গোধূলির শেষ আলো পর্ব ২৭+২৮

0
600

২৭+২৮
গোধূলির শেষ আলো?
পর্ব ২৭
Writer Tanishq Sheikh Tani

পানিশূন্য খালি জগটা নিয়ে ঠাই দাড়িয়ে রয় তানি।কি করবে এখন? পরক্ষনেই মনে পড়লো ট্যাংকের লাইনের চাবি মনে হয় ঘুরিয়েই গেছে শ্বাশুড়ি। মনে এক চিলতে আশা নিয়ে ট্যাপটা ঘোরাতেই ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে আবার বন্ধ হয়ে রইলো।তানির কপালে এক আকাশ কালো মেঘ জমে উঠলো।এই রাত্রি বেলা নির্জন বাড়িতে একা কি করে বাইরে বের হবে? যদি খারাপ কিছু ঘটে? মনটা হঠাৎই কু ডেকে উঠলো।তানি মোবাইল নিয়ে আদিলকে ফোন করবে ভাবলো।যেই ভাবনা সেই কাজ।কিন্তু কথায় আছে না! বিপদ পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে।তাই ই হলো। মোবাইলে লাস্ট কবে রিচার্জ করেছিল সেটাই তো মনে নাই।তানির কষ্ট টা শুধু শ্বাশুড়িকে নিয়ে নয়।ওর নিজের বাপ মাও তো মেয়ের একটা খোঁজ নেয় না।ছেলের বউ পেয়ে মেয়ের একটা ভালোমন্দ জিজ্ঞেস ও করে না।আজ যে তানির ভাইয়ের শালার মোসলমানি কিন্তু তানিকে তার বাবা মা মুখের কথাও বললো না সে আসবে কি না? বিয়ে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ।মেয়ে বেঁচে আছে না মরে গেছে সে খবর রাখার সময় কই তাদের? মেয়ে জ্বামাই মাস গেলে লাখ খানেক টাকা বেতন পায় সেখানে মেয়ের দুঃখ তো অকল্পনীয়। ভেতরের খবর জেনেও চুপ থাকে তানির মা।ঐ যে সে যদি সহ্য করে সংসার করে আসতে পারে তানিও পারবে।মেয়েজাতের ধৈর্য না থাকলে কি চলে? বিয়ের পর এতো আহ্লাদ দেখালে মেয়ে সংসারে টিকবে কেমন করে? সমাজের নিয়ম কানুন বলে তো একটা কথা আছে নাকি? তানির মা গতমাসে মোবাইল করে করলে তানি বলেছিল খালিদের আচরণের কথা।ফজিলার সোজা কথা”- এ বয়সে স্বামীদের এমন ছুঁকছুঁকানি স্বভাব থাকেই।এটা দোষের কিছু না।দোষ তো তানির কেন সে মাকে নিজের অন্দরমহলের কথা বললো? স্বামীকে বশ করে নিজের কাছে টানতে শিখতে হবে তানিকে? এতো জেদ করে বসে থাকলে কোনোদিন তার সংসার হবে না।সংসার করার মূলমন্ত্রই নাকি সহ্য।তানি প্রতিবাদ করে বলেছিল”- একজন চরিত্রহীন মানুষকে কি করে স্বামী হিসেবে সহ্য করে মা! কি করে মিথ্যা সম্পর্কের বোঝা বইবো?
“- শয়তানকে ঈমানদার বানানোর মাঝেই বউয়ের সার্থকতা।খারাপ হলেই কি ছাড়বি নাকি? খারাপকে ভালো করেই সংসার করতি হবি।
“- শয়তানকে তো আল্লাহই ঈমানদার বানাতে পারলো না মা! আমি তো তুচ্ছ নারী।আমি কি করে পারবো? আর কয়লা কোনোদিনই ধলা হয় না মা।থাক আমারই ভুল ছিল তোমার কাছে এসব বলা।আমি তো জানি তুমি কি? রাখি।
ফজিলার ইচ্ছা হচ্ছিল মেয়েকে কষিয়ে চড় দিতে।কতো বড় সাহস সংসার ভাঙার কথা বলে?লোকে শুনলে কি বলবে? বিয়াত্তা খুত ওয়ালা মেয়ে কি এ বাজারে চলে? কে টানবে ওরে?
