তোর নামের বৃষ্টি পর্ব-২৬

0
778

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২৬
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
হঠাৎ করে ত্বকি মেঘার হাত ধরে নিয়ে যাওয়াতে মিমিমা সহ ঘরের উপস্থিত সবাই মিটমিট করে হেঁসে যাচ্ছে। শুধু মাএ মামিমার বোন সারার মুখে হাঁসির চিহ্ন নেই। সারা চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। তার চিন্তার একমাত্র কারন মেঘা কি ত্বকির ওয়াইফ নাকি বোন। এত ছোট মেয়ে কিভাবে কারো বউ হতে পারে। হাজারো চিন্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সারার মাথায়। অবশেষে সে চিন্তার অবসান ঘটাতে মুখ ফুঁটে মিমাকে চিন্তাত সুরে বলে উঠলো,

-মিমিমা। (সারা)

সারার ডাক শুনে মিমিমা হেঁসে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

-হ্যাঁ, কিছু বলবি। (মিমমা)

-হুম। একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল। (সারা)

-বল। কি হয়েছে? (মিমমা)

-ওই মেঘা আছে না, তোর চাচাতো বোন। (সারা)

-হুম, কি করেছে মেঘা। (মিমমা)

– একটু আগে একটা ছেলে এসে মেঘার হাত ধরে নিয়ে গেল। সে কি মেঘার ভাই? (সারা)

সারার কথার উওরে মিমমা বলল,

-হ্যাঁ ওই ছেলেটা মেঘার ভাই। (মিমমা)

মিমিমার কথা শুনে সারার ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখে দেখা দিল। চিন্তার আঁধারে ঢেকে থাকে কালো মুখটি খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।

সারা মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়ে মিমমা বলে উঠলো,

-কিন্তু,, (মিমমা)

মিমিমার কথা বলা শেষ করতে না দিয়ে সারার বলল,
-কিন্তু কি? (সারা)

-কিন্তু এখন ওই লোকটা মেঘার স্বামী। কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে ওদের। (মিমমা)

মিমিমার কথা শুনে সারার মনের সব আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। নিমেষেই মুখটা আগের ন্যায় কালো হয়ে গেল। সারা বিচলিত কন্ঠে মিমমা কে বলল,

-মেঘা তো অনেক ছোট। এই বয়সে তোরা ওকে বিয়ে দিয়ে দিলি। (সারা)

-মেঘাকে বিয়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না আমাদের। আমরা জানতাম না যে, ওর বিয়ে হয়ে গেছে। চাচি বিয়ের পরের দিন আমাদের খবরটা জানিয়েছেন।(মিমমা)

সারা মিমমার সম্পন্ন কথা শুনে মন খারাপ করে বলল,

-ওহ।(সারা)

,,
প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল, আমি চুপ করে ত্বকি ভাইয়ার সামনে বসে আছি। কিছুক্ষণ আগে সে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে যেন আমি ঘর থেকে বের হতে না পারি। আজকে বোধহয় আমাকে আর মিমিমা আপুর কাছে যেতে দেবেন না তিনি। দূর, কত ইচ্ছে ছিল আপুর বর কে দেখব। শাস্তি স্বরূপ রুম থেকে বের হতে দিবেন না স্পষ্ট বলে দিয়েছে ভাইয়া। ভালো লাগছে না। এভাবে চুপ করে মূর্তির ন্যায় বসে থাকতে খুবই বিরক্ত লাগছে আমার। ত্বকি ভাইয়া চেয়ারে বসে গম্ভীর মুখ করে মনোযোগ সহকারে ফোন স্কোল করছেন। দেখে মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। আমি তাকে আড় চোখে পর্যবেক্ষণ করছি। যত বার তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ঠিক তত বার যেন বুকের ভেতর অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। একটা মানুষ এতটা গম্ভীর হতে পারে কি করে, তাকে না দেখলে কখনো জানতে পারতাম না।

অন্যদিকে,

ভার্সিটি থেকে একা একা বাসায় এসেছে তিথি। এসেই সাদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ হাঁটুতে মুখ গুঁজে, ফ্লোরে বসে আছে সে। তার চোখ দিয়ে ঝরঝরে জল পড়ছে। তবে দুঃখে নয় বরং খুশীর জল। এতো খুশি সে কখনো হয় নি। খুশিতে প্রায় পাগল পাগল হয়ে গেছে। আজ যদি নিলা চিঠিটা সাদকে না দিত তাহলে সে কখনো জানতেই পারত না সাদ তাকে কতটা ভালোবাসে। নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে তার। সাদের বলা প্রতিটি কথা তার বুকে যন্ত্রণা সৃষ্টি করছে। সে সহ্য করতে পারছে না। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। খুব কষ্ট হচ্ছে, এতটা কষ্ট হচ্ছে যে নিজেকে শ্বাসকষ্টের রোগী মনে করছে। তিথির আর রুমের মধ্যে থাকতে পারল না। দৌঁড়ে চলে গেল সাদের মায়ের রুমে। মুখ দিয়ে কোন কথা না বলে, ছূটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। সাদের মাকে শক্ত করে চেপে ধরে কাঁদতে লাগল সে। এবার আর আস্তে বা মুখ বুজে নয়। জড়ে জড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

