জোয়ার ভাটা পর্ব-১৩+১৪

0
321

#জোয়ার_ভাটা
#পর্ব-১৩
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

রাফি কিছু বলবে ওঁর আগেই পিছন থেকে ভেসে এলো একটি গলা,

” আমি!”

রাফি, মার্জান দু’জনেই পিছনে ফিরতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো মার্জান। অবাক হওয়া কন্ঠে বলল,

” তুমি?”

রাফান মুচকি হেসে দাঁড়ালো মার্জানের সামনে,

” সারপ্রাইজ ”

মার্জান আরেক দফা অবাক হলো,

” আবারও? সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না।”

রাফান মার্জানের মাথায় টোকা মেরে বলল,

” এখন বিশ্বাস হলো তো মান?”

মার্জানের চোখের কোনে পানি ছলকে উঠলো,

” থ্যাংকস ইয়ার। ”

বলেই জড়িয়ে ধরলো রাফানকে। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়া মার্জানকে রাফান নিজেও শক্ত করে বুকে সাথে চেপে ধরলো। মার্জানের ঠোঁটের হাসি ফোঁটাতেই তো এসেছিলো রাফান। আর এতে ওঁ সফল ও হলো।এদিকে ছোট মৃণালের কঁপালে চিন্তার ভাব,

” জান কি এই আঙ্কেলকে পছন্দ করে? তাহলে ওই আঙ্কেলকে কি রিজেক্ট করতে হবে আমার? কিন্তু এই আঙ্কেলের থেকে ওই আঙ্কেল সব থেকে বেশি, হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং, কুল। আঙ্কেল সামারের পার্সোনালিটি ওয়াঁ। তবে জান যদি এই আঙ্কেলকে লাইক করে? তাহলেও আমি হ্যাপি। তবে অবশ্যই তাকে আমাকেও নিতে হবে।”

মৃণালের মাথায় হাত পড়তেই ওঁ চিন্তিত মুখে হাসির রেখা টেনে আনলো। মার্জান ছেলের গালে চুমু খেয়ে বলল,

” বাচ্চা, তোমার জন্য ডোনার পেয়ে গেছি। তুমি খুব জলদি সুস্থ হয়ে উঠবে, এবং আবার স্কুলে যেতে পারবে।”

মৃণাল মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু নিজের ছোট মাথায় একটা বড়সড় গভীর ভাবনায় ঢুবে রইলো। মার্জান ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মনে মনে বলল,

” ভালো হয়েছে ডোনার পেয়ে গেছি । এখন আর আমার ছেলের জন্য কোনো বাবার প্রয়োজন নেই। গ্রীষ্মতো একদম না।”

গ্রীষ্মের কথা মনে আসতেই মার্জান মৃণালের গালে হাত রেখে বলে উঠলো,

” মৃণাল? আপনি কি আমার কথা কারো সাথে আলাপ করেছেন?”

মৃণাল অপরাধীর মত মাথা নাড়লো। এরপর মাথা নত করে বলল,

” আমি আঙ্কেল সামারের সাথে কথা বলেছিলাম জান।”

” আঙ্কেল সামার টা আবারকে?”

মৃণাল হেসে বলল,

” তুমি চিনো জান, ওই রেস্টুরেন্টের আঙ্কেলটা যে।”

মার্জান চক্ষু চারাক গাছ,
” মি: গ্রীষ্ম! উনার নাম তো গ্রীষ্ম!”

মৃণাল ফিক করে বলল,

” ইয়েস জান, তবে নামটা ওল্ড ফ্যাশন বলেই আমি উনাকে সামার ডাকি!”

মার্জানের কঁপালে হাত,
” কোথায় পেলে এই বদমেজাজি লোকটিকে?”

মৃণাল মুখে গম্ভীরতা ফুটে উঠলো। মার্জানের মনে হলে মৃণালের মুখের আদল এই মুহুর্তে গ্রীষ্মের মতো লাগছে। মৃণাল কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,

” আঙ্কেল সামার মোটেও বদমেজাজি নয়, উনি অনেক ভালো জান।”

মার্জান মৃণালকে এরূপ দেখে হাঁটু ঘেরে বসলো ওঁর সামনে,

” বাচ্চা, আপনি তো জানেন আপনার জানের এখন কত বিপদ কাঁটিয়ে উঠতে হচ্ছে, আপনি আমাকে প্রমিস করেন, আর এসব করবেন না!”

