চোখের দেখাই সব নয় পর্ব-০৬

0
192

#চোখের_দেখাই_সব_নয়
#ষষ্ঠ_পর্ব

মাসুদ আমার প্রশ্নের সঠিকভাবে জবাব দিতে পারলো না। সে বললো, আমি শুধু জানি, তিনি আমাদের বড় বোন ছিলেন। বিশ্বাস কর ভাবী! আমিও তার সমন্ধে খুব বেশি কিছু জানি না!

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মাসুদ! এই বলছো তিনি ছিলেন তোমাদের বড় বোন। এখন আবার বলছো তুমি তাঁর সমন্ধে খুব বেশি কিছু জানো না! আমার ভাই বোন সম্পর্কে আমি কিছু জানবো না। মাসুদ এটা কেমন ধরনের কথা? আমি বিয়ে হবার পর থেকেই জেনে আসছি তোমরা মোট চার ভাই বোন। এখন হঠাৎ করেই তোমরা দুই ভাই একজনকে আমার কাছে বোন বলে পরিচয় দিচ্ছো! কেমন করে?

তুমিই বল সেটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা? এটা একটা মিথ্যা কথা! এখন আমার কি মনে হচ্ছে জানো! মারুফ আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই এই নাটক করছে! আর তুমি স্বাভাবিক ভাবেই তোমার ভাইকে সাহায্য করছো?

আর এই একটা মিথ্যা কথা তোমাদের দু’ভাইকে আমার চোখে আরও অনেক ছোট বানিয়ে দিয়েছে। জবাবে মাসুদ বললো, ভাবী তুমি বিশ্বাস কর আর নাই বা কর। আমি এতোদিন শুধু তার নাম জানতাম। আমিও কিন্তু কখনো তাঁকে চোখে দেখিনি।

ভাবী! তুমি যেমন জানো। আমিও তেমন জানতাম আমরা চার ভাই বোন। কিন্তু মায়ের মুখে আমার বড় বোনের কথা সেই সেদিন প্রথম শুনি!

তিনি শুধু বলেছেন আমাদের বড় বোন এখন আর নেই। তবুও একটি ছবি দেখার পর তিনি বলেছিলেন কথাটা! নয়তো আমিও সে কথা জানতে পারতাম না! আমার অনেক কৌতুহল থাকার পরেও মা কেন জানি এর বেশি কিছু আমাকে বলতে চাইলেন না। আমিও মা’কে আর বেশি জো*রাজো*রি করিনি।

মুনা এমন সময় আমার ঘরে এলো। মাসুদের দেয়া চিঠিটা ওকে দেখালাম। মুনা চিঠিটা পড়ে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললো, এই চিঠির কথা তুই বিশ্বাস করেছিস সায়মা! আমি জিজ্ঞেস করলাম তোর কি মনে হয় মুনা? মুনা একটুখানি হেসে বলে, পুরোটাই ভু*য়া! তুই বিশ্বাস করেছিস নাকি সেই কথা বল?

আমি জবাব দিলাম, না! একদম বিশ্বাস করিনি। কারণ মাসুদের কথা শুনে আমার আরও অবিশ্বাস হচ্ছে। যারা নিজের বোনের ব্যাপারে সঠিক ভাবে জানে না। তাদের কথা কি বিশ্বাস করা যায় বল? আমার কথা শুনে মুনা বললো, এটাই সত্যি কথা! ওরা দু’ভাই মিলে একটা গেম খেলছে তোর সাথে। মারুফের যদি একটা বোন থাকতো তবে তুই কি কারও কাছে সেই কথা জানতে পারতি না?

অবশ্যই সেটা তোর অজানা থাকতো না। তোকে ফিরিয়ে নিতেই মারুফ এমন নাটক করছে। এখন চল উকিল সাহেবর সাথে দেখা করার সময় হয়ে গেছে। উনি আবার খুব ব্যাস্ত মানুষ। সময় মতো সব কাজ করতে পছন্দ করেন।

আমার মা হয়তো দরজার আড়ালে লুকিয়ে আমাদের সব কথা শুনছিলেন। তিনি হঠাৎ আমাদের মাঝে এসে বললেন, মারুফ যদি তার ভুল বোঝে সায়মাকে ফিরিয়ে নিতে চায়, তবে এতে দোষের কি আছে? মুনা আমার হয়ে মা’কে জবাব দিলো, খালাম্মা আগের দিন বদলেছে! আপনারা অনেক কিছু মুখ বুঁজে সহ্য করে গেছেন। কিন্তু আমরা এ-যুগের মেয়ে! স্বামীর করা প্রতিটি অন্যায়ের উপযুক্ত জবাব দিতে জানি! এবং সেটা বাস্তবায়ন করতেও পারি!

