প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব-৪+৫+৬

0
233

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪

নিজের ঘরে যাওয়ার সময় ঐশ্বর্যের গোঙানির শব্দে থমকে দাঁড়ায় মাধুর্য। ঐশ্বর্যের ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দেওয়া। সে নিজের ঘরে থাকে মানে ঘরের দরজা লক! অস্থিরতায় ছেয়ে গেল মাধুর্যের মন। হুড়মুড় করে দরজায় থাবা দিতে লাগল সে।
“ঐশ্বর্য? ঐশ্বর্য? কি হয়েছে তোমার? দরজা খোলো। ওপেন দ্যা ডোর।”

গোঙানি থেমে গেল। তবে দরজা খুলল না। মাধুর্য আরো জোরে থাবা দিতে থাকল। মিনিট দুয়েক পরেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ঐশ্বর্য। তার কপালে ও নাকে ঘাম। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। চোখেমুখে ক্লান্তি।
“এমন লাগছে কেন তোমাকে? কি হয়েছে তোমার? মনে হচ্ছিল তুমি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলে।”

“কীসের যন্ত্রণা? আমার কি হবে? কিছু হয়নি। জাস্ট ঘুমাচ্ছিলাম। মাঝরাতে এভাবে ডাকাডাকি পছন্দ করি না আমি। নিজের ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও যাও।”

ঐশ্বর্য মাধুর্যের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিতে নিলেও দরজা আঁটকে দেয় নিজের শক্তি দিয়ে মাধুর্য। ভিতরে ঢুকে ঐশ্বর্যের বাম হাতটা ধরে সেই চিহ্নটাকে দেখে সে। চিহ্নটা যেন লাল আলোতে জ্বলছে। ঐশ্বর্যের হাত কাঁপছে। এর কারণেই কি ঐশ্বর্য কাতরাচ্ছিল?
“আমার থেকে লুকাচ্ছিলে? দিনশেষে আমি তোমার মা। তোমার কষ্ট আমি বুঝি।”

“লেট ইট গো প্লিজ। লিভ মি মা।”

হাতটা ছাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় ঐশ্বর্য। আস্তেধীরে তার যন্ত্রণা কমে আসছে। সেই সাথে কমে আসছে চিহ্নটার জ্বলে ওঠা আলো। ঐশ্বর্য ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল চিহ্নটা। কেন এমন হলো? আগে তো হয়নি। হঠাৎ কেন এমন হচ্ছে?

মাধুর্য বিষাদ মুখটা নিয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে হলরুমে এলো। সবকিছু তার গোলমেলে লাগছে। এমনটা হওয়া উচিত নয়। কেন হচ্ছে এসব তার মেয়ের সাথেই? ঐশ্বর্য কি স্বাভাবিক হতে পারবে না তাদের মতো?

ভ্যাম্পায়ার রাজ্য…
এখানে দুপুর পেরিয়ে বিকেল। মাধু্র্য এসেছে পুরোনো বইয়ের কক্ষে। ঘুম আসছিল না তার। তাই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে চলে এসেছে সে। বইয়ের কক্ষে আসার কারণ হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার ইতিহাসের বই খুঁজে বের করে ঐশ্বর্যের হাতের ওই বিশেষ চিহ্ন দ্বারা কি বোঝাই সেটা দেখা। অনুভবকে বিরক্ত করতে চায়নি সে। এমনিতে মানুষটা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে এসে হাতে কিছুটা সময় পায়।

আশেপাশে বইয়ের তাকে ধুলো ময়লা জমেছে। নাক ধরে আছে মাধুর্য। মাঝেমাঝে কাশছে। কক্ষের শেষপ্রান্তে এক কোণে রাখা সোনালী রঙের বাক্সের দিকে চোখ গেল তার। এখানেই তো রয়েছে কাঙ্ক্ষিত বই।

দ্রুত এগিয়ে গিয়ে চাবি দিয়ে তালা খুলতেই সে লক্ষ্য করল এক বই। যেখানে ভ্যাম্পায়ারের ইতিহাস সম্পর্কে লিখা আছে। আজ পর্যন্ত ঐশ্বর্যের আগে ওমন চিহ্ন ধারী কোনো ভ্যাম্পায়ার ছিল কিনা সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

বেশ কয়েকটা পাতা ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা চিহ্নের দিকে চোখ গেল মাধুর্যের। এইতো সেই চিহ্ন। কিন্তু বইয়ের এই অংশের পাতা কালো কেন? ভাবনায় পড়ল মাধুর্য। তবে পাত্তা দিল না সেটা। ডাগরডোগর আঁখি তুলে মেলে ধরল বইয়ের সেই পাতা।

