নিষিদ্ধ বরণ পর্ব-১৮+১৯

0
249

#নিষিদ্ধ_বরণ
#রোকসানা_রাহমান

#পর্ব (১৮)
” আমি আম্মুকে মেরে ফেলেছি, বাবা? ”

মনকে রাতের খাবার খাওয়াচ্ছিল মাহদী। ছেলের প্রশ্নে ভাত মাখা বন্ধ করে দিল। মনের শিশুসুলভ মুখখানা গম্ভীর, দুঃখের প্রলেপ, ব্যথার আভাস চোখে পড়ার মতো। মাহদীর কলিজায় পীড়িত কামড় পড়তে চাহনি তীক্ষ্ণ হলো। বলল,
” এসব কী ধরনের কথা, মন? ”

মন একটুও ভয় পেল না। মন খারাপের মাত্রা বেড়ে গেল। ব্যাকুল হয়ে বলল,
” বলো না, বাবা। আমি কি আম্মুকে মেরে ফেলেছি? ”

মাহদী রাগ করতে গিয়েও সাবধান হলো। ভার গলায় বলল,
” তুমি মারতে যাবে কেন? তুমি যতক্ষণে পৃথিবীতে এসেছ ততক্ষণে তোমার আম্মু পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ”
” আমি এসেছিলাম দেখেই আম্মু চলে গেছে। তাই না, বাবা? ”
” আমি কখনও এমন বলেছি? ”
” না। ”
” তাহলে তোমার মাথায় এমন প্রশ্ন আসল কেন? ”

মন নিভে গেল। ঘাবড়ানো স্বরে বলল,
” নানির সাথে যে আরেকটা নানি এসেছিলেন, উনি বলেছেন।
” আরেকটা নানি! কে সে? ”
” চিনি না। আগে দেখিনি। ”

মাহদী অস্থির হয়ে পড়ল। রেগে গেল খুব। ধরে নিল, নিহিতার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় কেউ একজন হাসপাতালে এসেছিল। এসেই তার ছেলের কানে কুমন্ত্র ঢেলে দিয়েছে। সাথে হতাশ হলো এই ভেবে, এতটুকু বাচ্চার সামনে কী বলতে হয় সে বোধটুকু জন্মায়নি। আয়ু ফুরাচ্ছে বাতাসে বাতাসে! মাহদী রাগটুকু আড়াল করে জিজ্ঞেস করল,
” কী বলেছেন উনি? ”

মন কথাটা বলার আগেই মাহদী থামিয়ে দিল। সে চায় না তাকে বলতে গিয়ে মন সেই কথাগুলো আবার মনে করুক। মাথায় স্থায়ীভাবে চেপে বসুক। নিজেই নিজের মতো ভেবে নিল ঠিক কী কী বললে মনের মনে এমন প্রশ্ন আসতে পারে। ভাবতে ভাবতে শ্বশুরের নাম্বারে ডায়াল করল। ঐপাশ থেকে রিসিভ হলে মাহদী বলল,
” বাবা, আম্মা কি চলে গেছেন? ”
” না। রিকশায় উঠেছে। ছেড়ে দিবে। কেন? ”
” উনার সাথে একটু কথা ছিল। ”

এরশাদ রহমান আর বিলম্ব না করে স্ত্রীর হাতে ফোন ধরিয়ে দিলেন। তারা এখন হাসপাতালের গেইটের সামনে। আসমা রহমান হ্যালো বলতে মাহদী দ্রুত বলল,
” মনের সাথে দেখার করার জন্য আপনার সাথে কেউ এসেছিল? ”

আসমা রহমান কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। সহসা বললেন,
” হ্যাঁ, কলি বু এসেছিল। আমাদের পাশের বাসায় থাকে। ”
” আর কখনও উনাকে নিয়ে আসবেন না। শুধু উনাকে কেন অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন না। ”

মাহদীর এমন কথায় আসমা রহমান বিচলিত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
” কেন, বাবা? কী হয়েছে? ”

মাহদীর গলার স্বর পালটে গেল। বাচ্চাদের মতো নালিশ করার ভঙ্গিতে বলল,
” আমার ছেলেকে উল্টা-পাল্টা কথা বলেছে, আম্মা। ওর দিকে তাকাতে পারছি না! ”
” কী বলেছে? ”

