চন্দ্ররাতের মায়া পর্ব-২+৩

0
243

#চন্দ্ররাতের_মায়া
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
পর্ব-২+৩
#চন্দ্ররাতের_মায়া [২]
– মিঃতীব্র,আপনার স্ত্রীর পেটে কোনো সন্তান নেই।কখনো ছিলোও না।

তীব্র অনেকটা চমকে উঠলো। এটা কিভাবে সম্ভব? নন্দিতা তো সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।ওরা সবাই এতোদিন এটাই জানতো যে নন্দিতার গর্ভে তীব্রর সন্তান বেড়ে উঠছে।ডাক্তারের কথায় তীব্র ক্ষিপ্র কন্ঠে বলে ওঠে-

– আপনারা এসব কি বলছেন ডাক্তার সাহেব? আমার স্ত্রী গর্ববতী।আর আপনারা কি না বলছেন তার পেটে কোনো সন্তান নেই।

– দেখুন মিঃতীব্র আমরা ডাক্তাররা কখনো শুধু কথায় বিশ্বাসী না।আমরা সবসময় রিপোর্টে বিশ্বাসী হই।

– রিপোর্টে কি লেখা?

– আপনি নিজেই দেখুন।তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন।

কথাটা বলে ডাক্তার সাহেব তার হাতের রিপোর্টটা তীব্রকে দেয়।তীব্র হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রিপোর্টের পানে।এই জীবনে এতোটা বিষ্ময় হয়তো সে হয়নি।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো।চোখের চশমাটা হাতে নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটের কাছে হাল্কা স্লাইড করে পরিষ্কার করে আবারো চোখে দিয়ে রিপোর্টের দিকে তাকালো। নাহ্,রিপোর্ট সে প্রথমে যেটা দেখেছিলো সেটাই আছে।রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা,প্রেগন্যান্সি কোয়ালিটি নেগেটিভ। তীব্র কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মনে মনে ভাবতে লাগলো,তাহলে এতোদিন ধরে নন্দিতার গর্ভে কি বেড়ে উঠছে?যদি ওর গর্ভে সন্তান নাই থাকে তাহলে ওর পে’টে’র আকৃতি এরুপ হওয়ার কারন কি?ওর গর্ভে কি আমার সন্তান বেড়ে উঠছে না? সেখানকার একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে তীব্র।মাথায় হাত রেখে নিজের চুল নিজেই টানতে লাগে।নন্দিতাকে এই খবর কিভাবে, সেটা ভেবে কুল পাচ্ছে না।তখনই হঠাৎ ফোনে রিং টা বেজে উঠলো।ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো-

– হ্যালো তীব্র?

– হ্যা বাবা বলো

– বউমার কি অবস্থা? আমাদের তো জানালেও না,আমরা কতোটা চিন্তায় আছি।

– নন্দিতা ভালো আছে বাবা।

– যাক কথা টা শুনে কি যে ভালো লাগছে

– কিন্তু বাবা

– কি? কিন্তু কি?

– বাবা একটা বিরাট সর্বনাশা কান্ড ঘটে গেছে

– কি হয়েছে?তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন তিব্র? বউমা ঠিক আছে তো? কি হলো চুপ করে আছো কেন?

– বাবা,এতোদিন আমরা যা ভেবেছিলাম তা সম্পুর্ন মিথ্যে ছিলো

– কিহ্? কোনটা মিথ্যে ছিলো?

– নন্দিতার গর্ভে কোনো সন্তান নেই বাবা।ডাক্তাররা আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখেছে ওর পেটে কোনো বাচ্চা নেই।আমরা এতোদিন ধরে যা ভেবেছিলাম তা ভুল ছিলো বাবা।নন্দিতার গর্ভে কোনো সন্তান নেই।

কথাটা শোনা মাত্র শেখর চৌধুরী থম মেরে কানে ফোন ঊরে দারিয়ে রইলো।তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছে না।স্বামীর সাথেই দারিয়ে কথা শুনছিলো তীব্রর মা রামেয়া বেগম।স্বামীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মিসেস রামেয়া চৌধুরী বললেন

– তীব্র কি হয়েছে রে?কি বললি তোর বাবাকে?উনি এভাবে ভয় পেয়ে গেলেন কেন?

– সেটা বাবার কাছেই শুনে নিও মা।এখন রাখি

– কি হ’য়েছে বল আমাকে?ওই মুখপুড়ি টার আবার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে তাই না?

