তোর নামের বৃষ্টি পর্ব-২৮

0
855

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২৮
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
ত্বকি আর দেরি করল না। মেঘার পাশে ঠাস করে গা এলিয়ে দিল। মেঘার মাথায় হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

-সরি বউ। কাঁদছিস কেন? আমি কি তোকে কষ্ট দিয়েছি? (ত্বকি)

ভাইয়ার হঠাৎ এমন কথাই আমার কান্না দ্বিগুণ হয়ে গেল। আরও জড়ে করে কেঁদে উঠলাম।

-দেখ, বউ কাঁদিস না। আমি যে তোর কান্না সহ্য করতে পারি না। সরি তো। (ত্বকি)

ত্বকির কথা শুনেও মেঘা পূর্বের ন্যায় কাঁদতে লাগল।

মেঘাকে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে দেখে ত্বকি বাঁকা হেঁসে মেঘার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। একপর্যায়ে মেঘার গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,

-কান্না থামাবি? নাকি অন্য ব্যবস্থা করব? (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার কথা আর কর্মে আমার শরীর জ্বলে উঠলো। কোন লজ্জা নামক অনুভূতি কাজ করল না বরং রাগে সারা শরীর গরম হয়ে উঠলো। তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছে থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম। আর শুয়ে রইলাম না। এক সেকেন্ডের মধ্যে বিছানায় থেকে উঠে নিচে দাঁড়িয়ে পড়লাম। গায়ে থাকা ওড়নাটা ঠিক করে তার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,

-হেই মিস্টার ত্বকি, ডোন্ট টাচ মি। হঠাৎ করে কোন অধিকারে আপনি আমাকে পাশে এসে শুয়ে পড়লেন? (মেঘা)

মেঘার এহেন কান্ডে ত্বকি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। যেই মেয়ে কখনো লজ্জায় মুখে মুখে কথা বলে না। সেই মেয়ে কিনা আগ্নেয়গিরি রুপ ধারন করল। ত্বকি যেন মেঘাকে চিন্তেই পারছে না। নিজেকে স্বাভাবিক করে ত্বকি বিছানায় থেকে নেমে ভ্রু কুঁচকে মেঘার দিকে তাকাল। মেঘার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নরম গলায় বলতে লাগল,

-কি হয়েছে বউ? রেগে আছিস কেন? (ত্বকি)

ত্বকির কথাই মেঘা জড়ে জড়ে চিৎকার করে বলল,

-আপনি আমাকে কোন সাহসে বউ বলে ডাকেন? আমি আপনার কিছু হই না। আন্ডারস্টান্ড? (মেঘা)

মেঘার এমন পরিবর্তন ত্বকিকে গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন। ত্বকি কিছু না বুঝেই আস্তে করে নরম গলায় বলল,

-সরি রে বউ,,, (ত্বকি)

ত্বকিকে কথাগুলো শেষ করতে না দিয়েই মেঘা বলে উঠলো,

-আমি ডিভোর্স চাই মিস্টার ত্বকি। আমি আর আপনার বউ হয়ে থাকতে পারব না। আপনি আপনার প্রিয় বান্ধবী জাইমা আপুকে নিয়ে সুখে থাকবেন। (মেঘা)

ডিভোর্সের কথা শুনে ত্বকির চোখে পানি চলে এলো। ভাঙা গলায় মেঘাকে বলতে লাগল,

-তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি তোকে অনেক ভা,,, (ত্বকি)

বলতে গিয়েও থেমে গেল ত্বকি। নিজের ইগো ঠিক রেখে নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

-প্লিজ, রুম থেকে বের হন। আমি আর আপনাকে সহ্য করতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আই হেইট ইউ। (মেঘা)

ত্বকি দেরি করল না। রুম থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়া আগে কান্না মাখা কন্ঠে বলে গেল,

-তুই না ডাকলে আসব না। (ত্বকি)
,,

ত্বকি ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে যাবার পর আমি বিছানায় ঠাস করে শুয়ে পড়লাম। প্রচুর রাগ হচ্ছে তার উপর। আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিন আপনি এখন আমি দিব। সবসময় চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো থাকি বলে আমাকে অবহেলা করেন। এখন আমি আপনাকে বোঝাব অবহেলা কাকে বলে। আমি যতটুকু কষ্ট পেয়েছি তার চেয়েও দ্বিগুন কষ্ট দিব আপনাকে। যত দিন না পর্যন্ত আপনি নিজে থেকে আমার কাছে না আসবে ঠিক তত দিন আমিও আপনার কাছে থেকে দূরে থাকব। পচা লোক একটা। আপনি থাকেন আপনার ইগো নিয়ে। আই হেইট ইউ। কথাগুলো বলেই বুকের মাঝে বালিশ চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
,,

