বুকের ভিতর রাখবো তোকে পর্বঃ০৯

0
1647

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:09
#Writer: Doraemon(Ayesha)

পাখি ফোনটা কেটে দেওয়াতে অরণ্যের মনটা খারাপ হয়ে যায়। অফিসের মিটিংয়ে গেলেও অরণ্যের মন পাখির কাছেই পড়ে থাকে। পাখিকে একটু না দেখলে যেন অরণ্যের মনে শান্তি হয় না। অরণ্য মনে মনে বলল
–পাখি তুমি আরেকটুও তো আমার সাথে কথা বলতে পারতে। আমার সাথে কেন তুমি এমন করো! আমি যে তোমাকে কতটা ভালোবাসি কেন তুমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকো। না আমাকে এই মিটিং জলদি শেষ করে আমার পাখির কাছে যেতে হবে।
অরণ্যের কথায় পাখি বেশ কিছুদিন হিজাব পড়ে। হিজাব পড়তে পাখির ভালো লাগে না কিন্তুু অরণ্যের থাপ্পড় থেকে হিজাব ভালো ভেবে পাখি এই কয়দিন হিজাব পড়ে। কিন্তুু আজ অরণ্য গাড়ি করে পাখিকে কলেজে পৌঁছে দিতে আসবে না দেখে পাখি এই সুযোগটা কাজে লাগায়। অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো গায়ে ওড়নাটাও পাখি পড়ে নি। বিনা ওড়নায় এবং অত্যন্ত টাইট হাত কাটা নীল রংয়ের থ্রি পিজ পড়ে, অনেক সেজে গুজে পাখি অরণ্যের পাঠানো গাড়ি করে কলেজ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। গাড়ির পেছনে বসতে যাওয়ার আগে পাখি লক্ষ্য করল গাড়ির ড্রাইভার তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। পাখি এটা দেখে অসহ্য লাগলেও কিছু করার নেই। অরণ্যের কাছ থেকে রেহাই পেতে পাখি এর থেকে ভালো উপায় পায় নি। পাখি অবশেষে আধ ঘন্টা পর কলেজ পৌঁছাল। কলেজে ঢুকার পর পাখি দেখল কলেজের ছেলেরা পাখির দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মেয়েরা পাখিকে এভাবে দেখে একে অপরের সাথে কানাকানি করছে। পাখির দিকে শিক্ষকরাও ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাল। যেসব শিক্ষকরা পাখিকে ভালো জানত আজ তারাও পাখিকে ভুল বুঝল৷ এতে পাখির কস্ট হলেও তার কিছু করার নেই। খুব কস্ট করে কলেজের ক্লাসগুলো করে পাখি ক্লাস থেকে বের হলো। মাঠ দিয়ে যেতে গেলে পাখির সাথে কয়েকটা ছেলে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে। পাখি প্রথমে ওদের ইগনোর করতে যেয়েও যখন দেখল অরণ্য এসেছে তাকে নিতে তখন পাখি ঐ ছেলেগুলোর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে লাগল। ছেলেগুলোর মধ্যে একটি ছেলে পাখিকে বলল
–পাখি আজকে তোমাকে তো পুরোই হট লাগছে। আমিতো তোমার রূপ দেখে পুরোই ফিদা হয়ে গেছি।
পাখির এসব কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও অরণ্য দূর থেকে পাখিকে দেখছে এটা দেখতে পেয়ে পাখি ছেলেটাকে বলল
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ঐদিকে অরণ্যের মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছে। পাখিকে এভাবে বিনা ওড়নায় এমন টাইট জামাকাপড় আবার ছেলেদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে দেখে অরণ্যের বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। রাগে অরণ্যের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে সাথে চোখের কোনে পানি স্পষ্ট। পাখির এমন অবস্থা দেখে অরণ্য মনে মনে বলল
–পাখি আজকে তুই বেশী বাড় বেড়েছিস তাই না! আমি যেই না তোকে কলেজ দিতে আসতে পারলাম না ওমনি তুই এমন করলি৷ আমার বারণ তুই শুনলি না। তাহলে দেখ আজকে আমি তোর কি হাল করি। তুই আমার ভালোবাসাকে এভাবে অপমান করলি৷ এর শাস্তি তোকে পেতেই হবে৷
