জান্নাতের খুশবু পর্ব-০১

0
1555

#জান্নাতের_খুশবু
#পর্ব_০১
#Mst_Liza

ফজরের নামাজ শেষে কোরআন তেলওয়াত করছে খুশবু।খুশবুর কন্ঠে কোরআনের স্বাদ এতো মধুর যে ওর মুখ থেকে বের হওয়া এক একটা হরফ যেন দৃস্টি মধুর ভঙ্গিতে তাকিয়ে শ্রবণ করছে ওর মা।

ঘড়িতে বাজে, সকাল ৮টা,,

খুশবু এখনো কোরআন তেলওয়াত করে চলেছে।

কি হলো দাদু ভাই ভার্সিটির প্রথম দিন, যাবে না নাকি? পাশের রুম থেকে বলছে খুশবুকে তার দাদু।

খুশবু কোরআন এর পাতা বুজিয়ে, কোরআনের মলাটে অসংখ্য চুমু দিয়ে, বুকের সাথে পবিত্র আল-কোরআন’টা চেপে ধরে একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।তারপর গলাটা উঁচু করে দাদুকে বলে, হ্যাঁ দাদু আসছি! রেডি হয়ে নিকাবটা বাঁধলে হয়ে যায়।

একটু তারাতারি করো দাদু ভাই। আমার তো অফিসে যেতে হবে।হাতের ঘড়িটা দেখে বলে খুশবুর দাদু।

হ্যাঁ হ্যাঁ! তোমার তো শুধু দেরিই হয়ে যায়। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ।একটা দিন অন্তত দাদু ভাইয়ের কথা ভাবো।তা না!
কথাটা পাশ থেকে খুশবুর দাদি তীক্ষ্ণ মেজাজে বলে ওঠে ওর দাদুকে।

এই তুমি চুপ থাকো তো।ভালো কথাতো বলতে পারো না।সারাদিন শুধু গলা উঁচিয়ে জ্ঞান দাও।একটু শেখ দাদু ভাইয়ের থেকে স্বামীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।

কি বললে তুমি? দাদু ভাই বিয়ে করেছে যে স্বামীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানবে?

খুশবু ফটাফট রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখে দাদা দাদি ঝগড়া করছে।

খুশবু কোমড়ে হাত রেখে বলে ওঠে, উফফ দাদু,, এতো ঝগড়া কেন করও তোমরা বলো তো?

আমি আর কোথাই কি করলাম? তোমার দাদিই তো শুরু করলো।

কি??? খুশবুর দাদি রাগি দৃস্টিতে তাকায়।সে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই খুশবু টানতে টানতে ওর দাদুকে নিয়ে যায়। বাইরে এসে একটা রিক্সা ডেকে বলে, চলোতো দাদু।উঠে পরো রিক্সায়।

কিছুক্ষণ পর,,
রিক্সার বুট ফেলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে, যানো দাদু রিকশায় ওঠার মজাটাই আলাদা, প্রকৃতির ঠান্ডা স্নিগ্ধ বাতাস আর একটা শান্তির তিপ্ত প্রচ্ছাস যা তুমি ওসব দামি গাড়িতে খুঁজে পাবে না!

ঠিক বলেছ দাদুভাই তুমি না হলে আমি এসব যানতেই পারতাম না।তোমার দাদি তো কখনও এসব বুঝতে চাই না।তার কাছে সব বুড়ো বয়সের হেংলামোপনা।তুমি আছো বলেই না এতোকিছু উপলব্ধি করি!

হি হি।দাদি আর তুমি এতো ঝগড়া কেন কর বল তো?

ওটা ঝগড়া না দাদুভাই ওটা তো আমাদের টোনাটুনির ভালোবাসা।

সে তুমি যাই বল দাদির থেকে কিন্তু আমিই বেশী স্মার্ট।

রিক্সা এসে ভার্সিটির সামনে দাড়ালো।
তো দাদুভাই তোমাকে কখন নিতে আসবো আমি?

সে আমি তোমাকে ক্লাস শেষে ফোন করে যানিয়ে দেব।রিক্সা থেকে নেমে ভার্সিটির ভেতরে যেতে যেতে বলে গেল দাদুকে।

খুশবু ভার্সিটির ভেতরে ঢুকেই দু’এক জনের কাছে ক্লাস কোথায় জিজ্ঞেসা করে যেই ক্লাসে ঢুকতে যাবে দূর থেকে খেয়াল করল সিনিয়ররা জুনিয়রদের সাথে রেগিং করছে।

রিয়া হচ্ছে রেগিং মাস্টার।সাথে তার চেলাপালারাও আছে।শাওন, রোজ, টোমি, মিনি, টিনা। এরা একটি ছেলেকে ধরে হাতে ফুল ধরিয়ে দিয়ে বলেছে রিয়াকে প্রপোজ করতে।আর রিয়া ক্লাসরুমের সামনে একটি বেঞ্চের উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে পায়ের পাতা নাচাচ্ছে ।