মৃণাল মার্জানকে জড়িয়ে ধরলো। পরমুহূর্তেই কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

” জান, আমি তোমাকে সুখি দেখতে চাই।”

মার্জান ওঁর ছেলে শক্ত করে বুকে আগলে নিয়ে বলল,

” আমার খুশির কারণ এক মাত্র তুমি মৃণাল, আমার কেউ চাই না।”

মৃণাল প্রত্যুত্তর কিছু বলল না। আবার ওঁর মাকে প্রমিস ও করলো না। মনে মনে বলল,

” মমি একদিন আমি তোমার জন্য পৃথিবীর বেষ্ট হাসবেন্ড খুঁজে বের করবো।”

——-

ঘন ঘন বাঁজ পড়ছে। রাতের আঁধারে এক চিলতে আলোকিত করে হারিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ এর চমক। শীপ্রা সমুদ্রের পাড় ধরে হেঁটে যাচ্ছে। এলোমেলো চুল আর কাপড় বলে দিচ্ছে ওঁর উপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা। গালের মাঝে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ আর ঘাড়, গলায়, কাঁধে দাগ গুলো চিৎকার করে বলে দিচ্ছে কোনো হিংস্র পশু কিছুক্ষণ আগেই ওকে যেন খুবলে খুবলে খেয়েছে। নিজের আব্রুতে আবারো লেগে গেছে কাঁদা মাটি। শীপ্রা বারুর মাঝেই ধপ করে ছেড়ে দিলো নিজের শরীর টুকু। যেন নেই একফোঁটা শক্তি, নেই বেঁচে থাকার ইচ্ছে, নেই লাভের সামনে মুখ দেখানোর সাহস। শীপ্রা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। ওঁর চিৎকার হারিয়ে যেতে লাগলো সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সাথে। ঠিক তখনি নেমে এলো আকাশ থেকে বৃষ্টির পতন। যেন ওঁর ভিতরের হাহাকার মিটাতেই এই উথালোনা।শীপ্রা চোখ বুঝে নিলো টিভির স্ক্রীনের মতো ভেসে উঠলো ঘন্টাখানেক আগের ঘটনা,

শীপ্রা তায়নের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। থর থর করে কাঁপছে ওঁর হাড় গোড়ায়। শীপ্রা শুঁকনো ঢুক গিললো। ওঁর প্যান্টের পকেটে ছোট একটি ছুঁরি নিয়ে এসেছে ওঁ। সেটিতে শক্ত করে চেপে ধরে নক করলো ওঁ। আজ যদি তায়ান শাহ্ ওকে কিছু করতে আসে, শীপ্রা মেরে দিবে একেঁবারে। ভিতর থেকে তায়ান শাহ্র কন্ঠ ভেসে আসতেই শীপ্রা ভীত পায়ে ঢুকলো। তায়ানশাহ্ বাথরূফ পড়ে অন্য হাতে সিগারেট নিয়ে সোফার উপর পায়ে পা তুলে বসে আছে। শীপ্রাকে উপেক্ষা করেই টানছে নিকোটিন। শীপ্রা সাহস নিয়ে গলা ছাড়লো,

” কি… কি চাই আপনার? কেন এসেছেন আবার? আমাদের… আমাদের কনট্রাক তো শেষ। আপনি নিজেই তো যেতে দিয়েছিলেন আমাকে, তাহলে, তাহলে কেন আবার ফিরে এসেছেন? কেন আমার আর লাভের জীবনের মাঝে বাঁধা হচ্ছেন? কেন ছেড়ে দিচ্ছেন না আমাকে একা?”

কথা গুলো এক দমে বলেই ফুপিয়ে উঠলো শীপ্রা। নিকোটিনের ধোঁয়ায় মত্ত তায়ানশাহ্ সিগারেটের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে, গলাটা আজ অন্যরকম ওঁ,

” বলে ছিলাম না.. কখনো আমার সামনে এসো না, তাহলে আর যেতে দিবো না!”

শীপ্রার শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে পড়লো ভয়ে। থমথমে গম্ভীর কন্ঠটা কানে বাজছে ওঁর বার বার। তায়ানশাহ্ এবার শীপ্রার দিকে ফিরলো। হাতে নিকোটিন মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিসে দিলো। কিছুক্ষণ আগের সিগারেট যা গর্ব করছিলো তায়ানের ঠোঁট জোড়ায়, অবলীলায় পিষে ফেলল পা মারিয়ে, অথচ মুখে ওঁর প্রতিবারের মতোই উদাসীনতা, নিষ্ঠুরতা। শীপ্রা ভয় পেয়ে গেলো তায়ানকে উঠে দেখে কয়েক কদম পিছিয়ে যেতেি দু’টো শক্ত হাত ওঁকে বেঁধে ফেললো ওঁর দু’ দিকে। শীপ্রা পিছনে ফিরতেই তায়ানশাহ্ মুখোমুখি হয়ে গেলো। তায়নের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মিসে থাকা নিকোটিনের গন্ধ পড়তে লাগলো শীপ্রার মুখে। শীপ্রা মুখ ফিরিয়ে নিলো। যেনো কোনো বিষধর সাপ। তায়ানশাহ্ হাসলো,