তানি ব্যালেন্স শুন্য মোবাইলটা হাতে নিয়ে সেদিনকার মায়ের সাথে বলা কথা গুলো ভাবে।এর পর তানির মা মেয়ের সাথে আর যোগাযোগ রাখে নি।হয়তো ভেবেছে যোগাযোগ করলে মেয়ে বেশি লাই পাবে।তার চেয়ে স্বামী গৃহে মাটি কামড়ে সংসার টিকিয়ে রাখুক।তারচেয়েও বড় কথা ফজিলার মেয়ে জ্বামাইয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস।যা তানির এসব কথায় সে নষ্ট করতে রাজি নয়।অথৈজলের মাঝে একাকি অনুভব করে নিজেকে আজ তানি।সমাজ,আপনজন সবার প্রতি ঘৃণা ধরে গেছে তানির।এদিকে মেয়ে ঘরের মধ্যে কান্নাজুড়ে দিছে।তানির মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা এমন দমবন্ধ পরিস্থিতিতে। দ্রুত পায়ে মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।এতোক্ষন মা কে কাছে না পেয়ে ভয়ে কান্না জুড়ে দেয় কায়েনাত।তানি কায়েনাতের কান্না থামিয়ে বারান্দায় এসে দূরে আধো আলোতে দাড়ানো টিউবওয়েলের দিকে তাকিয়ে রয়।চোখে মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ।বুকটা হঠাৎই ধুকপুক করছে কলপাড়ের পরের অন্ধকারে দাড়ানো সুপারি সারি দেখে।
“- মা! ভাত থাবো দুধ দি
“- হ মা! দেই দেই।
“- মা! পেত পেত।ছোট্ট কায়েনাত জামা উঁচু করে মা কে ক্ষুধায় বসে যাওয়া পেটটা দেখায়।তানির চোখে জল আসার মতো অবস্থা হয়।বাথরুমে যায়।রান্নাঘরের কলসে খোঁজে সামান্য পানি ছাড়া আর পানিই নাই।ছাঁদের সিড়িতে উঠে একবার ভাবে তালাটা ভাঙার কথা।কিন্তু তা তো সম্ভব না।মেয়ের রাতে জ্বর আসলে মাথায় পানি দিতে হবে।তখন কি হবে? তার চেয়ে এখন তো রাত ওতো বেশিও হয় নি।সাহস করে দু কলস পানি ভরেই আনা যাবি।ভয় পাস নে তানি।আল্লাহ ভরসা।কে আসবি? তাড়াতাড়ি ভরেই চলে আসবো।তানি সাহস করে পানির কলসটা হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে কেচি গেটের তালা খুলে এক কাখে মেয়েকে অন্য অন্যহাতে কলস নিয়ে কলপাড় গিয়ে থামে।মেয়েকে নামিয়ে দাড় করিয়ে তাড়াতাড়ি পানি ভরতে থাকে।তাড়াতাড়ি করলেও যেন হচ্ছে না।হাত কাপার কারনে শরীরের শক্তি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না তানি।কলসটা গলা সমান ভরা হতেই পেছনে পুরুষালি গলার শুকনো কাশি শুনে লোম লোম দাড়িয়ে যায়।কেউ আসছে! হ্যাঁ তানি স্পষ্ট কারো পায়ের আওয়াজ সন্নিকটেই শুনতে পাচ্ছে। একজন নয় দু তিনজনের এক সঙ্গে হেঁটে আসার পদধ্বনি। ভয়ে জমে দাড়িয়ে পেছন ফিরতেই তাজকে শকুনের দৃষ্টিতে হাসতে হাসতে এগোতে দেখে কলস ফেলেই মেয়েকে নিয়ে পালাতে উদ্যত হয়।কিন্তু পারে না।তার আগেই ঘিরে ধরে তাজ ও তাজের বন্ধুরা।মায়ের মুখে ভয় দেখে ও মাকে ঘিরতে দেখে কায়েনাত শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
“- সোহাগ মুখ চেপে ধর! ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে চাই না।আমি আসছি! চল তানি। টেনে হিঁচড়ে ঘরে নিতে নিতে বলে।
“- তাজ তোর দোহায় লাগে ছাড়ে দে! আমার মেয়েটা ভয় পাচ্ছে রে।
“- চুপ! শালি বহু তেলাইছি।অনেক অপমান করছিস? তোর কারনে আমি আজ খারাপ।তোকে এর মূল্য দিতি হবি নে? আজ সব মূল্য চুকাবো। চল! চল!
