চন্দ্ররাতের মায়া পর্ব-০৮

0
189

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৮]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

তীব্র মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে।মাথার পাশ দিয়ে রক্তের স্রোত বইছে।নন্দিতার সারা শরীর হিম হয়ে আসলো।এক এক করে মুহুর্তেই সবাই চলে গেলো।নন্দিতা ধুম মেরে বসে আছে।

তীব্র হাতে ভর করে উঠলো।উঠে গায়ের লেগে থাকা ধুলো ঝেরে ফেলছে,চুল ঠিক করছে।নন্দিতা চরম হতবাক হয়ে হা করে চেয়ে চেয়ে সেসব দেখছে।নন্দিতা রোড থেকে উঠে তীব্রর ওপর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো,রেগে গজগজ করে পেছন ফিরে যেতেই তীব্র দৌড়ে গিয়ে নন্দিতার হাত ধরে নন্দিতাকে নিজের বাহুদ্বয় দারা শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে নিলো।নন্দিতা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে আর তীব্রর বুকে কিল,ঘুষি মেরেই চলেছে।তীব্র তবুও হেসে হেসে তাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকলো।একটু পর তীব্র ছেড়ে দিলেও দেখলো নন্দিতা তাকে খামচে ধরে আছে।তীব্র চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না।

চেয়ারে বসে নন্দিতা এখনো নাক ছিঁচকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।কান্নার গতি এখন কিছুটা কম।তবে নাকের ছিঁচকানিটা বেশি।তীব্র তার রুমালটা এগিয়ে দিলে নন্দিতা খপ করে সেটা হাতে নিয়ে নাকে ধরে ‘ইয়ে’ করলো।রুমালটা আবার তীব্রর দিকে এগিয়ে দিলো।তীব্র নাক,মুখ কুচকে রুমালটা নখের আগাল দিয়ে ধরে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।

এক হাতে ফুসকা, আরেক হাত গালে রেখে অসহায় দৃষ্টিতে নন্দিতার সম্মুখের চেয়ারে বসে আছে তীব্র।আধাঘন্টা ধরে ফুসকার প্লেটটা হাতে ধরে থাকতে থাকতে হাত অবস হয়ে গেছে।এদিকে নন্দিতার থামার নাম গন্ধ নেই। সে কেঁদেই চলেছে।তীব্র কয়েকবার চোখের জল মুছে দিতে হাত বাড়াতেই নন্দিতা হাত সরিয়ে দিয়েছে।তাই তীব্র অসহায় দৃষ্টির মতো অসহায় স্বরে বললো

– আর কত কান্না করবা? এবার তো থামো?

– তুই চুপ থাক।জলহস্তি,ঘোড়া,ইঁদুর, বিড়াল (চোখের জল মুছতে মুছতে)

– তুই তোকারি করতেছো কেন

– তা কি করবো? আদর করবো?চুমু খাবো?

– এখানে চুমু খাবে? কেউ দেখে ফেললে লজ্জা…

-চুপ, একদম চুপপপ।

– আচ্ছা চুপ।

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থাকার পর নন্দিতা রাগি স্বরে বললো

– এসব করে আমায় কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাও তাই না

– তুমি কষ্ট পেয়েছো?

– হু

– কি করবো বলো,তুমি তে আনার কথাই শুনতে চাচ্ছিলে না।তুমি যে জেদি তাই এমনটা করতে হলো।তাছাড়া তো নিচে আসতেই না

– সে জন্য এরকম একটা ঘটনা তৈরী করবা?

– আচ্ছা সরি,আর এমন হবে না।

– আর যদি কোনোদিন এমন করেছো তো আমিই তোমায় মেরে ফেলবো, বলে দিলাম।মনে থাকে যেন

– হুম থাকবে থাকবে।

– রক্তগুলি পাইছো কিভাবে?

– হাহাহাহাহা

– হাসছো কেন?

