তুই হবি আমার পর্ব-১৯

0
2003

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__১৯

বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে নিলো সাদিয়া। ড্রইংরুমে সবাই বসে সাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সাদিয়া নিচে নেমে সুমির পাশে বসলো। আরীব মাথা নিচু করে আছে।

সাদিয়া : আরীব আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। একটু ছাদে যাবেন.?

আরীব সাদিয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে ছাদের দিকে হাটা শুরু করলো। সাদিয়াও ও পেছন পেছন যাচ্ছে। বাকিরা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

ছাদের দুপ্রান্তে দাড়িয়ে আছে দুজন। দুজনেই চুপ। আরীব নিরবতা কাটাতে বলে,,

আরীব : কি বলবে বলো।

সাদিয়া ছলছল চোখে পেছন ঘুরে তাকাতেই আরীবের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে। আরীব সাদিয়ার দিকে এগোতেই সাদিয়া পেছন ঘুরে রেলিং শক্ত করে চেপে ধরে। তারপর চাপা কন্ঠে বলে।

সাদিয়া : আমি সাদিয়া চৌধুরি রোজ। কুশান চৌধুরির মেয়ে। আলিজা চৌধুরির বোন। মেঘালয় আহমেদের প্রাক্তন বন্ধু। কুহু আপুদের পিচ্চি রোজ।

আরীব স্থির হয়ে দাড়িয়ে পড়লো। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। সাদিয়া আবার বলতে শুরু করে।

সাদিয়া : সেদিন এক্সিডেন্টের পর দাভাই আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসেছিলো। আমার ট্রিটমেন্ট করিয়েছিলো। ইভেন আমার কিডনি ট্রান্সফারও। আর সবটা জানার পর নিয়ে গিয়েছিলো তার সাথে।

আরীব : ফিরে আসলে কেন.?
সাদিয়া : মেঘরোদ্দুর আর দাভাইকে বাঁচাতে। দাভাই এর বিয়ের দিন আমার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা ছিলো কেন জানো.? সেদিন বাংলাদেশের একটা গ্যাং গিয়েছিলো ওখানে আমার দাভাইকে কিনতে। যদি দাভাই না মানে তাহলে তাকে তুলে নিয়ে যেতে হবে বলে অর্ডার পেয়েছিলো তারা। আমি সিসিটিভি ক্যামেরায় সবটা দেখে নিয়েছিলাম আর ওদের সাথে ফাইটিং করেই হাতে পায়ে ব্যাথা পাই।

আরীব : আর আমি.? আমার ভালোবাসা.?
সাদিয়া : তুমি একজন স্টার আরীব। তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অনেক মেয়ে কাঙালের মতো ঘোরে। তাদের মধ্যে তিনজন তোমার বাবার বন্ধুদের মেয়ে নম্র ভদ্র,, সুশ্রী সুন্দরি। ৫জন #MR কলেজের স্টুডেন্ট তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো। তোমার সাথে ম্যাচ যায়। তাদের মধ্যে একজনকে বেঁছে নিলে কখনো ঠকবে না। গ্যারান্টি আমি দিতে পারি। আর ভালোবাসার কথা বলছো.? আমি আমার জীবনে একজনকেই ভালোবেসেছি সেটা হলো মেঘরোদ্দুর। হয়তো সে বাসে না তাতে কি আমি নিজের দিক থেকে তো ক্লিয়ার। মানুষ একজীবনে সব পায়না আরীব। তুমি চাইলে আমি তোমাকে বিয়ে করে নিতে পারি একসাথে থাকতেও পারবো কিন্তু কখনো ভালোবাসতে পারবো না। আর সেজন্যই আমি এই অনিশ্চিত সম্পর্কে তোমাকে জড়াতে চাইনা।

