গোধূলির শেষ আলো পর্ব ০৫ +৬

0
670

গোধূলির শেষ আলো?
#পর্ব ০৫ +৬
Writer Tanishq Sheikh Tani

ক্লাসে এসে বেঞ্চে বসে হাঁফাতে লাগলো তানি।কি হলো কিছুই বুঝলো না।খালিদ ভাই এমন করলো ক্যা? আমার ভাইয়া ডাকাতে তার কি সমস্যা? আর মোবাইল নাম্বার কি জন্যি নিল? ধ্যাৎ কি হইতেছে আমার সাথে এসব?একদিকে তাজ অন্যদিকে খালিদ।আমার রূপ কি বেয়ে পড়তেছে নাকি? তাজ না হয় হারামী একটা কিন্তু খালিদ ভাই? উনি তো আমার চে ১২ বছরের বড়, সম্মানীয় লোক।সে কি করে আমার সাথে এমন করলো? ভাইয়া ডাকবে না! বাল ডাকবে না। তাইলে কি ডাকবো মামা? না চাচা? যত্তসব।
গলাটা শুকাই গেছে একটু পানি খাবো কিন্তু কেম্নে আজরাইল টা তো বললো বাইরে না বেরোতে ক্লাস ছাড়ে।যদি বেরোয় তো কাঁচা গিলে ফেলবে।ভাব দেখে মনে হয় তার বউ আমি।এখানে যাবে না ওখানে যাবে না।আমার ঠেকা পড়ছে তোর কথা শুনতে।একশবার যাবো হাজার বার যাবো তোর বাপের কি? সরল সুজা পাইয়ে সব হুকুম ঝাড়তে আসে।এই পুষ্পাটাই বা কই মরছে? এখনো আসলো না।বিরবির করতে করতে সাদা ওড়নাটা দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখ মোছে। বাইরে ক্লাস শুরুর ঘন্টা দিয়ে দিলো।সবাই ক্লাসে ঢুকলো কিন্তু পুষ্পা এলো না।ঘাড় উচু করে এদিক ওদিক দেখলো কিন্তু না কোথাও পুষ্পা নাই।কি হলো ওর? চিন্তায় পড়ে গেলো তানি বান্ধবীর জন্য। এদিকে ক্লাসে খালেক স্যার ও চলে এসেছে বলে কাওকে কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারলো তানি।পুষ্পাকে ছাড়া একা একা ক্লাসে একদম মন বসছে না।তবুও মন বসাতে হলো ক্লাসে।

তাসলী বেগম ছেলের দরজার সামনে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ঘুমন্ত ছেলেকে দেখে।ছেলেটা একদম চেয়ারম্যান সাবের মতো হয়ছে।খালি চরিত্রটা ওমন না হলেই খুশি হয় তাসলী বেগম।ছেলের শিওরে এসে বসে তাজের এলোমেলো চুলের উপর হাত বুলাতে থাকে,
“- কি রে বাজান? নাস্তা করবি না।এতো রাইত করে বাইরে থাহিস ক্যা? ঘর সংসার করা লাগবি নে? একটু আব্বার সাথে গঞ্জের দোকানেও তো বসতে পারিস?

“- আহ! মা আবার শুরু করে দিলি? ঘুমাতে দে।

“- ঠিক আছে তাইলে ঘুমা।তানির বাড়িও আমি আর গিলাম না।

তাজ লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে।মায়ের দিকে বড় বড় করে চোখ করে।একনিমেষেই সব ঘুম চলে গেছে তাজের।

“- এ মা! কি বললি? তুই তানিদের বাড়ি যাবি? সত্যি বলছিস মা?

