তুই হবি আমার পর্ব-০৭

0
1914

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__০৭

রোজ : ওটা পিরিওডের দাগ ভাইয়া। এবং আমার মনে হয় আপনারা এতোটাও ছোট না যে আপনাদের বোঝাতে হবে ওটা কিসের দাগ। আর কোথায় কেটেছে।

অনেকটা রেগে কথাটা বললো রোজ। কারন ছেলেগুলো জেনে শুনে মেয়েটাকে হ্যারাস করছিলো পাশাপাশি নানারকম অসংলগ্ন কথা বলে মেয়েটাকে টিজ করছিলো ।
যেমন,,
ওটা কিসের দাগ আপু..?
ওমা রক্ত কোথা থেকে বের হচ্ছে..? ইশ জামাটা ভিজে যাচ্ছে,,,
আপু কোথায় কেটেছে বলো আমরা মলম লাগিয়ে দেই।
আমাদের কাটা জায়গাটা দেখাও তো। দেখি কতটা কেটেছে।
একজন বলে উঠেছিলো,,, ” কেঁদো না মামনি জামাটা উচু করো আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। ”
মেয়েটা এতোগুলো ছেলের মুখে এসব শুনেই ভয়ে কাঁদছে।


রোজের কথা শুনে ছেলেগুলো রোজের দিকে তাকালো। ওদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,,
— তাই? আহারে আমাদের বললেই তো হতো। কিন্তু তুমি কে.? আর এতো সুন্দর ফিগার নিয়ে যেচে আমাদের কাছে কেন এসেছো.? নিজের ভালে তো পাগলেও বোঝে তুমি কি বোঝ না.? নাকি বুঝতে চাওনা বাবু।

— দোস্ত মেয়েটার কোমর আর পেট দেখ। জামার ওপর দিয়ে কি লাগছে,, ঊফফ সেই আকারের হটট । কে তুমি সুন্দরি, তোমাকে আগে কেন দেখি নি। থাকো কোথায় মামনি.?

রোজ : আমি যেখানে থাকি বা যেই হই না কেন সেটা আপনাদের জানার দরকার নেই তবে যেটা জানার দরকার সেটাই বলতে এসেছি।
আপনাদের দেখে তো মনে হচ্ছে না যে আপনারা এডোলেসেন্স অর্থাৎ কিশোর। আপনাদের বয়স ১৯এর বেশি অর্থাৎ আপনাদের বর্তমান অবস্থা আর্লি এডালহুড।

এতোক্ষন ধরে ১৩-১৪ বছরের একটা কিশোরীকে একা পেয়ে আপনারা তার জামার রক্তের দাগ নিয়ে টিজ করছিলেন। ওটা কিসের দাগ আর কোথায় কেটেছে জানতে চেয়েছিলেন.? তাহলে শুনুন ওটা পিরিওডের দাগ,, পিরিওড মানে নিশ্চই জানেন.? একটা মেয়ের সন্তান ধারণের সক্ষমতার প্রধান লক্ষণ হলো পিরিওড। আপনাদের মা যে আপনাদের এই পৃথিবিতে আনতে পেরেছে সেটাও কিন্তু এই পিরিওডের জন্য। এই যে দেখছেন এই মেয়েটাকে এর মতো আপনার বোনেরও পিরিওড হয়, ভবিষ্যৎ এ যে মেয়েকে বিয়ে করবেন তারও হবে। এই সময়টা কতো যন্ত্রনার জানেন.? আর আপনারা এই বিষয়টাকে নিয়ে হয়তো বিভিন্ন দিন বিভিন্ন মেয়েকে হ্যারাস করেন। আপনার বোন/বউ/মেয়েকে যখন এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে তখন তাদের কি বলবেন.? আমরা করেছি ওরাও করুক.? তাইনা। যাই হোক কখনো এসব বুঝবেন না আপনারা,, আল্লাহর কাছে দোয়া করবো যেন তিনি আপনাদের স্বাভাবিক জিনিসটা স্বাভাবিক ভাবে বোঝার ক্ষমতা দান করেন।

