ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-০৬

0
2202

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬

★তানি আর নূর ছেলেটার পিছে পিছে যাচ্ছে। ছেলেটা ওদের ক্যাম্পাসের পিছন সাইটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে লোকজন তেমন নেই বললেই চলে। এটা দেখে নূরের ভয় আরো বাড়তে শুরু করলো। তানির হাত শক্ত করে ধরে আস্তে করে বললো।
…এএএমন নির্জন জায়গায় কেন ডেকেছে? কোনো খারাপ কিছু করবে নাতো? আমার ভীষণ ভয় করছে।

তানি আস্বস্ত করে বললো।
…আরে না। উনি তেমন লোক না।তুই অযথাই চিন্তা করছিস। আমি আছি তো তোর সাথে। মনে সাহস রাখ।

আর একটু এগিয়ে যেতেই ওরা দেখলো। আবির আর তাসির ক্যাম্পাসের ভবনের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
ওরা তিনজন ওদের কাছেএসে দাঁড়ালো।
আবির তানির উদ্দেশ্যে বললো।
…হাই কিউটি, কেমন আছো?

…আমি ভালো আছি। আপনি?

আবির মুচকি হেসে বললো।
… আ্যাম কুল।
তারপর নূরকে উদ্দেশ্য করে বললো।
…তুমি নূর তাইনা?

নূর মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো।

…আদিত্য তোমার জন্য ওয়েট করছে যাও। ওইযে ওই ব্রেঞ্চটাতে বসে আছে।
আবির হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো।
নূর ওদিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো। তারপর তানির হাত ধরে এগুতে লাগলেই। আবির তানিকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
…আরে আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো?আদিত্য নূরের সাথে কথা বলবে। তুমি যেয়ে কি করবে। তুমি এখানেই থাকো।
নূর অসহায় চোখে তানির দিকে তাকালো।
তানি আবিরকে বললো।
…আসলে ও একা ভয় পাচ্ছে। আমি একটু সাথে যাই প্লিজ।

তাসির এতক্ষণে নূরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
…ভয়ের কিছু নেই। আদিত্য রাগী হলেও, খারাপ ছেলে না।মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে। তাই একদম নিশ্চিত হয়ে যেতে পারো তুমি।

তানিও নূরকে চোখের ইশারায় আস্বস্ত করে যেতে বললো।

অগত্যা নূর একাই সামনে এগুলো। এদিকটায় কোনো লোকজন নেই। একদম নির্জন পরিবেশ
চারিদিকে নানা ধরনের গাছ গাছালি। পায়ের নিচে শুকনো পাতার প্রস্তর পরে আছে। নূর আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখলো।সামনে বিশাল একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে আদিত্য । মুখ দেখা যাচ্ছে না।শুধু পিঠের অংশ দেখা যাচ্ছে। নূর দুরুদুরু বুকে কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেলো।
—————–
নূর চলে যেতেই তানি আবিরকে জিজ্ঞেস করলো।
…আচ্ছা এদিকে কোনো লোকজন নেই কেন?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…এদিকে জনসাধারণের আসা নিষেধ। শুধু ভিআইপিরাই আসতে পারে।

…কেন?নিষেধ কেন?ক্যাম্পাস যেহেতু সবার। সবারই সমান অধিকার থাকা উচিৎ।

আবির মাথা নাড়িয়ে হেসে বললো।
…ম্যাডাম, এখানে সবাইকে আসার সুযোগ দিলে, এই যায়গাটা আর এমন সুন্দর থাকবে না। চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলবে। আর ছেলে মেয়েদের জন্য এটা হয়ে উঠবে বোটানিক্যাল গার্ডেন।এখানে এসে সবাই নোংরামি শুরু করে দিবে।বুঝতে পেরেছেন মিস অধিকার মন্ত্রী।

তানি একটু হেসে দিলো।

আবিরও মুচকি হেসে বললো।
…তোমার হাসিটাও কিউট। একদম তোমার মতো।

তানি লজ্জা পেয়ে গেলো।তারপর কথা ঘুরানোর জন্য বললো।
…আচ্ছা আপনারা দুজন এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