অনেক বছর আগের কথা এটা। আগে থেকেই ঘটে আসছে ভ্যাম্পায়ার আর ওয়ারওল্ফদের মাঝে শত্রুতা। ভ্যাম্পায়ার চায় শান্তি কিন্তু ওয়ারওল্ফ চায় যুদ্ধ এবং ভ্যাম্পায়াদের নিজের পায়ের নিচে রাখতে। তার ওপর দিয়ে আবার ছুরি ঘোরায় ডেভিল কিংডমের ডেভিলরা। ডেভিল কিংডম থেকে সাহায্য চেয়েই ওয়ারওল্ফ শয়তান সত্তা লাভ করে। তবে তখন ডেভিল কিংডমের রাজসিংহাসন ছিল খালি। যোগ্য কেউ ছিল না সিংহাসনে বসার মতো। সেই কিংডমে সবসময় মেয়েদের প্রধান্য দেওয়া হয় বলে মেয়েদের মাঝেই কাউকে ডেভিল কুইন হিসাবে নির্বাচন করা হয়। সেই সময় ডেভিল কুইনকে মেরে ফেলেছিল ভ্যাম্পায়ার কিং। তখন থেকে সিংহাসন খালি। সেই সিংহাসনে সে-ই বসবে যার হাতে ডেভিল ক্রাউন অর্থ্যাৎ রাজ্যের মুকুটের চিহ্ন থাকবে। ভবিষ্যতে একজন ভ্যাম্পায়ারের ডেভিল কুইন হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে।

হাত-পা কাঁপছে মাধুর্যের। আঁকা মুকুটের ছবিতে বারংবার চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে সে। এই চিহ্নটা ঐশ্বর্যের হাতে রয়েছে। মাথাটা ভনভন করে উঠল তার। এখন কি সে? ভয়ে চোখে পানি চলে এলো তার। তার মেয়ে ডেভিল কুইন হবে? ভাবতেই চিৎকার দিয়ে উঠল সে। চিৎকারে দৌড়ে এলো রাজমহলের বাকিরা।
“কি হয়েছে কুইন? কোনো বিপদ?”

মাধুর্য নিজেকে শান্ত করে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
“কিছু নয় আপনারা যান।”

সবাই মাথা নিচু করে চলে যায়। মাধুর্য শান্ত থাকতে চেয়েও পারছে না। এমনসময় কক্ষে প্রবেশ করে প্রলয় অর্থ্যাৎ অনুভবের বাবা। চিন্তিত কন্ঠে বলেন,
“কি হয়েছে মাধুর্য? চিৎকার শুনতে পেলাম তোমার। এনিথিং রং?”

“আমাদের ঐশ্বর্য ক্রমশ অন্ধকার জগতে তলিয়ে যাচ্ছে বাবা। এই বই হচ্ছে তার প্রমাণ।”
কাতর সুরে কথাটা বলে প্রলয়ের দিকে বইটা এগিয়ে দেয় মাধুর্য। প্রলয় বসে পড়েন এক চেয়ারে। মনোযোগ দেয় বইয়ে। পড়ে বলেন,
“এই চিহ্নটা চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন দেখেছি।”

“ঐশ্বর্যের হাতে। প্রথমে চিহ্নটা বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু ওর ২১ তম জন্মদিনের পর আস্তে আস্তে চিহ্নটা গাঢ় হয়ে গিয়েছে।”

হকচকিয়ে উঠেন প্রলয় মাধুর্যের কথা শুনে। বিস্ময়ের সুরে বলেন,
“এখন উপায়?”

মাধুর্য অসহায়ের সুরে বলে,
“সেটাই তো বুঝছি না।”

“আমি এখানে খুঁজে দেখছি।”
বইয়ের পাতা উল্টান প্রলয়। কিছুটা হাসির রেশ ফুটে ওঠে তার মাঝে। আর বলেন,
“এইতো উপায়। কিন্তু ঐশ্বর্য কি রাজি হবে?”

“কি উপায় দেখি।”
মাধুর্য হাতে বইটা নেয়। ভালো করে পড়তে থাকে।

“এর মানে ঐশ্বর্যকে ডেভিল কিংডমের কেউ খুঁজে পাওয়ার আগে তাকে এমন কারোর সাথে বিয়ে দিতে হবে যাকে কিনা ঐশ্বর্য এবং যার সাথে বিয়ে হবে সে একে ওপরকে ভালোবাসে। আর বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন আর ভালোবাসায় চিহ্নটা মিলিয়ে যাবে। স্বাভাবিক জীবনে মানে আমাদের মতো জীবনে ঐশ্বর্য ফিরে আসবে?”