“- তাজজ! তানির মুখ চেপে ঘরের ভেতর টেনে খাটে ছুড়ে ফেলে।এতোটাই জোরে ফেলে যে তানির জীর্ণ শীর্ণ দূর্বল শরীর নেতিয়ে পড়ে।গোঙানি দিয়ে তাজকে অনুনয় বিনয় করে।পাথরের মূর্তিরও বুঝি দয়া হতো এই অসহায় মেয়েটার অসহায় মুখটা দেখে কিন্তু পাথরের চেয়েও নিষ্ঠুর বর্বর মানুষটার বিন্দুমাত্র মায়া দয়া হলো না।চোখে মুখে তাজের হিংস্র পৈশাচিক আনন্দ ফুটে উঠেছে।সে পেয়েছে! হ্যাঁ সে যা চেয়েছে হাসিল করতে পেরেছে।এই তো সামনে তার দুঃখের কারণ।আজ সব জ্বালা যন্ত্রনার পরিসমাপ্তি হবে তাজের।তাজ আর দেরি করে না সমস্ত ক্ষোভ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তানির দূর্বল শরীরের উপর।নেকড়ে যেমন খুবলে খুবলে হরিণকে শিকার করে।তাজও আজ তাই করে।
খালিদের মনের ভেতর কেন যেন অশান্তি লাগছে? সন্ধ্যা থেকেই বুকটা ধড়ফড় করছে।রাত বাড়ার সাথেই চিনচিন ব্যথা হতে লাগলো বুকের বা পাশটায়।শরীর হঠাৎই ঘেমে নেয়ে একাকার।তানির কথা খালিদের ভাবোদয় ঘটে।দর্পণের মতো খালিদের অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছে।কাল জাহানের বোনের মেয়েকে দেখে কায়েনাতের কথা মনে পড়েছিল।কতোদিন মেয়েটার মুখটা দেখে না খালিদ।এই মেয়ে তার ভালোবাসার ফসল অথচ সেই মেয়েকেই খালিদ অবহেলা অনাদরে রেখেছে।খালিদের পিতৃহৃদয় কন্যাকে একটিবার দেখার জন্য উতলা হয়ে যায়।মেয়েটার অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই চিন্তায় চিন্তায় খালিদের বুকে ব্যথা উঠে গেছে।খালিদ নিজের পাপ স্বীকার করে।কিন্তু এই পাপের শাস্তি তার মেয়ে পাক তা খালিদ কোনোমতেই চাই না।খালিদ মেয়ের সাথে কথা বলার জন্য তানিকে কল করে।তানি যতোই রেগে থাক খালিদের কল না উঠিয়ে থাকতে পারবে না সে বিষয়ে খালিদ দৃঢ় বিশ্বাসী।কিন্তু এ কি! আজ যে তানি সত্যি খালিদের বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত করলো।খালিদের কল কেটে দিলো তো দিলো মোবাইলই সুইচ অফ করে দিল।খালিদ ভেবেছে তানি রাগেই এমন করেছে তাই খালিদ মাকে কল করে।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর লিজা খাদিজার মোবাইল রিসিভ করে।
“- হ্যাঁ আসসালামু আলাইকুম। খালিদ ভাই কেমন আছেন?
“- ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো রে।তুই কবে আসলি?
“- আমি কবে আসলাম মানে? আমি তো আমাগের বাড়িতেই।ফুপু আমাগের বাড়ি আইছে আজ।রাইয়ানের মোসলমানি তো তাই।
“- ওহ! তোর ভাবিকে দে তো একটু।
“- কোন ভাবি! বড় ভাবি?
“- বড় ভাবি মানে?
“- হ্যাঁ! ফুপুর সাথে তো বড় ভাবি আর আরশ আইছে।
“- তানি আর কায়েনাত?
“- ওরা নাকি আসতে চাই নাই।আচ্ছা ভাই ভাবি এমন করলো ক্যা বলেন তো? আমি কি ভাবির পর? আমার ভাইয়ের মোসলমানিতে সে আসলোই না।তার নাকি এসব ভালো লাগে না।
“- ও বলেছে এসব?
“- না! ভাবির সাথে তো আজ দুমাস কথা হয় না।আপনাগের জ্বামাই ও আমারে জিজ্ঞেস করে ভাবির কথা।বোনের জন্য তার খুব টান কিন্তু বোন তো একবারও মনে করে না ভাইরে।
“- আচ্ছা রাখি আমি।খালিদ লিজার কথা শুনে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে থাকে।মায়ের আচরণে যতোটা অবাক হয় তার চেয়ে বেশি চিন্তা এখন তানি কেমন আছে তা নিয়ে খালিদের।জাহান কল দিচ্ছে। খালিদের কাছে আজকে জাহান মধুময় নয় বিষময় লাগছে।মনে হচ্ছে কলটা রিসিভ করলেই এই বিষাক্ত নাগিন তাকে ছোবলে ছোবলে শেষ করে দেবে।মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। দূরে আজান শুনতেই আজ বহুদিন পর খালিদের পাপীমন আল্লাহভীরু হয়ে উঠলো।অজু সেড়ে নামাজে দাড়িয়ে এলোমেলো মনের খেয়ালে নামাজ শেষ করলো।পরক্ষনেই আদিলের কথা মনে পড়লো।আদিলকে কল করতেই ঐ পাশ থেকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে আদিল সালাম দিল।
“- কি রে!
“- আদিল তুই সকালে একটু বাড়ি গিয়ে তানিকে বুঝিয়ে আয় না।আমার মেয়েটার সাথে একটিবার যেন কথা বলিয়ে দেয়।
“- ওহ! তাহলে মহাশয়ের পিতৃত্বের টান জেগেছে? ছি! খালিদ। এমন কাজ কি করে করলি তুই।তোর মতো ছেলের কাছে এমন অশোভন কাজ আশা করি নি আমি।
“- আমার ভুল হয়েছে।অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি আমি তানির সাথে।আমাকে ও যে শাস্তি দেবে তাই মেনে নেবো শুধু আমার মেয়েটার খোঁজ দিক।আমার কলিজার টুকরার মুখটা একবার ইমোতে দেখবো রে আদিল।একবার! আদিলকে অবাক করে দিয়ে কেদে দিল।
“-যে শাস্তি দেবে তাই মেনে নিবি?
“- হ্যাঁ! আমি পাপ করেছি রে।পাপ মোচন না করলে যে শান্তি মিলবে না আমার।তানির চোখে হয়তো কোনোদিন আর সম্মান পাবো না আমি।আমি নিকৃষ্ট রে আদিল নিকৃষ্ট আমি।
“- যদি তালাক চাই ও।করবি পাপ মোচন?