তিথির রুমের বাইরে হাটু ভেঙে বসে আছে ত্বকি। মেঘার কথাগুলো তার বুকের ভেতর দহন সৃষ্টি করে দিয়েছি। যাকে পাবার জন্য এত কিছু করল সে। সেই মেঘা কিনা বলছে, ডিভোর্স দিয়ে দিবে। তার সাথে থাকবে না। বিষটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ত্বকির। কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে তার।

অন্যদিকে,

রাত এগারোটার দিকে বাসায় ফিরেছে সাদ। মনটা খুব খারাপ তার। বুকের ভিতরে খুব জ্বালা করছে। সারাদিন কিছু খাইনি সে। পরনের সাদা শার্টটা ঘেমে গায়ের সাথে লেগে গেছে। প্রচুর ক্লান্ত সে। বাড়িতে এসে তার মায়ের সঙ্গে দেখা না করেই ক্লান্তমাখা শরীর নিয়ে সিরি বেয়ে রুমে চলে এলো সাদ।

পুরো রুম জুরে অন্ধকার বিরাজমান। লাইট বন্ধ থাকার ফলে রুমের মধ্যকার কিছুই দেখতে পারছে না সে। কি বা দেখবে সে। বিছানায় উপর তো আর তিথি বসে থাকবে না। শুধু শুধু লাইট জালানর কোন মানেই হয় না। কথাগুলো ভেবেই সাদ ঢুলতে ঢুলতে বেলকনিতে চলে গেলো। বাইরে দিকে দৃষ্টি রেখে পকেটে হাত দিল। পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে দিয়ে ধোঁয়া উড়োতে লাগল। কখনোই সিগারেট নামক বস্তুটা মুখে দেয় নি সাদ। কলেজ লাইফে ইনফ্যাক্ট ভার্সিটি লাইফে ও বন্ধুদের সাথে মজার ছলে স্মোক করেনি সে। কিন্তু আজ সে বাধ্য হয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াছে। তার ধারনা ধোঁয়ার সাথে তার বুকের ভেতরে জমে থাকা ব্যথা হয়তো কিছুটা উড়ে যাবে। স্মোক করছে আর চোখ বন্ধ করে তিথির দুষ্ট মাখা হাঁসি সরন করছে সে।

সাদেকে বেলকনিতে যেতে দেখে তিথি সস্থির নিশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নামল। চুপিচুপি পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়ে সাদকে মন ভরে দেখতে লাগল।

পূনিমার রাত। চারপাশে চাঁদের আলোতে প্রত্যেক টা বস্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাল্কা আলোতে সাদের মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তিথি কিছুটা সময় এক ধ্যানে সাদের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখল, সাদ চোখ বন্ধ করে সিগারেট খাচ্ছে। তিথি আর দেরি না করে এক টান দিয়ে সাদের মুখ থেকে সিগারেট টা কেড়ে নিল। কোমড়ে হাত দিয়ে সাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলো,

-এই যে বাবুর আব্বু, ছিঃ আপনি এই আবিজাবি খান? (তিথি)

হঠাৎ তিথির কর্মে সাদ অবিশ্বাস্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। প্রথম ভাবল সে ভুল দেখছে। এটা তিথি না, তার কল্পনা। কিন্তু না তিথির হাতে সিগারেট দেখে সে বিশ্বাস করল যে তার সামনে স্বয়ং তিথি দাঁড়িয়ে আছে। তিথিকে দেখেই সাদ ঘোরের মধ্য চলে গেলো। মনে হতে লাগলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাদ হাঁ করে তিথির দিকে তাকিয়ে রইল।

-আমার বাবুর আব্বু আমার সাথে কথা বলে না কেন? আপনি খুব পচা বাবুর বাবা। (তিথি)

তিথির অভিমান শুরের কথা শুনে সাদের ঘোর কেটে গেল। তিথির মুখ থেকে বাবুর আব্বু কথাটা শুনে সাদ ভরকে গেল। জড়তা মাখা কন্ঠে বিরবির করে বলে উঠলো,

-কার বাবুর আব্বু? (সাদ)