আরীব : মেঘকে বলেছো.?
সাদিয়া : সে তার জীবনে ভালো আছে। আমি তাকে ঘিরে আর কোনো কথা বলতে বা শুনতে চাইনা আরীব। আমার কাজ শেষ হলেই আমি ইন্ডিয়া ফিরে যাবো সুম্পির সাথে। এই কয়েকটা দিন আমাকে সবার সাথে হেসে খেলে থাকতে দিবে.? আর কিছু চাইনা তোমার কাছে। শুধু এতোটুকুই। প্রথম দিন জিজ্ঞাসা করেছিলে আমি তোমার বন্ধু হবো কিনা আমি বলেছিলাম হবো। সেই বন্ধুত্বটাই নাহয় থাকলো আমাদের মাঝে। আর সাদিয়া নিজের বন্ধুত্ব ভালোভাবে নেভাতে পারে। ডোন্ট ওয়ারি কখনো বিশ্বাস করে ঠকবে না।

আরীব : বন্ধুর থেকে বেশি ভেবেছিলাম। বেশি বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু।
সাদিয়া : বিশ্বাস ভেঙেছি। কি করবো বলো তোমার বিশ্বাস রক্ষার জন্য, তোমাকে ঠকাতে পারবো না আমি। দেখো একটা গুলুমুলু মিষ্টি ভাবি নিয়ে আসবো তোমার জন্য। সরি আমার জন্য। হি হি

আরীব : আগে কেন বলোনি সাদিয়া.? কেন.? আমাকে কি বিশ্বাস করতে পারোনি.?
সাদিয়া : বিশ্বাস করি বলেই সব সত্যিটা শুধুমাত্র তোমাকে বললাম। আর কেউ জানে না।

আরীব : মেঘের বিপদ কি.?
সাদিয়া : মেঘের অপনেন্ট গ্যাংস্টার। যে মেঘের চেয়ে দুকদম আগে চিন্তা করে। মেঘের প্রতিটা স্টেপ আমার প্রতিটা খবর সব রাখে। তবে যে যে জিনিস জানতে পেরেছি তাতে মনে হয় সে এই ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যেই একজন। যাকে সবাই ভালোবাসে বিশ্বাস করে। ইনোসেন্ট ভাবে। তোমার পরিচিতো এমন কেউ আছে.?

আরীব : না। তেমন কাউকে তো অনুমান করতে পারছি না। আচ্ছা তোমার কাজে কি আমি সাহায্য করতে পারবো.?

সাদিয়া : এতো বড় ছ্যাকা খেয়েও সাহায্য করবা.? স্টাররা কতো উদার মনের মানুষ তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না।
আরীব : ভালোবাসার মানুষ হতে পারিনি তবে বন্ধু তো হয়েছি। তাই এভাবে বলে কষ্ট দিও না প্লিজ।

সাদিয়া : কষ্ট পেয়েছো বুঝি.?
আরীব : উহু কষ্টের মাঝেও একটা সুখ আছে। এই ধরো তুমি আজ আমাকে তুমি করে বলছো। নিজ থেকে আমার সাথে মিশছো। বন্ধু ভেবে হলেও নিজের কথা কষ্ট শেয়ার করছো। এটাই অনেক আমার জন্য।

সাদিয়া : তাহলে পুরোটাই শোনো। তবে সবগুলো কথা নোট করবে ঠিক আছে.?
সাত মাস আগে।
১. মেঘদের রিসোর্টে আমার পা কেটে যায়। এবং যে ডক্টর আমার পায়ে ব্যান্ডেজ করেছিলো সে নিখোজ। আমার সাথে দেখা করার পর আর কেউ তাকে দেখেনি। তাহলে সে কোথায়.?

