প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব-৭+৮+৯

0
199

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৭

ভ্যাম্পায়ার কিংডমে আজ শোরগোল বেঁধেছে। সকলে হুড়োহুড়ি করছে। রাজপ্রাসাদ সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। সুন্দর রাজকীয় প্রাসাদে সকলে মিলে সাজিয়ে জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছে। চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে যার তার! তবে প্রাসাদের মূল আর্কষণ হচ্ছে অন্যকিছু। প্রিন্সেসের জন্য রাখা আসন আজ পরিপূর্ণ! আজকে বহুদিন পর ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্যের আগমন ঘটেছে। আজ প্রায় ৬ বছর পর সে এসেছে। সন্ধ্যার পরিবেশে সব সাধারণ ভ্যাম্পায়ারের সমাগম ঘটেছে। আজ ৬ বছর পর সকলে এসেছে তাদের ভবিষ্যতে রানীকে দেখতে!

সিংহাসনে বসে আছে ঐশ্বর্য। চোখেমুখে ছড়িয়ে রয়েছে বিরক্তি। আজ তার সাজপোশাক ভিন্ন। তার যেন অন্য রূপ প্রকাশ পেয়েছে। হলুদ রঙের জামা যা বেশ লম্বা। পা পর্যন্ত ছড়িয়ে রাখা। মাথায় মুকুট ঝলমল করছে। গলায় চিকন একটা মালা। বেশ দামি পাথরের। হাতে চিকন ব্রেসলেট। এই প্রথম ঐশ্বর্যকে অন্যান্য ভ্যাম্পায়ারের মতো পোশাকে সাজানো হয়েছে। এমন রুপে ঐশ্বর্যকে দেখে মাধুর্য নিজেই হতবাক! তার মেয়েকে অতিরিক্ত মাত্রায় সুন্দরী লাগছে। রুপে কোনোদিনই কমতি ছিল না তার। তবে আজ অন্যরকম স্নিগ্ধতা ছুঁয়েছে ঐশ্বর্যকে। খাবার-দাবারের আয়োজন করছিল মাধুর্য। নিজ হাতে খাবারের বড় বড় প্লেটগুলো নিয়ে আসতে নিতেই এলিনা পথ আগলে দাঁড়ালো। এলিনার মুখের দিকে তাকাতেই এলিনা ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কুইন, আপনার কি মনে হয়? যে কারণে এতো আয়োজন সেটা কি সফল হতে পারে?”

“সেটা সম্পূর্ণ ঐশ্বর্যের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু এ কাজে সফল হওয়া টা জরুরি। নয়ত জানি না কি হয়ে যাবে। আমার মেয়ে আর আমার মেয়ে থাকবে কিনা সেটা কেউ জানে না। ওর মনে সেইসব অনুভূতি জাগাতে হবে যা কঠিন হৃদয়কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়।”

ব্যস্ত কন্ঠে জবাব দিল মাধুর্য। তৎক্ষনাৎ এলিনা বলে উঠল,
“একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন? প্রিন্সেস ঐশ্বর্য একদম আপনার মতো দেখতে। হুবুহু অন্য এক মাধুর্য। তবে সেই মাধুর্যের সাথে এই মাধুর্যের আচরণে কোনো মিল নেই। যদি এই মাধুর্য চায় শান্তি তবে ওই মাধুর্য চায় যুদ্ধ! তবে আপনার মতোই দেখতে তাকে। অপরূপা সে। আশা করছি ওর জন্য একটা উপযুক্ত আর সৎ একজনের দেখা মিলবে। যে ওর মন কাঁড়বে।”

মাধুর্য হালকা হাসে।
“শুধু আমার মতো দেখতে নয়। আমার মতো শান্তিপূর্ণ করতে চাই তাকে। সেকারণেই তো এতো আয়োজন।”

মাধুর্য চলে আসে। জায়গা জায়গা থেকে ছুটে এসেছে নানানরকম ভ্যাম্পায়ার। তাদের গুনের শেষ নেই। উদ্দেশ্য একটাই তাদের। প্রিন্সেসের মন জয় করতে হবে। তবে অন্যদিকে তাদের মুখের দিকে তাকানোর আগ্রহও নেই ঐশ্বর্যের। বিরক্তি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তার। অবশেষে অনুভব আর মাধুর্য এসেছে। তারা নিজেদের সিংহাসন গ্রহন করতেই ঐশ্বর্যের আশেপাশে এসে ভীড় করল কিছু মেয়ে ভ্যাম্পায়ার। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঐশ্বর্যের। যদিও ঐশ্বর্য তেমন সম্পর্ক রাখেনা কারোর সাথে। তবুও অনেকে যেচে কথা বলে। ঐশ্বর্যের আশেপাশে আসন গ্রহণ করে তারা। তারপরেই বলে ওঠে,
“কত সুদর্শন যুবক এরা! প্রিন্সেস, তোমার এবার একজন না একজনকে পছন্দ হয়েই যাবে!”