“হ্যাঁ তাই তো লিখা আছে। কারণ ঘটনাটা একবার ঘটেছিল। তাই তার নিষ্ক্রিয় করার কথাটা লিখা রয়েছে। কিন্তু ঐশ্বর্য…!”

“ও যাই হোক না কেন ও একজন মেয়ে বাবা। ওকে ভালোবাসা সংস্পর্শে আসতে হবে। পবিত্র সম্পর্কে বাঁধাও পড়তে হবে। কোনো না কোনো পুরুষ তার জন্য নিশ্চয় রয়েছে। যে তাকে ধীরে ধীরে অন্য ঐশ্বর্য গড়ে তুলবে।”
মাধুর্য অকপট। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে ফেলেছে সে। যা করার তাকে দ্রুত করতে হবে। খুব দ্রুত!

সকাল হয়েছে। সূর্য মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে। গাড়িটা বেশ দ্রুত ড্রাইভিং করে যাচ্ছে প্রেম। ফর্মাল ড্রেসআপ তার। হাতে ঘড়ি মাঝেমধ্যে করে দেখছে। আর তাড়াহুড়ো করছে। আজকে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে তার। দেরি করে ওঠার কারণ কাল রাতে সাক্ষাৎ হওয়া মেয়েটা। কি জানি এখন সে কেমন আছে? এসব ভেবেও বা কি? লেট টা তো সে ওর জন্যই হয়েছে। ফর্সা চেহারার মাঝে হালকা গোলাপি ঠোঁটটা জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিল সে। মেয়েটাকে বেশ কয়েকবার বকল মনে মনে।

ফোনে রিং হতেই বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকালো সে। তার পিএ কল করছে। এই সময় কেন? ক্লায়েন্ট কি চলে এলো তবে? দ্রুত কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কানেক্ট করে কল ধরল সে। এক নিশ্বাসে বলে দিল,
“হ্যালো হৃদয়, লিসেন উনারা চলে এসেছে? তাহলে কোনোভাবে ম্যানেজ করো। ব্যস্ত রাখো। আমি রাস্তায় আছি আর ৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব।”

ওপাশ থেকে হৃদয় বলে উঠল,
“স্যার রিল্যাক্স। এখনো উনাদের আসতে আধঘন্টা মতো বাকি আছে। আমাদের জন্য একটা সুখবর আছে।”

“কি সুখবর?”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে প্রেম।

“স্যার, সিনহা কোম্পানি আমাদের সঙ্গে বিজনেস ডিল করতে রাজি হয়েছে। শুধু ফাইনাল প্রজেক্ট দেখাতে একটা মিটিং করতে হবে। সেটা কয়েকদিনের মাঝেই করবে বলে জানিয়েছে।”

প্রেমের মনে বয়ে গেল খুশির জোয়ার। পুলকিত হয়ে বলে উঠল,
“রিয়েলি? ইটস রিয়েলি অ্যা গুড নি…”

বাকিটুকু বলার আগেই কথা বন্ধ হয়ে গেল প্রেমের। সামনে একটা গাড়ি ধেয়ে আসছে তার দিকে। গাড়ির স্টেয়ারিং ঘোরানোর আগেই অতিরিক্ত বেগে ধেয়ে আসা গাড়িটা এসে সামনে বিঁধে প্রেমের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেল। সঙ্গে সঙ্গে স্ক্র্যাচ হলো আর প্রেমের মাথা গিয়ে লাগল স্টেয়ারিং এর সাথে। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে তার।

অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে হুঁশ ফিরল ঐশ্বর্যের। তার আঘাত লাগা জায়গায় আবার লেগেছে কিন্তু জ্ঞান হারায়নি। আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়েছে। কপালে হাত দিয়ে সে গাড়ি থেকে নামে। সে মনে করে দোষটা সামনের গাড়ির মালিকের। সে রেগে গাড়ি ড্রাইভ করছিল বলে কি সামনে ওই গাড়িটাকেই পড়তে হবে। রেগে গিয়ে হুড়োহুড়ি করে গাড়ির সামনের দরজাটা খুলল ঐশ্বর্য। চোখজোড়া সঙ্গে সঙ্গে কপালে উঠে গেল তার। মুখে হাত দিয়ে বলল,
“আপনি?”

চলবে….

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫

“তুমি আবার?”
কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে প্রেম। তার কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। ঐশ্বর্যের চোখে পড়ল সেটা। নিজের রাগ দেখানোর চিন্তা মন থেকে ফেলে দিয়ে তৎক্ষনাৎ প্রেমের গাড়ির দরজা খুলল সে। প্রেমের দিকে এগিয়ে গিয়ে উদগ্রীব হয়ে বলল,
“আরে আপনার কপাল ফেটে তো রক্ত বের হচ্ছে। সরি, সরি, সরি। আমি বুঝতে পারিনি যে আপনার লাগবে আর গাড়িতে আপনি ছিলেন।”

প্রেম চোখ ছোট করে তাকায়। শক্ত কন্ঠে বলে,
“আমি জানলে বুঝি এক্সিডেন্ট টা করতে না?”