” আমার সামনে আশা উচিত হয়নি তোমার শীপ্রা। এবার আর কোনো ক্ষমতাই আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না তোমাকে।”

শিউরে উঠলো শীপ্রা। চোখের বাঁধ ভেঙ্গেছে সেই কখন। নিঃশব্দে কেঁদে চলছে মেয়েটি,

” আমাকে যেতে দিন প্লিজ, আমি..আমি লাভকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। ”

হেঁচকি তুলে বলল শীপ্রা। তায়নের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। শীপ্রার অগোছালো চুলের গাছিতে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে মাথর পিছনে নিয়ে চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে আরো কাছে টেনে নিলো তায়ান। ঠান্ডা অথচ রূহ কাঁপানো কন্ঠে বলে উঠলো,

” তোমার কি মনে হয় শীপ্রা? তোমার মতো থার্ড ক্লাস, প্রস্টিটিউট একটি মেয়েকে লাভের হাতে তুলে দিবো? এত সহজ? নাহ্… কখনো না।”

তায়ানশাহ্ এর বলা প্রতিটি কথা শীপ্রার শরীরের তীরে মতো বিধলো। চোখ বুঝে নিজেকে ছাড়াবার বৃথা চেষ্টা করতে করতে বললো,

” লাভ আপনার মতো এতোটা নিকৃষ্ট নয়। আপনি একটা নর্দমার কিট।”

তায়ান হাসলো। শীপ্রাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলে উঠলো,

” শীপ্রা জান, একবার কি ভেবেছো? লাভ তোর সত্যটা জানার পর, তোমার সাথে থাকবে কি না?”

শীপ্রা নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে তায়ানশাহ্ এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। তায়ানশাহ্ শীপ্রাকে টেনে নিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো নরম তুলতুলে বিছানার উপর। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই শীপ্রার খুব কাছে চলে এলো ওঁ। বলল,

” তুমি তোমার অবস্থান ভুলে গেছো তাই না ডিয়ার? নো প্রবলেম , আমি আজ তোমাকে আবারো তোমার জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছি।”

বলেই শীপ্রার হাত দু’টো বেঁধে ফেললো । শীপ্রার পড়নের এক একটি কাপড় ছিঁড়ে টুকরো করে ফেললো মাটিতে। শীপ্রা চিৎকার করলো, চেঁচালো। যার ফলে তায়ানশাহ্ এর আঙ্গুলে ছাপ পড়লো ওঁর গালে, কিন্তু রক্ষে পেলো না। আরো একবার নিজের সব হারাতে হলো ওঁর।

আবারো কোথাও বাজ পড়লো। বৃষ্টির বেগ-ও বাড়লো। বৃষ্টির মাঝে আবছায়া আলোয় কাউ এসে দাঁড়ালো ওঁর কাছে।শীপ্রার মাথায় ছাতা ধরে বিচলিত ভাবে বললো লাভ,

” আর ইউ ওকে শীপ্রা? কোথায় চলে গেছিলে তুমি? আমি কতটা ভয় পেয়েছি যানো?কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন শীপ্রা.. শীপ্রা কথা বলো!”

শীপ্রা কিছুই বলকে পাড়লো না যেন। অপলক তাকিয়ে রইলো লাভের বাচ্চা বাচ্চা মুখ পানে। কানে এখনো ঘন্টার মকো বাজছে তায়নশাহ্ বলা প্রতিটি কথা,

” লাভ আমার বড় ভাইয়ের ছেলে, ওঁ আমার থেকে সাত বছরের ছোট। ওঁ আমার নিজের ছেলের মতো। আমি অবশ্যই নিজের ছেলের জন্য ডিফেক্ট মাল চুজ করবো না? যদি তোমার পরিবারের ভালো চাও? ভুলে যাও ওকে!”

” শীপ্রা, শীপ্রা, শীপ্রা!”

ঝাকালো এবার লাভ শীপ্রাকে। শীপ্রা ছল ছল চোখে লাভের গাল পরমযত্নে স্পর্শ করলো। বলল,

” ব্রেকআপ লাভ। কারণ জিগ্যেস করো না প্লিজ আমি বলতে পারবো না। ক্ষমা করে দিও। আসি।”

বলেই ঝুম বৃষ্টি মাথায় করে বৃষ্টির মাঝে হারিয়ে গেলো শীপ্রা। এদিকে হাজার টঁকরো হওয়া মনকে গুঁছিয়ে নেয়ার চেষ্টা লাভের ঝড় বৃষ্টির রাতেই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো সব স্বপ্ন লাভের।

———-

সকালের সোনালী রোদ গায়ে লাগিয়ে গ্রীষ্মের বাড়ি এসে আবার হাজির মার্জান। সদর দরজায় পা দিয়েই এদিক ওদিক তাকালো ওঁ। কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে না পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো ওঁ। তবুও আরো একবার এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো।

” আমাকে খুঁজছো?”