“তোমাদের পছন্দ হলে পছন্দ করো। আই হ্যাভ নো ইন্টারেস্ট!”

“কিন্তু কেন? দেখো সবাই তোমার জন্য এসেছে।”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না। তবে তার মন বলে উঠল, ‘সবাইকে তো আমার চাই না। আমার মন এতোসব গুণী ভ্যাম্পায়ার চায় না। আমি যাকে চাই সে এসব গুণীদের ঊর্ধ্বে। আমার মন যে তাকে চেয়েছে!”

একে একে সকল সুদর্শন এবং গুণী ভ্যাম্পায়ার উপস্থিত হলো ঐশ্বর্যের সামনে। তবে ঐশ্বর্য নির্লিপ্ত। কাউকে দেখে ভ্রু দুটো এবং চোখজোড়া এমন করছে যে সেই যুবক ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অন্য এক যুবক এলো ঐশ্বর্যের সামনে। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে যুবকটি ঐশ্বর্যের সামনে তুলে ধরল নীল গোলাপের গুচ্ছ। ঐশ্বর্য মনোযোগ দিয়ে তাকালো গোলাপের দিকে। তৎক্ষনাৎ যুবকটি বলে উঠল,
“এই মনোমুগ্ধকর গোলাপের মতোই সুন্দর আপনি। গোলাপ লাল রঙের হয়। তবে তা সাধারণ। এই গোলাপ অসাধারণ। আপনার মতো।”

ঐশ্বর্য কিছু না বললেও যুবকটির কথা বলা শেষে সে স্মিত হাসলো। তারপর গোলাপের গুচ্ছ হাতে নিয়ে গোলাপের ঘ্রাণ নিয়ে পাশে তার বান্ধবীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এই ধরো, নীল রঙের গোলাপ তোমার খুব পছন্দ তাই না? এটা তুমি রেখে দাও। এমনিতে তো আমি তোমাদের জন্য স্পেশাল কিছু করি না বা ভবিষ্যতে করারও ইচ্ছে। তবে এই যুবকের দৌলতে এতো সুন্দর ফুল তো পেয়ে গেলে!”

ঐশ্বর্যের সঙ্গিনীরা হেঁসে উঠল। সেই যুবকটা অপমানিত বোধ করল। সেই মূহুর্তে ত্যাগ করল সেই স্থান। এভাবে একে একে নানানরকমকে ঐশ্বর্য কৌশলে তাড়িয়ে দিল সকল যুবককে ঐশ্বর্য। বাকি রইল না কেউ। ঐশ্বর্যের কর্মকান্ডে বাকি যারা ছিল তারাও পালিয়েছে। কারোর ওপর ঠান্ডা পানিও ফেলেছে ঐশ্বর্য। এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঠান্ডা পানি যেন মৃত্যু হয়ে নামছে! সকলে চলে যাবার পর হাফ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ঐশ্বর্য। সকলের বিশেষ করে মাধুর্য আর অনুভবের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“পরের বার এসব ড্রামা করতে কয়েকশো বার ভাববে। এসব ড্রামা আমার ভালো লাগে না। সো প্লিজ! লিভ ইট।”

ঐশ্বর্য চোখের পলকে বেরিয়ে যায়। মাধুর্য আটকাতে চেয়েও পারে না তাকে। শুধু দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। এই মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে? সকলকে যে হারে অপমান করে তাড়িয়ে দিল! এখন কি হবে?

ভোর হতে চলেছে। বেডে গা এলিয়ে শুয়ে আছে ঐশ্বর্য। চোখে ঘুম নেই। এপাশ-ওপাশ করছে। একসময় উঠে বসল সে। নিজের হাতের চিহ্নের দিকে তাকালো। ভালো করে দেখে নিয়ে ভাবতে লাগল এটা কিসের চিহ্ন? কেন এই চিহ্ন? ভাবতে ভাবতে প্রেমের কথা মনে পড়ল তার। বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,
“কি করব আমি? আমার এমন কেন লাগছে দুই-একদিন ধরে? কি হচ্ছে আমার সাথে? কি করা উচিত আমার? কিছু বুঝতে পারছি না।”

“কি বুঝতে পারছো না? আমাকে বলতে পারো। আমি তোমার কোনো কাজেও আসতে পারি!”

কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই দরজার দিকে তাকালো ঐশ্বর্য। এলিনাকে দেখে চোখমুখ খিঁচে এলো তার।
“উফফ… তোমাকে না বলেছি! রাত-বিরেতে এভাবে যখন-তখন আমার রুমে ঢুকবে না। আই হেট ইট!”

