প্রীতিলতা আসবে বলে পর্ব-০৪

0
1320

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট :৪

প্রীতি আজ দুই দিন ধরে আবারো সিআইডি তে জয়েন করেছে ৷যেই কেসের উদ্দেশ্যে প্রীতির ঢাকায় আসা ৷ঐ কেসটাও আজ ওর আওতায় চলে যাবে ৷প্রীতি নিজের বাইকে করে সিআইডি ভবনে চলে গেল ৷তাকে সবাই খুশি মনে বরনও করে নিয়েছে ৷

প্রীতি এসিপি প্রদীপের সামনে বসে আছে ৷এসিপি প্রদীপ প্রীতিকে বলল

কেস খুবই জটিল একটা কেস ৷আমরা অপরাধীকে সন্দেহ অলরেডি করেছি ৷কিন্তু প্রমানের অভাবে গ্রেফতার করতে পারছি না ৷আর এই কেসটা কেউই এখন আর ঘাটতে চায় ৷সবারই তো পরিবার আছে ৷

আপনি কোনো চিন্তা করবেন না স্যার ৷আমি আমার জীবন দিয়ে দেব ৷তবুও এই কেসটা শেষ করবো ৷আপনাকে কথা দিলাম ৷

তোমাকে যেই ভার্সিটিতে স্টুডেন্ট হিসেবে পাঠানো হচ্ছে ৷ওখানের ভিসিকে অলরেডি জানানো হয়ে গেছে ৷আর ঐ এলাকা থেকে এক বছরে প্রায় একশ মেয়ে গায়েব হয়েছে ৷এবার মনে হয় নারী পাচারকারী গ্যাং ঐ ভার্সিটাকে টার্গেট করছে ৷নারী পাচারকারী গ্যাংদের লোক ভার্সিটিতে আছে ৷কিন্তু তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না ৷আর সাবধানে থাকবে ৷কারন এই কেসের মূল আসামী দ্বীপ চৌধুরী খুবই ভয়ংকর একজন ব্যক্তি ৷সে নিজ স্বার্থের জন্য সব করতে পারে ৷ভার্সিটিতে অবশ্যই ছদ্দবেশে যাবে ৷কেউ যেন টের না পায় তুমি সিআইডি অফিসার ৷আর একটা কথা কথা আজ তিনটায় কর্নেল ওসমান তোমার সাথে দেখা করতে আসবে ৷

কর্নেল ওসমান নামটা শুনতেই প্রীতি থমকে গেল ৷ওর চোখ লাল হয়ে উঠেছে ৷প্রীতি ঘাড় কাত করে বলল

আমি অবশ্যই আসবো স্যার ৷তাদের জন্যই তো আমার এখানে আসা ৷

মানে ৷

আমি ওনার নাম শুনেছি ৷ওনাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল ৷ভাবতেই খুশি লাগছে এত বড় মাপের একজন আইনের লোককে আজ দেখতে পাবো ৷

ওহ এই ব্যাপার ৷তাহলে কাজে নেমে পরো ৷

জ্বি স্যার ৷প্রীতি এসিপির রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷প্রীতি নিজের টেবিলে গেল ৷তারপর নিজের জুনিয়র অফিসার শান্তকে কল দিয়ে আসতে বলল ৷জুনিয়র অফিসার আসতেই প্রীতি বলল

আজ পাচঁটার মধ্যে দ্বীপ চৌধুরীর ফ্যামিলীর সব তথ্য আমায় দেবে ৷আমি যেন এসে দেখি সব ক্লিয়ার ৷

জ্বি ম্যাডাম আপনি যে ভাবে বলবেন ৷

হুমম এবার যাও ৷

অফিসার যেতেই প্রীতি হাসতে লাগলো ৷হঠাৎ ওর হাসি বন্ধ হয়ে গেল ৷মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে ৷

খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে দ্বীপ চৌধুরী ৷কর্নেল ওসমান তোমাকে তো আমি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো ৷রেডি হও নিজেদের মৃত্যুর জন্য ৷

প্রীতি নিজের অফিসের কাজ একটার মধ্যে শেষ করলো ৷তারপর বাড়ী চলে গেল ৷কেননা আজ তার প্রথম শিকার কর্নেল ওসমান আসছে ৷নিজেকে ঐ নারী লোভী ওসমানের সামনে ঠিক করে প্রেজেন্ট করতে হবে তো ৷ওকে না মারলে কেসটা সমাধান করা যাবে না ৷

