ভালোবাসব যে তোকে? পার্ট ১৭

0
3302

#ভালোবাসব_যে_তোকে?
পার্ট ১৭
লেখিকাঃসারা মেহেক

??

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে মুখে পরায় ঘুম ভেঙে যায় মৌ এর।আয়ানের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে সে।খুব ভালো লাগছে এভাবে আয়ানের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাতে। মনে হচ্ছে এভাবেই ঘুমিয়ে থাকতে কিন্তু এতো সময় ঘুমালে যে বাড়ীতে আসা মেহমান ভালো চোখে দেখবে না তা সে ভালো করেই জানে।তাই মৌ উঠতে চাইলো। কিন্তু আয়ান এমনভাবে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যে তার উঠার কোনো উপায় নেই।
মৌ আস্তে করে বলছে,

“এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে,কে বলবে যে মহারাজা ঘুমিয়ে আছে!!”

“”কাউকেই বলার দরকার নেই।আমাকে ঘুমাতে দে। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ওকে??”

আয়ানের কথা শুনে মৌ অবাক হয়ে যায়। কারন সে ভেবেছিলো আয়ান ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু তা তো না।
মৌ অবাক স্বরে বললো,

“তুমি কখন জাগলে!!”

আয়ান চোখ বন্ধ রেখেই বলে,

“কিছুক্ষণ আগেই।আর তুই একটু চুপ থাকতো।”

“আরে!!কিসের চুপ থাকবো হুম??বউ মানুষ এতো দেরি করে ঘুৃম থেকে উঠলে বাড়ীতে আসা মেহমানরা নানা কথা শুনাবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে,ঠিক আছে যা।”

“আর তুমি আরামসে ঘুমাও। দেয়ার ইজ নো ডিস্টার্বনেস….”বলেই মৌ শাওয়ার নিতে চলে গেলো।

শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মৌ ভিজা চুল নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ীয়ে আছে।আয়না থেকে বিছানায় ঘুমানো আয়ানের উপর নজর পরলো মৌ এর।

“আহা,কি ঘুমটাই না ঘুমাচ্ছে। মন চাচ্ছে হয় এভাবে ঘুমাই নাহয় এর ঘুমটাই নষ্ট করে দিই।যেহেতু আমি এখন ঘুমাতে পারছি না,তাই ঘুম নষ্টা করাটাই বেটার।”এ বলে মৌ দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।তারপর সে আস্তে আস্তে আয়ানের কাছে গিয়ে দাড়াঁলো। এরপর তার ভিজা চুল থেকে যে পানি পরছে তা আয়ানের মুখে ছিটিয়ে দিলো।
ব্যস পানির কয়েক ফোটা পরার সাথে সাথে আয়ানের ঘুম ভেঙে যায়।সে বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে দেখে মৌ তার সামনে দাড়ীঁয়ে আছে।
ভিজা চুলে শাড়ী পরিহিতা এক অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী লাগছে মৌ কে দেখতে। মৌ এর এ রুপ দেখে আয়ানের ঘুম আর চোখে থাকলো না। ঘুমকে দুরে ঠেলে দিয়ে সে এখন মৌ কে দেখতে ব্যস্ত। সে একনজরে দেখেই যাচ্ছে মৌ কে। আর মৌ এটা বুঝতে পেরে লজ্জায় সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে আয়ান তার হাত ধরে ফেলে আর নিজের উপর ফেলে দেয় তাকে।

আয়ান মৌ এর সামনের চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে নেশাভরা কন্ঠে বলে,

“সকাল সকাল এমন রুপে না আসলে কি হতো না তোর?? সুন্দর ঘুমটাই তো নষ্ট করে দিলি তুই।”

“আমি তোমার ঘুমটা নষ্টা করার জন্যই এমন করেছি।”

“আর কোনো ওয়ে কি নেই ঘুম নষ্ট করার??”

“উহুম আর নেই। পানি ছিটানোই বেস্ট ওয়ে।”

“কিন্তু যাই বলিস এভাবে ঘুম ভাঙানো আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।এক কাজ করবি,প্রতিদিন সকালে এভাবে আমার ঘুম ভাঙাবি।”

মৌ এটা শুনে নিজেকে আয়ানের কাছ থেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

“বাহ রে..শখ কতো…প্রতিদিন এভাবে ঘুম ভাঙাবো!!!আমার তো আর কাজ নেই তাইনা??
এক কাজ করবোনে প্রতিদিন এক মগ করে, দরকার পরলে এক বালতি পানি ঢালবো তোমার ঘুম ভাঙার জন্য।”

“আরে আরে এমন করছিস কেনো??আমি না তোর স্বামী… আমি যেভাবে চাইবো সেভাবেই আমার ঘুম ভাঙাবি না??”

