বুকের ভিতর রাখবো তোকে পর্বঃ১২

0
1934

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:12
#Writer: Doraemon(Ayesha)

অরণ্য সোফায় শুয়ে আছে। কিন্তুু অরণ্যের চোখে ঘুম নেই। নিজের অজান্তেই অরণ্যের চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছে। কারণ আজকে অরণ্য তার পাখিকে বাসর ঘরে থাপ্পড় মেরেছে। অরণ্য মনে মনে বলতে লাগল
–তুমি কবে আমাকে বুঝবে পাখি! আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তা কি তুমি বুঝতে পারো না! আজকে আমি আমার বউটাকে থাপ্পড় মারলাম। ছিহ নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগছে। আচ্ছা পাখি কি কোনোদিনও আমায় ভালোবাসবে না! যেইদিন আমি এই পৃথিবীতে থাকব না সেইদিন পাখি বুঝবে যে আমি কত ভালোবেসেছিলাম আমার পাখিকে।
বেশ কিছুদিন হয়ে গেল পাখি আর অরণ্যের বিয়ের। অরণ্য পাখিকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় পাখি না চাওয়া সত্তেও। অরণ্য সোফায় ঘুমায় আর পাখি খাটে ঘুমায়। একদিন পাখির মাঝরাতে ঘুম ভাঙে কারণ পাখির পানির পিপাসা লেগেছিল। আর তাই পাখি পানি আনতে জগটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে দেখল অরণ্য সোফায় নিস্পাপ শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে। ঘুমালে কাউকে এতটা সুন্দর লাগে তা পাখির কাছে অজানা ছিল। পাখি অরণ্যের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরণের উপরের সার্টের তিনটা বোতাম খোলা থাকায় পাখি দেখতে পেল অরণ্যের বুকের বাম পাশে একটা ক্ষত চিহ্ন। পাখি অরণ্যের আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে দেখতে পেল অরণ্যের বুকের বাম পাশে পাখির নাম লেখা আর তা লেখা হয়েছে কোনো দাড়ালো ছুরি দিয়ে। এটা দেখে পাখির অজান্তেই নিজের চোখের কোণে পানি জমে গেল আর মনে মনে পাখি বলল
–তার মানে কি স্যার আমায় সত্যিই……
পাখি পানি আনতে চলে গেল৷ তারপর পানি খেয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল।
আজকাল পাখির মনটা ভীষণ খারাপ লাগে কারণ পাখি তার মা, বাবা, বোনকে অনেকদিন দেখে না৷ একদিন পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমি আমার পরিবারকে দেখতে যেতে চাই আমাকে নিয়ে যাবেন?
–আমি কি আমার বউয়ের আবদার না রেখে পারি! আজকেই আমরা যাবো।
পাখি ভীষণ খুশি। অরণ্য গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাখি অরণ্যের পাশে বসে খুশিতে হাসছে। অনেকদিন পর পাখির মুখে হাসি দেখে অরণ্যের মনটাও খুব ভালো লাগছে৷ হঠাৎ পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার গাড়ি থামান।
–কেন পাখি? গাড়ি থামাবো কেন?
–স্যার বাইরে হাওয়াই মিঠাই দেখতে পেলাম। আমার হাওয়াই মিঠাই খেতে ভীষণ ভালো লাগে। আমাকে এনে দিন না স্যার প্লিজ?
অরণ্য পাখির কথায় মুচকি হাসল। এই ভেবে যে পাখিটা এখনও বাচ্চাই রয়ে গেল। অরণ্য গাড়িটা থামাল। অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–ঠিক আছে পাখি। তুমি বসো আমি তোমার জন্য হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসছি।
–না স্যার আমিও আপনার সাথে যাবো।
পাখির হাসি মুখ দেখে অরণ্য আর বারণ করতে পারল না। অরণ্য পাখিকে বলল
–ঠিক আছে বউ আমার চলো।
অরণ্য আর পাখি গাড়ি থেকে নেমে হাওয়াই মিঠাই নেওয়ার জন্য গেল।
অরণ্য হাওয়াই মিঠাই ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–চাচা সব গুলো হাওয়াই মিঠাই আমি কিনতে চাই। এগুলোর দাম সব মিলিয়ে কত হবে?
পাখি অরণ্যের কথা শুনে অবাক। পাখি অরণ্যকে বলল
–আরে স্যার আমি কি রাক্ষসী নাকি যে সবগুলো হাওয়াই মিঠাই খাবো? আমার দুটো হলেই চলবে।
অরণ্য হেসে হেসে পাখিকে বলল
–তাই নাকি? কিন্তুু আমি তোমাকে সব গুলো হাওয়াই মিঠাই কিনে দিতে চাই।
একসময় পাখির অনেক জোরাজোরি করার পর বাধ্য হয়ে অরণ্য সবগুলো কিনতে না পেরে অরণ্য অন্তত পাখিকে দশটা হলেও হাওয়াই মিঠাই কিনে দেয়। পাখি খুব খুশি কারণ সবগুলো হাওয়াই মিঠাই পাখির হাতে। পাখি নাচতে নাচতে অরণ্যকে ফেলে রেখেই গাড়িতে যাওয়াই উদ্দেশ্যে রাস্তা পাড় হতে লাগল। আর এমন সময় একটা ট্রাক পাখির একদম পাশ থেকে আসতে লাগল। পাখির কোনো খেয়াল নেই। কিন্তুু অরণ্য তা খেয়াল করল। অরণ্য পাখিকে দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ওপাশে ফেলে দিয়ে নিজে ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে রাস্তার আরেকপাশে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। অরণ্যের সাড়া শরীরে রক্ত পড়ছে। পাখি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় অরণ্য ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পাখি এটা দেখার সাথে সাথে জুড়ে অরণ্য বলে চিতকার দিল। অরণ্য এই প্রথম পাখির মুখে শুধু অরণ্য ডাকটা শুনতে পেয়েছে। পাখি দৌড়ে এসে অরণ্যকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলতে লাগল
–অরণ্য আপনার কিছু হবে না!!! আমি আপনার কিছু হতে দিব না।
অরণ্য পাখির গালে হাত দিয়ে হেসে হেসে বলল
–পাখি আজকে তুমি মুক্ত। আমি বলেছিলাম না যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন তুমি মুক্তি পাবে। আজ তুমি মুক্ত পাখি।
এটা বলেই অরণ্য তার দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। পাখি অরণ্যকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অরণ্য বলে এক চিতকার দিল। পাখি কান্নায় ভেঙে পড়তে লাগল। পাখি চিতকার করে বলতে লাগল
–আমি আপনাকে ভালোবাসি অরণ্য। আমি আপনাকে এতদিন মুখ ফুটে বলতে পারে নি। আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেন না। কিছুতেই না। আপনার যদি কিছু হয়ে যায় আমিও বাঁচব না। নিজেকে শেষ করে ফেলব আমি।



#চলবে?