গ্রামের পিচ্চি বউ পর্ব :- ২২ + ২৩ এবং ২৪

0
1040

গল্প :- গ্রামের পিচ্চি বউ
পর্ব :- ২২ + ২৩ এবং ২৪
লেখিকা :- বাবুনি
.
.
.
-:”সকালে এর্লাম এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল , এর্লাম অফ করে রুমকির দিকে চোখ গেল..
ও এখনো ঘুমাচ্ছে..

অফিসের অনেক কাজ বাকি আছে , না জানি ম্যানেজার টা কি ঝামেলা পাকিয়ে রাখছে আল্লাহ ই ভালো জানেন..

তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেলাম ,ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম..
এ কি আজ ৭টা হয়ে যাচ্ছে রুমকির উঠার কোনো নাম ই নেই..
ও তো আমার আগে উঠে নামাজ আদায় করে রোজ,আজ কি হলো…?
আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম,ও কি যেন বলছে ঘুমের ঘোরে..
ওর মুখের কাছে কান নিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম..
ও বলছে.. আম্মু ….আম্মু গো….
আমি বললাম ওই পিচ্চি বউ আমার কি হয়েছে তুমার…?এমন করছো কেন..?
ও আমার কথা শুনতেই পেলো না মনে হয়…
আগের মতই একি কথা বলে যাচ্ছে…
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার জন্য যেই মাথায় হাত দিলাম…
এ কি….জরে তো ওর মাথা টা পোড়ে যাচ্ছে..
আমি এক দৌড়ে রান্না ঘরে গেলাম..
একটা বাটিতে পানি নিয়ে আসলাম, তারপর পানি তে ছোট কাপড় ভিজিয়ে ওর মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলাম..
ও কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে তাকালো..
আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে..
আমি বললাম এখন কেমন লাগছে…?
রুমকি: ভালা ..
আমি: তুমার কখন জর আসছে..? তুমার কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ..?
রুমকি: জানি না..
আমি: ওকে চুপ করে শুয়ে থাকো আমি জল পট্টি দিচ্ছি তুমার মাথায়,কমে যাবে জর..
রুমকি: আবার চোখ বন্ধ করে দিল..
আমার খুব খারাপ লাগছে , না জানি কখন জর আসছে ওর কত কষ্ট ই না পাইছে আল্লাহ ই জানেন..
নিজের অজান্তেই দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আমার গাল বেয়ে..
হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমি কান্না করছি ..বাট কেন..?আগে তো কখনো এমন হয়নি কারো জন্য..
তাহলে আমি কি …? না আর ভাবতে পারছি না..
রুমকির ঘুমন্ত কপালে আলতো করে চুমু দিলাম..
ও ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি উঠে রেডি হয়ে নিলাম অফিসের টাইম হয়ে গেছে..
রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলাম..
আম্মু ও উঠে গেছে..
আমি আম্মু কে বললাম রুমকির খেয়াল রাখতে ওর জর আসছে..
আম্মু বলল তুই টেনশন করিস না আমি দেখে রাখবো..
আমি বললাম আচ্ছা আম্মু আমি তাহলে যাই..
আম্মু: নাস্তা করে যা..
আমি:নাহ আম্মু খিদে নেই,আর অফিসের দেরি হয়ে গেছে এমনিতে..
এই বলে বেরিয়ে আসলাম, জানি না কেন জানি খেতে ইচ্ছে করছে না এখন কিছু ই..
গাড়ি স্টার্ট দিলাম..
কেন জানি ভালো লাগছে না কিছু ই ,শুধু রুমকির কথা মনে পড়ছে..
ওকে এভাবে রেখে আসা টা কি ঠিক হয়েছে..?
পরক্ষনেই মনে হলো আরে দূর আম্মু তো আছেই , আমি অযথা টেনশন করছি .. আম্মু ঠিক ই দেখে রাখবে..আর ফোন করে না হয় জানবো ও কি করছে..
ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলাম…