গ্রীষ্মের গরম শ্বাস কানের উপর পড়তেই জমে গেলো মার্জান। নিজের বেগ শক্ত করে চেপে ধরে সোজা হয়ে বলে উঠলো,

” একদম না।”

বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো রান্না ঘরের দিকে। গ্রীষ্ম-ও পিছু নিলো মার্জানের। এবং রান্না ঘরের তাকের উপর হেলে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো মার্জানকে। মার্জান সবজি ধুয়ে কাঁটতে রেডি করছিলো। গ্রীষ্ম ডুবে ছিলো মার্জানের মায়াবী মুখে। মৃণাল ওঁকে কাল রাতে মার্জানের একটি ছবি পাঠিয়ে ছিলো। কিন্তু গ্রীষ্ম ভেবেছে ওই ছবিটি মার্জান ওঁকে পাঠিয়েছে। সদ্য ফুল ফোঁটার মতো লাগছিলো ছবিটির মাঝে মার্জানকে। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে ব্লক লিষ্টে দেখে গ্রীষ্মের রাগ উঠে গেছিলো। মনে পড়তেই গ্রীষ্ম এবার প্রশ্ন করলো,

” তুমি আমাকে ব্লক কেন করেছো জান?”

এতক্ষণ গ্রীষ্মকে উপেক্ষা করা মার্জান বিষ্ময়ে বিমুঢ়। ওঁকে এড করলোই কবে আর ব্লক করলেই কবে? মার্জানকে কিছু বলতে না দেখেই গ্রীষ্ম মার্জানের কাছে চলে এলো। মার্জানের হুঁশ ফিরতেই চকিতে বলল,

” আমি আপনকে ব্লক কেন করবো? আর আপনি এড হলেন কবে যে ব্লক করবো?”

গ্রীষ্ম মার্জানের আরো কাছে চলে আসলো,

” মিথ্যা কেন বলছো? ”

মার্জান ভয়ে পিছিয়ে যেতে যেতে বলল,
” আমি মিথ্যা কেন বলবো?”

” তা আমি কিভাবে বলবো? এখনি এই মুহুর্তে ব্রক খুলো!”

মার্জান হতভম্ব হয়ে গেলো,

” আর ইউ ম্যাড!”

গ্রীষ্ম বাঁকা হাসলো। মার্জান এবার ফ্রীজের সাথে এঁকে গেলো।

” ব্লক খুলবে নাকি, পানিশমেন্ট দিবো তোমায়?”

” কি যা তা বলছেন, দূরে যানতো।”

বলেই ধাক্কাতে লাগলো মার্জান।নিজের পকেট থেকে গ্রীষ্ম ফেন বের করে মার্জানের মুখের সামনে ধরে বলল,
” কাল তুমি আমাকে এই ছবি পাঠাও নি!”

মার্জান ভুত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো ফোনের ওয়ালপেপারে। বুঝতে বাকি নেই এই কাজটি মৃণালের। মার্জান বিড়বিড় করে উঠলো এবার,

“মৃণাল কেন বার বার তোমার মাকে এই বাঘের মুখে ফালাও বাচ্চা? কবে যেন কাঁচা মাংসের মতো আমাকে ঘিলে ফেলবে, এবং ঢেকুর পর্যন্ত তুলবে না, তখন বুঝবে। ”

মার্জার ক্যাবলাকান্ত এর মত হাসার চেষ্টা করে বোঝাতে চাইলো,

” দে-খু-ন এসব আমি!”

মার্জান সাফাই গাইবার আগেই ওঁর গলার উপর ছুঁরি ধরলো গ্রীষ্ম। মার্জান বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো ওঁ। ভয়ে ঠ্যাং দু’টো কাঁপছে। গ্রীষ্ম এবার হাত পেতে বলল,

” ফোন। ”

মার্জান কোনো ভনিতা ছাড়াই ফোন বাড়িয়ে দিলো। আতঙ্কে দিশেহারা। এই তার ছিঁড়া লোকটি চাকুর ভয় দেখাবে ব্লক খোলার জন্য? বাবা যায়? মার্জান চোরা চোখে তাকাতেই গ্রীষ্ম ব্লক ছুটিয়ে ফেললো। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুঁটিয়ে মার্জানের ঠোঁটে চুমু খেলো অকস্মাৎ ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় মার্জান। গ্রীষ্ম রান্না ঘর থেকে বের হতে গিয়ে থেমে গেলো, মার্জানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

” তোমার ঠোঁট গুলো ঝাল, টক, মিষ্টির টেষ্ট? কি খাও তুমি? তবে যাই খাওয় খুব টেষ্টি,।”

