তুমি আমি দুজনে পর্ব-৩০+৩১

0
376

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩০

-তুরা? এই তুরা উঠছো না কেনো? কয়টা বাজে হুস আছে?

মনোমুগ্ধকর কণ্ঠস্বর কানে শব্দতরঙ্গের ন্যায় অপরূপ শোনাচ্ছে, ভরাট কণ্ঠের মাধুর্য টা একটু বেশিই যেনো। মন চাচ্ছে বারবার শুনতে। এমন শিথিল স্বরের ডাকে ঘুম ভাঙা দূর, আরও আরামের গাঢ় ঘুম নেমে এলো তুরার চোখে। দু চোখ জুড়ে ঘুমের রাজত্ব, খুলে তাকানো দায়। গায়ের কাঁথাটা আরেকটু টেনে নিয়ে আরও ভালো ভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করলো তুরা।
কিন্তু তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলিষ্ঠ হাতের টানে কাঁথাটা গা থেকে সরে গেলো। তুরা কিছু বুঝে উঠার আগেই হাত ধরে এক টান দিয়ে তুলে বসালো ওকে। হতবুদ্ধির মতো পিটপিট করে তাকালো তুরা, এখনো ব্যপার টা বোধগম্য হলো না ওর,,সে তো শুয়ে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলো,তাহলে এভাবে উঠে বসলো কি করে? আরামের ঘুমটা এমন আকস্মিক ভেঙে যাওয়ায় তুরা প্রচন্ড বিরক্তিতে চোখ কুচকে বলল

-কোন ব’জ্জাতের ব’জ্জাত আমার ঘুমটা এভাবে ভাঙালো? কি দারুণ একটা স্বপ্ন দেখছিলাম

-দুই মিনিটের মধ্যে উঠে ফ্রেশ না হলে এবার ঠ্যাং ও ভাঙবে

কাঠ কাঠ গলার গা হীম করা বাক্যে চমকিত দৃষ্টিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তুরা, আহান ড্রেসিং টেবিলে হেলান দিয়ে রেশপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। কিন্তু তুরা আহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চোখ কেমন ঝাপসা হবে এলো। আস্তে আস্তে পুরোটা বুঝে আবারও থপ করে শুয়ে পরলো।
আহান কপালের ভাঁজ আরও সূক্ষ্ম করে তাকালো তুরার দিকে,মুখে অল্পবিস্তর বিস্ময়, মেয়েটাকে তুলে বসিয়ে দেওয়ার পরেও ঘুমিয়ে গেলো? এত ঘুম কোথায় পেলো মেয়েটা? তাও আবার ড্যাপড্যাপ করে চেয়ে থাকতে থাকতেই থপ করে শুয়ে পরলো।
আহান কপালের সূক্ষ্ম ভাঁজ আরও সূক্ষ্মতম করে এগিয়ে দাঁড়ালো তুরার সামনে, এই মেয়ে এভাবে উঠবে নাহ। আচানক গায়ের উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে কোলে তুলে নিলো তুরাকে, ঘুম ভেঙে তুরা বিহ্বলিত, এটা কি হলো! ঘুম থেকে উঠে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ায় তুরার ভাবাবেগ কাজ করা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু আহান সেদিকে নূন্যতম ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে তুরাকে কোলে নিয়েই গটগট করে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরলো।
ভেতরে এনে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে গমগমে গলায় বলল

-১০ মিনিট টাইম দিলাম, ফেশ হয়ে একদম রেডি হয়ে বেরোবে, আমি নিচে অপেক্ষা করছি ভার্সিটি পড়াশোনা সব তো লাটে তুলেছে

বলেই বেরিয়ে গিয়ে দরজা টেনে দিলো। তুরা আর সেদিকে মনভাবনা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো নাহ,আরামের ঘুম তার অলরেডি ভেঙেই গেছে। চুপচাপ ব্রাশ করে একবারে শাওয়ার নিয়ে নিলো। কিন্তু বিপত্তি তো ঘটলো এবার। ধুপধাপ করে শাওয়ার তো নিয়ে নিলো কিন্তু এবার কি করবে, লোকটা তাকে তুলে এনে ওয়াশরুমে রেখে গেলেও জামা কাপড় তো বাইরেই আছে, এবার এ অবস্থায় শুধু তোয়ালে পেঁচিয়ে বেরোবে কি করে।
ওয়াশরুমের দরজা টা হালকা খুলে মাথা বের করে চুপ করে পুরো ঘরে চোখ বুলালো তুরা। যাক, হাজারো শুকরিয়া! লোকটা ঘরে নেই। দরজা টাও ভিড়িয়ে রাখা।
তুরা আস্তেধীরে গুটি গুটি পা ফেলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের জামা কাপড় বের করে পরে নিলো। ঘরে যেহেতু কেও নেই তাই আর দোবারা ওয়াশরুমে না ঢুকে ওখানেই পোশাক পরিধান করে একবারে রেডি হয়ে বেরোলো।

কিন্তু নিচে নামলেও এদিক সেদিক তাকিয়ে আহানকে কোথাও দেখতে পেলো নাহ। সকলে নাস্তার টেবিলে বসেছে,তুরা গিয়ে নিজের আসনে বসতেই জায়মা ওকে জিজ্ঞাসা করলো

-একেবারে রেডি হয়ে বেরোলে যে,কোথাও যাবে নাকি ভাবি?

