তুমি কবে আমার হবে পর্ব-২৫+২৬

0
229

#তুমি_কবে_আমার_হবে
#পর্ব_২৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

চুপচাপ স্টেজের এক পাশে একটা চেয়ারে বসে আছি।
লজ্জায় মাথা তোলে কোনো দিকে তাকাতেও পারছি না। স্যার আমার পাশের চেয়ারেই বসে আছে।স্যার ভিডিও টা দেখানোর পর থেকেই এখানে বসে আছি।
রুদ্রঃ চুপচাপ এখানে বসে থাকবে। বিয়ে শেষ হলে আমি তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো।
…….
রুদ্রঃ কি হলো?কথা বলছো না কেনো?
~ঠিক আছে বসে থাকবো আগে ভিডিও টা ডিলেট করুন।
রুদ্রঃ বেশি কথা না বলে চুপচাপ এখানে বসে থাকো।
রুদ্র চলে যাওয়ার পর, মন চাচ্ছে এক দৌড়ে নিজের বাসায় চলে যাই।ছি কিভাবে আমি এমন টা করতে পারলাম। তাও স্যারকে বলছি।যাই হোক ভিডিও টা ডিলেট তো করতে হবে।কিন্তু কিভাবে?

সাফার বিয়ে পড়ানো শেষ।এখন বিদায়ের পালা।সাফা এদিক ওদিকে তাকিয়ে নূর কে খুঁজতেছে।বিয়ের পুরোটা সময় নূরকে একটু ও দেখা যায়নি।

——

সাফা লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে খাটের মাঝখানে বসে আছে।খুব বিরক্ত লাগছে। কিন্তু কিছু করার নাই।শাশুড়ী মা বলেছে স্বামী রুমে না আসা অব্দি যেনো এভাবেই বসে থাকে।তাই বাধ্য মেয়ের মতো শাশুড়ীর কথা শুনছে।

শান্ত কে মেঘা আর মেঘ আটকে রেখেছে ওদের পাওনা ওদের না দিলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বাধ্য হয়ে ওদের পাওনা ওদের দিয়ে রাতের বারোটায় নিজের রুমে আসলো শান্ত।

রুমে এসেই দেখে সাফা এখনো বসে আছে। শান্ত অবাক হয়ে বললো,’ এই মেয়ে তুমি এখনো বসে আছো কেনো? আর কাপড় চেঞ্জ করে নাওনি কেনো? যাও ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে এসে ঘুমিয়ে পরো।
সাফাঃ আমার এইসব নিয়ে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না।
শান্তঃঅবশ্যই ঘামাতে হবে।তোমার হাসবেন্ড হিসেবে তা আমার দায়িত্ব।
সাফাঃ আমি আপনাকে আমার হাসবেন্ড মানি না৷ আপনার মতো গাধা,বেয়াদব ছেলেকে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না।
শান্তঃ আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে গাধা মনে হয়? দেখো আমারো তোমার মতো বোম্বাই মরিচকে বিয়ে করার কোনো সখ ছিলো না। নিজেই আমার মা কে পটিয়ে আমাকে বিয়ে করেছো। আর এখন সব দোষ আমার!!
সাফাঃ আমি আপনার মা কে কখন পটিয়েছি?
শান্তঃ মনে করিয়ে দিবো নাকি? তুমি নিজেই তো আম্মু -আব্বুর সামনে বললে, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার বাচ্চার মা তুমি।আরও কি কি বলেছো বলবো?
সাফা আমতা আমতা করে বললো, ‘ দেখুন..
সাফা আর কিছু বলার আগেই শান্ত বললো, ‘ ছি তোমার দেখি একটুও লজ্জা নেই।দেখো আমি ভদ্র ছেলে আমি কিছু দেখতে পারবো না।অবশ্য এখন তুমি আমার বউ চাইলে…
সাফাঃ চুপ একদম চুপ। নির্লজ্জ ছেলে। আমি বলতে চেয়েছি,’ দেখুন যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি এখন ঘুমাবো।আপনি কি এই রুমেই ঘুমাবেন?