দেখতে দেখতে অফিসের সামনে চলে আসলাম, গাড়ি থেকে নেমে অফিসে ঢুকলাম..
সবাই দাঁড়িয়ে গেল, আমি ইশারায় বললাম বসতে, তারপর আমি আমার অফিস রুমে চলে গেলাম..
একটু পর ম্যানেজার কে ডাকলাম ,ওনি ফাইল গুলো নিয়ে রুমে আসলেন..
.
.
#Part :- 23
.
.
-: আমি ম্যানেজার কে বসতে বললাম,আর ফাইল গুলো হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম..
যা দেখলাম অফিসের কাজ এই কয়দিন এ তা তে আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম..
এই দেখে ম্যানেজার বলে উঠলো, স্যার এনি প্রবলেম…? স্যার কোন ভুল করেছি কি আমারা সবাই আপনার অবর্তমানে…?
আমি: না রফিক সাহেব, আমি সত্যি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপনাকে.. আমার অবর্তমানে এত সুন্দর করে অফিসের সব কাজ ঠিকমত করেছেন আপনি.. আমি খুবই খুশি..
ম্যানেজার: স্যার এই সবের পিছনে আরেকজন এর ও প্রচুর অবদান রয়েছে.. কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে তাঁকেই জানান স্যার..
আমি:কে সে…?
ম্যানেজার: আমাদের সহকর্মী মীস সীমা ..
আমি:ওহ তাই,ও কোথায় ওকে একবার আমার রুমে আসতে বল ..
ম্যানেজার:ওকে স্যার তাহলে আমি এখন আসি, আসসালামুয়ালাইকুম..
আমি:ওকে যাও , ওয়ালাইকুম আসসালাম..
একটু পর ,সীমা আসলো..
সীমা:ম্যা আই কামিং স্যার..
আমি: ইয়েস কামিং..
সীমা: স্যার আমাকে ডেকেছেন..? কিছু বলবেন স্যার..?
আমি:হুমমম বসো..
সীমা : না স্যার আমি এইভাবেই ঠিক আছি, আপনি বলেন কি বলবেন..?
আমি: তুমি আমার অফিসের যে কাজ গুলো সঠিক ভাবে পালন করলে আমার অবর্তমানে.. সত্যি আমি খুব আনন্দিত, ধন্যবাদ তোমাকে..
সীমা:হেসে হেসে বলল স্যার এইটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তাছাড়া আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি স্যার এর থেকে বেশী কিছু না..
আমি:হুমমম তা ঠিক.. তারপর ও তুমার সেলারি এই মাসে আমি আরেকটু বেশি বাড়িয়ে দিলাম ওকে..
সীমা: স্যার তার বোধহয় দরকার ছিলো না..
আমি:কি যে বল তুমি, আমি খুশি হয়েছি তুমার কাজে তা ছাড়া, এই টা করুনা নয় তুমার পরিশ্রমের ফল..
সীমা: ধন্যবাদ স্যার..
আমি:ওকে ..
সীমা: আমি তাহলে এখন যাই স্যার..
আমি:হুমমম যাও ,আর হে এই ফাইলটি একটু পোরন করে দিও তো..(ওর দিকে ফাইলটি এগিয়ে দিলাম..)
সীমা: ওকে স্যার..(চলে গেল ও)