এলিনা হালকা হাসলো। ঐশ্বর্যের রুমের দরজা বন্ধ করে তার কাছে এগিয়ে এলো এলিনা। এসে বেডে বসতে বসতে বলল,
“তোমাকে দুয়েক দিন ধরে অনেকটা অন্যরকম লাগছে। কোনোকিছু নিয়ে ভাবছো তুমি! কি নিয়ে ভাবছো?”

“তোমাকে কেন বলব?”

“আহা! বলোই না! এটাও তো হতে পারে? আমি তোমার চিন্তা দূর করে দিলাম?”

বাঁকা চোখে দৃষ্টিপাত করল ঐশ্বর্য। এলিনা কি কিছু বলতে পারবে? কিছুটা সন্দিহান হয়ে তাকাতেই এলিনা ভাইলেন দেখে বলে উঠল,
“ব্যাপারটা কি বলো তো? আজকাল ভাইলেনে সুরও তুলছো কিং এর মতো?”

“তেমন কিছু না জাস্ট….!”

“জাস্ট?”

ঐশ্বর্য এবার আগপাছ না ভেবে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,
“আই হ্যাভ অ্যা বিগ কনফিউশান।”

“কি নিয়ে?”

“আমি একটা মানুষের পাল্লায় পড়েছি। একটা সাধারণ মানুষ। আমাদের মতো এতো শক্তি উনার নেই। তবে এই মানুষের জগতে সমস্ত পাওয়ার থাকার সত্ত্বেও কোথাও যেন উনি অন্যের মতো না। আমার মতো একজনকে গুনে গুনে তিনবার হেল্প করেছেন। উনার এক মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব আমাকে ঘ্রাস করছে। আমি ওই মানুষটার প্রতিটা পদক্ষেপে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে ওই লোকটা আমি কিছুই না। এটা কীসের ইঙ্গিত!”

এলিনা ঐশ্বর্যের এমন কথা শুনে অনেকটা আশ্চর্য হলো। হা হয়ে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। ঐশ্বর্য তা খেয়াল করে এলিনার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“তুমি নাকি হেল্প করবে? এই তার নমুনা? বেরিয়ে যাও তাহলে!”

ধ্যান ভাঙলো এলিনার। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠল,
“ভ্যাম্পায়ার নয়। অবশেষে মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হলে তুমি?”

ঐশ্বর্য চিন্তিত হয়ে বলল,
“জানি না আমি! কি হয়েছে আমার?”

এলিনা কিছু একটা ভাবলো। ভেবে প্রশস্ত হেঁসে ঐশ্বর্যকে চেপে ধরে বলল,
“রোগে বাসা বেঁধেছে প্রিন্সেস! প্রিন্সেস ঐশ্বর্যের মনে প্রেম রোগের বাসা বেঁধেছে। দেরি না করে বলে দাও তাকে যত দ্রুত পারো। হক না সে মানুষ। তবে আমি তাকে দেখতে চাই! আমাদের প্রিন্সেসকে কাবু করেছে বলে কথা!”

ঐশ্বর্য চকিতে তাকালো এবার। এসব কি শুনছে সে! অবশেষে সে প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে? এলিনার এমন কথাবার্তা শুনে কান এবং মাথা গরম হচ্ছে তার। মৃদু কেঁপে উঠল সে। নিজের এমন পরিবর্তন দেখে সে নিজেই চমকে উঠল। সে কি লজ্জা পাচ্ছে? লজ্জা নামক অনুভূতি কবে থেকে তার কাছে হানা দিল? সে কিনা লজ্জা পাচ্ছে?

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৮

“আমাদের প্রিন্সেস একটা সাধারণ মানুষের প্রেমে পড়েছে। আজ জীবনে প্রথমবার ওর চোখেমুখে লজ্জার আবরণ দেখেছি আমি। আমি নিজে দেখেছি ও কতটা পরিমাণ একটা সাধারণ মানুষের প্রেমে মত্ত হয়ে পড়েছে।”

বেশ শান্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে মাধুর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করল এলিনা। মাধুর্য উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে রইল এলিনার দিকে। যেন এলিনা ভুলভাল কিছু বলে যাচ্ছে যা কোনোদিনই সম্ভব না। তারপর খানিকটা মেকি হেঁসে বলল,
“আই থিংক অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি করে তোমার মাথায় একেবারে সমস্যা হয়ে গেছে এলিনা। কি বলতে কি বলছো তুমি? ঐশ্বর্য আর প্রেমে পড়া? ইটস নট পসিবল।”

“ইটস পসিবল কুইন। আমি যা বলছি সব সজ্ঞানে বলছি। বিলিভ মি! প্রিন্সেস নিজে আমাকে ওর মনে কি লুকিয়ে ছিল সবটা বলেছে। ওর যেই চোখে হিংস্রতা ছাড়া কিছু ছিল না সেই চোখে এসব বলার সময় আমি আকুলতা দেখেছি। কাউকে পাওয়ার আকুলতা। আমি এতোটা ভুল দেখব না বা শুনব না।”

