পিচ্চি বউ পর্বঃ শেষ পর্ব

0
3114

♥♥♥পিচ্চি বউ♥♥
পর্বঃ শেষ পর্ব

লেখাঃ রাইসার আব্বু

.আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবাই,আমার বুকের মাঝে ব্যাথা করছে বাবাই। কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে।

.

এদিকে রাইসার কান্না দেখে, সবাই কাঁদছে। কথার কাছে মনে হচ্ছে, তাঁর কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রাজ কেমন জানি করতে লাগলো। ডাক্তার এসে দেখতেই রাজ কেমন যেন নড়াচাড়া বন্ধ করে দিল।

.

রুম থেকে বের হয়ে ডাক্তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, সরি!আমাদের আর কিছু করার নেই! আপনারা আল্লাহ্কে ডাকেন, আল্লাহ্ যদি তাকে স্বয়ং সুস্থ করে দেন!

” কথাটা শুনেই কথা হসপিটালে ফ্লরে পড়ে গেল।সবাই কথাকে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। এদিকে সবাই কান্না করছে। রাইসা গিয়ে রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! আর বাবাই বাবাই করে ডাকছে। রাইসার কান্না দেখে সবাই কাঁদছে।

রাজের স্যালাইন নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে!

.

হঠাৎ,ডাক্তার এসে রাজের মুখ থেকে, অক্সিজেন মাক্স খুলে দিল। স্যালাইনটাও খুলে দিয়ে বলবো, রাজ আর কোনদিন ফিরবে না। যা ভেবেছিলাম তাই হলো।

.
কথা ভাবতে পারছে না রাজ মারা গেছে!
.
সবাই কান্না করছে, কথা নিঃস্তব্ধ হয়ে গেছে, রাইসা কাঁদছে আর বলছে” বাবাই কথা বলো বাবাই! কথা বলবে না আমার সাথে? বাবাই তুমি আর আমাকে পাপ্পি দিবে না? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে বাবাই। আল্লাহ্কে পিচ্চি বলে আমার চোখের পানি দেখে না। ও আল্লাহ্ তুমি তো বলেছে, ছোট বাচ্চারা নিষ্পাপ হয় তাঁদের কোন পাপ থাকে না তাঁদের কথা অগ্রাহ্য করতে পারো না। ওহ আল্লাহ্ দেখো আমি কাঁদছি, তুমি আমার বাবাই কে বলো আমার সাথে কথা বলতে, তুমি কথা বলতে বললে বাবাই আর চুপ করে থাকতে পারবে না। দেখতো বাবাই আমার সাথে অভিমান করেছে, আমাকে কুলে নেই না আদর করে না। আমার কষ্ট হয় না বুঝি। বাবাই ও বাবাই কথা বলো।

.

মা মা দেখ বাবাই কথা বলছে না। বাবাইকে বলো কথা বলতে। এদিকে সবাই রাজের জানাযা করে কবরে নিয়ে যাচ্ছে। কথা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রাজের চলে যাওয়ার দিকে!

.

কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে, আজ একটি ভুলের জন্য রাজ সারাজীবনের জন্য হারিয়ে গেল কথার জীবন থেকে।

.

মম বাবাইকে কোথায় নিয়ে যায়। বলো না মা, বাবাইকে সবাই কোথায় নিয়ো যায়। বাবা কি রাগ করেছে তাই নিয়ে যাচ্ছে। বাবা আবার কখন আসবে মা? বলো না মা আমার বাবাইকে সবাই কোথায় নিয়ে যায়।

.

রাইসার কথা শুনে কথার কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। রাইসাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে কথা। রাইসাকে কি বলবে, সে উওর যে কথার কাছে নেই। এদিকে রাজকে কবরে নামালে কথা আর থাকতে পারে না, দৌঁড়ে চলে যায় কবরের কাছে গিয়ে বলতে লাগে” আমি আমার স্বামীকে কোথাও যেতে দিবো না, তোমরা কেউ আমার স্বামীকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না”!

.

এদিকে কথার চিল্লানী শুনে রাজের বাবা কথাকে গিয়ে বলে, কি হয়েছে মা তুই কাঁদছিস কেন?

.
বাবা রাজকে কবর দিয়ে দিচ্ছে, রাজকে প্লিজ কবর দিতে দিয়েন না, ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। বাবা সত্যি ওকে ছাড়া মরে যাবো। ( কথা)

.
মা’রে তুই দুঃস্বপ্ন দেখেছিস। রাজ বেঁচে আছে। ডাক্তার আল্লাহকে ডাকতে বললো। আমি জানি তুই রাজকে অনেক ভালবাসিস। এতো কষ্ট দেওয়ার পরও তুই ওকেই ভালোবেসে গিয়েছিস।

.

বাবা রাজ কোথায়?

.
রাজের বেডে!

.