তাসলী বেগম হেসে ছেলের মুখের হাত রেখে বলে,

“- হ বাপ সত্যি কচ্ছি! তোর আব্বা কাল বাজারে তানির বাপের সাথে কতা কইছে।আমারে তোর আব্বা আজকে ওগের বাড়িতে যাতি কইছে।

তাজ চোখ ডলতে ডলতে মায়ের দিকে
হাতটা বাড়িয়ে দেয়
“- মা আমারে চিমটি দে তো।

তাসলী বেগম হেসে ছেলের কপালে চুমু দেয়।হাত টেনে কোলে নিয়ে হাতে আদর করে আর বলে,

“- পাগল ছেলে আমার।আজ পর্যন্ত তোর গায়ে ফুলের টুকাটাও কি দিছি আমি আর তোর আব্বা। আজ তাইলে দেবো ক্যা।তুই আমার সাত রাজার ধন। তোর সব চাওয়া আমরা পূরন করবো রে বাজান।

মাকে উৎফুল্ল চিত্তে দুবাহুর মাঝে জড়িয়ে ধরে তাজ।খুশিতে চোখে জল ছলছল করে।

“- মা! আমার যে খুশি লাগছে।মা তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ।পারলে আজই কাবিনডা করিস ওর সাথে।আমি জানি আব্বা বললি তারা না করবেন না।আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে মা তোরে কি করে বুঝায়? তানিরে পালি সব পাওয়া হয়ে যাবেন আমার মা সব।আমার এই আশা পূরন করবি তো মা? নাইলে কইলাম আমার মরা মুখ দেখবি।

তাসলী বেগম ছেলের এহেন কথা শুনে কান্না করে দেন।ছেলের গায়ে হাত বুলিয়ে ছেলেকে শান্ত করেন।

“- ও বাজান! এম্বা কতা কও ক্যা তুমি।তুমিই তো সব আমাগের।তোমার একটা চাওয়া যদি পূরণ করতি না পারছি তাইলে কেমন পিতা মাতা আমরা।তানি তোমারই হবি বাজান।তুমি শান্ত হও।চলো খায়ে গোসল করে রেডি হবা।

“- ঠিক আছে।আমি এক্ষুণি যাইয়ে গোসল সাড়ে আসছি।তুই আমার কাপড় চোপড় বের কর তাড়াতাড়ি

তাজ আনন্দে আত্নহারা হয়ে তাড়াতাড়ি গোসলখানায় চলে যায় গোসল করতে।আজ তাজের খুশি বাঁধন হারা।তানিকে ও পাবে নিজের খাচায় বন্দী করে যেভাবে খুশি দেখবে।কোনো বাঁধা থাকবে না।

ফজিলা বেগম নতুন কুটুমদের জন্য অনেক কিছু তৈরি করেছেন। পাঁচ পদের পিঠা থেকে শুরু করে পোলাও কোরমা কোনোটাই বাদ রাখে নাই।বড় জা মিনুকে নিয়েই সব
করছে।ছেলে পক্ষ বলেছে সন্ধ্যায় আসবে এখনো ৩/৪ ঘন্টা বাকি।তাই তাড়াতাড়ি কাজ সারছে। মিনু অনেক্ষণ ধরেই ফজিলার নাকে মুখে কাজ করা দেখছিল।এতো তাড়াহুড়োর কি আছে মিনু বুঝলো না।

“- হ্যা লো ফজিলা! এমন করছিস ক্যা?আমাগের পাশে গ্রামেরই তো পরিচিত তারা।তালি এতো জাঁকজমকের কি হলো? কোনোকিছুই তো তাগের অজানা না।

“- তুমি বুঝবান না বুজি।মেয়ে তো ছোট তোমার। বড় হইক তার পর গে বুঝবান।পরিচিত আর মেয়ের শ্বশুর বাড়ির কুটুম কি এক? সে এহন মেয়ের হবু শ্বাশুড়ি তারে কি আগের মতো পিড়েতে বসায়ে মুড়ি গুড় খাওয়াতি পারি? আমার মাইয়েরে তালি সারাজীবন খুটার ঘর শুনতি হবে।নেও আর কতা বাড়াইয়ো না।কাজ করো তাড়াতাড়ি। তানি আসলি কিছুই কবা না কলি।কবা ফয়েজেরে দেকতি আসবি।

“- হ কবানে।মেয়েরে যহন ওর শ্বাশুড়ি কাছে ডাকবি তহন কি করবেনে?

“- সে আমার ভাবা আছে।বিয়ের আগে ঘূর্ণাক্ষরেও ওরে কিছু কবো না।কাজি সাহেব জ্বামাই আসবি তারপরই বিয়ে পড়াই দিবানে।যা চিল্লাপাল্লা বিয়ের পর করবেনে।

“- তোর মেয়ে মনে কষ্ট পাবেনে রে ফজিলা।ওরে আগে সব কওয়াই ভালো।সংসার তো ঐ করবি।যদি ছেলে ওর পছন্দ না হয়?