এবার এলিনার কথাগুলো আর ভুল বলে দূরে ঠেলে দিতে পারছে না মাধুর্য। বাকরুদ্ধ হয়ে একদিকে চেয়ে থাকল সে। তখনই এলিনা আবারও বলল,
“তাছাড়া আমি তো প্রিন্সেসকে বলে দিয়ে এসেছি নিজের মনের কথা বলে দিতে। জানি না ভুল করেছি নাকি ঠিক! এর জন্য দুঃখিত আমি।”

মাথা নত করে ফেলে এলিনা। তৎক্ষনাৎ মাধুর্য বলে ওঠে,
“দুঃখিত কেন বলছো? তুমি যা বলেছো খুব একটা ভুল বলো নি। আমাদের ভ্যাম্পায়ার জগৎ যতটাই শক্তিশালী আর পাওয়ারফুল হক না কেন। আমরা ভুলে যেতে পারি না শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ। ওদের কাছে আমরা তুচ্ছ। তাই ঐশ্বর্য যদি কোনো মানুষকে ভালো বেসেও ফেলে তাহলে এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু সমস্যাটা কি জানো? ঐশ্বর্য যাকে ভালোবাসবে তাকেও ওকে ভালোবাসতে হবে। তাও ঐশ্বর্যের সত্যিটা জেনে ভালোবাসতে হবে। আর ঐশ্বর্য ভ্যাম্পায়ার তার ওপর ওর মাঝে শয়তানি সত্তা বিরাজমান। এসব জেনে কে ওকে আপন করে নিতে চাইবে বলো তো? এমন কেউ আছে কি? মনে তো হয় না।”

এলিনা এবার নিরব। সত্যিই কি এমন কোনো মানুষ আদেও আছে? যে প্রিন্সেসের সত্যিটা জেনে ভালোবাসবে? মাধুর্য আবারও ধীর গলায় বলে,
“যাই হক। সকাল হলো বলে! তুমি রেস্ট নাও।”

এলিনা মাধুর্যের কথার জবাবে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। মাধুর্য ঠাঁই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ঘরে প্রবেশ করে দরজা আঁটকে দেয়। এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেডে বসে পড়ে সে। আনমনে কিছু একটা ভাবতেই ঠান্ডা শিরশিরে অনুভূত হয় তার কোমড়ে। হালকা কেঁপে উঠে পিছু ফিরে তাকায় সে। কড়া কন্ঠে বলে,
“কি সমস্যা? এতো বছর হয়ে গেল। তবুও আপনি বদলাবেন না। অসভ্যতা করেই যাবেন বলে ঠিক করে রেখেন নাকি?”

অনুভব ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকায় মাধুর্যের দিকে। মাধুর্যের চোখেমুখে রেগে গিয়ে রক্তিম আভাটা আস্ত ঝাঁসির রানি লাগে। বেশ ভালো লাগে অনুভবের। আবারও চোখ বুঁজে মাধুর্যের কোমড় জড়িয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

“অভিয়েসলি। বিয়ে করার বেশ কয়েকটা বেনিফিট আছে। তার মধ্যে সব থেকে বড় বেনিফিট এটা। যতই অসভ্যতা করি না কেন! সেটা নিয়ে বউ কারোর কাছে বিচার দিতে পারবে না। ওই আমাকে কয়েকটা গালি দিয়েই চুপ। আমার এমন অত্যাচার সারাজীবন হজম করতে হবে।”

“আপনি…আপনি একটা অসহ্যকর লোক। অত্যাচারী!”

দাঁতে দাঁত চেপে ছটফটিয়ে বলল মাধুর্য। অনুভবের কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।
“এতগুলো বছরে কতবার এই কথা বলেছো বলো তো? এসব কথা কে গায়ে মাখে?”

“বাবা হয়েছে যেমন তার মেয়েটাও তেমন হয়েছে। একরোখা, জেদি আর প্রচন্ডরকম বেয়াদব। দুটোকে ধরে ধোলাই দিতে পারলে খুশি হতাম।”

এবার চোখ মেলে তাকালো অনুভব। আর বলল,
“আমাকে যা বলার বলো। আমার মেয়েকে টানছো কেন? কি এমন করেছে সে?”

“সবসময় ও যাই করুক না কেন। তোমার তো কিছু মনেই হবেনা।”

“হয় না কারণ ও যা করছে সব আমার কারণে করেছে। এতে তো আমার মেয়ের দোষ দিতে পারি না।”

মাধুর্য এবার অনুভবের পানে তাকায়। অনুভবের হাসিটা মিলিয়ে গেছে। মাধুর্য বুঝতে পারে অনুভবের মনে কোথাও একটা অপরাধবোধ কাজ করে। তাই সে অনুভবের হাত ধরে বলে,
“এটা ভাগ্য। কারো দোষ নয়। কিন্তু…!”

