প্রেমরোগ পর্ব-২৫

0
551

#প্রেমরোগ-২৫
#তাসনিম_তামান্না

গভীর রাত সকলে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে। শীত না পড়লেও শীতের আগমন জানান দিচ্ছে। মেঘা রিদের সাথে কথা বলছে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে বলল
” ভাবছি বিয়ে করে ফেলবো? ”
” কেনো তোমার বাসা থেকে বিয়ের কথা বলছে? ”
” নাহ। আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। আর কত কাল সিঙ্গেল থাকবো? ”
ওপাশ থেকে নিরবতা দীর্ঘ শ্বাস শোনা গেলো। মেঘা অস্থির মন নিয়ে ভালো খারাপ কিছু শোনার অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। মনে মনে চাইছে ভালো কিছু বলুক। রিদ সময় নিয়ে বলল
” তাহলে ছেলে খোঁজা শুরু করি কি বলো? ”
মেঘার স্বচ্ছ কাঁচের মতো হৃদয়টা ঝনঝনিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো অন্তঃপুর দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। নয়ন হয়ে উঠলো অশ্রুসিক্ত। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় অশ্রু গড়িয়ে পড়লো টুপটাপ।
জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল
” অন্য হাতে যখন আমাকে তুলে দিবি তখন এতোদিন আমার সাথে কথা বললি কেনো? এটা টাইম পাস ছিল তোর? আমাকে তোর টাইম পাস করা মেয়ে মনে হয়? আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই নি তো তুই ই তো ঘুরঘুর করেছিস? ”
” চিৎকার চেচামেচি করছো কেনো রাতের বেলা সকলে ঘুমাচ্ছে। আর আমি কি কখনো তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি বা বিয়ে করতে চাই? ”
মেঘা ডুকরে কেঁদে উঠলো বলল
” বলেন নি কিন্তু এতোদিন আমার সাথে কথা বলার মানে কি? ”
” তোমার বাবা-মায়ের মৃত্যুর দিন তোমার কান্না দেখে কষ্ট হচ্ছিল ”
” আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তাহলে আপনার কেনো কষ্ট হবে আমার কান্না দেখে? আপনি আমার অসহায়তার সুযোগ নিলেন? ”
” ভুল বুঝো মেঘা আমি তোমাকে ভা… ”
” কি বলতে চাইছিলেন? থেমে গেলেন কেনো? ”
” কিছু না ফোন রাখছি ভালো থেকো ”
” ভালো থেকো বললেই কি ভালো থাকা যায়? ”
” যায় না কিন্তু ভালো থাকার অভিনয় করা যায় ”
” আপনি আমাকে বার বার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন। আই হেট ইউ ”
ফোন কেটে বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠলো। দরজায় ঠকঠক আওয়াজ মেঘা কেঁপে উঠল। মনে ভয় জাগলো কেউ তার কথা শুনে ফেলেনি তো? মেঘা চোখমুখ ভালো করে মুছে গলা ঝেড়ে বলল
” কে? ”
তুতুল ওপাশ থেকে বলল
” দরজা খোলো মেঘা ”
মেঘা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে দরজা খুলে দিয়ে বলল ” কি হয়েছে ভাবিপু? এতো রাতে তুমি? ”
” তোমার সাথে কথা ছিল ”
” হ্যাঁ বলো ”
রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো তুতুল মেঘার ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তবে কি সব জেনে গেলো? তুতুল দরজা লাগিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকালো মেঘা দৃষ্টি মেলাতে পারছে না মনে মনে ভয়ে জমে গেছে।