“- আরে বুজি! তুমি বিয়ের আগে ছেলে পছন্দ করছিলে? আমি করছিলাম কও? আমাগের সময় তো দেকতি আসেই বিয়ে হয়ে যাতো।কই আমাগের কি সুখ হয় নাই সংসারে। এসব দেখাদেখি করা আমার মোটেও ভালো ঠেহে না।তুমি আর কতা বাড়াইয়ো না দি।

মিনু ফজিলাকে এ নিয়ে আর কিছু বলে না।যদিও ওর মন তানির সাথে এমন করায় কষ্ট পাচ্ছে। তথাপিও কিছু করার নেই মিনুর।
কাজ করছিলো এর মধ্যে বাইরে হুন্ডার আওয়াজ শুনে মিনু ফজিলা চোখাচোখি করে।এই সময় কে আসলো? মেহমান চলে আসলো না তো?কাজ ছেড়ে বারান্দার সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালো দু জা।

বাড়ির ভেতর তাজ ও তাসলী বেগম মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঢুকলো।তাদের দেখে দু জা বিস্মিত হলো।ফজিলা চেয়ারম্যানবাড়ির কাওকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না।চেয়ারম্যান মানুষ যে ভালো না তা গ্রামের সবাই জানে।বাড়িতে যখন চলে এসেছে ফজিলা ভালোমন্দ কিছুই বলে।মিনু ফজিলার চুপচাপ দাঁড়ানো দেখে নিজেই এগিয়ে যায়।

“- তাসলি ভাবি যে? তা হঠাৎ গরিব মাইনষের বাড়ি?

“- আরে বুজি গরিব বড়লোক কি? আমরা তো এ গায়েরই মানুষ তাই নে? তাজ বাপ যা চাচীরে সালাম কর।

তাজ মিনুকে সালাম করে ফজিলাকেও সালাম করে।ফজিলা ভ্রু কুচকে সালামের কারন বুঝতে চেষ্টা করে।

“- আসো ভেতরে আসো তোমরা।মিনু তাজ ও তার মাকে নিয়ে বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসায়।ফজিলা নাস্তা পানি আনতে যায়।

“- বুজি তানি কই? ওরে যে দেহি না।

“-তানি তো ইশকুলে গেছে।ক্যা কিছু কবা নাকি ওরে?

এরমধ্যে ফজিলা বিস্কুট, কলা,চানাচুর নিয়ে আসে পিরিচে করে।সামনে রেখে পাশে দাড়ায় থাকে।

“- ফজিলা ভাবি! তোমার কাছে ভাইজান তো সব কইছে তাই না?

“- কিসের কথা কইতেছো ভাবি? ( কপাল কুঁচকে)

“-আচ্ছা বলছি।তাজ বাজান তুমি বাইরে দাড়ায়ও আমি আসছি।
মায়ের ইঙ্গিত বুঝে তাজ উঠে বাড়ির বাইরে রাখা হুন্ডাটার উপর গিয়ে বসে।
ছেলে চলে যাওয়ার পর তাসলী আবার বলতে শুরু করে,

“- ভাবি আমার তাজকে তো তোমরা সেই ছুটো বেলা থে চিনো।তুমাগের সামনি বড় হয়ছে।আমার ছেলে কি খারাপ ভাবি?

ফজিলা বুঝতে পারে না চেয়ারম্যানের বউ আসলে বলতে কি চাচ্ছে? ছেলের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট অন্যের কাছে চাওয়ার মানে কি?তবুও কিছু একটা অনুমান ঠিক করে।তাতেই চিন্তাটা বেড়ে যায়।চিন্তার ঘোর কাটিয়ে জবাব দেয়,