শান্তঃ তো এখন কি সিনেমার নায়ক নাইকাদের মতো বলবে নাকি যে আপনি নিচে ঘুমান আমি খাটে ঘুমাবো’। দেখো আমি আমার খাট ছাড়া অন্য কোথাও ঘুমাতে পারবো না।
সাফাঃ মনে মনে যা ভেবে রেখেছিলো তা মনেই রেখে দিলো সাফা তারপর বললো,’ঠিক আছে আপনি ওই পাশে আর আমি এই পাশে। খবরদার আমার পাশে একদম আসবেন না।
সাফার মুখের দিকে চেয়ে শান্ত হাসলো, আসলে আজকে মেয়েটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।

——

সময় চলছে সময়ের মতো। সময়ের সাথে তালমিলিয়ে আমাদেরও চলতে হয়।
আজ এক মাস হলো সাফার বিয়ে হয়েছে। প্রতি দিন ওদের জগরা লেগেই থাকে। তবে সাফা শুধু শান্তর সাথেই জগরা করে আর সবাইকে খুব ভালোবাসে।শান্তর পরিবারও সাফাকে ছেলের বউ না এই বাড়ির মেয়েই ভাবে।

সাফার বিয়ের পর স্যারের সাথে আমার হাতে গুনা কয়েক বার দেখা হয়েছে তাও মাত্র ক্লাসে এখনো ভিডিওটা ডিলেট করতে পারিনি। সাপ্তাহে একবার কলেজ যাই আর বাকি দিন অফিসে। এভাবেই কখন যে দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যায় বুঝাই যায় না।
মাঝ খানে একদিন গিয়ে অভির আম্মুর সাথে দেখা করে এসেছি। ওনার শরীর বেশি ভালো না। মিম তো আমাকে দেখে জরিয়ে ধরে সে কি কান্না। অভি বাসায় ছিলো না। অভির আম্মুর একটা কথাই আমার কানে বাজে,’ নূর জীবন সুন্দর যদি আমরা জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে পারি। তুই নিজের পায়ে দ্বারা।আবার সুন্দর করে নিজের জীবনকে সামনের দিকে এগিয়েই নিয়ে যা৷ আগে কি হয়েছে সব ভুলে নতুন করে সব শুরু কর।’

——

রেডি হচ্ছি কলেজ যাওয়ার জন্য। এমন সময় আম্মু এসে বললো,’ নূর একটা কথা বলি?’
~হে আম্মু বলো?
~তুই কাউকে ভালোবাসিস এটা বললে এমন কি হতো। আমি তোর মা, আমি কি এতোটাই পর হয়ে গেলাম যে মাকে তোর পছন্দের কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিস।ভাগ্যিস ওই ছেলে সাহস করে আমাকে বলেছে না হলে তো আমি জানতামি না।আমি একবার ভুল করেছে দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করবো না। আমি ওই ছেলের সাথেই তোর বিয়ে দিবো।
~আম্মু কিসের ছেলে? কিসের ভালোবাসা!! সকাল সকাল তোমার মাথা গেছে। আজ কে রাতে মনে হয় আব্বুকে দেখার জায়গায় অন্য কাউকে দেখেছো তাই আবোলতাবোল বলছো। সাইড দাও আমি কলেজ যাবো।
~ দেখ নূর যতই লুকাস না কেনো আমি কিন্তু দেখেছি। আর ওই ছেলের নামটা কি যেনো…..ইস মনে পরছে না।
~তুমি মনে করতে থাকো আমি গেলাম।
~দ্বারা ওই ছেলের আম্মুকে নিয়ে আজকে আসবে তোই থাক। আজকে কলেজ যেতে হবে না।
~এটা কেমন কথা আম্মু!! কোথাকার কোন ছেলে তোমাকে কি বলেছে আর তুমি তাই বিশ্বাস করে নিলে। আর বিয়ে!! দেখো আম্মু আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না।
~ছেলেটা খুব ভালো।আর সে তো তোর ক…
~প্লিজ আম্মু বিয়ে সম্পর্কে আমি আর কিছু শুনতে চাই না। বলেই বেরিয়ে গেলাম কলেজের উদ্দেশ্যে…

