ধূসর কুয়াশা পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
5017

#ধূসর_কুয়াশা
#পর্ব_২(শেষ)
#Writer_Nusrat Jahan Sara

অনু আর মিতা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে গেলো৷ কিন্তু কী বানাবে সেইটা বুঝতে পারছেনা৷ মিতা ইউটিউবে সার্চ দিয়ে কিছু রেসিপি দেখে দেখে নাস্তা বানালো৷

রান্নার কাজ সব শেষ করে এবার ধোয়া মুছার কাজ করতে শুরু করলো দুজন৷

দেখতে দেখতে কেটে গেলো একমাস৷ মিতা আর অনু প্রত্যেক দিনই এভাবে সকালে উঠে চাকরের মতোই কাজ করে কিন্তু স্বভাব পরিবর্তন হয়না৷৷ অহংকারীই আছে৷

ওদের বাবাকে গম্ভীর মুখ করে বসে থাকতে দেখে দুইজনেই কিছুটা অবাক হলো৷

অনুঃবাবা কী হয়েছে তোমার৷
.
এটা তোমরা জিজ্ঞেস করছো৷ কেনো এখনো নিজেদের হেভিট,বিহেভিয়ার চেঞ্জ করছোনা৷
.
মিতাঃবাবা আমরা তো চেষ্টা করছি৷ আর এটাও জানি তুমি এর জন্য রাগ করোনি৷
.
আজ বড় একটা দুর্ঘটনা থেকে বেছে গেছি৷ ব্যাংকে যে টাকা গুলো ছিলো সেইগুলো চুরি হওয়া থেকেও বেচে গেছে৷ ভাবতে পারছো ব্যাংকে রাখা টাকা যদি চুরি হতো তাহলে কী পরিমানে আমাদের ক্ষতি হতো৷ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা৷ অহংকার পতনের মুল এটা আগেও বলেছি আর এখনও বলছি৷ তোমাদের অহংকার তোমাদের দৃষ্টিকে ধূসর বানিয়ে দিয়েছে৷ যার জন্য প্রকৃতিকে তোমাদের চোখে রং বেরঙের না লেগে ধূসর কুয়াশার মতো লাগছে৷ অহংকার ত্যাগ করো দেখবে প্রকৃতির যেদিকে তাকাবে সেদিকই সুন্দর লাগবে৷ সবার সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করো৷ লন্ডনে সেখানকার সবার লাইফস্টাইল আর তোমাদের লাইফস্টাইল একরকমই ছিলো কোনো অহংকার দেখতে পাইনি৷ কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর থেকেই আমি তোমাদের অহংকার দেখতে পচ্ছি৷ তোমরা কী জানো কেনো আমি তোমাদের গ্রামের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলাম৷ কারন গ্রামের ছেলে,মেয়েদের অহংকার থাকে কম৷ খেত,জমি,হাঁস মুরগি,মাছ,গরু ছাগল,এসব নিয়েই তাদের বসবাস৷ এগুলো তাদের জীবনের অংশ মনে করতে পারো৷
তোমরা গরুর গোবর,হাস মুরগির বিষ্টা দেখলে নাক সিটকাও৷ এদের দেখে নাক না সিটকিয়ে বরং কাছে টানো,ওদের যত্ন করো দেখবে হাঁস মুরগিও তোমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়াবে৷
.
অনুঃথামলে কেনো বাবা আরও বলো শুনতে খুব ভালো লাগছে৷
.
মিতাঃহ্যাঁ বাবা বলো৷
.
তোমরা কাঁদায় পা দাওনা তোমাদের ঘৃনা করে অথচ জানো এই যে তোমরা ভাত খাওনা এটার জন্য একজন কৃষককে কতো বিঘা জমিতে খালি পায়ে কাঁদায় হাঁটতে হয়? ৷কখনো কখনো তো শামুকের খোলসে পা দিয়ে পাও কেটে ফেলে কত কষ্ট করে তবুও ওরা আমাদের মুখে খাবার দিবে৷ আমরা সবাই সবাইকে ছাড়া অচল৷ এই পৃথিবীতে কেউ একা একা চলতে পারেনা৷ তোমরা যে চাকরের সাথে এরকম মিস বিহেভ করো তারা কী তাতে মনে কষ্ট পায়না বলো৷
আচ্ছা এই যে আমি তোমাদের একমাস চাকরের কাজ দিয়েছিলাম আর বকেছিলাম তখন কী তোমাদের মনে কষ্ট হয়নি৷ হ্যাঁ হয়েছে তবে ভেবে দেখো যদি অন্যের বাড়িতে কাজ করতে আর তারাও যদি তোমাদের সাথে মিসবিহেভ করতো তখন তোমাদের কেমন লাগতো৷ অবশ্যই খুব খারাপ লাগতো৷ নিজের ফ্যামিলির কাছ থেকে বকা শুনলে অতটা কষ্টা লাগেনা যতটা অন্যের মুখ থেকে শুনলে লাগে৷
ফকির এতিম, মিসকিন দেখলে তোমরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দাও একটিবারও কী ভেবেছো যে তোমরা ওতো তাদের জায়গায় থাকতে পারতে৷ একটি বার ওদের জায়গায় নিজেদের কল্পনা করে দেইখো তাহলেই বুঝতে পারবে৷ দোষ আমারই আমিই তোমাদের শিক্ষা দিতে পারিনি৷ আর না এখন পারবো

