শাওন বললো,
~আমি ছোট বেলায় অনেক এসেছি তোমাদের বাসায় তখন তুমি অনেক ছোট ছিলে।
নাদিয়া হেসে বললো,
~আপনি আমার থেকে গুনে গুনে ৫বছরের বড় আমি তো ছোট থাকবোই।
শাওন একটু ইতস্তত বোধ করলো তারপর বললো,
~তুমি কী আমায় বুড়ো বলছো?
নাদিয়া বললো,
~একবারও সেই শব্দ উচ্চারণ করিনি।
সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা করছে মজা করছে রক্তিম খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে এই ভাবছে এতো ঘটনার পিছনে কে আছে?কার মাথায় এতো খেলা চলছে?রক্তিম কিছু একটা ভাবতে ফোন বের করে তার পুলিশ বন্ধুকে কল করলো তারপর বললো,
~দোস্ত ফুপিদের খোজখবর রাখবি কে তাদের সাথে দেখা করতে আসে কেন আসে?সব ডিটেইলস আমি চাই।
তার পুলিশ বন্ধুটি হ্যাঁ বলে আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দেয়। অধরা রক্তিমকে এতো চিন্তিত দেখে অধরা রক্তিমের পাশে দাড়িয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
~আপনি এতো টেনশন নিবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে
রক্তিম অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে অধরার কপালে ওষ্ঠজোড়া ছুইয়ে বললো,
~তোমার এই শান্তিময় চেহারা দেখে আমার সকল চিন্তা চলে যায়।
অধরা রক্তিমের পেটে হালকা ঘুষি মেরে বললো,
~এতোটা না বললেও পারবেন এককেবারে মুখ দিয়ে মধু বইছে।
রক্তিম হেসে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো অধরাও রক্তিমকে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

_________♥__________

সকাল বেলা আইয়ুব হোসেন রেডি হচ্ছেন আয়নার সামনে দাড়িয়ে জোহোরা খাতুন ঘরে প্রবেশ করলো আর বললো,
~আজ আমরা গাজীপুর যাচ্ছি আপনার আর তৌহিদের খাবার কাজের লোকেরা রান্না করে দিবে।
আইয়ুব হোসেন শরীরে দেওয়া শালটা ঠিকঠাক করে নিয়ে বললো,
~তোমরা একা যাবে কেন আমরাও সাথে চলি?
জোহোরা খাতুনের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো সে বললো,
~আপনার যাওয়ার কোনো দরকার আমি দেখছিনা আর সেখানে উল্টোপাল্টা কিছু করার কোনো দিক আমি দিবোনা আপনাকে।
আইয়ুব হোসেন হালকা হেসে বললো,
~তুমি তো জানো আমার কিছু করার হলে এখান থেকে বসে বসে করে ফেলবো।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~নিচু মনের মানুষ আপনি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তা তো তুমিই ভালো জানো।