-ভার্সিটিতে

চোখ মুখ কুচকে বলল তুরা, যার কপালে এমন ব’জ্জাত বর জুটেছে তাকে তো বাড়ি ভর্তি মেহমান ,আমেজ ছেড়ে ভার্সিটিতেই ছুটতে হবে।

-সে কি, রাই আপু তো এখনও এখানেই। বিয়েই তো শেষ হলো না অথচ আজই তুমি ভার্সিটি যাবে

-বিয়ে শেষ হলোনা তো কি? এখনও কি নাচানাচি বাদ আছে?

চেয়ার টেনে তুরার পাশের স্থানে বসতে বসতে বলল আহান। আহানের কথায় উপস্থিত সকলের কপালে ভাজ পরলো। সবেমাত্র বিয়ে শেষ হতেই আহান নিজে তো ভার্সিটিতে যেতে প্রস্তুত। সাথে তুরাকেও যে সেই ধরে এনেছে তা ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখেই স্পষ্ট।

-মাত্র কাল বিয়ে শেষ হলো আহান। দুটো দিন বাদে গেলে হতো না?

-তিনদিন অলরেডি পাসড বাবা, আর কয়দিনের কথা বলছো তুমি। আমি প্রফেসর হয়ে যদি বিয়ে খেয়েই সপ্তাহ পার করি তাহলে ব্যাপার টা কতটা দৃষ্টিকটু বুঝতে পারছো?

আহানের নির্লিপ্ত স্বরের কাঠিন্য ভরা উত্তরের প্রেক্ষিতে ইনসাফ কিছু বলার আগেই আমেনা খাতুন বলল

-সে না হয় বুঝলাম। কিন্ত নাতবউকে যদি আর দুটো দিন..

তার আগেই আহান আমেনা কে থামিয়ে বলল

-ওর হয়ে আর তদারকি করবেই না কেও। আস্তো ফাঁকিবাজ, পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফেইল করার ধান্দায় আছে ও

বলেই গ্লাসের জুস টা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বলল

-দুই মিনিটের মধ্যে পার্কিং এ এসো,অলরেডি লেইট ফর ইউ

বলেই গটাগট হাঁটা ধরলো, তুরা যাওয়ার পানে চেয়ে হাতে রাখা রুটির ছেড়া অংশ টা প্লেটেই রেখে ঢকঢক করে পানি গলাধঃকরণ করে উঠে দাঁড়ালো। আপাতত খাওয়ার ইচ্ছে তার এমনেও নেই,সকালে উঠেই খেতে একদম ভাল্লাগে নাহ,আর পেয়েও গেলো একটা বাহানা।
ব’জ্জাত বর টার ধমকের দোহায় দিয়ে উঠে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে উঠে বসতেই আহান স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে বরাবরের মতোই তীব্র বেগে ছুটিয়ে নিলো। পনেরো মিনিট পরেই গাড়ি এসে ব্রেক করলো ভার্সিটির গেইটের একদম সামনে। তুরা আহানের চেহারা পানে একবার চেয়েই গাড়ির দরজা খুলে ছুটে ভেতরে চলে গেলো।

বেশ দিন কয়েক বাদে আসায় তুরার নিজেরও বেশ প্রফুল্ল লাগছে। যত যাই হোক,ভার্সিটিতে আসলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। আর ওই দুজন তো আছেই। ওদের কথা মনে হতেই তুরার হাঁটার গতিবিধি আরও বাড়িয়ে এক প্রকার ছুটেই গেলো ক্লাসরুমে। আর আশানুরূপ কাঙ্ক্ষিত পছন্দের মুখ দুটোর দেখাও পেয়ে গেলো। উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে যেতেই ফারিহা তুরাকে দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরে বলল

-আরে ডিয়ার, এতদিন,এতদিন পর আসার সময় হলো তোর?

-তিনদিন তো মাত্র

তুরা হেয়ালি ভাব ধরে বলল ফারিহাকে, ফারিহা তুরার বাহুতে চা পড় বসিয়ে দিয়ে বলল

-তিনদিন তোর মাত্র মনে হলো বদমাশ, কই উবে গেছিলি তুই, লাস্ট দিন আমি আসিনাই পরে এসে দেখি তোর ই আর কোনো খোঁজ খবর নেই।

-সেই তো,কি হয়েছিলো তোমার? তুমি কি সিক ছিলে তুরা?