হঠাৎ তিথির এমন কান্ডে সাদের মা ভয় পেয়ে উঠলেন। সেও তিথিকে দু হাত দিয়ে আগলে ধরলেন। তিথির মাথায় হাত বুলিতে লাগলে। ভাঙা গলায় তিথিকে জিজ্ঞেসা করলেন,

-কি হয়েছে তোমার মা, কাঁদছ কেন? সাদ কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছে? (সাদের মা)

সাদের মায়ের কথা শুনে তিথি ও স্পষ্ট সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

-মা, আপনার ছেলে আমাকে কোন কষ্ট দেয় নি। কিন্তু আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। (তিথি)

তিথির কথা শুনে সাদের মায়ের মুখে এক চিলতে হাঁসি ফুটে উঠেছে। সে মনে মনে বলল, দেরিতে হলেও মেয়েটা সাদকে বুঝতে পেরেছে।

-ও মা, আমি না অনেক পাপ করে ফেলেছি। (তিথি)

তিথির কথাই সাদের মা চুপ করে রইলেন।তিথি পাগলের মতো আবার ও বলতে লাগল,

-জানেন মা,আল্লাহ আমাকে কোনদিনও ক্ষমা করবেন না। (তিথি)

সাদের মা তিথিকে সামনে নিয়ে বললেন,

-আরে বাবা, তুমি আবার কি পাপা করেছে? হুম? (সাদের মা)

-আমি যে আমার স্বামীকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। মা, আপনি তো বড়ো আপনি একটু বলুন না, আল্লাহ কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না? আমাকে কি আমার পাপের শাস্তি দেবে? (তিথি)

সাদের মা তিথির চোখের পানি মুছে দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার মুখের অবস্থা প্রচুর খারাপ হয়ে গিয়েছে ।ফর্সা মুখটা চোখের জলে গোলাপি রং ধারন করেছে। চোখ মুখ ফুলে একদম বেলুনের ন্যায় ধারন করেছে। সাদের মা কি বলে তিথিকে শান্তনা দেবে তা ভেবে পাচ্ছে না।

-পাগলী কাঁদে না। চিন্তা কর না আল্লাহ তোমাকে কোন শাস্তি দেবে না। তুমি তো ইচ্ছে করে কিছু কর নি। (সাদের মা)

-সত্যি? (তিথি)

-হুম সত্যি। আর একদম কান্না করবে না। ঠিক আছে? আমার ছেলে যদি তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে, তাহলে তো সে পাগল হয়ে যাবে। তাই কান্না বন্ধ কর। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি আজ নিজের হাতে আমার ছেলের বউকে সাজিয়ে দিতে চাই। (সাদের মা)

সাদের মায়ের কথা শুনে তিথির কান্না বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

-তাড়াতাড়ি যাও। আমি চাইছি আজকে পর থেকে আমার ছেলেটা তোমার জন্য কষ্ট পাক। আমি তোমাদের সুখে দেখতে চাই। দোয়া করি তোমারা সুখে সংসার কর। (সাদের মা)

কথাগুলো বলে কিছুটা থেমে সাদের মা তিথির কপালে চুম্বন করে বললেন,

-রুশাকে আর একা রেখ না। রুশার জন্য তাড়াতাড়ি একটা বোনের ব্যবস্থা কর। বল তো মেয়েটা আর কতদিন একা থাকবে। (সাদের মা)

সাদের মায়ের কথার মানেটা বুঝতে বাকি রইল না তিথির। লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে উঠেলো।

এদিকে,
রুমের বাইরে চাচি এসেছেন আমাকে নিতে। মিমিমা আপুর বিদায়ের সময় হয়ে গেছে তাই আমাকে যেতে বলেছে চাচি। ত্বকি ভাইয়া চাচির কথা শুনে আমাকে বললেন,

-এই স্কার্ফ পর। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা উওরে আমি ভয়ে বলে উঠলাম,

-ওড়না পড়লে আবার স্কার্ফ পড়ব কেন? (মেঘা)

-চুপ। কোন কথা না। তুই স্কাপ ও পড়বি সাথে ওড়না ও পড়বি। এটা তোর শাস্তি। (ত্বকি)

তার কথার অবাধ্য না হয়ে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে মাথায় আলাদা স্কাপ পড়ে নিলাম। সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তাই দেরি না করে ভাইয়ার পিছু পিছু যেতে লাগলাম।
,,
একপল মিমিমা আপুর বরকে দেখেছি। ত্বকি ভাইয়া আমাকে তার কাছেই রেখেছেন। বিয়ে বাড়ির এতগুলো মানুষের মধ্যে আমাকে একবারের জন্যও চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না।

ত্বকি ভাইয়ার পাশে বসে আছি। মেহমানরা এসে তার সাথে কথা বলছে। আমি তার দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে রয়েছি। এই প্রথম মনে হচ্ছে, মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে?

আমার ভাবনার মাঝে ভাইয়া সামনের দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। হঠাৎ কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি অবাক হয়ে ওঠে দাড়িয়ে পড়লাম। মেয়েটা যে জাইমা আপু তা চিনতে দেরি হলো না আমার।

জাইমা ত্বকিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,

-আই নিড ইউ ত্বকি। প্লিজ ত্বকি, মেঘাকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। তুমি চিন্তা কর না, তোমার আর মেঘার বাচ্চা আমাদের কাছে থাকবে। তুমি তো জানো মেঘা এখানও অনেক ছোট,,,

(চলবে)

[রিচেক দেয় নি। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।]