নিশুতি রাতের কান্না ১ম পর্ব এবং ২য়পর্ব

0
1114

#নিশুতি_রাতের_কান্না
#১ম_পর্ব_২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক

নেহাল বাসর ঘরে প্রবেশ করতেই আমি বিছানা থেকে উঠে ওর পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলাম। কিন্তু সালাম করার আগেই সে আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো। তারপর কোনরকম কথা না বলেই আমায় টেনে নিয়ে গেল বিছানায়। আমি তখন ভয়ে এবং লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যেতে যেতে বললাম,’শুনুন।আমরা দু রাকাত শুকরানা নামাজ পড়ে নেই।’
কিন্তু নেহাল আমার কথা শুনলো না। বরং সে আমায় তার বলিষ্ঠ দেহের নীচে ফেলে দিয়ে বললো,’আমি তোমার হুকুমদাতা। তুমি আমার দাসী। দাসীর কথা তার প্রভু কখনো শুনে না!আর কোনদিন যদি আমায় হুকুম করো তাহলে তোমার জবান আমি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিবো।’
নেহালের কথা শুনে আমার শরীর কেমন কাঠ হয়ে গেল।কী অদ্ভুত কান্ড! বড়লোক বরেরা বুঝি এমনই হয়!
আমার চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়লো গালে।
তখন আমি মিনতির স্বরে বললাম,’শুনুন, আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে!’
কিন্তু নেহাল আমার কথাই শুনলো না।
সে উল্টো এমন রেগে গেলো!
তারপর বললো,’এই, তোকে কত কাবিন দিয়েছি জানিস?তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীও অতগুলো টাকা এক করে দেখেনি কোনদিন!’
আমি কান্নাভেজা গলায় বললাম,’ছিঃ!আপনি বিয়ের মতন এমন একটা পবিত্র সম্পর্ককে টাকার সাথে হিসেব করছেন?’
‘এই,অতো নীতিকথা আমায় শিখাবি না বুঝলে!তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীতে একটা ডিগ্রিধারী লোক নাই। কিন্তু আমার ঘরের কাজের লোকেরাও ম‍্যাট্টিক পাশ দেয়া।’
তারপর নেহাল আমার গা থেকে সবগুলো কাপড় ওর নিজের ইচ্ছেতেই টেনে খুলে নিলো। আমি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলাম।আর ভয়ও। কেমন জানি ঘেন্নাও হচ্ছিল ওর প্রতি। একটা ছেলেকে আমি আগে থেকে চিনি না। কলেজ থেকে ফেরার সময় হঠাৎ কীভাবে যেন সে আমায় দেখলো। তারপর দুদিনের কথায় বিয়ে হয়েছে। আজকের আগে তার সাথে আমার কোন কথাও হয়নি।আর সে বাসর ঘরে এসে আমার সাথে কোন কথা না বলেই সরাসরি আমার শরীর চাইছে !
আমি একটু বাঁধা দিতে চাইলাম ওকে। কিন্তু ওর যা শক্তি তার সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠা গেলো না। নেহাল এমন ভাবে চেপে ধরলো আমায়!
আর আমার তখন কেবল মনে হতে লাগলো আমি কোন বাসর ঘরের ফুলের বিছানায় নয়। ঝোপঝাড়ে কাঁটার উপর শুয়ে আছি।আর আমায় ধর্ষণ করে যাচ্ছে দুশ্চরিত্র কোন এক কাপুরুষ।
এই বিয়েটা না করলে আমার এমন হতো না হয়তোবা। আমি যদি কোন গরীব ঘরের ছেলেকে বিয়ে করতাম তবে নিশ্চিত সুখি হতাম। কিন্তু সব ব‍্যাস্তে গেলো মেজো মামার জন্য।
অবশ্য আব্বা কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন,’ধনীদের সাথে কাজ কারবার আমি করতাম না। গরীবের সাথে গরীবের আত্মীয় হওন ভালা।’
কিন্তু মেজো মামা আব্বাকে এমন ভাবে ধরে বসলেন। তিনি বললেন,’দুলাভাই,বেনুর ভাগ্য খুলছে।ওর চেহারা সুন্দর দেইখা ছেলে পছন্দ কইরা ফেলছে। এমন ধনী ঘরে বিয়ে হইলে রাজ কপাল লাগে।বেনু রানী হইয়া থাকবো ওইখানে দুলাভাই।’
তারপর আর আব্বা না বলেননি। তিনি বললেন,’আমি রাজি।’
হয়তোবা তিনি আমার মঙ্গলের জন্যই রাজি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন তার মা মরা মেয়েটা ওখানে বিয়ে হলে সুখি হবে। কিন্তু নিয়তি যে বড্ড খারাপ!
নেহাল তখনও আমার সাথে লেপ্টে আছে।আর এইসব কিছু ভেবে হঠাৎ আমার কান্না পেয়ে গেল। ভীষণ ভীষণ কান্না। আমি শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।আর তখন আমার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে নেহাল ধমকের সুরে বললো,’তুমি কী এহনও বাচ্চা নাকি! কাঁদো ক‍্যান?বাপ মা কিছু শিখাইয়া দেয় নাই?’
আমার কান্না কিছুতেই থামছিলো না।সে এবার এক চড় বসালো আমার গালে। তারপর বললো,’ফস্টি নষ্টি কইরা রাইতটারে শেষ কইরা দিতে চাইতেছস?নিজেরে তুই চতুর ভাবস নাকি?’
আমি বললাম,’আপনি আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করছেন কেন? আমি তো আপনার স্ত্রী। স্ত্রীদের সাথে কী কেউ এমন ব‍্যাবহার করে?’
নেহাল এবার—-