আমি বসে আছি,রুমকির কথা মনে পড়তেই আম্মু কে কল দিলাম..
হেল্যো আম্মু…
আম্মু:হুমমম বল রাফসান..?
আমি:আম্মু রুমকি কেমন আছে এখন কি করছে..?
আম্মু:শুয়ে আছে ও জর যেমন ছিলো এখন ও ঠিক এরকমই রয়েগেছে..তুই একটু তাতাড়ি বাসায় চলে আসিস,রুমকি কে নিয়ে ডক্টর এ যেতে হবে..
আমি:ওকে আম্মু,তা ও কি কিছু খাইছে..?
আম্মু:না বাবা ও কিছুই মুখে তুলছে না.. আমি অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারি নি..
আমি:ওকে আম্মু আমি আসছি ,বায়..
কল কেটে ম্যানেজার কে সব বুঝিয়ে দিয়ে ,অফিস থেকে বেরিয়ে আসলাম ..
গাড়ি স্টার্ট দিলাম.. খুব স্পিড বাড়িয়ে দিলাম গাড়ি ড্রাইভ এর..
বাসায় পৌছে ই গাড়ি থেকে নেমে..এক দৌড়ে উপরে গেলাম, রুমকির পাশে গিয়ে বসলাম..
আমি যেই ওর মাথায় হাত বুলাতে যাবো, আমার হাত ধরে ফেলল কপ করে. ধরে রুমকি বলতে লাগলো..
আপনে খুব পঁচা ,বাজে,খবিস,খাটাস..আমারে একলা রাখিয়া কই গেছলা, আমার খুব কষ্ট হইছে জরে..
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু_
.
.
#Part :- 24
.
.
আমি ও জরিয়ে ধরলাম শক্ত করে আমার পিচ্চি বউ টা কে..
বললাম , পিচ্চি বউ আমার আমি তো অফিসে ছিলাম ..
তুমি কান্না করছো কেন,আর কিছু খেলে না কেন..?
রুমকি:আপনে আমারে একলা রাখিয়া গেলা কেনে.. আমার খুব খারাপ লাগছে.. বলেই আমার শার্ট এ মুখ গুঁজে দিল..
আমি: পিচ্চি বউ আমার তুমি তো তখন ঘুমিয়ে ছিলে তাই আমি বলে যেতে পারি নি..
আর কান্না করো না আমার পিচ্চি বউ এখন তো আমি আছি..
রুমকি: না আপনে খুব পঁচা এর লাগি ওউ তো আমারে একলা রাখিয়া না কইয়া গেছইন গিয়া..আপনে আমারে একটু ও ভালোবাসেন না..
আমি:(বেশ অবাক হলাম ওর মুখে এমন কথা শুনে, আমার পিচ্চি বউ দেখছি ভালোবাসা ও বুঝে..)আরে দূর কে বলছে আমি তুমাকে ভালোবাসি না.. আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমার পিচ্চি বউ , পাগলি একটা..
রুমকি: সত্যি..?
আমি:হুমমম সত্যি.. এবার কান্না থামাও প্লিজ..
রুমকি:হুমমম..
(আমি ওর চোখ গুলো মুছে দিলাম আমার হাত দিয়ে..)
আমি:রুমকি তুমি একটু ঘুমাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসি একটু ..
রুমকি: আবার যাইতা নায় তো আমারে একলা রাখিয়া…?
আমি:ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম , না গো পিচ্চি বউ আর যাবো না..বলে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম..

কিছুক্ষণ পর রান্না ঘর থেকে ওর জন্য প্লেট এ করে খাবার নিয়ে রুমে আসলাম..
ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে..
আমি একটু মুচকি হেসে ওর পাশে গিয়ে বসলাম ,ওর মাথার পেছনে একটা বালিশ দিয়ে ওকে একটু ধরে বসালাম..
তারপর প্লেট টা হাতে নিয়ে খাবার তুলে দিলাম ওর মুখের দিকে..
ও একদম বাচ্চাদের মত আমার দিকে তাকিয়ে হা করলো..
আমি ওর মুখে দিলাম খাবার..
দু তিনবার খাবার পর বলল,আর খাইরাম না..
আমি:না তুমাকে আরেকটু খেতে হবে গো আমার পিচ্চি বউ , না খেলে তুমি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে…নাও খাও..
রুমকি: ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য মেয়ের মত খেয়ে নিল, তারপর বলল..আপনে ও খাইন..
আমি: না আমি পরে খেয়ে নিবো তুমি খাও..
রুমকি:আপনে খাইন আপনে ও তো খাইছোইন না এখন ও..
কি আর করা আমি ও খেয়ে নিলাম..
তারপর আম্মু কে বললাম রুমকি কে রেডি করে দিতে.. ডক্টর এ যেতে হবে..
কিছুক্ষণ পর আম্মু বলল ও রেডি .. আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসালাম..(ও হাঁটতে পারছিল না এতটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলো..তাই কোলে তুলে নিতে হলো..)
ডক্টর দেখিয়ে বাসায় আসলাম..
ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম..
আমি বললাম রুমকি কি খাবে..কি নাস্তা তৈরি করবো..
রুমকি:না এখন কিচ্ছু খাইতাম নায় ভালা লাগের না..
আমি:খেতে হবে , এখন কিছু খেয়ে ঔষধ খাবে.. আমি এক্ষুনি আসছি..
বলেই রান্না ঘরে গিয়ে নুডুলস রান্না করতে লাগলাম..
একটু পর দেখি রুমকি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে..
আমি:একি তুমি এখানে আসতে গেলে কেন..?
রুমকি:ভালা লাগের না ওউ দেখতাম আইলাম আপনে কিতা কররা..
আমি:ওকে বলেই কোলে তুলে কিচিং এর উপর বসিয়ে, ওর গাল টা একটু টেনে দিলাম ..
.
.
চলবে……………