“-তাজ ভালো ছাওয়াল।ওর বাপের মতো না।তোমার মতোই হয়ছে।কিন্তুক এগুলা আমারে কচ্চ ক্যা?
ফজিলার মুখ থেকে ওর বাপের মতো না কথাটা শুনে তাসলী মাথা হেট করে বসে থাকে।স্বামীর অতীত কুকর্মের জন্য সবখানেই মানুষ ইঙ্গিতে কথা শোনায়।মুখটা স্বাভাবিক করে হেসে জবাব দেয়,
“- ফজিলা ভাবি! তোমার তানি রে আমার তাজের জন্যি দিবা।আমার তাজ তানির জন্য নাওয়া খাওয়া ছাড়ে দিছে।আমার ছাওয়াল বাচবি না তানিরে না পালি।তুমি আমারে খালি হাতে ফিরাই দিও না।কতা দিচ্ছি তোমার মাইয়ে রাজরাণী হয়ে থাকবি আমার ঘরে।

ফজিলার হাত ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো তাসলী।মিনু আঁচল মুখের উপর দিয়ে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকে।ফজিলা তো গ্যারাকলে পড়ে যায়।চেয়ারম্যানের বউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিলে তার পরিনাম যে ভালো হবে না তা ভালো করেই জানে ফজিলা।কিন্তু তাই বলে ও বাড়ি মেয়ে দেবে না সে।এদিকে নাও করতে পারছে না। আজ না করলে কালই তানিকে তুলে নিয়ে যেতে পারে তাজ।আব্বাস চেয়ারম্যানের উত্তরসূরি বলে কথা।কি বলবে ভাবতে থাকে ফজিলা।

একঘন্টা পর তানি বাড়িতে এসে সোজা রুমে ঢুকে কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে আবার ঘরে ঢোকে চুল আঁচড়ানোর জন্য। চুল আচরাচ্ছিল এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো।পুষ্পা কল করেছে ভেবে মোবাইল টা হাতে নিতেই ভ্রু কুঁচকায়। অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে।তানি রিসিভ বাটনে চাপ দিবে পরক্ষনেই আঙুল সরিয়ে ফেলে।চোখে মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে ওঠে।খট করে কলটা কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে দেয়।

“- আমার উপর হুকুম ঝাড়া তাইনে? তোর ঘরের বউ আমি হুম।ধরবো না তোর কল।খালিদের বাচ্চা বালিশ দেখি কি করিস তুই আমার?মোবাইলটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ঢিং ঢিং লাফাতে লাফাতে পুষ্পাদের বাড়িতে চলে যায়।

চলবে,,,,গোধূলির শেষ আলো?
#পর্ব ০৬
writer Tanishq Sheikh Tani

“-মা ওরা কি কইলো? আমার সাথে তানির বিয়ে দেবে তো মা?

মাকে তানিদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেখে তাজ মায়ের হাত ধরে হরবরিয়ে বলতে থাকে।চোখে মুখে দারুন উত্তেজনা আর দুশ্চিন্তা তাজের।

“- হ! বাজান দিবো।তুমি এহন বাড়ি চলো।মলিন মুখটায় জোর করে হাসি এনে বলে তাসলী।

“- কবে বিয়ে হবি আমাগের মা! ডেট ফিক্স করছিস না তো?

“- বাজান! আমি তো মুখে তাগের সম্মতি নিয়ে গেলাম।কাল তোমার আব্বা আসে পাকা কথা নিয়ে যাবি।তুমি এহন চলো তো।

“- আচ্ছা আয়। হুন্ডায় উঠে মাকেও পেছনে বসায় তাজ।খুশির সীমা নেই তাজের।তানি ওর হবে। ওর খাঁচার পাখি হবে।সব ভালোবাসা উজার করে দেবে তানিকে।ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার মতো সুখ আর কি আছে পৃথিবীতে? তাজের কাছে মনে হয়।হুন্ডার গতি বাড়িয়ে বাড়ির দিকে ছোটে তাজ।

“-আহ! কি বাসনা।আজ কি কোনো বিশেষ দিন? আমাগের বাড়িতেও ভালো ভালো খাবারের বাসনা পালাম আবার পুষ্পাগের বাড়িতেও একই অবস্থা। যা হোক গে আমার জন্যি ভালোই হয়ছে সারাদিন তেমন কিছু খাই নাই পুষ্পাগের বাড়িতে খাবো।হি!হি

তানি পুষ্পাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে লম্বা করে একটা শ্বাস নেয় খাবার সুগন্ধ পেতে।মজা মজার খাবারের লোভে খুশি হলেও মনে মনে অজানা আশঙ্কা কাজ করে এতো আয়োজন দেখে।

