গোপন_বিয়ে ৪র্থ_পর্ব

0
922

#গোপন_বিয়ে
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



এলিজার সে প্রেমিক ছিল আমার স্ত্রী বিন্দুর বড় ভাইয়ের বন্ধু।তার প্রেমিকের নাম ছিল পুণম।পুণম যে বিন্দুর পরিচিত তাও জানতো না এলিজা। এলিজা শুধু জানতো পুণম তার বয়ফ্রেন্ড এছাড়া আর কিচ্ছু না।’
‘তারপর? তারপর কী হলো বলুন!’
ইমতিয়াজ তার কপালের ঘাম মুছলেন। অগ্রহায়ণের বাতাস বইছে গাছের পাতায় পাতায়। তবুও যে তিনি কেন ঘামছেন কী জানি!
ইমতিয়াজ এবার বললেন,’পুণমকে পাগলের মতো ভালোবাসতো এলিজা।মা তার রিলেশনের ব‍্যাপারে জানতে পেরে এলিজাকে অনেক বকেন। মারধোর পর্যন্ত করেন। চেম্বার থেকে বাসায় ফিরে এসব শুনে আমি মাকে বোঝায়।বলি,’মা,যোগ পাল্টেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দেই প্রেম বিয়ে করছে এবং তারা হ‍্যাপিও হচ্ছে।আর এলিজা এখন যথেষ্ট ম‍্যাচিউ‍্যর।সো, তাকে বাঁধা না দেয়ায় উত্তম হবে আমাদের জন্য।ও যদি কাউকে ভালোবেসে হ‍্যাপি হতে পারে তাতে আমাদের সমস্যা কোথায়?’
মা আমার কথা শুনলেন। তারপর এলিজাকে মা বললেন,’ছেলেকে বল তার বাবাকে বলতে আমাদের বাসায় এসে কথা বলার জন্য।’
এলিজা পুণমকে জানালো।তার দুদিন পরেই পুণমের বাবা এলেন আমাদের বাড়িতে। এবং তিনি এসে কথাবার্তা বলে এলিজার হাতে আংটি পরিয়ে দিয়ে গেলেন।এর কদিন পরই বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হলো ওদের। এরপর থেকে পুণম নিয়মিত আসা যাওয়া করতে লাগলো আমাদের বাড়িতে।আর এলিজা ছিল তখন অনেক হ‍্যাপি।’
আমি ইমতিয়াজ সাহেবের কথাগুলো শুনছিলাম খুব মনোযোগ সহকারে।শুনতে আমার ভালো লাগছিলো। আমি এবার পরবর্তী অংশ শোনার জন্য আগ্রহ ভরা গলায় বললাম,’তারপর কী হলো? এলিজা মারা গেল কীভাবে?আর পুণমই বা কোথায়? আপনার ওয়াইফ এর কথা বলছিলেন তিনি এখন কোথায়?আর আপনার মা! তিনি এখন কোথায় আছেন?’
ইমতিয়াজ বললেন,’আমার মাথা ব্যথা করছে। প্রতিদিন রাতে আমার এমন হয়। এখন উঠতেও পারবো না। তুমি আমার জন্য এক গ্লাস পানি আনতে পারবে বোন?তেষ্ঠা পেয়েছে খুব!’
আমি বললাম,’এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।’
বলে আমি সিঁড়ি ভেঙে দৌড়ে নীচে গেলাম এবং জগ ভর্তি করে পানি নিয়ে এলাম। কিন্তু ছাদে এসে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। ইমতিয়াজ সাহেব শুয়ে আছেন ছাদের ধুলো বালির উপর। আমি দ্রুত জগটা মাটিতে রেখে তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি তার জ্ঞান নেই। মুখ দিয়ে কেমন ফেনা ফেনা বের হচ্ছে। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। আমার কপালেই কেন শুধু বিপদ আর বিপদ?
ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু কেঁদে আর কী লাভ হবে। তারচেয়ে কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কী করবো আমি?
ইমতিয়াজ সাহেবের কাছে এসে তাকে ডাকতে চাইলাম। কিন্তু কী বলে ডাকবো ঠিক করতে পারছিলাম না। ডাক্তার কিংবা স‍্যার বলে ডাকা ঠিক হবে না।নাম ধরে ডাকাও ঠিক হবে না। কারণ তিনি আমায় বোন ডেকেছেন। ফস করে তখন আমার মুখ থেকে ভাই শব্দটিই বেরিয়ে এলো। আমি তার হাত ধরে নাড়া দিয়ে জোরে ডাকতে লাগলাম,’ভাইয়া,এই ভাইয়া?’
ইমতিয়াজ সাহেব সাড়া দিচ্ছেন না। আমি দ্রুত তার মাথায় জগের পানিটা ঢাললাম। চোখে মুখেও পানি ছিটিয়ে দিলাম।এতেও কাজ হলো না। ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে। মনে মনে আল্লাহকে ডেকে ডেকে আবার নীচে নামলাম আর নীচ থেকে বড় দুটো বোতল ভরে নিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ইমতিয়াজ সাহেবের মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। দের বোতল পানি ঢালার পর ইমতিয়াজ সাহেবের হাতের একটা আঙ্গুল নড়লো। তারপর চোখের পাতা। আমি এবার তার হাত ধরে কেঁদে ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে তখন আমি শুধু বলছিলাম,’ভাইয়ারে,এই ভাইয়া,কথা বলো ভাইয়া!’
ইমতিয়াজ সাহেব ঝাঁপসা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,’এলিজা! এই এলিজা।’
তিনি আমার নাকে মুখে তার হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,’তুই কোথায় চলে গিয়েছিলে এলিজা!’
আমি তখনও কাঁদছি।কী সব বিপদে পড়ছি বারবার আমি। আমি আর আধ বোতল পানি দিয়ে ভালো করে ইমতিয়াজ সাহেবের চোখ মুখ ধুয়ে দিলাম। ইমতিয়াজ সাহেবের মাথাটা মনে হয় এখন ঠিক হয়েছে। তিনি এখন আমায় চিনতে পারছেন। ইমতিয়াজ সাহেব আস্তে আস্তে উঠে বসে বললেন,’তোমাকে ধন্যবাদ বোন। আমার হঠাৎ মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল। তারপর কী হলো আর জানি না। ‘
আমি বললাম,’আপনার কী এমন আরো হয়েছে কখনো?’
মাথায় ব‍্যাথা হয় প্রতিদিন কিন্তু আজই প্রথম ঢলে পড়েছি।’
‘আপনি টেস্ট করান ভাইয়া!’
‘আমায় ভাইয়া ডেকেছো তুমি!’
খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলেন ইমতিয়াজ।আর তিনি আমার একটা হাত টেনে নিয়ে বললেন,’ভেবেছিলাম পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই তাই আমি ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটাও মন্দ না।যার কেউ না থাকে তারও কেউ জুটে যায়! আমারও জুটে গেছে। আমার বোন জুটে গেছে!’
ইমতিয়াজ ভাইয়া পরবর্তী ঘটনাটা তখনই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাকে শাসনের গলায় বললাম,’আগে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম হোক। সকাল বেলা যখন আপনার শরীর ভালো লাগবে তখন বলবেন।’
ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,’আচ্ছা।’

#চলবে