“কিন্তু?”
মাধুর্য হাফ ছেড়ে সব কথা অনুভবকে খুলে বলে। অতঃপর চিন্তিত হয়ে পরে। অনুভব সব শুনে হঠাৎ করে শব্দ করে হেঁসে উঠতেই হকচকিয়ে ওঠে মাধুর্য।
“আরে, পাগল হয়ে গেলেন নাকি? এভাবে হাসছেন কেন?”

“তুমি আমাদের মেয়ের জন্য চিন্তা করছো? সিরিয়াসলি? আমার তো ওই ছেলেটার জন্য চিন্তা হচ্ছে। বেচারা যদি ভালোই ভালোই রাজি হয় তাহলে ভালো। নয়ত গেল! আফটার ওল, মেয়েটা তো আমার! সো ইম্প্রেস করার টেকনিক সে খুব ভালো করে জানে। যেভাবে আমি তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়েকে ইম্প্রেস করেছিল। ঠিক সেভাবেই আমার মেয়েও আমার জামাইকে ইম্প্রেস করবে।”
মাধুর্যকে ঝগড়ুটে বলায় চোখ গরম করে তাকায় অনুভবের পানে। অনুভব মুচকি হাসতে থাকে! আজও কমেনি তাদের ভালোবাসা!

‘ব্রেকিং নিউজ, শিল্পপতি আজিম শাহিনের একমাত্র ছেলে কৌশিক শাহিনের ভয়া’বহ মৃ’ত্যু তার নিজ বাংলোতে। বাংলোর ঘরের এক বাথরুমের বাথটাবে পড়ে থাকতে দেখা গেছে তার র’ক্তশূণ্য লা’শ। দুটো চোখ যেন কোনো ধা’রা’লো কিছু দিয়ে আঁচড়ে ফেলা হয়েছে। গলা এবং ঘাড়ে রয়েছে আঁচড়ানোর দাগ। যেন কোনো ভ’য়ংকর কোনো প্রাণী আ’ক্র’মণ করেছিল তাকে। এই মৃ’ত্যুর পেছনে রয়েছে অনেক বড় রহস্য। কিভাবে হলো এতো নৃ’শং’স মৃত্যু? তা এখনো অজানা।’

গাড়ির মধ্যে নিউজে খবরটা শুনতেই গাড়ি ব্রেক করলো প্রেম। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার ঠান্ডার মাঝে। মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে। বিড়বিড় করে আন্দাজে বলে ওঠে,
“কি জানি, কোন মেয়ে তার প্রতিশোধ নিয়েছে! কম মেয়ের সাথে তো অশ্লীলতা করেনি! কোনো মেয়েই হবে।”

এসব বলে নিজ মনকে সায় দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতেই তার গাড়ির জানালায় টোকা পড়ল। জানালার কাঁচ খুলতেই একটা মহিলাকে নজরে পড়ল তার। গায়ে চাদর দিয়ে মুড়ানো। ঠকঠক করে কাঁপছে মহিলাটি। চোখমুখও চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। প্রেম ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ইয়েস?”

“আ…আমাকে একটু সামনের হসপিটালে পৌঁছে দেবেন? আসলে আ…আমার ভাই এক্সিডেন্ট করেছেন আর আমি কো…কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আপনি আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন?”

প্রেম ক্ষীণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। কন্ঠস্বরটা চেনা তবে ভারি। কোথায় যেন শুনেছে! মেলাতে গিয়েও পারছে না। এখন বলতেও পারছে না অন্য গাড়ি দেখে নিতে। কারণ এমন শক্ত মনের মানুষ নয় সে। আবার পৌঁছে দিতেও মন সায় দিচ্ছে না। কি করবে বুঝতে পারছে না। মানা করে দেওয়া আগেই তার মুখে হঠাৎ স্প্রে করে বসে মহিলাটি। সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে আসে তার। চোখ খুলে রাখতে পারে না। চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গভীরভাবে!

হালকা একটু নড়ে ওঠে প্রেম। হাত নাড়াতে চেয়েও পারে না। চোখ বুঁজেই বিরক্তি প্রকাশ করে সে। চোখ খুলতে চায়। অনেক কষ্টে চোখ মেলতে সক্ষমও হয়। চোখ মেলে তাকাতেই আশপাশটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আশেপাশে অন্ধকার! শুধু মাথার ওপরে জ্বলছে একটা লাইট। তাও টিমটিম করছে। মাথাটা ভার হয়ে আছে প্রেমের। মাথায় হাত দিতে চাইতেই যখন অসফল হয় তখন নিজের হাতের দিকে তাকায় সে। বাকরুদ্ধ না হয়ে পারে না প্রেম। তাকে একটা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। চোখমুখ কুঁচকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে সে। মনে পড়ে তার মহিলাটার কথা! সে কে ছিল? আর কেনই বা এমন করল তার সাথে? রেগেমেগে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এটা কি হচ্ছে আমার সাথে? কে করছে আমার সাথে এসব? সামনে এসো। দেখে নেব আমি। জাস্ট আমার সামনে এসো।”

প্রেমের কানে ভেসে আসে কারো এগিয়ে আসার শব্দ। তার সামনে এসে দাঁড়ায় এক চেনা পরিচিত মানুষ। পরনে আধুনিক পোশাক এবং বেশ স্টাইলে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হয় না তার। বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“তুমি? তুমি এসব করেছো?”