“- কি রে তানি? ওহানে দাড়ায় আছিস ক্যা।যা পুষ্পার কাছে গিয়ে বসেক গে।

তানিকে দেখে পুষ্পার মা রান্নাঘর থেকেই বলতে থাকে।তানি খেয়াল করে আজ বাড়িতে অনেক মানুষ। কাকির সাথে হাতে হাতে সবাই রান্নাঘরে কাজ করছে।তানি সরাসরি পুষ্পার ঘরে না গিয়ে টিনের ছাউনি বাশের চটার বেড়া ঘেরা মাটির রান্নাঘরের দুয়ারে গিয়ে দাঁড়ায়।এই আয়োজনের কারন জানতে উদগ্রীব হয় তানি।

“- কাকি! আজকে কি কুটুম আসবি তুমাগের বাড়ি?

“- ক্যা তোর মা তোরে কিছু কই নি? তোগের বাড়ি ও তো একই কুটুম যাবি এট্টু পর।

“- আমাগের বাড়ি আসবি? কিডা আসবি?

“- ওতো কতা কওয়ার সময় নাই।দেখছিস নে কতো কাম পড়ে আছে।যা পুষ্পারে একটু সাজাই গুজাই দি গে।

তানি কাকির কাজের গতি দেখে আর কোনো প্রশ্ন করে না।চুপচাপ হেঁটে আধাপাকা বাড়ির ভেতর ঢোকে।বারান্দা দিয়ে হেঁটে হেটে যাচ্ছে আর ভ্রুকুঞ্চন করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আজ অনেক সুন্দর করে পরিষ্কার পরিছন্ন করা হয়েছে রুম গুলো।পুষ্পার ভাইয়ের রুম টায় অনেকগুলো চেয়ারপেতে রেখে নতুন চাদর বিছিয়েছে,বালিশের নতুন কভার লাগিয়েছে। অনেক পরিপাটি করে সাজিয়েছে রুমটা।তানি দরজা একটু ফাক করে উঁকি দিয়ে নখ কামড়ে ভাবতে ভাবতে পুষ্পার রুমে গিয়ে অবাক।এর ঘরও তো সুন্দর করে সাজানো। তানি হা করে তাকিয়ে থাকে পুষ্পার দিকে।পুষ্পা লাল একটা শাড়ি পড়েছে।চুল খোঁপা করা,চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপিস্টিক,কানে ঝুমকো,গলায় ওর মায়ের গড়া সিতা হারটা,মেকাপও তো করেছে।তানি দরজায় দাড়িয়ে চোখ কপালে তুলে হা করে দাড়িয়ে আছে।কারন পুষ্পাকে একদম নতুন বউ বউ লাগছে।
পুষ্পা তানিকে দেখে লাজুক ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে দেয়। তানির কাছে মনে হয় নতুন বউ নতুন বরকে দেখে যেভাবে হাসে এই হাসিটা তেমনই তবে লজ্জার মিশ্রণ একটু কমে আছে এই আরকি?তানির মনের আশংকা এবার দৃঢ় হতে থাকে।পুষ্পার হাসি দেখে মুখ শক্ত করে হেঁটে পুষ্পার পাশে চুপচাপ বসে।

“- তুই আজ স্কুল আসিস নেই কি জন্যিতি? গম্ভীরমুখে বলে তানি।

“-জানি না! লজ্জায় হেসে হাতের রেশমি চুড়ি ঠিক করতে করতে বলে

“- বাল জানিস তুই? এতো লজ্জা কিসের তোর? লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে হাসছিস কি জন্যি? আমি কি হাসার কতা কইছি?

তানির রাগ করা দেখে পুষ্পার আরো মজা লাগে।কারন পুষ্পা জানে তানি ওর বউ সাজা দেখে জ্বলেপুড়ে মরছে।বান্ধবীকে দূরে যেতে কেবা দিতে চাই।মুখ টিপে হেসে তানিকে কোনাকোনি জড়িয়ে ধরে।

“- এতো রাগ করছিস কি জন্যি বল তো? তুই আমার খুশিতে খুশি হবি নে তানি? জানিস আজ সকালে সজিব আর খালিদ ভাই এসে বিয়ে পাকা করে গেছে।আব্বা এতোতাড়া তাড়ি বিয়ে দিতে চাই নেই শুধু খালিদ ভাইয়ের কথায় রাজি হয়ছে।খালিদ ভাই অনেক ভালো জানিস তো?