– মা এসব প্লিজ বলো না।আমার মন মেজাজ ঠিক নেই এখন।এসব কথা প্লিজ বলো না।

– আমার কথা তো তোরা শুনিস না।সেই কবেই ওই অলক্ষুণে মেয়েটাকে বেড় করে দিতে চেয়েছিলাম।তখন তো তোরা আমার বিরুদ্ধে ছিলি।এখন দেখেছিস? একবার নয়,দুই বার নয়,তিন তিন বার।ওই শয়তান মেয়ে ইচ্ছে করেই এসব করছে।মিলিয়ে নিস

– মা চুপ করো।অনেক হয়েছে।আমায় আর ফোন দিবে না বলে রাখলাম

– হায় রে,শয়তাম মাইয়া আমার ছেলেটারে বিভাবে বিগড়ে দিয়েছে।যে মায়ের সাথে রেগে কথা বলে

রামেয়া চৌধুরীর কথা পুরোপুরি না শুনেই টুট টুট শব্দে ফোনটা কেটে দিয়ে মাথায় হাত রেখে বসে রইলো তীব্র।

রামেয়া চৌধুরী কাজের কথার থেকে অকাজের কথা বেশি বলেন। তার ধারনা তিন তিন বার বাচ্চা নষ্ট হওয়ার পেছনে নন্দিতাই দায়ী।সে চায়না যে তার সন্তান হোক।

এদিকে তীব্র রিপোর্টটা হাতে নিয়ে বসে আছে।নিজে নিজে ভাবতে থাকলো,নাহ্ এটা নিয়ে এভাবে বসে থাকা ঠিক হবে না।ভাইয়া,ভাবিকে জানা দরকার ঘটনাটা।
এক পা দু পা করে সে তার স্ত্রীকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেখানে গেলো।কেবিল নম্বর দুইশত চার।রুমের কাছে গিয়ে দেখলো নন্দিতা একাই শুয়ে আছে।ভাবীকে দেখা যাচ্ছে না।তীব্র নন্দিতার কাছে গেলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো

– নন্দিতা তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?

– না,হচ্ছে না (মলিন কন্ঠে বললো)

– ভাবী কোথায় নন্দিতা?

– জানিনা তো,আমি তখন থেকে এখানে একা-একা শুয়ে আছি।একটু ওয়াসরুমে যাবো,কাউকে পাচ্ছিলাম না।শেষে একজন নার্স পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তাকে ডাকলে উনি এসে ওয়াসরুমে নিয়ে গেলো।

– কি বলছো।ভাবী ছিলো না রুমে?কোথায় গেলো ভাবী?

– ওখানে নেই।থাকতে তো এতোক্ষন থাকার কথা না।

– নন্দিতা তোমাকে একটা কথা বলার আছে।আমি নিজেও বিষয়টা মানতে পারছি না এখনো।আদৌ এরকম ঘটনা কখনো ঘটেছে কিনা জানিনা আমি।

– কি হয়েছে তীব্র,আমার সন্দেহ কি ঠিক? আমাদের সন্তান কি তাহলে এবারেও পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে না?

বলেই নন্দিতার চোখের কোনে জল চলে এলো।হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। এই অবস্থায় যদি ওকে বলি যে তোমার গর্ভে কোনো সন্তান আদৌ ছিলো না,তাহলে সে এই ব্যাথা সইতে পারবে না।বরং ওকে পড়ে জানাই বিষয়টা।
অনেক মিথ্যে অজুহাত দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে অন্য কথায় ফাঁদে ফেলিয়ে তীব্র এই ভয়ংকর সত্যেটা নন্দিতাকে জানালো না।এই সত্যি তো আর অন্য সত্যির মতো নয়,এই সত্যি সকল ভয়ংকর সত্যির উর্ধে।

তখনি কোথা থেকে যেনো ভাবী তোরজোর করে ছুটে এসে আমায় বললো-

– তীব্র ডাক্তার সাহেব তোমায় ডাকছে।

– তুমি কোথায় ছিলে ভাবী?নন্দিতাকে এভাবে একা রেখে?

– ডাক্তার এই ঔষধ গুলি আনতে বলেছিলো।তুমি তো কোথায় যেনো ছিলে,তোমার ভাইয়াও নেই।তাই বাধ্য হয়ে আমিই নিয়ে আসলাম।

– ও আচ্ছা।তুমি তাহলে এখানে ওর সাথে থাকো।আমি শুনে আসি ডাক্তার কি বলে।

রুম থেকে বেড় হয়ে ডাক্তারের কেবিনে গেলাম।দরজায় কড়া নাড়লাম –

– ডাক্তার সাহেব আসতে পারি?