মা রেগে গিয়ে মুনা কে জিজ্ঞেস করলেন, তাই বলে ডিভোর্স নিতে হবে না-কি? আমি জবাব দিলাম, এমন প্র*তারণা করলে এছাড়া আর কি উপায় মা? সারাজীবন অবিশ্বাস নিয়ে সংসার করতে পারবো না আমি! এরচেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া অনেক সহজ! মা একথা শুনে রেগে গিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন। জেনে রাখিস এর জন্য একদিন তোকে পস্তাতে হবে! তখন তোর এই বান্ধবীর প্রতিও তোর বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হবে। আর মুনার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে আর কি বলবো! যেখানে নিজের মেয়েই কথা শুনছে না।

তবুও একটা কথা শুনে রাখো মেয়ে! বন্ধুকে সুপরামর্শ দিতে হয়। না পারলে চুপ করে থাকতে হয়। কিন্তু ভুল পথে ঠেলে দেওয়ার নাম বন্ধুত্ব নয়! যা তুমি আমার মেয়ের সাথে করছো। খুবই খারাপ কথা!

মা চলে গেলে মুনার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মনটা খারাপ হয়ে গেছে। আমি তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, ভুলে যা!

চিঠিটা মাসুদের হাতে দিয়ে, আমি হেসে বললাম। মাসুদ তুমি শুধু শুধু কষ্ট করতে এখানে এসেছো। আর কখনো আমি তোমার ভাইয়ের কাছে ফিরে যাবো না। তাই তুমিও কখনো এমন অন্যায় আবদার নিয়ে আমার সামনে এসো না!

তুমি এখন যেতে পারো! মাসুদ চলে গেল। এরপর আর মাসখানেক আমার শ্বশুর বাড়ির কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতে আসেনি। এরমধ্যে অবশ্য একদিন উকিল সাহেবের অফিসে মারুফ এসেছিলো। আমি ওর সাথে কোন কথা বলিনি। শুধুমাত্র একবার চোখে চোখ পড়েছিল। মারুফ চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো! আমিও আর তাঁর সাথে যেচে পড়ে কথা বলতে যাইনি।

কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের কেসটা কোর্টে উঠবে। আমার বাবা-মা দুজনেই এখন আর আমার সাথে খুব একটা কথা বার্তা বলেন না। তাঁরা হয়তো বোঝে গেছে তাদের কথা আমি রাখতে পারবোনা। আমি একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, আমার বাবা-মা এতোকিছুর পরেও কেমন করে মারুফের কাছে আমাকে ফেরত পাঠাতে চায়?

সবাই ভুলে গেলেও তো মারুফের এই প্র*তারণা আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না।

এরপর ঠিক দুদিন পরে মাসুদের ফোন এলো। একবার, দুবার, তিন বার রিং হওয়ার পরে রিসিভ করে চুপ করে রইলাম। মাসুদ নয় আমার শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছো বৌমা?

শ্বাশুড়ির কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম তিনি শেষ চেষ্টা করতে চাইছেন। জবাব দিলাম জ্বি, ভালো আছি! শ্বাশুড়ি হালকা অভিমানী কন্ঠে বললেন, মা ডাকটা ভুলে গেলে বৌমা! আমি এই কথার কি জবাব দেবো? তাই চুপ করে রইলাম।

তিনি বললেন, মারুফ আর তোমার মধ্যে এতোকিছু ঘটে গেল অথচ কেউ আমাকে কিছু জানালে না? মাসুদ যদি না বলতো তবে আমি হয়তো কিছু জানতেই পারতাম না!

জিজ্ঞেস করলাম আপনার ছেলে আপনাকে কিছু জানায়নি? না বৌমা! মারুফ চিরকালই এমন স্বভাবের। নিজের ভিতর সবকিছু চেপে রাখে! তুমি ওর সাথে পাঁচ বছর সংসার করেও এখনো তাঁকে চিনতে পারোনি বৌমা? ক্ষোভের সাথে জবাব দিলাম, মানুষকে এতো সহজেই কি চেনা যায়!

আমার শ্বাশুড়ি হয়তো এই কথায় অনেক কিছুই বুঝতে পারলেন। তাই জিজ্ঞেস করলেন,, তুমি সত্যিই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়োছো? জ্বি হ্যা!