অনুঃনা বাবা তুমি শিক্ষা দিয়েছো কিন্তু আমরা তোমার শিক্ষা কে সম্মান করতে পারিনি৷ আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি বাবা আর এরকম হবেনা৷
.
মিতাঃবলো আমাদের কী করতে হবে৷
.
চাচার বাড়িতে যাবে৷
.
কোথায়
.
গ্রামে৷
.
যাবো না কেনো নিশ্চয় যাবো৷ বাট কেমন চাচা৷
.
আমার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই৷
🍁
পরের দিন সকালে সবাই গ্রামের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো৷

প্রায় এক ঘন্টা পর এসে পৌছালো গ্রামে৷ চারিদিকে শুধু কাদা আর কাদা৷
কাদার রাস্তা দিয়েই সবাইকে হেটে যেতে হবে৷

অনু আর মিতার বাবা ওদের দিকে তাকাচ্ছেন৷ এই প্রথম গ্রাম আর কাদা দেখে এদের মুখে বিরক্তির ভাব ফুটে না উঠে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে৷ দুইবোন পাখি আর গাছপালা দেখছে৷

মিতাঃবাবা গ্রাম কতো সুন্দর তাই না৷
.
অনুঃহ্যাঁ আগেতো এমন সুন্দর লাগেনি৷
.
প্রকৃতিকে মন থেকে ফীল করলে তবেই না প্রকৃতিকে ভালো লাগবে৷
.
ওরা সবাই কাদার উপরে দিয়েই হেটে গেলো৷ ওদের চাচা ওদের দেখে খুব খুশি৷ উনি তারাতাড়ি সবাইকে নিয়ে ঘরে বসালেন আর উনার স্ত্রী কে বললেন পাখা নিয়য়ে আসার জন্য৷ উনি একটা তাল পাতার পাখা নিয়ে আসলেন৷

অনু দেখ এই তালের পাতার পাখা দিয়ে কতো আরাম করে বাতাস খাওয়া যায়৷ এই বাতাস যেনো এসিকেও হার মানিয়ে দিবে৷
.
রাইট৷
.
ওরা দুইবোন ঘর থেকে বেড়িয়ে উঠানে হাঁস মুরগির ছানা নিয়ে খেলতে শুরু করলো৷
.
দেখ আপু বাচ্চাগুলো কী সুন্দর৷
.
হুম আর এই গরুর বাচ্চাটা আরও বেশি৷
.
ওদের চাচাতো ভাই এসে বললো,,,আপু পুকুরের পাড়ে যাবে৷ সেখানে বড় বড় মাছ আছে৷ আর গাছে ছোট ছোট কাঁচা আমও আছে৷
.
তাই নাকি৷
.
হ্যাঁ৷

ওরা দুইবোন ওদের চাচাতো ভাইয়ের সাথে পুকুর পাড়ে গেলো৷ খুব বড় পুকুর৷ পুকুরের পাড়ে শুধু আকাশি গাছ আর আম গাছ৷ ছেলেটা ওদের কিছু আম পেড়ে দিলো৷ অনু আর মিতা পুকুরের পাড়ে বসে দাঁত দিয়ে আম কেটে কেটে খাচ্ছা৷ বাতাসে এদের চুল উড়ছে, গাছের শুকনো পাতা ওদের উপরে পড়ছে আর ওরা সেসব মন দিয়ে ফীল করছে৷ আজ যেনো দুইবোন নতুন এক জগতকে চিনতে পেরেছে৷ শহরে শুধু যানবাহনের বিরক্তিকর শব্দ,কোলাহল কিন্তু গ্রামে শুধু বাতাসের শু শু শব্দ আর পাখির কলরব৷ওরা ওদের বাবাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে মন থেকে অহংকার দূর করে তাদের আলাদা একটা জগতের সাথে পরিচয় করে দেওয়ার জন্য৷

~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~