মাহদী উত্তর দিতে পারল না। ব্যথিত ঢোক গিলে বলল,
” উনার সাথে দেখা হলে বলবেন, নায়রা আমার থেকে হাজারগুণ বেশি ভালোবাসত তার আল্লাহকে। তাই আমাকে ছেড়ে তাঁর কাছে চলে গেছে। আমি যাতে কান্নাকাটি না করি সেজন্য মনকে উপহার দিয়ে গিয়েছে। মন তার আম্মুকে মারার জন্য পৃথিবীতে আসেনি। আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে এসেছে। ”

ফোন পকেটে ভরে মনের কাছে এসে বসল মাহদী। সে কিছু বলার আগেই মন বলল,
” আমাকে কেন এনেছিলে, বাবা? যদি বুঝতাম আমি আসলে আম্মু রাগ করে চলে যাবে তাহলে কখনই আসতাম না। আল্লাহর কাছেই থেকে যেতাম। ”

মাহদীর বিষণ্ণ ঠোঁটে হাসির টান পড়ল। মনে পড়ল মনকে পৃথিবীতে আনার বাসনা প্রকাশের দিনটির কথা। তখন তাদের বৈবাহিক জীবনের ছয় দিন মাত্র। বিয়ের ছুটি শেষ করে অফিসে জয়েন করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছে। বাসে উঠার পর মনে পড়ল, নায়রার হাতে ফোন নেই। এত দিন বাসায় ছিল বলে ফোনে কথা বলার প্রয়োজন পড়েনি তাই কেনাও হয়নি। এখন কথা বলার প্রয়োজন পড়েছে। মারাত্মক প্রয়োজন! প্রয়োজন পূরণ না হলে মরে যেতে পারে এমন অবস্থা। মাহদী তৎক্ষণাৎ বাস থেকে নামল। কাছের একটি মার্কেট থেকে মোবাইল কিনে বাড়ি ফিরল।

স্বামীকে অসময়ে বাসায় ফিরতে দেখে চমকে যায় নায়রা। চিন্তায়ও পড়ে। শরীর খারাপ করেনি তো? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চাইলে মাহদী বলল,
” না। ”
” তাহলে? ”

মাহদী নায়রার হাতে ফোন তুলে দিয়ে বলল,
” আজ যেতে ইচ্ছে করছে না। ”
” সে কী! কেউ কিছু বলবে না? ”

মাহদী কাপড় বদলাতে বদলাতে বলল,
” না। বলেছি, শরীর খারাপ। ”

নায়রা কিছুক্ষণ মাহদীর দিকে তাকিয়ে থাকল। হাত থেকে মোবাইলটা খাটে রেখে নীরবে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে মাহদী পেছন পেছন ছুটে আসে। মানানোর চেষ্টা করে বলল,
” রাগ করলে নাকি? বিশ্বাস করো এমনি এমনি মিথ্যে বলিনি। দরকার ছিল সেজন্য মিথ্যে বলেছি। ”

নায়রা কোনো উত্তর দিল না। মাহদীকে কোনো পাত্তা না দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকল। দুপুরের জন্য রান্না গুছাচ্ছে। মাহদী রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নায়রার কার্যকলাপ দেখল অনেক্ষণ। তারপর হঠাৎ, অকস্মাৎ বলল,
” তোমার পিরিয়ডের ডেট কবে? ”

নায়রা চকিত চোখে তাকাল। মাহদী সেই চোখে চোখ রাখতে পারল না। আঁখি নামিয়ে বলল,
” আমার বাচ্চা চাই। ”

নায়রা মৌনব্রত ভেঙে ফেলল। কণ্ঠ থেকে বিস্ময় ঝরে পড়ল,
” বাচ্চা! ”

নায়রার কণ্ঠ পেয়ে মাহদীর কণ্ঠস্বর চঞ্চল হয়ে উঠল। বলল,
” তোমাকে আটকে রাখার এছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না। ”
” কী বলতে চাচ্ছেন? ”

মাহদী নায়রার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। বলল,
” তোমার ব্যবহারে আমি শুধু বিভ্রান্তই হই, নায়রা। এই মনে হয়, আমাকে খুব ভালোবাস। আমিই তোমার সব। আমার জন্য জীবন দিতে পার। আবার একটু পরেই মনে হয়, আমি তোমার কেউ না। খুব অপছন্দের কেউ। আমার থেকে মুক্তি পেলেই বাঁচ। ”

