তোমাতেই আমি পর্বঃ০৮

0
1901

তোমাতেই_আমি
#পর্ব_০৮
#Tabassum_Kotha

— মীরা তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে তোমার সাথে এতো অন্যায় করার জন্য? তুমি আমাকে ক্ষমা না করলে আমার আর কিছুই অবশেষ থাকবে না।

আমি কি উত্তর দেবো ভেবে পাচ্ছি না। এদিকে বাবার সাথে অর্ণবের দেখা করানোটাও অনেক জরুরি।

— আপনি কি আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবেন? পুরনো সব কিছু ভুলে নতুন ভাবে সম্পর্কগুলো শুরু করার একটা চেষ্টা করি আমরা?? বাবা আপনাকে দেখলে ভীষণ খুশি হবেন। একবার চলুন না আমার সাথে প্লিজ!

অর্ণব কিছু একটা ভেবে মীরার সাথে বেরিয়ে পরলো। গাড়িতে মীরা ড্রাইভিং সিটে বসলে অর্ণব বেশ অবাক হয়। তার থেকেও বেশি অবাক হয় যখন দেখে মীরা বেশ ভালো ড্রাইভ করছে। সারা রাস্তা অর্ণব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মীরার দিকে। মীরা যেনো তার জীবনে কোনো এঞ্জেল হয়ে এসেছে। একটা মৃদু হাওয়ার মতো তার জীবনে এসে ঝড়ের মতো সব বদলে দিলো। তার ভিতরের সব ক্ষতের ঔষধ হয়ে এসেছে মীরা।

শত অপরাধ বোধের মাঝেও একটা ম্লান হাসি ফুঁটে উঠে অর্ণবের ঠোঁটে। গাড়ি এসে থামে বিশাল বড় একটা বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে অর্ণব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে এটা কার বাড়ি, কেননা অর্ণব মীরাদের বাড়ি আগেই দেখেছিল। আর বাড়িটা একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়ি ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় এই বাড়িটা কোনো মহলের থেকে কম নয়।

— কি ভাবছেন? চলুন ভিতরে চলুন। বাবা ওয়েট করছে।

— এই বাড়ি কার? এটা তো তোমাদের বাড়ি নয়!

— ভিতরে চলুন ভিতরে গেলেই বুঝতে পারবেন।

অর্ণব মীরার পিছু পিছু বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। বাড়িটা যে কোনো কোটিপতির সেটা বুঝতে আর বাকি নেই অর্ণবের। কিন্তু বাড়িটা কার এটায় এখনও তার সংশয় রয়েছে। ভিতরে ঢুকতেই মীরা মহুয়া নামের মেয়েটিকে ডাকতে শুরু করলো। মহুয়া মীরার ছোট বোন, অর্ণব তাকে হসপিটালে দেখেছিল। একটু পরেই মহুয়া ছুটে এলো মীরার কাছে।

— মহুয়া, মি. অর্ণব কে বাবার ঘরে নিয়ে যাও। আই হোপ বাবা মি. অর্ণবকে দেখে খুশি হবেন।

— জ্বি আপু। স্যার ভীষণ খুশি হবেন। ইনফ্যাক্ট স্যার আপনাদেরই ওয়েট করছিলেন।

— তুমি মি. অর্ণবকে নিয়ে যাও। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। আমি অনেক ক্লান্ত একটু বিশ্রাম প্রয়োজন আমার।

মীরা আর মহুয়ার কথা সব অর্ণবের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মহুয়া নিজের বাবা কে স্যার বলছে, মীরা নিজের ঘরে যেতে চাইছে! তবে কি এটা মীরাদের বাড়ি! কিন্তু মীরা রা এতো বড় বাড়ি এফোর্ড করলো কিভাবে! অনেক প্রশ্ন অর্ণবের মস্তিষ্কে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু উত্তর নেই। মহুয়া অর্ণবকে আবরার খান (মীরার বাবা) এর ঘরে নিয়ে গেলেন। অর্ণবের মামার ঘর টা নিচ তলায়। ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকার আগে অর্ণব আরেকটু দাড়িয়ে মীরার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার দৃশ্য টা দেখে নিলো। এক মুহূর্তের জন্য অর্ণবের মনে হলো তার মীরা তার থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে। যদিও এমন মনে হওয়ার যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ সে পেলো না।

— এসো অর্ণ। বসো। (রকিং চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় আবরার খান বললো)

অর্ণব কিছু না বলে ঠায় দাড়িয়ে রইলো। সামনে থাকা মানুষটা যদিও তার মামা হয় তবুও সে চোখ মেলাতে পারছে না। সংকোচে বারবার মাথা নেমে আসছে তার।

— আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।

— তোমার কিছু বলতে হবে না অর্ণ। আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম অনেক আগে থেকেই। আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। অনুকে বাড়ি থেকে বের করার সময় আমি একবারের জন্যও বুঝতে পারি নি অনু নিজের জীবন দিয়ে দেবে। এতো বছর আমি ভুল ভেবেছিলাম যে অনু আমার কথায় অভিমান করে আর ফিরে আসে নি।

কিছুদিন আগেই আমি জানতে পারি আমার সেই ছোট্ট বোন টি আর বেঁচে নেই। অনুকে আমি সন্তানের মতো মানুষ করেছিলাম। ছোট বোন হিসেবে যতো আদর তার পাওনা ছিল হয়তো তার থেকে বেশিই ভালোবাসতাম। এজন্য অনুর পালিয়ে যাওয়াটা আমাকে কষ্ট দিয়েছিল। নিজের কষ্ট টা আমি একটা সময় ভুলে গেলেও বিয়ের আসরে বাবার মারা যাওয়াটা মানতে পারি নি। বাবার শোকে মাও কিছুদিন পর আমাকে ছেড়ে চলে যায়। অনেক একা হয়ে পরি আমি। আমাকে সামলানোর মতো কেউ ছিল না। আর এই একাকিত্বের জন্য অনুকেই দায়ী করেছিলাম। অনুর মৃত্যুর কথা শুনে মনে হয়েছিল কেউ আমার কলিজায় ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। অথচ দেখো আমার কলিজার টুকরার মৃত্যুর খবরটা আমি আঠারো বছর পর পেয়েছি। অনুর মৃত্যুর খবর আমাকে যতোটা না কষ্ট দিয়েছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি এটা জানার পর যে অনু আমার জন্য আত্মহত্যা করেছে। কথাটা জানার পর আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কলিজার টুকরার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। এর চেয়ে বড় কষ্ট হয়তো আর কিছু নেই পৃথিবীতে।

তোমাকে আমি ১ বছর ধরে খুঁজছিলাম। শুধু ক্ষমা চাওয়ার জন্য। একবার তোমার কাছে গিয়েছিলামও। কিন্তু তুমি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অপমান করে বের করে দাও।

— আমাকে ক্ষমা করবেন মামা, আমি আম্মুর মৃত্যুর পর থেকেই আপনাকে ঘৃণা করে এসেছি। ভেবেছি আপনিই আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী। কিন্তু আজ আমার সেই ভুল ধারণা ভেঙে গেছে।

— ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। আর তোমার করা ব্যবহারে আমি কোনো কষ্ট পাই নি। উল্টো আমার একটা ভুলের জন্য তুমি এতোগুলো বছর ধরে কষ্ট পেয়ে আসছো।

— আমরা কি সব ভুলে নতুন ভাবে সব শুরু করতে পারি?

— সব ভুলে নতুন ভাবে শুরু করার জন্যই এতো জল্পনা কল্পনা করা হয়েছিল।

— মানে?

— মীরাকে আমিই পাঠিয়েছিলাম তোমার কাছে। অবশ্য প্ল্যানিং টা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তোমার বাবা অঙ্কুরও ছিল আমার সাথে। অঙ্কুরই আমাকে বুদ্ধি দিয়েছিল মীরাকে তোমার অফিসে তোমার PA বানিয়ে পাঠানোর জন্য। তোমার সাইকাট্রিক হেল্প প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তুমি সাইকাট্রিষ্ট এর হেল্প নিতে চাও নি। এজন্য মীরাকে তোমার কাছে পাঠানো। মীরা তোমার প্রতিটা কাজের হিসেব ডাক্তার কে দিতো। ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন গুলো তোমাকে দিতো।

অর্ণব হতবাক হয়ে তার মামার কথাগুলো শুনছে। মীরার সাথে কাটানো এতোদিনের মধ্যে একবারের জন্যও মনে হয় নি মীরা নাটক করছে। মীরার অসহায়ত্ব, তাকে দেখে ভয় পাওয়া নাটক ছিল! অর্ণবের প্রতি করা কেয়ার গুলোও কি তাহলে নাটক ছিল! তবে কি মীরা অর্ণবকে ভালোবাসবে না!
মামার ডাকে অর্ণব ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে।

— মীরা এসবের জন্য প্রথমে রাজি ছিল না। আমার কসম দিয়ে ওকে রাজি করিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার ট্রিটমেন্ট হতে থাকলে তুমি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আর একবার সুস্থ হয়ে উঠলে তোমাকে সব বলে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে চেয়েছিলাম। আমি জানি অর্ণ আমরা যা করেছি সেটা তোমার প্রতি অন্যায় হয়েছে। এভাবে মিথ্যা বলে ছলনা করে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। সরি বাবা। অতীতের সব ভুল আর এখন করা সব অন্যায়ের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দেও।