রোজের কথায় ছেলেগুলো বেশ রেগে গেলো আর রেগে রোজের দিকে এগোতে লাগলো। ঠিক দখন ওদের পেছনে একটা বাইক থামলো,, ব্রেক করার জন্য সাউন্ডটা একটু বেশি হলো। রোজ বাইকের মানুষটাকে দেখে রিতীমত অবাক কারন ওটা মেঘ। এই মেঘ জলীয়বাষ্প ছাড়া কিভাবে হুটহাট করে চলে আসে বুঝতে পারে না রোজ। মেঘ হেলমেট খুলে রোজের চোখের দিকে তাকালো ।

মেঘ : কি করছো এখানে.? তোমার পাশের মেয়েটা কাঁদছে কেন.? কোনো সমস্যা হয়েছে.?
ছেলেগুলো মেঘের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো তারপর মেঘের সামনে হাটু গেড়ে বসে মাফ চাইতে লাগলো।

— ভাই মাফ করে দেন। আমরা জানতাম না ওরা আপনার পরিচিত। আমরা না বুঝে ভুল বলেছি। দয়া করে মাফ করে দেন।

মেঘ : এদের কি বলেছেন.?

রোজ : আমি বলছি,,, ওরা বলেছিলো আমার ফিগার, পেট আর কোমর নাকি সেই হট। আর এই মেয়েটার পিরিওড নিয়ে টিজ করছিলো।আরর

হাতের ইশারায় রোজকে থামিয়ে মেঘ রাগি চোখে ছেলোগুলোর দিকে তাকালো। ছেলেগুলোর দিকে তাকাতেই ওরা কেঁদে দিলো। মেঘ কিছু না বলে একটা রিকশা ঠিক করে মেয়েটিকে রিকশায় তুলে দিলো।

মেঘ : সাবধানে যাও আপু। আর কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আর নিজের খেয়াল রেখো।

মেয়েটা চলে যেতেই মেঘ রোজের হাতের কব্জি চেপে ধরলো। তারপর টানতে টানতে বাইকে উঠালো।
রোজ : আরে আমার আরেকটা কথা বলা বাকি আছে। আমার পেট নিয়ে কমপ্লিমেন্ট করছে ওরা। ওদের উত্তর দিতে হবে না.?

মেঘ : চুপচাপ বাইকে ওঠো নাহলে এখানে ফেলে রেখেই চলে যাবো। তখন বুঝবে প্রতিবাদী হওয়ার ফল কি.?

রোজ : ওনাদের জানার দরকার ছিলো তাই বলেছি। পরে অবশ্য নিজের বোকামির জন্য আফসোস হচ্ছিলো। তবে আর একটা কথা জানিয়ে দেই.?

মেঘ : রেখে চলে যাবো কিন্তু। যা জানিয়েছো ওটাতেই হবে। ওরা আর কখনো কোনো মেয়েকে হ্যারাস করবে না।

রোজ : কিন্তু পেট।।। আমার কোমর.?

মেঘ রেগে বাইক স্টার্ট দিলো। রোজ ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে বসলো,, একা কি ৪-৫টা ছেলের সাথে পারবে নাকি.? যতই ক্যারাটে আর মারপিট জানুক ওতোগুলো ছেলের সাথে লাগতে গেলে নিজেরই বিপদ। তার চেয়ে মেঘের সাথে যাওয়াই ভালো।রোজ উঠতেই মেঘ ফুল স্পিডে রাইড করতে শুরু করলো। স্পিড দেখে রোজের কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।
রোজ : আরে আরে আস্তে চালান। এভাবে চালালে আমি তো পেছন থেকে ছিটকে রাস্তার মাঝখানে গিয়ে পড়বো।

মেঘ : আমাকে ধরে বসো।
রোজ : ( কি মানুষ প্রথম প্রথম দেখে তো ভালো মনে করছিলাম এখন দেখি আস্তো শয়তান। ছেলেরা এমন হয় কেন আল্লাহই জানে। কিন্তু আমি এখন কি করবো ভয়ে তো জান যায় যায় অবস্থা। ধরে বসবো.? আরে লজ্জা লাগতেছে এরে ধরতে। ধুর ধুর লজ্জা লাগে কেন.? উফ এই কেসটায় তো আগে জীবন পরে লজ্জা। আর নিজের জীবন বাঁচানো ফরজ কাজ তাই সেটাই করা উচিত আমার।)