মাহদীর কথায় এবার নায়রাও বিভ্রান্ত হলো। নির্বাক চোখে তাকালে, মাহদী বলল,
” আমার খুব ভয় হচ্ছে। সাধারণ বিষয় নিয়ে তুমি রাগ করো, কথা বলা বন্ধ করে দেও, কাছে আসতে চাও না। যদি একটু বেশি কিছু করি। বাড়াবাড়ি পর্যায়ের কিছু তখন কী হবে? আমি অফিস থেকে ফিরে তোমাকে পাব তো? ”

প্রশ্নটা করেই মাহদী কিছুক্ষণ চুপ থাকে। মুহূর্তকাল পর আবার বলল,
” আমার তো মনে হয় যেটাকে ভালোবাসা ভাবছি, সেটা আসলে ভালোবাসা নয়। স্ত্রী হিসেবে কর্তব্য পালন করছ শুধু। ”

এ পর্যায়ে নায়রা কিছু বলতে চাইল। সুযোগ দিল না মাহদী। দ্রুত বলল,
” আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না, নায়রা। তোমার সাথে আমার কোনো মিল নেই। সম্পূর্ণ বিপরীত একজন। তোমার পবিত্র মনে আমার জন্য ভালোবাসা কখনই জন্মাবে না। না জন্মাক। আমার কোনো আপত্তি নেই। তুমি শুধু আমার সাথে থাকলেই হবে। আমার চিরকালের সাথী হবে। তার জন্য একটা বাচ্চা চাই। ”

তার দু’মাস বাদেই মন নায়রার পেটে এসেছিল। সুসংবাদটা দেওয়ার সময় নায়রা ফিসফিস করে বলেছিল, ‘ আপনি বাচ্চা চেয়েছিলেন, আমি আপনাকে আমার সম্পূর্ণ মনটাই তুলে দিব। যত ভালোবাসা লাগবে নিয়ে নিবেন। ‘

” বাবা, তুমি অনেক পঁচা। আমার মনখারাপ দেখে তুমি হাসছ। একটুও ভালোবাস না। ”

মন মুখ ফিরিয়ে নিলে মাহদী কান টেনে বলল,
” তোমার আম্মু তো আমাকে ভালোবাসা দিচ্ছিল না। তাই তোমাকে আনতে বলেছিলাম। ভালোবাসা লুট করব বলে। ”

মন বাবার কথা বুঝল না। নির্বাক চাহনি রাখলে মাহদী আবার হেসে ফেলল। ছেলের মাথায় চুমু খেয়ে ভাতের প্লেট তুলে নিয়ে বলল,
” খেয়ে, ঘুমিয়ে পড়ো। কাল খুব সকালে উঠতে হবে। ”
” ডাক্তার ছুটি দিয়েছে? ”
” হ্যাঁ। ”

_________

রাত হয়ে গিয়েছিল দেখে স্ত্রীকে আর একা ছাড়েননি এরশাদ রহমান। নিজেও রিকশায় চেপে বাড়ির গেইটে নামিয়ে সেই রিকশায় হাসপাতালে ফিরে এসেছেন। রিকশা ভাড়া মেটাতে গেলে মাহদী বলল,
” আমি দিচ্ছি, বাবা। ”

এরশাদ রহমান ইতস্ততা দেখালেও না করলেন না। ভাড়া মিটিয়ে মাহদী বলল,
” মন ঘুমাচ্ছে। আসুন একটু হেঁটে আসি। ”

ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাহদী বলল,
” আমি কখনও চাইনি আপনাদের পরিবারের বিষয়ে কথা বলি। ভবিষ্যতেও চাইব না। কিন্তু.. ”

মাহদী থেমে গেল। শ্বশুরের দিকে ঘুরে বলল,
” একটা অনুরোধ করব। আপনার ইচ্ছে হলে রাখবেন না হলে রাখবেন না। আমি জোর করব না। ”

এরশাদ রহমান আর চুপ থাকলেন না। বললেন,
” কী অনুরোধ? ”

মাহদী সরাসরি বলল,
” নিহিতার বিয়ের ব্যবস্থা করুন। ”

এরশাদ রহমান বিস্মিত হলেন। বললেন,
” নিহিতার বিয়ে! হঠাৎ? ”

মাহদী দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,
” ধরে নিন, ওর ভালোর জন্য বলছি। ”

এরশাদ রহমান দূর থেকে মাহদীর দিকে তাকিয়ে আছেন। সেভাবে কাটিয়ে দিলেন কয়েক মুহূর্ত। মুহূর্তকাল পর মাহদীর পাশে দাঁড়ালেন। ছুটে চলা গাড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
” প্রতিটি বাবাই চায় তার মেয়ে ভালে থাকুক। আমি ব্যতিক্রম নই। ”