২. আমি যখন এক্সিডেন্ট করি তখন আমি ট্রাকের ড্রাইভারের পেছনটা দেখি। কাপড় বাধা ছিলো মানে তার মুখটা সামনে দিয়ে বাঁধা। এখন কথা হলো মুখ বেঁধে গাড়ি চালানোর কি প্রয়োজন.? আর তার সামনে একটা কালো গাড়ি ছিলো যার ড্রাইভিং সিটেও একজন রহস্যময় মানুষ ছিলো। কারন তার মুখটাও কাপড়ে বাঁধা লুকিং গ্লাসে যেটাে স্পষ্ট।

৩. গাড়ির নাম্বারটা একনজর দেখেই আমার মুখস্থ হয়ে যায়। আমার তখন সেন্স ছিলো। দাভাইকে আমি বলেছিলাম যেন সবাইকে বলে আমি মারা গেছি। সবটা তেমনই হয়েছিলো।

৪. গাড়ির নম্বরের সাথে আজ অবধি কোনো গাড়ির মিল পাইনি। কোনো রেজিস্ট্রেশন ও নাই। তার মানে এটাও কোনো প্লানিং।

৫. আমি জানতে পেরেছি সেদিন মেঘ নাটক করেছিলো। তবে আজ মেঘ আর নুরিন আপু এক হয়েছে। নুরিন আপু এখানে একাই থাকে। ওর ফ্যামিলির সবাই সিলেট থাকে।

৬. মেঘ প্রথম প্রথম আমার জন্য পাগলামি করেছে। অনেককে মেরেছে। আমার প্রতিটা দায়িত্ব ও পালন করেছে। তবে কোথাও ওর কোনো নজর ছিলো না বলে ওর বেশিরভাগ গার্ড নিখোজ।

৭. এপর্যন্ত ঢাকায় চারটা নেতা খুন হয়েছে। যারা ছিলেন সৎ,নীতিবান এবং #mr কলেজেরই ট্রাস্টি ডিপার্টমেন্টের মেমবার। প্রাইভেট কলেজে এমন রূলস নতুন দেখলাম তবে আসল ঘটনা এটাই তাদের মৃত্যু নাকি স্বাভাবিক। ৪জনই হার্টএট্যাক করেছে।

৮. চারজনেরই ছবি দেখেছি সকালে, কলেজে। চারজনেরই হাতে ইনজেক্শনের দাগ। একদম শীরার ওপর যেটা হয়তো সবাই স্বাভাবিক ভেবেছে। তবে আমার চিন্তাশক্তি অন্য কিছু বলছে। যদিও আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট না কারন আমার মাথাব্যাথার জন্য আমি বেশি পড়তে পারিনা।সবাই ফাঁকিবাজ ভাবে আমাকে। তবে আগ্রহ ছিলো অনেক।

৯. এবার আসি সাইন্সের কথায়। একজন ব্যাক্তির হাতের শিরার ওপর যদি বাতাস প্রবেশ করানো হয় তখন তার হাতে ব্লকের সৃষ্টি হয়। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় প্রথমে হার্টের রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয় পরে হার্ট এট্যাক।

১০. শিরাতে বাতাস প্রবেশ করার উত্তম মাধ্যম ইনজেক্শনের চেয়ে আর কোনটা হতে পারে.?

১১. তাছাড়া তাদের ব্যাংক থেকে সমস্ত টাকা গায়েব হয়ে গেছে। ব্যাংকে চেক পাশ হয়েছে কিন্তু বাড়ির কেউ জানে না। তাহলে কে চেক এনেছিলো.? আর তারা কেনই বা চেকে সাইন করছে.? মৃত্যুর ভয় থেকে হলে ওনারা কখনো সাইন করতো না কারন ওনারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আরেকটা কারন হতে পারে যদি চেনা কেউ হয় তাহলে সাইন করতে ইচ্ছা + সাহস পাবেন।

১২. কলেজে মেঘ আরাভ ভাইয়ার অনুপস্থিতে আয়াশ কলেজের খেয়াল রেখেছে। ছেলেটা ভালো তবে ঘাড়ত্যারা জেদি। আর মেঘদের খুব ভালোবাসে। ও কলেজের সবাইকে দেখে রেখেছে বলেই কলেজের কোনো সমস্যা হয়নি। তবে তোমার বাবা মানে স্যারের কিছু ফাইল চুরি হয়েছে। কিসের ফাইল সেটা অবশ্য স্যার আর মৃন্ময় আংকেল ছাড়া কেউ জানে না। পিয়ন আংকেল মুখ ফসকে বলে ফেলেছে এটা।