– হুম আসুন

তীব্র ভেতরে ঢুকে চেয়ারটায় বসলো।রুমে ফিনাইলের তীব্র গন্ধ নাকে আসছে।ডাক্তারের দিকে চোখ পড়তেই তীব্র লক্ষ করলো ডাক্তার আলোয় কি যেনো একটা ফেলে গভীর মনোযোগ দিয়ে ইকুয়েশন করছে।তীব্র হাল্কা কাশি দিয়ে নিজের উপস্থিতি বোঝাতে চাউলেও ডাক্তারের সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ই নেই।তিনি বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছছেন। তাকে অনেক চিন্তিত,এবং হতাশ লাগছে।তবে কি ডাক্তার নন্দিতার বিষয়ে কোনো জটিল বিষয়ে কথা বলবে?সেটাই এতো মনোযোগ দিয়ে ইকুয়েশন করছে?। তার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ডাক্তার বললেন-

– মিঃতীব্র,আপনি তো মিস নন্দিতার হাসবেন্ড তাই না?

– জ্বি

– আমরা তার পেটে একটা অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি লক্ষ্য করছি।

তীব্র একটু ভয় পেয়ে গেলো।বিষন্ন কন্ঠে বললো

– কিরকম অস্বাভাবিক ডাক্তার সাহেব ?

– গর্ভে শিশু থাকলে যেরকম একটি মাংসপিণ্ড বুঝা যায়,সেরকম একটি বস্তু আপনার স্ত্রীর পেটে রয়েছে।

তীব্র চেয়ার থেকে দারিয়ে চরম উত্তেজনায় ফেটে পড়ে ডাক্তারের দিকে অনেকটা ঝুকে বললো

– তাহলে কি ডাক্তার সাহেব নন্দিতার গর্ভে আমার সন্তান আছে?

– আমাদেরও তো সেরকমই মনে হচ্ছে। আমাদের জীবনে এটাই প্রথম ঘটনা।

তীব্র ডাক্তারের সাথে কথা বলছে এমন সময় হঠাৎ ভাবী এসে তীব্রকে বললো,

– তীব্র,মা বিষ খেয়েছে।

চলবে?

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৩]

– মা বিষ খেয়েছে মানে?কি বলছো তুমি ভাবী?

– হ্যা, সত্যিই মা বিষ খেয়েছে। বাবা এখনি ফোন করে বললো।

– মা এখন কোথায়?

– বাবা বললো এখানে নিয়ে আসছে।

– ভাবী আমি আর পারছি না।এইদিকে এই চিন্তা আবার ওদিকে মা এরকম একটা কাজ করে বসলো।আমি পাগল হয়ে যাবো ভাবী,আমি পাগল হয়ে যাবো

– তুমি চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি দেখি ওরা এখন কোথায়।তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলো

– চলো আমিও যাবো।

ডাক্তারের রুম থেকে বেড় হতেই ডাক্তার বললো,”মিঃতীব্র, আপনার স্ত্রীকে অপারেশন করাতে হবে খুব শীঘ্রই। সেটার বিষয়ে বলে যান”। তীব্র মাথা ঘুরিয়ে শুধু বললো ” যদি অপারেশন করা লাগে তাহলে করুন।আমার স্ত্রীর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।আর হ্যা,আমি আসার পর তবেই করবেন”।

বলেই রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো।বেড় হতেই তীব্রর বাবা শেখর চৌধুরীর সাথে মুখোমুখি দেখা।তীব্র মূহুর্তেই বললো

– বাবা, মা কোথায়?

– এতো অস্থির হওয়ার কিছু নেই তীব্র। তোমার মা’কে ওটিতে নিয়ে গেছে।তেমন বিষক্রিয়া ছড়াতে পারেনি।ওই মহিলা কি খেয়েছে শুনতে চাও?

– কি খেয়েছে?

– গত পরশুদিন আমি যে আরশোলা মারার বিষ এনেছিলাম সেটা খেয়েছে।একটু মুখে ঢেলে দিতেই আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই।তারপর এখানে নিয়ে আসলাম।গাধা মহিলা

ভাবি- কিন্তু মা বিষ কেন খেতে গেলো?

বাবা-কেন আবার।আমার বিপক্ষে চলতে হবে না? আমি ভাবলাম পরিবারে অশুভ ছায়া নেমে এসছে।একটা পূর্ণ্যর কাজ করা দরকার।অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রাইমারি স্কুলের পাশে যে পুকুরটা আছে,ওটা ভরাট করে ওখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম তুলে দিবো।

ভাবি- এজন্যই বিষ খেলো?