__________
নিহিতা বিকেলে মনকে দেখতে যাবে ভাবলেও মাহদীর জন্য আর যেতে পারল না। তার নীরব শাসানিতে পাওয়া ভয়টা প্রকাশ না করলেও ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ে। হাসপাতালে যাওয়ার সাহস পায় না। এদিকে মনকে এক পলক দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। রাতে আম্মু আসলে জানতে পারে মন অনেকটাই সুস্থ। পরের দিন সকালেই ছেড়ে দিবে। এই খবর শোনার পর সে যেমন খুশি হয় তেমন পূর্বের অস্থিরতাও বেড়ে যায়। রাতটা কাটে নির্ঘুমে। ফযরের নামজ পড়ে ঝিমুতে ঝিমুতে। চোখ ভর্তি ঘুম আর মাথা ভর্তি যন্ত্রণা নিয়ে বারান্দার সিঁড়িতে বসে থাকে। ক্লান্ত দৃষ্টি গেইট পানে। চোখ দুটো প্রথমে কাকে দেখবে? ছেলেকে নাকি বাবাকে?

সকালের মিষ্টি রোদ উঠোন ছুঁয়ে যখন বারান্দায় পড়ল তখন নিহিতা নড়ে উঠল। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। গেইটে পুরুষ মানুষের পদ ধূলিতে নিহিতা উৎসুক হয়ে পড়লেও পরক্ষণে হতাশ হয়। ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” বাবা, তুমি একা? মনকে ছাড়েনি? ”

এরশাদ রহমান বাসার ভেতরে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
” হ্যাঁ, ছেড়েছে। ”

নিহিতা বাবাকে ফেলে গেইটের বাইরে উঁকি দিয়ে বলল,
” অন্য রিকশায় করে আসছে? ”
” না। ”
” তাহলে? এক রিকশায় আসলে দেখতে পাচ্ছি না কেন? ”
” এখানে আসেনি তাই দেখতে পাচ্ছিস না। ”
” এখানে আসেনি? ”
” না। ওদেরকে ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে এসেছি। ”

নিহিতা বুঝেও না বোঝার মতো করে বলল,
” কেন? ”
” ঢাকা ফিরে যাবে তাই। ”

বাবার মুখ থেকে কথাটা বেরোতেই নিহিতা দিশাহারা অবস্থায় গেইটের বাইরে চলে যায়। রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলে এরশাদ রহমান দ্রুত জিজ্ঞেস করলেন,
” কোথায় যাচ্ছিস? ”

নিহিতা থেমে গেল। বাবার দিকে না তাকিয়ে বলল,
” ভার্সিটিতে। ”
” এভাবে? ”

নিহিতার খেয়াল করল তার গায়ে বোরকা নেই। কুণ্ঠিত হয়ে বলল,
” বোরকা পরতে মনে নেই, বাবা। ”

এরশাদ রহমানকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না নিহিতা। উঠোনে ধূলো উড়িয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকল। চোখের পলকে বোরকা পরে তৈরী হয়ে বেরিয়ে আসল। বাবাকে সালাম দিয়ে গেইট পার হবে তখন এরশাদ রহমান বললেন,
” আজ যেতে হবে না। ”
” কেন? ”
” তোকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে। ”

চলবে

#নিষিদ্ধ_বরণ
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১৯)

ছোট্ট খানা টেবিলে শরবতের গ্লাস রাখতে রাখতে স্বামীর দিকে তাকালেন আসমা রহমান। তারপরেই পাশের চেয়ারটাই। অল্প বয়সের সুস্বাস্থ্যের চঞ্চলপনা ছেলেটিকে খুব একটা মনে ধরল না তার। চোখের দৃষ্টি সরিয়ে দাওয়া থেকে ফিরে আসলেও দরজার কাছেই দাঁড়ালেন। পর্দার আড়ালে থেকে স্বামীর এদিকে তাকানোর অপেক্ষা করছিলেন। এরশাদ রহমান ছেলের বাবার সাথে কথা বলার ফাঁকে দরজার দিকে তাকালেন। সাথে সাথে স্ত্রীর ইশারামাখা চাহনিতে থেমে গেলেন। ছেলে ও বাবার হাতে শরবতের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে চেয়ার ছাড়লেন। স্ত্রীকে খুঁজে পেলেন রান্নাঘরে।

” ডাকছিলে কেন? ”

আসমা রহমান বিরক্ত চোখে তাকালেন। স্বামীকে সমীহ করে চললেও মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণ হারান। এবারও হারাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না তার সাথে কোনো প্রকার আলোচনা না করেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। আসমা রহমান কপট রাগ নিয়েই বললেন,
” ছেলে কী করে? ”
” আলাদাভাবে কিছু করে না। শুনেছি বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করছে। বিয়ের পর..”