“নাহ পারলাম না।আর এখন উঠো।আমি নিচে গেলাম।দেখি কেউ উঠেছে নাকি।”

এ বলে মৌ মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিচে গেলো।
সে গিয়ে দেখলো এখনো কেউ বের হয়নি রুম থেকে।

“এখনো যেহেতু কেউ বের হয়নি রুম থেকে,তাহলে আমি একটু অহনার সাথে কথা বলে নিই।”

এরপর মৌ রুমে এসে দেখলো আয়ান এখনো শুয়ে আছে।এ দেখে সে কিছু না বলে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো অহনাকে ফোন করতে।প্রথমবার রিং হওয়ায় ফোন ধরেনি অহনা।দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ফোন রিসিভ করে অহনা।ঘুমমিশ্রিত কন্ঠে হ্যালো বলে সে।

মৌ শুনে বলে,

“কি ব্যাপার অহনা??এখনো উঠিসনি ঘুম থেকে!!!ফাহাদ ভাইয়া কি কালকে ঘুমাতে দেয়নি নাকি??”

মৌ এর এ কথা শুনে অহনা শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো।

“তোর আউল ফাউল কথাবার্তা বন্ধ করতো।এমনিই সকালের ঘুমটা ভেঙে দিলি।আর তুই যা মনে করছিস এমন কিছুই কালকে হয়নি বুঝলি??সবাই কি আর তোর মতো নাকি??”

অহনার এ কথা শুনে মৌ আর কিছু বলতে পারেনা।
অহনা আবার বলে,

“তোরা দুৃ্জন তো কালকে রাতে ঘুমাইসনি মনে হয়।।তারপরও এতো তাড়াতাড়ি উঠলি কিভাবে?? ”

“ওসব কথা বাদ দে তো বজ্জাত মেয়ে একটা।
তুই জলদি গিয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে সব মেহমানদের সাথে পরিচিত হ।”

“সেটা তো আমি করবোই নে।এ আবার বলা লাগে নাকি??”

“বাব্বাহ,,মেয়ে তো দেখি সবই জানে।”

“তা নয়তো কি?”

“আচ্ছা যা তাহলে পরে কথা বলছি।”

এরপর মৌ রুমে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ীয়ে থাকে।আয়ান এখনো শুয়ে আছে।এ অবস্থাতেই সে বলে,

“অহনা ঠিক আছে তো??”

“হুম একদম ঠিক।আর তুমি কখন উঠবে বলতো।।।”

“আরে আরে উঠছি। এমন করিস কেনো?”

মৌ আর কিছু না বলে নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো প্রায় সবাই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। এ দেখে মৌ রান্নাগজরে সবার জন্য চা বানাতে গেলো। চা বানাতে বানাতে আয়ানও নিচে চলে আসলো।এসেই ওর কাজিনদের সাথে আড্ডা দেওয়া শুরু করলো। বড়রা সব নিজেদের মতো কথাবার্তা বলছে।
চা বানানো শেষে সবাইকে চা দিলো মৌ।আয়ানের কাছে গিয়ে প্রথমে তাকে চা দিলো। এরপর বাকি সবাইকে। এর মধ্য ইমনও আছে। আয়ানের কিছু কাজিন আছে আয়ানের এজ এর, কিছু আছে তার থেকে ছোটো।সবাই মৌ এর হাতে বানানে চা খেয়ে মৌ আর প্রশংসা করতে লাগলো।ইমনও মৌ এর হাতের চা খেয়ে খুব ইমপ্রেস। সে বারবার মৌ এর দিকে তাকাচ্ছে।এটা মৌ ও খেয়াল করছে আর আয়ানও।ইমন এর এভাবে তাকানোতে মৌ এর অনেক অস্বস্তি বোধ হতে থাকে। সে চলে যাবে কিন্তু তার আগেই ইমন বললো,

“আরে মৌ, তুমি চলে যাচ্ছো কেনো??”

