তুমি ফিরে এসো পর্বঃ০৫ এবং শেষ

0
1767

#তুমি_ফিরে_এসো?
#পর্বঃ০৫এবং শেষ
#Arshi_Ayat

এসেই কেউ একজনকে কল করলো

“হ্যাঁ মা আমি পৌঁছেছি।”

“আচ্ছা খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়।”

“আচ্ছা মা রাখছি।”

এদিকে আহিনকে এই মাতাল অবস্থা প্রতিদিনই দেখতে হয় তার মায়ের।এটা আর নতুন নয়।আহিনকে ওর মা ঘরে এনে শুইয়ে দিলো।তারপর ছেলের মুখের দিকে চেয়ে রইলো এবং একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ঘর থেকে চলে গেলো।

সকালে….

আহিন ৭.০০ টায় ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে করতে ছাদে গেলো।তারপর ব্রাশ করতে করতে পাশের ব্লিডিংয়ের ছাদে একটি মেয়েকে দেখলো মেয়েটিও তাকে দেখে হাত নাড়লো তারপর বলল

“হাই,কেমন আছেন?”

“জ্বি ভালো।কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনলাম না।”

“ওই যে কালকে রাতে আপনাকে তো আমিই বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলাম।”

“ও আচ্ছা। ধন্যবাদ।”আপনার নাম কি?”

“আরশি আয়াত।আপনার?”

“আহিন আহমেদ।”

আহিন আহমেদ নামটা শুনে আরশির কেমন যেনো খটকা লাগলো কারণ আয়ুশীর বি এফ এর নামও তো আহিন ছিলো।এটা কি সেই আহিন??আরশি কখনো আহিনের ছবি দেখেনি বলে ওর কেমন যেনো সন্দেহ হচ্ছে এটা সেই আহিন কি না?আরশির ভবনায় ছেদ ঘটলো আহিনের ডাকে

“এই যে মিস আরশি।আমি তাহলে আজ আসি।আমাকে অফিসে যেতে হবে।”

“আচ্ছা ঠিকাছে।”

আহিন বিদায় নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেলো।তারপর নিচে এসে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই আহিনের মা বললেন

“তোর সাথে কথা আছে।”

“হুম বলো।”

“তুই বিয়ে করে নে।তোকে এইভাবে দেখতে ভাল্লাগছে না।”

“সম্ভব না মা।”

“সম্ভব না হলে আমারও এই বাড়িতে থাকা সম্ভব না।”

“মা প্লিজ!!”

“কোনো বাহানা শুনতে চাই না।”

“…….”

“আজ একটা মেয়ে দেখতে যাবো তাই আজ তাড়াতাড়ি আসবি।”

“অফিস আছে তো।”

“কিচ্ছু শুনতে চাই না।তুই না আসলে আমি আর এ বাসায় থাকবো না।কথাটা মনে রাখিস।”

আহিন মন খারাপ করে বলল

“আচ্ছা আসবো।”

তারপর নাস্তা করে অফিসে গেলো।

এদিকে আরশি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলো তখনই একটা কল এলো আরশির ফোনে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো

“আরু তুই একটু তোর খালার বাসায় যাস ঠিকাছে?”

“কিন্তু কেনো?”

“তোকে ছেলে দেখতে আসবে।”

“মা বললাম তো এখন বিয়ে করবো না।আর কয়েকদিন পরইতো আমাকে লন্ডন যেতে হবে।এখন আমি বিয়ে করতে পারবো না।”

“আমি এতো কথা শুনতে চাই নি তুই যাবি মানে যাবি।”

“আচ্ছা যাবো।”

এটা বলেই ফোন রেখে দিলো আরশি।আর মনে মনে বলতে লাগলো কোনো ভাবেই বিয়ে করা যাবে না।বিয়ে করলে লন্ডন যেতে পারবো না।কোনো একপ্রকারে এটা আটকাতে হবে।

বিকেলে….

আহিন ওর দুই বোন আর মা মেয়ে দেখতে এসেছে।মেয়েকে এখনই আনা হবে।মেয়ে এসে আহিনের সামনা সামনি বসলো।আহিন চোখ তুলে তাকাতেই আশ্চর্য হলো। এটাতো আজকে সকালের মেয়েটা ওর সাথে তো কথা হয়েছিল।হঠাৎ পাশের মেয়েটির দিকে চোখ পড়তেই আহিন বিষ্ময়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেলো।নিজের অজান্তেই বিড় বিড় করে বলতে লাগলো

“আয়ুশী..না না এটা তো হতে পারে না।”

কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি আয়ুশীই দাড়িয়ে আছে আরশির পাশে।আয়ুশীও আহিনকে দেখে অবাক হয়েছিলো।

এদিকে আহিনের মায়ের আরশিকে খুব পছন্দ হয়েছে।হঠাৎ আহিন বলে উঠলো

“আমি একটু ওনার সাথে আলাদ কথা বলতে চাই।”

সবাই সম্মতি দিলো।আহিন আর আরশি ছাদে গেলো।আহিন আরশির সামনে দাড়িয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন করলো

“আয়ুশী এখানে কেনো?”