স্বামীকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই আসমা রহমান প্রশ্ন করলেন,
” কী দেখে পছন্দ হলো তোমার? ”

স্ত্রীর এমন প্রশ্নে থতমত খেলেন এরশাদ রহমান। সেই সুযোগে আসমা রহমান বললেন,
” বয়স কত? দেখে তো মনে হলো বয়সে নিহিতার কাছাকাছি হবে। মাদরাসার ছাত্রও না। মসজিদে যায় তো? ”

এরশাদ রহমান দুর্বল কণ্ঠে বললেন,
” যায়। আমাদের মতো ধর্মপ্রাণ না হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সে। ”
” এটুকুতেই খুশি হয়ে গেলে? নিহিতার মত নিয়েছ? যদি পছন্দ না হয়? তাছাড়া এই পিচ্চি ছেলে সংসারের বুঝবে কী? তার মধ্যে করছেও না কিছু! ”

এরশাদ রহমান স্ত্রীর কাঁধে হাত রাখলেন। মৃদু হেসে বললেন,
” শান্ত হও। ”

আসমা রহমান শান্ত হলে এরশাদ রহমান বললেন,
” ছেলেকে আমি পছন্দ করিনি। তোমার মেয়ের জামাই করেছে। ”

আসমা রহমানের চিন্তিত বদনখানা বিস্ময়ের রূপ নিল,
” মাহদী! ”
” হ্যাঁ। ”

আসমা রহমান আগ্রহ নিয়ে বললেন,
” ছেলে কি ওর পরিচিত? ঢাকার ওদিকে থাকে নাকি? ”
” না, বাড়ি দিনাজপুরেই। মাহদীর পরিচিত নাকি জানি না। যখন ছেলের খোঁজ দিয়েছিল তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম। পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। শুধু বলেছিল, অন্য কারও সামনে নিহিতাকে নেওয়ার পূর্বে এই ছেলের একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে। মাহদীর কথা শুনেই বুঝেছিলাম সব রকম খোঁজ খবর নিয়েই আমাকে বলেছে। তবুও মনের সন্দেহ দূর করতে একটু খোঁজ খবর নিয়েছিলাম। ”

আসমা রহমান আবার রেগে গেলেন। বললেন,
” তোমার এখনও মাহদীর উপর সন্দেহ হয়? ”
” না। ”
” তাহলে আবার খোঁজ-খবর নিলে কেন? ”

এরশাদ রহমান সাথে সাথে উত্তর দিলেন না। কিছুক্ষণ পর শীতল কণ্ঠে বললেন,
” বাবা হই যে তাই। নিজ চোখে পাত্রের গুণ না দেখে কন্যা দান করি কী করে? ”

আসমা রহমান অপ্রতিভ হয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন। নিচু স্বরে বললেন,
” সব ঠিক আছে। কিন্তু নিহিতা কি রাজি হবে? আগে থেকে কথা বলে নিলে ভালো হতো না? ”

এরশাদ রহমানের উত্তর দেওয়ার মুহূর্তে নিহিতা উপস্থিত হলো। রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চিবুক নামিয়ে বলল,
” আমি রাজি। ”

মেয়ের কণ্ঠে বাবা-মা দুজনেই চমকে তাকালেন। নিহিতা পিলপিল পায়ে ভেতরে ঢুকে বলল,
” আমি জানি, বাবা আমার ভালো চান। তাঁর প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত আমার ভালো থাকাকে ঘিরে। মেয়ে হয়ে জন্মদাতার উপর এতটুকু বিশ্বাস তো থাকতেই হবে তাই না, আম্মু? ”

আসমা রহমান মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন। খুশিতে চোখে পানি জমে গেছে। মায়ের আদরে বন্দী অবস্থায় নিহিতা বলল,
” বাবা, আমি কি উনার সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে পারি? ”

বাবা উত্তর দেওয়ার পূর্বে মা জিজ্ঞেস করলেন,
” কার সাথে? ”
” যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। ”