রোজ পেছন থেকে মেঘকে জরিয়ে ধরলো,, রোজের দুহাতে মেঘের বুক স্পর্শ করতেই ব্রেক কসলো মেঘ। রোজ ভয়ে মেঘের ঘেড়ে মুখ গুজে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ওকে। দুজনের হার্টবিট সমান তালে বাড়ছে,, একজনের ভয়ে আর আরেকজনের ভালোবাসার স্পর্শে। ভয়ে রোজের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে মেঘের কাধে আছড়ে পড়ছে। মেঘ শুধু চোখ বুজে এই মুহূর্তটা অনুভব করছে,,, চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল।

রোজ : যাক বাবা থেমে গেছে।
রোজ মাথা উচু করে দেখলো এটা একটা রিসোর্ট। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় হরেক রং এর লাইটিং করা হয়েছে। রোজ বাইক থেকে নেমে রিসোর্টের চারিপাশ দেখতে লাগলো। এদিকে মেঘ নিজের রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারছে না। রোজ এমন কেন..? এতোটা স্বাভাবিক থাকছে কিভাবে.? মেঘ বাইক স্টান্ড করিয়ে রোজের কাছে গেলো,, রোজের কনুই টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চিল্লাতে লাগলো।

মেঘ: এই মেয়ে কি চাস্ তুই..? একটুও কি শান্তিতে থাকতে দিবি না..? পৃথিবির সব ঝামেলায় শুধু তোকে পড়তে হবে.? ইনসাফির আরেক নাম রোজ বানাতে চাস্.? কি ভাবিস তুই ছাড়া আর কেউ নাই এই পৃথিবিতে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে..? আজ যদি আমি না আসতাম তোর কি হতো জানিস.? ওরা তোকে খুবলে খেতো। এর মানে বুঝিস্..? এতোকিছুর পরেও তুই রিসোর্ট ঘুরে দেখছিস্..?

রোজ মেঘের এমন ভয়ংকর রূপ আগে দেখেনি। রাগে ওর কপালের কয়েকটা শিরা ফুলে উঠেছে,, ফর্সা চেহারা লালবর্ণ ধারন করেছে। চোখটাও আস্তে আস্তে লাল হয়ে উঠছে। হঠাৎ ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে রোজ। আর মেঘ রোজের এহানো কান্ডে ভয় পেয়ে যায়। রোজ হিচকি দিয়ে কেঁদে উঠলো,,

মেঘ : রোজ.? কি হলো তোর.? কাঁদছিস কেন। আই এম সরি। আমি আর কখনো তোকে বকবো না। দেখ আমি কান ধরছি। তবুও কাঁদিস না। তোর কান্না আমার সহ্য হয়না।

মেঘ কান ধরে রোজের পায়ের কাছে বসে সরি বলতে লাগলো তখনই রোজ নাক ডলতে ডলতে বললো,,

রোজ : আমার আগের দিন হাত কেটে গেছিলো আর তুমি সেখানে চেপে ধরছো,,, আমার কিছু হলে তোমার কি.? তুমি জানো আমার কষ্টটা কিজন্য ? কতটা.? কেন করি এমন.? আর তাছাড়া তুমি তো মেয়েদের ঘৃনা করো তাহলে কেন বারবার আমার কাছে আসো ? কি চাও?

মেঘ উঠে দাড়িয়ে রোজকে পরম আবেশে জরিয়ে ধরলো,,, রোজ মাথা উচু করে মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ রোজের দুগাল ধরে নিজের কপালের সাথে রোজের কপাল ঠেকালো। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে দুজনের।

মেঘ : সরি রোজ।
সরি বলার সময় মেঘের ঠোট রোজের ঠোট স্পর্শ করলো। শিউরে উঠলো রোজ,,, এই প্রথম কোনো ছেলে এভাবে ওর এতোটা কাছে, এসেছে। রোজের হাত আস্তে আস্তে মেঘের পিঠ স্পর্শ করছো। রোজের স্পর্শে হুশ আসলো মেঘের,, তাই ও রোজকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাড়ালো। রোজও চমকে গেলো। কি ঘটছিলো এতোক্ষন.? পরিস্থিতি সামলানোর জন্য রোজ বলে উঠলো,,

রোজ : আরাভ ভাইয়ার অতিতে কি কিছু ঘটেছিলো.? যার কারনে ওনার আজকের এই রূপ.?