“- আদিল! আমি পাপ মোচন চাই তাই বলে আমার তানিকে হারিয়ে না।আমি স্বামী হয়ে ওর পায়ে ধরবো রে। ক্ষমা চাইবো। বাধ্য হয়ে হলেও ও আমাকে ক্ষমা করবে।ইচ্ছা হোক অনিচ্ছা হোক আমার ঘরে ওকে আমি রাখবোই।আমার মৃত্যু পর ও যেখানে খুশি যাক কিন্তু বেঁচে থাকতে ও শুধুই আমার।
“- এসব কথা আমাকে বলে কোনো লাভ নাই রে ভাই।আজ ভাবির সাথে মনিকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।সারারাস্তা ভাবি নির্বাক হয়ে বসে ছিল।তোর মেয়েটা ইশ! কি হাল হয়েছে মায়ের সাথে সাথে ঐ বাচ্চাটার।তুই এভাবে কেন কষ্ট দিলি না খাইয়ে পড়িয়ে।তানি কে দিলি দিলি নিজের সন্তানকে দিতে বাধলো না তোর? আমি ই তোকে এজন্য কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো কি না জানি না।ভাবির কথা না হয় বাদই দিলাম।
“- না খাইয়ে কষ্ট দিয়েছি মানে? আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে আদিল।আমি বুঝতেছি না কি করবো?
খালিদের সাথে মাঝরাতে কথা বলার একসময় ঝুপঝাপ বৃষ্টি শুরু হলো।প্রবল বেগে বজ্রপাত আর বাতাসের সংমিশ্রণে ভারি পরিবেশের সৃষ্টি হলো।গ্রামে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু হলেই বিদ্যুৎ চলে যেতে এক সেকেন্ড দেরি হয় না।খালিদ আর আদিলের থমথমে কথোপকথনের রেশ কেটে যায় বৃষ্টির শো শো শব্দে।
“- বাইরে কি ঝড় হচ্ছে রে আদিল?
“- হুম!আচ্ছা শোন! এখন সম্ভব হলে আমি এখনই যেতাম কিন্তু বাইরে খুব খারাপ পরিস্থিতি। ভোর হতেই আমি ও বাড়ি গিয়ে ভাবি, বাচ্চার সাথে তোর কথা বলায় দিবো।ভাই হিসেবে বলছি রে খালিদ! ভাবি খুব লক্ষীমন্ত মেয়ে তার মনে আর ব্যথা দিস না।
“- জীবনেও দিবো না রে।তওবা করছি।এমনটা ফের করার আগে যেন আল্লাহ আমার মৃত্যু দেয়। তুই শুধু একবার ওর সাথে কথা বলিয়ে দে।
“- ঠিক আছে।এখন রাখছি।
“- হুমম।খালিদ মোবাইল টা রেখে ভেজা চোখ দুটো মোছে।মনে মনে ঠিক করে যে করেই হোক সামনের মাসে দেশে ফিরে যাবে।একেবারেই।আর স্ত্রী সন্তান কে একা ফেলে রাখবে না।
|
|
আজকের ভোরটা কেমন নিবির আর থমথমে। আদিল ঘর থেকে খালিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।বৃষ্টি ঝড়ে কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে।পুকুরের পানি কেমন ঘোলাটে হয়ে আছে।গাছের পাতায় পাতায়,আশেপাশের সবকিছুতেই কেমন বিধ্বস্ত ভাব।আদিল কাদা পানির পথ বেয়ে খালিদের উঠানে এসে চমকে ওঠে।কপাল কুঁচকে ভালো করে ঘরের সামনে কিছু পড়ে থাকতে দেখে।এগিয়ে যেতেই মাথা ঘুরে ওঠে।কাল যে পুতুলটাকে কোলে করে খেলনা, খাজা কিনে দিয়েছে।যার পবিত্র হাসি দেখে বার বার হেসেছে সেই ভাতিজি টার শ্বেত পান্ডুর দেহ কাদামাটিতে পড়ে আছে। আদিলের শরীর জমে যায়।অনেক কষ্টে শরীর নাড়িয়ে কায়েনাতের মৃতদেহ কে দুহাতে উঠিয়ে কোলে নিতেই স্তব্ধ হয়ে যায়।সারারাত এই নিষ্পাপ ফুলটা বৃষ্টিতে ভিজে বরফ হয়ে আছে আদিল ছুতেই আদিলের হাত ঠান্ডায় জমে গেলো।এ কি দূর্ভাগ্য! এ কি নিষ্ঠুরতা! কায়েনাতের রক্ত শূন্য ফ্যাকাশে মুখটা তখনও আদিলের হাতের মধ্যে।অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতে আদিল বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে।ভাতিজির লাশ হাতে নিয়ে হঠাৎ ভাবির কথা মনে পড়ে আদিলের।গলা দিয়ে স্বর, চোখ দিয়ে জল কিছুই বেরুলো না।শুধু ভেতরটা চুরমার হচ্ছে ভাঙা কাঁচের টুকরোর মতো।আদিল উ! উ! করতে করতে উন্মাদের মতো কায়েনাতের দেহ বুকে জড়িয়ে ঘরের ভেতর দৌড় দেয়।তাড়াতাড়ি দৌড়াতে গিয়ে কেচি গেটের লোহার সাথে আদিলের পা লেগে কেটে হা হয়ে দরদর করে রক্ত পড়ে কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল আদিলের নেই। সে অনূভূতিশূন্য জড় পদার্থ হয়ে গেছে খাটের উপর তানির ক্ষতবিক্ষত নগ্ন দেহ দেখে।পাথরের মূর্তির মতো দাড়িয়ে থেকে চোখ নামিয়ে অনেক কষ্টে শক্তি খাটিয়ে তানির দেহে চাদর উঠিয়ে দিয়ে ধপ করে বসে পড়ে কায়েনাতকে বুকে জড়িয়ে।আদিল বাস্তবতা বিশ্বাস করে না।এমন বর্বর বাস্তবতা দেখার আগে সে নিজের মৃত্যু কামনা কেন করলো না।অনেক চেষ্টা করে নিজেকে শান্ত করে উদভ্রান্তের মতো দৌড়ে নিজের বাড়ি গিয়ে উঠানের মধ্যে হাওমাও করে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে যায়।