প্রীতি নিজেকে আয়নায় দেখছে ৷হ্যা তার এই সুন্দর চেহারা পেছনে একটা হিংস্র বাঘিনী লুকিয়ে আছে ৷ প্রীতি বাকা হেসে বেড়িয়ে গেল ৷

অপর দিকে আবেশ নিজের চাচার সাথে কথা বলছে ৷আবেশের আপন বলতে এই একজনই আছে ৷আবেশের অফিসে তিনি এসেছেন ৷আবেশ নিজের চাচাকে বলল

এই অসময়ে না জানিয়ে কেন এলেন চাচ্চু ৷আমাকে বললেই তো হতো ৷আমি নিজেই চলে যেতাম ৷

তার প্রয়োজন নেই ৷ শুনলাম তোমার সব সম্পত্তি নাকি তুমি তোমার ছেলে মেয়েকে দিয়ে দিচ্ছো ৷

জ্বি চাচ্চু ৷বলা তো যায় কখন কি হয়ে যায় ৷তাই এখনই সব ওদের নামে দিয়ে দেব ৷বাবাও তো আমাদের তিন ভাই বোনের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে ছিলেন ৷আর তার দুই দিন পরেই মারা গেলেন ৷আল্লাহ কখন কাকে নিয়ে যায় তা তো কেউ বলতে পারে না ৷

আবেশের চাচা আরো কিছুক্ষন কথা বলে বেড়িয়ে গেল ৷আবেশের অফিস থেকে বের হয়ে তিনি গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল

সব মরবে ৷কাউকে বাচঁতে দেব না আমি ৷আমার এত দিনের প্লান আমি এভাবে নষ্ট হতে দেব না ৷কিছুতেই না ৷

দুপুর তিনটা বাজে কর্নেল ওসমান সিআইডি ভবনে চলে এসেছেন ৷প্রীতিও আজ কালো স্যুট বুট পড়ে এসেছে ৷হয়তো তার এই কালো রংয়ের পোশাক দ্বারাই ওসমানকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করবে ৷আর তার পর নিজের রাজ্যের বন্দি বানিয়ে রাখবে ৷

প্রীতির দিকে লালসা পূর্ন দৃষ্টিতে কর্নেল ওসমান তাকিয়ে আছে ৷আর প্রীতি আবেদনময়ী হাসির ব্যবহারের পেছনে হিংস্রতার খেলা ৷ওসমানের সাথে প্রীতির অনেক ভাব জমে গেছে ৷ওসমানও যেন প্রীতির দিকে ইচ্ছে করেই বেশি ঘেষছে ৷দ্বীপ চৌধুরীকে যে নতুন সিআইডির ব্যাপারে সব জানাতে হবে ৷ঐ দিকে হুশ নেই ওসমানের ৷সে তো নিজের মেয়ের বয়সী প্রীতির রূপে মজেছে ৷

প্রীতি ওসমানের কাছে যেয়ে আস্তে করে বলল আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালোই লাগছে স্যার ৷ভাবতেও পারি নি এভাবে দেখা হবে ৷যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি ৷

হ্যা হ্যা বলো ৷

আপনার ফোন নাম্বারটা একটু দেবেন ৷ফ্রি থাকলে কল দেব মাঝে মাঝে ৷

ওসমান যেন মেঘ না চাইতেই জল পেল ৷সে দাতঁ কেলিয়ে বলল

তোমার যখন ইচ্ছে কল করো ৷আমি মাইন্ড করবো না বিউটিফুল ৷

প্রীতি মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল ৷তাদের এই ফিসফিসিয়ে কথা কেউ শুনতেও পেল না ৷অন্য দিকে দ্বীপ চৌধুরী ওসমানকে কল দিয়েই যাচ্ছে ৷কিন্তু সে রিসিভ করছে না ৷সে তো প্রীতির সাথে ক্লোজ হতে ব্যস্ত ৷

আবেশ চৌধুরীর চাচা বাসায় এসে ভাংচুর করছে ৷তার মাথা ঠিক নেই ৷তাকে এই অবস্থা দেখে তার স্ত্রী আর ছেলে দৌড়ে আসে ৷তার স্ত্রী মিস ডায়না বললেন

একি করছো তুমি ৷পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি ৷

হ্যা আমি পাগল হয়ে গিয়েছি ৷আবেশ ওর সম্পত্তি নিজের ছেলে মেয়ের নামে করে দিচ্ছে সব ৷আর কত সহ্য করতে বলছো আমাকে ৷ অন্য দিকে ওসমান ফোন ধরছে না আমার ৷মাথা খারাপ হয়ে যাবে আমার ৷

