প্রেমে পড়া বারণ পর্ব-১৪

0
271

# প্রেমে পড়া বারণ
# পার্ট – ১৪
# Taslima Munni

সারাদিন গিয়ে রাত হয়ে গেছে। কিন্তু রেহান এখনো ফিরছে না।
আমি এতো বার কল করলাম ফোন ও রিসিভ করছে না।
খুব টেনশন হচ্ছে।কোথায় গেলো রেহান!!
নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। আমি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।কিন্তু আমি কি করবো? মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।
এতো ভয় পাচ্ছি কেন আমি?
আমার রেহানকে আমি ভালো করে চিনি।কিন্তু দুঃস্বপ্ন দেখেছি বলে মন খচখচ করছে।।

বেশ রাত হয়েছে। রেহান এখনো ফিরেনি। এখন সত্যিই অনেক বেশি টেনিশনে পড়ে গেছি। আদিল ভাইকে ফোন দিলাম আবার।।
আগেও ফোন দিয়েছিলাম। উনাদের সাথে নাকি সকালের পরে আর দেখা হয়নি।উনি ফোন দিয়েছেন। ফোন রিসিভ করেনি।
এখন আবারও উনাকে বললাম
– ভাই, রেহান তো এখনো ফিরেনি।
– তুমি চিন্তা করো না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।

রেহানের ফোন সুইচড অফ বলছে। আমি আর বসে থাকতে পারছি না। সারাদিন অপেক্ষা করছি এই চলে আসবে, চলে আসবে ভেবে।
বাইরে অনেক ঠান্ডা। রাত বাড়ায় তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
গায়ে গরম কাপড় চাপিয়ে আমি বের হয়ে আসলাম।।
বাসা থেকে বের হতেই দেখি রেহান চলে এসেছে।
– কোথায় ছিলে তুমি? ফোন ধরনি কেন? টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।।
রেহান কোনো কথা না বলে রুমে ঢুকে গেল।
আমিও ওর পিছনে পিছনে গেলাম।
– কথা বলছো না কেন? কোথায় ছিলে সারাদিন?!
রেহান ওর জামা কাপড় বের করে নিচ্ছে।
আমি হাত থেকে এগুলো নিয়ে গেলাম।
– এগুলো দিয়ে কি করছো?
– দেখতেই তো পাচ্ছিস ।
– আমি বুঝতে পারছি না। তুমি এগুলো প্যাকিং করছো! কিন্তু কেন?
রেহান রুমে ঘুরে ওর সব জিনিসপত্র বেডে এনে রাখছে।।
আমার কথার উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করছে না।

রেহান!
আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের জিনিস গুলো নিয়ে যায়গায় রাখলাম।
– কি করছো তুমি?
– আমি কাল চলে যাচ্ছি। তোর একাডেমিক ঝামেলা শেষ হলে চলে আসিস।
আদিল টিকিট করে দিবে। ওকে বলে দিবো।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
– রেহান, এগুলো কি বলছো!! তুমি চলে যাচ্ছো!! এসবের মানে কি??
– আর কিভাবে মানে বুঝাবো?
– বুঝাও…. আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।
– হুমম।
রেহান ওর উষ্কোশুষ্ক চুলে হাত দিয়ে বললো
– আমি কালকেই ফিরে যাচ্ছি। তুই যাচ্ছিস না আমার সাথে।
আমার চোখে পানি চলে এসেছে।
ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– এতো রাগ আমার উপর!! একেবারে একা ফেলে চলে যেতে চাইছো?
– আমি আসার আগে তুই একাই ছিলি।আমি চলে গেলেও সমস্যা হবে না।
– এটা কিন্তু কথা ছিলো না। তুমি আমাকে নিয়ে ফিরবে বলে এখানে পাঠিয়েছিলে।
– অনেক কিছুই তো কথা থাকে না,কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হলে নতুন করে চলে আসে।
– রেহান। সরি বাবু। আমি একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলেছি। প্লিজ… আর এমন হবে না।
– হুম।
রেহান হুম বলে চুপ করে আছে। ওর মনে কি চলছে বুঝতে পারছি না।
রেহান আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে। ও কিছুই গোপন করেনি কখনো। তবুও আমি এভাবে রিয়েক্ট করেছি,এটা রেহানকে একটু বেশিই আঘাত করেছে।