– এগুলা রক্ত না তো

– আ্যা? রক্ত না তো কি?

– চা।রং চা।রক্তের বদলে চা কিন্তু মন্দ কিছু না।দোকানির কাছে এক কেতলি রং চা কিনে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলাম।যেনো তুমি রক্ত মনে করো।

– চা রাস্তায় ঢেলে সেখানে শুয়ে পড়লে?

– হু,

– বাহ্, আমি এই প্রথম কাউকে এরকম পাগলামি করতে দেখলাম

– তোমার জন্যই তো সব পাগলামি,

– হুম আমার জন্যই তো।অন্য কারোর জন্য করার ইচ্ছে আছে নাকি?

– থাকলে কি হবে?

– কি হবে সেটা ভাবতেও পারবে না।মেরে না ঘরে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রাখবো।

– এ্যা?

– হুম।তোমার সব পাগলামি শুধু আমাতেই যেন সীমাবদ্ধ থাকবে সারা জীবন।বুঝেছো?

– হুম বুঝলাম।এখন হা কি হা করবা? আমার হাত তো ব্যাথা হয়ে গেলো

– রাগ করছি,রাগ ভাঙ্গেনি, তাতেই খাবো? হুহ

– তো কি করলে রাগ ভাঙ্গবে?

– সামনে দারাও।

তীব্র বাধ্য ছেলের মতো নন্দিতার সামনে দারালো।

– এখন মনে করো মাউথপিস হলো তোমার হাত।হাত মুখের সামনে দাও

– কি বলছো, এসব করবো এখন?

– যা বলছি করো

– আচ্ছা।তারপর ( হাত মুখের সামনে এনে)

– একটা কবিতা বলো

– এখন কবিতা?

– হুম,এখনি,বলো

– এহেম,মাইক টেস্ট,ওয়ান,টু,থ্রি,মাইক টেস্ট

– ঢং বাদ দাও,কবিতা বলো (একটু চিল্লিয়ে)

– বলছি তো,মনে করতে দাও?

– হুম এক মিনিট সময় দিলাম

-এখন, এখানে কিভাবে একটা কবিতা বলবো।উফফ,কি যে করো তুমি।মনে পড়েছে

অতন্দ্রিলা,
ঘুমোওনি জানি
তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে
বলি, শোনো,
সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায়,সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি
কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন,
আলাদা নিশ্বাসে,এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁই
কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা
অতন্দ্রিলা,
হঠাৎ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না,
দেখি তুমি নেই।

– খুব সুন্দর।

– এখন খাও।হা করো।

তীব্র নন্দিতার মুখে ফুসকা তুলে দিলো।ঝালে নন্দিতা চোখ ছোট করে তীব্রর দিকে তাকায়।ঝাল ঝাল করে চেচাতে লাগে।ফুসকায় প্রচুর ঝাল দিয়েছে।দিয়েছে বললে ভুল হবে।তীব্রই বলেছে ঝাল দিতে।এই সুযোগে তীব্র নন্দিতার ঠোঁটে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো।নন্দিতা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তীব্রর দিকে।তীব্র স্বাভাবিক ভাবেই আরেকটা ফুসকা হাতে নিয়ে নন্দিতার মুখের কাছে ধরলো।নন্দিতার এমন চাহনিতে তীব্র হেসে ফেললো।হাসি দেখে নন্দিতার রাগ হলেও ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসলো।

তারা দু’জনই শব্দ করে হাসছে।বাহ্! ভালোবাসা কত সুন্দর। তীব্রর হাতে হাত রেখে নন্দিতা হেসেই চলেছে।তীব্র মুগ্ধ হয়ে নন্দিতার চোখে তাকিয়ে রইলো। কতো মায়াবী চোখ।নন্দিতা যেন আরো তরুণী হয়ে উঠছে।নাকি ভালোবাসার মানুষের বয়স চোখে পড়ে না? কিছু একটা হবে হয়তো।