আবেশের চাচাতো ভাই দিহান বাবার কাছে এসে বলল

যদি ঐ ছেলে মেয়েই না থাকে তাহলে ৷

আবেশের চাচা বলল মানে ৷

দিহান মুচকি হাসি দিয়ে নিজের বাবাকে সব বুঝিয়ে দিল ৷

বিকাল পাচঁটা বাজে ৷কর্নেল ওসমান কিছুক্ষন আগে চলে গেছেন ৷প্রীতি নিজের চেয়ারে বসে ছিল ৷তখন তার ডোর বেল বেজে উঠলো ৷প্রীতি অনুমতি দিতেই জুনিয়র অফিসার শান্ত ঢুকলেন ৷তারপর বলল

ম্যাম আপনার কথা মতো দ্বীপ চৌধুরীর পরিবার সম্পর্কে সব তথ্য কালেক্ট করেছি ৷এখানে সব আছে ৷অতঃপর শান্ত প্রীতিকে সব বুঝিয়ে দিতে লাগলেন ৷

ম্যাডাম এই দেখুন এটা দ্বীপ চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস ডায়না ৷আর এটা তার ছেলে দিহান চৌধুরী ৷সারাদিন ক্লাবে পরে থাকে ৷তার জীবন মেয়ে আর মদের উপরই চলে ৷আর তার মেয়ে দ্বীপা ৷বড্ড ভালো মেয়েটা ৷মা বাবা আর ভাইয়ের একেবারে উল্টো ৷কোনো খারাপ রেকর্ড নেই এর নামে ৷দ্বীপ চৌধুরীর আরো একটা ভাই ছিল ৷চৌদ্দ বছর আগে ফ্যামিলী সহ আগুনে পুড়ে মারা যায় ৷তার ভাই আয়ান চৌধুরী আর স্ত্রী চারুলতা চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করেন ৷তিনটা সন্তান ছিল তাদের ৷দুই ছেলে আর এক মেয়ে ৷ছোট ছেলে আদিত্য আর মেয়ে প্রীতিলতাকে সহ চৌদ্দ বছর আগে নিজেদের বাড়ীতে পুরে মারা যায় ৷তাদের মৃত্যু ঘিরে রহস্য আছে অনেক ৷আর হ্যা তাদের লাশও পুলিশ খুজে পায় নি ৷

অফিসার থেমে আবারো বললেন তবে তাদের বড় ছেলে আবেশ চৌধুরী বেচেঁ আছেন ৷

আবেশ চৌধুরী বেচেঁ আছে কথাটা শুনেই প্রীতি কেপেঁ উঠলো ৷

ঐ দিকে অফিসার বলেই যাচ্ছেন ৷আবেশের সাথে তার চাচা দ্বীপ চৌধুরীর অনেক ভালো সম্পর্ক ৷চাচাকে ফেরেশতা মনে করে করে ৷ আবেশ চৌধুরী এখন তার বাবার বিশাল ব্যবসা সামলাচ্ছে ৷পাচঁ বছর আগে তিনিও বিয়ে করেছেন ৷তার এখন এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে ৷স্ত্রীর নাম নিরুপমা ৷

প্রীতি কাপঁছে খুব করে ৷নিজেকে সামলে শান্তকে বলল

শান্ত আপনি যান ৷আমি পরে এদের ব্যাপারে জানবো ৷আপনি একটু পরে আসুন ৷শান্ত সাথে সাথে চলে গেল ৷

শান্ত যেতেই প্রীতি ফাইলটা হাতে নিল ৷আবেশ চৌধুরী তার ভাইয়ের ছবিটা জ্বলজ্বল করছে ৷প্রীতি ছবিটার দিকে হাত বুলাতে লাগলো ৷চোখ থেকে পানি পড়ছে ৷নিচেই তার ভাইয়ের ছেলে মেয়ের ছবি ৷প্রীতি কাপঁছে প্রচন্ড ৷ছোট ছোট ছেলে মেয়ের ছবি দেখেই নিজের বুকের মাঝে ঝাপটে ধরলো ৷ছবি দুটোতে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলো ৷

প্রীতি চোখ মুছে নিল দুই হাতে ৷তারপর ফাইলটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল দৌড়ে ৷

চলবে……