——

~কিরে মুখ পেঁচার মত করে বসে আছিস কেনো? কি হয়েছে?
সাফাঃ একদম পেঁচা বলবি না কুত্তী!! ওই বেটারে আমি ছারবো না একদমি।
মেঘাঃ আহা ভাবি ছাড়ার জন্য কি ভাই তোমাকে বিয়ে করে নিয়েছে নাকি। ধরে রাখার জন্যই তো নিয়েছে। আমাদের সামনেও জরিয়ে ধরে রাখতে পারো। আমরা কিন্তু মাইন্ড করবো না। একদিক দিয়ে ননদী, আরেক দিকে বেস্ট ফ্রেন্ড, আবার দেখবে কখন তোমার ভাবি হয়ে যাবো!!লাস্টের কথাটা বলে নিজেই নিজের জ্বিব কাটলো। ছি মজার ছলে এটা কি বলে দিলো।
সাফাঃ ওই তুই কি আমার ভাইয়ের প্রেমে পরছোস নাকি? আমার ভাই অন্য কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, বলে আমার দিকে তাকালো, সো আমার ভাই কে ভুলে যা।
মেঘাঃ সাফার বাচ্চা তোর কি আর কোনো ভাই নাই নাকি। আর আমি স্যারকে জিজুর চোখে দেখি অন্য কিছু না।
~জিজু মানে!! তোর কি আর বোন আছে নাকি যে জিজুর চোখে দেখোস।
মেঘঃ বোন নাই তো কি হইছে তোর মতো ছুন্দরী বান্ধবী তো আছে?
মেঘা আর সাফা চোখ গরম করে মেঘের দিকে তাকালো।
তা দেখে মেঘ হেসে বললো, ‘ আরে দুস্ত মজা করছি।

——

কলেজ গেটে দাড়িয়ে আছি আমি আর মেঘা। সাফাকে একটু আগে এসে শান্ত নিয়ে গেছে।মেঘা ওদের মধ্যে কাবাবে হাড্ডি হতে চাইনি তাই জায়নি।আর মেঘ মাঘার সাথে জগরা করে বাইক নিয়ে চলে গেছে। আমরা অপেক্ষা করছি ওকে রিক্সায় তুলে দিয়ে আমি আমার বাসার দিকে যাবো।হঠাৎ কে যেনো বলে উঠলো, ‘ তোমরা দাড়িয়ে আছো কেনো?
তাকিয়ে দেখি আবির ভাইয়া হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।
মেঘার মনে হয় খুশিতে নাগিন ডান্স দিতে মন চাচ্ছে। আবির নিজে এসে ওদের সাথে কথা বলছে।
~আসলে ভাইয়া রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি।মেঘা কে রিক্সায় তুলে দিয়ে চলে যাবো।
আবিরঃ ওহহ আচ্ছা, বলে মেঘার দিকে তাকালো। মেয়েটা সব সময় এভাবে মাথা নিচু করে রাখে কেনো মনে মনে ভেবে বললো,’ আচ্ছা কিছু না মনে করলে, মেঘা তুমি আমার সাথে যেতে পারো আমিও ওই দিকেই যাবো।বড় ভাই ভেবে আসতে পারো।
আবিরের কথা শুনে মেঘা তো মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে কিন্তু লাস্টের ভাই শব্দটা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো, ‘ আমার নিজের ভাই আছে অন্য কাউকে ভাই ভাবতে যাবো কেনো!!

আবির বিরক্ত মাখা মুখে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কি যাবে নাকি আমি চলে যাবো.?
আবির বলতে দেরি কিন্তু মেঘার উঠতে দেরি না। আকস্মিক ঘটনায় আবির অবাক হয়ে গেলো। তারপর বিরবির করে বললো,’ পাগলি মেয়ে ‘
মেঘাঃ কিছু বললেন?
আবির আর কিছু না বলেই বাইক স্টার্ট দিলো।সেকেন্ডের মধ্যে চলে গেলো চোখের বাহিরে…

আমি আনমনে হাঁটছি তখন আমার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে এসে দাঁড়ালো……

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#তুমি_কবে_আমার_হবে
#পর্ব_২৬
লেখিকা #sabihatul_sabha

রাস্তার আনমনে হাঁটছি তখনি আমার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে এসে দাঁড়ালো অভি।