চলবে,,,

আমি ছোটবেলা যে কাহিনি পড়েছিলাম এটার থেকে সেটা কিছুটা ভিন্ন।ওখানে বাচ্চাটাকে মায়ের সামনে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়।যেটা বেশি লোমহর্ষক তাই বাদ দিলাম।

চলবে,,,,গোধূলির শেষ আলো?
পর্ব ২৮
Writer Tanishq Sheikh Tani

নির্জন বাড়িটা লোকে লোকারণ্য। এই গ্রাম ঐ গ্রাম সহ আশেপাশের প্রায় সব গ্রামের ছেলে, বুড়ো,বউ, ঝি রা মুখে আহারে! আহারে করতে করতে ভীর জমিয়েছে খালিদের বাড়ির উঠানে।কায়েনাতের মৃতদেহটা চাদর দিয়ে ঢেকে একটা তক্তা ওয়ালা খাটে শুইয়ে রাখা হয়েছে।মাথার পাশে আগরবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।কায়েনাতের এমন করুন মৃত্যু দেখে গায়ের পাষান পাথরেরও চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।যারা দেখতে আসছে তাদের চোখের জল এমনিতেই গড়িয়ে পড়ছে।বড় মিয়া চিন্তিত মুখে গম্ভীর হয়ে পুলিশ ইনস্পেক্টর মুনিয়ার সাথে কথা বলছে হুইলচেয়ারে বসে।
“- সৈয়দ সাহেব!তানি কে তো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জানি না বাঁচবে কি না?অবস্থা ক্রিটিকাল। তবুও আপনাদের কাওকে তো হাসপাতালে গিয়ে থাকা লাগবে?
“- দেখছেনই তো সব!আমার বড় ছেলে জোয়ান পুরুষ হয়েও এ দৃশ্য সহ্য করতে পারে নাই। বিছানায় স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।কি করবো বলেন?
“- উনার স্বামী কে কি মোবাইল করে সব জানানো হয়েছে? আর আপনার ছোট ভাইয়ের বউ আসে না কেন? কেস কতোটা গুরুতর বুঝতে পারছেন আপনারা?
“- খালিদকে এখনও জানানো হয় নি।আদিল একটু সুস্থ হোক তারপর ঐ জানাবে বলেছে।
বড় মিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই হাও মাও করে মিছিলের মতো দৌড়ে এসে কায়েনাতের মৃত দেহ ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো খাদিজা,ফজিলা।খাদিজা বুক চাপড়ে আর্তনাদ করে উঠলো। ফজিলা সেটাও করতে পারলো না।নাতনীর সাথে সাথে মেয়ের শোকে মূর্ছা গেল।সবাই ধরাধরি করে দুজনকে বারান্দায় নিয়ে মাথায় তেল পানি দিয়ে বাতাস করতে লাগলো।খাদিজা কাঁদতে কাঁদতে নিজের গাফিলতির কথা স্মরণ করে উ উ উ শব্দ করতে করতে কলপাড়ে তাকালো।হ্যাঁ এখনও পানির কলসটা কলপাড়েই কাত হয়ে পড়ে আছে কাল রাতের নির্মমতার সাক্ষী হয়ে।খাদিজা কলসটার দিকে তাকিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেল।কিছুক্ষণ উউউ করে শান্ত নদীর জলের মতো চুপ করে রইল।মেয়ে মানুষের ইমোশনের কাছে বুদ্ধি লোপ পায়।লিজার বেলা এ কথা এই মুহুর্তে ষোল আনাই খাটলো।আদিল শোকে মূর্তিমান হয়েও খালিদকে এসব জানাতে নিষেধ করেছে।কারন আদিল জানে এখন খালিদ এই শোক নিতে পারবে না।এমনিতেই নিজের দোষের কারণে কিছুটা কিছুটা হয়ে আছে।তারপর এতোবড় শোকের কথা কোনোমতেই বলা ঠিক হবে না।লিজা কাঁদতে কাঁদতে সেই অঘটন ঘটিয়ে ফেললো আবেগের বশে।খালিদকে মোবাইল করে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
“- ও ভাই রে! একি সর্বনাশ হলো রে ভাই।
খালিদ কাজে ব্যস্ত ছিল।এমনিতেও শরীর ভালো যাচ্ছে না।তারউপর লিজার আচমকা বলা এসব কথায় খালিদ থতমত খেয়ে যায়।
“- কি হয়েছে রে লিজা? কাঁদছিস কেন?