ঐশ্বর্য আরো এগিয়ে আসে প্রেমের দিকে। হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রেমের চোখের দিকে তাকিয়ে অসহায় সুরে বলে,
“কি করব বলুন? আমি আপনাকে এতে জ্বালিয়েছি, এতোই জ্বালিয়েছি যে আই এম সিউর আপনি কোনোদিন আমার সামনা-সামনি আসলেও কোনো কথা না শুনে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করবেন। পারলে পালিয়ে যাবেন। তাই আমাকে এই কাজটা করতে হলো! সরি!”

“হাউ ডেয়ার ইউ? আমার সঙ্গে এই কাজটা করার সাহস কোথা থেকে পেলে তুমি?”

“আমি আপনাকে ভালোবাসি মি. আনস্মাইলিং!”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৯

হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রয়েছে প্রেম। মুখে কোনো শব্দ আসছে না বলার মতো। মনে হচ্ছে কোনো জালের মধ্যে জড়িয়ে গেছে সে। মাথাটা ভনভন করছে। তবে অপরদিকে উত্তরের জন্য অস্থির হয়ে উঠল ঐশ্বর্য। অধৈর্য হয়ে বলল,
“উফফ… আপনি একটা উত্তর দিতে এতো সময় লাগান? লাভ ইউ টু, হেট ইউ, কিল ইউ কিছু তো একটা বলুন! আমার এতো ধৈর্যশক্তি নেই।”

এটা হয়ত ইতিহাসে প্রথমবার ঘটছে যে একটা ছেলেকে একটা মেয়ে কিডন্যাপ করে প্রপোজ করছে। মেয়েটার দম আছে বলতে হবে। তবে এই মূহুর্তে ভীষণ রাগ লাগছে তার। এটা কেমন সভ্যতা? রাগে গা জ্বলছে তার। রাগে কাঁপতে কাঁপতে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল সে। এমন চেষ্টা দেখে ঐশ্বর্যের মনে হলো প্রেমের হাতে বেশি চাপ পড়ছে। এভাবে সে কি করে উত্তর দেবে? দ্রুত হাত বাড়িয়ে ঝড়ের গতিতে খুলে দিল হাতের বাঁধন সঙ্গে পায়ের বাঁধন। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল প্রেম। এমন অসভ্যতা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। প্রেম এমনি বেশ শান্ত মানুষ হলেও রাগলে ভয়ানক রুপ ধারণ করে তার। এক হাত মুঠো করে ডান হাত তুলে ঐশ্বর্যকে কষিয়ে থাপ্পড় মারতে নেয় প্রেম। সেটা দেখে প্রথমবার মাথা নুইয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ঐশ্বর্য। চোখমুখ কাঁচুমাচু করে থাকতেই বেশকিছুক্ষণ কেটে যাবার পর যখন কোনো আঘাত তার গালে লাগল না তখন পিটপিট করে নিজের বড় ও সুদীর্ঘ আঁখি খুলল সে। প্রেম রাগে অন্যদিক তাকিয়ে ফুঁসছে। ঐশ্বর্য পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইল। আচমকা হেঁসে দিয়ে বলল,
“আরে বাহ, আপনাকে রাগলেও কত কিউট লাগে। গালগুলো লাল লাল স্টবেরি হয়ে গেছে আর তাকানোর স্টাইলটাও…! জাস্ট ফিদা হয়ে যাবে। যাক, আপনার গম্ভীর মুখ ছাড়াও অন্য কোনো রিয়েকশন দিতে পারেন সেটা অন্তত বুঝতে পারলাম।”

কটমট করে তাকালো প্রেম। একে তো রাগে সারা শরীর রি-রি করছে তার ওপর এই রাগের মাঝে মেয়েটার এমন কথাবার্তা কেমন লাগবে? সে রাগবে না হাসবে তা বুঝতে পারছে না। নিজের রাগটাকে বজায় রাখার চেষ্টা করে বলল,
“মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না আমি। তাই তুমিও বেঁচে গেলে। বাট নিজের লিমিট ক্রস করবে না। তুমি হতে পারো বেপরোয়া মেয়ে। নিজের ইচ্ছেমতো চলতেই পারো। বাট তোমার এই ইচ্ছে আমার ওপর খাটাবে না। তোমার আর আমার মিট হয়েছেই বা কয়বার? তুমি এর মধ্যে করে ফেললে আমাকে ভালোবাসো? ভালোবাসা শব্দটার মানে বোঝো তুমি? শুধু লাফিয়ে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা যায় না। যেই নেশা, যেই কৌতুহল শুধু কিছুক্ষণের সেটা ভালোবাসা বলে না। কত বয়স তোমার? এই বয়সে যা হয় মানে ওইসব এট্রাকশন সেসবই হয়েছে। ভালো করে বলছি, এসব বিষয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। নয়ত ঝেড়ে ফেলতে না পারলে আমাকে ডিস্টার্ব করো না প্লিজ!”