১৩. এবার আসি আমার কথায়। আমি যখন থেকে এখানে এসেছি তখন থেকে খেয়াল করছি তোমাদের বাড়ির সামনে কিছু মানুষ ঘুরঘুর করছে। তোমাদের দেখলেই সরে যাচ্ছে। আর আমাকে ফলো করছে। ইন্টেরেস্টিং রাইট।

১৪. এটা যে আমাদের পরিচিত কেউ সেটা বুঝতে পেরেছি তার ভুলে। কারন সে এমন একজন যে আমাদের সবার পার্সোনাল জিনিস এবং প্রিয় মানুষদের চেনে। সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসের ব্যাবহার করতে জানে। মেঘ আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করেছিলো বলে ওর মেন্টালি + সিক্সথ সেন্স উইক হয়ে গেছে। তাই সবার আগে আমাদেরকে মেঘকে আগের মতো করতে হবে।

১৫. সে যেই হোক না কেন তার শত লক্ষ্যের মধ্যে আমি একটা। এটা এজন্য বললাম যে আজ আমার গাড়ির ব্রেক ফেইল হয়ে গেছিলো। আমি কোনোমতে গাড়িটা সাইড করে দেওয়ালের সাথে বারি খাই। মেবি আধাঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে আমার তাও একজনের ছিটানো পানির কারনে। সে বলে আমার গাড়ি ঠিক আছে। তবে আমি যেন কলেজে না যাই। এটা কেন বলবে.? আমি কলেজে গেলে কার সমস্যা.? আর সে জানলোই বা কি করে যে আমি কলেজে যাচ্ছি.? এটা একমাত্র সুম্পি জানবে। মেঘ আমার কল ট্রাক করে এসেছে। তুমিও এসেছিলো মেঘের পেছনে কারন তোমার গাড়িও আমি দেখেছি। তাহলে সে.? হ্যা সে আসতে পারবে যদি মেঘের আশেপাশে সে থেকে থাকে। তাহলে বলতেই হবে সে আমাদের পরিচিত।

আরীব : এতোকিছু.? কিভাবে ভাবো.? মাথা ঘুরছে।
সাদিয়া : আমার প্রথম সন্দেহ তুমি ছিলে। তাই তোমার জামার বোতামে আমি ক্যামেরা সেট করে রেখেছিলাম। কিন্তু এসে ফুটেজ চেক করে দেখলাম এখানে তোমার কোনো ভুমিকা নেই।

সাদিয়ার কথায় গাল ফুলিয়ে তাকালো আরীব। তারপর মিনমিনে গলায় বললো।
আরীব : ওয়াসরুমে গেছিলাম একবার।

সাদিয়া : হি হি দেখিনি কিছু। আমার দেখার প্রয়োজন নাই বুঝলা।
আরীব : এতো বুদ্ধি নিয়ে রাতে ঘুমাও কিভাবে.? ভাগ্যিস তোমাকে বিয়ে করিনি। বাইরে এফেয়ার করলে ধরা খেয়ে যেতাম। পরে তো পানিশমেন্ট।

সাদিয়া : যা যা বলেছি তা কাওকে বলো না প্লিজ। আর হ্যা আরেকটা কথা। সবার সামনে আমাকে নিয়ে কেয়ারিং লাভিং কোনো কথা বলার দরকার নাই। তাহলে কিন্তু সবার সব রাগ, তোমার ওপর বৃষ্টির মতো ঝরে পড়বে

আরীব : তোমার পেছনেই সবাইকে ঘুরতে হয়.?পৃথিবিতে কি আর কোনো মেয়ে নাই.?