কথা দৌড়ে রাজের বেডে গিয়ে দেখি, রাইসা রাজের বুকে শুয়ে আছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। শরীরে স্যালাইন যাচ্ছে। কথা রাজের কপালে চুমু দিয়ে রাজের পা ধরে কাঁদতে লাগল। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়ো না, কীভাবো বাঁচবো তোমায় ছাড়া। তুমি যে আমার জীবন। তুমি যে আমার ভালবাসা।

.

প্লিজ ম্যাডাম এভাবে কাঁদবেন না! পেশেন্ট এর সমস্যা হবে পারলে আল্লাহ্কে ডাকেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, রাত ১ টা বাজে। কথা দু’রাকাত নফল নামায শেষ করে, মোনাজাতে দুটি হাত উত্তোলন করে বলতে লাগল” হে পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালা, রহিম রহমান। এই শেষ রাতে পৃথিবীর সকল মানুষ যখন ঘুমন্ত এমন সময় তোমার পবিএ দরবারে দু’টি হাত তুলে ধরেছি! ছোটকালেই মা -বাবাকে হারিয়েছি, বাবার স্নেহ কি জিনিস কখনো তা পায়নি। পায়নি মায়ের ভালবাসা। একমাএ অবলম্বন স্বামী। আজ আমার স্বামীর জীবন ভিক্ষা চায় তোমার দরবারে। হে আল্লাহ্ ফকির এক দরজার ভিক্ষা না পেলে অন্য দরজার যায়। আর তুমি ছাড়া তো আমার কোন দরজা নাই, এই ভিক্ষারিণীকে তুমি খালি হাতে ফিরাইওনা। আমি কিছু চায়নি কোনদিন তোমার দরবারে। কোনদিন বলেনি বা অভিযোগ করেনি মা-বাবাকে কেন কেড়ে নিলে। আল্লাহ্ তোমার কাছে আমার স্বামীর জীবন ভিক্ষা চায়। আল্লাহ্ আমার জীবনের বদৌলতে হলেও আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দাও। আমার মেয়েকে তুমি বাবা হারা করো না। আল্লাহ্ সন্তান কাঁদলে নাকি মা সহ্য করতে পারে না! ওহ্ আল্লাহ্ তুমি তো দুনিয়ার মায়ের চেয়ে তোমার বান্দা -বান্দীকে লক্ষ কোটিগুণ বেশি ভালোবাসো। আল্লাহ্ এই নিশিরাতে তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না? আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও হে আল্লাহ্। আমার বেঁচে থাকার অবলম্বনকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না। নিশ্চয়ই তোমার গোনাহ্গার বান্দীর দোয়া কবুল করেছে। এই কথা বলে মোনাজাত শেষ করে জায়নামাযেই ঘুমিয়ে গেল।

.

ভূরের আলো পড়তেই,কথার ঘুম ভেঙে যায়। কথা দৌড়ে যায় রাজের বেডে। কথা গিয়ে দেখে রাজের অক্সিজেন মাক্স খোলা, ডাক্তার এসে বললো রাজ আর ফিরবে না। কথাটা বলেই ডাক্তার চলে গেল।

.
কথা চিল্লায়ে কাঁদছে! না আমার রাজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। রাজের পা দুটি জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না আমি সত্যিই তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তোমার বুকই যে আমার শেষ ঠিকানা। প্লিজ কথা বলো, চুপ করে থেকো না। কথা রাজের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে!

.

কথা কাঁদতে কাঁদতে রাজের কপালে গিয়ে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিল। এদিকে কে যেন, কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কথা চেয়েই দেখে রাজ কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।

.
এদিকে রাজ বলছে, আমি কি আমার পিচ্চি বউটাকে রেখে মরতে পারি? আমি যে আমার পিচ্চি পরীটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমার পিচ্চিটাকে কী জড়িয়ে ধরতে পারি?

যাহ্ দুষ্ট কথাটা বলে, রাজের বুকে মুখ লুকালো। এই কি করছো শার্ট তো ভেজে গেল। ভিজুক কেন কষ্ট দিলে আমায়। ( কথা)

.
তুমি ও তো আমাকে কম কষ্ট দাওনি, পাঁচবছর তোমাকে ছাড়া কাটিয়েছি। তাই আমিও ডাক্তারকে সব কিছু বলে ডাক্তারের সাথে প্ল্যান করে এসব করেছি। তবে একসিডেন্ট সত্যি সত্যি হয়েছিল। আচ্ছা সত্যিই যদি আমি হারিয়ে যেতাম?

.
কথা আমার মুখে হাত দিয়ে ফেলল। কি বলছো, তাহলে আমার কি হবে। এখনো তো বাসর রাত বাকী! আর এখন আর আমি কিন্তু পিচ্চি না। .

আমি হেসে দিয়ে কথাগুলো জড়িয়ে ধরলাম। হঠাৎ রাইসা এসে বললো ” বাবাই মাকেই আদর করবে, আমায় করবে না?

.

রাইসাকে কুলে নিয়ে দুজনেই হেসে দিলাম!

.

সমাপ্ত।