বাবা- হ্যা।গাধা মহিলা বলে কিনা কোনো বৃদ্ধাশ্রম হবে না।এভাবে দু,এক কথা হতে হতে সে বিষ খেয়ে নিলো।এসব বাদ দাও।বৌ’মার কি খবর তীব্র?

– বাবা ডাক্তার বলেছে ওর অপারেশন করাতে হবে যত তারাতাড়ি সম্ভব। সেই বিষয়েই কথা বলছিলাম তখন ভাবী এসে বললো মা বিষ খেয়েছে।

– এখন যাও ডাক্তারের সাথে কথা বলো তুমি।আমি এদিকে আছি।

তীব্র কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়ে পুনরায় ডাক্তারের ঘরে গেলো।দরজায় কড়া নাড়তেই ডাক্তার সাহেব একটা বইয়ে চোখ রেখেই বললো ” ইয়েস কাম ”

– ডাক্তার সাহেব,অপারেশনটা কি এখনি করাবেন?

– হুম,যত সময় যাবে ব্যাপারটা তত জটিল হবে।বাই দ্যা ওয়ে।আপনার স্ত্রীর রিপোর্টটা এসে গেছে।ওনার পেটে টিউমার হয়েছে।তাও একটা না,দু দুইটা।রীতিমতো সেগুলা অনেক বৃহদাকার ধারন করেছে।এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

তীব্র ডাক্তারের কথা শুনে তীব্র চমকে উঠলো। নন্দিতার পেটের টিউমারকে এতোদিন নিজের সন্তান ভেবে রেখেছিলো সে।অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গাল বেয়ে মাটিতে পড়লো।হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে করুন স্বরে বললো-

– নন্দিতার পেটে দু,দুটো টিউমার?

– হুম

– হায় রে ভাগ্যর পরিহাস।আমরা ভেবে বসলাম

– আমার একটা কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মিঃতীব্র।এতে বড় ভুল আপনারা করলেন কিভাবে? সন্তান গর্ভে ধারনের ব্যাপারটা আর টিউমার ধারনের ব্যাপারটা তো একই না।এই পার্থক্যটুকু কি মিস নন্দিতা বুঝতে পারেনি?

– আমি জানিনা ডাক্তার সাহেব।

– সেসব বাদ দিন।হিউম্যান নিউরন অনেক পাওয়ারফুল একটা জিনিস বুঝলেন। আপনি যদি দৃঢ় ভাবে ভেবে বসে থাকেন যে আপনার ডান হাত অবশ হয়ে আছে।তাহলে দেখবেন আপনি সত্যিই হাত নাড়াতে পারছেন না।আমার মতে মিস নন্দিতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।মানষিক ভাবে তিনি দূর্বলচিত্তের।চা খাবেন?

– না, চা খাবো না।আপনারা তাহলে অপারেশনের ব্যাবস্থ করুন।

– হুম

– ডাক্তার, আমার স্ত্রীর কি কোনো সমস্যা হবে? আই মিন সে সুস্থ হবে তো?

– হ্যা,আমরা আশাবাদী। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে।

– আমি তাহলে আসি।

-হ্যা আসুন।আর কাউন্টারে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা করুন।আমরা ব্যাবস্থা করছি

– জ্বি আচ্ছা

বলেই রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো তীব্র।নন্দিতার কাছে যেতেই দেখলো সেখানে বাবা,ভাইয়া,ভাবী সবাই। ওদের দেখে নিজের মনে কিছুটা সস্তির আভাস ফুটে উঠলো।মৃদু স্বরে সবার উদ্দেশ্য বললো-

– বাবা,ভাইয়া,ভাবী তোমরা একটু বাইরে যাবে প্লিজ?আমার কিছু কথা ছিলো

ভাবী- হ্যা বলো বলো।আমরা বাইরেই আছি।

সবাই বাইরে গেলে তীব্র নন্দিতার কাছে বসলো।পর কপালে হাত বুলিয়ে দিলো।কপালে একটা ভালোবাসার ছোঁয়া একে দিয়ে কাছাকাছি বসলো।নন্দিতা তীব্রর গালে আলতো ভাবে হাত রেখে করুন স্বরে বললো

– তুমি খেয়েছো? সকাল থেকে কিছুই খাওনি তাই না? এভাবে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বা।

– আমি সুস্থই আছি নন্দিতা।শুধু তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো প্লিজ

বলেই নন্দিতাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে তীব্র। তার ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে গেছে।নন্দিতা ওর চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো

– এই পাগল,কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?

