তোমাতে আমাতে পর্ব-১৫

0
1861

#তোমাতে_আমাতে
লেখা আশিকা
পার্ট ১৫

— এই তুমি কি উঠতে পারছোনা। এইভাবে পরে পরে আর কত ঘুমাবা। উঠোনা..
— হুম আর একটু এইতো দুই মিনিট।
— দুই মিনিট করতে করতে তুমি এক ঘন্টা লাগিয়ে দিছো। নাহ আর না। উঠ ব্রেকফাস্ট এর টাইম হয়ে যাচ্ছে। উঠনা..
আড়মোড়া ভেংগে উঠে পড়লাম।
ধুর এরা আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবে না। বাসায় মা আর এখানে এক ইমন্যাই যথেষ্ট।
— এই তুমি বিড়বিড় করে করে কি বলছো? মনেতো হচ্ছে আমাকেই বলছো।
আমি চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম,
— কই কিছু বলি নাইতো।
— ওকে যাও কিছু বলতে হবেনা। পাচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আসবা।
— হুয়াট পাঁচ মিনিট। আমারতো দাত ব্রাশ করতেই ২০ মিনিট লাগে। শাওয়ার নিতে…
— ও মা তাই। এতক্ষন দাত ব্রাশ করে কি হয়? মুখেতো সেই লেভেলের গন্ধ! ইয়াক! বমি পায়।
— ইমন!!
কক্ষনোই না।
তুমি এইটা বলতে পারলা।
আমি বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। নাহ অপমানে লজ্জায় এই মুখ আর ওকে দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
ওর দিকে তাকাতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। অসভ্য একটা। ন্যাকামি করে আবার নিজেই। উফ্…
আমি জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের চলে গেলাম। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। তাই আজকে সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করেই রুমে আসলাম।
ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল মুছতে লাগলাম। ইমন ঠাই বিছানায় বসে আছে আর আমার দিকে আড়চোখে তাকাই আছে। তাকাই থাইকা লাভ নাইতো আইসো আর একবার কাছে। দেইখো তোমার কি হাল করি।
নিজের মনেই নিজে বিড়বিড় করতে লাগলাম। হঠাৎ করেই পিছন থেকে ইমনের স্পর্শে আমি লাফয়ে উঠি। মুহুর্তেই ওর দিকে ঘুরে তাকাতেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
— কি হলো ছাড়ো?
— উঁহু।
— কি উঁহু। ছাড়ো লেট হয়ে গেছে এমনিতেই।
— আচ্ছা ছাড়বো তাহলে একটা কিসসি। অনলি ওয়ান..
— নো চান্স। ছাড়ো..
বলেই ওকে ধাক্কা দিয়ে দিলাম।
আবার আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে ওর বুকের কাছে নিয়ে গেল।
— এই ছাড়ো বলছি ভালো হবেনা। আরেকটু আগে কি বলেছো মনে নাই!
ইমন হো হো করে হেসে উঠলো।
— অহ ওই কথা। তুমি না সত্যিই একটা বাচ্চা কিচ্ছু বুঝো না। সব তোমাকে গিলিয়ে গিলিয়ে দিতে হবে। তখন ওইটা না বললে দেখা যেত তুমি এতক্ষনেও ওয়াশরুম থেকে বের হতে না।
আমিতো মজা করছিলাম পাগলি।
আমার দুই গাল ধরে টান দিলো ও।
— এই একটু সামনে আয়নার দিকে তাকাও।
আমি পিছনঘুরে তাকাতেই ও আমার গলার কাছ হাত রেখে বললো দেখ কেমন লাল করে দিয়েছি। ফরসা গলায় দাগগুলো লাল হয়ে আছে।
মূহূর্তেই আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।
— অসভ্য একটা । আমি এখন কিভাবে সবার সামনে যাবো।
— আহা নিজে খুব সভ্য। আমারগুলো দেখাবো টিশার্ট খুলবো।
— এই একদম না।
— ওকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার নিজের উপর যথেষ্ট কনট্রোল আছে। নাহলে…
— নাহলে কি?
আমার প্রশ্নের উত্তর না দেয়েই উড়নাটা বুকের উপর থেকে নিয়ে মাথায় দিয়ে গলাসহ ঢেকে দিলো। এরপর আমার হাত ধরে টেবিলে নিয়ে গেল।

