প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব-২২+২৩+২৪+২৫

0
184

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২২

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঐশ্বর্য। তার হিংস্র মনোভাব হঠাৎ করে শান্ত হয়ে গিয়েছে। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে সামনের মেয়েটি রোজের দিকে। মেয়েটি কি বলল? কেন বলল? কিছুক্ষণ পর রোজের কথাগুলো মন থেকে বেশ সহজেই ঝেড়ে ফেলে দিল ঐশ্বর্য। আগের ন্যায় রাগ ফুটিয়ে তুলে বলল,
“নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যে বলছো? লাভ হবেনা। আমি কোনো ডেভিল কুইন নই। আমি ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। এখন নিজেকে কি করে বাঁচানো যায় সেই পথ না পেয়ে আমাকেও নিজের জাতে জড়িয়ে নিচ্ছো? তোমাকে আজ মরতে হবেই। তোমার সাথে কখনোই মি. আনস্মাইলিং এর বিয়ে হতে পারে না। তুমি শয়*তান আর উনি সৎ। একজন ভালো ব্যক্তি। তাই তোমাকে মরতে হবেই।”

বলেই তেড়ে এগিয়ে আসে ঐশ্বর্য। তবে আবারও ইশারায় থামিয়ে দেয় রোজ তাকে। কণ্ঠস্বর মোলায়েম করে বলে,
“ডেভিল কুইন, আপনাকে এটা বিশ্বাস করতেই হবে যে আপনি আমাদের রাজ্যের একমাত্র রানী। আর আপনাকে খোঁজেই আমি এখানে এসেছি। এতো বছর ফাঁকা পড়ে আছে সিংহাসন। আপনাকে আমাদের প্রয়োজন। আপনার জন্ম যতই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে হক না কেন! আসল সত্যি এটাই যে আপনি আমাদের কুইন। ওই রাজ্যে আপনার অধিকার। আর ভ্যাম্পায়ার কিংডম আপনার শ*ত্রু রাজ্য। যাকে আপনার বি*না*শ করতে হবে। তারপর এই পৃথিবী…”

রোজের কথা সম্পূর্ণ হতে দেয় না ঐশ্বর্য। কানে হাত দিয়ে বলে,
“চুপ! চুপ! একদম চুপ। এসব কথা বলে ঐশ্বর্যকে বোকা বানানো যাবে না। আমার বংশকে আমার বিরুদ্ধে করার শাস্তিও তোমাকে পেতে হবে।”

কথাটা শেষ হওয়া মাত্র ঐশ্বর্য দাঁত কিড়মিড় করে তীব্র বেগে রোজের গলা চেপে ধরে। তাকে ছাঁদের দেয়ালে ঠেকিয়ে ধরে। ক্রোধের আগুন জ্বলছে ঐশ্বর্যের চোখে।
“অনেক অনেক ভুল করেছো তুমি। প্রথম ভুল আমার মি. আনস্মাইলিং এর দিকে নজর দেওয়া। দ্বিতীয় ভুল তার সাথে বিয়ে করার কল্পনা করা। তৃতীয় ভুল একটা ডেভিল হওয়া সত্ত্বেও নিজের পরিচয় গোপন রাখা। তুমি আমার রাজ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তোমাকে ছেড়ে দিলে নিজের দিকে তাকাতে পারব না সো কলড রোজ। আই ডোন্ট তোমার নাম রোজ কিনা!”

রোজ নিজের শক্তি প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঐশ্বর্যের কাছে সে নিতান্তই একটা পিঁপড়ের ন্যায়। পেরে উঠছে না। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ উল্টে যাচ্ছে। ধারালো নখ গলায় বসে যাচ্ছে। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ কান খাঁড়া হলো ঐশ্বর্যের। শব্দটা আরো তীব্র হচ্ছে। চকিতে দরজার দিকে তাকায় সে। ফট করে ছেড়ে দেয় রোজকে। নিচে পড়ে যায় রোজ। হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। ঐশ্বর্য ঢক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে। মিনমিন করে বলে,
“রোজ ম্যামকে ডাকছে। অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাড়াতাড়ি যেতে বলল।”

রোজ কাশতে কাশতে উঠে দাঁড়াল। ঐশ্বর্যের দিকে আঁড়চোখে তাকাল সে। কোনোরকমে বলল,
“হ্যাঁ চলো যাচ্ছি।”
তখনি মেয়েটার সঙ্গে হাঁটা দিল রোজ। ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইল। ওরা যাওয়া মাত্র পা দিয়ে নিচে আঘাত করে নিজেও চলে গেল।

সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কখন এঙ্গেজমেন্ট হবে? রোজ উপস্থিত আছে। বাকি আছে শুধু প্রেমের। তাকে আর দেখাই যাচ্ছে না আশেপাশে। বেশ অপেক্ষা করার পরে এবার আশেপাশে অনেকে বিরক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ স্বভাবত ফিসফিস করছে। রোজ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে আর মাঝে মাঝে ঐশ্বর্যের দিকে তাকাচ্ছে। ঐশ্বর্য একবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে একবার হাতের সফট ড্রিংকস এর গ্লাস চেপে ধরছে। এবার মিসেস. পরিণীতা অধৈর্য হলেন। মিতালিকে জোরে ডাক দিলেন। মিতালি হচ্ছে এই বাড়ির কাজকর্মের সহযোগী। এক কথায় সার্ভেন্ট যাকে বলে। মিতালি ছুটে আসে। মিসেস. পরিণীতা কড়া গলায় জিজ্ঞেস করেন,
“তোমাকে না প্রেমকে ডেকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম? কি করছো এতক্ষণ তুমি?”

মিসেস. পরিণীতার ধমক খেয়ে মিতালি এক নিশ্বাসে বলে,
“আমি তো স্যারকে ডেকেছিলাম কিন্তু উনি ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলেন। বলেছেন ৫ মিনিট পরই আসছেন। তাই আমিও চলে এসেছি।”

এবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন মিসেস. পরিণীতা। তার ছেলে তো এতোটাও দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। যথেষ্ট সময় মেনে চলে। আজ এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছে সে? কবির সাহেব এবার পরিণীতার পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,
“তুমি যাও উপরে। প্রেমকে ডেকে নিয়ে এসো। গেস্ট রা উল্টাপাল্টা ভাবতে শুরু করেছে।”

মিসেস. পরিণীতা এবার না পেরে নিজেই গেলেন প্রেমের রুমের দিকে। দ্রুত এগিয়ে যেতেই হঠাৎ যেন তার হাতে থাকা ফোনের মেসেজের টোন বেজে উঠল। কিছুটা চমকে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকান উনি। প্রেমের নম্বর দেখে তাড়াতাড়ি করে ওপেন করেন মেসেজ।
“মা, আই এম সো সরি! এই বিয়ে, এঙ্গেজমেন্ট, এই দায়িত্বের জন্য আমার সময় চাই। গিভ মি টাইম। হয়ত এই সময় এইসব কথা বলা আমার ঠিক হচ্ছেনা। কারণ বাড়িতে অনেক গেস্ট। কিন্তু তোমাকে প্রথম থেকে বার বার এ কথা বলে আসছি তুমি শুনছো না। নিজের মনের ওপর দিয়ে জোর দিতে পারলাম না। রোজকে আর তার ফ্যামিলিকে আমার তরফ থেকে সরি। পরে গিয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নেব।”

মিসেস. পরিণীতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এখন কি হবে ভেবে কেঁপে উঠলেন উনি। কাকে কি জবাব দেবেন? ঢক গিলে আশেপাশে তাকালেন। রোজকে বা তার ফ্যামিলিকে কি বলবে? বা এতো এতো গেস্ট কে কি বলবে?