আইয়ুব হোসেন ঘর থেকে বের হয়ে একদম বাসা থেকে বের হয়ে আসলো গাড়িতে বসে ড্রাইভার কে বললো,
~থানার দিকে চলো।
ড্রাইভার তার কথা মতো গাড়ি চালাতে লাগলো থানা পৌছে আইয়ুব হোসেন গাড়ি থেকে নেমে থানার ভিতর প্রবেশ করে একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,
~কিডন্যাপিং কেসে মা-মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সাথে দেখা করবো।
সেই লোকটি বললো,
~একটু টাকা ছাড়লে সব ব্যবস্থা করে দিবো।
আইয়ুব হোসেন ৫০০০ টাকা সেই লোকটির হাতে দিয়ে দিলেন।সেইলোকটি বললো,
~আসেন আমার সাথে।
আইয়ুব হোসেন সেই লোকটির পিছে পিছে একটা হাজতের সামনে এসে দাড় করালেন।রোকেয়া হোসেন
আইয়ুব হোসেনকে দেখে বললেন,
~আরে ভাইজান যে,এই পৃথুলা দেখ কে এসেছে?
পৃথুলা বসা থেকে দাড়িয়ে বললো,
~তোমার ভাই কেন এসেছে জিজ্ঞেস করো তো মা?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমি এখানে এসেছি তোমাদের সাথে কথা বলতে।
রোকেয়া হোসেন হেসে বললেন,
~মুখ বন্ধ রাখতে বলবেন নাকি ভাইজান?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমাদের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে আর এই শহর ছাড়ারও ব্যবস্থা করে দিয়েছি চুপচাপ যেভাবে বলছি তাই করবে।
পৃথুলা বললো,
~৫০ লাখ টাকা সাথে দিয়ে দেন তাহলে কেসটা আরো ভালো হয়ে যাবে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~ঠিক আছে তাই হবে।
বলেই সে সেখান থেকে চলে গেলো পৃথুলা রোকেয়া হোসেনকে বললো,
~তোমার ভাই বাঘ থেকে এখন ভেজা বিড়াল হয়ে গেছে।
অধরা, রক্তিম,প্রিয়া সবাই মিলে নাস্তা করে বের হয়েছে বাগানবিলাস করতে অধরার নানুবাসার ঠিক সামনে অনেক বড় বাগান রয়েছে।সবাই সেখানে ঘুরতে গেছে কতো ধরনের ফুল আছে আবার ফলের গাছও আছে।অধরা নয়নতারা গাছের সামনে এসে ফুলগুলোকে ছুয়ে দিচ্ছে রক্তিম একধ্যানে অধরাকে দেখতে ব্যস্ত।ইরা শওকতের সাথে এই শীতের সকালে হেঁটে যাচ্ছে বাগানের মাঝখান দিয়ে।ইরা বললো,
~প্রকৃতির কাছে আসলে মনটা বেশ ভালো হয়ে যায়।
শওকত বললো,
~প্রিয়া মানুষ কাছে থাকলে সব সুন্দরই মনে হয়।
ইরা শওকতের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
~এখানে আপনার কাছের মানুষ নিজ স্ত্রী কে নিয়ে ব্যস্ত।
ইরা হাত দিয়ে ইশারা করে রক্তিমের দিকে দেখালো শওকত তা দেখে বললো,
~আমার কী এখানে শুধু রক্তিমই কাছের মানুষ আরো অনেকে আছে।
ইরা বললো,
~তাই তা কাছের মানুষদের লিস্ট টা কী জানতে পারি?

