তুই হবি আমার পর্ব-০৫

0
1877

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__০৫

রাস্তায় সাইড দিয়ে বেখেয়ালি হয়ে হেটে যাচ্ছে রোজ। আকাশটা আজ মেঘলা,, দমকা হাওয়া বইছে। রোজ একটা লাল রংয়ের থ্রিপিচ পড়েছে সাথে লাল কাঁচের চুড়ি আর কপালে লাল টিপ সাদা স্টোনের। হঠাৎ কেউ এসে রোজের হাত হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,, রোজের মাথাটা ঠিক লোকটার বুকের বাপাশে,, লোটকার বুকের তীব্র ধুকধক আওয়াজে শিউরে উঠলো রোজ। ঘোর ঘোর লাগছে ওর। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে লোকটাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে দাড়ালো,, লোকটার দিকে তাকাতেই ওর চোখ স্থির হয়ে যায়। লোক আর কেউ না মেঘ। রোজ ঠোট নাড়ানোর আগেই মেঘ বলতে লাগলো,,

মেঘ : মন কোথায় থাকে.? দেখে চলতে পারিস না আরেকটু হলেই তো ইটে বেধে পড়ে যেতি,, ব্যাথা পেতিস্ চোখ কি কপালে নিয়ে ঘুরিস্.? যদি হাত পা ভেঙে যেতো.? খালি সাইজে বড় হয়েছিস বুদ্ধি এখনো পায়ের গোড়ালিতে

মেঘের এমন হঠাৎ রেগে যাওয়া আর অদ্ভুদ বকা শুনে রোজ নিচে ঘাড় ঘুরিয়ে ইট দেখতে লাগলো একটুকরো ছোট ভাঙা ইট ওর সাথে বাঁধলে বড়জোর হোচট খাওয়া যায়। কিন্তু মেঘ এমন পাগলামি করছে মনে হচ্ছে রোজ ইটে বেধে পড়ে মরেই যাচ্ছে।

রোজ : মেঘরোদ্দুর তুমি এখানে.?
মেঘ : চুপ,,, একদম চুপ। একটা কথা বললে ছোটবেলার মতো থাপ্পড় খাবি। কি ভাবিস তুই নিজেকে? তোর কিছু হলে আমি

রোজ : তুমি.?
মেঘ রোজের চোখের দিকে তাকালো। মেঘের চোখে পানি টলমল করছে। রোজ মেঘের চোখের দিকে তাকাতেই কেঁপে উঠলো ডার্ক ব্রাউন আইস। যার গভীরতা মাপার ক্ষমতা রোজের নেই। রওশনের চোখও বাদামী কিন্তু সেটা দেখে রোজের মনে কখনো এমন অদ্ভুদ ভালোলাগা কাজ করেনি যেটা মেঘের চোখ দেখলে লাগে। রোজের কাছে মেঘের চোখ তীব্র নেশার চেয়ে কম কিছু না।

মেঘ চোখ সরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো তারপর স্টার্ট দিয়ে #MR_Palace এর দিকে গাড়ি ঘোরালো। রোজ এখনো গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে।

রোজ : তোমার মনে কি চলছে সেটা আমি খুজে বের করবোই মেঘরোদ্দুর। তোমার কাজের মধ্যে অদ্ভুদ কিছু আছে। তোমার ক্যারেকটারের মিস্ট্রি কি সেটা খুজে বের করবে এই রোজ।