আশেপাশে ফিসফিসানি চলছে। একেক জন একেক কথাবার্তা বলছে। কারণ একটাই এঙ্গেজমেন্ট আজ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে এই পুরো হইহই পরিবেশের অবস্থা বেশ সংকীর্ণ। মিসেস. পরিণীতা আর কবির সাহেব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের বলার মতো কিছুই নেই। শুধু তাদের একটাই কথা মনে হচ্ছে যে তারা হয়তবা প্রেমকে জোর করে ভুল করেছে। রোজের মা-বাবা রোজকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রোজ কাঁদছে। রোজের মা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে ওঠেন,
“এমনটা না করলেও পারতেন আমাদের সাথে। এই সম্পর্ক গড়তে চায় না আপনাদের ছেলে এটা আগেই বলতে পারতেন। এমন ভাবে অপমান করার দরকার ছিল না।”

কবির শেখ কিছু বলতে নেন। কিন্তু থামিয়ে দেন রোজের বাবা। দৃঢ় কন্ঠে বলেন,
“আপনাকে শুধু বিজনেস পার্টনার নয় মি. শেখ একটা আত্মীয়তার সম্পর্কও গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি সব বিগড়ে দিলেন। শত্রুতার সম্পর্ক গড়ে তুললেন। এর ফল ঠিক হবেনা। আমার মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার ফল ভুগতে হবে আপনাদেরকে আর আপনার ওই ছেলেকে।”

এইসব মিলিয়ে নানান তর্ক বির্তক চলছে। ঐশ্বর্য সোফায় বসে আছে পায়ে পা তুলে। হাতে এবার জুসের গ্লাস। মাঝে মাঝে মিটমিট করে হাসছে সে। বেশ মজা পাচ্ছে এসব দেখে। কেমন জানি মেলোড্রামা ফিলিং আসছে। তবে প্রেম যে এই কান্ড করবে ঐশ্বর্যের ভাবনার বাহিরেই ছিল। সেও চমকেছে। আবার ততটাই খুশি হয়েছে। সবাই না থাকলে হয়ত নেচেই দিতো। কিন্তু প্রেম হয়ত তাকে ভালোবেসে না নিজের প্রস্তুত নয় বলে এই অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গিয়েছে। এসব ভাবনা আসতেই পরক্ষণেই খুশি মিলিয়ে যায় ঐশ্বর্যের। জুসে চুমুক দিতে দিতে ঐশ্বর্যের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়ল রোজের দিকে। কেমন মিথ্যে কান্না কাঁদছে রোজ। ব্যাপারটা বেশ মজার লাগল ঐশ্বর্যের কাছে। এবার সোজা হয়ে বসে রোজের দিকেই মনোযোগের সহিত দেখতে লাগল। জুসের গ্লাস শেষ করে উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে এলো রোজের দিকে। রোজ কিছুটা থতমত খেয়ে তাকালেও কিছু বলল না। ঐশ্বর্য নিজের চাহনি দুর্বল করে সবার সামনেই রোজকে জড়িয়ে ধরল। তাকে শান্তনা দিয়ে নরম সুরে বলল,
“আসলেই রোজ নরম মনে খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে। মি. শেখের এমন করা শোভা পায় না আসলেই। রোজের সাথে একদম ঠিক হলো না।”

কথাটা বলে থামলো ঐশ্বর্য। এবার মুখটা রোজের কানের কাছে নিয়ে বেশ ধীর কন্ঠে বলল,
“কুমিরের কান্না বোঝো? কুমিরের কান্নার মতোই মিথ্যে তোমার কান্না। তোমাদের ডেভিল বংশের কান্না আর কষ্ট দুটোই মিথ্যে। এই কান্না না দেখিয়ে চোখের সামনে থেকে দূর হও। অনেক ইনজয় করেছি ড্রামা। আর ভালো লাগছে না। সো বোরিং!”

রোজের থেকে সরে আসে ঐশ্বর্য। নিজেও একটা দুঃখী দুঃখী মুখ নিয়ে বলে,
“কষ্ট পেয়ো না রোজ!”
রোজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সেও বুঝছে না প্রেম চাইছে টা কি? প্রেম কি তাকে বিয়ে করবে না? সে কি ঐশ্বর্যকে পছন্দ করে কেনোভাবে? তাহলে তো সর্বনাশ!

পরেরদিন সকালে বেশ দেরিতে ঘুম ভাঙে ঐশ্বর্যের। কালকে বেশ রাত হয়েছিল বাড়ি ফিরতে। সারাদিনটা কাটে রোজের কথা ভাবতে ভাবতে। রোজের বলা প্রতিটা কথা কেমন যেন না ভাবতে চাইলেও ঐশ্বর্যের ভাবনায় চলে আসছে। সব মিলিয়ে দিনটা অগোছালো গেল ঐশ্বর্যের। সারাদিন ঘরবন্দি হয়ে রইল। ঘর থেকে বের হলো না।

ঘটনাটি সন্ধ্যার। ঐশ্বর্যের সামনে নানানরকম অফিসের কাগজ। ইচ্ছে করে অনুভবের থেকে কাগজগুলো নিয়ে বসেছে কাজ করতে। যাতে রোজ নামক মেয়েটির কথাগুলো আর মনে না পড়ে। সেসবে ব্যস্ত থাকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল ঐশ্বর্য। তখনি তার ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। প্রথমে সেদিকে না তাকালেও পরবর্তীতে চোখ যায় ফোনের দিকে। ‘মি. আনস্মাইলিং’ নামটি দেখে ঝড়ের গতিতে ফোনটা হাতে নিয়ে ধরে সে। ওপাশ থেকে স্ট্রেটকাট কিছু কথা ভেসে আসে।
“লিসেন, আমার সাথে মিট করো এখনি এই মূহুর্তে। তোমার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে আমার। লোকেশন আমি মেসেজে লিখে দিচ্ছি।”

বলেই ফোনটা কেটে দিল প্রেম। ঐশ্বর্যকে কিছু বলার সুযোগও দিল না। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে ফোন নামিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। লোকটার হলো টা কি? এঙ্গেজমেন্টের শোকে পাগল হয়ে গেলেন নাকি? তখনি মেসেজ টোন বেজে ওঠে। প্রেম লোকেশন পাঠিয়েছে।

গাড়ি এসে দাঁড়ায় একটা নিরব রাস্তায়। এখানে গাড়ির চলাচল কম। অনেক পর পর একটা গাড়ি যায়। রাস্তায় নিচে ধার বেয়ে নদী। এখানেই প্রেম ঐশ্বর্যকে ডেকেছে। ঐশ্বর্য গাড়ি থেকে নেমে সোজা নিচে নেমে গেল। আশপাশটা গাছগাছালিতে ভরা। আবার বড় বড় ঘাস। নদীর ঠান্ডা হাওয়া হৃদয় ছুঁয়ে দেয়। এখানে সব থেকে মুগ্ধকর হচ্ছে জোনাকি পোকার মেলা। যারা চারিপাশটা উজ্জ্বল করে দেয়। মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে ঐশ্বর্য দেখতে পেল একটা পুরুষালি অবয়ব। ভালো করে দেখতেই প্রেম নামক ব্যক্তি স্পষ্ট হলো তার চোখে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সে। প্রেম নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে ঐশ্বর্য তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“মি. আনস্মাইলিং! এতো জরুরি তলব কেন? কি হয়েছে?”

প্রেম নিশ্চুপ। ঐশ্বর্য চোখ ছোট ছোট করে। মুখ বাঁকা করে বলে,
“আপনার হাসিবিহীন মুখটা দেখাতে ডেকেছেন? নাকি মৌনব্রত কি করে পালন করতে হয় সেটা দেখাতে ডেকেছেন?”

এবার প্রেম ঘাড় ঘুরিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে চেয়ে তাকায়। প্রেমের এমন উদ্ভট শীতল দৃষ্টি আগে কখনো দেখেনি ঐশ্বর্য। কেঁপে ওঠে তার সর্বাঙ্গ। তবুও প্রকাশ না করে বলে,
“এঙ্গেজমেন্ট ভেঙে যাওয়ার শোকে আছেন? এমনিতেও আমার জন্য কখনো আপনি এঙ্গেজমেন্ট করতেই পারতেন না। আমার সামনে করতে পারতেন?”

প্রেম দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে এবার। এক নিশ্বাসপ বলে ওঠে…
“আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ! উইল ইউ ম্যারি মি, মিস. ঐশ্বর্য সিনহা?”
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল ঐশ্বর্য। হৃৎস্পন্দনের গতি যেন তড়তড় করে বাড়ছে। নিঃশ্বাস নিতে যেন ভুলে গেছে। প্রেম তার ডানটা নিজের হাতের সঙ্গে আগলে ধরেছে। আর প্রেমের চাহনি দেখে মনে হচ্ছে সে উত্তরের দৃঢ় অপেক্ষা করছে। ঐশ্বর্যের নিরবতা দেখে প্রেম অধৈর্য হয়ে বলে,
“বলো বিয়ে করবে আমাকে?”