ফারিহা আর সাদমানের একসাথে বিরতিহীন প্রশ্নে তুরা ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ধপ করে বসলো বেঞ্চিতে

-আমাকে বসতে তো দে ভাই, বলছি। আমার বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিলো। তাই আসতে পারিনি আর

বাকিটা বলার আগেই ফারিহা আর সাদমান নিজ আসলে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। মাহিদ সকলকে গুড মর্নিং জানিয়ে বসার অনুমতি দিতেই চুপচাপ বসে পরলো সকলে।
কথার মাঝপথে মাহিদ স্যারের আগমনেই চুপ করে গেছে তুরা সহ অন্যেরা। কিন্তু তুরা এসে থেকে একটা জিনিস লক্ষ্য করছে যে আশেপাশের মেয়েরা তার দিকে কেমন ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। বিশেষ করে সামনের বেঞ্চিতে বসা ওই রিফা আর তা গ্যাঙের মেয়েরা একটু বেশিই আড়চোখে তাকাচ্ছিলো।
ক্লাস শুরু হতেই আর সেসবে মন দিলো নাহ।
মাহিদ স্যারের পর ক্রমান্বয়ে পরপর দুটো ক্লাস শেষ হতে বেল বাজলো। সকলে একে একে বেরোতে নিলে রিফা নামের মেয়েটা এসে দাঁড়ালো তুরার সামনে, হঠাৎ এমন আগমনে তুরা বেশ হকচকিত হয়ে তাকালো। সামনে দাঁড়ানো রিফা সহ তার দুই চামচা আগাগোড়া তুরাকে পরখ করে বলল

-তুরা রাইট?

-হুম

মেয়েটা তুরার দিকে সরে এসে বলল

-আহান স্যারের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

আকস্মিক প্রশ্নে তুরা হকচকিয়ে গেলেও বাইরের অভিব্যাক্তিতে তা প্রকাশ করলো নাহ। মুখে স্থিরতা বজায় রেখে বলল

-এমন প্রশ্নের কারণ?

-যা বলেছি উত্তর দাও

চোখ মুখ শক্ত করে বলল রিফা। তুরা ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বলল

-নিজের পারসোনাল ব্যাপারে কাওকে কৈফিয়ত দেওয়া আমি পছন্দ করিনা

বলে ফারিহার দিকে চেয়ে ওকে বেরোনোর জন্য ইশারা করে ব্যাগ টা কাধে তুলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। সাদমান আর ফারিহা কিছু না বুঝলেও তুরার ইশারামত ওরাও বেরিয়ে এলো।
তুরার যাওয়ার পানে চেয়ে রিফার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বলল

-তেজ দেখেছিস মেয়ের

-তেজ যতই থাকুক রিফা চুটকি মেরে সব উড়িয়ে দেবে। যাস্ট ওয়েট এ্যান্ড ওয়াচ!

বলেই একটা ক্রুর হাসি দিয়ে চলে গেলো।
ওদিকে সাদমান আর ফারিহা এসেছে বসেছে মাঠের বড় গাছটার নিচে তুরার সাথে।

-ওই রিফাটা কিসব বলছিলো তুরা? আহান স্যার তোর কি হয় মানে?

রিফার প্রশ্নে যতটা না হতবাক হয়েছিলো ফারিহার প্রশ্নে তার চেয়ে বেশি বিচলিত হলো তুরা। শুরু থেকে তাদের কাছ থেকেও বিয়ের ব্যাপার টা গোপন ই রেখেছে সে, কিন্ত এখন কি উত্তর দেবে এ ভাবনায় তার কপালে ভীষণ চিন্তার ভাঁজ পরলো

-তুরা, কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলবো?

সাদমানের প্রশ্নে ধ্যান ভাংলো তুরার, ঘাড় নাড়িয়ে মৌন সম্মতি দিয়ে সাদমানকে হ্যাঁ সূচক অনুমতি দিলে সাদমান বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল

-একটা কথা আমিও জানতে চাই, আহান স্যার আসলেই তোমার কি হন?

সাদমানের প্রশ্নে তুরার বিহ্বলতা ছাড়িয়ে ফারিহা বলল

-তুই ও একথা বলছিস?

চোখের চশমা টা ঠেলে উপরে তুলে দিয়ে চোখে মুখে গুরুগম্ভীর ভঙ্গিমা বজায় রেখেই সাদমান বলল

-কারণ আমি নিজেও তুরাকে বার কয়েক আহান স্যারের সাথে দেখেছি

সাদমানের প্রশ্নে তুরা, চোখ বুজে ঢক গিলে নিলো একবার,সে যেটা আন্দাজ করেছিলো সেটাই হলো।

-কি যা তা বলছিস? তুরা এসব কি বলছে সাদমান?

-আমি প্রথমে দেখার ভুল ভেবে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু আজ সকালেও আমি ক্লাসের জানালা দিয়ে তোমাকে আহান স্যারের গাড়ি থেকে নামতে দেখেছি

সাদমানের কথায় ফারিহা বিস্ময়ের চূড়ান্তে গেলেও তুরা চোখ মুখ স্বাভাবিক ই রেখেছে। প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে ফারিহা তুরার দিকে চেয়ে ওর হাত ধরে বলল

-তুই চুপ করে আছিস কেনো তুরা? কি লুকাচ্ছিস আমাদের থেকে?

•••

-তুমি কি সিউর মাহিদ?