এ পর্যায়ে আসমা রহমান স্বামীর দিকে তাকালেন। এরশাদ রহমান স্ত্রীর দিক থেকে চাহনি সরিয়ে আনলেন মেয়ের দিকে। ক্ষণকাল চুপ থেকে বললেন,
” অবশ্যই। বিয়ে যখন হচ্ছেই তখন দেখাদেখির পর্বটা শেষ হওয়াই ভালো। ”

এরশাদ রহমান আর দেরি করলেন না। ছেলেকে বসার রুমে পাঠিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে দাওয়াই বসলেন। বাকি কথা-বার্তা স্ত্রীর সামনেই হোক।

_____________
” বিশ্বাসই হচ্ছে না, তুমি বোরকা ছাড়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছ! ”

আহাদের বিস্মিত অভিব্যক্তিতে একটুও অবাক হলো না নিহিতা। সাধারণভঙ্গিতে চোখ তুলে তাকালে আহাদ আকাশ মাপের বিস্ময় নিয়ে বলল,
” তুমি সত্যি আমার দিকে তাকিয়েছ? আমাকে দেখছ? নিহিতা, আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? ”

এবার নিহিতার চোখে-মুখে বিরক্ত ধরা পড়ল। দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
” আপনি কি স্বাভাবিক হবেন? আমার জরুরি কথা ছিল। ”

আহাদ বিস্ময় কাটাতে চাইল, পারল না। বাধ্য হয়ে বলল,
” কী করে স্বাভাবিক হব বলো? তোমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে যখন দিশাহারা হয়ে পড়লাম ঠিক সে সময় শুনলাম ওটা নাটক ছিল। আমাকে মিথ্যা বুঝানো হয়েছিল। তার মধ্যে তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পেলাম। ”

নিহিতা চোখ তুলে তাকাল। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলো প্রস্তাবটা কে দিয়েছে। পর মুহূর্তে মাহদীর মুখটা ভেসে উঠল চোখের পাতায়। সাথে সাথে বুকের বা পাশে ক্ষীণ একটা ব্যথা সৃষ্টি হলো। চোখ বন্ধ করে বলল,
” আমি কি আমার কথা বলতে পারি? ”

এবার নিজেকে সামলাতে সফল হলো আহাদ। বলল,
” কী কথা? ”

নিহিতা চোখ মেলল। একটু চুপ থেকে বলল,
” আপনাকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু..”
” কিন্তু? ”

আহাদের কৌতূহলী বদনে এক বার দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলল,
” আমার একটু সময় চাই। বিয়েটা কি এক মাস পিছিয়ে নেওয়া যায় না? ”

আহাদ কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে নিহিতা দ্রুত বলল,
” আপনি না করবেন না, প্লিজ। ভয়ও পাবেন না। আমি আপনাকেই বিয়ে করব। কথা দিচ্ছি। ”

নিহিতা চুপ হয়ে গেলেও আহাদ কিছু বলল না। নিহিতা উৎসুকমনে অপেক্ষা করছে আহাদের উত্তরের। কয়েক সেকেন্ড পেরিয়ে যেতেও যখন সে চুপ থাকল তখন নিহিতা অস্থির হয়ে পড়ল। ব্যাকুল কণ্ঠে বলল,
” বাবাকে বললে উনি আমার অনুরোধ ফেলতেন না। কিন্তু আমি চাচ্ছিল না…”
” কথা দিচ্ছ তাহলে? ”

কথার মাঝে প্রশ্ন করায় নিহিতা থমকে গিয়েছিল। বোকা চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
” জি? ”
” এক মাস পরে আমাকেই বিয়ে করবে। ”

নিহিতা দ্রুত মাথা নেড়ে বলল,
” হ্যাঁ, কথা দিচ্ছি। ”

আহাদ হালকা হেসে বলল,
” ঠিক আছে। আমি আংকেলের সাথে কথা বলব। ”

নিহিতা কৃতজ্ঞপূর্ণ হাসলে আহাদ বলল,
” তোমাকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেটাও কি এক মাস পর দেব? ”

নিহিতা কিছু না ভেবেই ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
” এখনই পরাতে পারেন। ”