#চলবে

#নিশুতি_রাতের_কান্না
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক




নেহাল এবার আমার গলায় ওর হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,’একেবারে চুপ করিয়ে দেই এখন!’
ও এমন শক্ত করে ধরেছে যে আমার গলায় একেবারে কাঁশি উঠে গেল। আমি ওর হাত থেকে ছুটে যেতে ছটফট করতে লাগলাম। আমার চোখ কেমন লাল হয়ে উঠছিলো।আর মুখে ঘাম জমছিলো।নেহাল তখন আমায় ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন গেল।আর আমি বিছানায় পড়ে থেকে কাঁদতে লাগলাম।
সে ফিরে এলো খানিক পর। ততক্ষণে আমি গায়ে কাপড় চোপড় জড়িয়ে নিয়েছি। কিন্তু সে এসে আবার টেনে টেনে আমায় বিবস্ত্র করে নিলো এবং তার ইচ্ছে পূরণ করলো। তারপর যখন সে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত তখন আমায় ছেড়ে দিয়ে বললো,’যাও,এখান থেকে দূরে যাও। আমি কারোর সাথে ঘুমাতে পারি না। আমাকে ঘুমাতে হয় একা। ছোট বেলা থেকেই এই অভ‍্যাস আমার।’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’কোথায় যাবো আমি?’
‘ফ্লোরে। এখান থেকে বালিশ আর কাঁথা নিয়ে শুয়ে পড়ো।’
কী ভয়ংকর এবং নোংরা মনের মানুষ!ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে আসছে। আমি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না এই বদ লোকটির সাথে কী করে একটা জীবন কাটাবো আমি!
বিছানা থেকে কাঁথা আর বালিশ নিয়ে গিয়ে আমি ফ্লোরে শুয়ে গেলাম। শরীর খুব দূর্বল লাগছিলো তাই শু’য়ার পরপরই ঘুমে চোখ লেগে এলো। যখন একেবারেই ঘুমিয়ে গেছি আমি তখন নেহাল চিৎকার করে ডাকতে লাগলো আমায়। আমি চমকে উঠে সজাগ হতেই ও বললো,’এই বান্দী,এতো ডাক লাগে কেন ঘুম থেকে উঠতে?’
ওর মুখ থেকে বান্দী ডাকটা শুনে আমার যা খারাপ লাগলো! মনে মনে আফসোস করে বলছিলাম,হায় কপাল!
নেহাল তখন ধমক দিয়ে বললো,’এখনও ওইখানে বসে আছস কেন?উপরে আয়।’
আমি ভয়ে ভয়ে বিছানার উপর গেলাম। তখন নেহাল বললো,’আমার মাথা ব্যথা করছে মাথা টিপে দে।’
আমি সম্পূর্ণ অস্বস্তি নিয়ে তার মাথা টিপে দিতে লাগলাম। হঠাৎ নেহাল আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’মাথা টেপাটাও শিখে আসিসনি। ছোট লোকের মেয়ে!লোভ করে ঠিকই তো আবার বড় লোকের ছেলের কাছে বিয়ে বসলি।তো বিয়ের আগে বড় লোকদের সাথে ছোট লোকদের কী আচরণ,আদব কায়দা শিখে আসলিনা কেন?’
আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো খুব। বাবাকে তুলে কথা বলায় চাপা রাগও পাচ্ছিলো। আমি আস্তে করে রাগ মিশেলী গলায় বললাম,’শুনুন, আমার আব্বা আম্মাকে তুলে কোন কথা বলবেন না!’
আমার কথা শুনে হা হা হা করে হেসে উঠলো নেহাল।হাসি শেষ করে সে বললো,’তোর বাপ তো একটা লোভী!’