-কতটা সিউর বলতে পারছিনা মা, তবে আমার স্মৃতিশক্তি এতটাও দূর্বল নাহ। তবুও আমি অনেকটা সময় নিয়েই অবজার্ব করেই ব্যাপার টা তোমাকে জানাচ্ছি

-যদি তাই ই হয় তবে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেও হবে না মাহিদ, আমি আজই তোমার বাবাকে বলে ফ্লাইটের টিকিট বুক করাচ্ছি। কালকের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরবো আমি।

-ও তো আমাকে চিনতেও পারেনি মা

মাহিদ সামান্য হেসে বলল। প্রত্যুত্তরে অপরপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভদ্রমহিলা জবাবে বলল

-কি করে চিনবে বলো তো, বছর তো কম পেরোই নি। দোষ তো আমাদেরই, তোমার বাবার অসুস্থতা নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে বছর পার হয়ে গেলেও এ দেশের খোঁজ রাখতে পারিনি। ভারি অন্যায় হয়ে গেছে বাবা

বলেই ক্লান্ত স্বরটা ধরে আসলো। অবিশ্রান্ত আখি যুগল থেকে দু ফোঁটা অশ্রুজল গড়িয়ে পরলো। মাহিদ এপাশ থেকেও মায়ের নিঃশব্দ কান্না ঠাওর করলো মুহুর্তেই, তাকে আস্বস্ত করে বলল

-চিন্তা করো না মা, ও ভালো আছে, আমার চোখের সামনেই আছে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো তারপর আমরা ওকে নিজের কাছে নিয়ে নেবো

অপরপাশ থেকে ভদ্রমহিলাও ছেলের কথায় সম্মতি দিয়ে ফোনটা লাইনচ্যুত করলো। বুক ভরে শ্বাস ছাড়লো মাহিদ। মায়ের দেওয়া দ্বায়িত্ব টা সে প্রায় পালন করে ফেলেছে, আর একটু মাত্র তারপরেই সে মায়ের মুখে হাসি নিশ্চিত ফুটাবে।

-আই ফাউন্ড ইউ মাই ডল,,লাস্টলি!

•••

-আহান স্যার! তোর স্বামী? তুরা কি বলছিস তুই? তুই নিজে পাগল হয়েছিস নাকি আমি পাগল হয়েছি?

-কেও কিছুই হয়নি। যা সত্য তাই তো বলেছে আর কত রিয়েক্ট করবি ভাই!

-সাট আপ! আমার একমাত্র বান্ধবী কিনা বিবাহিত, তাও আবার আমার ক্রাশড স্যারের বউ। আর আমি রিয়েক্ট করবো নাহ। তুই চুপ কর টিনম্যান
ফারিহার কথায় চোখ কুচকে নিলো সাদমান। তুরা সবটা বলার পর থেকেই মেয়েটা এমন করেই যাচ্ছে, মানছে ব্যাপার টা অনেক বেশিই সারপ্রাইজিং কিন্ত তা বলে এতটা রিয়েক্ট করতে হবে!
তুরা চুপচাপ ফারিহার কান্ডকারখানা দেখছে। তুরা বিবাহিত এটা নিয়ে কম ওর ক্রাশ বিবাহিত এ নিয়ে বেশি দুঃখ হচ্ছে যেনো ফারিহার। আরও বার কয়েক উদ্ভট অভিব্যক্তি দিয়ে বলল

-কি আর করার, বিয়ে যখন হয়েছেই,আর তুই যখন বউ,তাইলে মেনেই নিলাম

মেকি কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বলে, হুট করে তুরার একদম কাছে ঘেঁষে এসে বলল

-আচ্ছা আহান স্যার কেমন রোমান্টিক দোস্ত? মানে তোকে আদর টাদর করে তো?

ফারিহার মুখের এমন লাগামছাড়া কথায় তুরা হকচকিয়ে সাদমানের দিকে তাকালো, বেচারা ভ্রু জড়ো করে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছে। তুরা কোনো মতে ওর দিকে চেয়ে মেকি হেসে ফারিহার দিকে চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করে বলল

-কি যা তা বলছিস, চুপ কর,তেমন কিছুই নাহ

-ওমাহ কেনো তেমন কিছু না,তুই না বউ স্যারের

তুরা ফারিহার অসংযত কথায় পাগল হবার জোগার।তবুও শান্ত ভাবে বলল

-দেখ আমাদের বিয়েটা আর পাঁচটা বিয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। আর তুই যা বলছিস এসব তো..

-এসব তো কি ঠিকই তো বলেছি আর তুই

ফারিহা বকবক করতে নিলেও তুরা হাতঘড়ির দিকে তাকিয়েই চোখ দু’টো রসগোল্লার মতো বড় বড় করে বলল

-সর্বনাশ! একটা বেজে গেছে আর আমি টের ও পাইনি? তুরা তু তো গায়ি

বলেই ব্যাগ হাতে নিয়ে এক দৌড় লাগালো। পেছন থেকে ফারিহা ডাকলেও ‘কাল দেখা হবে ‘ বলেই হাত নাড়িয়ে দৌড় লাগালো তুরা।
ছুটন্ত গতিতে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলেও অদূরেই দাঁড়িয়ে থাকা আহানের গাড়িটা দেখে ভ্রু জড়ো হলো তুরার। উহু, ভ্রু জড়ো হবার কারণ আহান বা তার গাড়ি নয়, বরং তার সাথেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেমা।
‘পেত্নীটা এখানেও হাজির’
বিড়বিড়িয়ে এগিয়ে গেলো তুরা। আহান চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে, আর প্রেমা ননস্টপ ঢঙ্গের বকবক করেই যাচ্ছে। তুরা ব্যাগ টা দু’হাতে ঝাপটে ধরে এগিয়ে গাড়ির সামনে যেতেই আহাম ধমকে উঠলো

-এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি? এত দেরি কেনো হলো তোমার?