সাদিয়া : হি হি। সব অন্ধ। চোখের সামনের হিরা না দেখে দূরে ডাইমন্ডের খোজে যায়। আর আমার রেগুলার কাজ হয়ে গেছে সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে হিরা আর কাঁচ চেনানো।

আরীব : তুমি কাঁচ.? বেশ ভালো বললে তো।
সাদিয়া : আমাকে কাঁচ মনে হয়.? তুমি তামা পিতল।

আরীব : নিজেই তো বললে হিরা আর কাঁচ চেনাও।
সাদিয়া : ভালোমন্দের কথা বলছি। আর আমি সবার জন্য পার্ফেক্টও না। বুঝলে। এবার ১৬পাটি দাঁত বের করে ক্লোজ আপ হাসি দিতে দিতে নিচে চলো। দেখি ওখানে কি অবস্থা।

আরীব : তোমার ১৬পাটি দাঁত আছে.? আক্কেল মাড়ি উঠছে.? আমার তো মনে হয় দুইতিনটা নড়তেছে এখুনি খুলে পড়বে। বাচ্চা বুড়ি।

সাদিয়া : ( কষ্ট পাচ্ছো জানি। তবে চিন্তা করোনা আরীব সব ঠিক করে দিবো আমি। তোমার এই মিথ্যা হাসিখুশি মুখটা সত্যে পরিনত করবো।) তবে রে…

আরীব দৌড়ে নিচে চলে গেলো আর সাদিয়া ওকে ধরার জন্য ছুটছে।

পরদিন সকালে গোসল করে ব্যালকোনিতে কফিমগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে সাদিয়া। ঠিক তখন মেঘ নুরিন আসলো। মেঘ সাদিয়াকে দেখে নুরিনের হাত ধরে হাটতে লাগলো। নুরিনও নাটক চালিয়ে যাচ্ছে। সবাই গার্ডেনে বসা ছিলো মেঘও গিয়ে ওদের সাথে যোগ দিলো।

মেঘ : কি করছো সবাই.?
কুহু : আরে ফাংশনে কে কি করবে সেটা ডিসাইড করছি। তুই কি করবি.? গান গাইবি.?

মেঘ : হাটট। বাড়িতে সিঙ্গার থাকতে আবার আমার গান.?
সুমি : বেবি তো গাইবেই। কিন্তু কুহু চায় সবাই কিছু না কিছু করুক। আমি ভারতনাট্যম আর ক্লাসিক্যাল ডান্স করবো। আরীব বলছে ডার্ম বাজাবে। ওর কাজের ফাঁকে। আরাভরাও আসবে।

বলতে না বলতেই গেট দিয়ে ঢুকলো আরাভ, আলিজা, রওশন,ঈশা,কলি,সৌরভ। সাদিয়া সবাইকে দেখে রুমে চলে যায়।

কলি : হ্যালো গাইজ।
কুহু : তোমরা এসে গেছো। আসো বসো। আজ তোমাকে আমার ভাবির সাথে পরিচয় করাবো। জানো হয়তো, যে ও টোটালি রোজের মতো দেখতে।

আলিজা : সেজন্যই তো সকাল সকাল আসলাম। ওকে ডাকো না প্লিজজ।

সাদিয়া : সুম্পি আমার ব্যাগ টা তোমার কাছে আসলো কিভাবে.? আর আরীব বাইরে বাইকটা কার.?

আরীব : আমারই। সাদিয়া ওরা আমার বন্ধু।
সাদিয়া : পরে পরিচিতো হবো আরীব। বাইকের চাবিটা দাও। আমাকে একটা কাজে যেতে হবে।

আরীব : কি কাজ।
সাদিয়া : চারজনের কথা বলেছিলাম না.? ওই টাকাটা পাওয়া গেছে। তাই একটু যেতে হবে। চাবি দাও

আরীব চাবি দিতেই সাদিয়া চলে গেলো। সবাই ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

