তুমি যে আমার পর্ব :- ০১

0
3903

গল্প :- তুমি যে আমার
পর্ব :- ০১
Writer :- Kabbo Ahammad

~আজ থেকে ঠিক ১৮ দিন পর আমার বিয়ে,
কিন্তু আমি আজকে আমার হবু বরকে নিয়ে এসেছি তার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য।
অবশ্য আমি গাড়িতে বসে আছি তারা দুজন রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে কথা বলছে, আমি ইচ্ছে করে যাই নি। কারন আমি গেলে ব্যাপারটা হয়তো ভালো দেখাত না, শুনেছি তাদের মধ্যে নাকি ঝগড়া হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই।

বাবা-মার পছন্দের অমতে নাকি তিনি এই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেছিলেন, এখন কোনমতেই তার পরিবার এই মেয়েকে মেনে নিতে চাচ্ছে না। যাই হোক সেই ব্যাপারে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই যার জীবন সেই ভালো বুঝবে। ছেলেটা দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম প্রথম দেখাতে যে কোন মেয়েরই তাকে ভালো লাগবে। এ পর্যন্ত তার সঙ্গে আমার তিন বার দেখা হয়েছে, প্রতিবারই আমাদের ফ্যামিলি একসাথে ছিলো।

তবে এবার আলাদা করে দেখা করতে দিয়েছে, আমি গাড়িতে বসে বসে চুইংগাম খাচ্ছি আর ভাবছিলাম ভিতরে কি বলছে না বলছে এসব নিয়েই, তখন হঠাৎ করে দেখলাম ছেলেটি আমার দিকে মানে গাড়ির দিকে আর কি চলে আসলো। তার চোখ মুখ একদম লাল বর্ণ হয়ে গেছে বোঝাই যাচ্ছে খুব বেশি রেগে আছে,,
আমি এজন্য আর কোনো কথা বাড়ালাম না, সে গাড়ির ভেতরে এসে বসলো এসে ধাপ করে দরজাটা লাগিয়ে দিল।

তবে আমার বুঝতে বাকি রইলো না তার ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে, ঠিকঠাকমতো আমি শিওর হওয়ার জন্য তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

–“এক্সকিউজ মি আপনার কি ব্রেকআপ হয়েছে? (আমি)

সে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো।

–“জ্বী হ্যাঁ আমার ব্রেকআপ হয়েছে.. (ওনি)

–“এখন কি তাহলে আপনাদের এক হবার কোন চান্স নেই? (আমি)

–“না আমাদের আর এক হবার কোন চান্স নেই আর একথা নিয়ে আমাকে আর কিছু বলবেন না। (ওনি)

–“আচ্ছা ঠিক আছে..
.
.
.
আমার অবশ্য বেশ হাসি পাচ্ছে তবে তাকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। কাব্য এমনিতেই বেশ রেগে আছে, এখন যদি তার সামনে হাসি, তাহলে নির্ঘাত সে আমায় বকা দিবে। যাই হোক আমার বেশ মজা লাগছে।
মজা লাগার পেছনে অবশ্য কারণ ও আছে। এখন সব কথা মনে-মনে বলছি, তার সাথে কোন কথা বলছি না।

আমার অবশ্য লোকটার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না কারণ যখনই কোনো কথা বলে বের হয় সেটা হাসি মুখে না, মুখটা কালো করেই বের হয়। কিন্তু এখন চিন্তা হলো আমার তো মনে হয় বিয়ে করা লাগবে। আর মাত্র ১৮ দিন বাকি। কি করে বিয়ে ভাঙবো?

ভেবেছিলাম এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না কিন্তু এই ছেলের ওতো গার্লফ্রেন্ডের সাথে আর মিলছেনা। এটা হলো কিছু? কেমন টা লাগে?

–“আপনি শপিং এ যাবেন না? (হঠাৎ কাব্য বলে উঠলো)

–“এখন আর শপিং….. (আস্তে করে বললাম)

–“সরি? কিছু বললেন?

–“না তেমন কিছু না। আপনি আমায় বাসায় নামিয়ে…..