আয়ান ইমন এর কথা শুনে খুব রেগে গেলো। সে রাগতো স্বরে বললো,

“ইমন,তুই মৌ কে নাম ধরে কেনো ডাকছিস??ও তোর ভাবি হয়।”

“কিছুই হবে না রে।মৌ তো এজের দিক থেকে আমার ছোটো।”

“ছোটো তো কি হয়েছে। সম্পর্কের দিক দিয়ে ও তোর ভাবি হয়। সো ওকে ভাবি বলে ডাকবি।”

“ওপস,সরি।আচ্ছা, ভাবি বলেও ডাকবো।
তো মৌ ভাবি,আপনি আমাদের সাথে বসুন। কিছু কথাবার্তা বলি।”

মৌ স্বাভাবিকভাবেই বলে,

“নাহ ভাইয়া,থাক।আমি এখন বসতে পারবো না। আমার কিছু কাজ আছে।”

মৌ এর কথা শুনে ইমন আর কথা বাড়ালো না।

দিনটা ভালোমতোই কাটলো সবার। পরেরদিন একে একে সবাই যে যার বাসায় যাওয়া শুরু করলো।মেহমান বলতে এখন শুধু ইমনই আছে।সে প্ল্যানিং করেছে আরো এক সপ্তাহ থাকবে দেশে।তার এ প্ল্যানিং শুনে আয়ান আর মৌ কারোরই ভালো লাগলো না। তারা কেউ চাচ্ছে না যে ইমন থাকুক।কিন্তু কিছুই করার নেই।

আয়ান আজকে থেকে অফিসে যাওয়া শুরু করলো।তার মন একদমই মানছিলো না মৌ কে একা রেখে যেতে। যদিও বাসায় তার আম্মু আর দাদি আছে,তবুও মনের মধ্য একটা ভয় থেকেই যায়।তাই অফিসে গিয়ে সে সুযোগ পেলেই মৌ এর সাথে কথা বলছে।

আয়ান মনে মনে ভাবে,

“এভাবে টেনশন করা যায় না।আজকেই বাসয় গিয়ে আমি ইমনকে চলে যেতে বলবো।এতে সে যা মনে করার করুক।”

এরপর আয়ান আবার অফিসের কাজে মন দিলো।

বিকালে মৌ ছাদে দাঁড়ীয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই সে আম্মু আর দাদির সাথে গল্প করে আসলো।বিকালের পরিবেশটা উপভোগ করার জন্য সে ছাদে এসে দাড়াঁলো। কিছুক্ষণ পরই আয়ানের ফোন আসলো,

“কি করিস তুই??”

“তেমন কিছুই না। ছাদে দাঁড়ীয়ে আছি।”

“ওহ।আচ্ছা ইমন কোথায়??”

আয়ানের এ প্রশ্নে স্পষ্ট উদ্বিগ্ন বুঝতে পারলো মৌ।সে বললো,

“উনি রুমেই আছে। দুপুরের খাওয়ার পর থেকে রুমেই আছে।”

“ওহ। ভালো।”

“আচ্ছা তুমি কোথায়??কখন আসবে??”

“এই তো কেবল বের হলাম অফিস থেকে। আসছি আমি।”

“ঠিক আছে। ” বলে মৌ ফোন রেখে দেয়।

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দাড়ীয়ে আছে সে।হঠাৎ কেউ পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলো।এতে মৌ প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।সে মনে মনে ভাবলো,এটা আয়ান হতে পারে না।কারন এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে আসা সম্ভব না।
এ চিন্তা করে এক অজানা আতঙ্কে মৌ এর বুক কেঁপে উঠলো।পিছনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখার জন্য মৌ এক ঝটকায় সেই ব্যক্তিটা থেকে নিজেকে ছাড়ীয়ে নিলো।

সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে দেখে মৌ এর ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো। কারন তার সামনে থাকা মানুষটা আর কেউ না বরং ইমন। ইমনকে নিয়ে তার যে ব্যাড ভাইবটা ছিলো তা আজকে সত্য হলো।

মৌ ঘৃনাভরা দৃষ্টিতে ইমন এর দিকে তাকিয়ে আছে।ইমন তা দেখে মৌ কে বললো,

“আরে বেবি,এমন নজরে আমাকে দেখো না তো। আমি তো ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি। ”

মৌ রাগতোস্বরে বলে,

“আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ছোঁয়ার!!!”

“এতে সাহসের কি আছে বেবি??আমার ইচ্ছা করেছে তাই তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি।আর এটা কি প্রথমবার নাকি যে তুমি এমন বিহেভ করছো?”

মৌ এ কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

“মানে!!কি বলতে চাইছেন আপনি??”