বান্ধবীর বিয়ে পাকা হয়ে গেছে একটু পর বান্ধবী চলে যাবে শুনে দুঃখে চোখে জল চলে আসে তানি।তার উপর খালিদের নাম শুনে সকালের কথা মনে পড়ে মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে যায়।খালিদের উপর রাগ হয়।এতো তাড়াহুড়ো করলো ক্যা?কয়দিন পর বিয়ে হলি কি খালিদের বউ ভেগে যাতো।বান্ধবী পর হয়ে যাবে ভেবে ধরা গলায় বলে,

“- আজই কি বিয়ে হয়ে যাবে তোর? তুই কি আজই চলে যাবি আমারে ছাড়ে পুষি?

“- পাগলী তুই একটা! আমি কি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি? পাশের গ্রামেই তো যাচ্ছি। স্কুলের পাশেই তো সজিবদের বাড়ি।তুই যখন ইচ্ছা যাবি।

“-তুই বিয়ে করিস নে পুষি।আমি একা হয়ে যাবান যে তালি।মুখটা মলিন করে বলে তানি

“- তাইলে তুই ও বিয়ে করে ফেল।এক কাজ করতে পারিস তালি আমরা পাশাপাশি থাকতি পারবো এভাবেই।

“- সর আমি বিয়ে করবো না।কি কাজ? জল চোখেই আগ্রহের নজরে বলে।

“- তুই খালিদ ভাইয়ের সাথে প্রেম কর তারপর তাকে বিয়ে করে নিস।তালি আমরা একগায়ে পাশাপাশি থাকতি পারবো।

খালিদের নাম শুনে রাগ উঠে যায় তানির।পুষ্পার উপর আরও রাগ ওঠে।রাগে পুষ্পার বাহুতে জোরে চিমটি মারে তানি

“- হ! তার পর সে আমারে পানি ছাড়াই গিলে ফেলুক তাই না?ঐ খালিদের সামনে গেলে কলিজা শুকিয়ে আমার চ্যাপা শুটকি হয়ে যায় আর তুই বলছিস আমাকে, ওকে বিয়ে করতে?আমার কি মাথা খারাপ, সেধে বাঘের সামনে গিয়ে বলবো আয় বাঘ আমাকে গিলে খা।বিটা শয়তান একটা আমার বান্ধবীরে বিয়ে দিয়ে দেচ্ছে।

তানির কথা শুনে পুষ্পা হেসে কুটি কুটি হয়।তানিকে ধাক্কাতে থাকে হাসতে হাসতে।পুষ্পার হাসি দেখে গায়ে জ্বালা ধরে তানির।একটু পর বিয়ে হবে আর কেমন বেহায়ার মতো হাসছে।কতো শখ বিয়ের।

“- কর তুই বিয়ে তারপর বছর বছর বাচ্চা বিয়েস। রেগে উঠে দাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।পুষ্পা হাসতে হাসতে এতো ডাকে পেছন থেকে। তানি সে ডাক কানেও তোলে না।সোজা পুষ্পাদের বাড়ির পেছনের নিরিবিলি আমগাছ টার নিচে এসে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। মুখটা ফুলিয়ে মাটিতে নখ দিয়ে মাটি খুচতে থাকে।

“- কল কেটে দিয়েছিলে কেন?( রাগী স্বরে)

হঠাৎই পেছন থেকে কথাটার আওয়াজ শুনে স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে পড়ে তানি।ইচ্ছা হয় গাছ ফাঁক করে লুকিয়ে পড়তে।কিন্তু তা তো সম্ভব না।তাই চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে দৃষ্টি অবনত করে।খালিদ সামনে এসে দাঁড়াতেই নাকে রজনীগন্ধার পারফিউমের গন্ধ লাগে।এতো কাছে এসে দাড়িয়েছে যে তানির শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছে ভয়ে।

“- কি হলো কথা কানে যায় নি? কল ধরো নি কেন? এখন কিছু করে বসি তোমার সাথে তাহলে শিক্ষা হবে তোমার।তানির মুখে ঝুকে রেগে বলে।