আমি চুপচাপ উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
~ আপনি!! কিছু বলবেন?
অভি আমার দিকে গোলাপের গুছাটা এগিয়ে দিলো।
যদিও গোলাপ আমার খুব প্রিয় তাও বললাম,’ আমার গোলাপ পছন্দ না।’
অভি টান দিয়ে আমার হাতটা উনার হাতে নিলো, তারপর গোলাপের গুচ্ছটা হাতে দিয়ে বললো,
অভিঃ মিথ্যা কেনো বললে? আমি তোমার কি পছন্দ কি পছন্দ না তা সব আমি জানি।
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলাম, ‘ আপনি সব জানেন? তা আপনি যেহেতো সব জানেন নিশ্চয়ই এটাও জানবেন আমি এখন আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। আর যখন তখন কেউ আমার হাত দরুক আমার তা পছন্দ না।
অভি মাথা নিচু করে বললো,’ দ্বিতীয় বার কি আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায় না।
~কেউ যদি না বুঝে একবার ভুল করে তাকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া যায়। কিন্তু কেউ যদি বুঝেও না বুঝার মতো থাকে। বিয়ের পরেও প্রাক্তনের সাথে দিনের পর দিন সম্পর্ক রাখে।বউ ঘরে রেখে রাতের পর রাত ফোনে কথা বলে। তাকে আর যা-ই হোক দ্বিতীয় বার কোনো সুযোগ দেওয়া যায় না।
অভিঃ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই না? আমাকে নিয়ে তোমার হাজারো অনুভূতির কথা তোমার ডাইরিতে লেখা আছে।আমি না হয় তোমাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছি তুমি তো পারতে আমাকে আকরে ধরে রাখতে। তুমি ভালোবেসেও আমাকে ছেড়ে দিলে!..

~আমি আপনাকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর বাসি না। নিজের ভালোবাসা ভালোলাগা সব আজ দামাচাপা দিয়ে দিয়েছি।যেখানে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই সেখানে ভালোবাসা দেখানো বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আর হে ভালোবাসা মানে এই নয় তাকে পেতে হবে। সে আমার হয়ে গেছে জোর করে আটকে রাখতে হবে। ভালোবাসা মানে তার সুখেই আমার সুখ। সে যদি অন্য কারো সাথে ভালো থাকে তাহলে তাকে আটকে রাখে কি লাভ।থাকুক সে তার প্রিয় মানুষটির সাথে সুখে।

আমি তাচ্ছিল্যের সুরে আবার বলে উঠলাম,’ আপনি আমার ডাইরি পরেছেন, আমার পছন্দ অপছন্দ সব জেনেছেন কিন্তু এটাই বুঝলেন না আমার সব থেকে প্রিয় জিনিসটা কি ছিলো?
অভিঃ নূর মানুষ ভুল করে তাই বলে কি তার ক্ষমা নেই। আমি জানি তোমার সব থেকে প্রিয় মানুষটি আমি ছিলাম। আমি সব জানি।
~আপনি সব যেনে আমাকে ছেড়ে দিলেন!! প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য নিজের বিয়ে করা বউকে ছেড়ে দিলেন।আর ক্ষমা কেনো করবো, আমার মনে তো আপনার জন্য কিছু নেই। আর ভালোবাসা ভুলের কিছু না। আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসতেন তাই আমিও আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। আপনার আর কি চাই আমার কাছে? প্লিজ আমাকে আমার মতো থাকতে দিন!!!
অভিঃ প্লিজ নূর এভাবে বলো না আমি বুঝতে পারিনি। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না । তোমার ডাইরির লাস্ট পৃ: লেখাটা আমাকে আজো কষ্ট দেয়,’ তোমার এই অবহেলা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমার এই ছোটো মনটাই দিন দিন তোমাকে নিয়ে হাজারো অভিমান জমা হচ্ছে।হটাৎ একদিন হারিয়ে যাবো আর চেয়েও কোনো দিন ফিরাতে পারবে না। তুমি কি কোনো দিনও আমার হবে না। তুমি কবে আমার হবে’ এই দেখো আজ আমি পুরো পুরি তোমার হতে রাজি,এই দেখো আজ আমি তোমাকে সত্যি হারিয়ে ফেলেছি।হাজার চাওয়ার পরেও পাচ্ছি না। তোমার সব কথাই তো সত্যি হয়ে গেলো।তুমি আবারো ফিরে আসো আর কোনো দিনও আমি তোমাকে কষ্ট দিবো না।আমাকে ফিরি…