আহানের ধমকে তুরার ভাবাবেগ হবার আগে প্রেমা চমকে যায়, পকপক থামিয়ে চুপ করে গেলো। তুরার থেকে উত্তর না পেয়ে আহানের মেজাজ চড়াও হলেও তা দমিয়ে বলল

-এখন এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়িতে ওঠো, তোমার জন্যে আধঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি

গম্ভীর কণ্ঠেস্বরে তুরা মুখ ফুলিয়ে গাড়ির পেছনের সিটের দরজা খুলতে গেলেই আহান ক্রুদ্ধ হয়ে দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল

-আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়, সামনে বসো

কিন্তু এবার আহানের ধমকে তুরা নয় চুপসে গেলো প্রেমার মুখ। তুরাকে ঝারি দিতে দেখে বেশ আনন্দ হচ্ছিলো তার। গাড়ির সামনের দরজা টা খুলতে গেলে আহানের তুরাকে বলা কথা বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আহান খুব সূক্ষ্মভাবে তাকেই পেছনে বসতে বলেছে,
প্রেমার ভেতরে রাগে হিংসে ভরে উঠলো, কাল থেকে আহানের পিছে চিপকে লেগে আছে আঠার মতন।কিন্তু আহান তাকে পাত্তা দেওয়া তো দূর ভালো করে তাকায় পর্যন্ত নাহ। কিন্তু এই তুরা মেয়েটাকে নিয়ে খুব মাথাব্যথা তার। তবুও সেসব দমিয়ে মুখে মেকি হাসি টেনে পেছনে গিয়ে বসলো।
এদিকে তুরার খুশিতে মনে লাড্ডু ফুটেছে, বেশ হয়েছে পেত্নীটা,যা না যা আরও গিয়ে বস সামনে।
ঠোঁট চেপে হাসি আটকে গিয়ে বসলো আহানের পাশে। আহানের সাথে চোখাচোখি হতেই হাসি থামিয়ে চুপচাপ সামনের দিকে তাকালো,গাড়ি চলতে আরম্ভ করলে তুরা একবার সামনের রেয়ার ভিউ মিররে প্রেমার চুপসে যাওয়া চেহারা টা দেখে আর হাসি দমিয়ে রাখতে না পেরে ফিক করে হেসে উঠলো
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৩১

-হাসছ কেনো তুমি?

ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞাসা করল প্রেমা। তুরা হাসি আটকে, মুখ খানা স্বাভাবিক করে বলল

-কই না তো

-আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি হেসেছ

-কি জানি, আর হাসলেও বা কি। হাসতে মানা এমন কোনো নিয়ম ধার্য করা আছে বলে তো আমি জানতাম নাহ

বলেই পানির বোতলের মুখ খুলে ঢকঢক করে পানি গলাধঃকরণ করল। প্রেমার ভীষণ রাগ হলো তুরার উপর। কিন্তু আপাতত কিছু না বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামলে তুরা দরজা খুলেই দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। আহান দরজা খুলে বেরতে নিলেই দেখলো পারাপারি করে তুরা দুটো বই সিটেই ফেলে গেছে। বই দুটো হাতে নিয়ে এগোতে নিলে প্রেমা পেছন পেছন এসে বলল

-পাগল নাকি মেয়েটা,নিজের বই না নিয়েই ছুটল, আর তুই সেটা নিয়ে যাচ্ছিস

-সো হোয়াট, মাই ওয়াইফ সি ইজ!

বলেই দায়সারা ভাবে দ্রুতপায়ে হেঁটে ভেতরে চলে গেলো। আহানের কথায় প্রেমার শরীর জ্বলে গেলো হিংসে, মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ির সবার আদিক্ষেতা একেবারেই সহ্য হচ্ছে না ওর।
‘ডিসগাস্টিং’ বলেই হনহন করে ভেতরে ঢুকল।

_________________

সময় তার নিজ গতিতে বহমান,দেখতে দেখতে মাঝে তিনদিন পেরিয়ে গেছে, এর মাঝে রাইমার বিয়ের সকল ঝামেলা সহ সব মেহমান অতিথিরাও চলে গেছে। রুহি,তনু,বিহান, আরমান, জায়মা সকলে চলে যাওয়াতে তুরার ভীষণ মন খারাপ। একে তো রাইমা আপুর অনুপস্থিতি সাথে ওদের সাথে অল্প কয়দিনেই যতটা ভাব হয়েছিলো তাতে খুব কষ্ট পেয়েছে তুরা। তবুও নিজেকে সামলে দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে।
আজ ক্লাস শেষ করে তুরা দাঁড়িয়ে ছিলো ভার্সিটির গেইটে। হুট করে সামনে পলি ম্যাডাম চলে আসতেই ভদ্রতাসূচক সালাম দিলো তুরা।
সালামের উত্তর দিয়ে পলি গাল প্রসারিত করে উত্তর দিলো

-আরে তুরা যে!