অর্ণব যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। মীরার সাথে কাটানো সময়গুলো নাটক ছিল ভাবতেই তার কলিজা কেঁপে উঠছে। অর্ণবের মনে অজানা এক ভয় কাজ করছে,, মীরাকে হারানোর ভয়।

আবরার খান রকিং চেয়ার থেকে উঠে অর্ণবকে বুকে জরিয়ে নিলো। এতো বছর পর স্নেহ ভরা আলিঙ্গনে অর্ণবের চোখ ভরে আসে। মুহূর্তের জন্য সে মীরাকে নিয়ে তার সব ভয় চিন্তা ভুলে যায়। আবরার মাহমুদ অর্ণবকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। তার মনে হয় তার অনু আবার তার বুকে ফিরে এসেছে। তার জেদের বসে সে তার বোন কে হারিয়েছে। কিন্তু বোনের শেষ স্মৃতি টাকে যেকোনো মূল্যে আগলে রাখবে।

মামা ভাগ্নে আবেগের সমুদ্রে ভাসছিল পিছন থেকে মীরা গলা খাকাড়ি দিয়ে বাঁধার সৃষ্টি করলো।

— উফফ বাবা আবারও শুরু হয়ে গেছে তোমার কান্না কাটি! এই তোমার কান্না কাটি থামানোর জন্যই কিন্তু এতোকিছু করেছিলাম।

অর্ণব মীরার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। মীরার পরণের শাড়িটা সে অনেক আগেই পাল্টে নিয়েছে। একটা হোয়াইট টি শার্ট আর শর্টস্ পরে আছে সে। এই পোশাকে মীরাকে অনেক বেশি আলাদা লাগছে। মীরাকে অর্ণব সবসময় শাড়ি আর চুড়িদারেই দেখেছে। এভাবে আগে দেখে নি তাই হয়তো অনেক উদ্ভট লাগছে। আবরার খানের কথায় অর্ণবের ধ্যান ভাঙে।

— সরি রে মা। বুড়ো বয়সে আবেগটা বেড়ে যায়। অর্ণব! তুমি মীরার সাথে যাও। তোমার ঘর মীরা দেখিয়ে দেবে। আজ থেকে তুমি আমাদের সাথে থাকবে।

— না মামা আমি এখানে থাকতে পারবো না। আমি আমার বাড়িতেই ভালো আছি।

— ছোট থেকে তো একাই ছিলে। কয়টা দিন না হয় আমার সাথে থাকো।

— বাবা তুমি রেষ্ট নাও আমি মি. অর্ণবকে নিয়ে যাচ্ছি। চলুন!

মীরা আর অর্ণব পাশাপাশি হাটছে গন্তব্য উপরের ঘর। দুজনেই চুপচাপ হেটে যাচ্ছে, কারো মুখে কোনো কথা নেই। নীরবতা কাটিয়ে মীরা বলতে শুরু করলো,

— আর ইউ ওকে নাও?

— হুম। তোমাকে এই বেশভুষায় দেখতে অনেকটা আজিব লাগছে।

— এটাই আমি।

অর্ণব কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কেনো যেনো এই মীরাকে ভীষণ অপরিচিত লাগছে তার কাছে। যেই মীরার প্রতি সে আসক্ত হয়েছিল সেই মীরা কোথায়!!

— আসলে,, আপনার বাড়িতে আমাদের একসাথে থাকার কথাটা কাউকে বলবেন না প্লিজ। বাবা বা সিদরাত জানতে পারলে,,, আমি চাই না বাবা বা সিদরাত এই ব্যাপারে কিছু জানুক। সিদরাত কে বলেছিলাম আমি আপনার বাসায় ছিলাম।

— সিদরাত মাহমুদ! তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

মীরা কিছু বলার আগেই মীরার একটা কল এলে সে চলে যায় অর্ণবকে ঘরে রেখে। সেদিন রাতে মীরার সাথে আর অর্ণবের কথা হয় না।

রাতে অর্ণব শুয়ে আছে কিন্তু দুচোখে ঘুম নেই। মামার সম্পর্কে তার পূর্ব ধারণা পাল্টালেও নতুন একটা চিন্তা তার মাথায় ভর করেছে। মীরাকে নিয়ে সে বেশ চিন্তিত। মীরা কি তার ভালোবাসা মেনে নেবে! সব যেখানে নাটক ছিল সেখানে কি মীরার মনে তার জন্য কোনো ফিলিংস আসবে! ভীষণ ভয় করছে অর্ণবের। বারবার মীরাকে হারানোর ভয়টা উঁকি দিচ্ছে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ব্যালকোনিতে যেতেই অপর পাশের রুমের ব্যালকোনিতে মীরাকে দেখতে পায় অর্ণব।

