ভাগ্য ৪ পর্ব

0
1031

#ভাগ্য ৪ পর্ব

খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে, সামনে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে এগিয়ে গেলাম ভাবলাম এক গ্লাস পানি খাবো আর কিছুক্ষণ বসে রেষ্ট নিবো। আমি রেস্টুরেন্ট যেয়ে পানি খেতে চাইলাম, এক লোক পানি হাতে দিয়ে জানতে চাইলো আর কিছু খাবো কি না।
আমি বললাম আমার কাছে টাকা নেই, একটা টেবিল খালি পেয়ে চেয়ার টেনে বসলাম।
কয়েক মিনিট পর ওয়েটার এসে বলল, মেম আপনি টেবিল খালি করে দেন প্লিজ।
আমি বের হয়ে আসলাম রেস্টুরেন্ট থেকে, আমার পিছন পিছন চারজন লোক এসে আমার সামনে দাড়ালো।

কি করছেন, কে আপনারা, আমার হাত ছাড়ুন।
আমার কথার উত্তর না দিয়ে লোকগুলো বলাবলি করছে, মেয়েটা বাঙালী, অনেক দিনের স্বাদ ছিল বাঙালী নারীর সঙ্গে মাস্তি করব।
দুইজন লোক আমার দুইহাত চেপে ধরে অন্য দুইজনকে বলছে, তাড়াতাড়ি কার নিয়ে আসতে।
আমি মনে মনে ভাবলাম আমার কপালটাই খারাপ না হলে ইজ্জত বাঁচাতে পালিয়ে এসে আবার আদিবের মত নরপশুর হাতেই পড়লাম।

এই কি করছেন, ছাড়েন বলছি, না হলে এখনি ট্রাফিক পুলিশ ডাকব, এতো বড় সাহস আমার ওয়াইফের হাত ধরে টানাটানি করেন।

আচমকা একজন এসে এই কথা গুলো বলল, কথা গুলো শুনে শয়তান চারজন লোক ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
আমি লোকটাকে কৃতজ্ঞতা চোখে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিলাম।

সরি আমি আপনাকে আমার ওয়াইফ বলেছি বলে, এটা না বললে লোক গুলো আপনাকে ছেড়ে দিতো না, আপনাকে তাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ওয়াইফ বলেছি।
আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন বলেন, আমি আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আছি।

আমার থাকার মত কোনো জায়গা নেই যেখানে আপনি আমাকে পৌছে দিয়ে আসবেন।
আমার কথা শুনে লোকটা অবাক হলো, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি আমি, লোকটা যদি আজ আমাকে শয়তান লোকদের হাত থেকে না বাঁচাতো তাহলে কি হতো, আর লোকটাই বা কেন আমাকে বাঁচাতে আসল, নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিল।
আমি লোকটার কাছে জানতে চাইলাম, সে কেন আসল আমাকে রক্ষা করতে, আর সে কে।

আমি হাসিব আহমেদ স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে পড়তে আসছি, পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করি।
বাংলাদেশে মা বাবা ভাই আছে, আমি এখন ডিউটি শেষে রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে আসছিলাম।
দেখলাম আপনি রেস্টুরেন্টে এসে পানি খাইতে চাইলেন, ওয়েটার আপনাকে খাবার অর্ডার করতে বললেন, আপনি বললেন খাবেন না, খালি টেবিল পেয়ে বসলেন সেখান থেকে ওয়েটার আপনাকে তুলে দিল।
সবকিছু আমি লক্ষ করছিলাম আর আপনার চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম আপনি কোনো প্রব্লমে আছেন, তাই আপনার পিছু পিছু আমিও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েছি। তারপর দেখলাম লোকগুলো আপনার সঙ্গে অসভ্য আচরণ করছে।
একজন বাঙালী হিসেবে আমার দায়িত্ব একজন বিপদগ্রস্ত বাঙালীকে সাহায্য করা, সেই দায়িত্ববোধ থেকেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসলাম।

লোকটা মানে হাসিবের কথা শুনে মনে হলো সব পুরুষ মানুষ আদিবের মত না, পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ আছে মনুষ্যত্ববোধ আছে।
হাসিব জানতে চাইলো আমি এইদেশে কিভাবে আসলাম।
রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে আমার জীবনের ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু তাকে বললাম।
হাসিব জানতে চাইল, আপনি এখন কোথায় যাবেন, কিছু চিন্তা করেছেন।
তার প্রশ্নে আমি নিশ্চুপ, কি বলল, কোথাও যাবার তো জায়গা নেই।

আমি বুঝতে পারছি আপনার যাবার কোনো জায়গা নেই। কিন্তু মেয়ে মানুষ হয়ে এভাবে যদি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেন, খারাপ লোকদের খপ্পরে পড়বেন।
আপনি যদি চান আমার ফ্ল্যাটে থাকতে পারেন।
আমার পড়াশোনা শেষে যখন আমি বাংলাদেশে চলে যাবো তখন আপনি আমার সাথে যেতে পারবেন, আমি আপনাকে আপনার মা বাবার কাছে পৌছে দিয়ে আসব।