“- ভাই! ও ভাই। সব শেষ ভাই।
“- কি বলছিস? ঠিক করে বললে বল।না বললে মোবাইল কাট।
“- ভাই! কায়েনাত! ভাই!
“- কান্না থামিয়ে ঠিক করে বল? কি হয়েছে আমার মায়ের?
“- ভাই! কায়েনাত আর নাই ভাই!
খালিদ বরফের মতো জমে গেলো।”-কি বলে এই মেয়ে? তাহলে কি অসুস্থতাই শেষ হয়ে গেলো মেয়েটা?না! না! আমার পাপের শাস্তি আমার পেয়ে কেন পাবে? লিজা তোর ভাবিকে দে।তুই কি ভুলভাল বকছিস?
“- ভাই! ভাবি আবার কান্নার রোলে কথা বন্ধ হয়ে যায় লিজার।
“- ধুর! এই তুই যদি কাদবিই তাহলে কল করে উল্টো পাল্টা বকছিস কেন? রাখ মোবাইল। খালিদ রাগে মোবাইল টা কেটে দিল।শরীর দরদর করে ঘামছে।হাত পা কাঁপছে। সামনে শুধুই ঝাপসা লাগছে।খালিদের পা টলটল করছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে।তবুও কষ্ট করে আদিল কে কল করলো।আদিল কি বলবে খালিদকে ভেবে পায় না।গলা দিয়ে স্বর বের করতেও কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। খালিদ কল করেই যাচ্ছে। আদিল একসময় মোবাইল রিসিভ করলো।
“- কি রে মোবাইল ধরছিস না কেন? কতোবার কল দিচ্ছি। এই আদিল আমার কায়েনাতের কি হয়েছে রে?
“- কককই! কিছুই হয় নি।
“- মিথ্যা বলিস না রে।তোর গলা শুনেই বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে। বল না কি হয়েছে? চিৎকার করে ওঠে কান্না মিশ্রিত গলায়।
“- খালিদ তোর সব শেষ রে!ভাবির কাছে বুঝি আর ক্ষমা চাওয়া হলো না তোর।
“- কি বলছিস কি তুই? এই তুই কাদছিস কেন? দ্যাখ ভাই! আমি ওদের সাথে অন্যায় করেছি।অনেক বড় অন্যায়।তাই বলে এভাবে আমাকে শাস্তি দিস না তোরা।আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না আদিল।
“- খালিদ তোকে ধৈর্য ধরতে হবে এখন।ভেঙে পড়লে হবে না।শক্ত হ তুই।যে গেছে সে তো গেছেই।যে বেঁচে আছে তার কথা ভেবে হলেও নিজেকে শান্ত রাখ।ভাবির এখন তোর সাপোর্ট খুব প্রয়োজন রে।
“- কি বলছিস তোরা? কেন বলছিস এসব? কে গেছে আর কি হয়েছে আমার তানি কায়েনাতের? খুলে বল আদিল।
আদিল সকালের ঘটনা সব খুলে বললো।কায়েনাতের নির্মম মৃত্যু,তানি রেপ হয়ে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে জীবন মৃত্যুর মাঝখানে দাড়িয়ে আছে।সব বলে।
“- খালিদ নিজেকে শক্ত কর! ভাবির পাশে এখন তোকেই দাঁড়াতে হবে।যতো তাড়াতাড়ি পারিস দেশে চলে আয় ভাই।খালিদ শুনছিস! খালিদ! হ্যালো! হ্যাঁলো,,
“- উ! হু!
“- খালিদ! ঠিক আছিস! কথা শুনতে পেরেছিস?
“- হু!
“- খালিদ! কি হয়েছে তোর? এই!
এরপর ওপাশ থেকে ধরধর, কি হলো! এমন গলার আওয়াজ শুনতে পেলো আদিল।মোবাইলে আরও কয়েকবার হ্যাঁলো বলার পর একজন জবাব দিলো খালিদ অচেতন হয়ে পড়ে গেছে।তারা খালিদকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছে। কারন খালিদের শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে।আদিল মোবাইল রেখে চুল টেনে কাদতে লাগলো।পরিবেশটাই জাহান্নামের আগুনের মতো হয়ে আছে।শরীর মন সব জ্বলছে।
তিনচারদিন গ্রামের পরিবেশ থমথমে হয়ে রইলো।রাতে বউ,ঝি রা বাচ্চাদের নিয়ে কেউ ঘর থেকে বেরুনো সাহস করলো না।কায়েনাতের নিষ্পাপ চেহারা গ্রামের মানুষের গলার স্বর ভার করার জন্যই যথেষ্ট হলো।দুমাস পর তানি কিছুটা সুস্থ হলো তবে স্বাভাবিক নয়।রোবটের মতো চুপচাপ বসে থাকে।মশা মাছি শরীরে বসলেও কোনো নড়াচড়া করে না।আদিল হাসপাতাল, থানা দৌড়াদৌড়ি করছে। মুনিয়া আজ আদিলকে খুব কড়াভাবে কথা শুনিয়েছে।বলেছে,
“- কেমন আত্মীয় স্বজন আপনারা? পাশের বাড়ি ভাবি রেপ হয়, ভাতিজি খুন হয় আর আপনারা নাক ডেকে ঘুমান।আপনারাই আবার করান নি তো এসব?