অরণ্য ধীরে ধীরে পাখির কাছে গেল। ছেলেগুলো অরণ্যকে দেখে ভয়ে পালিয়ে গেল। পাখির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। পাখি নিজেও জানে না তার আজকে কি অবস্থা হবে কিন্তুু পাখি এটা জানে আজ অরণ্য তাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করে চলে যাবে আর পাখি এই মিথ্যে ভালোবাসার খেলা থেকে মুক্তি পাবে। অরণ্য পাখির খুব কাছে এসেই
— ঠাসসসসসসসসসস। তোর সাহস কি করে হয় হিজাব ছাড়া রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর। তোর বুকে তো ওড়নাটাও নেই। ছেলেদের শরীর দেখাতে তোর খুব ভালো লাগে তাই না?
–আ আ আপনি আমার সাথে এমন করে কথা বলতে পারেন না। আমি আমার মন মতোই চলব। আমার যা ইচ্ছে তাই করব। আপনি বাঁধা দেওয়ার কে?
–ঠাসসসসসস। আমি তোর কে! কেন রে তুই জানস না আমি তোর কে! একমাস পর তুই আমার বউ হবি বলেছিলাম আর তুই জানস না আমি তোর কে হই?
বাসায় চল আমি তোকে বুঝিয়ে দিচ্ছি আমি তোর কে হই।
–আমি আপনার সাথে যাবো না।
–তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে।
বলেই চুলের মুঠি ধরে কলেজের সবার সামনে টানতে টানতে অরণ্য পাখিকে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই হা করে ওদের দুজনকে দেখছে।
–আমার চুলে ব্যথা লাগছে। আমায় ছাড়ুন প্লিজ।
–কেন রে গায়ে ওড়না দেওয়ার সময় তোর মনে ছিল না? তাহলে তো আর আমাকে এত কস্ট করতে হতো না ।
পাখি কান্না করছে। আকুতি মিনুতি করছে। কিন্তুু অরণ্যের কানে তো কিছুই পৌছাচ্ছে না।
–স্যার প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন আমার চুলে ব্যথা লাগছে।
–তোকে আজ আমি এই ভুলের শাস্তি দিব আগে চল তুই।
অরণ্য পাখিকে এবার নিজের আসল বাড়িতে নিয়ে যায়। অরণ্যের মা সোফায় বসে টিভি দেখছিল। অরণ্যের মা অরণ্য আর পাখিকে এভাবে দেখে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। অরণ্যের মা দেখল পাখির চুল অরণ্য খুব জোরে চেপে ধরে রেখেছে যার কারনে পাখি কাঁদছে। অরণ্যের মা অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–খোকা এই মেয়েটি কে? আর তুই এভাবে মেয়েটির চুল ধরে রেখেছিস কেন? ওকে ছাড়। দেখছিস না মেয়েটি কাঁদছে।
–মা তুমি জানো না এই মেয়েটা কত বড় অপরাধ করেছে। এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে। অরণ্যের মাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অরণ্য সোজা পাখিকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে নিজের বেডরুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
পাখি কান্না করতে করতে অরণ্যকে বলল
–আমাকে যেতে দিন স্যার।
–তোর সাহস কি করে হলো এরকম জামাকাপড় পড়ে কলেজ যাওয়ার !
–স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। স্যার আমি খুব খারাপ মেয়ে। আমাকে ভালোবাসা বৃথা। দেখেন না আমি বাজে জামাকাপড় পড়ি, বাজে ছেলেদের সাথে কথা বলি। আমাকে আপনি মুক্তি দিয়ে দিন।
–আমার কাছে তুমি মুক্তি চাও তাই না পাখি?
পাখি অরণ্যের এরকম স্বাভাবিক ব্যবহার দেখে অবাক হলো। পাখি ভাবল এবার মনে হয় এই মিথ্যে ভালোবাসা থেকে সে মুক্তি পাবে। তাই পাখি অরণ্যকে বলল
–হ্যা স্যার আমি আপনার কাছে মুক্তি চাই।
–তাহলে তোমার ইচ্ছাই পূরণ হোক পাখি। তুমি আজকে মুক্তি পাবে।
আমি আজকেই তোমাকে মুক্তি দিব।
অরণ্য কাকে যেন কল করল।
অরণ্য কি সত্যি পাখিকে মুক্তি দিবে নাকি অন্য কিছু অপেক্ষা করছে পাখির জীবনে!



#চলবে?