অভি আর কিছু বলার আগেই কেউ একজন এসে অভিকে জরিয়ে ধরলো।

——

মেঘ মেঘার সাথে জগরা করে কলেজ থেকে বেরিয়েছে।হঠাৎ বাইকের সামনে একটি মেয়ে চলে আসলো। যাক আরেকটু হলেই বাইকের নিচে পরতো। মেঘ সাথে সাথে ব্রেক কষলো।
~এই বেয়াদব ছেলে বাইক চালাতে না পারলে চালাতে জান কেনো। রাস্তাটা মনে হয় আপনার বাপের সম্পত্তি যেভাবে ইচ্ছে চালাবেন।
মেঘের মাথা এমনে তেই গরম হয়ে আছে। আর বিনা দোষে এখন এতো গুলা কথা শুনে আরো রেগে মেয়েটির সামনে গিয়ে বললো,’ এই তুমি সেই দিনের জগরাটে মেয়েটা না!!। নিজের মরার সখ হলে অন্য কারো গাড়ির নিচে যাও। আমার নিস্পাপ বাইকের নিচে কেনো আসছো!!।
~এই ছেলে, এই মেয়ে এই মেয়ে করবে না। আমার নাম মিম।আর আমার কোনো সখ জাগেনি যে তোমার বাইকের নিচে যাবো মরতে।আর তুমি যেমন বেয়াদব তোমার বাইকও তেমন বেয়াদব। রাস্তা পার হচ্ছি আর ঠাস করে আমার সামনে চলে আসলো!!।
মেঘঃ তুমি মিম হও আর ডিম হও যাই হও না কেনো, আমার বাইক কে কিছু বলবে না। এটা আমা জান।আর রাস্তা পার হচ্ছিলে বুঝি বলেই মেঘ হাসা শুরু করলো।
মিমঃ কি হলো এভাবে হাসছো কেনো?
মেঘঃ তা কোথায় যচ্ছো?
মিমঃ সেটা তোমাকে বলবো কেনো? সরি বলো ওই দিন তো আমার ভয়ে পালিয়ে গেছো। এখন সরি বলো?
মেঘঃ তাই নাকি আমি তোমার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে ছিলাম? আর আমি কেনো সরি বলবো।আমি তো ইচ্ছে করে তোমার মোবাইল ফেলিনি।ওকে ফোন নাম্বার দাও কল দিয়ে সরি বলে নেবো।
মিমঃ আজব তো!! আমি সামনে দাড়িয়ে আছি, তুমি ফোনে কেনো বলবে এখানেই বলে দাও।
মেঘঃ কোথায় যাচ্ছো?
মিমঃ একবার বললাম তো বলবো না।

মিমের গলাই কার্ড ঝুলানো ছিল। মেঘ টান দিয়ে কার্ডটা হাতে নিয়ে বললো,’ হেই তুমি ক্লাস 10পড়ো!!! তুমি এতো পিচ্চি। দেখেতো পিচ্চি মনে হয় না। এই পিচ্চি মেয়ে তুমি আসছো আমার সাথে জগরা করতে,কলারটা উঁচু করে একটু ভাব নিয়ে বললো’..
মিমঃ আমি পিচ্চি তা আপনি কোন ভার্সিটির টিচার শুনি?