” কি করছিলে? কাদছিলে? ”
মেঘা চমকে উঠে বলল ” কই না তো ঘুমাচ্ছিলাম ”
” মিথ্যা বলছ কেনো? আমি সব জানি। শুনেছি ”
মেঘা বলল ” কি শুনেছো? ”
” নিচে পানি আনতে গেছিলাম। আসার সময় শুনেছি তুমি রিদের সাথে কথা বলছিলে তাই না? ”
মেঘার ভয়ে বুক ধুকপুক করছে।
” কি বলচ এসব ভুল শুনেছ ঘুমের ঘোরে ”
” আমি ঠিক শুনেছি মেঘা তোমাকে আমার কিছু বলার আছে আমি বার বার বলতে চেয়েও পিছনে এসেছি ”
” ভাবিপু প্লিজ এসব ভাইয়াকে বলো না ”
” আচ্ছা বলবো আগে শান্ত হয়ে বসো ”
বিছানায় দুজন মুখোমুখি বসলো।
” আমি জানি তুমি রিদ কে ভালোবাসো আর রিদ ও তোমাকে ভালোবাসে ”
মেঘা অবাক হয়ে বলল
” তুমি কিভাবে জানলে ও আমাকে ভালোবাসে? ”
তুতুল বলল ” শোনো তাহলে যেদিন আমরা ফ্যান্টাস্টি কিংডম থেকে ফিরলাম তোমার আম্মু রিদের সাথে আলাদা কথা বলে ভাগ্যক্রমে আমি সেটা নিজের অজান্তেই শুনে ফেলি ”
” কি কথা বলছে আম্মু? ”
” সেদিন আমি রুম ক্রস করে যাচ্ছিলাম তখন আমার কানে আসে……
—অতীত —
” রিদ আমি জানি তোমাদের উঠতি বয়স এ বয়সে প্রেম ভালোবাসা হয়। আমি মা তো মেয়ের চোখমুখ দেখলে মনের কথা বুঝতে পারি। কিন্তু আমি চাই কোনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে মেঘাকে ঠেলে দিতে। যেখানে তোমার নিজস্ব একটা বাড়ি নেই। মা-বাবা আত্মীয় স্বজন কেউ নেই। আমি কিভাবে দেই বলো। তুমি নিশ্চিতে একটা ভালো ছেলে একটা ভালো জব করো। মেয়ের বাবা-মা এমন একটা ছেলে চাই। কি বলো আমি ও তোমাকে চাইতাম আমার মেয়ের জামাই হিসেবে কিন্তু তোমার একটাই কমতি তোমার বাবা-মা নেই। আমি আমার মেয়েকে আমাদের মতো ভরা সংসারে দিতে চাই হাসিমজা করে থাকবে। আমি কি বলছি তুমি বুঝছ আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবে ”
” জি আন্টি ”
” আমার কোনো কথায় খারাপ লাগবে বা কষ্ট পেলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ”
” এমা ছিঃ ছিঃ এভাবে বলবেন না আপনি আমার মায়ের মতো ”
” মাথায় রেখো কথা গুলো ”
—বর্তমান—
” আম্মু যেতেই সেদিন রিদকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি। ”
মেঘার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে লোকটা এভাবে মনের মধ্যে কথাগুলো চেপে রেখেছে। একবার তো সব খুলে বলতে পারতো। তুতুল মেঘাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
” তোমার ভাইয়াদের বললে তারাও তোমার আর রিদের ব্যপারটা মেনে নিবে আমি জানি। আমি কি কথা বলবো তোমার ভাইয়ার সাথে ”
” না আমিই বলবো। রিদকে আমি রাজি করাবো আম্মু ও রিদকে পছন্দ ছিল কিন্তু শুর একটাই কমতির জন্য এভাবে না করে দিলো। আম্মু আজ থাকলে আমি আম্মুকে বুঝালে আম্মু বুঝতো। আমি যে রিদকে ভালোবাসি ওনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। মেয়ের সুখের জন্য আম্মু মেনে নিতো এতোটা নিষ্ঠুর হতো না ”
” আমি যাচ্ছি। তুমি ভেবে দেখো কি করবে ”
তুতুল চলে গেলো মেঘা বিরবির করে বলল
” রিদ যদি আমার না হয় তাহলে আমি কারোর হবো না কারোর না ”
চলবে ইনশাআল্লাহ