চলবে….

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৩

নিঝুম রাত। ঝিঁঝি পোকারাদের নিজ ভাষায় গান সঙ্গে নদীর স্রোতের এক মধুর শব্দ। আশেপাশে জোনাকিরা নিজ মনের আনন্দে খেলছে যেন। মৃদু বাতাস সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। নদীর ধারে থাকা একজন নারী এবং একজন পুরুষ দুজনেই স্তব্ধ। পুরুষটির অধৈর্য চাহনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্যের উত্তরের জন্য সেই উৎসুক চাহনি ঐশ্বর্যের দ্বারা অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢক গিলছে ঐশ্বর্য। এই প্রথম তার অস্বস্তি লাগছে এই মানুষটাকে দেখে। কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। যেই মানুষটার সাথে থাকলে সে স্বস্তি অনুভব করে সেই মানুষটা তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। শীতের রাতের বাতাসের মাঝেও দরদর করে ঘামছে। হালকা কেঁপে উঠে নিজের হাতটা প্রেমের হাত থেকে সরিয়ে নিল ঐশ্বর্য। প্রেমের কপালে সেই হাতটা রাখলো। তারপর চিন্তিত সুরে বলল,
‘আর ইউ অলরাইট মি. আনস্মাইলিং? টেম্পারেচার তো ঠিকই আছে মনে হচ্ছে। আপনার তো ড্রিংকস করারও অভ্যেস নেই আমি যতদূর জানি। তাহলে এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন কেন?”

প্রেম এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে নিজের কপাল থেকে ঐশ্বর্যের হাত সরিয়ে বলে,
“উল্টাপাল্টা নয়। আর আমার কিছু হয়নি। আই এম অলরাইট। আমি সজ্ঞানে বলেছি যা বলার। অ্যান্ড আই নিড এন্সার।”

“ইম্পসিবল। হয় আপনি মি. আনস্মাইলিং নয়। নয়ত আপনার কিছু হয়েছে। কি হয়েছে?”

অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ঐশ্বর্য। প্রেম অসহায় চোখে বলে,
“আমি আবারও বলছি আমি ঠিক আছি। আমি যদি বিয়ে করি শুধু ঐশ্বর্য সিনহাকেই করব। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। এটাই তো বলেছিলে না? আমার সঙ্গে সারাজীবন কাটাতে চেয়েছিলে। আমিও সেটাই চাইছি।”

“হঠাৎ এমন ডিসিশন কেন নিলেন? এর কোনো বাধ্যবাধকতা আছে? কোনো কারণ আছে? আপনার হঠাৎ এমন কথাবার্তা আমাকে চিন্তা ধরিয়ে দিচ্ছে। সবকিছু গোলমেলে লাগছে। কাল আপনি এঙ্গেজমেন্টও করলেন না। চলে গেলেন বাড়ি ছেড়ে।”

“আমি ভুল না হলে এতে যদি সবচেয়ে বেশি যদি কেউ খুশি হয় সেটা তুমি।”

ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়। জোর দিয়ে বলে,
“নিশ্চয় আপনি আমার খুশির জন্য এমন করেন নি?”

“না। নিজের খুশির জন্য করেছি। প্রথম বার নিজের খুশির জন্য করেছি।”

ঐশ্বর্য কিছু বলে ওঠার আগেই প্রেম বলে ওঠে,
“সারাজীবন মি. ইরিটেটিং এর সাথে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ঐশ্বর্য নিরব হয়ে পড়ে। তার চাহনিতে আকুলতা। সে এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যেন মনে হচ্ছে কোনো স্বপ্ন! যেটা ঘুম ভাঙলেই স্বপ্নও টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বেশ বড় একটা নিশ্বাস নিতেই ঐশ্বর্যের মাথায় হুট করে একটা কথা এলো। প্রেমের দিকে সন্দিহান হয়ে তাকিয়ে বলল,
“আপনি কি আমাকে কোনোভাবে দয়া করছেন মি. আনস্মাইলিং? আমি ভুল না হলে আমার ভালোবাসার প্রতি দয়া দেখাতে এসেছেন নিশ্চয়?”

প্রেম হতবিহ্বল হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। অনেকটা জোরে বলে উঠল,
“এটা তোমার কেন মনে হচ্ছে?”

“হওয়ার কথা নয় কি? প্রথমত, আমার জন্য পরবর্তীতে আপনার এতো বড় বিজনেস ডিল ফাইনাল হয়েছে। হতেও তো পারে এর প্রতিদান হিসেবে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন? যদি এমন হয় তাহলে প্লিজ এখন আমাকে এখান থেকে যেতে দিন। কোনোদিন আপনার সামনে কোনোরকম পাগলামি করব না। কখনো আপনাকে পাগলের মতো চাইব না। কখনো আপনার সাথে একটু থাকার জন্য নিজেকে বিপদে ফেলব না। তবুও প্রতিদান বা দয়া করবেন না ঐশ্বর্যকে।”

ঐশ্বর্য অন্যদিকে ফিরে যায়। রাস্তার দিকে ক্রমাগত পায়ের ধাপ ফেলতে থাকে। প্রেম পিছু ডাকে তাকে।
“ঐশ্বর্য!”

ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। শান্ত কন্ঠে বলে,
“আমি #প্রেমের_ঐশ্বর্য হতে চেয়েছি মি. আনস্মাইলিং। প্রেমের দয়া বা প্রতিদান কোনোটাই চাইনি।”

প্রেম স্তব্ধ নয়নে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তার সামনে ওই সুন্দর মেয়েটা হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে। ঐশ্বর্য হাঁটছে। হঠাৎ এমন সময় প্রেম দ্রুত এসে খপ করে তার হাতটা ধরে নেয়। চমকে তাকায় ঐশ্বর্য। কোনোপ্রকার কথা না বলে ঐশ্বর্যকে জোর করেই নিজের গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। ঐশ্বর্য বাকরুদ্ধ। কি হচ্ছে বুঝতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ওর। মস্তিষ্ক ক্রমাগত কাজ করা বন্ধই করে দিচ্ছে। ঐশ্বর্যকে নিয়ে গিয়ে নিজের গাড়ির সামনে দাঁড় করায় প্রেম। ঐশ্বর্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়ির দরজা খুলে বলে,
“বসো গাড়িতে।”

গাম্ভীর্যের সাথে রাগের ছাপ রয়েছে কন্ঠে। ঐশ্বর্য বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
“কি চাইছেন আপনি? আপনার মাথায় কখন কি চলে সেটা বোঝা অনেক কঠিন।”

“তোমার থেকেই হয়ত এই রোগটা পার হয়েছে ঐশ্বর্য। এখন প্রশ্ন না করে বসে পড়ো। নয়ত একটু আগের মতো জোর করে বসাতে হবে।”

“কোথায় যাব আমরা?”

প্রেম এবার ঐশ্বর্যকে গাড়িতে ঠেলে হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে দরজা ঠাস করে জোরে লাগিয়ে দিয়ে নিজেও গাড়িতে গিয়ে বসে। মুখটা ভার তার। ঐশ্বর্য নিজের তীব্র দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারছে গম্ভীর সেই মুখটাতে ফুটে উঠেছে লাল আভা। ঐশ্বর্যের মতো মেয়ে আজ কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। গোল গোল চোখ করে বসে রয়েছে সে। আজ প্রেমের কান্ডকারখানা সব যেন মাথায় ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তবুও ভয় কাটিয়ে বলে,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা? এমন আচরণ করছেন কেন আপনি? আপনার পিছু তো ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দিয়েছি পাগলামি। আর ডিল ফাইনাল করিয়েছি। তাহলে কীসের দরকার আমাকে? শাস্তি দিচ্ছেন আমায়?”

“তুমি যদি তাই ভেবে থাকো তাহলে সেটাই। শাস্তি দিচ্ছি আমি তোমায়।”

“গাড়ি থামান আপনি।”

প্রেম আর কোনো উত্তর দেয় না। নিজের ফোনের স্ক্রিন অন করে টাইম দেখে নেয়। এখন বাজে প্রায় ৮ টা। এবার গাড়ির স্টেয়ারিং একহাতে সামলাতে সামলাতে ফোনের লক খুলে কাউকে যেন ফোন লাগায়। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভড হলে বলে ওঠে,
“হ্যালো নিয়াজ। আর ইউ ফ্রি?”