“- হায় হায় কয় কি? তানি এমন কিছু বল যাতে বাঁচতে পারিস।তাড়াতাড়ি বুদ্ধিখাটা।চোখ বন্ধ করে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খালিদের গরম নিঃশ্বাস এসে লাগে মুখে। তানি ভয়ে নিচে ধপ করে হাটু মুড়ে বসে পড়ে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে খালিদের এতো কাছে আসায়।বসে না পড়লে কি হতো সে কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে যায়।

খালিদ ঠোঁট কামড়ে হেসে একটু সরে দাঁড়ায়। তারপর আবার রুক্ষ স্বরে বলে

“- কথা কিভাবে বলাতে হয় খালিদ তা ভালো করেই জানে তানি।বসে পড়লে তো বাচতে পারবে না।জবাব তো তোমাকে দিতেই হবে না হলে শাস্তি পাবে।খালিদ হাত টেনে ধরে আবার দাড় করায় তানিকে।

“- দেখুন সত্যি বলছি। আমার মোবাইলে চার্জ ছিলো না।আপনার কল ধরতে গিয়েই ঠুস করে মোবাইল টা বন্ধ হয়ে গেছিলো।আমি ইচ্ছা করে কিছুই করি নি বিশ্বাস করুন।

“- ঠুস করে মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছিলো তাই না?

তানি মাথা অবনত করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।

“- তাহলে এখন আমিও ঠুস করে কিছু একটা করে বসি? বিশ্বাস করো তাতে আমারও কোনো দোষ থাকবে না।তানিকে ভেঙ্গিয়ে বলে খালিদ।

“- সত্যি বলছি বিশ্বাস করুন।আপনি আমার সাথে কিছু করেন না দয়াকরে তালি আমার মা আমারে বিয়ে দিয়ে দিবেনে।আমার বিয়ে হলি কার সাথে এমন করবেন কন তো? আমারে যাতি দিন।করুন সুরে নাকে কেঁদে বলে তানি।

“- বিয়ে দিয়ে দিলেই তো ভালো। এই বছর বিয়ে করবা সামনের বছর বাবু হয়ে যাবে।কি মজা হবে তাই না।

“- মজা না ছাই হবে।তোর এতো মজা লাগে তুই আজ বিয়ে করে কালই বাপ হ।আমারে এতো জ্বালাচ্ছিস ক্যা খালিদের বাচ্চা। খালি বিয়েটা কর তোর বউয়ের কানে তোর নামে গিট্টু লাগাই দিবান দেহে নিস দাঁত কটমট করে মনে মনে বকতে থাকে তানি।তানির চুপচাপ থাকা দেখে খালিদ জোর গলায় বলে,

“- মজা হবেনা বলো?

“- হ্যাঁ! হ্যাঁ! খুবই মজা হবে।এবার আমি যাই।

“- কই যাবা?

“- বাড়ি যাবো।

“- তাহলে যেতে দেবো না।পুষ্পাদের বাড়ি গেলে যেতে দেবো।

“-আচ্ছা! আমি পুষ্পাদের বাড়িই যাবো। এবার যাই।মুখটা নিষ্পাপ করে বলে।

“- যাও।মুখটা শক্ত করে বলে।

যাও বলতে যে দেরি তানির দৌড় দিতে দেরি হয় না।মনে মনে একশটা বকা দেয় খালিদকে যেতে যেতে।

পেছনে দাড়িয়ে খালিদ একদৃষ্টিতে তানির যাওয়ার পথে তাকিয়ে রয়।মানুষ এতোটাও অবুঝ কি করে হয় খালিদ বুঝতে পারে না।খালিদের ভালোবাসার ইঙ্গিত তানির জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে ঠিকই বুঝে নিতো।তাতে খালিদের কষ্টটাও হয়তো কমতো।যে করেছে প্রেম সেই জানে বিরহের কি যন্ত্রনা। তারপর যদি হয় এমন অবুঝ প্রেমিকা তবে যন্ত্রনা দ্বিগুণ হয়ে যায় প্রেমিকের।খালিদেরও অবস্থা সেরকম।না কাছে টানতে পারছে না দূরে যেতে পারছে।আহ! দারুন উভয়সংকটে পড়েছে খালিদের হৃদয়।

চলবে।