রোজ আবারও হাটতে শুরু করলো কিন্তু হঠাৎ ওর চোখ আটকে যায় মেইন রোডের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা একটা ২০-২২বছরের ছেলের ওপর। ছেলেটার গায়ে ময়লা জামা, প্যান্টের নিচের অংশ কিছুটা ছেড়া,, চুল আর দাড়িগুলো বেশ বড়। ছেলেটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছে কারন সে রাস্তা পার হতে পারছে না। রোজ ছেলেটাকে দেখে দাড়িয়ে গেলো কারন ছেলেটার উল্টোদিক থেকে একটা বিশাল ট্রাক আসছে,, রাস্তার মানুষজন ছেলেটাকে সরে যেতে বলছে কিন্তু ছেলেটা সবাইকে ভয় পাচ্ছে। রোজ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ছেলেটার দিকে ছুটে গেলো। আর ছেলেটার হাত ধরে টেনে রোড সাইডে ফেলে দিলো,, কিন্তু পাশ কাটানোর সময় রোজের হাত একটা সি এন জিরর সাথে বারি খায় আর কনুইয়ের বেশ কিছুটা অংশ ফুলে কেটে যায়। সেদিকে রোজের খেয়াল নাই। বেশিরভাগ সময়ে উত্তেজনায় শরীরের আঘাতের ব্যাথা অনুভব করা যায় না। রোজের ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে।

রোজ : ভাইয়া দেখো কিচ্ছু হয়নি। কেঁদো না কিছু হয়নি তোমার। আমার দিকে তাকাও। কে তুমি? তোমার নাম কি ?

ছেলেটা মাথা উচু করে রোজের দিকে তাকালো,, আর রোজের হাতে রক্ত দেখে আবার কেঁদে দিলো,,

ছেলেটি : আমি নীলয়। তোমার হাতে কেটে গেছে। ব্যাথা,, ব্যাথা করছে তোমার.?

ছেলেটার কথা শুনে রোজ বেশ অবাক হলো। ছেলেটাকে দেখে যেমন লাগে ছেলেটা ঠিক তেমন না। কিন্তু ও সবাইকে ভয় পায় কেন.? রোজ চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে এতোক্ষন ব্যাথা অনুভব করেনি কিন্তু ছেলেটার কথা শুনে মনে হচ্ছে সত্যিই কেটে গেছে। তবে ও তো রক্ত দেখতে পারে না মাথায় চক্কর দেয়।

নীলয় : আমি বেধে দিচ্ছি আপু। তুমি চোখ বোজো নাহলে ভয় পাবা।

রোজ না চাইতেই নীলয়ে বোকা কথা হেসে দিলো। নীলয়ও কিছুটা স্বস্তি পেলো বোধ হয়। ও নিজের জামার পকেট থেকে একটা নকশা করা রুমাল বের করে রোজের হাতে গিট দিয়ে দিলো।

রোজ : তো ভাইয়া তোমার বাড়ি কোথায়.?
নীলয় : আমার বাড়ি.? বাড়ি? হ্যা মনে পড়েছে আমার বাড়ি তো টিনের কিন্তু সেটা কোথায়.? রাস্তায়.? হ্যা আমার বাড়ি রাস্তায়। তোমার বাড়ি কোথায়.?

রোজ বুঝলো ছেলেটা মেন্টালি সিক। তাই এমন করছে। এই মুহূর্তে ওর কি করা উচিত.? ছেলেটাকে এখানে রেখে যাবে নাকি সাথে করে নিয়ে যাবে.?

রোজ : ( একে এখানে রেখে গেলে যদি আজকের ঘটনা আবার রিপিট হয়.? একে বরং NgO তে নিয়ে যাই যেহেতু এর সমস্যা বেশি ক্রিটিক্যাল না সুতরাং প্রপার কেয়ার পেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে তখন নাহয় ফিরে যাবে। ) চলো তোমাকে আজ আমি আমার বাড়ি নিয়ে যাবো ওখানে অনেক বাচ্চারা আছে ওদের সাথে খেলবে।

নীলয় : আমার না খেলতে খুব ভালো লাগে। তাড়াতাড়ি চলো তোমার বাড়ি। আচ্ছা তোমার বাড়ি ক্রিকেট খেলার জন্য ব্যাট বল আছে.?