এমন সময় কাব্যর আম্মু কল দিলেন আমার নাম্বারে।

–“আসসালামু আলাইকুম আন্টি

–“ওয়ালাইকুম আসসালাম মা কেমন আছো তুমি? আর হ্যাঁ আমাকে এখন থেকে আর আন্টি বলবেনা।
আর ১৮ দিন পরে তো বাসায় চলে আসছো তখন কি আন্টি বলে ডাকবে আমাকে? এখন থেকে মা বলে ডাকার অভ্যাস করো। (আমি ফোনটা লাউডে দিয়েছিলাম রিসিভের সময়)

কথাটা শুনেই আমি কাব্যর দিকে তাকালাম অসহায় দৃষ্টিতে। দেখি ছেলেটা কিছুই বলছে না, ওই চোখ মুখ ফুলে রাগ করে বসে আছে। লাল বর্ণের বানিয়ে রেখেছে মুখটাকে। আমি মনে মনে বলছি।

“গেরাকলে তো আমারই এখন পেশনি খেতে হবে।

–“আচ্ছা ঠিক আছে মা আমি আপনাকে মাই বলবো..

–“আচ্ছা মিরা মামনি শুনো, তুমি আর কাব্য আজকে সারাদিন ঘুরাঘুরি করো কেমন? রাতে ও তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিবে। আমি তোমার আম্মু-আব্বুর সাথে কথা বলেছি আর কাব্যর নাম্বারে একটা টেক্সট দিয়ে দিয়েছি। তোমরা এখন থেকে যত নিজেদের সাথে সময় কাটাবে তত বেশি ভালো। (কাব্যর আম্মু)

এই ছেলের সাথে আমি কি করে থাকবো সারাটা দিন? সে তো কথাই বলেনা আমার সাথে, সারাটা ক্ষণ মুখ গম্ভীর করে রেখে দেয়। তার উপরে মাত্র ব্রেকআপ হয়েছে, এখন ওর আম্মুকে হ্যাঁ বলে ফোনটা রাখলাম।
তবে আমার বেশ মজা লাগছে আবার ভয়ও কাজ করছে।

–“আচ্ছা আমাদের কি বিয়ে ভাঙ্গার আর কোন চান্স নেই? (আমি)

–“মনে তো হচ্ছে না, (কাব্য)

–“তাহলে কি এখন আপনাকে আমার বিয়ে করা লাগবে? (আমি)

–“এক্সকিউজ মি? (কাব্য)

–“মানে হচ্ছে কি… আমি তো বিয়ে করতে চাই না, আপনি তো জানেনই। (আমি)

–“হ্যাঁ আমিও তো চাইনি আর এজন্যই তো আমরা বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম কিন্ত এখন… (কাব্য)

–“কিন্তু এখন সমস্যা হল আপনিও সিঙ্গেল আমিও সিঙ্গেল আর এমন অবস্থায় আর কিছু করার মতো আমাদের সুযোগও নেই, তবুও কিছু একটা তো করতে হবে।

“আচ্ছা আমার এখন অনেক স্ট্রেসড লাগছে আপনি আমাকে প্লিজ একটু পার্লারে দিয়ে আসবেন?? (আমি)

–“কি পার্লারে কেন? আই মিন এখন পার্লারে যাবেন ভরদুপুরে? (কাব্য)

–“হ্যাঁ এখনি যাবো আমার একটু রিলাক্স হওয়ার দরকার।

–“রিল্যাক্স হতে আপনি পার্লারে যান?

–“জ্বী আমি রিলাক্স হওয়ার জন্য পার্লারে যাই।

কাব্য তখন মনে মনে ভাবছে,,
“কি অদ্ভুত মেয়ে’রে বাবা রিলাক্স হবার জন্য নাকি সে পার্লারে যায়।

–“কি হলো?

–“না কিছু না, আমি আপনাকে নামিয়ে দিচ্ছি তবে আপনার কতক্ষণ লাগবে পার্লারে??

–“এইতো ঘন্টা দুয়েক।

–“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে আশেপাশে কোথাও থাকছি।

তারপর কাব্য আমাকে পার্লারে নামিয়ে চলে গেলেন,
আমিও ভাবলাম যাক বাঁচা গেল কিছুক্ষনের জন্য।

এদিকে কাব্য ভাবছে,
মেয়েটা এরকম কেন? এ অদ্ভুত ব্যাপারটা আমার মাথায় ঠিক খেলেনা। একদম বাচ্চাদের মতো….
.
.
চলবে………….