“- কি বলছেন ম্যাডাম! ভাবি হয় তানি আমার।আমার ব্যথা আপনি কোনোদিন বুঝবেন না ম্যাডাম।
“- এতো ইমোশনাল ড্রামা করবেন না মি.আদিল।একটা ক্লু দিতে পারছেন না আবার ব্যথা দেখাতে আসছেন? আপনার ভাবি যে বেচে গেছে সেটাই তো মিরাকল।প্রথমে তো লাইফ সাপোর্ট দেওয়ায় ভাবছি বাঁচবেই না।ও বেচারির ব্যথা যদি বুঝতেন তবে কিছু তো ধারণা দিতেন ঐ হায়েনারদের সম্পর্কে।
“- আমি সত্যি বুঝতে পারছি না কারা এমন করলো।গ্রামে খালিদদের কোনো শত্রু নেই।তানি ভাবির বাবারও না।তবে হ্যাঁ ঐ আব্বাস জোয়ার্দারের সাথে আমাদের পূর্ব শত্রুতা আছে সেটাতো আপনি জানেন ই।
“- ওহ! শীট! আমি তো এ বিষয় ভুলেই গিয়েছিলাম।এই আব্বাস জোয়ার্দার সুবিধার লোক না।একটা তদন্ত তাকে নিয়েও করা দরকার।
“- জ্বী! তবে আমি শুনেছি আব্বাস জোয়ার্দার নাকি প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে আছে তার ছোট বউয়ের মৃত্যুর পর।একজন প্যারালাইসিস রোগী কি করে এতো নোংরা কাজ করতে পারে?
“- প্যারালাইসিস রোগী না ভঙ ধরেছে কে জানে? তার একটা ছেলেও তো আছে।সেও তো সুবিধার না।
“- না! না! তাজ ওর বাবার মতো খারাপ না
আমাদের চোখের সামনেই তো বড় হয়েছে।
“- চোখের সামনের ভালো দেখা জিনিসটাতেই ভেজাল বেশি থাকে।একটু পরখ করতে সমস্যা কি? আপনি বাড়ি যান এখন।পরে একবার আসবেন কল করলে।
“-জ্বী আচ্ছা!
আদিলের মন মুনিয়ার প্রতি দিনদিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। শিশুবাচ্চার মতো মুনিয়ার সব কথায় শোনে সে।কিন্তু নিজের মনের ফাগুনের খবর মুনিয়াকে দেয় না।পরিস্থিতিও নেই নিজের ভালোবাসার কথা জাহির করার।
ফজিলা মেয়েকে ভাত চটকে মুখে তুলে দেয়।তানি মিনিটে একবার মুখটা নাড়িয়ে ভাত চাবায় স্থির দৃষ্টিতে। ফজিলা কেদে কেদে চোখের আলো কমিয়ে ফেলেছে মেয়ের করুন দশা দেখে।মেয়ের ভালোর জন্য মেয়েকে একলা ফেলে এখন তার চরম মূল্য দিতে হলো।এখন আর সমাজ,লোকের কথা গায়ে লাগে না ফজিলার।ফজিলা মেয়ের হাত পা ডলতে ডলতে কাদে আর একটিবার মেয়েকে কথা বলতে বলে।কিন্তু তানি বলে না।আজও ফজিলা খাবার শেষে একই রকম করলো।আজও কথা বলে নি তানি।তবে একটা ঘটনা ঘটেছে ফজিলার সামনে।তানি নড়াচড়া করে কারো সাহায্য ছাড়াই শুয়ে পড়েছে অন্যদিকে মুখ করে।ফজিলা খুশিতে মেয়েকে জড়িয়ে কেঁদেছে।তৎক্ষনাৎ খালিদকে মোবাইল করে জানিয়েছে তানির স্বাভাবিক হওয়ার কথা।খালিদের মাইনর অ্যাটাক হয়েছে।সেও দু তিনদিন ইমারজেন্সিতে ছিলো।এখনও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হচ্ছে। ডাক্তার চিন্তা করতে একদম নিষেধ করেছে।সাবধানে চলতে বলেছে কারন পরবর্তী অ্যাটাকে জীবননাশের হুমকি আছে।আদিল সহ সবার বুঝানোতে খালিদ নিজেকে শক্ত রেখেছে যদিও সে জানে সে দূর্বল হৃদয় নিয়ে চলছে।যে কোনোসময় থেমে যেতে পারে তার হৃদয় স্পন্দন। তানির জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে খালিদ।মৃত্যুকে জয় করতে চাই আবার তানির হাত ধরে।পাপের প্রায়শ্চিত্ত যে তাকে তানির কাছেই করতে হবে।সব ভুলিয়ে দেবে তানিকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে।কোনো কষ্টই আর ছুতে দেবে না।প্রতি রাতে মেয়ের কথা মনে পড়লেই বুকের চেপে রাখা ব্যথাটা তীব্রভাবে জেগে ওঠে।ঘুমাতে পারে না খালিদ।তানিকে ভিডিও কলে দেখে অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না তানির নির্বিকার চোখের স্থির চাহনি দেখে।শুধু দেখেই মনের দুঃখ হালকা করে খালিদ।এ’কদিনে তরতর করে ২৮/২৯ বয়সী থেকে ৪০ এর কাছাকাছি পুরুষের মতো হয়ে গেছে।বয়সের তুলনায় শরীর নেতিয়ে পড়েছে।চোখে মুখে উদভ্রান্ত ভাব।
তানি একটু স্বাভাবিক হলেও খালিদের কথার জবাব দেয় না মোবাইলে। আবার কেটেও দেয় না কল।তানির মা মেয়ের কানে মোবাইল ধরে আশায় বুক বাধে আশ্চর্য কিছু ঘটার।তানি চুপচাপ শুধু খালিদের ব্যথাভরা কথাগুলো শোনে।ফজিলা লক্ষ্য করে তানি কি যেন ভাবে? সারাদিন ভাবে এমনকি রাতেও চোখ খুলে একদৃষ্টিতে একদিকে তাকিয়ে থাকে।ফজিলার সেবা শুশ্রূষায় তানি দু একদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে যায়।শরীরের ঘা অনেকটা শুকিয়ে গেছে।তবে মনের ঘা শুকিয়েছে কি?হয়তো হ্যাঁ! হয়তো না!ফজিলা মেয়েকে খালিদের বাড়ি না নিয়ে তানির বাবার বাড়ি নিয়ে আসে। ৭দিন বাদে খালিদ ফিরে আসলে তখনই তানিকে ও বাড়ি নিয়ে যাবে ততদিন এখানেই থাকবে তানি।খাদিজা আজ এসে তানির হাত ধরে কেঁদে গেছে।কিন্তু তানি খাদিজার কথায় হা না! কোনো জবাব দেয় নি।খাদিজা যতোক্ষন ছিল তানি পূর্বেকার মতো রোবট সদৃশ হয়ে ছিল।তানির দিন এভাবেই কাটতে লাগলো।সুস্থ হয়েও অসুস্থ মানুষের মতো জীবন পাড় করতে লাগলো।
দুদিন বাদে খালিদ আসবে।সবার মনে কিছুটা আশা জেগেছে তানিকে আবার আগের মতো ফিরে পাবার জন্য। আজ রাতে ফজিলা মেয়ের পছন্দের ইলিশঝোল করেছে।মনে মনে কেঁদেছে আজও তানি মাছ ছোবে না ভেবে কিন্তু ফজিলাকে আশ্চর্য করে দিয়ে গপাগপ মাছভাত খেয়ে নিল তানি।যেন বহু দিনের বুভুক্ষা বুকে চেপে রেখেছিল।ফজিলা রাতে নিশ্চিতে ঘুমাই মেয়েকে আজ পেট ভরে খাওয়াতে পেরেছে ভেবে।
|
|
গতদুদিন ধরে নজু মিয়ার বাড়িতে জমকালো আয়োজন হচ্ছে সালমার বিয়ে উপলক্ষে। তাজের সাথে সালমার বিয়ে হবে কালই।তাজ প্রথমে রাজি না হলেও সালমা গর্ভবতী হওয়ার কথা শুনে তাকে বাধ্য হয়েই এ বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে।সালমার খুশি আকাশ ছোঁয়া। সে তাজের বউ হবে।তাজের সন্তানের মা হবে।ইশ! কি ভাগ্য সালমার।সব সুখ এবার সালমার পায়ের তলে এসে ভীরবে।
সকালের সূর্যের আলোর প্রতিক্ষায় সালমা সারারাত খুশিতে ছটফট করেই কাটালো।
|
|
যা ঘটার আশা করে নি কেউ তাই ঘটে গেল আজ সকালের সূর্য উদয়ের সাথে সাথে।ফজিলা ঘুম থেকে উঠেই তানিকে পেলো না।দরজা খোলা।পুরো বাড়ি, আশেপাশের বাড়ি খুঁজে না পেয়ে যখন মেয়ের সাথে খারাপ কিছু ঘটার আশংকায় অস্থির হয়ে উঠলো তখনই জানতে পেলো কাল রাতে জোয়ার্দার বাড়ি উঠেছে তানি।তাও তাজকে বিয়ে করে।মেয়ের এহেন কাজে ফজিলা নির্বিকার হয়ে বসে রইলো ঘরের দাওয়ায়। অসুস্থ হয়ে পড়লো ফজিলা চিন্তায়।পুরো গায়ে কানাঘুষা হতে লাগলো এই বিয়ে নিয়ে।

চলবে,,,