…হঠাৎ করে কেও যাতে চলে না আসতে পারে। তাই দাঁড়িয়ে আছি। আদিত্য চায়না কেউ ওদের একসাথে দেখুন। মানুষ দেখলে শুধু শুধু নানান ধরনের গুজব ছড়াবে।তাই আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের দেখলে এদিকে কেউ আসবে না।

তানি আবিরের কথা শুনে মনে মনে স্বস্তি পেলো।যাক তাহলে নূরকে নিয়ে আর তেমন ভয় নেই।
—————————–

নূর ব্রেঞ্চের পাশে এসে দাঁড়াতেই, আদিত্য মাথা তুলে নূরের দিকে তাকালো। নূর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল। আদিত্য ভেবে পায়না কি আছে এই মেয়েটার মাঝে। যা এই সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর মাথা হ্যাং করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আদিত্য নিজেকে সামলে নিয়ে নূরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বলে ওঠে।
… দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।

নূর কাঁপা গলায় আস্তে করে বলে।
…ননানা আআমি ঠিক আছি। আপনি ববলুন কি ববলবেন।

…বসতে বলেছি বসো। আমি কথা রিপিট করা পছন্দ করিনা।

আদিত্যর এমন গম্ভীর কণ্ঠের কথা শুনে নূর সাথে সাথে বসে পরে। যেহেতু আদিত্য ব্রেঞ্চের মাঝখানে বসে আছে। তাই নূর চেয়েও বেশি একটা দুরে বসতে পারে না। তারপরও ব্রেঞ্চের একদম কিনারা ঘেঁষে এমন ভাবে বসে, যে একটু নরলেই ধপাস করে পরে যাবে। নূর কোনরকম নড়াচড়া না করে একদম রোবটের মতো বসে থাকে। যেন ওর মাথায় কেউ পিস্তল ঠেকিয়ে বলেছে, যে নড়লেই গুলি করে দিবে।
নূরের কান্ড দেখে আদিত্য নিজের মাথাটা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসছে।তারপর আবার মুখটা গম্ভীর করে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো
…কি হয়েছে? এভাবে বসেছ কেন? ।দেখেতো মনে হচ্ছে দুজনের মাঝে ভারত বাংলাদেশের বর্ডার। ঠিক করে বসো।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
…না না আমি ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই।

…তোমাকে তো দেখছি, সবকথাই দুবার বলতে হয়।একবারে কথা কানে যায় না। বললাম না ঠিক করে বসো।

তানি বেচারি আবারও ভয় পেয়ে আদিত্যের আর একটু কাছে যেয়ে ঠিক হয়ে বসে। নূর কাছে এসে বসতেই আদিত্যের নাকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এসে লাগলো। একদম বেলিফুলের মতো ঘ্রাণ।আদিত্য চোখ বন্ধ করে কতক্ষণ ঘ্রাণ উপভোগ করতে থাকলো। আদিত্য যেন আবারও হারাতে শুরু করলো এক অজানা নেশায়। ওর মস্তিষ্ক যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

…ববলুন কি শশাস্তি দিবেন। ভয়ে ভয়ে বললো নূর।

হঠাৎ নূরের কথায় আদিত্যের ধ্যান ভাঙলো। ও অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
…হুম? হ্যা, শাস্তি। হ্যা, তোমাকে তো শাস্তি দিতেই হবে।

আদিত্যর ঘোর এখনো পুরোপুরি কাটেনি। আদিত্য ঘোরের মাঝেই বলে ফেললো।
….তোমার শাস্তি হলো…

নূরের দম বন্ধকর অবস্থা। নাজানি কি শাস্তি দেয়।

…তোমার শাস্তি হলো, তুমি রোজ আমাকে একটা করে চুমু দিবে।

নূর ৮২০ বোল্টের একটা ঝটকা খেলো।নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। উনি কি পাগল হয়ে গেলো নাকি। কি বলছে এসব।