আহাদ নিহিতার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে সে লজ্জা পেল। বুঝতে পারল কৃতজ্ঞতা দেখাতে গিয়ে বেহায়ার মতো কাজ করে ফেলেছে। আড়ষ্টতায় হাত সরিয়ে নিলে আহাদ সামান্য হাসল। হাসি নিয়ে নিজের হাত থেকে একটা আংটি খুলল। নিহিতার বাম হাত টেনে নিয়ে অনামিকা আঙুলে আংটি পরিয়ে বলল,
” মাপে বড় হয়েছে। দেখ, আবার হারিয়ে ফেল না। ”

নিহিতা লজ্জায় কথা বলতে পারল না। মনে মনে নিজেকে ধমকাচ্ছে। আহাদ আংটি পরানো শেষে ভাঁজ করা একটি কাগজ রাখল তালুতে। বলল,
” সেদিনের চিঠিটা কে লিখেছিল জানি না। আমি ভেবেছিলাম তুমি লিখেছ। সে ভাবনা থেকে আমিও একটা লিখেছিলাম। তোমার নামে, তোমাকে কল্পনা করে। নিহিতা, আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করি। তোমার চালচলন অন্যরকম দেখে কখনও বলার সাহস পাইনি। আজ একটু সাহস করে বললাম। চিঠি দিলাম, আংটিও পরিয়ে দিলাম। এখন শুধু এক মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা। ”

নিহিতা নীরব থাকলে আহাদ বুঝে নিল তার কথা বলা শেষ। সেও আর কথা বাড়িয়ে বিরক্ত করতে চাইল না। বসার রুম ত্যাগ করার পূর্বে আরেক বার নিহিতার মুখটার দিকে তাকাল। স্নিগ্ধ মুখে চেয়ে থেকে সুধাল,
” তুমি আমার বউ হবে তো, নিহি? ”

আহাদের প্রশ্নটায় খানিকটা কেঁপে উঠল নিহিতা। কাঁপা কাঁপা পলকে আহাদের দিকে তাকালে সে বলল,
” আমি যে নিহিতাকে ভালোবেসেছি সে কখনও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। ভবিষ্যতেও করবে না এই বিশ্বাস নিয়ে চলে যাচ্ছি। ”

_________

ট্রেন থেকে নেমে কমলাপুর রেলস্টেশনে চারপাশটায় চোখ রাখল নিহিতা। আসমা রহমান পাশে এসে দাঁড়াতে নিহিতা আনন্দিত কণ্ঠে বলল,
” আম্মু, ঢাকা শহর অনেক সুন্দর, তাই না? ”

আসমা রহমান স্বামীর হাত থেকে ভারী ব্যাগ নিয়ে নিচে রেখে বলল,
” সুন্দরের কী দেখলি? আমার তো এখনই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এত মানুষ একসাথে জীবনেও দেখিনি! ”

নিহিতা নীঃশব্দে হাসল। এরশাদ রহমানও ততক্ষণে নেমে পড়েছিলেন। স্ত্রীর কথা শুনে খানিকটা হাসলেন। পর মুহূর্তে চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
” মাহদীকে না জানিয়ে আসাটা কি ঠিক হলো রে, মা? ”

নিহিতা হাসি বন্ধ করে বাবার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
” জানিয়ে দিলে কি সারপ্রাইজ হবে, বাবা? ”
” তা ঠিক। কিন্তু আগে তো কখনও যাইনি। বাসা খুঁজে বের করতে সমস্যা হলে? তাছাড়া ওর এই সময় বাসায় থাকার কথা না। বাসায় কে কে আছে জানিও না। যদি বিপদে পড়ি? ”
” কিসের বিপদ? আমরা কি অচেনা কেউ? নাকি দূর সম্পর্কের কেউ? ”
” তারপরেও। মাহফিল শেষে আমি এবার দেখা করে যেতাম। তোরা নাহয় পরের বার আসতি। ”

নিহিতার মন খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে বলল, ‘ পরের বার আসতে আসতে যদি আমার বিয়ে হয়ে যায়? উনি যে অন্যায়টা করেছেন এর শাস্তি না দিয়ে বিয়ের পিড়িতে কীভাবে বসব, বাবা? ‘ সামনাসামনি বলল,
” আল্লাহ হয়তো চাচ্ছিলেন আমার বিয়ের দাওয়াতটা আমিই দেই। ”