মেঘ : আলিজাকে আরাভ ভালোবাসে। এটাই ওদের সম্পর্কের জন্য যথেষ্ট। তুই আর ওদের মধ্যে ঢুকিস না। আমি চাইনা আরাভের জীবনে আর কোনো সমস্যা আসুক। যদি অতিত জানা একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে আলিজাকে কাল এখানেই নিয়ে আসিস। ওদেরটা নাহয় ওরাই বুঝে নিবে।

রোজ : আচ্ছা ওদের কাহিনিতে আমি থাকবো না। তবে তোমার মিস্ট্রি কি.? এভাবে আমার বিপদের সময় ঠিকঠাক জায়গায় পৌছে যান কিভাবে.? আর আমার জন্য এতো চিন্তাই বা কেন..? ওহ হ্যা, আরেকটা প্রশ্ন ওরা আপনাকে ভয় পেলো কেন?

মেঘ : তোর পরিবর্তনের কারন কি.? ছোটবেলায় তো কখনো দেখিনি কারোর ব্যাপারে জানার জন্য তোর কখনো এতো কিউরিসিটি ছিলো বা হয়েছিলো। তাছাড়া তোর ফ্যামিলির কেউ তোকে সেভাবে দেখেনা কেন যেভাবে আলিজাকে দেখে.?

মেঘের এমন কথা ঘুরানোর কৌশল বুঝতে পেরে ঠোট বাঁকিয়ে হাসলো রোজ। তারপর চোখে চোখ রেখে বললো।

রোজ : কাল বলবো। তবে যদি তুমি তোমার অতিত বলো তাহলেই & থ্যাংকইউ এটা সিউর করার জন্য যে আরাভ ভাইয়া আপিলাকে ভালোবাসে। কারন তোমার প্রতিটা কথার ওপর বিশ্বাস আছে আমার কিন্তু বাকিদের ওপর নাই।

রোজের কথায় মুচকি হাসলো মেঘ। রোজ আড়চোখে মেঘের দিকে তাকালো।


পরদিন বিকালে আলিজা কলি আর রোজ আসে সেই রিসোর্টেই। রিসোর্টের নাম দেখে রোজ আজ অবাকের চরম সীমায়। #MR_Resort । তার মানে এটা মেঘদের রিসোর্ট। আলিজা আর কলি ভেতরে গিয়ে একটা টেবিলে বসলো। রোজ ওদের থেকে কিছুটা দূরে সরে মেঘকে কল করলো,,, তারপর হেটে বাগানের দিকটায় যেতে লাগলো। অনেকটা নিরিবিলি জায়গা আর সবচেয়ে ইনাটারেস্টিং ব্যাপার হলো এখানে গোলাপের গাছ ছাড়া কোনো ফুল গাছ নেই। হঠাৎ পেছনে মেঘের ডাক কানে আসতেই ওখান থেকে ফিরে গেলো রোজ।

সামনাসামনি বসে আছে আরাভ আর আলিজা। আরাভের হাতে ব্যান্ডেজ। রোজ ভ্রু কুচকে তাকালো মেঘের দিকে।রোজের উত্তর দেওয়ার জন্য মেঘ আরাভের হাত থেকে জোর করে ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো।

আরাভ : মেঘ খুলিস না।
রোজ : আপিলা তোমার চোখ ছলছল করছে কেন.? তুমি তো বলেছিলে আরাভ ভাইয়াকে তুমি ঘৃনা করো। তাহলে.?

কলি : আমার একটা ইম্পর্টেন্ট কল এটেন্ড করতে হবে। তোরা বস আমি আসছি।

মেঘ ব্যান্ডেজটা খুলতেই হাত পেছনে গুটিয়ে নিলো আরাভ। আলিজা না চাইতেও ওর চোখ বারবার আরাভের দিকে যাচ্ছে। রোজ আরাভের দিকে তাকিয়ে আলিজার দিকে তাকালো। দুজনই মাথা নিচু করে আছে। রোজ আরাভকে রাগানোর জন্য বললো,,,

রোজ : কি হলো এখন মাথা নিচু করছেন কেন.? লজ্জা লাগছে বুঝি..? কিন্তু আমি তো জানতাম আপনাদের লজ্জা খুব কম আছে।