চলবে,

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-১৪

আজ সকাল থেকেই চলছে থেমে থেমে বৃষ্টি।পথ ঘাটে জমেছে পানি। মার্জানের আজ শেষ কাজ গ্রীষ্মদের বাড়িতে, কাল থেকেই নির্ঝরের মা ফিরবে কাজে। এ ভেবেই শান্তি লাগছে মার্জানের। ওই গ্রীষ্মের কবল থেকে তো বাঁচবে! মার্জান এসব ভাবতে ভাবতে সব কাজ গুছিয়ে মিসেস অনিতার কাছে বলে বেড়িয়ে পড়লো ওঁ। এদিকে আবারো শুরু ঝুম বৃষ্টি। মার্জান এবার বিরক্তিতে মাথা কুচকালো। ছাতা হাতেই রোডে আসলো। কিন্তু এই এলাকায় গাড়ি পাওয়া দুষ্কর, এর উপর বৃষ্টি আজ তো আরো পাওয়া মুশকিল। মার্জান আকাশ পানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বুঝি অভিযোগ করছে উপর ওয়ালার কাছে? মার্জান বৃষ্টি মাথায় ছাতা হাতে হাটতে লাগলো ওঁ। পিছন থেকে গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে কান ঝালাপালা করে দিতেই মার্জান বিরক্তি নিয়ে চাইলো,
” আরে ভাই! এত বড় রাস্তা চোখে পড়ছে না? সাইড তো দিয়ে রেখেছি, তাহলে কেন হর্ণ বাজিয়ে মাথা খাচ্ছো?”
কোনো সাড়াশব্দ নেই, মার্জান থামতেই গাড়িটিও ভদ্র মানুষের মতো থেমে গেছে। শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে।মার্জান চোখ ছোট ছোট করে চাইলো। গাড়ির ভিতরে এই ঝুম বৃষ্টির মাঝে, কে বসে আছে বোঝার চেষ্টা করলো। তবে আবছায়া আলোয় তেমন কিছু চোখে পড়লো না। মার্জান তাই আবারো নিজের পথে হাটতে শুরু করলো। গাড়িটিও ধীরে ধীরে চলছে। মার্জান আবার থেমে গেলো। গাড়িটিও থেমে গেলো। মার্জানের এবার রাগ আকাশচুম্বী। কে এই বদমাইশ, কেন করছে এমন বদমাইশি? মার্জান রাগে পিছনে ফিরে গাড়ির জানালায় নক করলো। এক গাদা শুনিয়ে দিবে নিয়ত করলো। জানালা খুলতেই কিছু বলবে? চুপ হয়ে গেলো। সামনের ব্যাক্তিটি আর কেউ নয়, পাগল গ্রীষ্ম। মার্জান শুধালো,
” কি চাই!”
গ্রীষ্ম ভেটকালো,
” তোমাকে চাই”
মার্জান কিড়মিড় করলো,
” আপনিকি থাপ্পড় খাবেন আমার হাতে? নাকি জনগনের মা’র?”
গ্রীষ্ম গুরু গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আই থিংক তোমার হাতের থাপ্পর?”
মার্জান কঁপালে থাপড় বসালো নিজের। এই পাগলের সাথে গেছে কথা বলতে? মার্জান শ্বাস ছাড়লো। চুলায় যাক। উল্টে পথে ফিরে হাটা ধরলো। কিন্তু থেমে গেলো। হুট করেই টেনে গাড়ির ভিতর বসিয়ে নিলো গ্রীষ্ম। মার্জান হতভম্ব। কিছুক্ষণ যেন ওই দুনিয়ার বাহিরে চলে গেছিলো। দুনিয়ায় ফিরতেই নিজেকে গ্রীষ্মের কোলে বসে থাকতে দেখে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। মার্জানের মুখ মুহুর্তেই লালবর্ণ ধারণ করেছে। ছেলেটি দেখা যাচ্ছে ডেঞ্জারাস রকমের পাগল! মার্জান এভাবে লজ্জায় নাস্তানাবুদ হতে দেখে গ্রীষ্মতো সেই লেবেলের মজা পাচ্ছে। মার্জানকে কোলে বসিয়ে ডানে গাড়ি ঘোড়ালো ওঁ। মার্জান নিজেকে ধাতস্থ করে চেঁচালো,
” আপনার সমস্যাটা কি? কেন করছেন এমন? কি চাি আপনার?”
“আই নিড অ্যা কিস?”
মার্জান চোখ বড় বড় করে তাকালো মার্জানের দিকে। গ্রীষ্ম দুষ্ট হাসচ্ছে। কাল বিলম্ব না করেই ঠোঁটে চুমু বসালো ওঁ। মার্জান শক্ড। সারা শরীরের ওঁর কম্পন করছে। গ্রীষ্ম সরে এলো। মার্জানকে এভাবে থম মেরে বসে থাকতে দেখে মজা পাচ্ছে খুব। মার্জান চোখ বুঝে আছে, কি হয়ে গেলো মুহূর্তেই তাই হয়তো ভাবছে, ওঁ চোখ খুললো, হাস্যজ্জল চোখ, মুখ দেখে কোথাও হারিয়ে যেতে লাগলো।গ্রীষ্ম মার্জানের ঘাড়ের পিছনের চুলে হাত রাখলো, আবারো কাছে টেনে আনার পূর্বেই মার্জান ওঁর মুখ টুুপ করে কিছু একটা ঢুকিয়ে দিলো। গ্রীষ্ম অবাক হয়ে গেলো। মার্জান সেই সুযোগে কোল থেকে নেমে পাশের সীটে বসে পড়লো। হাসার চেষ্টা করে বলল,
” আমি কাঁচা আমের এই চকলেটা খাই। মাত্র দু’টাকা আপনিও খান, যেহেতু এই টেষ্টটা আপনার ভালো লেগেছে। ”
বলেই পাশের দরজা খুলে মার্জান ভো দৌড়ে। গ্রীষ্ম এবার হা হয়ে গেছে। মেয়েটার কাজ কর্ম ওঁকে হকচকিয়ে দিয়েছে। ও জ্বিব দিয়ে চকলেট নাড়লো। হুমম… সত্যি সেই টেষ্টটাই তো… তবে ওঁর কাছে মনে হচ্ছে মার্জানের ওষ্ঠে এর চকলেটের টেষ্ট বেশি বৃদ্ধি পায়। ভেবেই ও গাড়ি ঘুড়ালো ওঁর বাসার দিকে।