ঐশ্বর্য বোকা বনে গেল। এই লোকটা এতো পেঁচিয়ে কথা বলে কেন? এতো না ভেবে অস্থির হয়ে সে বলল,
“আগে চলুন তো আপনাকে হসপিটাল যেতে হবে।”

“আমার ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে আজকে। আর এতোটুকুর জন্য হসপিটাল? নো ওয়ে! দোষটা তোমার। তুমি না এলে এতক্ষণ ঠিক অফিসে থাকতাম আর যদি একবার মিটিং না হয় আর প্রজেক্ট রিজেক্ট হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা লস হবে। এমনি কাল থেকে অনেক উপকার করেছো আমায়। সো প্লিজ আর উপকার করতে যেও না। তোমার উপকারের চোটে আমাকে সর্বহারা হয়ে বসতে হবে।”

ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লোকটার সমস্যা কি? ঐশ্বর্য মুখের ওপর বলে বসে,
“আপনার সমস্যা কি? কাল থেকে সমস্ত কথা শুনেছি আপনার। এখন আপনাকে আমার সব কথা শুনতে হবে। তাছাড়া আপনি তো আমার মতো নন যে তাড়াতাড়ি আপনার চোট সেড়ে যাবে।”

“ওয়েট ওয়েট, হোয়াট ডু ইউ মিন? সুপারম্যান শুনেছিলাম! তুমি কি সুপারওম্যান নাকি? তোমার তাড়াতাড়ি চোট সেড়ে যায়?”

ঐশ্বর্য থতমত খায়। গলা খাঁকারি দিতেই লক্ষ্য করে প্রেমের কপাল বেয়ে পড়া রক্ত। থমকে যায় ঐশ্বর্য সেখানেই। রক্ত মানে সেই নেশা। সেই তৃষ্ণা। রক্ত পানের তৃষ্ণা। গলা শুঁকিয়ে আসছে ঐশ্বর্যের। নিজের মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে অন্যদিকে তাকালো ঐশ্বর্য। হঠাৎ আজকে তার সাথে এমন হচ্ছে? তার বিশেষ কারণে রক্তের প্রতি সহজে আগ্রহ আসে না। কিন্তু হঠাৎ করেই তার রক্তের প্রতি আগ্রহ জাগছে। শরীর মৃদু কাঁপছে তার। তৎক্ষনাৎ প্রেমের কন্ঠে ধ্যান ভাঙে তার।
“ও হ্যালো, গাড়ি থেকে সরো। গাড়ি স্টার্ট দেব। পারলে নিজের ড্রেসিং আবার করাও। তোমার আঘাত পাওয়া জায়গায় আবার আঘাত লেগেছে। আমি আজকে তোমার সঙ্গে যেতে পারছি না সরি।”

ঐশ্বর্য ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় প্রেমের দিকে। এই লোকটার নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং? বেশ ইন্টারেস্টিং তো! আশেপাশে তাকায় ঐশ্বর্য। তেমন কোনো মানুষজন নেই। যারা ছিল তারা নিজ গন্তব্যে হাঁটা দিয়েছে। এটা একটা ব্যস্ত শহর। অন্যেকে সাহায্য করার মতো এতো সময় এদের নেই। তবে প্রেমের গাড়ির জন্য রাস্তায় বেঁধেছে ট্র্যাফিক জ্যাম। পেছন থেকে হর্ন দিয়ে যাচ্ছে মানুষজন। আর ঐশ্বর্যও সরছে না প্রেমের গাড়ি থেকে। এতে বিরক্ত প্রেম। এবার বেশ বিরক্তির সুরে বলে,
“এবার কি রেহাই পাওয়া যাবে?”

ঐশ্বর্য মুচকি হাসে। মনে মনে বলে, ‘ঐশ্বর্যের মনে যেটা ধরে সেটা তো ঐশ্বর্য থেকে রেহাই পাওয়া যায় না মি. প্রেম। সো আপনার রেহাই পাওয়ার চিন্তা তো এই জীবনের জন্য ছেড়েই দিতে হবে।’

বড় শ্বাস নিয়ে ঐশ্বর্য বলে,
“ওয়ান সেকেন্ড।”

প্রেম কিছু বলতে নিতেই দেখে ঐশ্বর্য সেখানে নেই। তার পাশ থেকে ঐশ্বর্যের কন্ঠ শুনতে পেয়ে কিছুটা চকিতে তাকায় সে।
“এখানে আমি।”

“এ…এই তুমি আমার গাড়িতে তাও এতো তাড়াতাড়ি? মানে কিভাবে? তুমি কি মানুষ?”