সারাদিন নিশ্চয়ই কিছু খাওনি।মুখ কেমন শুকনো লাগছে। চলো…
ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি খাবার দিচ্ছি।
– আমার খিদে নেই।
– সত্যি খিদে নেই?
– না, নেই।
– ঠিক আছে। খেতে হবে না।
– তুই খেয়েছিস?
– না। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
– হুম। আচ্ছা যা.. আমি আসছি।
জানতাম না খেয়ে আছি শুনলে না করতে পারবে না।

আমি দ্রুত ডাইনিং এ খাবার দিলাম। রেহান নাম মাত্র খেলো।সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসলাম। এসে দেখি রেহান সব রেডি করে ফেলেছে।
চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
আমি কাছে গিয়ে বসে একটা হাত রাখলাম ওর বুকে।
– এমন কেন তুমি? কেন এমন করছো!?
– আমি তো এমন ই! নতুন তো কিছু না।
– বললাম তো ভুল হয়েছে।
– তোর ভুল হয়নি।ঠিকই করেছিস। ভুল আমার হয়েছে, এখানে আসা উচিত হয়নি।
– এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।কোথাও যাবে না তুমি। যেতে হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবা।
– আরও অনেক দিন লাগবে তোর । এতো দিন থাকা সম্ভব না।।
– তাহলে আমিও চলে যাবো। লাগবে না কোনো সার্টিফিকেট।
– এতো বুঝতে হবে না। সব কাজ শেষ হলে যাবি।
– না। তোমার সাথেই যাবো।
– বোকার মতো কথা বলিস না। বাই রোডে যাচ্ছি না যে, যাবো বললেই ব্যাগ গুছিয়ে গাড়িতে উঠে গেলাম! তোর টিকিট করা হয়নি।
– তাহলে তুমি দুইদিন পরে যাবে। এই টিকিট ক্যান্সেল করে দিয়ে,দুইটা টিকিট করো।এক সাথে যাবো।
– দেখ হিয়া… তুই থাকছিস আর আমি যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।তুই সব শেষ করে তারপর আসবি। এটাই শেষ কথা। আর এটা তোকে শুনতে হবে।
– কেন? তোমার সব কথা আমাকে শুনতে হবে কেন?
আমার কথা শুনেছো তুমি??
– আমি বলেছি তাই শুনতে হবে। ঘুমাতে দে খুব ভোরে বের হবো। যা ঘুমা।

ঠিক আছে। ঘুমাও…
যাও তুমি… পরদিন আমিও চলে আসবো।
আমি বাচ্চাদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম।
থাকবো না এখানে..
কি একটু বলে ছিলাম… আর শাস্তি দিচ্ছো!
আমি বেরিয়ে আসলাম। বাইরে হালকা তুষারপাত হচ্ছে। ঠান্ডায় জমে যাবার অবস্থা।
শীতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তারচেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে রেহানের ব্যবহারে।
প্রায় পনেরো-বিশ পরে রেহান বেরিয়ে আসলো।
– হিয়া.. তুই কি করছিস এখানে?!!
ভেতরে আয়।
রেহান আমাকে ধরে ভেতরে নিতে চায়।
– যাবো না।এখানেই থাকবো।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
– বাইরে কি অবস্থা! নির্ঘাত জ্বর বাঁধিয়ে বসবি!
– বাঁধুক।। তোমার কি?! তুমি তো একটু পরে চলে যাবে। যাও না।
– ভেতরে আসতে বলছি কিন্তু!
– যাবো না আমি! বললাম তো।
– যাবি না?
– না… তুমি যাও।
– যাচ্ছি!!
– ছাড়ো… ছাড়ো আমাকে.. উফফ… যাবো না আমি ভেতরে।এখানেই মরে যাবো।নামাও… নামাও বলছি।
– একদম চুপ!! নামাও.. নামাও…!!! তোর চেয়ে একটা বাচ্চা অনেক বেশি বুঝে!
‘ যাচ্ছি’ বলে রেহান আচমকা আমাকে তুলে নিয়েছে!
অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি।

সোজা বিছানায় নিয়ে এসে ভালো করে গরম কাপড় চাপিয়ে দিলো বেশি করে।
– দেখ… ঠান্ডায় হাত পা কি অবস্থা হয়েছে!.
রেহান দ্রুত অয়েল নিয়ে হাতে পায়ে মালিশ করে দিচ্ছে।
– এটা কেন করলি?! এখন যদি একটা অসুখ হয়ে যায়?
– হলে হবে। তুমি তো দেখবে না।
– চুপ।একটা কথাও বলবি না… বেশি পন্ডিত!
রাগে আমার আরও বেশি কান্না পাচ্ছে।