রওশন : রোজ আমাদের দিকে একবার তাকালোও না। স্ট্রেঞ্জ
আরীব : ও রোজ না। রোজের মতো দেখতে। ওর নাম সাদিয়া আমার ফিয়ান্সি। আর এই হলো সুমি ওর ভাবি।

একদিকে ওদের পরিচয় পর্ব শুরু হয়েছে অন্যদিকে সাদিয়ার প্রশ্নত্তর । একটা গোডাউনে কিছু ছেলেকে আটকে রেখেছে সাদিয়ার লোক। এদেশে ৭মাস ধরে ওরাই সাদিয়ার সমস্ত কাজ করে। তবে সুযোগ থাকলেও সাদিয়া কখনো পরিবারের খোজ নেয়নি।

সাদিয়া : টাকাগুলো কোথায় পেছেছিস.?
১ম ছেলেটি : দুজন এসে আমাদের কাছে রাখতে দিয়েছে। আমাদের টাকা না। আমরা কিছু জানি না। আমাদের ছেড়ে দিন।

সাদিয়া : ওরা রাখতে দিলো আর তোরা রেখে দিলি.?
২য় ছেলেটি : আমার আম্মু অসুস্থ। টাকার প্রয়োজন ছিলো। টাকার লোভে এমন করেছি।আমরা সত্যিই কিছু জানি না।

সাদিয়া : কত টাকা.?
২য় ছেলেটি : আমাদের সবার মোট মিলিয়ে ৪০ লাখ। আমাদের সবারই সমস্যা আছে। ওরা বলেছিলো আমাদের টাকা দেবে।

সাদিয়া : সবটাকা আমি দেবো। তোমরা শুধু ওদের স্কেচ বানাতে সাহায্য করবা। ওরা যেমন ছিলো ঠিক তেমন বর্ননা দিবা।
৩য় ছেলেটি : পারবো ম্যাডাম। কিন্তু ওরা যদি আমাদের।

সাদিয়া : কারোর কিছু হবে না। গার্ডস ওদের থেকে স্কেচ বানিয়ে আমার কাছে পাঠাবে। আমি আসছি।

গার্ডস : অকে ম্যাডাম।

বাড়ি ফিরে সোজা গার্ডেনে গেলো সাদিয়া। সবাই এখনো আড্ডা দিচ্ছে। সাদিয়াকে দেখে কুহু ওকে গান গাওয়ার জন্য চেপে ধরলো। প্রথমে না না করলেও পরে রাজি হয় ও।

সাদিয়া : গাইবো তবে গিটার লাগবে। বিকজ গিটার আমার ফার্স্ট লাভ। ওকে ছাড়া আমার গান সম্পূর্ন হয়না।

মেঘ : অদ্ভুদ। আলিজা তোমার বোন রোজও তো সেইম কথা বলতো তাইনা.? রোজের মতো দেখতে সবার নেচারও সেম। ইন্টেরেস্টিং।

আরীব : এই নাও গিটার। আর হ্যা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গাইতে হবে কিন্তু। দেখতে চাই কতটা ভালোবাসো আমাকে।

সাদিয়া :ডান।
আরীব : মেঘ জ্বলবে আজ। ( সাদিয়ার কানে কানে বলতেই মুচকি হাসলো ও। তারপর কট ঠিক করলো )

সাদিয়াঃ
প্রাণ দিতে চাই মন দিতে চাই সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে ওওও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে ওওও তোমাকে
জেনেও তোমার আখি চুপ থাকে রোজ দুই ফোটা যেন আরো ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারে বারে।
তোমাকে ওওও তোমাকে
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে,
বুকের মাঝে জাপটে জরিয়ে ধরবো তোমাকে
পথ চেয়ে রই দেরি করো না যতই আর ভোলা যাবে না জীবনে কখনোই
তোমাকে ওওও তোমাকে
তুমি হাসলে আমার ঠোটে হাসি, তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে, বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি
সব চিঠি সব কল্পনা জুরে রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সে রং দিয়ে তোমাকে আঁকি আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।

সাদিয়া আরীবের চোখের দিকে তাকিয়েই পুরোটা গাইলো। মেঘ রাগে উঠে গেলো।

সাদিয়া: এই যে মেঘ ভাইয়া ফ্রিতে গান শুনলেন কিন্তু কোনো কমপ্লিমেন্ট দিলেন না তো।

রওশন : তো আপনি কি বরাবরই ইন্ডিয়াতে থাকেন.?