“তো কি মনে হচ্ছে? আমি এলিয়েন? এখন চলুন হসপিটালে।”

প্রেম হতবাক সঙ্গে এমন ঐশ্বর্যের অধিকারবোধের মতো কথা শুনে এক রাশ বিস্ময় নিয়ে বলল,
“মানে? তুমি আমার গাড়িতে আর আমি হসপিটালে যাব? আমি তোমাকে আবারও বলছি আই এম অলরেডি লেট। আর তুমি কি করে ঠিক করতে পারো আমি কোথায় যাব না যাব?”

ঐশ্বর্য জোর গলায় জবাব দিল,
“আমি চাইলে সব ঠিক করে দিতে পারি।”

“তুমি নামো আমার গাড়ি থেকে। এখনি নামো নয়ত আমি রেগে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। নামো রাইট নাউ। আমার ভালো রুপ দেখেছো। খারাপ রুপ দেখাতে বাধ্য করো না।”

ঐশ্বর্য এবার করুন চোখে তাকায়। চোখে পানি আসে তার।
“আপনার নাম না প্রেম? নামের সাথে কাজের মিল না থাকলে কি করে হয় বলুন? প্রেম নামক মানুষের মনে প্রেম প্রেম থাকতে হয়। এভাবে কথা বলে নাকি কেউ। আমারও আঘাত লেগেছে। এই অবস্থায় কার ড্রাইভ করতে থোরিই না পারব! আপনি একটু পৌঁছে দিয়ে আসবেন প্লিজ?”

শেষ কথাটা কাঁদো কাঁদো সুরে বলে ঐশ্বর্য। প্রেম ঢোক গিলে এবার। এভাবে বললে সে কি করে মানা করবে? আমতা আমতা করে প্রেম জবাব দেয়,
“ওকে। বাট তোমার গাড়ি?”

“নো প্রবলেম। আমি আমার ড্রাইভারকে কল করে দিচ্ছি। ও এসে নিয়ে যাবে।”

প্রেম আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেয়েটার সঙ্গে জীবনে আর কোনোদিন দেখা না হলে বাঁচবে সে। গাড়ি স্টার্ট দিতেই নাক টেনে চোখের পানি মুছে নিয়ে ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে বলে,
“যাক বাবা। আমার এক্টিং টা মায়ের কাছে কাজে না এলেও প্রেম নামক লোকটির কাছে ঠিকই কাজে এসেছে। উনার নামটা যে ঠিক করেছে তাকে নোবেল দেওয়া উচিত। আসলেই লোকটা প্রেম। সব দিক থেকে প্রেম প্রেম ভাব আছে।”

“কিছু বললে?”

ঐশ্বর্য মাথা নাড়ায়। প্রেমও নিরব হয়ে যায়। ঐশ্বর্য এবার মনোযোগ দেয় প্রেমের মুখশ্রীর দিকে। লোকটার মধ্যে আলাদা কি আছে? যা রীতিমতো ঐশ্বর্যকে তার দিকে টানছে? আজ ঐশ্বর্য সবথেকে অবাক হয়েছে যখন সে সরি বলেছে প্রেমকে। ঐশ্বর্যের নিজের রক্ত যার জন্য ঝরেছে তাকে সরি বলা তো দূর কোনোদিন প্রাণে বাঁচতে দেয়নি সে। তার স্মৃতিতে এমন কেউ নেই যাকে সে সরি বলেছে। এই শব্দটা হুট করেই যেন তার জীবনের ডিকশিনারিতে উদ্ভব হলো। এ কেমন পরিবর্তন তার? প্রেম নামক ব্যক্তিটি কি ঐশ্বর্যের মনেও প্রেমের জোয়ার ডেকে আনছে?

ডক্টরের কাছ থেকে ড্রেসিং করে বের হলো প্রেম এবং ঐশ্বর্য। যদিও ঐশ্বর্যের মাথায় ব্যান্ডেজের কোনো প্রয়োজন ছিল না তবুও করতে হয়েছে প্রেমের জন্য। প্রেমের জন্য একটা স্বস্তির খবর হচ্ছে ক্লায়েন্ট যাদের আসার কথা ছিল তারা জ্যামে আঁটকে লেট করেছে ১ ঘন্টা মতো। ফলস্বরূপ সে এখন চিন্তামুক্ত।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। সবেমাত্র বেডে এসে ধপ করে শুয়ে পড়ল কৌশিক। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলল,
“পুরো একদিন পর জেল থেকে ছাড়িয়ে আনলো বাবা। ওই শেখ আনন প্রেম যদি এর পেছনে না থাকত অনেক আগেই আমি বেরিয়ে আসতে পারতাম। ওকে তো আমি ছাড়ব না। আমার প্রেস্টিজ সব শেষ করে দিয়েছে। ওর জন্য আমার বাড়ি ছেড়ে কয়েকদিনের জন্য বাংলোতে থাকতে হচ্ছে। নয়ত প্রেসের লোকেরা ঘিরে ধরবে। কিন্তু ওই মেয়েটা। ও যে মানুষ নয় সেটা আমি নিশ্চিত। ও ভ্যাম্পায়ার। আমাদের মাঝে ও কি করছে? ওর কোনো ব্যবস্থা কি করে করব?”