আকাশে মেঘের দল ছোটাছুটি করছে।কাকের ডিম হয়ে আসছে আকাশের রং।আশেপাশে বইছে শীতল বাতাস।তীব্র আর নন্দিতা বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে।গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে।বাতাসের ঝাপটায় কিছু ফুল ঝরে পরছে রোডে।তীব্র হাতে ফুসকার প্লেটটা থেকে একটা একটা করে নন্দিতাকে খাইয়ে দিচ্চে।নন্দিতা চুপটি করে খাচ্ছে। বাতাসে নন্দিতার চুলগুলি সরে গেলে তীব্র এলোমেলো চুলগুলি কানের কাছে গুজে দিচ্ছে।তাদের সামনেই একটা নেড়ি কুকুর বসে বসে লেজ নারাচ্ছে।তাদের এই ভালোবাসা উপভোগ করছে হয়তো।

দু-এক ফোঁটা করে বৃষ্টির কণা পড়তে শুরু করলো।তীব্র আন্দোলিত হয়ে জোরালে স্বরে বললো

– বৃষ্টিতে ভিজবে?

– তুমি বৃষ্টিতে ভেজার কথা বলছো,? ( অবাক হয়ে চেয়ে থেকে বললো)
– হুম,কেন বলতে পারিনা?

– তুমিতো আমায় ভিজতেই দাও না।সেই তুমিই আজ বলছো বৃষ্টিতে ভিজতে

– হুম,চলো আজ বৃষ্টিতে ভিজবো দুজনে। এই বৃষ্টিটা আজ আমাদের

ঝুম বৃষ্টি থেকে এবার মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।সারা রাস্তা ফাঁকা।তারা দারিয়ে আছে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে ফুসকার দোকানের সামনে। তীব্র নন্দিতার হাত ধরে রাস্তার মাঝে নিয়ে গেলো।বৃষ্টির জল তাদের সারা শরীর স্পর্শ করছে।নন্দিতা দুই হাত তুলে আকাশের পানে চেয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে।তীব্র চেয়ে চেয়ে দেখছে তার ভালোবাসাকে।

বৃষ্টির পরিমান আরো বাড়লো।নন্দিতার শাড়ি বৃষ্টির জলে ভিজে সারা শরীরে লেপ্টে আছে।তীব্র এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো।পেছন দিক থেকে নন্দিতার পেটে হাতের স্পর্শ লাগায়।আরেক হাত পিঠ বেয়ে গলায় স্পর্শ করলো।নন্দিতা কেঁপে কেঁপে উঠছে। পেছন থেকে জরিয়ে ধরে তীব্র নন্দিতার ঘারের চুলগুলি সরিয়ে জোরালো একটা কিস করে।নন্দিতা প্রতিবার নড়েচড়ে উঠছে।ওকে পাশ ঘুরিয়ে মুখোমুখি করে নিলো তীব্র।নন্দিতাকে বিকের সাথে লেপ্টে নিলো।নন্দিতার গরম শ্বাস পড়ছে তীব্রর মুখের ওপর।চোখে বৃষ্টি পড়ায় টিপটপ চোখ বন্ধ করছে নন্দিতা।তীব্রর হাত নন্দিতার গালে রাখলো।নিজের ঠোঁট আস্তে আস্তে নন্দিতার ঠোঁটের কাছাকাছি আনলো।নন্দিতা লজ্জায় চোখ বন্ধ করলো।গোলাপি ঠোঁট গুলো পিট পিট করে কাপছে।তীব্র নন্দিতার আঁচল দিয়ে তাদের ঢেকে নিয়ে নন্দিতার ঠোঁটে গভীর একটা চুমু খায়।নন্দিতাও নিজেকে আর আড়াল করতে পারলো না।সেও তীব্রর ঠোঁটে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিচ্ছে।

চলবে?