প্রীতিলতা আসবে বলে পর্ব-০৮

0
1235

প্রীতিলতা আসবে বলে

লেখিকা : আফরিন ইসলাম

পার্ট : ৮

জেসিকার লাশটা প্রীতি দেখছে ৷মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে ৷কাল রাতের মারের দাগ শরীরে ফুটে উঠেছে ৷প্রীতি শান্তকে বলল

শান্ত লাশটা কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন ৷আমার কাজ আছে ৷আমি যাচ্ছি ৷প্রীতি কথাটা বলেই বের হয়ে গেল ৷

অন্যদিকে দ্বীপ চৌধুরী আর তার ছেলে দিহান সোফায় বসে আছে ৷দ্বীপ চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল

তুই কাকে ভাড়া করেছিস হ্যা ৷শালী আমার ফোন তুলছে না এখন ৷আবেশের ছেলে মেয়েকে মারতে হবে যে কোনো মূল্যে ৷

তুমি কোনো চিন্তা করো না বাবা ৷আজকেই ঐ আবেশের ছেলে মেয়ের শেষ দিন হবে ৷আজ স্কুল শেষ করে ওরা যখন বের হবে ৷তারপর যখন রাস্তা পার হতে যাবে ৷ ঠিক তখনই গাড়ী দিয়ে একদম চাপা দিয়ে দেব ৷

যা করার তাড়াতাড়ি কর বাবা ৷নইলে এত দিনের সাজানো প্লান সব শেষ হয়ে যাবে ৷

দিহান নিজের বাবাকে শান্তনা দিয়ে বেড়িয়ে গেল ৷

বেলা এগারোটা বাজে ৷দিহান গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে ৷গাড়ীর ড্রাইভার সহ আজ আবেশের ছেলে মেয়েকে সে শেষ করে দেবে ৷স্কুলের ভেতর থেকে ঘন্টার আওয়াজ আসতেই দিহান পৈশাচিক হাসি দিল ৷অপেক্ষা করছে কখন তারা বের হবে ৷দিহানের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে আবেশের ছেলে মেয়ে বেড়িয়ে এলো ৷ ছেলেটা বড্ড দুষ্টু শুধু এই দিক ঐ দিক দৌড় দেয় ৷আবেশের ড্রাইভার ছেলেটাকে কোলে নিয়ে নিল ৷আর মেয়েটার হাত ধরে রাস্তা পার হবে ৷আর এই দিকে দিহান তার গাড়ী স্টার্ট দিল ৷দিহানের গাড়ী অতি দ্রুত বেগে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে ৷

রাত দশটা বাজে ৷আবেশের বাড়ীতে কান্নার রোল পরে গেছে ৷আবেশর স্ত্রী নিরুপমা ছেলে মেয়ের জন্য পাগল প্রায় ৷আবেশের অবস্থাও ভালো না ৷ পাগলের মতো পুলিশের কাছে দৌড়েছে সারাদিন ৷নিজের ছেলে মেয়েকে হারিয়ে তার মাথাও ঠিক নেই ৷

নিরুপমা পাগলের মতো বিলাপ করছে ৷আবেশকে দেখেই নিরুপমা ছুটে আসে ওর কাছে ৷তারপর বলল

ওদের খোজঁ পেয়েছ ৷আবেশ মাথা নিচু করে রইলো ৷

নিরুপমা কাদঁতে কাদঁতে বলল আমার ছেলে মেয়েকে এনে দাও ৷আমার তো ওদের ছাড়া আর কেউ নেই ৷এই তুমি কথা বলো ৷আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ৷আবেশ কিছু তো বলুন ৷আমার ছেলে মেয়েকে ফেরত দাও আমার কোলে ৷চিৎকার করে কথা গুলো বলতে বলতে স্বামীর বুকেই নেতিয়ে পড়েছে আবার সে ৷দুপুর থেকে এই পর্যন্ত কয়েক বার নিজের জ্ঞান হারিয়েছে সে ৷

মায়ের ভালোবাসার কাছে দুনিয়ার সব কিছুই তুচ্ছ ৷মা বাবারা নিজের জীবন বিপন্ন করতে ভাবে না ৷কিন্তু সন্তানের সামান্যতম কষ্ট তাদের সহ্য হয় না ৷আর সেখানে যদি সারাদিন যাবৎ নিজের ছোট দুইটা ছেলে মেয়ে নিখোঁজ থাকে ৷তাহলে কোনো মা বাবার মাথা ঠিক থাকে না ৷ আবেশের ছেলে মেয়ে আজ কিডন্যাপ হয়েছে ৷কে করেছে এই ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না ৷সবার সামনে থেকে ছেলে মেয়ে দুটোকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে ৷

ফ্লাশব্যাক দিহান গাড়ী নিয়ে আসতে ছিল ওদের দিকে ৷হঠাৎ করেই দেখলো অন্য আরেকটা গাড়ী সেখানে তার আগে এসেছে ৷এবং গাড়ীর ভেতর থেকে নাক মুখ ঢাকা একটা মেয়ে বেড়িয়ে এসেছে ৷মেয়েটা বের হয়েই আবেশের ড্রাইভার মাথায় বন্দুক তাক করে ৷আশেপাশের সবাই ভয়ে কাপঁছে বন্দুক দেখে ৷দিহানও আর গাড়ী নিয়ে সামনে গেল না ৷যদি ওর কাজটা অন্য কেউ করে দেয় তাহলে সমস্যা কি ৷দিহান আরো একটা কথা ভাবলো ৷হয়তো এই মেয়েকে ওর বাবাই পাঠিয়েছে ৷তাই দূরে বসেই সব দেখতে লাগলো ৷