মাথার চুল টেনে ধরে কৌশিক। সে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। কাউকে ঐশ্বর্যের কথা বললে বিশ্বাসও করছে না। নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“আগে নিজে ফ্রেশ হই। ওর কথা পরে ভাববো।”

বেড থেকে উঠে হাতে টাওয়াল নিতেই তার মনে পড়ল লাগেজটা সে বারান্দায় ফেলে এসেছে। দেরি না করে ছুটল বারান্দার দিকে। বারান্দার দিকে আসতেই লাইট অফ দেখে কিছুটা অবাক হলো কৌশিক। সে নিজে লাইট জ্বালিয়ে ঘরে ঢুকেছিল। লাইট কি ফিউজ হয়ে গেল নাকি? কৌশিক সুইচবোর্ডের দিকে যেতেই একটা হার হিম করা কন্ঠ কানে বেজে ওঠে,
“লাইট ওফ আমি করেছি।”

কৌশিকের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে ওঠে। কাঁপাসুরে বলে,
“ক…কে?”

“মৃত্যু!”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৬

শুনশান রাত। নীরবতা গ্রাস করছে আশপাশটা। অমাবস্যার রাতের পর হালকা চিকন চাঁদ আকাশে বিদ্যমান। আশেপাশে ঘন জঙ্গল দিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে এলো এক মানবী। তার মায়াবী বড় আঁখিতে রাজ্যের ভয়াবহতা ও নির্মমতা। তার বড় বড় হাতের নখে এখনো রক্ত লেগে আছে। তা দেখে ভ্রু কুঁচকালো সে। চোখ বন্ধ করে মেলতেই স্বাভাবিক হলো সে। ঠোঁটের দুই ধার দিয়ে বের হওয়া দাঁত কোথাও লুকিয়ে পড়ল। লাল চোখজোড়া পরিণত হলো সেই চিরচেনা নীল চোখজোড়াতে। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা রক্ত বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিয়ে রহস্য ঘেরা হাসি দিল সে। সেই হাসির অধিকারিণী আর কেউ নয় ঐশ্বর্য!
“আমার কাছে ভুলে আর আমার অপছন্দের কিছু করার একটাই পানিশমেন্ট। মৃত্যু! বেচারা! জেল থেকে বের না হলেও পারত।”

হাসিটা প্রসারিত হতেই ঐশ্বর্যের চোখেমুখে আলো পড়তেই চোখ বুঁজে ফেলে সে। চোখ মেলতেই দেখে গাড়িটা তার মাত্র দুইহাত সামনে দাঁড়িয়েছে। এর মানে গাড়ির ড্রাইভার অনেক চেষ্টায় নিশ্চয় গাড়ি দাঁড় করিয়েছে! ভেবে মুচকি হাসে ঐশ্বর্য। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলে ক্লান্তি আর এলোমেলো চুল নিয়ে এলোমেলো পা ফেলতে ফেলতে এগিয়ে আসে এক লম্বা ব্যক্তি। ব্যক্তিটিকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল হয় না ঐশ্বর্যের। ব্যক্তিটিটা প্রেম। তবে প্রেমের অঙ্গিভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুটা রেগে আছে। ঐশ্বর্য কিছু বলার আগে প্রেম নিরাশ কন্ঠে বলল,
“আসলে তুমি কি আমার পিছু ছাড়বে না বলে ঠিক করে রেখেছো?”