রোজ : হ্যা আছে। চলো।
ছেলেটা উঠে হাত দিয়ে নিজের গায়ের ময়লা ঝাড়তে লাগলো,,, খুশিতে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। রোজ এক হাত দিয়ে ছেলেটার হাত ধরে হাটতে লাগলো। রাস্তার সবাই অদ্ভুদ নজরে দেখছে ওদের। NgO টা কাছেই তাই গাড়ি নিলো না রোজ।


এদিকে কফিহাউজে আলিজা আর কলিকে জোর করে আটকে রেখেছে আরাভ। ওদের চারপাশে ৫-৬জন গুন্ডা টাইপের ছেলে। ওদের সব ব্যাগ আর ফোনও নিয়ে নিয়েছে আরাভ। কলি স্বাভাবিক থাকলেও আলিজা ভয়ে ঘেমে গেছে। আলিজা এমনই নরম মনের ভিতু টাইপের মেয়ে,, সবাই ওর সাথে রোজকে মেলাতে গেলেই আকাশপাতাল ভেবে নেয়। অপরদিকে আরাভ টেবিলের নিচে আলিজার পায়ের নখ থেকে হাটু অবধি স্লাইড করে যাচ্ছে। আলিজা এবার কেঁদে দিবে এমন ভাব।

কলি : আমাদের এখানে এভাবে আটকে রাখার মানে কি মিস্টার খাঁন.? কি চান.?

আরাভ : তোমার বোনকে। দিবে নাকি.?
কলি : বেস্ট জোক অফ দ্যা ইয়ার। আমার বোন কে চান.? কি হিসাবে বেড পার্টনার.? তাহলে বলবো আপনার ক্যালকুলেশনে ভুল আছে কারন আমার বোন রাস্তায় বিক্রিত কোনো জিনিস না যে চাইলেই পেয়ে যাবেন।

আরাভ : রোজের সাইড ইফেক্ট। শুনেছি তুমি বেশি কথা বলতে না। যেই রোজের কাছে আসলে সেই মুখে বুলি ফুটে গেলো.? বলতে হয়, তোমাদের ছোট বোনের ট্যালেন্ট আছে।

আলিজা : প্লিজ যেতে দিন আমাদের। দেখুন সেদিনের জন্য তো আমরা কিছু বলিনি। আপনার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপও নেইনি। তবুও এমন করছেন কেন..??

আরাভ : নাও নি কেন.? অন্যকেউ হলে তো নিতো। তার মানে আমার জন্য তোমার মনে কিছু আছে।

আলিজা : না কিছু নেই। আপনার জন্য আমার মনে শুধু ঘৃনা আছে আপনি অত্যন্ত খারাপ একটা মানুষ যে মেয়েদের সম্মান করতে পারেন না ভালোবাসতে পারেন না। আপনার চাহিদা শুধু মেয়েদের শরীর। আর কিছু না। আপনি চান আমাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বেডে নিয়ে যেতে। কিন্তু সেটা কখনোই হবে না।

কলি : যেটা শোনার ছিলো শুনে নিয়েছেন। এবার যেতে দিন আমাদের।

আরাভ : ভালোবাসতে চাই আমি। আমাকে একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না.?

কলি : নাটক কম করুন মিস্টার খাঁন। আমার বোন কখনো আপনার ফাঁদে পা দেবে না। আপনার ইচ্ছা পূরন করবে না।

আলিজা কলি ব্যাগ আর ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে। আরাভ রেগে টেবিলটা উঠিয়ে দূরে ছুড়ে মারলো,, পাশে থাকা চেয়ারগুলোতেও লাথি দিয়ে ফেলে দিলো। ওয়েটাররা ভয়ে কেঁপে উঠলো।