সম্রাট : জি। ও বরাবরই ইন্ডিয়াতে ছিলো।

সম্রাট হেটে আসছে ওদের দিকে। সম্রাটকে দেখে সাদিয়া দৌড়ে গিয়য়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। সম্রাট সাদিয়ার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে সুমিদের সামনে আসলো। গতকাল সুমি বলেছে সাদিয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই আজই তাড়াহুড়ো করে সম্রাট চলে এসেছে।

সাদিয়া : এটা আমার দাভাই। দ্যা গ্রেট সম্রাট খাঁন।
রওশন : আমি চিনি ওনাকে। তো মিস্টার খাঁন আপনার কাছে কোনো প্রুভ আছে ও আপনার বোন.?

সম্রাট : অফ কোর্স। এখানে সব সার্টিফিকেট, রিপোর্ট কার্ড & কিছু ডকুমেন্ট আছে। দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন ও সাদিয়া কিনা। আসলে বোন বললো ওকে আপনারা আপনাদের বোনের সাথে ঘুলিয়ে ফেলছেন তাই এগুলো আনলাম।

সাদিয়া : ওখানে আমার ক্লাস টু থেকে সবকিছু আছে।

আরীব পেপার হাতে নিয়ে অবাক। সব ডকুমেন্ট আছে। ফেক ডকুমেন্ট বানানোর চান্সই নাই। সব রেপুটেডেড স্কুল। আর সব ইনফর্মেশনই তারা কালেক্ট করে রাখে ছবিসহ। আর সম্রাট মিথ্যা বলবে না এটা জানে রওশন।

ঈশা : ও সত্যিই সাদিয়া.?
রওশন : হ্যা। আর হয়তো আমি সাদিয়াকে বাংলাদেশেও দেখেছি ৮-৯মাস আগে সম্রাটেরই গাড়িতে। ভেবেছিলাম ভুল দেখেছি কিন্তু না সব সত্যি।।আর আজ প্রমানও পেলাম।

কুহু : এটা কিভাবে সম্ভব.? সব ঠিক থাকলে রোজের সাথে ৭মাস আগে দেখা হবে ওনার।

সম্রাট : বছরখানেক আগে লন্ডনে আপনার গেট টুগেদারে তো আমার বোনও ছিলো রওশন। আমাদের ছবিও হয়তো আছে আমার কাছে। ওয়েট দেখাচ্ছি। এই দেখুন। চাইলে নিজের হোটেলের ফুটেজ চেক করতে পারেন

সম্রাট ফোন বের করে একটা ছবি দেখালো যেখানে সম্রাট আর রওশনের পেছনে দাড়িয়ে ড্রিংকস করছে সাদিয়া। সবাই ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। আরীব সন্দেহের চোখে সাদিয়ার দিকে তাকালো সাদিয়া ইশারায় চুপ থাকতে বললো। কিন্তু আরীব সাদিয়ার হাত টেনে কিছুটা সরে গিয়ে দাড়ালো।

আরীব : এসব কি.? কিভাবে সম্ভব এটা.?আর কতো মিথ্যা সাজাবে.? পরে তো তোমাকে রোজ হিসাবে কেউ বিশ্বাস করবে না।

সাদিয়া : দাভাই যা বলছে যে ডকুমেন্ট দেখাচ্ছে সব সত্যি। দাভাই এর কথার মাঝে কোনো মিথ্যা নাই। আর ছবিগুলোও সত্যি। দাভাই এর বোন ছিলো। হ্যা, ছিলো সাদিয়া খাঁন।

চলবে,,