দূর থেকে দেখে বুঝতে পারছে খুশবু।মেয়েগুলোর মধ্যে কোনও পোশাক আশাকের ধরণ নাই।পড়নে সর্ট কার্ট স্কার্ট আর ছোট ছোট টপস।রিয়ার চোখে একটা ব্লাক এন্ড হোয়াইট সানগ্লাস আর মাথায় লেয়ারকাট চুলগুলো উচুঁ করে ঝুটি বেধেঁ রাখা।ঝুটির নিচের আধ্যেকটা আবার লালচে কালার করা।কথা বলছে যেভাবে বডি হেলিয়ে দুলিয়ে মনে হচ্ছে যেন মাথার ঝুটিটা ঘাড়ের এপাশ থেকে ওপাশে গিয়ে পরছে। বেচারা ছেলেটার নাজেহাল অবস্থা সে আর পালাবে কোথায় ৫জনে যে ঘিরে রেখেছে।

কি হলো যা প্রপোজ কর! দেখছিস না রিয়া সেই কখন থেকে বসে আছে।মিনি বলল ছেলেটাকে।

আমায় আপনারা ছেড়ে দেন ভাইয়া, আপুরা।আপনারা তো আমার বড়।আমি সিনিয়র আপুকে কিভাবে প্রপোজ করব? প্লিজ যেতে দেন আপনারা আমায় ছেলেটা হাটু গেরে বসে দুই হাত জোড় করে অনুরোধ করছে ওদেরকে।

দেখ কি বলে! বড় আপু বলে নাকি প্রপোজ করা যাবে না! তারাতারি প্রপোজ কর বলছি! তোর পর আমাদের আরও অনেককে স্বাগত জানাতে হবে।রোজ ছেলেটির শার্টের কলার চেপে ধরে বলল কথাটা।

খুশবু আর একটু এগিয়ে খেয়াল করল ক্লাসরুমের সামনে আরও অনেক স্টুডেন্ট লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে।খুশবু বুঝতে পেরেছে এরা সবাই হয়তো নবাগত স্টুডেন্ট।সবাইকে হেনস্ত করার জন্যই ওরা লাইনে দাড় করিয়েছে। এক একজনের থেকে মজা নিয়েই তাই ছাড়ছে।

খুশবু এবার ওদের সামনে গিয়েই দাড়ালো।একি এসব কি করছেন আপনারা? ক্লাস টাইম কি শুরু হয় নি?

ওরা সবাই খুশবুর কথা শুনে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে….

এ কিরে দোস্ত আমাদের ভার্সিটিতে ভুত আসছে! টোমি গিয়ে টিনার পিঁছনে লুকায় কথাটি বলে।

আহহ কি হচ্ছে টা কি টোমি দেখছিস তো মানুষ।রিয়া কথাটি বলে এবার বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়ালো।
আপনি কে খালাম্মা? খুশবুকে প্রশ্ন করল রিয়া।

জ্বি আমি খুশবু।ভার্সিটিতে আজ আমার প্রথম দিন।

খুশবু আর কিছু বলার আগেই সবাই মিলে জোড়ে হেসে দিল।
এ দেখ দেখ খালাম্মারাও ভার্সিটিতে পড়তে আসে।রিয়া বলল।

খুশবু গম্ভীর ভাবে বলল দেখুন আমি মোটেই খালাম্মা নই।

তাই বুঝি? তাহলে এমন ঢোলেঢালা বোরকা আর এইসব হাত, পা মোজা এগুলো কি? এসব বুঝি এখনকার নিউ ফ্যাশান? রিয়া বলছে আর ওর চেলাপেলারা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

দেখুন আমি আপনাদের মতো আলর্টা মর্ডাণ না।আমি আমার মায়ের শিক্ষায় বড় হয়েছি। যেটাকে আপনি ঢোলাঢালা বোরকা বলছেন সেটাকে ইসলামের দৃস্টিতে অনেক সম্মাণ এবং মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।এটাকে পর্দা বলে।যা নারীর সুন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।এসব তো আপনারা বুঝবেন না কারণ আপনাদের চোখে ডিজিটাল যুগের চশমা পরে আছেন।আমি পর্দা করি কারণ এই পর্দা আমার রক্ষা কবজ, এই পর্দায় আমায় নিরাপত্তা দেই এবং এই পর্দায় আমার রাসূলের নির্দেশ। আমি আমার রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে জাহান্নামে যেতে চাই না।এক দমে বলে কথা গুলো খুশবু।

তাই বুঝি? হা হা হা আবারও হেসে দেই সবাই।অনেক কথা যানো তো মেয়ে।তারপর সেই ছেলেটার দিকে ঘুরে তাকিয়ে রিয়া আবার বলে, তো কি যেন বলছিল ছেলেটা? সিনিয়র আপুকে প্রপোজ করা যাবে না তাই তো! ঠিক আছে এই খালাম্মা তো তোরই ক্লাসমিট নে একে প্রপোজ কর!
কি হলো কর! ধমক দিয়ে বলল।

ছেলেটি ভয়ে ভয়ে খুশবুর সামনে এসে দাড়ায়।অতিরিক্ত নারভাসে ছেলেটির কপাল থেকে ঘাম ঝড়ছে।যখনই হাতের ফুলটা খুশবুর সামনে এগিয়ে দিলো ছেলেটির পিঁছনের থেকে কারও মৃদু কন্ঠের আওয়াজ আসল।

কি হচ্ছে কি এখানে?