সাদের কথার উওরে তিথি এক দমে বলে উঠলো,

-আমার। (তিথি)

কথাটি শুনে সাদের বুকের মধ্যে শীতল হাওয়া বইয়ে যেতে লাগল। আপনাআপনি তার হাত বুকে চলে এলো। চোখের কোনে পানি চিকচিক করতে লাগল।

সাদের অবস্থা দেখে তিথি মুচকে হেঁসে তার দিকে এগিয়ে এলো। সাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আমার বাবুর আব্বু। আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। সরি।আমাকে মাফ করে দিন। (তিথি)

তিথির কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছে না সাদ। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। এত কষ্টের পর তিথির মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনে নিজকে সার্থক মনে হচ্ছে তার। খুশিতেত সাদের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।

সাদের চোখে পানি দেখে তিথি কাঁদতে শুরু করল। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,

-বললাম তো সরি। আপনি আমাকে যে শাস্তি দেবেন তা আমি মাথা পেতে নিব। তাও আমাকে মাফ করে দিন। (তিথি)

তিথির মুখে শাস্তির কথা শুনে সাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। সাদ বাঁকা হেঁসে তিথিকে বলে উঠলো,

-সত্যি, আমি যে শাস্তি দেব তা তুমি মাথা পেতে নেবে? (সাদ)

-হুম। (তিথি)

-আই নিড ইউ। (সাদ)

তিথি মুখ তুলে সাদের দিকে চাইল। সাদ তিথির লজ্জামাখা মুখ দেখে আদুরে গলায় পূর্বের ন্যায় বলে উঠলো,

-আমার আদর চাই। এতগুলো দিনের জমা থাকা সবটুকু আদর চাই। আদর দেও।(সাদ)

সাদের কথা শুনে তিথির মুখে রক্তিম বর্ন ধারন করল।

এদিকে,

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ত্বকির মা মেঘাকে ডাক দিতে ত্বকির রুমে গেল। পুরো রুমে কাউকে না দেখতে পেয়ে টেনশনে পড়ে গেল সে। সারা বাড়ি খুঁজেতে লাগল তাদের। কোথাও না পেয়ে অবশেষে তিথির রুমে সামনে এলো।

তিথির রুমের সামনে ত্বকিকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সে। ত্বকির পাশে এসে দাঁড়িয়ে ধমকের শুরে বলে উঠলো,

-ত্বকি, এখানে বসে আছিস কেন? (ত্বকির মা)

ত্বকি মায়ের ডাক শুনে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। বিচলিত কন্ঠে বলতে লাগল,

-আম্মু আমার না একটা জিনিস হারিয়ে গেছে। মনে হয় নিচে পড়েছে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।(ত্বকি)

বলেই ত্বকি মায়ের সামনে থেকে চলে গেল।

ত্বকির মা ত্বকির যাওয়া পানে তাকিয়ে হাঁসতে লাগল। হাঁসতে হাঁসতে তিথির রুমে প্রবেশ করল।
বিছানায় এক কোনে মেঘার মাথার পাশে গিয়ে বসলেন সে।

আম্মুর উপস্থিতি টের পেয়ে আমি মাথাটা বালিশ থেকে সরিয়ে আম্মুর কোলে রাখল। চোখ বন্ধ করে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।

মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন ত্বকির মা। সন্দেহ জনক কন্ঠে মেঘাকে জিজ্ঞেসা করলেন,

-কি হয়েছে রে তোদের? (ত্বকির মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-বল না কি হয়েছে? (ত্বকির মা)

আম্মুর কথা শুনে আমি এক দমে বলে দিলাম,

-তোমার ছেলেকে শিক্ষা দিচ্ছি। (মেঘা)

-তাই নাকি? ভালো বেশি করে দে। ওর শিক্ষার প্রয়োজন আছে। (ত্বকির মা)

-হ্যাঁ দিবোই তো। তোমার ছেলে আমাকে বুঝে না। অনেক সাধু সেঁজে ছিলাম। আর সাধু সেঁজে থাকব না। তোমার ছেলের ধারনা আমি কিছুই বুঝি না। ওয়ানে পড়া ছোট বেবি। (মেঘা)

মেঘার কথা শুনে ত্বকির মা হেঁসে দিয়ে বলে উঠলো,

-আমি জানি, তুই যতোটা অবুঝের মতো থাকিস তুই ততোটা অবুঝ নস। সবকিছুই বুঝিস,,,, (ত্বকির মা)

(চলবে)
[ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]