“আরে,হলুদের দিনের কথা কি তুমি ভুলে গিয়েছো!!সেদিন তো আমিই তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।”

ইমন এর কথা শুনে মৌ তো মনে হয় আকাশ থেকে পরলো।সত্যিই সে ঐদিনকার ঘটনা ভুৃলে গিয়েছে। এক প্রকার জোর করেই ভুলেছে সে এটা। এই ভেবে নিজেকে বুঝিয়েছে যে ঐটা আয়ান ছিলো।কিন্তু আজকে সে ভুল প্রমাণিত হলো। সেি মানুষটা আয়ান না বরং ইমন ছিলো।

মৌ ঘৃণাভরা কন্ঠে বলে,

“তার মানে আপনি সেদিন ঐ জঘন্য কাজটা করেছিলেন!!!”

“জঘন্যের কি দেখলে তুমি!!আমেরিকায় তো এসব নরমাল।”

“এটা আপনার আমেরিকা না যে এসব করবেন আপনি। আর আমি বিবাহিত। আপনার বন্ধুর স্ত্রী।এটা জানার পরও আপনি কি করে পারলেন এমনটা করতে!!!”

“ওসব বন্ধুর ওয়াইফ বাদ দাও তো।
তোমাকে হলুদের দিন দেখেই আমার তোমাকে অনেক পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে আমার করে পেতে ইচ্ছা করে তোমাকে।তোমাকে ফিল করতে ইচ্ছা করে।”

ইমন এর এসব ফালতু কথা শুনে মৌ নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।রাগে ইমনের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।এতে ইমন প্রচন্ড রেগে যায়।সে মৌ এর হাতটা ধরে ফেলে। হাতটাকে মৌ এর পিঠের দিকে পেঁচিয়ে ধরে সে।

“তোমার সাহস তো কম না।আমাকে থাপ্পড় মারলে তুমি!! এর ফল তো ভোগ করতেই হবে তোমাকে।”

এদিকে মৌ ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।সে আকুতি করে বলে,

“প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন। ”

“নাহ আমি তোর হাতটা আজকে ছাড়বো না।তোকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।”

“আমি আয়ানকে সব বলে দিবো।এরপর আপনার অবস্থার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।”

“সেই অবস্থায় তুমি থাকলে তো আয়ানকে কিছু বলবে।”

মৌ কিছু বলতে যাবে।কিন্তু পারেনা। কারন ইমন তার মুখ চেপে ধরেছে।
ইমন মৌ কে কোলে তুলে নিতে যাবে কিন্তু তার আগেই কেউ ইমনের নাক বরাবর জোরে একটা ঘুষি মারে। এতে সে টাল সামলাতে না পেরে পরে যায়। আর মৌ ছাড়া পেয়ে যায়।তাকে কে মেরেছে এটা দেখার জন্য চোখ তুললে,সে দেখে আয়ান দাঁড়ীয়ে আছে।
মৌ আয়ানকে দেখে সাথে সাথে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর খুব জোরে জোরে কান্না করতে থাকে।আয়ান একদিকে মৌ কে শান্তনা দিচ্ছে।আরেক দিকে ইমনকে ইচ্ছামতো গালি দিচ্ছে।

“তোর বুকের পাটা তো খুব বড় রে ইমন। তুই আমার ভালোবাসার দিকে খারাপ নজর দিচ্ছিস!!! ”

ইমন বলে,

“আরে দোস্ত তুই ভুল বুঝছিস।আমি তো মৌ ভাবির ডাকে ছাদে আসি।”

এটুকুই বাকি ছিলো আয়ানের রাগে ঘি ঢালার জন্য। সে মৌ কে নিজের থেকে ছাড়ীয়ে নিয়ে ইমনকে ইচ্ছামতো মারতে থাকে।এমন মারা মারছে যে আর কিছুক্ষন পর হয়তো সে মারা যাবে এমন অবস্থা তার।মৌ তা বুঝতে পেরে আয়ানকে থামাতে চেষ্টা করে।সে কান্না করতে করতে বলে

“আয়ান ওকে ছেড়ে দাও প্লিজ।ও মারা যাবে তো।”

আয়ান ইমনকে মারতে মারতেই বলে,

“মারা যাক।ওর মতো মানুষের দরকার কি বেঁচে থাকার। ”

“আয়না প্লিজ আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো। পরে আমাদের সবাইকে সমস্যায় পরতে হবে।

মৌ এর এ কথায় আয়ান ইমনকে ছেড়ে দেয়।ইমনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে।উঠে দাড়াঁনোর শক্তি নেই তার।