ড্রাইভারের মাথায় বন্দুকটা ধরে মেয়েটা বলল ছেলে মেয়ে দুটোকে গাড়ীতে রাখো তাড়াতাড়ি ৷ড্রাইভার নিজের প্রান বাচাঁতে তাই করলো ৷মেয়েটা ড্রাইভারের মাথায় বন্দুক ধরেই গাড়ীতে উঠে বসলো ৷তারপর ড্রাইভারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ৷আর ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে চলে গেল ৷

দিহান ফোন বের করে ওর বাবাকে কল করল ৷ফোন রিসিভ হতেই দিহান বলল

বাবা তুমি তো পুরাই পাকা খেলোয়াড় ৷

কি সব আজেবাজে কথা বলছিস ৷

কেন তুমি আমাকে আগে বললে না ৷যে আবেশের ছেলে মেয়ে কিডন্যাপ করাতে তুমি লোক পাঠাচ্ছো ৷

কি সব উল্টা পাল্টা বলছিস ৷আমি কোনো লোক পাঠাই নি ৷

তাহলে এই মাত্র যে আবেশের ছেলে মেয়েকে একটা মেয়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল ৷

কি বলছিস এই সব ৷ওরা কোথায় ৷

গাড়ী নিয়ে চলে গেছে বাবা ৷

তাড়াতাড়ি পিছু নে ঐ মেয়ের ছাগল একটা ৷

দিহান গাড়ী নিয়ে ছুট লাগায় ৷কিন্তু ঐ গাড়ীটাকে আর খুজে পায় না ৷

অন্যদিকে ড্রাইভার আবেশকে কল .করে সব জানিয়ে দেয় ৷

আবেশ কিডন্যাপের কথা শুনেই ধপ করে বসে পরে ৷

বর্তমানে আবেশের কাছে দ্বীপ চৌধুরী এসে বলল বৌমাকে ঘরে নিয়ে যা ৷আমি ডাক্তারকে কল করছি ৷পুলিশ ওদের খুজছে চিন্তা করিস না ৷

আবেশ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে স্ত্রীকে কোলে তুলে নিলেন ৷স্ত্রী আর সন্তান ছাড়া তার তো আর কেউ নেই ৷আল্লাহ কেন বারবার তার থেকে আপন জনদের কেড়ে নেয় আবেশ তা জানে না ৷স্ত্রীকে কোলে নিয়ে উপরে উঠে গেল আবেশ ৷

অন্যদিকে হঠাৎ করেই দ্বীপ চৌঝুরীর মোবাইলে কল এসেছে ৷দ্বীপ চৌধুরী হঠাৎ করেই বিরক্ত হলো ৷কলটা রিসিভ করেই দ্বীপ চোধুরী বলল

কে বলছেন ৷

ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো ৷আমি তোর যম বলছি ৷

কি সব আজেবাজে কথা বলছেন ৷কে আপনি ৷

আবেশ চৌধুরীর ছেলে মেয়েকে আজ যে কিডন্যাপ করেছে ৷আমি সে বলছি ৷বড্ড খারাপ লাগছে তোমার প্লানটা সাকসেস হলো না আজ ৷আজকের পর আর কখনো হবেও না ৷

কে তুই তাড়াতাড়ি বল ৷

আপনি থেকে সোজা তুই ৷তোদের ভাড়া করা ঐ জেসিকা কে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি ৷তোর প্রান প্রিয় বন্ধু ওসমানকেও ওপারে পাঠিয়েছি ৷সামনে তোর ছেলের পালা ৷রেডি থাক ৷

তুই কে ৷এই তুই কে ৷ চিৎকার করে দ্বীপ বলল ৷

ওপাশ থেকে এবার শুধু একটা আওয়াজ দ্বীপ চৌধুরীর কানে এলো ৷আর তা হলো প্রীতিলতা ৷তারপর ফোনটা কেটে গেল ৷দ্বীপ চৌধুরী এসির মধ্যে ঘামতে লাগলো ৷তবে কি সে ফিরে এসেছে ৷চৌদ্দ বছর আগে অল্পে কি তাহলে সে মরে নি ৷কিন্তু চোখের সামনে সে প্রীতিলতাকে মরতে দেখেছে ৷তাহলে এটা কে ৷না না এটা প্রীতি লতা হতেই পারে না ৷ সে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো ৷

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আবেশের স্ত্রী নিরুপমা চোখ খুলে তাকায় ৷স্বামীর বুকেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে সে ৷আবেশও কাদঁছে স্ত্রীকে ধরে ৷

প্রীতিও বাসায় এসেছে একটু আগে ৷ ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেল সে ৷তারপর কিছু খাবার রান্না করে নিজের ঘরে চলে গেল ৷তার সামনেই দুটো পুতুল বাচ্চা বসে আছে ৷প্রীতির দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে ৷তাদের মুখ বাধা ৷প্রীতি একটা ছোট লাঠি নিয়ে ছেলেটার সামনে বসলো তারপর বলল

খুদা লেগেছে ৷

ছেলেটা মাথা নাড়ালো ৷ যার অর্থ হ্যা ৷

প্রীতি ছেলেটার দিকে ঝুকে বলল আর চিৎকার করবে ৷যদি চিৎকার করো তাহলে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখবো বুঝেছো ৷ছেলেটা মাথা নাড়লো ৷প্রীতি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল আর একবার যদি পালাতে চেষ্টা করো তাহলে হাত পা কেটে রাখবো তোমার ৷

প্রীতি ছেলে মেয়ে দুটোর হাত পায়ের বাধঁন খুলে দিল ৷তার পর ওদের হাত মুখ পরিষ্কার করে দিল ৷তারপর ছেলে মেয়ে দুটোকে কোলে নিয়ে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো ৷

চলবে……..