ঐশ্বর্য একদম নির্লিপ্ত হয়ে বলল,
“এখানে আমি কি করলাম বলুন তো? আমি কি বলেছি নাকি বার বার আপনার সঙ্গে দেখা হতে? হতে পারে আমাদের ভাগ্যটাই এমন। আমাদের চাইছে বার বার দেখা হক। সেটা ভাগ্যকে গিয়ে জিজ্ঞেসা করুন।”

ঐশ্বর্যের এমন কথাতে মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল প্রেমের। এই মেয়ে সবসময় এতো রিল্যাক্সে থাকে কি করে? মানে রাত প্রায় ৯ টা পেরিয়ে গেছে। এতো রাতে এই রাস্তায় একা তাও এভাবে চলাফেরা কি করে করছে?
“আচ্ছা, কাল এতো বড় বিপদ ঘটতে তোমার সঙ্গে। কাল তুমি বোঝোনি? এই দেশ এখনো তোমাদের জন্য একা একা রাতে চলাফেরার যোগ্য হয়নি। আই নো দ্যাট, তুমি বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া মেয়ে। বাট টাইমের দিকেও খেয়াল রাখতে পারো! এতে তোমারই লাভ।”

“আমি কিছু করতে গেলে লাভ লসের হিসেব করি না মি. লাভ আই মিন প্রেম।”

প্রেমের এবার কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা। মেয়েটা যে শুধু উশৃংখল সেটা নয় অলরেডি প্রেম বুঝে ফেলেছে তাকে জেদি আর একরোখার আওয়ার্ড দেওয়াও যেতে পারে। সে এবার কড়া কন্ঠে বলে,
“গাড়ি কোথায় তোমার?”

“গাড়ি তো সকালেই আপনার সাথে আসার সময় ড্রাইভারকে বলে সেখানে রেখে এসেছিলাম। তারপর গাড়ি কই গেল সেটা তো জানি না।”

বেশ ভাবুক কন্ঠে উত্তর দিল ঐশ্বর্য। প্রেমের মেজাজ গেল চড়ে।
“উফফ… আমি যে কেন তোমার সাথে কথা বলছি কে জানে! আমি যাচ্ছি। তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।”

“হ্যাঁ তাই তো করছি।”

প্রেম আর কথা বাড়ালো না। নিজের গাড়ির দিকে ফিরে গটগট করে হেঁটে যেতে লাগল। ঐশ্বর্য সেই পানেই মনোযোগ দিয়ে চেয়ে রইল। লোকটার হাঁটার অঙ্গিভঙ্গিও যেন মারাত্মক। নাকি ঐশ্বর্যের কাছেই তা মারাত্মক লাগছে সেটা বুঝছে না ঐশ্বর্য। নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে পিছু ফিরে তাকালো প্রেম। কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
“পরে কোনো বিপদ হলে আফসোস করবে কিন্তু।”

ঐশ্বর্য আবারও দায়সারা ভাবে জবাব দিল,
“আফসোস তো আমি করব। তার জন্য আপনি চিন্তা করছেন কেন?”

প্রেমের মনে এবার উঁকি দেয় এক প্রশ্ন সেটা হলো, সত্যি তো! প্রেম কেন ভাবছে? আজকাল সে অন্যদের নিয়ে বেশি ভাবে। বিশেষ করে এমন মেয়ে যার নিজেকে নিয়ে চিন্তা নেই তাকে নিয়ে ভাবার কি দরকার? এদিকে প্রেমের যে অসহ্যকর মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে সেটা সে ভুলেই গেছিল। বাড়িতে গিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুম দিতে পারলে তার শান্তি!

গাড়িতে উঠে বসল প্রেম। গাড়ির চাবি ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়েও দিল না সে। তার হাত চলছে না। মন সায় দিচ্ছে না ওই মেয়েটাকে একা ফেলে যেতে। এবার সে গাড়ির জানালা থেকে মাথা বের করে দিয়ে ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে জোরে জোরে বলল,
“আমি সত্যি চলে যাচ্ছি কিন্তু!”

ঐশ্বর্য এবার চোখ ছোট ছোট করে ফেলল। শক্ত কন্ঠে বলল,
“তো যান না? আপনাকে মনে হচ্ছে জাপ্টে ধরে আছি?”

এবার প্রেম মনের ওপর জোর খাটিয়েই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফেলল।
ঐশ্বর্য দুহাত জ্যাকেটের পকেটে গুটিয়ে প্রেমের কান্ড দেখল আর বিরবির করে বলল,
“আজ যদি উনি এখান থেকে চলে যান তাহলে ভাববো উনাকে চিনতে ভুল করেছি আমি।”

কথাটুকু শেষ না হতে না হতেই একটু দূরে গিয়েই থেমে গেল গাড়ি। সেখান থেকে দ্রুত গতিতে নেমে পড়ল প্রেম। ঐশ্বর্যের কাছে এসে দাঁড়িয়ে একপ্রকার ধমক দিয়ে সে বলে উঠল,
“এই মেয়ে যাও গাড়িতে বসো।”

ধমকে কিছুটা চমকে উঠলেও হাসি পেল ঐশ্বর্যের। অথচ প্রেমের জায়গায় অন্যকেউ থাকলে সে দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থায় থাকতো কিনা ঐশ্বর্য জানে না।

“কি হলো কথা শুনতে পাও না নাকি? গাড়িতে উঠো গিয়ে।”

ঐশ্বর্য হাসতে গিয়েও হাসল না। গুটি গুটি পায়ে হেঁটে গিয়ে উঠল গাড়িতে। পেছন পেছন প্রেমও গিয়ে উঠল। মুখ ফুলিয়ে রেখেছে সে। তার ধারণা ছিল ঐশ্বর্য নিজেই প্রেমকে ডাকবে। কিন্তু সে ভুল ছিল!