চাঁদের রূপোলি আলোয় রূপোয় মোড়ানো মনে হচ্ছে মীরাকে। সেই সাথে দক্ষিণ দিক থেকে আসা দমকা হাওয়া মীরার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। এখন যদি মীরা একটা শাড়ি পড়া অবস্থায় থাকতো তাহলে হয়তো অর্ণব সব দেয়াল উপেক্ষা করে ছুটে যেতো তার মীরার কাছে।

একদন্ড মীরার দিকে তাকিয়ে থাকতেই মীরা আর অর্ণবের চোখাচোখি হলে মীরা চোখ নামিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ আগেও যেই স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে মীরা অর্ণবের সাথে কথা বলছিল সেটা এখন আর নেই। অনেকটা সংকোচ এসে সেই জায়গা টা দখল করে নিয়েছে। মীরা তার গায়ের ওরনা টা গায়ে জরিয়ে রুমের ভিতরে চলে এলো।

অর্ণবকে একনজর দেখতেই তো ব্যালকোনিতে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম, তাহলে কেনো তাকে মন ভরে একনজর দেখতে পারলাম না। এতো সংকোচ, এতো জড়তা কেনো! আর কেনোই বা আমি অর্ণবকে দেখার জন্য ব্যালকোনিতে অপেক্ষা করছিলাম। অর্ণবকে দেখার ইচ্ছা টা অন্যায়, তার উপর আসা আবেগ টা ভিত্তিহীন। আমি অন্যকারো বাগ্দত্তা। এটা তো আমি ভুলতে পারি না। তাহলে কেনো চোখ বারবার তাকে সামনে পেতে চায়!! বুকের বা পাশের চিনচিনে ব্যথাটা আবার বেড়ে যাচ্ছে। আমি অন্যকারো হয়ে যাবো কিছুদিন পর। আমার কোনো অধিকার নেই অর্ণবের প্রতি দুর্বল হওয়ার। আর এমনিতেও আমি তাকে ঘৃণা করি। মানুষটা কতো টর্চার করেছে আমাকে। আমি তাকে ঘৃণা করি। আসলেই কি আমি অর্ণবকে ঘৃণা করি!!

আর কিছু চিন্তা করতে পারলো না মীরা। বুকের বা পাশটা তার ভীষণ ভারী হয়ে আছে। বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পরলো। মাঝে মাঝে দুচোখের কার্নিশ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পরছে। সেটা মুছে ফেলার কোনো আগ্রহ তার মাঝে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো একা আছে তাই পানি মোছার কোনো তাড়াহুড়া নেই।

ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে এক বারে ৫/৬ টা সিগারেট শেষ করে দাড়িয়ে আছে অর্ণব। অনেক কিছু চলছে তার মনে। অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। সব প্রশ্নের উত্তর তাকে পেতে হবে। কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে সেটা সে জানে না। হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে গেলো সে। যদিও সারারাত বিছানায় এপাশ উপাশ করেই কাটিয়ে দিয়েছে।

সকালে আবরার খানের সাথে নাস্তার টেবিলে বসে আছে অর্ণব। সকাল থেকেই তারা দুজন একসাথে ছিল। অনুর ছোট বেলার অর্ধেক গল্প ইতোমধ্যে শেষ করে ফেলেছেন আবরার। অর্ণবও অনেকটা মিশে গেছে মামার সাথে। আবরার খান বারবার অঙ্কুরের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছেন কিন্তু সুযোগ খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন মীরা ডাইনিং টেবিলে এসে উপস্থিত হলো।

মীরাকে দেখে এবারও অর্ণব অবাক হলো। মীরা হোয়াইট জিন্স সাথে ব্লু লেডিস শার্ট পরে আছে। হাতে ব্রান্ডেড রিষ্ট ওয়াচ, পায়ে হিল। দেখতে কোনো মডেলের থেকে কম লাগছে না। কিন্তু মীরার সৌন্দর্য অর্ণবের চোখে পরছে না। অর্ণবের চোখে পরছে মীরার ছোট করে কাটা চুল গুলো। কাল রাতেও চুল গুলো কোমড় অব্দি ছিল আর এখন সেটা কাঁধ অব্দি। মীরার চুল কেটে ফেলায় অর্ণবের ভীষণ রাগ উঠছে। মীরার চুলগুলো অর্ণবকে তার দিকে টানতো। আর সে কি না!!
হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে অর্ণব রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছিল তখন সেখানে সিদরাত মাহমুদ উপস্থিত হলো। অন্তি যার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল সেই ছেলটাই এটা। মামার সাথে পরিচয় হওয়ার পর অর্ণব অন্তির কথা ভুলেই গিয়েছিল। অন্তি এখন কি করছে আর তার বাবাই বা সব জেনে কি রিয়েক্ট করেছে!!

চলবে..