আমার কথা শুনে তিনি বললেন, ঠিক আছে বৌমা! আমি তোমাকে এ ব্যাপারে কোনো জো*র করবো না। তোমার জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত তুমিই একমাত্র নেওয়ার অধিকার রাখো! এতে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু আমার শেষ ইচ্ছে তোমাকে একটু দেখতে চাই বৌমা! বুড়ো মানুষ কখন আছি কখন নেই! আশা করি তুমি আমার শেষ কথাটা রাখবে? অনেক পছন্দ করে এই বাড়ির বৌ করে তোমাকে আমি এনেছিলাম। তাই শেষ বারের মতো তোমাকে দেখার জন্য আমার মনটা উতলা হয়ে আছে। বল আমার কথা তুমি রাখবে? জ্বি আমি চেষ্টা করবো। আচ্ছা বৌমা আজ রাখছি।

ফোন রেখে পিছনে ফিরে চমকে উঠে দেখি আমার মা দাঁড়িয়ে আছেন! কিছুটা রাগের সাথে বললাম, এভাবে লুকিয়ে কারও কথা শোনা ঠিক না, মা!

মা আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক তোর কাছে শিখতে চাই না, আমি! তুই তোর শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস। এটাই কিন্তু আমার শেষ কথা। আমিও তোর সাথে যাবো!

পরেরদিনই সকালে মা আমাকে প্রায় জোর করে আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে গেলেন। সেখানে মারুফ ছাড়া ওদের পরিবারের সবাই উপস্থিত দেখতে পেলাম। মনে মনে হাসলাম। এরা দেখি সবাই মিলে আমাকে আঁটকে রাখতে চাইছে!

আমার শ্বাশুড়ি আম্মা আমাদের দেখে অনেক খুশি হলেন। অনেক যত্ন করে নিজের হাতে খাবার পানি নিয়ে এসে, খাবার জন্য পিড়াপিড়ি করতে ছাড়লেন না। অবশ্য তাদের কেউ এখন পর্যন্ত ঐ ব্যাপারে কোন কথা তুললো না! আমিও অপেক্ষা করছি কখন সেই কথা উঠে।

নাম মাত্র কিছু মুখে দিয়ে আমি বললাম, তাহলে এখন যেতে চাই! আমার শ্বাশুড়ি আমার মুখে হাত বুলিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললেন, তাতো যাবেই বৌমা! আমি তো আগেই বলেছি, তোমার মতের বিরুদ্ধে আমি কিছুই বলবো না। আমিও যদি তোমার জায়গায় থাকতাম তবে হয়তো এমন সিদ্ধান্তই নিতাম!

শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমার মায়ের চোখ দুটি যেনো বড়সড় হয়ে গেল। আমার শ্বাশুড়ি আমার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার মেয়েটি এবাড়িতে এসেই আমার মন জয় করে নিয়ে ছিলো। তাই ওদের সিদ্ধান্তে আমিও কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু তাতে কি? জীবনটা তো ওদের। আমরা বড়জোর ওদের জন্য শুভকামনা করতে পারি।

তারপর তিনি আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, একটা কথা কি তোমার মনে আছে বৌমা? আমি মনে করতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, কি কথা? শ্বাশুড়ি একটুখানি হেসে জবাব দিলেন, এতোদিন আগের কথা তোমার মনে না থাকারই কথা!

বিয়ের কয়েক দিন পরে আমি একটা ছবির এ্যালবাম দেখিয়ে আমাদের পরিবারের সকলের পরিচয় বলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তুমি একটা ছবির নিচ থেকে আরেকটা ছবি বের করে সেটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে এই মেয়েটা কে?

আমি সেদিন কোন এক অজানা ভ*য়ে কুঁকড়ে গিয়ে তোমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপ করে ছিলাম। তুমি হয়তো সে কথা ভুলে গেছো! কিন্তু আমি তো মা! তাই আমি ভুলতে পারেনি।

আজ সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে নিজের মনকে শান্তি দিতে চাই বৌমা! আমি আমার শ্বাশুড়ির কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে সেই ঘটনাটা একটুখানি মনে হচ্ছে আমার।

আমার শ্বাশুড়ি একটা ছবির এ্যালবাম নিয়ে এসে সেই পুরোনো ছবিটা আমার চোখের সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, মনে পড়েছে বৌমা! এই ছবির কথা? বললাম জ্বি এখন মনে পড়েছে।

ভালো করে দেখতো বৌমা! এই ছবির সাথে তোমার দেখা সেই নারীর কোন মিল আছে কি না? আমি কৌতুহল ভরা দৃষ্টিতে ভালো করে তাকিয়ে দেখে চমকে উঠলাম! এতো সেই নারী! তফাৎ শুধু স্বাস্থ্য ও বয়সের।

আমার গলা শুকিয়ে আসছে ব্যাপারটা অনুমান করে। কোনরকমে বললাম, জ্বি অনেক মিল! কিন্তু উনি কে? আমার বড় মেয়ে শ্রাবন্তী! এই কথা বলে আমার শ্বাশুড়ি হৃদয় উজাড় করে কেঁদে চললেন। আহাজারি করে বললেন, আমার বড় মেয়ে! মাগো! আমার বড় আদরের বড় মেয়ে!