ওপাশ থেকে কি বলা হলো শুনতে পেলো না ঐশ্বর্য। প্রেম আবারও বলে উঠল,
“একটা কাজ ছিল। তোরা অফিসের এমপ্লয়ি হলেও তোদের আমি সবসময় বন্ধু হিসেবে দেখেছি সেটা তোরা জানিস। সো আই নিড হেল্প!”

ঐশ্বর্য মনোযোগ দিয়ে ওপাশের কথাও শোনার চেষ্টা করলেও পারলো না শুনতে। প্রেম থমথমে হয়ে বলে,
“তোরা কাজি অফিসের সামনে চলে আয় ফাস্ট! বেশি রাত অবধি হয়ত খোলা থাকবে না অফিস। সো তোরা দেরি না করে চলে আয় এজ শুন এজ পসিবল।”

এবার বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ঐশ্বর্য। সব গুলিয়ে গেল তার। প্রেম ফোন কেটে দিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিতেই ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে বলল,
“কাজি অফিস মানে? কি করতে চাইছেন? গাড়ি থামান নয়ত আমি কি কি করতে পারি আপনি কিন্তু জানেন না। খুব খারাপ হবে কিন্তু!”

“ভালোবাসো আমায় মিস. ইরিটেটিং?”

ঐশ্বর্য থমকে গেল এইখানেই। স্তব্ধ হয়ে মূর্তির মতো বসে রইল সেখানে। তবে যখনই তার মনে হলো প্রতিদান কিংবা দয়ার কথা তখনি নিরবতা ভাঙল তার।
“আমার ভালোবাসাকে আমি দয়া বা প্রতিদানের সাথে কম্পেয়ার করতে চাই না। আমি কখনো হয়ত ভালোবাসা দেখিনি বুঝিনি। এতোটুকু বুঝি যে ভালোবাসার সঙ্গে এসব ওয়ার্ড তুচ্ছ লাগে। এসবের চেয়ে আপনার থেকে দূরে থাকা ভালো।”

“শাট ইউর মাউথ ঐশ্বর্য। বেশি ভাবছো তুমি।”

“বেশি ভাবলে সেই ভাবনা বন্ধ করে দিন? সেটাও তো পারছেন না। কারণ আমি সঠিক কারণ ধরতে পেরেছি।”

প্রেম প্রতিত্তোরে দাঁতে দাঁত চেপে ঐশ্বর্যের কথা হজম করে। কারণ সে জানে ঐশ্বর্য থামার মেয়ে নয়। তাই কথা বাড়ানো বেকার।

অবশেষে তারা এসে পৌঁছায় কাজি অফিসের সামনে। গাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে চায় ঐশ্বর্য। তার উদ্দেশ্য নামা মাত্র সেখান থেকে তীব্র বেগে ছুটে চলে যাবে। চোখের পলকে হারিয়ে যাবে। তবে দরজা খুলছে না। বেশ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করার আগেই প্রেম বলল,
“দরজা খোলার আগে বলে রাখি। আই হোপ কাজি অফিসে গিয়ে কোনোরকম সিনক্রিয়েট করবে না। আর যদি বিয়েটা একান্তই না করতে চাও তাহলে আমি আজ রাতেই রোজকে বিয়ে করব। অ্যান্ড আই এম সিরিয়াস।”

আগুনের ন্যায় জ্বলে ওঠে ঐশ্বর্যের সর্বাঙ্গ। মাথায় একটা কথায় ঘুরতে থাকে যে রোজ মানুষ নয়। ডেভিল। সি ইজ অ্যা ডেভিল। আর একজন ডেভিলের সাথে একজন মানুষের বিয়ে অর্থাৎ প্রেমের বিয়ে মানে মৃত্যু। এমন বিপর্যয় ঐশ্বর্য মানবে না। তার শরীরের প্রতিটা লোমকূপ শিউরে ওঠে। বলার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে ঐশ্বর্য। দৃষ্টি স্থির একদিকে। আসলে প্রিয় ব্যক্তিটির সঙ্গে বিয়ের খুশি আর এইভাবে বিয়ের হতাশা মিলিয়ে সে অনুভূতিশূন্য। তাদের থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে নিয়াজ এবং আরো কিছু লোক। তারা সাক্ষী দিতে এসেছে। তবে আজ কোনো রেজিস্ট্রি হবে না বলে কাজি বলেন। কারণ কোনো কাগজপত্র নেই। শুধুমাত্র ধর্মীয় মতে বিয়ে সম্পূর্ণ হবে। ঐশ্বর্যের মাথা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে দেওয়া। বেশ কিছু কার্যক্রম শেষে কাজি সাহেব সর্ব প্রথম প্রেমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন,
“শেখ আনন প্রেম, কবুল বলুন। আর ঐশ্বর্য সিনহাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করুন।”

প্রেম দুটো বড় বড় শ্বাস নেয়। এদিক ওদিক তাকিয়ে এক নিশ্বাসে তিনবার কবুল বলে উঠতেই কাজি সাহেব উত্তরে আলহামদুলিল্লাহ বলেন। এবার ঐশ্বর্যের দিকে তাকান উনি। ঐশ্বর্য নির্বিকার। কাজি সাহেব বলেন,
“কবুল বলো মা। আর শেখ আনন প্রেমকে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকার করো।”

ঐশ্বর্য শ্বাস নিতে ভুলে গেছে। গলা শুঁকিয়ে আসছে। কন্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেছে। তার সেই মাধুর্যের মাখা কন্ঠে শান্ত সুরে বলে ওঠে,
“কবুল।”

এতটুকু যেন প্রেমের বুকে এসে লাগে। এই বুঝি সম্পর্ক তৈরি হলো? ধুকধুক করছে তার হৃৎস্পন্দন। সেও জানতে ব্যকুল হয়েছেটা কি? ঐশ্বর্য আবারও শুঁকনো গলায় বলে,
“কবুল, কবুল।”

তৎক্ষনাৎ যেন প্রেমের সারা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জুড়িয়ে যায় শিহরণে। এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি? এরই নাম বুঝি বিয়ের বন্ধন? যেন থমকে গেছে পৃথিবী। থমকেছে সে। থমকেছে তার হৃদয়।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রেম আর ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য যেন রোবট হয়ে গিয়েছে। কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। জীবন অন্য মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে ভাবতেই পারছে না সে। সব অবিশ্বাস্য আর নতুন লাগছে। প্রেম ঐশ্বর্যকে একবার লক্ষ্য করে বাড়ির দরজায় কলিং বেল বাজালো। বেশ কিছুক্ষণ পর এসে দরজা খুলে দিল মিতালি। প্রেমের সঙ্গে একটা মেয়েকে দেখে বেশ বড়সড় চোখ করে তাকায় সে। প্রেম থমথমে গলায় বলে,
“যাও মাকে ডেকে নিয়ে এসো। সাথে বাবাকেও।”

মিতালি ধড়ফড়িয়ে ওপরে উঠে গেল মিসেস. পরিণীতা এবং কবির সাহেবকে ডাকার উদ্দেশ্যে। ঐশ্বর্য শুধু দাঁড়িয়েই আছে। কোনো হেলদোল নেই তার। কিন্তু কি যেন মনে করে সে বলল,
“আপনার ফ্যামিলিকে কি উত্তর দেবেন?”

“সেটা আমাকেই ভাবতে দাও। তোমায় এতো ভাবতে হবে না।”

ঐশ্বর্য আবারও চুপ। মিনিট পাঁচেক পর সিঁড়ি থেকে উৎসুক হয়ে নেমে এলেন মিসেস. পরিণীতা এবং কবির শেখ। দরজার কাছে এসে প্রেমের পাশে ঐশ্বর্যকে বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলেন তারা। কবির শেখ চশমা পড়তে পড়তে প্রশ্ন করলেন,
“ও তো মি. সিনহার মেয়ে না? তোমার সাথে কি করছে প্রেম? এনিথিং রং?”

“না বাবা। সব ঠিক আছে। ওর এখন থেকে আমার সাথেই থাকার কথা। তাই ও এখানে।”

“মানে?”
তীব্র কন্ঠে প্রশ্ন করে ওঠেন মিসেস. পরিণীতা। প্রেম সহজ গলায় জবাব দেয়।
“ঐশ্বর্যকে বিয়ে করেছি আমি। সি ইজ মাই ওয়াইফ!”