আজ আর আরাভ রাগ করলো না বরং অসহায় চোখে রোজের দিকে তাকালো। আলিজাও একটু রেগে গেছে। মেঘ রোজের হাতের ওপর হাত রেখে ওকে থামতে বললো।

রোজ : আরে সবাই এমন করছো কেন.? আমি বলতে চেয়েছি তোমাদের মানে ছেলেদের লজ্জা কম। এখন যদি আরাভ ভাইয়া এভাবে মেয়েদের মতো লজ্জা পায় তাহলে তো আমার সন্দেহ হবেই।

মেঘ : রোজ চল তোকে রিসোর্টটা ঘুরে দেখাই। আমার কিছু স্পেশাল প্লেসও আছে।

রোজ মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো,,
রোজ : শুধু শুধু বাহানা না করে ডিরেক্ট বললেই তো পারো যে “রোজ ওঠ এখন, ওদের প্রাইভেসি লাগবে তুই কাবাবে হাড্ডি হচ্ছিস ” নাও চলো।

রোজ উঠে মুখ ভেঙচি দিয়ে আগে আগে হাটতে লাগলো। মেঘ হেসে আরাভের কাধে হাত রেখে ওকে ভরসা রাখার জন্য ইশারা করলো।

মেঘরা চলে যাওয়ার পর আধা ঘন্টা ওরা চুপচাপই বসেছিলো। আলিজাই প্রথম কথা বলে,,

আলিজা : আপনার হাতে কি হয়েছে.? তখন হাত লুকালেন কেন.?
আরাভ : কিছু না।

ওয়েটার এসে দুকাপ কফি দিয়ে গেলো। মেঘ দিতে বলেছে। আলিজা কফিটা নিয়েই চুমুক দিলো। টেনশনে মাথা ব্যাথা করছে ওর। কফি না খেলে মাথা ঠিক হবে না।

আরাভ : তোমাকে কিছু বলতে চাই আমি।
আলিজা : জানি তো কি বলবেন।

আরাভ : কি.?
আলিজা : আপনার অতিত আর আমাকে কিভাবে ভালোবাসলেন সেটাই, তাইনা ?

আরাভ : হুম। কিন্তু তার আগে আমার একটা কথা জানার আছে। আমি যেমন তেমন ভাবেই কি তুমি আমাকে মেনে নিতে পারবে.?

আলিজ : না মানলে কি আমাকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়ের পেছনে ছুটবেন.? দেখুন আমি অতিতে বিশ্বাসী না। তবে এটা বলতে পারি যে আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ এমন থাকলে আমি মানতে পারবো। রইলো বাকি সেদিনের কথা,, সেদিনের কথাটা বলার পর অনেক ভেবেছি। আর এটাও বুঝতে পেরেছি যে আপনার মতো ফ্লট বাটপার চিটারই ঠিক করা আছে আমার কপালে। তবে বেশিক্ষন থাকবে না মনে হয়।

আরাভ আলিজার কথা গুলো হা করে শুনছে। আলিজা এতোটা মিশুকে আর সফট মাইন্ডের আগে জানা ছিলো না ওর। বেখেয়ালে আরাভ ওর কেটে যাওয়া হাতটা দিয়েই কফির মগ ধরলো,, আর আলিজার চোখে পড়লো আরাভের হাতে।


রোজকে নিয়ে বাগানে বসে কফি খাচ্ছে মেঘ। কাঠের মোড়ার ওপর বসে একটা গিটার নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে রোজ। গিটারটা মেঘের। এখানে মেঘের কিছু স্পেসেফিক জায়গা আর জিনিস আছে যেখানে যাওয়ার পার্মিশন কারোর নেই। অথচ রোজ এসে একে একে মেঘের গিটার মাউথারগান সবকিছু টেনে টেনে বের করছে।

রোজ : এগুলো কার..? অনেক সুন্দর #MR_Logo পাশে কি সুন্দর গোলাপের ছবি।

মেঘ : একটা নামকে ভালোবাসতাম তার জন্যই এইসব।তোর ভালো লাগলে তুই নে। ( তোর নামটা যে আমার অনেক কাছের রোজ। কলেজে যেদিন ফার্স্ট আসলি সেদিনই পুরোনো, ঘুমন্ত অনুভুতি গুলো জেগে গেছে। জানিনা কি বলবি তুই। আদৌ মেনে নিবি কিনা আমার মতো ছেলেকে। )