ওর আর আমার সম্পর্কটা একটা স্বাভাবিক সরলরেখা ধরেই এগুচ্ছিলো। আমার দিক থেকে ওর প্রতি ভালোবাসার কোন ঘাটতি আমি রাখিনি। যদিও স্বামীসুলভ আচরণ ও আমার সাথে করতো।
তবুও মাঝেমাঝে ওকে যখন স্টাডিরুমে পড়ে পড়ে ঘুমুতে দেখতাম তখন কেবলুকেবলি আমার মনে হতো বোধ হয় আমাকে ওর ঘাড়ে বোঝা হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে। আমি বরাবরের মতই চাপা স্বভাবের আমার কোন আচরণ দ্বারা এটা বোঝা ওর পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
সেদিন ও ইমন বরাবরের মতন আমাকে ঘুমাতে বলে পড়তে বসে যায়। আমিও পড়বো বলে ওর পাশে বই নিয়ে পড়তে বসি। একটুপর আমি যখন ঝিমুতে লাগলাম। তখন একরাশ বিরক্তি নিয়ে ও আমার দিকে তাকায়। আমার নাম ধরে ডাক দিতেই চমকে ওর দিকে তাকাই।
— ঘুমেতো ঢুলু ঢুলু করছো যাও ঘুমাতে যাও।
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম।
— কই নাতো। ঘুম পাইনি। একটুপর ঘুমাবো।
মনটা যে ওকে কাছে পেতে চাইতো ও কি সেটা বুঝেও বুঝতে চাইতো না। ওকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে যে শান্তি পাই না। কেন ও বুঝেনা। অসহায়ের মত ওর দিকে তাকালাম,
কোনকিছু বোঝার আগেই ও আমাকে টেনে টেনে বেডরুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেই। তারপর নিজেও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।
— এই তোমার না অনেক পড়া বাকী। তুমি এভাবে শুয়ে পড়লে যে?
আমার ঠোঁটে একটা আংগুল দিয়ে বলতে লাগলো,
— চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মত ঘুমাও। কথা বলোনা।
আলতোভাবে আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকলো কখন যেন শান্তির ঘুম দুচোখে ভর করে ফেলে।
সকালে দেরি করে উঠার ফলে ওকে আর বাসায় পাইনি।
আমি ব্রেকফাস্ট করে ওর স্টাডিরুমটা গুছাতে যাই। প্রায়শই বইগুলো এলোমেলো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।
বইগুলো সেলফে রাখার সময় হাত থেকে হাতের ধাক্কা লেগে কিছু বই নিচে পড়ে যায়। ওগুলো তুলতে গিয়ে একটা উল্টোনো ছবি দেখতে পাই। কৌতুহলবশত ছবিটা হাতে তুলে নেই।ছবিতে ইমন আর সাথে একটা মেয়ে এপ্রোন পড়া। পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে আর ড্রেস আপ দেখে বোঝা যাচ্ছে ওরা একি সাথে পড়ে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছবিটা দেখতে লাগলাম। খুব ক্লোজ না হলেও কাছাকাছিই দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মুখেই বিশ্বজয়ের হাসি। নানারকম ভাবনা মাথায় ঝেকে বসেছে। মেয়েটা কি ওর জাস্ট ফ্রেন্ড? কিন্তু আমাদের রিসেপশনেতো এই মেয়ে আসেনি। ওর আরো ছেলে ফ্রেন্ড ও মেয়ে ফ্রেন্ড এর সাথে আমার সেদিন আলাপ হয়েছে। কথা বলে যথেষ্ট আন্তরিক মনে হয়েছে। কিন্তু এই মেয়ে যদি ওর তেমন ফ্রেন্ড ই হবে তাহলে ওর সাথে আলাদা করে পিক তোলার কি দরকার ছিলো? তাহলে কি স্পেশাল কেউ? উফ ভাবতে পাচ্ছি না। হাত পা ঘামতে শুরু করেছে। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে বারবার ঘাম মুছতে লাগলাম। আচ্ছা আমাদেরতো বিয়ে হয়ে গেছে! আমি এই মেয়ে নিয়ে এতো ভাবছি কেন? কিন্তু যদি ওর সত্যিই কোন অ্যাফেয়ার থেকে থাকে? উহু কি শ্বাসরুরকর অবস্থা!
আচ্ছা থাকলে থাকতে পারে? আমাদেরতো সব ঠিকি আছে।
ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো,
সত্যিই কি সব ঠিকি আছে?
ইমনকি তোকে ভালোবাসে?
হ্যা ইমন আমাকেই ভালোবাসে। আমি ওর স্ত্রী। ওর উপর শুধু আমার অধিকার। আর কারো নয়।
ভেতরের আমিটা হো হো করে কুৎসিত করে হেসে উঠলো।
তুই একটা তাসের ঘরে বসত করিস। সামান্য একটা দমকা হাওয়া এসেই উড়িয়ে দিবে তোর ঘর সংসার সব। ভেসে যাবি তুই। ভেসে যাবে সব।
আবার বিদঘুটে হাসিটা শোনা যাচ্ছে।