মিসেস. পরিণীতা এবং কবির সাহেবের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। দুজন দুজনের দিলে চাওয়াচাওয়ি করেন। কবির সাহেব অতিরিক্ত অবাক হয়ে বলেন,
“হোয়াট? কখন?”

“একটু আগেই।”

“এসব কি প্রেম? তুমি যদি আগে আমাদের নিজের পছন্দের কথা বলতে তাহলে কি আমরা কি মানা করতাম?”
কড়া কন্ঠে গড়গড়িয়ে কথাগুলো বললেন মিসেস. পরিণীতা। প্রেম কিছুক্ষণ শান্ত থেকে প্রতিত্তোরে বলে উঠল,
“আই এম সরি মা। সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে তোমাদের বলার সময় ছিল না আমার কাছে।”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৪

“তুমি নিজের হিতাহিত জ্ঞান কি হারিয়েছো প্রেম? কখন কি করছো সেটা তুমি ভেবে করছো তো? কাল তুমি এঙ্গেজমেন্ট ভেঙে চলে গেলে। সারা রাত বাড়িতে ফিরলে না। সকালে যখন ফিরলে আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলেই অফিসে চলে গেলে। আর এখন তুমি হুট করে বাড়িতে এসে বলছো এই মেয়ে তোমার ওয়াইফ? তুমি নিজের হুঁশে আছো তো?”

বেশ উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো অনর্গল ভাবে বললেন মিসেস. পরিণীতা। প্রেমকে তবুও বিচলিত হতে দেখা গেল না। আগের মতোই শান্ত হয়ে জবাব দিল,
“আমি সজ্ঞানে আছি। আর ওই বিয়ের জন্য তোমরা আমাকে ফোর্স করেছিলে। আমি রাজি হয়েছিলাম তোমাদের খুশির দিকে চেয়ে। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম মাঝে মাঝে নিজের খুশিটাও ভেবে দেখা উচিত। আর রোজকে আমি কখনো খুশি করতে পারব না। বিয়ে মানে সারাজীবন একসাথে থাকা। বিয়ে একটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্বে যদি ভালোবাসা থাকে তাহলেই সারাজীবন কাটানো যায়। কিন্তু রোজের প্রতি কোনো ফিলিংস আমার তৈরি হয়নি। সো হুট করে একটা মেয়েকে বিয়ে করে যদি তাকে আমি খুশি না দিতে পারি তবে সেই বিয়ে করা আমার উচিত না।”

“তবে তুমি এই মেয়েকে ভালোবাসো আমাদের একবারের জন্যও বলো নি কেন?”

প্রেম এবার স্তব্ধ হয়ে ঐশ্বর্যের দিকে বাঁকা চোখে তাকায়। নিজের ঠোঁট আলতো করে ভিজিয়ে বলে,
“আমি বিষয়টা বুঝতে দেরি করে ফেলেছি। আই এম সরি।”

“কি সরি বলছো প্রেম? এতো বড় একটা ডিসিশন নিজে নিজে নিয়ে এখন সরি বলে দিলে সব মিটে যাবে? আর ইউ আউট ওফ ইউর মাইন্ড? রোজের ফ্যামিলি অলরেডি অনেক অসম্মানিত হয়ে গেছে। তবুও রোজের কথায় বিয়ের কথা টিকে ছিল। কিন্তু তুমি সব নষ্ট করে দিলে। ওদের কি জবাব দেব বলো?”

বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল কবির বাবা। মিসেস. পরিণীতা চুপ করে থেকে কিছু একটা ভাবলেন। অতঃপর কবির সাহেবের দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন,
“বিয়েটা যেহেতু হয়েই গেছে কিছু করার নেই আমাদের আর মেনে নেওয়া ছাড়া। রেজিস্ট্রি হয়েছে তোমাদের?”

ঐশ্বর্য আর প্রেমকে কটাক্ষ করে শেষ কথাগুলো বললেন মিসেস. পরিণীতা। প্রেম ও ঐশ্বর্য দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো। তারপর মিসেস. পরিণীতা এগিয়ে এলেন ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্যের আপাদমস্তক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলেন উনি। মেয়েটাকে উনি এর আগে প্রেমের এঙ্গেজমেন্ট পার্টিতে দেখে রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এমন সুন্দর চাঁদের মতো মুখ অগ্রাহ্য করা বড্ড কঠিন! বর্তমানে ঐশ্বর্যের পরনে একটা লেডিস জিন্স যেটা পায়ের অনেকটা ওপরে মুড়িয়ে রেখেছে। পায়ে ছেলেদের মতো কেটস্। আর ওপরে লেডির শার্ট আর একটা চকলেট কালার জ্যাকেট। চুলগুলো ওপরে বেঁধে রেখেছে। মাথায় হালকা করে স্কার্ফ দেওয়া। সেটা যেন জোর করে দিয়ে রাখা হয়েছে। বলতে গেলে মেয়েটির মধ্যে কোনো মেয়েলি হাবভাব দেখতে পেলেন না মিসেস. পরিণীতা। গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার বাড়িতে কেউ জানে বিয়ের কথা?”

ঐশ্বর্য এবার মুখ তুলে তাকায়। ঘাড় বাঁকিয়ে প্রেমের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
“আমি তো নিজেই জানতাম না আমার বিয়ে। কতই না স্বপ্ন ছিল বিয়ে নিয়ে। ব্ল্যাক লেহেঙ্গা, ব্ল্যাক ওড়না, ব্ল্যাক ডায়মন্ডের সেট একবারে ব্ল্যাক কুইন সেজে বিয়ে করতে বসব। চারিদিকে গান হবে নাচ হবে! বাট শ্বাশুড়ি আন্টি, আপনার ছেলে সেটা পূরণ হতে দিল না। ফোর্স করে বিয়ে করল। আমি তো আগে ভাবতাম আপনার ছেলের নামেই শুধু প্রেম রয়েছে অন্তরে কোনো প্রেম নেই। কিন্তু আজকে যেভাবে ভিলেনের মতো বিয়ে করল আই এম সারপ্রাইজড। এখন মাকে বললে মায়ের ব্যাকগ্রাউন্ডে তো বাংলা সিনেমার মতো বজ্রপাতের আওয়াজ ঘটবে। সাথে সাথে আমার ওপর দিয়ে টর্নেডো যাবে। এর দায়ভার কি আপনাদের ছেলে নেবে? আর তাছাড়া আপনার ছেলে যে আমাকে মোটেও ভালো…”

কথাগুলো পুরোপুরি সম্পূর্ণ করার আগেই ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে উঠল আচমকা। নিজের ডান হাতে বাম দিয়ে ডলতে ডলতে প্রেমের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“চিমটি দেন কেন? শরম নাই? সদ্য বিবাহিত বউকে নির্যাতন করেন?”

থতমত খেয়ে যায় প্রেম। সঙ্গে সঙ্গে কাশতে শুরু করে। কাশি থামেই না। মেয়েটা আজ তার মানসম্মান ডুবিয়ে দিল ভেবে কাশি বেড়ে যায়। প্রেম ঐশ্বর্যকে চুপ করার ইঙ্গিত দিতে চিমটি কেটেছিল। তার ফলাফলে এমন মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে ভাবতে পারেনি। কোনোমতে কাশি থামিয়ে চোখ গরম করে ঐশ্বর্যকে চুপ করতে বলে প্রেম। এতোক্ষণ মুখে তালা দিয়ে ছিল তাতেই ভালো ছিল। যেই কিনা মুখ খুলেছে মুখ দিয়ে পপকর্ন ফুটছে।

“আবার কিনা চোখ গরমও করছেন? দেখুন শ্বাশুড়ি আন্টি দেখুন! আপনার মতো ভালো একটা মানুষের ছেলে কেমন হয়েছে দেখুন।”

মিসেস. পরিণীতা আর কবির সাহেব হতবাক হয়ে চেয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে কবির সাহেব হালকা কেশে বললেন,
“ঠিকই বলেছো পরি তুমি! কিছু করার নেই। ওদের আর দাঁড় করিয়ে রেখো না তাহলে ভিতরে নিয়ে এসো। আমি বরং মি. সিনহার সাথে কথা বলি এই বিষয়ে। উনারা তো এসব জানেন না। আর প্রেম ঐশ্বর্য যে বলছে তুমি ওকে ফোর্স করেছো কথাটা সত্যি?”