———–

শীপ্রা বাসায় আজ নিজেকে কতদিন যাবৎ বন্দী করে রেখেছে। বের হচ্ছে না বাসা থেকে, না লাভ এর কোনো ফোন ও রিসিভ করছে। শীপ্রা নিজের বাসার বেলকনির পাশেই সুন্দর দোলনায় বসে আছে। বাহিরের বৃষ্টির ছাট পড়ছে চোখে মুখে, বৃষ্টির সাথে মিশে যাচ্ছে নোনাজল। ওঁর স্বপ্ন গুলো মুহূর্তে ধুলিস্যাৎ হচ্ছে। শীপ্রা হাটুতে মুখ গুঁজে ফোঁপাতে লাগলো ওঁ।

” শী…শীপ্রা…!”

কেউ নিচে থেকে নেশালো কন্ঠে একাধারে ডাকতে শুরু করেছে শীপ্রাকে। শীপ্রা উঁকি দিতেই চোখ ওঁর ছানাবড়া। বিড়বিড় করে বলল,

” লাভ!”

লাভ নেশায় বুঁদ। রাস্তার ধারে হেলছে দুলছে। ওঁর চোখ দু’টি শীপ্রার বারান্দায়। শীপ্রাকে দেখে ফেঁকাসে ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো। শীপ্রার বড্ড মায়া হলো ছেলেটিকে দেখে। কি হাল করেছে ওঁ। শীপ্রার মনের ভাবনায় ফাটল ধরলো,

” শীপ্রা আই লাভ ইউ সো মাচ।”

জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে লাভ। শীপ্রার মনের কোনে একটা খুশির বাতি জ্বলে উঠলেও ধপ করে নিভে গেলো। পাড়াপড়শিরা উঁকি ঝুঁকি দিলে রাফির কানে পৌঁছে যাবে। শীপ্রা ভীত হলো।জুতো জোড়া পড়ে দৌঁড়ে ছুটে গেলো ওঁর কাছে। লাভকে টেনে আঁড়ালে নিয়ে এলো,ধমকে সুরে বলল,

” আর ইউ মেড লাভ? কেন করছো এমন? কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো?”

লাভ শীপ্রার দু গালে হাত রাখলো। বৃষ্টির তোপে দু’জনেই ভিজে জুবুথুবু। শীপ্রা মুখের মাঝে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা শীপ্রার মুখে পড়ে আরো আকর্ষিত করে তুলছে ওঁকে। লাভ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ভালোবাসার মানুষটিকে। এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে নিজ বুক পকেটে লুকিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে। এবং শীপ্রাকে খাঁচায় বন্দী করে দিতে। কিন্তু তা কি আদো সম্ভব? লাভের কন্ঠে এবার জড়িয়ে আসতে সুরো করেছে, চোখ দু’টি ভিষণ ভাবে ঝুমছে, এই বুঝি ঢলে পড়ে ওঁ, তবুও অনেক কষ্ট বলল লাভ,