বিনিময়ে তুরাও হেসে ম্যাডামের সাথে দুয়েক কথা বার্তা বলার মাঝেই পেছন থেকে খুব পরিচিত কণ্ঠের ডাক শুনতেই ঘুরে তাকাল। মানুষ টা আর কেও নয়, আহান।
বরাবরের মতোই চুলগুলো জেল দিয়ে পরিপাটি করা,হাতে সিলভার ওয়াচ, গায়ে জড়ানো ধুসর বর্ণের শার্ট, তুরা হা করে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। কারণ আহান সচরাচর ভার্সিটির গেইটের সামনে আসেনা তুরাকে নিতে। তুরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই পলি পাশ থেকে বলল

-আসসালামু আলাইকুম স্যার।কেমন আছেন?

সালামের উত্তর গম্ভীর্যতা সহিত দিলেও পরক্ষণে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল

-পলি ম্যাডাম যে, ছুটিতে ছিলেন তো।

-এই একটু অসুস্থ ছিলাম আরকি।আজ থেকে আবারও জইন করলাম

উনাদের কথোপকথন শুনেই তুরা আন্দাজ করে নিলো তারা সহকর্মী একে অপরের৷ আহানের ডিপার্ট্মেন্টেরই জুনিয়র লেকচারার পলি ম্যাডাম। তুরা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেও পলি ম্যাডাম বলে উঠলো

-তুরাকে কি আপনি চিনেন স্যার?

আহান তুরার দিকে একবার চেয়ে জড়তা সুলভ হাসি দিলো, কি বলবে হয়তো গুছিয়ে উঠতে পারেনি, অতঃপর অপ্রস্তুত গলায় বলল

-হ্যাঁ আমার পরিচিত

এতে যেনো তুরার নরম মনের গহীনে অবস্থিত অভিমান ক্ষোভ বিক্ষোভে পরিণত হলো।ওকে কি এতটাই ঘৃণা করে যে লোকসম্মুখে বউ বলে পরিচয় দিতেও অনিচ্ছা?এতটা কার্পণ্য বোধ করে! আহানকে বাকিটা বলতে না দিয়ে তাদের কথাবার্তার মাঝেই তুরা কোনো বাক্য ব্যয় ছাড়াই হনহনিয়ে প্রস্থান করলো। হঠাৎ তুরাকে এমন গাল ফুলিয়ে হাঁটা ধরতে দেখে আহান ও পিছু নিলো। পলি ম্যাডাম কিছু না বুঝেই হা করে তাকিয়ে রইল।
হনহনিয়ে হেঁটে মেইন রোডের দিকে গেলো তুরা। আহান পেছন থেকে কয়েক বার ডাকলেও তা কর্ণকুহরে নিলো না, শুনবে না কারো কথা সে! কাধের ব্যাগটাতে হাত রেখে ভালো করে চেপে ধরে হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিলো তুরা। আহান এক পর্যায়ে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে এসে তুরার হাত ধরে থামালেই এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো তুরা।
ভরা রাস্তায় এমন ঘটনায় অনেকেই হা করে চেয়ে আছে, তবুও সেসবে গা করলো না তুরা, আপাতত তার মেজাজ সপ্ত আসমানে চড়ে গেছে। এতটাই অপছন্দ তার, যে পরিচয় টুকু দিতেও দ্বিধাবোধ হয়,তবে লাগবে না আলগা দরদ, এত টুকু রাস্তা তুরা একাই যেতে পারে। আহান তুরার বাহু সজোরে ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তুরা আবারও ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো নিজের হাত, চেঁচিয়ে উঠে বলল

-খবরদার! একদম আমাকে স্পর্শ করবেন নাহ। যে মানুষের আমাকে অন্যের সামনে পরিচয় দিতে এত অনিচ্ছা তার সাথে যাবো নাহ আমি। যে নিজের স্ত্রী কে পরিচয় দিতে এতটা কার্পণ্য তার কোনো অধিকার নেই আমাকে স্পর্শ করার

আহান যেনো হতভম্ভের শীর্ষে তুরার এহেন চিৎকারে। তবুও তা দমিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল

-তুমি ভুল বুঝছো তুরা, আমার পুরো কথাটাই তো শেষ হয়নি তার..

-আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই নাহ। দোষটা আমারই,আপনি কবে মানলেন আমাকে বউ।সেই তো দয়া দেখিয়েই রেখেছেন। লাগবে না এত দয়া আমি একাই যেতে পারব

পরপর এতগুলো কথা বলে তুরার গলা ধরে এসেছে, তবুও আবারও ধরা গলায় বলে উঠলো

-আপনি আর কখনও আমাকে নিতে আসবেন নাহ। আমি একাই যেতে পারব। লাগবে না আমার জন্য আপনার এতটা দয়া দেখানো। আমিই ভুলে গেছিলাম যে আপনি আসলে বিয়েটাকে বিয়েই মানেন নাহ। নামমাত্র বউ হয়ে থাকার ইচ্ছে আমার একটুও নেই

-আমিকি এমন কিছু বলেছি তোমাকে, তুমি আগেই এতটা রিয়েক্ট কেনো করছ তুরা। আমার কথাটা শোনো। গাড়িতে ওঠো