আদিত্যর যখন বুঝতে পারলো ও কি বলে ফেলেছে। ও নিজের কথায় নিজেই চরম অবাক হয়ে গেলো। সাথে সাথে মাথাটা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো।
….ওয়াটটট্??হ্যাভ ইউ গন ম্যাড আদি?কি বলছিস এসব?আমিতো তো ওকে শাস্তি দিতে এসেছিলাম তাহলে এটা কি বললাম? যার এক ইশারায় মেয়েরা বেডে চলে আসবে।সেই আমি কিনা একটা মেয়ের কাছে বেহায়ার মতো চুমু চাচ্ছি? এতটা নির্লজ্জ কবে থেকে হয়ে গেলাম আমি? মাথাটা সত্যিই গেছে আমার। সব এই মেয়েটার দোষ। মেয়েটার সামনে আসলেই আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়। আবিরের ভাষায় যাকে বলে ক্যামিকেল লোচা হয়ে যায়।

…ককককি বলছেন আপনি।

নূরের কথায় আদিত্যর ভাবনায় ছেদ পরে। আদিত্য আবার মাথা ঘুড়িয়ে নূরের দিকে তাকায়।মেয়েটা কেমন চুপসে ভীতু হয়ে বসে আছে। নাজানি কি ভাবছে আমার ব্যাপারে।
আদিত্য কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে মনে মনে বলে।
বলেই যখন দিয়েছি তখন দেখা যাক কি হয়।দেখি নূর কি বলে।একটু মজা নেওয়া যাক।

আদিত্য একটু গলা ঝেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে নূরকে বলে।
…হুম, ঠিকই বলেছি। তুমি জানো?আমার সাথে কখনো এমন কিছু ঘটেনি।হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনা হওয়ায়। আমি শান্তি পাচ্ছি না। কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি।এখন তুমিই যেহেতু এই অশান্তি দিয়েছো।এর সমাধানও তুমিই করবে। তাই তোমার শাস্তি এটাই যে,তুমি রোজ আমাকে একটা করে চুমু দিবে।

আদিত্যের সব কথা নূরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। নূর এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

নূরের এমন কনফিউজিঙ চেহারা দেখে আদিত্যের অনেক হাসি পাচ্ছে। নূরকে আরো একটু ভয় দেখানোর জন্য বললো।
…আর তুমিতো জানোই আমার কথা না মানলে আমি কি করতে পারি।এখন তুমি বলো কি করবে?

নূর এবার সত্যি সত্যিই অনেক ভয় পেয়ে গেলো।উনি যদি সত্যিই আমার বাসায় ফোন করে বলে দেয় তখন? ছোট মা তো এমনিতেই ছুতো খোঁজে। কিভাবে আমার পড়ালেখা বন্ধ করা যায়। আর এটা শুনলে তো উনি তিলকে তাল বানিয়ে আমি পড়ালেখা বন্ধ করে দিবে।আমার শেষ আশাটাও মাটি হয়ে যাবে। না না, আর ভাবতে পারছে না নূর।এতো কষ্ট করে এতদূর এসে, এভাবে সব শেষ হয়ে যেতে দিবেনা ও।

আদিত্য দেখলো নূরের মুখখানা ভয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে।
না থাক আর বেশি ভয় দেখানো যাবেনা। আবার যদি সেদিনের মতো কেদে ফেলে।
আদিত্য মনে মনে এসব ভেবে যখনি বলতে যাবে নূরকে যে, ও শুধু মজা করছিলো। তখনই নূর ফট করে বলে ফেললো।
…আমি রাজি।

আদিত্য চোখ বড়ো বড়ো করে অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকালো। ওর বিশ্বাসিই হচ্ছনা যে, নূর সত্যি সত্যিই রাজি হয়ে গেছে। মানে সে সত্যিই রোজ আমাকে চুমু দিবে? ভাবতেই আদিত্যের মনের ভেতর কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করে। যদিও সে জানে ব্যাপারটা কেমন অরুচিকর হয়ে যায়। বিশেষ করে নূরের মতো একটা মেয়ের জন্য। অজানা একটা ছেলেকে এভাবে চুমু দেওয়াটা নিশ্চয় অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার। তবুও কেন যেন
আদিত্যর মানা করতে ইচ্ছে করছে না। নাহয় আজ একটু ব্যাহায়াই হলাম।
আদিত্য একটু গলা ঝেড়ে বললো।
…আর ইউ শিওর?