” শীপ্রা আই লাভ ইউ। আর এই কথাটা আমি সবাইকে বলতে চাই, সবাইকে পুরো পৃথিবীকে জানতে চাই যে তুমি আমার ভালোবাসা, তুমি আমার ইষ্ক।”

শীপ্রা ঢুকরে উঠলো, এত ভালোবাসা? এত ভালোবাসা ওঁর আঁচলে কুড়িয়ে নিতে পারবে না। না ওঁ ওর যোগ্য। শীপ্রা লাভে গালে স্পর্শ করলো, অনুনয় করে বলল,

” লাভ, একতরফা ভালোবাসা মানুষকে কখনো সুখি করে না, তোমার বুঝতে হবে লাভ বুঝতে হবে আই ডোন্ট লাভ ইউ। ”

লাভ অপলক তাকিয়ে শুনলো কথা টুকু এর পরেই হেলে পড়লো শীপ্রার বুকে। লাভকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে ঘাবড়ে যায় শীপ্রা। বহু কষ্টে সামলে ওকে ওঁর গাড়িতে তুলে নেয় শীপ্রা। এবং নিজে ড্রাইভিং সীটে বসে পড়ে। অনেক নেশা করায় বেহুঁশ হয়ে গেছে ওঁ। বুঝতে পেরে নিজেই ছুটলো ওঁকে ওঁর বাসায় দিয়ে আসতে। কিন্তু কে জানতো? ওঁর জন্য বড় ধরনের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে ওখানে…..

———

ডিরেক্টর সায়নের আজ মাথায় হাত। অনেকখন পায়চারি করে মাত্রই বসেছে ওঁ। তখনি উপস্থিত হলো মার্জান। সায়নকে এমন পীড়নে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করতেই জানালো,

” আমাদের ফাইনান্সিয়াল ভাবে যেই কোম্পানি সাপোর্ট দিচ্ছিলো, ওঁরা আর আমাদের সাথে কাজ করবে না। এখন নতুন কোনো কোম্পানি এই মুহুর্তে ইনভেস্ট করতে চাইছে না কোনো টাকা। বড় লসের মুখে পড়তে চলেছি আমরা। নতুন ফাইন্যান্সের প্রয়োজন। কিভাবে কি করবো? বুঝতে পারছি না।”

মার্জান শান্তনা দিবার চেষ্টা করলো,
” স্যার টেনশন করবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। একটা কাজ করলে কেমন হয়? আমরা সাক্ষাৎ এ ওঁদের সাথে কথা বলি?”

সায়ন হতাশার শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,
” লাভ নেই, হয়তো আমাদের এইখানেই ইতি টানতে হবে।”
মার্জান নিজেও হতাশ প্রথম কাজটায় যদি এভাবে বাঁধা পড়ে? ও আগাবে কি করে? তাই ভেবে রিকুয়েষ্ট করলো ওঁ,

” স্যার একটু ভেবেই দেখুন আর কোনো ওয়ে আছে কিনা? আমি নিজেই না হয় কথা বলবো?”

সায়ন কিছুক্ষণ ভাবলো। এর পর বলে উঠলো,
” আজ রাতের একটি পার্টি থ্রো করছে এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি। ওদের বাৎসরিক উৎসব। আমাদের জন্য-ও ইনভাইটেশন এসেছে। ওখানে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসবে, ওদের কাউকে যদি রাজি করানো যায়!”

মার্জান চকিতে বলে উঠলো,
” আমি রাজি করাবো স্যার!”
সায়ন হেরে যাও ব্যক্তির মতো বলল,
” দেখো কি করতে পারো, আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি!”

মার্জান মনে মনে সব ঠিক করেই ফেললো। যথা সময় রেডি হয়ে চলে গেলো পার্টিতে সোফিয়ার সাথে। ওখানে যেতেই অবাক ওঁরা। বড় বড় সেলিব্রিটি সহ নামি-দামি মানুষ এখানে। মার্জান ওঁদের মাঝেই ফাইন্যান্সার খোঁজ করলো। কারো তেমন আগ্রহ দেখা গেলো না। মার্জান আর সোফিয়া নারাজ হতে লাগলো। আর তখনি ওদের আশার আলো হিসেবে হাজির হলো গ্রীষ্ম। ব্যবসায়ীদের মাঝে গ্রীষ্ম এক ধাপ এগিয়ে। গ্রীষ্মকে দেখে বড্ড চমকালো মার্জান। পাশ থেকে সোফিয়া বলল,

” গ্রীষ্ম স্যার! মার্জান উনি যদি একবার আমাদের সাহায্য করে না? তাহলে ওল সেট। আর কারো ক্ষমতা নেই আমাদের টক্কর দেয়ার।”