——

শান্ত চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে আর সাফা বকবক করেই যাচ্ছে…
সাফাঃ আপনি কি গাড়ি থামাবেন নাকি আমি এই গাড়ি থেকে টুকুস করে লাফ দিয়ে নেমে যাবো।
শান্তঃ আমার থেকে নেবে না তো কার থেকে নেবে শুনি?
সাফাঃ আচ্ছা শান্ত আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
শান্তঃ কেনো বলো তো?
সাফাঃ না এমনি। আচ্ছা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না আমার আছে কি না?
শান্তঃ জিজ্ঞেস করে কি হবে?
সাফাঃ আপনি এই জন্যই এতো নিরামিষ। ২/৪টা গার্লফ্রেন্ড থাকবে তাদের সাথে ডেটিংয়ে জাবেন। তাহলে আপনার মধ্যে রোমান্টিকতা থাকবে। আপনাকে দেখেই বুজা যায়।
শান্তঃ কি বুঝা যায়?
সাফাঃ এই যে কোনো মেয়ে আর যাই হোক আপনার মতো নিরামিষ বয়ফ্রেন্ড চাইবে না। তাই একটাও গার্লফ্রেন্ড নাই।
শান্তঃ আচ্ছা রোমান্টিক হওয়ার জন্য কি গার্লফ্রেন্ড থাকা জরুরি? শুনো আমি রোমান্টিক কি না অন্য মেয়েকে কেনো দেখাতে যাবো। আমার রোমান্টিকতা সব আমার বউয়ের জন্য বুঝলে।
সাফাঃ কই আজও তো কোনো রোমান্টিকের কিছুই দেখলাম না,বলে নিজের জ্বিব নিজেই কাটলো। ইসস ভুল করে মুখ দিয়ে ভুল কথা বেরিয়ে গেছে।
শান্তঃ আচ্ছা দেখতে চাও নাকি, এক ভ্রু উঁচু করে দুষ্টু হেসে বললো।
সাফা আমতা আমতা করে বললো,’ গাড়ি থামান’
শান্তঃ কেনো? তোমার কি লাগবে বলো? আমি এনে দিচ্ছি।
সাফাঃ কেনো আমি আপনাকে বলবো কেনো, আর আপনার থেকে নিবো ভাবলেন কিভাবে হা।
শান্তঃ আচ্ছা ঠিক আছে নিতে হবে না। চুপচাপ বসে থাকো। না হলে আমি নিজেই টুকুস করে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।
সাফা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ও আর শান্তর সাথে কথা বলবে না। কোনো কথাই বলবে না। লোকটা খারাপ খুব খারাপ।

——
মেঘা কে নিয়ে আবির একটা রেস্টুরেন্টে গেলো।মেঘা কিছুই বলছে না, চুপচাপ আবিরের পিছু পিছু হাঁটছে আর বুজার চেষ্টা করছে।

আবির একদম পিছনের টেবিলে গিয়ে মেঘা কে নিয়ে বসলো।
মেঘাঃ ভাইয়া আমরা এখানে কেনো এসেছি?
আবিরঃ আরে তুমি তো বললে তোমার নিজের ভাই আছে, অন্য কাউকে ভাই বানাতে চাও না। তাহলে এখন আমাকে ভাই ডাকছো কেনো? আর এখানে মানুষ কি করতে আসে?
মেঘা কিছু বলছে না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘার দিকে একবার তাকিয়ে আবির আবার বললো,’ কি হলো কথা বলছো না কেনো?
মেঘাঃ ( কথা কি এমনি বলছি না গাধা বেটা। তরে দেখলেই আমার সব কেমন যেনো গলায় এসে আটকে যায়। ভয়ে হাত পা কাপে।তাইতো অনেকক্ষন দরে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি কিন্তু গলায় এসে সব আটকে যাচ্ছে) মনের কথা মনে রেখেই মেঘা বললো, ‘ আসলে ওই সময় তো এমনি বলেছি হিহি। আপনি তো আমার সিনিয়র ভাই।আর এই খানে কেনো আসে তাতো জানি। আপনি কি আজ বাসা থেকে খেয়ে আসেননি?
আবিরঃ সিনিয়র ঠিক আছে।তাই বলে ভাই ডাকতে হবে না। আমার বোন আছে, অন্য কারো মুখে ভাই ডাক আমার পছন্দ না।
মেঘাঃ (আমার কথাই আমাকে বললো) ওহহ আচ্ছা।
আবিরঃ কি খাবে বলো?
মেঘাঃ আমি কিছু খাবো না।
আবিরঃ দেখো মেয়ে আমি চাই না কারো জন্য আমার পেট খারাপ হোক।
মেঘাঃ আপনার পেট কেনো খারাপ হবে?
আবিরঃ এই যে আমি খাবো আর তুমি বসে বসে দেখবে। তাতে আমার পেট খারাপ হবে। তাই বলো কি খাবে?

——

অভি অবাক হয়ে গেছে হাঠাৎ কে এসে ওকে এভাবে জরিয় ধরলো….

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।