– তোমাকে অনেক ভালোবাসি গো,তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবো না।মরে যাবো আমি।

তীব্রর এরুপ আচরনে নন্দিতার চোখে জল চলে এলো।সে মৃদু স্বরে তীব্রর কানে কানে বললো

– একবার যখন হাত ধরেছি,তখন মরনের আগ পর্যন্ত ছাড়বো না।তুমি শুধু এভাবেই আমায় ভালোবেসো।

এখন বাজে দুপুর বারোটা।নন্দিতাকে অপারেশন করানোর জন্য ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তীব্র এক মূহুর্ত স্থির নেই।এখানে,ওখানে পায়চারি করছে আর বিড়বিড় করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে।শেখর চৌধুরী বসে আছে চিন্তিত গম্ভীর মুখ নিয়ে।তিনি গালে হাত রেখেই তীব্রকে বললো

– তোমার ভাই,ভাবী কোথায় তীব্র? দেখতে পাচ্ছি না যে

– বাবা ওরা বাসায় গেছে।মাঝরাত থেকে ভাবীর ঘুম হয়নি। মাথা ধরেছে।তাই ভাইয়াকে বলে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

– ও আচ্ছা। তুমি খেয়েছো?

– হুম

– মিথ্যে বলো কেন,যাও কিছু খেয়ে এসো নিচ থেকে।আমি আছি এখানে,কিছু প্রয়োজন হলে তোমায় ডেকে নিবো

-আমি থাকি না বাবা। খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।নন্দিতার ভালোয় ভালোয় অপারেশনটা হলেই হয়

ছেলের এই ভালোবাসায় শেখর চৌধুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন।মনে মনে ভাবলেন,ছেলেটা দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে।

__________

ডাক্তার সিহাব অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন শুরু করে দিয়েছে।তার একটা আলাদা ফোন থাকে সাথে সবসময়। খুবই প্রয়োজন না হলে সেই ফোনে ফোন দেয় না কেউ।এই নাম্বারটাও সবার কাছে নেই।তার খুব কাছের পরিচিত এবং হসপিটালের কিছু স্টাফের কাছে নাম্বারটা দেওয়া আছে।বারবার করে বারন করা আছে,সেই নাম্বারে ফোন দেওয়ার কারনটা হবে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ।কেননা সেই নাম্বারে ফোন দিলে ডাঃ সিহাবকে ধরতেই হবে। সেই মিনি ফোনটা পকেটে বাজতে থাকলো।

ডাঃসিহাব সাইডে এসে রিসিভ করতেই একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো-

– কেমন আছেন ডাঃসিহাব?

– কুশল বিনিময় না করে কাজের কথা বলুন

– আপনি এখন আমার হাতের পুতুল ডাঃ সিহাব।

– রসিকতা করছেন?ফোন রাখুন।আমি এখন থিয়েটারে আছি।রসিকতার জন্য পরে দেখে নিবো আপনাকে।রাবিশ ওম্যান

বলে ফোনটা কেটে দিয়ে পকেটে রাখতেই টুং করে একটা মেসেজের আওয়াজ আসলো।ওপেন করতেই দেখলো একটা ভিডিও। ভিডিওটা ওপেন করতেই ডাঃ সিহাব চমকে উঠলেন।সারা শরীর ঘামতে শুরু করে।যে নাম্বারে ফোন এসেছিলো সেই নাম্বারে ডাঃসিহাব ফোন করলো।ওপাশ থেকে ধরতেই অট্টহাসির আওয়াজ ভেসে এলো

– কি মিঃসিহাব।ভয় পেয়ে গেলেন?

– কি চান আপনি?

– তেমন কিছুই না।এখন যে অপারেশনটা করছেন সেখানে হাল্কা একটা কাজ করতে হবে

– কি কাজ

– আর কোনোদিন ও যেন নন্দিতা মা হতে না পারে,সেই ব্যাবস্থা করবেন আপনি

– কিহ? কি বলছেন এসব?একজন ডাক্তার হয়ে এসব আমি কখনোই করবো না।

– না করলে আমি কি করতে পারি,দেখাবো সেটা?

– নাহ্ প্লিজ,আমার মেয়েকে কিছু করবেন না।আমি করবো,যা বলবেন তাই করবে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন প্লিজ।

চলবে?