“একচুয়ালি বাবা ও একটু ড্রামাটিক! বিয়ে করার ইচ্ছে ওর নিজেরও ছিল বাট পুরো দোষটা এখন আমার ওপর চাপাচ্ছে।”

প্রেমের এমন কথায় চোখ কপালে তুলে তাকায় ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য প্রেমকে বিয়ে করতে চেয়েছিল ঠিক কিন্তু এভাবে না। প্রেম তো আজ ফোর্স করেই বিয়ে করেছে। তবে এ বিষয়ে আর কথা বাড়ালো না সে। চুপচাপ গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

মিসেস. পরিণীতা দুজনকে হলরুমে আনলেন। তারপর ঐশ্বর্য আর প্রেমকে সোফায় বসতে দিয়ে মিতালিকে ডাকলেন। মিতালি আসতেই উনি আদেশের সুরে বললেন,
“আমার সাথে এসো চলো। কিছু জিনিস নিয়ে আসতে হবে।”

মিতালি ছুটে গেল মিসেস. পরিণীতার সাথে ঘরের দিকে। কিছুক্ষণ পর তারা দুজনে এলো। মিতালির হাতে কিছু শাড়ি। আর মিসেস. পরিণীতার হাতে কিছু গয়নার বক্স। এতোক্ষণ চোখ রাঙিয়ে রাঙিয়ে ঝগড়া করছিল ঐশ্বর্য আর প্রেম। তাদের আগমনে চোখ সরিয়ে শান্ত হলো তারা। মিসেস. পরিণীতা ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে বললেন,
“এখানে এসো তুমি।”

ঐশ্বর্য উঠে গেল উনার কাছে। সাথে সাথে সব গয়না ধরিয়ে দিল ঐশ্বর্যের হাতে। চোখ তখনি চড়কগাছ হয়ে এলো ঐশ্বর্যের। সেই সময় মিসেস. পরিণীতা বলতে শুরু করলেন,
“যেভাবেই হক যেহেতু আমার বাড়ির বউ হয়েছো সেহেতু তোমাকে মানতে হবে আমাদের। আমার ছেলে তোমায় যখন পছন্দ করে এনেছে তখন নিশ্চয় তোমার মাঝে এমন কিছু আছে যা অন্য কারো মাঝে নেই। আমার ছেলে বলে বলছি না! আমার ছেলের মতো একটা দায়িত্বশীল পুরুষ লাখে একটা পাওয়া যাবে। আর যেহেতু তুমি বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছো তাই এই শাড়িগুলো রাখো। আর আমার মনে হচ্ছে তোমার শাড়ি পড়ে অভ্যেস নেই বাট নতুন বউ হিসেবে মেয়েরা শাড়িই পড়ে। এটা কষ্ট করে তোমাকে ম্যানেজ করে নিতে হবে। আর এখানে কিছু হালকা গয়না আছে যা সবসময় পড়ে থাকবে। তাতে সুন্দর লাগবে তোমায়।”

গয়নাগুলোর বক্স দেখে আঁড়চোখে প্রেমের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো ঐশ্বর্য। প্রেম সেটা দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে পায়ে পা তুলে বসল। ঐশ্বর্য যেন ফাঁদে পড়েছে। এ ফাঁদ থেকে যে বাঁচার উপায় নেই!

কবির সাহেব অনুভবের সাথে সবেমাত্র কথা বলে এলেন ফোনে। এসে ঐশ্বর্যকে ডেকে বললেন,
“আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। এখন তোমার মা তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এখানে এসে কথা বলো।”

ঐশ্বর্য ঢক গিলে উঠে গিয়ে কবির সাহেবের ফোনটা কানে ধরল। সে জানে এখন মায়ের ঝাড়ি খেতে হবে। কি বলবে মাকে এসব সে জানে না। কারণ মাকে না বলে বেরিয়েছিল সে। আর এখন সে না বলে বিয়েও সেড়ে ফেলেছে। ফলস্বরূপ যে মাধুর্য তাকে বেশ কঠিন কঠিন কথা শোনাবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। কানে ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে মাধুর্যের শান্ত গলা ভেসে এলো ঐশ্বর্যের কর্ণকুহরে।
“কেমন আছো তুমি? বিয়ে করলে নাকি শুনলাম?”

“আসলে ম…মা!”

“থাক। বাহানা দিতে হবেনা। শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিতে শিখো। তোমার বাচ্চামি, রাগ, জেদ কন্ট্রোল করলে শেখো। তোমার এসব হুকুম ওখানে চালাবে না। ভালো মেয়ের মতো থাকবে বুঝলে?”

ঐশ্বর্য বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু সেকেন্ড। অতঃপর জিজ্ঞেস করে,
“মা! তুমি অবাক হওনি? যে আমি হুট করে বিয়ে করে ফেললাম। তোমার রাগ হচ্ছে না?”

“অবাক তো একটু হয়েছি। আর রাগ করেই বা লাভ কি? যে বন্ধন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতে হয় সেখানে রাগ করতে নেই। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা ভুলবে না। তুমি মানুষ নও। তুমি ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। আর এটা তোমাকে প্রেমকে জানাতে হবে। এখন নয়। সঠিক সময় এলে ওকে জানাতে হবে। এমন কিছু করো না যাতে তোমার আসল রুপ সঠিক সময়ের আগে সবার সামনে বেরিয়ে আসে আর সবাই তোমায় ভুল বোঝে। ব্যাস এতটুকুই বলার ছিল। আর বাকিটা আমি কাল গিয়ে তোমায় বলব। এখন রাখছি।”

বলেই ফোনটা ওপাশ থেকে কেটে দিল মাধুর্য। ঐশ্বর্যকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। হতবিহ্বল হয়ে বেশ কিছুক্ষণ ফোনের দিকে চেয়ে থাকল সে। মাধুর্যের ব্যবহার প্রচন্ড রকম অবাক ঐশ্বর্য। যে মাধুর্য সামান্য কিছু হলেই বকাঝকা করে শেষ করে ফেলতো সেই মাধুর্য ঐশ্বর্যের জীবনের এতো বড় একটা মোড় এলো তবুও শান্ত রইল? যেন যা কিছু হয়েছে সবটা স্বাভাবিক! ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য প্রেমের ডাকে।

রাত প্রায় এগারোটা। বেডে গা এলিয়ে শুয়ে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করছে প্রেম। বেশ ঘুম পেয়েছে তার। তবুও জেগে আছে। কারণ একজন ওয়াশরুমে গেছে। সে না আসা পর্যন্ত ঘুমানো যাবেনা। ঘুমালে অনর্থ ঘটে যেতে পারে। তবে ঘড়ি ধরে ৪৫ মিনিটের মতো সে ওয়াশরুমে। প্রেম বিরক্ত! তবুও কিছু বলে না। অবশেষে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হয়। বিরক্তি ভরা চাহনি নিয়ে তাকায় সে ঐশ্বর্যের দিকে। সাথে সাথে চোখ স্থির হয়ে যায় তার। চোখের পলক পড়তে চায় না। ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে হা হয়ে যায়। কপালে বেশ কিছু ভাঁজ দেখা যায়। অন্যদিকে সেই রমণী ব্যস্ত নিজের পরিহিত শাড়ি ঠিক করতে। ব্যস্ত সুরে জিজ্ঞেস করে,
“আচ্ছা শাড়ি পড়া কি ঠিক হয়েছে? আই মিন শাড়ি পড়ার প্রসেসিং ঠিক আছে তো না? ঠিক থাকারই কথা। দ্যা গ্রেট ঐশ্বর্য যে কাজে একবার হাত লাগায় সেটা ঠিক হবেই হবে।”

বলেই সামনের চুল ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে সামনে পা বাড়াতে যায় ঐশ্বর্য। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে যায় সে। প্রেম ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। ঐশ্বর্য মুখ তুলে চোখমুখ লাল করে তাকায়। প্রেম বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে ঐশ্বর্যের রক্তিম বর্ণের চোখমুখ এবং তার আপাদমস্তক দেখে উচ্চস্বরে হেঁসে দেয়।

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৫

বেশ খানিকক্ষণ হেঁসে অনেক কষ্টে হাসি থামালো প্রেম। ঐশ্বর্যের পলকহীন আর উদ্ভট চাহনিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো তার। মেয়েটা এখনো ফ্লোরেই পড়ে আছে তবে দুই গালে হাত দিয়ে রেখেছে। যেন চরম বিস্ময় নিয়ে পৃথিবীর আশ্চর্যজনক কিছু দেখছে সে। গলা খাঁকারি দিয়ে প্রেম প্রশ্ন করে,
“সারারাত কি এভাবেই থাকার ইচ্ছে রয়েছে?”