_______♥__________

শওকত মাথা চুলকে বললো,
~অনেকেই আছে এখন বলা যাবে না।
ইরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাদিয়া সেখানে এসে বললো,
~ইরা,সর্বনাশ হয়েছে শাওন ভাইয়া গাছ থেকে পরে গেছে।
ইরা বললো,
~কী বলছো চলো শাওন ভাইয়ার কাছে।
তারা সকলে দৌড়ে সেখানে পৌছে যায় শাওন গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।রক্তিম শাওনের কাছে গিয়ে বললো,
~তুই এই গাছে কেন উঠতে গেলি?
শাওন বললো,
~সুখের ঠেলায় এমনেই উঠেছিলাম উঁচু থেকে বাগানের দৃশ্য দেখতে কেমন লাগে সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম।
অধরা বললো,
~ভাইয়া কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?
শাওন বললো,
~পা টা মনে হয় মচকে গেছে।
প্রিয়া বললো,
~বেশি উড়তে গেলে এমনই হয়।
শাওন বললো,
~তোকে নিয়ে উড়তে গেছি বেশি কথা বললে একদম মরিচের জুস খাইয়ে দিবো।বাবুর জন্য থাপ্পড় মারবো না।
রায়হান বললো,
~শওকত ওকে রুমে নিয়ে যাও আমি ডক্টর নিয়ে আসছি।
নাদিয়া বললো,
~আরে এতোকিছু করতে হবে না সরিষার তেল দিয়ে পা ম্যাস্যাজ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রক্তিম বললো,
~আমারও তাই মনে হয় চলো বাসায় যাই।
সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো শাওনকে শওকত বাসায় পৌছে রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়ে পরলো।নাদিয়া গরম সরিষার তেল এনে দিয়ে বললো,
~পা ভালো মতো ঢলে দিবেন শওকত ভাইয়া তাহলে দেখবের ঠিক হয়ে যাবে।
শাওন বললো,
~আমার ক্ষতি হলে তোমার দোষ দেখে নিয়ো।
নাদিয়া বললো,
~পায়ের সাথে সাথে মাথাও গেছে সরিষার তেল দিলে কীসের ক্ষতি হবে?
শওকত বললো,
~শাওন,তুমি চুপ থাকো আমি দেখছি।
শওকত শাওনের পা তেল দিয়ে ঢলে দিলো নাদিয়া একটা প্যানকিলার শাওনের হাতে দিয়ে বললো,
~খেয়ে নিন একদম ঠিক হয়ে যাবেন।
জোহোরা খাতুন,তাহিদা ইসলাম,ইলিনা চৌধুরী,তৈয়ব হোসেন গাজীপুর পৌছে অধরার নানুদের বাসায় পৌছে গেছে।তাদের সবার সাথে কুশলাদি করে ভিতরে প্রবেশ করতে বললেন অধরার বড়মামা আর ছোটমামা।
অধরা সবাইকে দেখে অনেক খুশি হলো জোহোরা খাতুন অধরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
~তুই কেমন আছিস?
অধরা বললো,
~ভালো বড়চাচী।
সবাই ভিতরে সোফার রুমে বসে পরলো হরেক রকমের পিঠা সাজিয়ে নিয়ে আসলেন অধরার মামীরা।ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~এতো বছর হয়ে গেছে বাসার কোনো পরিবর্তন হয়নি।আপনারা কবে একটু নিজেদের গ্রাম্য করে রাখবেন।
অধরার নানু বললেন,
~মারে এসব করতে টাকা লাগে তা এখন নেই আল্লাহ তা আলা চাইলে সব হবে।
ইলিনা চৌধুরী পিঠার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কত ধরনের পিঠা আছে এখানে আমার তো সবই ফেভারিট।
তাহিদা ইসলাম মায়ের কাছে গিয়ে বললেন,
~মা,তোমাদের উপরে চাপ ফেলেদিলাম।
অধরার নানু বললেন,
~না এসব কী বলিস?কত বছর পর তোরা এই বাসায় এসেছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি।তোর ননদ কেন আসলোনা ওর মেয়েটাকেও তো দেখলাম না?
তাহিদা ইসলাম আমতা আমতা করে বললেন,

______♥_______

~ওনাদের কাজ আছে তাই আসতে পারেনি।
অধরার নানু বললেন,
~শোন আজকে রাতের জন্য ভূনা খিচুরী,ইলিশ মাছ ভাজা,গরুর কলিজা ভূনা আর ভরতা রান্না করবো ঠিক আছে না?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~অবশ্যই ঠিক আছে।
অধরার নানু বললেন,
~ছোট বউমা আমার সাথে এসো সবার থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধরার ছোট মামী শাশুড়ির কাছে চলে আসলেন আর কাজে চলে গেলেন।জোহোরা খাতুন চিন্তিত হয়ে বসে আছেন অনেক বেশি ভয় করছে কারণ তার কাছে খবর এসেছে রোকেয়া হোসেন জামিন পেয়েছে এই কাজ কে করেছে সেটাও জানে রক্তিমকে জানিয়ে দেয়া দরকার রোকেয়া হোসেনের কথাটা।
রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো সে ফোন বের করে দেখলো তার পুলিশ বন্ধু ফোন করেছে রক্তিম ফোন রিসিভ করতেই সেই পুলিশ বন্ধুই তাকে সব বলে দেয় তখন রক্তিম অবাক হয়ে বললো,
~কে তাদের জামিনের ব্যবস্থা করেছে?
পুলিশ বন্ধুটি জানালো কে করিয়েছে তার কোনো খোজ নেই রক্তিম সব শুনে ফোন রেখে দিলো তার মাথায় এখন নানান টেনশন কাজ করছে।
রাতের বেলা সবাই খাবার শেষ করে বসে বসে কথা বলছে তখনই বাসার দরজা খটখটের আওয়াজ আসলো।অধরার বড় মামা দরজা খুলে দিতেই সামনে থাকা দুই ব্যক্তিকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।জোহোরা খাতুন বাহিরে এসে একজনকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন কারণ

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)