হাত তুলে থামিয়ে দিলো তুরা, পানিতে টইটম্বুর ভরা চোখটার ছলছল দৃষ্টিপাত আহানের দিকে করে বলল

-না বলেননি। তবে আপনার আচরণেই প্রকাশ পেয়েছে। শুধু দ্বায়িত্বের খাতিরেই এত ঝামেলা করতে হয় তো, থাক মুক্তি দিলাম আপনাকে এই বাড়াবাড়ির দ্বায়িত্ব থেকে। লাগবে নাহ আমাকে নিয়ে এত ভাবার

বলেই আর আহানের প্রতিক্রিয়া বা জবাবের অপেক্ষা না করেই তুরা একটা রিকশা নিয়ে উঠে পরলো। একবার ও তাকাল না আহানের পানে। তাকাবেও নাহ। অনেক কষ্ট পেয়েছে আহানের আচারণে সে। আর কিচ্ছু শুনতে বা জানতে চাইনা।তবে এত টুকু অবশ্যই জানে আহান এখন বাড়ি ফিরবে নাহ। না ফিরুক, তাতে তুরার কি।

•••

বাড়িতে এসেই গোসল সেরে বেরিয়েই ঘরে আহানকে দেখে থমকে গেলো তুরা, এমনিতে তো রেগে গেলে বাড়িতে দেরিতে আসে,তাইলে আজ আগেই? তবুও নিজের কৌতুহল দমিয়ে নিলো তুরা ভেতরের ক্ষোভে, আসুক আর না আসুক তার কি। আহানকে দেখেই অগ্রাহ্য করে ঘর থেকে বেরতে নিলেই পেছন থেকে আহান ডেকে বলল

-তুরা, দাঁড়াও

তুরা শুনলেও না শোনার ভান করে বেরিয়ে গেলো। শুনবে না কোনো কথা। থাকুক সে এমন। দরকার নেই শুনবার,আর নাই বা বিরক্ত করবে সে আর তাকে। চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে রাইমার ঘরে ঢুকেই বারান্দায় গেলো। আজ অনেকদিন পর টুনিকে পেয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান,আর আহানের এ্যালার্জির জন্য তুরা বিড়াল টাকে কিছুদিন দারোয়ান সালামের কাছে রেখেছিলো। গেটের সাথেই সালামের বসার জন্য ছোট একটা ঘর করা,টুনি সেখানেই ছিলো।রোজ তিনবেলা করে তুরা ওকে খাইয়ে আর দেখে আসতো। তবে এখন টুনি বাড়িতেই থাকে। ক্যাট ফুড গুলো বাটিতে ঢেলে টুনির সামনে রাখতেই ও খাওয়া শুরু করলো,আর তুরা নিঃশব্দে বসে রইলো টুনির পাশে

~

বিকেল গড়িয়ে রাত হয়েছে, তাও প্রায় মধ্যরাতের কাছাকাছি। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে চুমকির সাথে টেবিল গোছাচ্ছে তুরা। রুবি রান্নাঘরের কাজ করছে, দিদুন তার ঘরেই। ড্রয়িং তুমের সোফাতে প্রেমা বসা।
প্রেমার বাবার হঠাৎ কাজ পরাই তাকে আর্জেন্ট বিদেশ পারি দিতে হয়েছে, এ তার নিত্যকারই কাজ,তবে এবার প্রেমা বাংলাদেশে আরও কিছুদিন থাকতে চেয়েছে বলে রায়হান তার আদরের মেয়েকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইনসাফের বাড়িতেই রেখে গেছেন। বাংলাদেশে পরিচিত বলতে ইনসাফ ই তার বিশ্বস্ত। তাই এ বাড়ির লোকেরাও আর অমত করেনি। যতই হোক বাড়ির মেহমান তো!
প্রেমা অনেক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছে তুরার ভার হওয়া মুখ, দুপুরে এসে থেকেই এমন করে আছে। আহানও এসে থেকে ঘর থেকে বেরইনি। প্রেমা বেশ কয়েকবার গিয়েছিলো ওর সাথে কথা বলতে কিন্তু আহানের ওমন রাগান্বিত গম্ভীর চেহারা দেখে আর ঘাটার সাহস করেনি।

-তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে?

প্রেমার কথায় তুরা মুখ তুলে তাকাল, মেয়েটা ভীষণ কৌতুহল নিয়ে চেয়ে আছে। তুরা মৃদু হেসে বলল

-নাহ, কিছুই না আপু

বলে আবারও খাবার গুছিয়ে রাখতে লাগলেই রান্নাঘর থেকে রুবি বেরিয়ে এসে বলল

-রাত তো অনেক হয়েছে, তুমি বরং ঘরে যাও তুরা। এটুকু আমি আর চুমকি করে নেবো

-আমি করে নিচ্ছি মা, হয়েই গেছে প্রায়

তুরা রুবির দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিয়ে, প্লেট গুলো হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলে পেছন থেকে ভরাট কণ্ঠস্বরে পা দুটোর গতি নিবৃত্ত হলো