সবাই হা হয়ে আছে।শাওন, রোজ, টোমি, মিনি, টিনা বলল এটা আবার কে’রে রিয়া?

রিয়া তাকিয়ে শুধু হা হয়ে আছে।মনে মনে বলছে এত্তো সুন্দর ছেলেটা! ওয়াউউউ সো কিউট! হ্যান্ডস্যাম ড্যসিং বয়।কি বডি ফিগার! একদম হিরো টাইপ ছেলেটা।একে যদি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারতাম! কথাগুলো বলছে আর মনে মনে গদগদ হচ্ছে।

আমি কিছু জিজ্ঞেসা করেছি! এখানে কি হচ্ছে?

তার আগে বলেন আপনি কে? শাওন তাকে প্রশ্ন করল।

আমি এখানের নিউ কেমেস্ট্রি টিচার।এখন আমার ক্লাস টাইম।তাই ক্লাস নিতে এসেছি।কড়া গলাই বলল।

ওহহহ স্যার! এই ইনি তো স্যার! আসলে স্যার আমরা সিনিয়ররা জুনিয়রদের সাথে আলোচনা করতে এসেছিলাম নবীন বরণ অনুষ্ঠানটা কেমন করে আয়োজন করলে এদের ভালো লাগবে।রিয়া কথাটা একটু নারভাস হয়ে বলল।

ওহহহ ঠিক আছে।এটা নিয়ে তোমরা পড়ে কথা বলবে।এখন ক্লাস টাইম নিউ স্টুডেন্টরা যাদের ক্লাস আছে ক্লাসে এসো।

স্যার আপনার নামটা যদি একটু বলতেন? রিয়া যানতে চাইলো।

রাজ চৌধূূরী।রাগি লুকে বলল তোমাদের আর কিছু যানার আছে?

না স্যার। আপনার সাথে আমাদের যখন ক্লাস হবে তখন যেনে নেব।এই চল তোরা আমাদের তো এখন ইমপ্রটেন্ট একটা ক্লাস আছে ঢং করে বলেই রিয়া তার সান্ডপান্ডদের নিয়ে চলে গেল।

চলেন স্যার ক্লাস নেবেন একজন স্টুডেন্ট বলল।

কে ক্লাস নেবে? আমিও যে স্টুডেন্ট ওদের টাইট দিলাম! রাজ কথাটি বলেই হেসে দিল।

তারমানে আপনি আমাদের টিচার না? ওদের বোকা বানিয়েছেন? খুশবু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল রাজকে।

হুমম। আমিও স্টুডেন্ট তোমাদের সাথেই ১ম বর্ষে পড়ি।

খুশবু ছেলেটির পা থেকে মাথা অবদি দেখছে আর মনে মনে বলছে ছেলেটাকে তো দেখে মনে হয় না আমাদের বয়সের! যাই হোক ছেলেটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে!

তারপর সবাই হো হো করে হাসতে হাসতে ক্লাস রুমের মধ্যে ঢুকলো।

ক্লাস চলছে।প্রথম দিন স্যার সবার পরিচয় নিলো।যখন রাজের কাছে আসলো রাজ খুব লাফিয়ে লাফিয়ে বললো, স্যার আমি কলেজে থাকতে প্রতি ইয়ারে দুই, তিনবার থেকেছি।মানে যাকে বলে ইয়ার গ্যাপ আরকি।

রাজের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো।স্যার ঝাড়ি দিয়ে সবাইকে চুপ হতে বললো।আর রাজও থেমে গেলো।করুন দৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে রাজ বললো, স্যার শুনেন না! বড্ড ফাজিল ছিলাম আমি। তিন তিনবার কলেজ বদলেছি।কেন জানেন? স্যাররা বকা দিলে রেগে গেলেই মুখে থু থু ছুড়তাম।

রাজের কথাটা শুনে স্যার চুপসে যায়। আর রাজের থেকে দূরে সরে যায়। খুশবু নিকাবের উপরের পাতলা পর্দা থেকে পিছনের দিকের বেঞ্চটাতে বসে ব্যাপারটা দেখছে।আর ভাবছে, সিনিয়ারদের কোনো অংশে কম নয় তো ছেলেটা।

চলবে…