ঐশ্বর্য আগের মতোই পাথরের মূর্তির ন্যায় থম মেরে রইল। তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। ভ্রুজোড়া আরো খানিকটা কুঁচকে গেল প্রেমের। সেই সাথে কপালে দেখা গেল কয়েকটি ভাঁজ। আস্তে করে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসল সে। ঐশ্বর্যের সামনে হাত তুলে চোখের সামনে নাড়াতেই নড়েচড়ে উঠল ঐশ্বর্য। প্রেমকে এতো কাছে দেখে হকচকিয়ে উঠে ফট করে উঠে বসে দূরে সরে গিয়ে বলল,
“আপনি এখানে এলেন কখন?”

“যখন তুমি ওইদিকে তাকিয়ে হা হয়ে ছিলে তখন। কি দেখছিলে এভাবে? নাকি পড়ে যাওয়ার চোটে শোক পালন করছিলে?”

“আমি তো আজ পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বের করে ফেলেছি।”
অবাক সুরে উত্তর দিল ঐশ্বর্য। প্রেম আগ্রহ পোষণ করে প্রতিত্তোরে জিজ্ঞেস বলে,

“হোয়াট?”

ঐশ্বর্য বড় একটা শ্বাস নিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে বেশ উত্তেজনা নিয়ে বলে,
“ইয়েস। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হচ্ছে মি. শেখ আনন প্রেমের হাসি।”

থতমত খেল এবার প্রেম ঐশ্বর্যের কথায়। ক্ষীণ সুরে বলল,
“কেন? আমিও তো মানুষ নাকি? হাসতে পারি না নাকি?”

ঐশ্বর্য হাসি হাসি মুখ করে বেশ উত্তেজনামূলক সুরে বলল,
“না আপনি ভাবতে পারছেন? মি. আনস্মাইলিং এর স্মাইল। অবিশ্বাস্য ব্যাপার স্যাপার! আপনার সঙ্গে আমি প্রথম সাক্ষাৎ থেকে আপনার মুখে হাসির ছিটেফোঁটা অবধি দেখিনি। সেই মানুষ আজ উচ্চস্বরে হাসলো? ও মাই গড! আমার মাথা ঘুরছে। আমি স্বপ্ন দেখছি কিনা কে জানে! এই এই একটু চিমটি কাটুন তো।”

ক্ষীণ দৃষ্টিতে ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় চিমটি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তৎক্ষনাৎ আবার হাত সরিয়ে নেয় সে। তার স্মরণে আসে তার মায়ের সামনে ঘটা ঘটনাগুলো। একবার চিমটি কেটেছিল বলে যা কীর্তি করেছিল এই মেয়েটা বলা যায় না কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিলেও দিতে পারে। তবে প্রেমের এমন হাত সরিয়ে নিতেই ঐশ্বর্য বিরক্তি চাহনি দিয়ে বলল,
“উহু… হাত সরিয়ে নিলেন কেন? চিমটি কাটুন বলছি।”

প্রেম এবার কটমট করে ঐশ্বর্যকে বেশ জোরেশোরে চিমটি কাটতেই আচানক জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল ঐশ্বর্য। প্রেম এবার হকচকিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে নিজের আঙ্গুল ঠোঁটে ধরে ফিসফিস করে বলল,
“চুপ চুপ! শাট ইউর মাউথ। বাড়িতে অনেকে আছে। কে কি ভাববে?”

ঐশ্বর্য রাগে ফোঁস ফোঁস করে নিজের চিমটি লাগা স্থানে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
“এতোটা জোরে মারবেন তাই বলে! কিছুটা তো দয়ামায়া করুন!”

প্রেম কিছু না বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল। ঐশ্বর্য মিটিমিটি হেঁসে মৃদু সুরে প্রেমকে ডেকে বলল,
“শুনুন একটা কথা!”

প্রেম চোখ গরম করে তাকালো এবার। এর মানে সে আর কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক না। ঐশ্বর্য নাছোড়বান্দা হয়ে বলে,
“আহা, শুনুন না একটা কথা।”

বলে নিজেই কষ্ট করে এগিয়ে যায় প্রেমের দিকে। প্রেম অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে রয়েছে। ঐশ্বর্য প্রেমের কানের কাছে মুখ রেখে কিছু বলতে পারছে না। কারণ প্রেম তার থেকে বেশ লম্বা। লম্বা আর প্রশস্ত চওড়া শরীরওয়ালা মানুষদের এই এক সমস্যা। কাঁচুমাচু মুখে তাকিয়ে এবার প্রেমের এক গালে হাত দিয়ে প্রেমের কানের কাছে এসে চুপি চুপি বলে,
“না হেঁসে হয়ত ভালোই করেন। আপনার হাসিতে আর একটু হলে জ্ঞান হারাতে চলেছিল এই ঐশ্বর্য। আপনি বরং গম্ভীর মুখ নিয়েই থাকবেন। আমার সামনে হাসবেন ঠিক আছে? আমি চাই না আমার মতো আরো অন্য কোনো মেয়ে আপনার হাসিতে উন্মাদ হয়ে যাক। আমি একদম চাই না মি. আনস্মাইলিং!”

ঐশ্বর্য একটু থামে অতঃপর আবার থেমে থেমে বলে,
“আরেকটা কথা! হাসার সময় আপনাকে একটা চকলেট চকলেট লাগছিল। মনে হচ্ছিল খেয়ে ফেলি।”

বলেই নিজের মুখ চেপে ধরল ঐশ্বর্য। প্রেম বিষম খেয়ে একপলক ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“সারারাত এখানে বসে থাকতে হলে থাকো। আমার ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।”

ঐশ্বর্য আশ্চর্য হয়ে বলল,
“আরে আরে, এটা কেমন কথা আপনার ঘুম পাচ্ছে? আমাকে এভাবে ফেলে আপনি ঘুমাবেন?”

“তোমায় পড়ে থাকতে কে বলেছে? উঠতে পারছো না?”

“উঠতে পারলে বসে থাকতাম? আমার কোমড়ে আর দুই কনুইয়ে লেগেছে। আর আমি উঠে দাঁড়ালে আই এম সিউর আবার পড়ে যাব।”

প্রেম হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর হুট করে ঐশ্বর্যের দিকে উপুড় হতেই চোখ ছানাবড়া হয় ঐশ্বর্যের। তাকে আরো এক দফা চমকে দিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয় প্রেম। নিজেকে সামলাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে ঐশ্বর্য। সে ভাবেও নি প্রেম এমন কোনো কাজ করে বসবে! প্রেমের একহাত ঐশ্বর্যের কোমড়ে ঠেকছে। প্রেম হাত গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তবে ঐশ্বর্যকে ধরে রাখার জন্য সেটা হচ্ছে না। ঐশ্বর্য বারংবার চোখের পলক ফেলছে। নিশ্বাস ওঠানামা করছে তার। প্রেম এগিয়ে ঐশ্বর্যকে বসিয়ে দিল বেডে। অতঃপর বলল,
“যেটা পড়তে পারো না সেটা পড়ো কেন? একটু আগে ভাব নিয়ে বললে তুমি যে কাজে হাত দাও সেটা নাকি পারফেক্ট হয়। এটা তোমার পারফেক্ট কাজ?”

“কি করব আমি? কখনো তো শাড়ি পড়িনি। প্রথমবার পড়ে কেমন জানি লাগছে।”

প্রেম প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বলল,
“আগে কখনো শাড়ি পড়ো নি?”