কি এমন বলেছিলাম তোমাকে?
আমার কষ্ট লাগলে সেটা বলতেও পারবো না?
– কে বললো বলতে পারবি না?আমি তোকে জিজ্ঞেস করিনি?তুই কি করলি?
– তোমাকে দেখলাম আফরিনের সাথে কথা বলছো! ও তোমার লাইফে ব্যাক করেছে আর তুমিও মেনে নিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দিবার প্ল্যান করছিলে!
বলতে বলতে হেঁচকি উঠে গেলো।
– কিহ!!!???
রেহান আমার কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো!.
– কবে,কোথায়, কখন?!! কি বলছিস এসব!!
আগে একটু পানি খেয়ে নে…
রেহান এক গ্লাস পানি এনে খায়িয়ে দিলো।
– এবার বল..
– অই রুমে বসে ও তোমার কাঁধে মাথা রেখেছে আর তুমি হাত ধরে বসে ছিলে!
– হিয়া! তোর মাথা ঠিক আছে তো?
জ্বর টর এসে গেছে নাকি! দেখি..
কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে।
ইতোমধ্যে বেশ জ্বর উঠে গেছে।।
– যা ভাবছিলাম! জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল বকছিস!
– জ্বরের ঘোরে না।আমি ঠিক আছি।।
সেদিন স্বপ্নে দেখলাম। দেখার পর থেকে মন কেমন করছিলো।তোমাকে বলতেও পারছিলাম না। রেহান, আমাকে ছেড়ে যাবে না।
ওর হাতটা টেনে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম।
– পাগলি মেয়ে… স্বপ্ন দেখে এমন করলি!!
হাহাহা….
– তুমি যাবে না,বলো?
– কই যাবো? আমার হিয়া মন পাখিরে রেখে কোথাও যাবো না।
তুই এখন একটু ঘুমা।অনেক জ্বর শরীরে।
– ঘুমালে তুমি চলে যাবে।
– কোথাও যাবো না। এইযে আমি তোর কাছে।
রেহান আরও কাছে এসে আমাকে আগলে রাখলো।

ঠান্ডায় গলা বসে গেছে তার উপর ভীষণ জ্বর নিয়ে দুদিন কাটলো।
এই দুদিন রাত-দিন রেহান আমার সেবা করলো। নিজের হাতে রান্না করে মুখে তুলে খায়িয়ে দিলো। ঔষধ খাওয়ালো।
দুদিন পরে অনেকটা সুস্থ বোধ করছি।

বিকেলে রেহান কফি এনে দিলো।চাদর মুড়ি দিয়ে বসে কফি খাচ্ছি।রেহানও পাশে বসে আছে।
– হিয়া..
– হুম?
– তুই স্বপ্ন দেখেছিস কেন জানিস?
– কেন?
– তোর মনে ভাবনা ছিলো, তাই।
– আমি তো এমন টা ভাবিনি।
– এমন টা ভাবিসনি হয়তো, কিন্তু তোর মনে আরফিনকে নিয়ে অস্বস্তি ছিলো।
– হয়তো ছিলো।।
আমি তোমার সাথে মিস বিহেইভ করেছি।সরি।
– ধুর। আমাদের মনে হয় এই টপিকে কথা বলার কিছু নেই।
– আছে।
– কি?
– আফরিনকে নিয়ে আমি তোমাকে কিছু বলবো না। কারণ আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর। কিন্তু একটা সত্যি কথা হলো তোমাদের একসাথে দেখলে আমার কেমন কেমন অশান্তি লাগে।
– হাহাহা… জেলাস?!
– হা জেলাস।
– শুন, এখন তোকে ছাড়া কারো কথা কল্পনায়ও আসে না।
আর একটা কথা কি জানিস?
– কি?
– আমার প্রতি বিশ্বাস হারাবি না কখনো। আর মনে যদি একটু খচখচ থাকে সেটা কিন্তু ধীরে ধীরে অনেক বড় হয়ে যায়। তাই যেকোনো কিছু খোলা মনে শেয়ার করবি।এতো দিন যেমন করেছিস। আর আফরিনের সাথে সেদিন অনেক কথাই হয়েছে। ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবিস না যে আমার লাইফে ব্যাক করবে!
– ঠিক বলেছো! আমার চিন্তা ভাবনা সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
– সংকীর্ণ না।তুই যেটা ভেবেছিস সেটা শংকা।
তুই ছাড়া আমার লাইফে আর কোনো দিন কেউ আসবে না। এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিলাম।

চলবে….