চুপ করো আর শুনতে পারছি না। দোহায় এবার চুপ করো।
আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দেতো এই ছবিটা এখনো এখানে কি করছে? যদি এই ছবির কোন গুরুত্বনাই থাকতো।
— আদৃতা!
আমি চমকে পিছনে তাকাই।
— এখানে কি করছো? তোমাকে আমি কখন থেকে খুজছি। কোথাও পাচ্ছিলাম না।
আমি হতবিহ্বল হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
মা আমার দুইবাহুতে আলতোকরে চেপে ধরলেন।
— কি হয়েছে মা? তুমি এমন মুখ করে আছো কেন?.ইমন কিছু বলেছে? আমাকে বলো ক্লিয়ার করে। ওর কি হাল আমি করি তুমি দেখো।
আমার সাধাসিধা বোঁকা বোঁকা চেহারা দেখে জগতের সব মানুষিই বুঝে যায় যে সত্যিই আমার কিছু হয়েছে। নিজের অনুভুতিগুলো লুকোনোর ক্ষমতা কখনোই আল্লাহ আমাকে দেইনি।
— কিছু না মামনি । একটু মাথা ব্যাথা করছে।
বলেই ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলাম।
— তোমার হাতে এইটা কি?
— কিছুনা।
বলেই লুকোতে গিয়েও লুকোতে পারলাম না। মামনী ছবিটা হাতে তুলে নিলো।
তারপর কেমন যেন একটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসিটা আমার কাছে রহস্যজনক লাগলো।
ঢোক গিলে বলতে লাগলো।
— এই পিক কোথায় পেলে তুমি?
— এখানেই ছিলো।
— এ ইউশা ইমনের বেস্ট ফ্রেন্ড। মেয়েটা বড্ড চঞ্চল। ওর চপলতা যে কারো মন অনায়াসেই ছুঁয়ে যেতে পারে।
মুখ ফসকে কথাটা বলতে চাইলাম, তাহলে বিয়েতো তো আসলো না? বলতে চেয়েও একটা সংকোচে বলতে পারলাম না।
— আচ্ছা তুমি রুমে গিয়ে কিছুক্ষন বরং রেস্ট নাও।
মামনী চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ পিছন ঘুরে আমার দিকে তাকালো,
— শোন ইমন আসলে আগে আমার রুমে পাঠাবা। ওর সাথে কিছু কথা আছে।

রুমে এসে কিছুক্ষন ঘুমানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসতেছিলো না। আর অদ্ভুত চিন্তাগুলো মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারছিলাম না। কেমন যেন একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।

মামনী জোড় করে লাঞ্চ করাই দিছে। গলা দিয়ে খাবার নামছিলো না। তবুও মামনী সামনে তাই কিছু খেতে হলো।
রুমে গিয়ে চুপটি করে বসে ছিলাম।
৩টা ১০ বাজে ফোনটা হাতে নিতেই চোখ আটকে গেল 5 Missed call। ওপেন করতেই স্ক্রিণে ইমনের নাম ভেসে উঠলো।
একটুপর কলিংবেল বেজে উঠলো।
চলবে…