আমি চুপ করে রইলাম। নেহাল নিজেই আবার বললো,’তোর মাও লোভী। আসলে ছোট লোকগুলো লোভীই থাকে।লোভী না থাকলে কী আর বড় লোকদের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চায় কেউ?ওরা ভেবেছে তোকে এখানে বিয়ে দিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যাবে তোর বাপ মা! কিন্তু কান খুলে তুই শুনে রাখ। আমার বাড়ি থেকে একটা পয়সাও ওখানে নিয়ে যেতে পারবি না তুই।হা হা হা।’
আবার হেসে উঠলো নেহাল।ওর এই অসভ্য হাসি আর বিশ্রী কথাগুলো শুনতে ইচ্ছে করছিলো না। সত্যি সত্যি আমার মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট পুরুষটির সাথেই বোধহয় আমার বিয়ে হয়েছে। আমার ভাগ‍্যটা এতো খারাপ কেন? ভেবে আবার কান্না‌ পেয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু অনেক কষ্টে কান্নাটা আমি চেপে রাখলাম।কান্নাটা চেপে রাখলাম এই ভয়ে যে যদি আবার কাঁদি তবে আমার শরীরে আবার আঘাত করবে নেহাল।
নেহাল বললো,’প্রতিদিন এভাবে আমায় মাথা টিপে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। আমার মাথা টিপে না দিলে আমি ঘুমাতে পারি না।তোর আগে আমাদের কাজের মেয়ে রুবি আমার মাথা শরীর টিপে দিতো। ওই মেয়েটা যা কাজের না?ডাকবো ওকে?’
রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’নাহ। ওকে ডাকবেন কেন!’
‘এইতো বুঝেছিস। তাহলে যা বলবো তাই শুনবি।না শুনলে তো যে শুনে আমার কথা তাকেই ডাকতে হবে!’
সত‍্যি বলতে মেয়েরা তাদের স্বামী একেবারে নিকৃষ্ট থাকা সত্ত্বেও তার স্বামীর সাথে অন‍্য একটি মেয়ে এসে ভাব জমাক তা কোনদিন তারা মেনে নিতে পারে না। আমিও পারলাম না। আমি বললাম,’আমি আপনার সব কথা শুনবো।’
নেহাল এবার আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো,’এই তো লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা বলেছো এখন। তোমার মতো এমন ভালো মেয়ে হয় না গো!টিপো টিপো। ভালো করে আমার মাথাটা টিপে দাও।’
আমার শরীর খুব দূর্বল লাগছিলো। ঘুমে চোখের পাতা টানছিলো। তবুও তার মাথা টিপে দিতে হচ্ছে আমার। যতক্ষণ সে না ঘুমাবে ততক্ষণ আমিও ঘুমাতে পারবো না।কী ভয়ংকর জীবন আমার!

নেহাল ঘুমিয়ে গেছে।নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সে। এবার আমি যখন নীচে শুতে যাবো তখনই মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে এলো।রাত শেষ।নেহালকে ডাকতে হবে। পবিত্র হয়ে আমাদেরকে নামাজ পড়তে হবে। কিন্তু ভয় করছে ওকে ডাকলে না জানি কী করে বসে ও।
আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। তারপর ওর মাথায় আলতো স্পর্শ করে ডাকলাম,’এই যে, উঠুন।উঠুন না!’
নেহাল——

#চলবে