ঐশ্বর্য নিজের বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামে। নেমে যাওয়ার সময় একবার দেখে নেয় প্রেমের চেহারা। সে বোধহয় অনেকটা ক্লান্ত। সকালে যা তাড়াহুড়ো করছিল! মাথায় ব্যান্ডেজ জ্বলজ্বল করছে। সকালে ঐশ্বর্যের জন্যই তার লেগেছিল ভাবতেই অনুতপ্ত বোধ হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখন বাড়ির মেইন গেট দিয়ে ঢুকবে ঐশ্বর্য তখনি ডাক পরে প্রেমের। তৎক্ষনাৎ পিছু ফিরে তাকায় সে। প্রেম এগিয়ে এসে ঐশ্বর্যের একটা ব্রেসলেট ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“গাড়িতে পরে গিয়েছিল। টেক ইট।”

ঐশ্বর্য হাতে নেয় ব্রেসলেট টা। প্রেম ফিরে যায়। যেতে যেতে বিরবির করে বলে,
“আর যেন এই বিপদের মুখ দেখতে না হয়। এই মেয়েটা সবসময় বিপদ নিয়ে আসে আর আমিও তাকে ফেলতে পারি না! ওহ গড, হেল্প মি!”

গাড়ির কাছে এসে পা যেন থেমে গেল প্রেমের। আর চলতে পারছে না সে। কে যেন তাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরেছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো প্রেমের। তখনই তার কানে ফুঁ দিল কেউ। কেঁপে উঠল সে। কানে কানে ফিসফিস করে মেয়েলি কন্ঠ বাজলো।
“সবার মনেই কি এভাবে প্রেম জাগান নাকি? আমার মতো এমন ভয়াবহ এক ব্যক্তিত্ব আপনার মতো একজন সাধারণ ব্যক্তিত্বে কাবু হয়ে গেছে। দেবেন কি জায়গা মনের কুঠুরিতে? আমি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।”

গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেল প্রেমের। ঐশ্বর্যের কন্ঠ চিনতে দেরি হলেও চিনে ফেলে সে। কষ্ট করে পিছন ফিরতেই হতভম্ব হয়ে যায় সে। আশেপাশে কেউ নেই। ঐশ্বর্যও নেই। তাহলে এতক্ষণ সে কি ভ্রমের মাঝে ছিল? মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে প্রেম নিজমনে বলে,
“সারাদিন অফিস আর ওই মেয়ের ঝামেলায় পরে আমার মাথা পুরোপুরি গিয়েছে। বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিতে হবে।”

নিঝুম রাত। চারপাশে কঠিন নিস্তব্ধতা। সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে এলো একটা মন মাতানো সুরে। সিনহা মেনশনের এক খোলা বারান্দায় রেলিং এ ভর দিয়ে এক মারাত্মক সুন্দরী ভায়োলেন বাজাচ্ছে নিজ ছন্দে। হালকা কোঁকড়ানো খোলা চুল হালকা হাওয়ায় নিজ তালে দুলছে। বড় চোখ দুটো বুঁজে রাখা। সে হচ্ছে ঐশ্বর্য। এবার ঠোঁট নাড়িয়ে সে ভায়োলেনের তালে তালে সুর করে গেয়ে উঠল,
“ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে!
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই!
ছুঁয়ে দে আঙ্গুল, ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা!
কথা দেওয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাহিরে না!”

ভায়োলেন বাজানো থামালো ঐশ্বর্য। এমনিতে সে এসব ভায়োলেন বাজায় না। অনুভবের ভায়োলেন এটা। হঠাৎ আজ যেন মনে রঙ লেগেছে তার। তাই সে অনুভবের ঘর থেকে এনে ভায়োলেন বাজাচ্ছে। মুচকি হেঁসে ঐশ্বর্য বলে,
“আমার এই কঠিন হৃদয় ভেঙে প্রেমে সঞ্চার করেছেন আপনি। এই কঠিন অপরাধে এই ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য আপনাকে ভালোবাসা নামক শাস্তিতে দন্ডিত করবেই করবে।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভু্ল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]