“আপনি ওকে চিনেন?”

“হ্যাঁ।কিন্তু ও এখানে কেনো?”

“ওর হাজবেন্ড বিয়ের একমাস পরেই কার এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।সেই থেকেই ও বাংলাদেশে আর আজকে আমাকে ছেলে দেখতে আসবে তাই ওকে আমি ডেকেছি।”

“কিহ!!তন্ময় মারা গেছে?”

“হ্যাঁ।”

“ওকে কি এখন এখানে ডাকা যাবে?”

“আচ্ছা দেখি ফোন করে।”

আরশি ফোন করে আয়ুশীকে আসতপ বলল।আয়ুশী ছাদে আসতেই আহিনকে দেখতে পেলো।আর আহিনকে দেখেই আবার চলে যেতে নিলো আহিন ছুটে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরলো তারপর সামনাসামনি দাড় করিয়ে বলল

“আমার সামনে কি দাড়াতে ইচ্ছে হয় না?”

“ছাড়ুন যেতে হবে।”

“একবারতো ছেড়েছি কিন্তু এবার আর ছাড়বো না।”

আরশি পিছন থেকে বলল

“বাহ!!বাহ!!কেয়া বাত হে!!দুজন দুজনকে শেষ পর্যন্ত পেয়েই গেলি।”

“আরশি তুই আমাকে এখানে না ডাকলেও পারতি।”

“ডেকেছি ভালোই করেছি।এবার তোদের বিয়ে দেবো। কিন্তু কিভাবে?”

এবার আহিন হালকা হেসে বলল

“একটা উপায় আছে শ্যালিকা।”

“কি উপায়?”

“সব ঠিক থাকবে কিন্তু বিয়ের দিন কনে বদল হবে।”

“কিন্তু আমারতো খবর আছে।”

“সমস্যা নাই।এখানে আসার আগে শুনেছি তুমি লন্ডন যাচ্ছো।”

“হ্যাঁ।”

“কবে যাচ্ছো?”

“দুদিন পর রাত ৮.০০ টায় ফ্লাইট। ”

“তাহলে বিয়েটা দুদিন পরই করবো।দুইদিন পর রাত আট টায় আমার আর আয়ুর বিয়ে হবে আর তুমি সুযোগ বুঝে পালাবে।”

“গ্রেট।কিন্তু আপনার ফ্যামিলি আর আমাদের ফ্যামিলিকে সামলাবে কে।”

“তোমার চিন্তা করতে হবে না এদিকটা আমি সামলে নেবো।”

“ওকে দুলাভাই।”

ওদের কথার মাঝেই আয়ুশী বলল

“আমি বিয়েটা করবো না।”

আহিন রেগে বলল

“তুমিও করবা তোমার ঘাড়ও করবে।আর যদি প্ল্যানের কথা কাউকে বলো তাহলে বিয়ে ছাড়া বাসর করবো বলে দিলাম।”

আহিনের কথা শুনে আরশি হাসতে লাগলো আর আয়ুশী গোমড়া মুখে দাড়িয়ে রইলো।

দুদিন ভালো ভাবেই সব চলল।কেউ বুঝতেই পারলো সামনে কি হতে চলেছে।

আজ বিয়ে তবে আয়ুশীর আর আহিনের।কিন্তু সবাই জানে আরশির আর আহিনের।সন্ধ্যা ছয়টার সময় আরশি বেরিয়ে গেলো।আর আরশির জায়গায় আয়ুশী বউ সেজে বসে রইলো।বিপত্তি ঘটলো তখন যখন বিয়ে পড়ানোর সময় কাজি যখন মেয়ের নাম জিগ্যেস করলে তখন আরশির বাবা কিছু বলার আগেই আহিন বলল

“মেয়ের নাম হলো আয়ুশী মেহজাবিন।”

সবাই আহিনের দিকে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।এবার আহিন মুখ খুললো।সত্যিটা বলে দিলো।আর আরশির চলে যাবার কথাটাও বলল।অনেকেই মেনে নিলো আবার অনেকেই মানে নি তবে আহিনের মা খুশী হয়েছে সন্তানের খুশীতেই মায়ের খুশী।আর আয়ুশীর মা বাবাও মেনে নিলেন।

আবার এদিকে এয়ারপোর্টে বসে বসে আরশি ভাবছে ভালোই হলো আহিন আয়ুশীকে পেলো।আমি চাই না ওরা দুজন আলাদা হোক এইজন্যই ওদের এক করে দিয়ে এলাম।আগের বার পারি নি।এবার সফল।বিদেশ গিয়েও এবার শান্তি পাবো।

বাসর রাত….

আয়ুশী আহিনের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আর আহিন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়া মধ্যে যতোটা আনন্দ তা আজ অনুভব করছে আহিন একইভাবে আয়ুশীও অনুভব করছে ভালোবাসার স্পর্শগুলো

সমাপ্ত