উনার কান্না দেখে আমিও ঠিক থাকতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম সেদিন কেন বলেন নি? মা! তিনি তাহলে এতোদিন কোথায় ছিলেন? শ্বাশুড়ি চোখের জল মুছে বললেন, সেই কথা বলতেই আজ তোমাকে এখানে ডেকেছি বৌমা!

এমন সময় মারুফ ঝড়ের বেগে কোথা থেকে এসে বলে, একদম বলবে না, মা! আমি চাই না,মা! আমার বুবুর কথা ওর মতো মানুষের কাছে তুমি বল।

শ্বাশুড়ি একটুখানি মারুফের দিকে তাকিয়ে বলে চললেন। মায়ের চোখ দুটিতে মারুফ কি দেখতে পেলো জানি না! এরপর টু শব্দটি না করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। শ্বাশুড়ি বলে চললেন।

তোমার শ্বশুরের ছিলো বদলির চাকরি। আজ এই শহর তো কাল ঐ শহরে। আমার বিয়ের পরে কয়েক বার মাত্র এখানে এসেছিলাম। শ্বশুর শ্বাশুড়ি মারা গেলে আর আসা হয়নি। শ্রাবন্তী কখনো ওর দাদার বাড়ি আসেনি। তোমার শ্বশুর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে এখানকার টান একেবারে ছিলোনা বললেই চলে।

তিনি বছরে একবার এসে জমিজমা ভাগিদারের কাছে দিয়ে টাকা নিয়ে যেতেন। তাই আমাদের আসা একরকম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

শ্রাবন্তী হবার পর আর আসা হয়নি! এমন ভাবে আমার ছেলেমেয়েরা বড় হতে থাকে। আজ এই শহরে তো কাল ঐ শহরে। তোমার শ্বশুরের যখন ঢাকায় বদলি হলো। তখন শ্রাবন্তী কলেজে পড়ে। সেই সময় এলাকার এক বখাটের সাথে ওর সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা যখন জানতে পারি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে!

শ্রাবন্তী জানতো ওর বাবা এই সম্পর্ক কোনদিন মেনে নিবে না। তাই ওরা পালিয়ে গেল! তোমার শ্বশুর ওদের অনেক খুঁজেও কোন হদিস পায়নি। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে দিনেদিনে তোমার শ্বশুরের মন ভেঙে যেতে লাগলো। তিনি আর ঢাকায় থাকতে চাইলেন না। আদরের বড় মেয়েকে হারিয়ে তিনি কেমন যেনো হয়ে গিয়েছিলেন।

যেনো বেঁচে থেকেও তিনি মরার মতো হয়ে গেছেন! কথায় কথায় শুধু বলতেন, এই ঢাকা শহর আমার আদরের মেয়েকে কেঁড়ে নিয়েছে। আমি আর এখানে থাকবো না। শ্রাবন্তীর স্মৃতি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে! আমি কেমন বাবা? নিজের মেয়েকে আগলে রাখতে পারলাম না। যে শহর আমার মেয়েকে কেঁড়ে নিয়েছে আমি কেমন করে থাকি এই শহরে! তুমিই বল শ্রাবন্তীর মা?

আমিও ভেবে দেখলাম মানুষটা অনেক ভেঙে পড়েছে। তাই একদিন বললাম চলেন আমরা গ্রামের বাড়িতে চলে যাই! সেখানে হয়তো শ্রাবন্তীর স্মৃতি আমাদের তাড়া করবে না। আমার কথা শুনে তোমার শ্বশুর খুশি হয়ে গেলেন বৌমা!

এরপর একদিন তোমার শ্বশুর চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসে আমাকে বললো, কয়েকদিনের মধ্যে আমরা গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো। আমিও সেই মতো জিনিস পত্র গোছগাছ শুরু করে দিলাম।

যেদিন চলে আসবো তার দুদিন আগে অনেক রাতে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল আমার! রিসিভ করতেই শ্রাবন্তীর কান্না জড়িত কন্ঠে মা ডাক শুনতে পেলাম।

চলবে,,,

লেখক মোঃ কামরুল হাসান