আয়ান ইমনের কলার ধরে টানতে টানতে ছাদ থেক নিচে নিয়ে আসে।নিচে এসেই সে দাদি আর আম্মুকে জোরে জোর ডাকতে থাকে।আয়ানের এমন ডাকে যে যার রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।তাদেরকে দেখে আয়ান। পুলিশের কাছে ফোন দিয়ে আসতে বলে।

এদিকে মৌ কান্না করেই যাচ্ছে।তার কান্না দেখে দাদি আর আম্মু তার কাছে গিয়ে কান্নার কারন জিজ্ঞাসা করে।মৌ কিছু বলতে পারেনা।
আয়ান রেগে বলে উঠে,

“তোমরা ছিলে কোথায়?? এই বাড়ীতে যে একটা পশু কারোর উপর ঝাপিয়ে পরতো সেটা তো তোমরা জানতেই পারতে না।

আয়ানের আম্মু অবাক হয়ে বলে,

“কি বলছিস তুই!!”

“তোমরা তো কিছুই জানো না।এই ইমন আজকে সুযোগ বুঝে মৌ এর কাছে গিয়েছিলো।আমি যদি সময়মতো না আসতাম তাহলে তো একটা অঘটন ঘটে যেতো আজকে।”

দাদি বলে,

“এসব কি যা তা বলছিস!!!ইমন এ কাজ করবে কেনো!!”

“করবে কেনো মানে!! করার চেষ্টা করেছে।আমার তো হলুদের দিন থেকেই মৌ এর উপর ওর নজর ভালো লাগছিলো না। আবার বিয়ের পরেরদিনও ও কেমনভাবে মৌ এর সাথে কথা বলছিলো।এটা আমার একটুও ভালো লাগেনি।
আজকে আমি ভেবেছিলাম অফিস থেকে এসে ইমনকে চলে যেতে বলবো এখনা থেকে।কিন্তু তার আগেই তো এসব কান্ড হয়ে গেলো।” বলে আয়ান ইমনের দিকে তাকালো। সে এখন অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।

মৌ কে দাদি আর আম্মু মিলে শান্তনা দিচ্ছে।মৌ কান্না থামিয়ে বলে উঠে,

“শুধু আজকেই না এর আগেও এমন করছেন উনি।”

মৌ এর এ কথায় আয়ান এর রাগ যেনো আরো বেরে গেলো।সে মৌ কে প্রশ্ন করে,

“এর আগে কবে এমন হয়েছিলো?”

আয়ানের এর প্রশ্ন শুনে মৌ হলুদের দিনের সব ঘটনা বলে।

আয়ান তো এ শুনে খুব রেগে যায়।সে মৌ কে ধমক দিয়ে বলে,

“আমাকে আগে বলিসনি কেনে!!”

আয়ানের ধমকে মৌ কেঁপে উঠে।সে কাঁপা স্বরে বলে,

“আমি জানতাম না যে ওটা তুমি ছিলে না।আমার প্রথমে একটু সন্দেহ ছিলো।কিন্তু আজকে যখন উনি বললেন যে ওটা উনি ছিলে,তখন আমার সন্দেহ সত্যিতে রুপ নেয়।”

এ বলেই মৌ আবার কান্না শুরু করে দেয়।

এর মধ্য পুলিশ চলে আসে।তারা ইমনকে নিয়ে চলে যায়।আর আয়ানকে রিপোর্ট ফাইল করার জন্য থানায় আসতে বলে।
পুলিশের চলে যাওয়ার পর আয়ান মৌ এর কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলায়। মৌ তো এরপর আয়ানকে ধরে খুব কান্না শুরু করে দেয়।

“এতো কান্না করিস না তো।আল্লাহর রহমতে কিছুই হয়নি তো।সময়মতো চলে এসেছিলাম তে আমি।”

আয়ানের কথা মৌ এর কান পর্যন্ত পৌঁছেছে নাকি কে জানে।সে তার কান্না থামালো না।আয়ান আর কোনো উপায় না পেয়ে মৌ কোলে করে রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দিলো।
আর আম্মু এবং দাদিকে বললো,

“তোমরা দুজন ওর কাছেই থাকো।আমি থানা থেকে আসি।”

দাদি বলে,
“আচ্ছা সাবধানে যাবি।আর মৌ এর চিন্তা করিস না।আমরা ওর খেয়াল রাখবো।”

এরপর আয়ান থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।আর আম্মু মৌ কে একটা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। তাই মৌ এর কান্না থেমে যায়,আর সে গভীর ঘুমে তলিয়ে পরে।

চলবে….