হাসিবের কথায় আমি আস্থা খুঁজে পেলাম, সে এক মুহূর্তে আমার আপনজনের জায়গা দখল করে নিলো।
যেখানে কেউ কারো সাহায্যে এগিয়ে আসেনা, সেখানে অপরিচিত একজন মানুষ আমাকে তার ফ্ল্যাটে আশ্রয় দিতে রাজী হলো, আমার আর কি বা বলার থাকতে পারে, সে আমার জন্য যা করতে চাইছে, এখন তো নিজের মানুষও নিজের মানুষের জন্য এইটুকু করেনা।

আপনি মনে হয় ক্ষুদার্ত কিছু খেয়ে নেন,
এটা বলেই হাসিব এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ল, আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
আমি তার সাথে সাথে গেলাম,সে কিছু খাইলো না, আমি খাইলাম সে বসে রইল।
বললাম আপনি কিছু খান,
আপনি যেই রেস্টুরেন্টে পানি খেতে গিয়েছিলেন সেখানে আমি খেয়েছি, এখন আর কিছু খেতে পারব না।

খাবার পর কিছুক্ষণ হেটে হাসিবের ফ্ল্যাটের সামনে আসলাম।
আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি একা থাকেন, না কি আরো কেউ থাকে আপনার সাথে।

তুহিন থাকে আমার সাথে সেও পড়াশোনা করে এবং পার্ট টাইম জব করে, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না তুহিন ভালো ছেলে তাকে আমি বুঝিয়ে বললে সে কিছু বলবে না।

হাসিবের কাছে চাবি আছে সে দরজা খুলে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল, তুহিনকে ঘুম থেকে তুলে বলল,

শুন আমি তোর রুমে ঘুমাব একটা মেয়ে খুব বিপদে পড়েছে তাকে আমার সাথে করে নিয়ে আসছি, সে আজ থেকে এখানেই থাকবে।

হাসিবের কথায় তুহিন খেপে গেল,
কি বলছিস তুই, চিনিস না জানিস না রাস্তা থেকে এক মেয়ে সঙ্গে করে নিয়ে এসে বলছিস আমাদের সাথে থাকবে, তুই কি পাগল হয়ে গেলি, তোর মতলব কি বলতো হাসিব।

হাসিব তাকে সব বুঝিয়ে বলল, আমার সাথে যা যা ঘটেছে, হাসিব আরো বলল, এই মেয়ে যদি তোর বা আমার নিজের কেউ হতো তাহলে কি পারতি রাস্তায় ফেলে রেখে চলে আসতে, আমিও রেখে চলে আসতে পারিনি, কেন জানি মনে হলো খুব আপন।

হাসিবের রুমে আমাকে রেখে, হাসিব তুহিনের রুমে চলে আসল।
হাসিব বাহিরে খাবার খায়, আর আমার জন্য বাহির থেকে খাবার কিনে নিয়ে আসে, ভেবে দেখলাম দুইজনের জন্য খাবার কিনতে অনেক টাকা লাগে, হাসিবকে বললাম, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি।
বলেন, আপনি কি বলতে চান, হাসিব বলল।
আপনি বাজার করে নিয়ে আসবেন আমি রান্না করব, এমনিতে দুইজনের জন্য খাবার কিনতে অনেক টাকা লাগে, রান্না করে খেলে ততটা খরচ হবেনা।
আমার কথায় হাসিব বলল, আপনার যদি কষ্ট না হয়, আপনি যা বলছেন তাই হবে, তুহিনকেও বলব আমাদের সাথে খেতে।
ঠিক আছে বইলেন, রান্না করতে কি কষ্ট হবে আমার আমি তো আগেও রান্না করেছি, সারাদিন আমার তো কোনো কাজ নেই রান্নাবান্না করলে সময়টা কাটবে।
হাসিব আমার দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেল।

ভার্সিটি থেকে আসার সময় হাসিব রান্নার করার জন্য যাবতীয় জিনিসপত্র ও বাজার করে নিয়ে আসে।
রান্না শেষে আমি হাসিব আর তুহিনকে খাবার খেতে দেই , তুহিন বলছেন, আপু আপনিও আমাদের সঙ্গে বসে খান।
আমি বললাম, না ভাইয়া আপনারা খান আমি পরে খাবো।

আপনি কি আমাদেরকে পর ভাবেন, একসঙ্গে খাবার খেতে প্রব্লেম কি, কোনকিছুতে সংকোচ বোধ করবেন না, মনে করবেন আমরা আপনার নিজের লোক।

আমি আর না করতে পারলাম না হাসিবের কথা শুনে, তাদের সাথেই খেতে বসলাম।
কেউ আমাকে কখনো এমন করে বলেনি, সবাই কালো বলে তাচ্ছিল্য করছে, নিজের পরিবার ব্যতীত কেউ কোনদিন আমাকে ভালোবাসেনি, হয় অবহেলা করেছে নয় করুনার চোখে দেখেছে।

চলবে,,,,

সাদমান হাসিব সাদ