মার্জান ভালো করেই জানে, রিয়ানা আর সুরভীর জন্যই ওঁর প্রোগ্রামে কেউ টাকা ইনভেস্ট করতে রাজি হচ্ছে না। মার্জান এটাও জানে গ্রীষ্ম একবার ওদের প্রোগ্রামে ইনভেস্ট করলে কেউ কিছু বলতে পারবে না আবার করতেও পারবে না। কারণ এখানেই আসার পর গ্রীষ্মের আপ্যায়ন বোঝা হয়ে গেছে মার্জানের। কিন্তু মার্জান গ্রীষ্মের কাছে যেতে চায় না। এর এক মাত্র কারণ গ্রীষ্মের ওঁর প্রতি ব্যবহার। দেখা যাবে, ওঁ বললো পাগল বেটা উল্টো এমন কিছু বলে বা করে বসবে, যাতে মার্জানকে পীড়ন করে। কিন্তু সোফিয়া নাছোড় বান্দী। মার্জানকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো গ্রীষ্মের কাছে। গ্রীষ্ম বার কাউন্টারের উপর একটু টুলে বসে হেলে আছে টেবিলে। পার্টিতে ঢুকতেই মার্জানকে চোখে পড়েছে ওঁর ব্ল্যাক ড্রেসে ওঁকে ঝাক্কাস লাগছে। ড্রিংক্সের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেও। কতটা অপরূপ ওঁ। কিন্তু মার্জান? ওঁ তো নজর এদিক ওদিক করে চাইছে ভুলেও তাকাচ্ছে না গ্রীষ্মের দিকে। সোফিয়া এবার কথা পাড়লো প্রথম,
” স্যার.. গুড ইভেনিং, আসলে আমাদের প্রোগ্রামের জন্য আমরা ফাইন্যান্সের খুঁজছিলাম,মূলত আমাদের প্রোগ্রামটা হচ্ছে………”

একে একে সব বলতে লাগলো সোফিয়া। কিন্তু গ্রীষ্মের এসবে কোন ধ্যান নেই, সব ধ্যান খেয়াল মার্জানের দিকে। মার্জান বুঝতে পেরেই অস্বস্তি বোধ করছে। গ্রীষ্ম মার্জানকে এভাবে ইগনোর করতে দেখে খানিকটা চাপা রাগে ফেটে পড়লো। সোফিয়ার কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

” মিস সোফিয়া আমি আপনার ওফার বিবেচনা করতে পারি, তবে আমার একটা শর্ত আছে। ”
মার্জানের দিকে তাকিয়ে বললো কথাটা।মার্জানো তাকালো তখন উৎসুক দৃষ্টি তাঁর নিজের-ও। সোফিয়া খুশি খুশি বলে উঠলো,

” হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন, না..!”
তখনি মার্জানকে আকাশসম চমকে দিয়ে বলে উঠলো,
“মিস মার্জান মালিক যদি আমার সাথে ডান্স করে তবে।”
মার্জান চকিতেই বলে উঠলো,
” মোটেও না। ”
গ্রীষ্ম বলল,
” দেন আ’ম সরি মিস সোফিয়া। ”
বলেই বার কাউন্টারের দিকে মুখ করে গেলো ওঁ। সোফিয়া মার্জানকে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
“ইয়ার মার্জান ডেন্সসি তো করতে চাইছে প্রেম তো না? কেন হাইপার হচ্ছিস? একটু ডান্স করে ফেল! ”
মার্জান বলল,
” কিনবতু উনি তো বলেন নি, ডান্স করলেই আমাদের প্রোগ্রামে ইনভেস্ট করবে? ওঁ বলেছে ভাববে? এইটক কে বলে বল? ফালতু লোক একটা, আমি করবো না ওঁর সাথে ডান্স!”
সোফিয়া এবার পীড়াপীড়ি শুরু করলো। না পেরে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো ওঁ,
” ঠিক আছে আমি রাজি!”
গ্রীষ্ম বাঁকা হাসলো। মার্জানের দিকে ডান্সের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মার্জান না চাইতেও হাত রাখলো ওঁর হাতে, এর পরে চলে গেলো ডান্স ফ্লোরে… ওঁরা মাঝ বড়াবড় দাঁড়িয়ে পড়লো। মার্জানের কোমরে পরম আদরে হাত রাখলো গ্রীষ্ম এদিকে মার্জান আনইজি ফিল করতে করতে হাত রাখলো ওঁর কাঁধে… গান বেঁজে উঠলো,

” Tere bin jeena hai aise
Dil dhadka na ho jaise
Yeh ishq hai kya duniya ko
Hum samjhaaye kaise

Aa dilon ki raahon mein
Hum kuch aisa kar jaaye
Ik dooje se bichhde toh
Saans liye bin marr jaaye

O Khuda..
Bata de kya lakeeron mein likha
Humne toh..
Humne toh bas ishq hai kiya