_________
ঠিকানা জানা থাকায় মাহদীর বাসা খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগলেও খুব একটা কষ্ট হলো না। গেইটের দায়িত্বে থাকা দারোয়ানের কাছে নিজেদের পরিচয় দিয়ে সিঁড়ি কাটছিল নিহিতারা। মাহদীরা এই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় থাকে। এক তলা পেরিয়ে দোতলায় উঠতে আসমা রহমানের মনে পড়ল, মন চারপাশের মানুষদের নিয়ে এত গল্প করলেও কখনও দাদা-দাদীকে নিয়ে কিছু বলেনি। তাহলে কি তাদের সাথে তার দেখা-সাক্ষাৎ হয় না? নায়রার মুখে শুনেছিল মাহদীর যাতায়াতের সুবিধার জন্য অফিসের কাছে বাসা ভাড়া নিয়েছিল। শ্বশুর-শাশুড়িরা নিজস্ব বাসাতেই থাকতেন। কিন্তু এখন? এখন তো নায়রা নেই। তাহলে মাহদী কোথায় আছে? ভাড়া বাসায় নাকি বাবা-মায়ের সাথে? স্বামীকে প্রশ্ন করার জন্য উদ্যত হতে মনে পড়ল, মাহদী তার শ্বশুরকে দাওয়াত দিয়েছিল নায়রার নিজ হাতে সাজানো সংসার দেখতে। তাহলে কি এটা ভাড়া বাসা? ভাবতে ভাবতে প্রশ্ন করে বসল,
” বাসা যদি তালা দেওয়া থাকে? ”

নিহিতা পাশ থেকে বলল,
” ভেঙে ফেলব। ”

মেয়ের রসিকতায় এরশাদ রহমান হেসে ফেললেন। বললেন,
” ভাঙতে হবে না। মাহদী বাসায় না থাকলেও মন আছে। ”

আসমা রহমান দ্রুত প্রশ্ন করলেন,
” কী করে বুঝলে? ”

এরশাদ রহমান ঘড়ি দেখিয়ে বললেন,
” আড়াইটা বাজে। মনের স্কুল ছুটি হয় বারোটায়। ভাগ্য ভালো হলে মাহদীকেও পেতে পারি। দুপুরের খাবার খেতে ও বাসায় আসে। ”

___________

অফিস শেষে রিকশায় বসতে বসতে ফোন কানে নিল মাহদী। ডায়াল করা নাম্বারটা বিকেল থেকে বন্ধ দেখাচ্ছে। দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়া অবস্থা। কাজের চাপ বেশি থাকায় বাসায় কল করে বলেছিল আজ খেতে আসবে না। মন প্রথমে মানতে চাচ্ছিল না। কেঁদেও ফেলেছিল প্রায়। সময় নিয়ে তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কল কাটার পর পুনরায় কল দিয়েছিল বিকেলে। তখন থেকেই বন্ধ দেখাচ্ছে।

মাহদী রিকশাওয়ালাকে তাড়া দিচ্ছে আর বাসায় কল করে যাচ্ছে। ভয়ে, আতঙ্কে তার মুখ রক্তশূন্য। দুশ্চিন্তারা ঝেঁকে বসেছে মুখজুড়ে। বাসার সামনে এসে রিকশা থামতে মাহদী বিশ টাকার জায়গায় একশ টাকার নোট ধরিয়ে দিল রিকশাওয়ালাকে। ভাংতি টাকা ফেরত নেওয়ারও বুঝি সময় নেই।

সিঁড়ি কেটে চারতলায় পৌঁছিয়েই নিজের রুমের দরজার দিকে দৃষ্টি রাখল সে। যত কাছে এগুচ্ছিল বুকের ধুকপুকানি ততই বাড়ছিল। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিতে তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা! মন কোথাও নেই। সে সভয়ে ডাকল,

” মন? ”

উত্তর এলো না। মাহদী মাত্রাতিরিক্ত ভয়ে শরীরের জোর হারিয়ে ফেলেছে যেন। ধীরে ধীরে বসার রুম পার হয়ে নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আরেক বার ডাকল,
” মন? আমার বাবাটা? ”

এবারও উত্তর এলো না। তবে কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো। সেই শব্দে মাহদীর হারিয়ে যাওয়া শক্তি ফিরে এলো বুঝি। চট করে ভেবে বসল মন তার সাথে লুকোচুরি খেলছে। তাই সাবধানে রুমের ভেতর ঢুকে উচ্চস্বরে বলল,
” বাবা, মনকে দেখে ফেলেছে। ”

কথাটা বলে সহাস্যে সামনে তাকাতে তার শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেল যেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। চোখের এক স্থির দৃষ্টি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শাড়ি পরিহিতার দিকে।

চলবে