-তোমাকে আমি দুই মিনিটের মধ্যে ঘরে দেখতে চাই তুরা। এ্যান্ড আই ওন্ট রিপিট দিস

ঘুরে তাকাতেই দেখলো আহান প্রচন্ড রেষপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তুরার চোখে চোখ পরতেই গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো, রুবি খাতুন তুরা এবং আহান দুজনের ই ভার হওয়া চেহারা লক্ষ্য করেছে,তবুও ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মাথা দেওয়ার প্রচেষ্টা করেনি। আহানের যাওয়ার পানে চেয়ে তুরার কাছে এসে বললেন

-তুমি ঘরে যাও তুরা

তুরা বিনিময়ে কিছু বলতে নিলেও রুবির শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আর কিছু বলল নাহ, প্লেট গুলো রেখে ঘরের দিকে হাঁটা দিলো। প্রেমা ওদের দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলো, এসব আদিক্ষেতা একেবারেই সহ্য হচ্ছে নাহ। আহান দিনদিন তুরাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছে। খুব শীঘ্রই কিছু একটা করতে হবে!

তুরা উঠে ঘরে গেলেও নিজের রুমে গেলো নাহ। যাবে না সে লোকটার কাছে। আহান আর তার অস্তিত্ব গ্রাস করে ফেলছে তুরাকে,আর কিছুতেই সে আর নিজেকে প্রভাবিত কর‍তে দিবে নাহ। রাইমার রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পরলো। রাইমা তো নেই এখন থেকে এই ঘরেই ঘুমাবে তুরা। যাবে না ওই ঘরে। যে মানুষ তাকে বউ মানে না তার সাথে এক ঘরে থাকার মতো আত্মসম্মানহীন কাজটা মোটেও করবে না তুরা।শুয়ে থেকে খানিক সময় পার হলেই চোখ বুজে আসলো তুরার,ধীরে ধীরে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যেতেই অকস্মাৎ শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠলো। তবুও ঘুম যেনো চোখে এটে বসেছে, শূন্যে ভাসার অনুভূতি হলেও চোখ টান করে তাকাতে বেশ সময় লাগলো।
খানিকটা পরেই নিজেকে ধাতস্ত করে চোখ খুলে তাকাতেই নিজের খুব কাছেই আবিষ্কার করলো পুরুষালি গম্ভীর চেহারা টা, শুরুতে ভড়কে গেলেও ব্যাপার টা উপলব্ধি করতে পেরে উঠে বসতে গেলেই আহান দু কাধ চেপে বিছানার সাথে চেপে ধরলো তুরাকে। গুরুগম্ভীর চেহারা টা ঝুকিয়ে আরও কাছে আনলো। তুরা বিভ্রান্ত হলেও তা প্রকাশ না করে কণ্ঠে বিরক্তি এনে বলল

-আমি এখানে কি করে এলাম, ছাড়ুন আমাকে। উঠব আমি

-আমি এনেছি, কোলে তুলে

কপালে অসংখ্য ক্রুর ভাঁজ ফেলে বলল আহান। কপালে অসংখ্য ভাঁজ থাকলেও কণ্ঠ জুড়ে শীতলতা, হীম কণ্ঠের বাক্য তুরা খানিকটা ভড়কে বলল

-মানে?

-মানে কোলে তুলে এনেছি। এই দু হাত দিতে তুলে জড়িয়ে ধরে এনেছি। আবারও তুলে দেখাব?

বলেই আবারও কোলে নেওয়ার উপক্রম করতেই তুরা হুড়মুড়িয়ে নড়েচড়ে বলল

-এই একদম নাহ, কেনো এনেছেন আপনি,কোন সাহসে? সরুন আপনি আমাকে যেতে দিন

বলে বুকে হাত দিয়ে আহানকে সরাতে নিলে আহান আরও চেপে এসে বলল

-আমি বাড়ি এসে থেকে ঘরে তো আসোই নি বরং আমি চারবার ডেকেছি,তবুও আসোনি। আবার তখন ড্রয়িং রুমে সবার সামনে ডেকে আসলাম আর তুমি কি না গিয়ে অন্য ঘরে ঘুমালে, কোন সাহসে আমাকে অগ্রাহ্য করে অন্যঘরে শোবার সাহস হলো, কি করে?

-সাহসের কি আছে, যে আমায় বউ মানে না আমি কেনো তার ঘরে আসব, কোনো পরপুরুষের সাথে আমি এক ঘরে ঘুমাতে পারব না

বলেই আবারও ধাক্কা দিলো আহানকে,এবারের ধাক্কাটা তুলনামূলক বেশ জোরে দিয়েছে তুরা, আহান ওর কথা শুনতে গিয়ে বেখেয়ালি হয়ে গেলে সজোরে দেওয়া ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে ধপ করে পরে গেলো। আহানের পরে যাওয়ায় তুরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল,এমনটা সে মোটেও আশা করেনি, গোল গোল চোখ বড় করে মুখে হাত দিয়ে চেয়ে আছে তুরা, যেনো অক্ষিকোটর থেকে চোখ দু’টো বেরিয়ে আসবার জো। আহান আকস্মিক ভাবে পরে যাওয়ায় ধাতস্থ হয়ে পুরোটা বুঝতে বেশ সময় লাগলো। নিজের অবস্থান টা বুঝেই ধপ করে উঠে দাঁড়ালো। তুরা ভয়ে পা গুটিয়ে পিছিয়ে গেলো
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