“ভালোবাসার সঙ্গে বয়সের কি সম্পর্ক? ভালোবাসতে বয়স লাগে? যদি তাই হতো এতোদিনে এই আগুনে পুড়িয়ে রাখা এই কঠিন হৃদয়ে কতো কেউ আসতো আর যেতো! কিন্তু সেটা তো হয়নি। আপনি এসেছেন আর মরুভূমির মতো হৃদয়ে বৃষ্টির বর্ষণ হয়ে এসেছেন। এটা ভালোবাসা নয়?”

“না নয়। এটা তোমার ভুল ধারণা।”

এবার কিছুটা রাগ লাগে ঐশ্বর্যের। বড় বড় শ্বাস ফেলে যখন রাগটা দমাতে পারলো না তৎক্ষনাৎ প্রেমের শার্টের কলার দিয়ে নিজের সর্বশক্তি দিতে নিজের দিকে টানতেই প্রেম টাল সামলাতে না পেরে ঐশ্বর্যের সাথে ধাক্কা খেল খানিকটা। চক্ষু চড়কগাছ হলো প্রেমের। মেয়েটার সাহস দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। ঐশ্বর্য চিৎকার করে বলে,
“এটা ভালোবাসা কেন নয় বলুন? কেন? হুয়াই?”

প্রেম প্রথমে নিজের শার্টের কলার টান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।
“ইউ ম্যাড গার্ল। তোমার মতো মেয়ের মনে ভালোবাসা জন্মাতে পারে না। তুমি স্বাভাবিক মস্তিষ্কেরই নও। যদি হতে তাহলে আমাকে এভাবে আনতে না আর এতো পাগলামি করতে না। আমাকে রেহাই দাও। প্লিজ! ফারদার যদি তোমাকে আমার সামনে দেখেছি খুব খারাপ হয়ে যাবে। সেদিন নিজেকে কন্ট্রোল রাখব না। ভালো চাইলে আমার সামনে আসবে না।”

প্রেম আশেপাশে তাকিয়ে দরজা খুঁজে নিল। হনহনিয়ে ছুটে গেল সেদিকে। দরজা খোলা পেল। দ্রুত বের হলো সেখান থেকে। ঐশ্বর্য শুধু ঠাঁই দাঁড়িয়ে প্রেমকে দেখে গেল। সে চাইলে আটকাতে পারতো তাকে। কিন্তু কেন যেন মন চাইলো না আটকাতে। কি হবে আটকিয়ে? বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে বললেন,
“কি ভাবছেন মি. আনস্মাইলিং? আপনি চাইলেন আর চলে গেলেন? আমি যেতে দিলাম বলেই যেতে পারলেন নয়ত…! আপনার সাধ্যও নেই আমার জাল থেকে বের হওয়ার। আজকে ছাড় দিলাম। কিন্তু ঘুরেফিরে হয় আমি আপনার কাছে যাব নয়ত আপনি আমার কাছে আসবেন। আমিও দেখব পরের বার আপনি আমাকে সামনে পেলে ঠিক কি কি করেন? জানতে চাই, আপনার হাতের চড় মিষ্টি নাকি ঝাল?”
বলেই জোরেশোরে হেঁসে ওঠে ঐশ্বর্য।

“আমাদের কুইনকে খুঁজে বের করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব। নয়ত এই রাজ্য ছন্নাছারা হয়ে যাবে। রোজি, তুমি এই রাজ্যের বর্তমানে সবথেকে শক্তিশালী ডেভিল। এখন তোমার হাতে। তোমার উপলব্ধি, তোমার জ্ঞান দ্বারা তুমি আমাদের ডেভিল কুইনকে খুঁজে বের করো।”

ডেভিল কিংডমের এরিক কথাটা বলল। রোজি অসহায় চোখে তাকালো। তারপর লাল চোখজোড়াতে পরিণত হলো তার চোখ। ভয়ানক হাসি দিল সে।
“কাজটা আমি কেন করব? এর বদলে আমি কি পাব?”