নূর কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওতো তখন ওর পড়ালেখার চিন্তা করতে করতে কোনো কিছু না ভেবে ফট করে হ্যা বলে ফেলেছে। কিন্তু এখন কি করবে? কিভাবে করবে কাজটা? বলে যখন দিয়েছে মানাও তো করতে পারছে না। মানা করলে যদি আবার বাসায় ফোন দেয় তখন? না না তা হতে দেওয়া যাবে না।আজকের মতো রাজি হয়ে এখান থেকে চলে যাই।পরের টা পরে দেখা যাবে। নূর আর কিছু না ভেবে মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝায়।

আদিত্যের ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি চলে আসে।কিন্তু ও নূরকে বুঝতে দিতে চায়না যে ও এই ব্যাপারে খুশী । তা নাহলে নূর ওকে বেহায়া ভাবতে পারে। আদিত্য নূরকে বুঝাতে চায় যে, ও শুধুমাত্র শাস্তি দেওয়ার জন্যই এসব করছে। তাই মুখটা একটু গম্ভীর করে বলে।
…ঠিক আছে তাহলে। প্রতিদিন ক্লাস শেষে এখানে চলে আসবে। আমি এখানেই ওয়েট করবো তোমার জন্য। এখানে কেউ তেমন আসে না, তাই তোমাকে কেউ দেখতেও পাবে না ডোন্ট ওয়ারি।আর হ্যা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার সাথে খারাপ কিছু করবো না।এটা শুধু তোমাকে শাস্তি স্বরূপ দেওয়া হয়েছে। বুঝতে পেরেছো?

নূর মাথা ঝাকালো।মানে সে বুঝতে পেরেছে।

এদিকে তাসির দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে আবিরকে বললো।
আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?আমার তো পা লেগে গাছ হয়ে ফলও ধরে গেলো।

আবির হেসে বললো।
…আমার মনে হচ্ছে, আমরা এই বয়সে স্কুল কলেজের স্টুডেন্টদের মতো আমাদের ফ্রেন্ডকে পাহারা দিচ্ছি প্রেম করার জন্য। হা হা হা…

তানিও হেসে দিলো।

আবির কিছু একটা ভেবে দুষ্টু হেসে বললো।
…এই তাসির চলতো দেখি ব্যাটা কি করে আমাদের এখানে দাড় করিয়ে রেখে। এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলছে তাও আবার একা একা। ব্যাপারটা কি সামান্য নাকি? চলনা দেখি।

…পাগল হয়েছিস? আদিত্য দেখলে রাগ করবে।

…আরে আমরা কি ওখানে যাবো নাকি। এখান থেকেই উকি দিয়ে দেখবো।

তানি উৎসাহ নিয়ে বললো।
…আমারও দেখতে ইচ্ছে করছে। চলেন দেখি কি হচ্ছে ওখানে।

তাসিরও রাজি হয়ে গেলো। তারপর ওরা ভবনের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শুধু মাথাটা সামান্য বের করে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো।কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলে শুধু সামনে যে ব্যাক্তি আছে সেই দেখতে পায়।তাই ওরা একটু নিচের দিকে ঝুকে একজন আরেকজনের মাথার উপর দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো।সবার নিচে তাসিরের মাথা, তার উপর আবিরের,তার উপর তানির মাথা রেখে ওরা দেখতে শুরু করলো।

আদিত্য একটু খ্যাক করে গলা ঝেড়ে বললো।
…তাহলে আজকের টা দিয়ে দেও।

নূর প্রচুর অস্বস্তিতে পরে গেলো।মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর হাত কচলাচ্ছে। হ্যা তো বলে দিয়েছে। কিন্তু করবে কিভাবে?চুমু না দিয়ে তো এখান থেকে যেতেও পারছে না। বেচারি পরে গেছে মহা মুশকিলে। ভয় আর লজ্জায় আদিত্যের দিকে তাকাতেই পারছে না।

আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো।
…ঠিক আছে আমি চোখ বন্ধ করে নিচ্ছি। তাহলে আর তোমার সমস্যা হবে না।
বলেই আদিত্য চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।