রোজ : বাজাতে পারলে ঠিকই নিতাম। আর আমার ফার্স্ট লাভ তো গিটার। আপিলারও মনে হয় গিটার আছে। যাই হোক তোমার জিনিস তুমি রাখো।

মেঘ আমার পাশে বস আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। রোজ তড়িঘড়ি করে উঠে গেলো মেঘের কাছে,,কিন্তু বসবে কোথায়.? সিঙ্গেল সোফা। রোজ রাগে গাল ফুলিয়ে মেঘকে চিমটি দিলো। মেঘ ওর দিকে তাকাতেই ও ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো “ও কোথায় বসবে.?” মেঘ ফোন আর কফির মগটা পাশে রেখে একটানে রোজকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।তারপর রোজের হাতের ওপর হাত দিয়ে কটগুলো নাড়াতে লাগলো। ওদিকে রোজের মধ্যে অদ্ভুদ ফিলিংস কাজ করছে। ভালো লাগছে তবে লজ্জা টা বেশি পাচ্ছে। কেমন একটি অস্বস্তিও কাজ করছে ওর মাঝে। কেন এমন হচ্ছে.?

মেঘের মুখটা পুরো রোজের কাধের পেছনে। কট সামলাতে গিয়ে মাঝে মাঝে নড়ছে মেঘ আর ওর দাড়ির খোচা রোজের খোলা কাধটাতে। মেঘের দাড়ির খোচায় রোজের হাতপা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তবুও গিটার কিভাবে বাজায় সেটা শেখার লোভে বসে রইলো ও।

ক্রমশ মেঘের টর্চার বাড়তে লাগলো,, আগে দাড়ির খোচা অবধি ছিলো এখন মেঘের গরম নিঃশ্বাস রোজের গলার ওপর পড়ছে। মাঝে মাঝে মেঘের ঠোটের স্পর্শ পাচ্ছে। রোজ চট করে উঠে গেলো। তাতেও মেঘের কোনো হেলদোল নেই।

রোজ : ( ইচ্ছা করে করছিলো সব.. বেয়াদব ছেলে নিজের বউ এর সাথে এসব করবি তা না আমার সাথে করছিস। আচ্ছা তুই কি সত্যি সত্যি অন্য কাউকে বিয়ে করবি.? ধুর কি ভাবছি এসব,, করলে করবে তাতে আমার কি..? কিন্তু তুই আমার কাছে থাকলে আমার এমন লাগে কেন.? কেমন জানি করে বুকের ভেতরটা। উফ আর ভাবতে পারছি না।
রোজ কাম ডাউন। শান্ত হ তুই। যাস্ট রিলাক্স রোজ।)


দূরে দাড়িয়ে সবটা দেখছে কলি। ভিডিও কলে সৌরভও আছে। রোজকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসতে আর ব্লাসিং হতে দেখে অবাক হলো কলি।

কলি : রোজ, মেঘ ভাইয়ার আশেপাশে থাকলেই এমন ব্লাসিং হয়ে হাসে। নরমাল বিহেভ করে। কেন..? মেঘ ভাইয়ার সামনে সেই দাপুটে রোজকে খুজে পাওয়া যায়না।

সৌরভ : দেখো তোমার বদমেজাজি ভাইয়াপুটা আবার আমার ভাইটার প্রেমে ট্রেমে পড়ছে নাকি।

কলি : সেটা সম্ভব না, বুঝলে। রোজ হয়তো অন্য কোনো কারনে হাসছে।
সৌরভ : তুমিই তো বললে মেঘের সামনে গেলেই ওর রূপবদল হয়। তার মানে আমি যা বলছি সেটা ৯৫% সম্ভব হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা প্রেমে পড়ার লক্ষনের আওতায় পড়ে। আগে আমার সামনে আসলে তুমিও রোজের মতো ব্লাসিং করতে। কিন্তু দিন দিন লজ্জাশরম হারিয়ে ফেলছো,, কিভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকাও আমার দিকে। আমার নিজেরই লজ্জা করে।

কলি : ওয়েট ওয়েট ওয়েট কি বললে তুমি..? কি বলতে চাইলে? আমি নির্লজ্জ? যাও আর কথা বলবা না আমার সাথে। ফোনও দিবা হুহহ।

চলবে,,