“এটা আমাদের রাজ্যের ব্যাপার। আমাদের শয়তানি সত্তা বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদের ডেভিল কুইন লাগবে।”

“কিন্তু তার বদলে আমি ডেভিল কুইনের সব থেকে কাছের এবং প্রিয় ডেভিল হতে চাই। ডেভিল কুইনের সবথেকে কাছে একজন ডেভিল লাগে আর সেটা সেই যুগ থেকে তুমি হয়ে আসছো। কিন্তু এবার রোজি হবে। তুমি রাজি?”

এরিক কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। ভাবলো কিছু কথা। ভেবে শেষমেশ বলল,
“আমি রাজি। তবুও আমাদের মাথার ওপর এমন কাউকে চাই যে সবথেকে বেশি হৃদয়হীন হবে। যার হাতে ধ্বংস হবে এই পৃথিবী।”

“আমিও রাজি। কিন্তু তাকে খুঁজে বের করব কি করে?”

“সেদিন অমাবস্যার রাতে আমরা আগুনের মধ্যে আমরা এক প্রতিচ্ছবি দেখেছিলাম। এক অপরূপ সুন্দরী যদিও সেটা ঝাপ্সা ছিল। কিন্তু সেই ঘোলাটের মাঝে যা দেখেছিলাম আমরা সবাই তা সবারই মনে থাকার কথা। অস্পষ্ট হয়েও তার সেই সৌন্দর্য স্পষ্ট ছিল। তবে যা স্পষ্ট ছিল সেটা হচ্ছে তার ঘাড়ের আঁকা ট্যাটু। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস! ডেভিল কুইনের হাতে আমাদের সেই মুকুটের চিহ্ন থাকবে। সে সবার থেকে আলাদা হবে। ব্যাস… এটাই কি যথেষ্ট নয়?”

রোজিও চিন্তায় পড়ে গেল। যতই হক, তাদের আসনে বসানো সেই রানীর মুখচ্ছবি স্পষ্ট ছিল না। তবুও সে রাজি হলো। কাল থেকে সে নামবে নতুন অভিযানে। তার জন্য তাকে থাকতে মানুষের দুনিয়ায় যেতে হবে। সেখানেই দেখা মিলবে ডেভিল কুইনের।

প্রেম বেশ রাতে বাড়ি ফিরতেই দেখা মিলল তার অভিমানী মা মিসেস. পরিণীতার। মুখ ফুলিয়ে সোফায় অন্যদিক তাকিয়ে বসে আছেন উনি। প্রেম জানতো এমনটাই ঘটবে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসতেই মিসেস. পরিণীতা কড়া কন্ঠে বললেন,
“কেন এসেছো এই সময়? না এলেও পারতে?”

প্রেম একগাল হেঁসে মিসেস. পরিণীতাকে হালকা জড়িয়ে বলে,
“সরি মা। আই এম লেট! আই নো দ্যাট। কাজ অনেক আগে শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম বাট…”

“বাট কি? বাহানা দিচ্ছো আমাকে? তোমার জন্য সবাই কত অপেক্ষা করছিলাম!”

আজ মিসেস. পরিণীতা আর শেখ কবির সাহেব অর্থাৎ প্রেমের বাবার বিবাহবার্ষিকী ছিল। যার কারণে প্রেম তাড়াতাড়ি কাজ সেড়ে বাড়ি ফিরছিল কিন্তু ঐশ্বর্যের জন্য সব ভেস্তে গেল! যার কারণে ঐশ্বর্যের প্রতি তখন একটু বেশিই রাগ হয়েছিল। প্রেম গম্ভীর মুখে বলে,
“আরো কাজ পড়ে গেছিল তাই আসতে পারিনি।”

“প্রেম ভাইয়া, তোমার একচুয়াল কাজ কি বলো তো? প্রেম করে গার্লফ্রেন্ডের লিপস্টিক নিজের শার্টে ভরিয়ে নিয়ে আসা?”

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো প্রেম। জুবায়ের আর রামিশা খিলখিল করে হেঁসে এগিয়ে এলো। জুবায়ের আর রামিশা দুজন প্রেমের কাজিন। প্রেমের মা-বাবার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে এসেছিল তারা। তারা মিটমিট করে হাসছে আর তার শার্টের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুই বুঝল না প্রেম! আর তাদের এমন কথা বলার মানে কি? বিষয়টা উদ্ঘাটন করার জন্য নিজের বুকের দিকে তাকালো সে। সে আবিষ্কার করল তার সাদা শার্টে সত্যিই লিপস্টিকের দাগ। বোধহয় ঐশ্বর্য যখন শার্টের কলার ধরে টানছিল তখনই কাজটা হয়েছে। তার ঠোঁট সাদা শার্টে লেগে গিয়েছিল আর বাকিটা ইতিহাস হয়ে গিয়েছে! লজ্জায় মাথা কাটা গেল তার। মুখ তুলে তাকাতে পারল না আর। এতো লজ্জা কখনো লাগেনি। মা কি ভাবছে? ভাবতেই মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সে। এখন কাকে কি বলবে?

চলবে…