নূর ধীরে ধীরে মাথাটা উঠিয়ে দেখলো।আদিত্য চোখ বন্ধ করে বসে আছে। নূর ইতস্তত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তারপর চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে তৈরি করলো।চোখ বন্ধ করেই মুখটা আদিত্যের দিকে নিয়ে গেলো।হাত পা প্রচন্ড কাপছে নূরের।

নূর যতো আদিত্যের কাছে আসছে। ততই যেন নূরের শরীর থেকে আসা মিষ্টি বেলীফুলের ঘ্রাণটা আরো গাঢ় হয়ে আদিত্যের নাকে লাগছে।আদিত্যের হার্টবিট তিব্র গতিতে চলছে। যেন এখনি বুক ফেটে বেড়িয়ে আসবে।

হঠাৎ গালে ঠোঁটের ছোঁয়া পেলো আদিত্য। সাথে সাথে আদিত্যর শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। বুকের ভেতর যেন ঢোল বাজতে শুরু হলো। সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণে ছেয়ে গেলো।শক্ত হয়ে বসে থাকা শরীরটা হঠাৎ ঢিলা হয়ে গেলো। ঠোঁটের কোনে চলে এলো এক তৃপ্তিময় হাসি।কাল থেকে যে অস্থিরতায় ভুগছিল, তা যেন এক নিমিষেই দুর হয়ে গেলো।

আর নূর, সেতো চুমু দিয়েই ভো দৌড়। যেন চুরি করতে এসে ধরা পরার ভয়ে, প্রাণ বাচিয়ে পালাচ্ছে।
আদিত্য এখনো চোখ বন্ধ করে বসেই আছে। তার হুশই নেই যে নূর চলে গেছে।

তাসিররা ওদের দিকেই উঁকি দিয়ে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ দেখলো নূর আদিত্যকে চুমু দিচ্ছে।
ওরা তিনজনই যেন ৮৮০ বোল্টের ঝটকা খেলো।এমন একটা ঘটনার জন্য ওরা কেউই প্রস্তুুত ছিলনা। হঠাৎ এমন ঝটকা খাওয়ায়, তাসির তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়। যার ফলে আবির আর তানিও হুমরি খেয়ে নিচে পরে একজন আরেকজনের ওপর। সবার নিচে তাসির, তার ওপর আবির, তার ওপর তানি।

তাসির নিচে থাকায় একটু বেশি ব্যাথা পায়।ও চেচিয়ে বলে।
…আহহ,গেলরে আমার কোমর টা গেলো। এই ওঠ তোরা।

তানি আবিরের ওপর এভাবে পড়ে ভিষন লজ্জায় পরে গেলো।তারাতাড়ি করে উঠে গা ঝাড়তে লাগলো।

আবির উঠে তানিকে বললো।
…তুমি ঠিক আছো? কোথাও লাগেনি তো?

তানি মাথা ঝাকিয়ে না বুঝালো।

তাসির বিরক্ত হয়ে বললো।
…ভাই এই অধমের ওপরেও একটু নজর দে।আমিও আছি এখানে। কোমর টা তো ভেঙেই দিয়েছিস।এখন একটু হাতটা ধরে তুলে সহায় হ।
আবির তাসিরের হাত ধরে উপরে তোলে। তারপর দুজনই কাপড় ঝাড়তে থাকে।
আবির তানির দিকে তাকিয়ে দেখে কেমন অস্বস্তি বোধ করছে।হয়তো এভাবে ওদের ওপর পরে যাওয়ায় লজ্জা পাচ্ছে। আবির তানিকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো।
…হেই কিউটি,ডোন্ট ওয়ারি “এইছি ছোটি ছোটি দেশোমে বারি বারি বাতে হতি রেহতিহে”

তানি হেসে দিলো।আবিরও দুষ্টু হেসে চোখ টিপ মেরে বললো।
..”হাছি তো ফাছি”।

ওদের কথার মাঝেই তানি দেখলো নূর দৌড়ে চলে যাচ্ছে। তানিও নূরকে ডাকতে ডাকতে ওর পেছনে দৌড়ালো।

আবির আর তাসির চলে গেলো আদিত্যর কাছে।

চলবে ……..