ঐশ্বর্য মাথা নিচু করে জবাব দেয়,
“শাড়ি পড়া তো দূর কখনো সালোয়ার কামিজও পড়িনি।”

প্রেমের এবার কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। দাঁতে দাঁত চেপে ঐশ্বর্যের দিকে তাকাতেই তার নজর পড়ে শাড়ির দিকে। লাল রঙের শাড়ি পড়েছে ঐশ্বর্য। এর আগে কখনো ঐশ্বর্যকে লাল রঙে দেখেনি প্রেম। এই প্রথমবার দেখছে। তার চোখে যেন লেগেছে নেশা। তার সামনে থাকা নারী যেন সদ্য একটি ফুল। লাল রঙে লুকায়িত রয়েছে সেই ফুল। যার চোখেমুখে রয়েছে এখনো পানির রেশ। এলোমেলো ঢেউ খেলানো চুলগুলো যেন বৃদ্ধি করেছে তার মাধুর্য। এই মাধুকরী রূপ যে কারোর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বাধ্য করবে। ঢক গিলে নেয় প্রেম। হজম করতে চায় ঐশ্বর্যের প্রতি তার এমন নেশা। তবে হয় না। তারপর সে খেয়াল করে ঐশ্বর্যের শাড়ি পড়ার ধরণ। ফট করে বলে,
“তুমি পড়বে না কেন বলো? শাড়ি পড়লে শাড়িতে কুঁচি দিতে হয়। জানো তুমি সেটা? কুঁচির রেশমাত্র তো নেই তোমার শাড়িতে।”

ঐশ্বর্য এবার মাথা চুলকে কুঁচি খোঁজার চেষ্টা করে। আর বলে,
“আমি পারি না। আপনি হেল্প করুন।”

প্রেম চোখ বড় বড় করে বলে,
“আমি?”

“হ্যাঁ আপনি।”

“এ…এতো রাতে শাড়ি পড়তে হবে না। যেভাবে আছো সেভাবে ঘুমাও তো।”

থতমত খেয়ে কথাগুলো বলল প্রেম। ঐশ্বর্য অসহায় নয়নে চেয়ে বলল,
“আমি তো এভাবে পাও নাড়াতে পারব না। প্লিজ হেল্প মি!”

“ওহ হো! তুমি বুঝতে কেন পারছো না। তোমাকে হেল্প করতে গেলে এখন পুরো শাড়ি খুলতে হবে। আমার সামনে এখন পুরো শাড়ি কিভাবে…”

বাকিটা বলতে পারল না প্রেম। ঐশ্বর্যও নিরব হয়ে গেল। নিরবতা চলল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ঐশ্বর্যের অবস্থা বুঝে বলল,
“ও…ওকে। আমি তোমাকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছি। তুমি সেই অনুযায়ী শাড়ি পড়ে নাও।”

বলেই হাত বাড়িয়ে দিল প্রেম। ঐশ্বর্য সেই হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। প্রেম অন্যদিকে ঘুরে বলল,
“শাড়ি খুলে নতুন করে স্টার্ট করো।”

অতঃপর ঐশ্বর্যের হাতে ফোন ধরিয়ে দিল প্রেম। আর বলল,
“ফোনে দেখো। শাড়ি পড়ার ফুল ইন্সট্রাকশন দেওয়া আছে। ফলো দিস।”

প্রেম অন্যদিকেই ঘুরে রইল। ঐশ্বর্য শাড়ি পড়ছে একটু একটু করে। হঠাৎ করে প্রেমের নজর গেল আয়নাতে। ঐশ্বর্য শাড়ি কিভাবে পড়ছে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার নগ্ন পেট দৃশ্যমান। চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে শাড়ি ঠিক করছে। কুঁচি করতে চাইছে তবে পারছে না। প্রেমের সারা শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে। যেন ভয়ানক কিছু দেখে ফেলেছে। বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে। অন্যদিকে ঐশ্বর্যের কুঁচি আর কোনোভাবেই হয় না। হাত-পা ছাড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে তার। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এটা শাড়ি পড়া নাকি যুদ্ধ করা? কুঁচি!”

প্রেম এবার বিরক্ত। ফট করে ঐশ্বর্যের দিকে ঘুরে নিজের হাতে শাড়ির গোছা নিয়ে বলে,
“তোমার দ্বারা জাস্ট কিচ্ছু হবেনা। কিছু না।”

ঐশ্বর্য স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তার একটা আঁচল গুঁজে রাখলেও ঠিকঠাক নেই কিছুই। সবমিলিয়ে বড়ই অস্বস্তিকর অবস্থা! ঝটপট করে কোনোরকমে শাড়ির কুঁচি করে ঐশ্বর্যের হাতে ধরিয়ে দিল প্রেম। আর বলল,
“নাও এখন পড়ো।”
হাতে কুঁচি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ঐশ্বর্য। তারপর সেটা গুঁজে নেয়।

বেশ রাত হয়েছে। ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে আছে বেডের এপাশে আর প্রেম দাঁড়িয়ে আছে বেডের ওপাশে দুজনেরই নজর বেডের দিকে। ঐশ্বর্য বলে,
“বেড ছাড়া আমার ঘুম হয় না।”

“আমি বোধহয় বেড ছাড়াই ঘুমায় তোমার মনে হয়?”

ঐশ্বর্য এবার তেজ নিয়ে বলল,
“দেখুন বিয়েটা আপনি করেছেন সো আমার ভালো করে টেক কেয়ার করে রাখার দায়িত্ব আপনার। আমার কোনটা ভালো লাগবে না লাগবে সেটাও দেখার দায়িত্ব আপনার। এখন যতই দয়া দেখিয়ে আর প্রতিদান হিসেবে বিয়ে করুন না কেন!”

প্রেম কিছু বলার আগেই চোখের পলকে ঐশ্বর্যকে বেডে গা এলিয়ে দিতে দেখে। একপাশ হয়ে অলরেডি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে সে। প্রেম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এতো তাড়াতাড়ি কেউ কি করে একটা কাজ করতে পারে? ঐশ্বর্য চোখ বুঁজেই হালকা কেশে বলে,
“গুড নাইট। আপনি চাইলে আমার পাশে ঘুমাতে পারেন। আই নেভার মাইন্ড!”

প্রেম আশেপাশে তাকায়। তার ঘরে সিঙ্গেল সোফা আছে। সেখানে ঘুমানো অসম্ভব। তাই সে ধীরে ধীরে বেডের একপ্রান্তে শুয়ে পড়ল। আস্তে করে ল্যাম্পশিট অফ করে দিল।

নিস্তব্ধ রাত। প্রেম গভীর ঘুমে। মৃদু বাতাস আসছে খোলা জানালা দিয়ে। ঐশ্বর্যের ঘুম আসছে না। গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে কাঁপছে সে। তার ঠান্ডা একেবারেই পছন্দ নয়। আগুনের পাশে দাঁড়াতে পারলে ভালো লাগতো তার। আগুন তার বেশ প্রিয়। আগুনের আঁচ তার মনে অন্যরকম আনন্দ সৃষ্টি করে। না পেরে একটা সময় উঠে বসল সে। জানালা বন্ধ করার জন্য উঠে দাঁড়াতে চাইল। তবে পাশের মানুষটার দিকে চোখ পড়তেই থমকালো সে। কি মায়াবী এক মুখশ্রী। মৃদু আলোয় বেশ লাগছে। প্রেমের এলোমেলো চুলে হাত চলে গেল ঐশ্বর্যের। আলতো করে ঠিক করে দিল। তার মন চাইলো প্রেমের প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতে। একটু শান্তি সঞ্চয় করতে। ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে নিজের মাথা প্রেমের বুকে রেখে চোখ বুঁজল ঐশ্বর্য। উষ্ণ এক অনুভূতি। প্রশান্তির এক স্থান! জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের বুকে মাথা রাখা।এই অনুভূতির সীমানা নেই। তড়তড় করে বেড়ে চলেছে হৃৎস্পন্দন।

প্রেমের ঘুম বেশ কাঁচা। একটুতেই ভেঙে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ভেঙে গেল ঘুম বুকে ভারি কিছু অনুভূত হওয়ায়। নিভু নিভু চোখে তাকালো। নাকে এসে ঠেকল এক অদ্ভুত ঘ্রাণ। ঐশ্বর্য তার বুকে মাথা রেখেছে ভাবতেই ঝড় বয়ে গেল তার মনে। কেঁপে উঠল তার সমস্ত শিরা-উপশিরা! তবে সরালো না ঐশ্বর্যকে। এই অনুভূতি জোয়ার বইছে বয়ে যাক। কোনো না কোনো কারণেই হক না কেন সে এখন তার অর্ধাঙ্গিনী!

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]