আরাভ : তোমরা মেয়েরা এমনই হও,,,জানি আমি।কিন্তু আরাভ খাঁনকে রিজেক্ট করার মতো দুঃসাহস দেখানোর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে আলিজা। এতোদিন রোজের ওপর রেগে তোমাকে নিয়ে গেম খেলতে চেয়েছি কিন্তু না আজকের পর থেকে আমার লক্ষ্য তোমাকে নিজের করে পাওয়া। তোমাকে নিজের করেই তোমার শাস্তি দিবো। বি রেডি ফর মাই ফেইক লাভ টর্চার বেবি। ইট্স মাই চ্যালেন্জ টু মাইসেল্ফ।


ড্রইংরুমে মেঘের সামনে বসে ড্রিংকস করছে মৃন্ময়। মেঘ শুধু চেয়ে চেয়ে বাবার বিক্ষিপ্ত চেহারা দেখছে।
মেঘ : বাবা আর ড্রিংকস করো না এবার শরীর খারাপ করবে। কেন তার জন্য শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো.?

মৃন্ময় : রোজকে যে ভালোবাসো সেটা কি বুঝতে পেরেছো..?
মেঘ : হ্যা কিন্তু

মৃন্ময় : মামনিকে নিয়ে আসো আমাদের পরিবারে।আর কতদিন এভাবে থাকবে.?

মেঘ : তুমি জানো বাবা রোজ আর আমার জীবন সম্পূর্ন আলাদা। ও আমার জীবনে আসলে ওর লাইফ রিস্ক হবে। আমি কখনো জেনেবুঝে ওকে এমন একটা অনিশ্চিত জীবনে জরাতে চাইনা, চাইবো না । যে মেঘকে এতোবছর লুকিয়ে রেখেছি তাকে সবার সামনে আনতে চাইনা আমি।

মৃন্ময় : ( জানি মেঘ। কিন্তু বাবা হয়ে কিভাবে ছেলের জীবন নষ্ট হতে দেখবো.? তোমার জীবনে যে রোজের প্রয়োজন। রোজ ছাড়া কেউ তোমাকে অন্ধকার থেকে আলোয় আনতে পারবে না। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমি নিজে তোমার জীবনে রোজকে এনে দিবো। এটা একজন বাবার প্রমিস।) মনে মনে



রওশন রুমে বসে ঈশার ছবি দেখছে,, ঈশার একটা বর ছবি ওর রুমে টানানো। ওর ইচ্ছা ছিলো একপাশে ঈশার ছবি আরেকপাশে ওদের দুজনের কাপল পিক,, প্রতিটা শুভ ভালো মুহূর্তে ছবি টানানো থাকবে। কিন্তু সেটা শুধু কল্পনাতেই থেকে গেলো।
রওশন : কিভাবে এটা করতে পারলে ঈশা..? কিভাবে ভাবলে ২২বছরের একটা যুবক ১১বছরের একটা নাবলক বাচ্চা মেয়ের মোহতে আটকাবে.? আমার আসক্তি তো সবসময় তুমি ছিলে। জানি তোমার ভয় আছে আমাকে হারানোর তবে সেটা নিজেই কেন হারালে.? এমন একটা মেয়েকে সন্দেহ করলে যে সারাটাজীবন শুধু কষ্ট পেয়ে এসেছে,, সেটাও তোমাদের জন্য। তোমাদের সব ভাইবোনদের জন্য। আর তোমাদের রিলেটিভের জন্য। কারন ও মেয়ে.? এটাই ওর সবচেয়ে বড় ভুল তাইনা.? তাহলে এবার দেখো একটা মেয়ে কিভাবে একটা ছেলের সমান ইভেন ছেলেদের থেকেও বেশি হয় .? আর রোজের এই কঠিন কাজটায় আমি সবসময় ওর পাশে থাকবো তাতে যদি নিজেকে বিরহের আগুনে পোড়াতে হয় তবে নাহয় সেটাকেই আপন করে নিবো। তবুও তোমায় ভালোবেসে যাবো। সেদিনের কথাটা রাখতে পারবো না কারন রোজ আর আমার মধ্যে তেমন কোনো সম্পর্কই নেই ঈশা। কেন বুঝলে না তুমি কেন.?

চলবে,,,