ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-০৭

0
2194

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭

★আবির আর তাসির আদিত্যের কাছে এসে দেখলো। আদিত্য চোখ বন্ধ করে বসে মুচকি হাসছে। ওরা দুজন ভ্রু কুঁচকে আদিত্যের দিকে চেয়ে রইল। তারপর আবার একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো কেউ কিছু বুঝেছে কি না। অতঃপর দুজনেই মাথা নাড়িয়ে বুঝালো তারা কিছু বুঝতে পারছে না।
আবির নিজের হাত দুটো আদিত্যের মুখের সামনে নাড়াতে লাগলো। নাহ কোনো হেলদোল নেই।
আবির দুষ্টু হেসে তাসির কে বললো।
…তাসির ইয়ার, আমার ভাইটা কই গেলো?এখানেই তো ছিলো। কোথায় হারিয়ে গেলো? হায় হায় এখন কি হবে?কোথায় খুঁজি এখন? আদি, ভাই আমার কই তুই? ফিরে আয় ভাইয়ের কাছে।এদিক ওদিক খোঁজার অভিনয় করতে লাগলো আবির।
তাসির ওর কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসছে।

আবিরের কথায় আদিত্য বাস্তবে ফিরে আসে। চোখ খুলে দেখে নূর ওর পাশে নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও নেই। আবির আর তাসির কে জিজ্ঞেস করলো।
…তোরা এখানে? আর নূর কোথায়?

আবির আর তাসির একজন আরেকজনের দিকে তাকায়।তারপর উচ্চহাসিতে ফেটে পরে। হাসতে হাসতে দুজন আদিত্যের দুই দিকে বসে পরে।

আদিত্য ওদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
..এখানে এতো হাসির কি হলো? ওয়াট সো ফানি?

আবির হাসিটা একটু থামিয়ে বললো।
…সিরিয়াসলি ভাই নূর এতক্ষণে হয়তো বাসায়ও পৌঁছে গেছে। আর তুই এতক্ষণ টেরই পাসনি?

আদিত্য আবিরের কথায় থতমত খেয়ে গেলো। নূর চলে গেছে। আর ও টেরই পাই নি?এখন এদের কি বলবে? এরা তো এখন জান খেয়ে ফেলবে।
আদিত্য এদিক ওদিক তাকিয়ে অপ্রস্তুত ভাবে বললো।
..এমন কিছুই না। আমিতো শুধু এটা জানতে চাচ্ছিলাম যে,ও কি ক্যাম্পাসেই আছে নাকি বাসায় চলে গেছে?

… হুম হুম বুঝি বুঝি সবই বুঝি।বাইদাওয়ে ভাই, আমি ভাবতেই পারিনি। তুই আমার কালকের ওই গানটা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবি।

আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…মানে?কি বলেছিস এসব? যতসব ফালতু কথা।

…হ্যা,হ্যা এখন তো আমার কথা ফালতুই লাগবে।তুই কি ভেবেছিস? একটু আগে যে রঙ্গলিলা করছিলি তা কি আমরা দেখিনি ভেবেছিস?সবই দেখেছি আমরা।

আদিত্য ধমকের সুরে বললো।
…সাট্ আপ। এসব কি ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ?
তারপর আমতা আমতা করে বললো।
…ওটাতো ওর শাস্তি ছিলো।

এতক্ষণে তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
… শাস্তি মানে?

…হুম শাস্তি। আমি ওকে শাস্তি দিয়েছি। রোজ আমাকে একটা করে চুমু দিতে হবে।

আবির দুষ্টু হেসে বললো।
…বাহ্ কি শাস্তি। হায়,আমিও যদি কাওকে এমন শাস্তি দিতে পারতাম।জীবন টা ধন্য হয়ে যেতো। হা হা..

তাসির একটু সিরিয়াস হয়ে বললো।
…তুই কি নূরকে পছন্দ করিস। দেখ আমি জানি। তুই কোনো মেয়েকে তোর আশেপাশেই সহ্য করতে পারিস না।আর সেখানে তুই কিনা একটা মেয়েকে এভাবে নিজে থেকে চুমু দিতে বলছিস।এটা নিশ্চয় কোনো সামান্য ব্যাপার না?

আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
…এ এএমন কিছুই না। ওর মতো ভীতু আর লাজুক মেয়ের জন্য, এটাই সবচেয়ে বড়ো শাস্তি। তাই এটা করেছি।

তাসির আর কিছু বললো না।ও ভালোই বুঝতে পারছে যে আদিত্য প্রেমে পরে গেছে। কিন্তু সেটা এখন ও স্বীকার করবে না।কারণ ও নিজেই হয়তো এখনও বুঝতে পারেনি। সময় হলে ঠিকই বুঝে যাবে। তাসির এটা ভেবেই খুব খুশী,যে শেষমেশ কেউতো এলো আদিত্যের জীবনে। যে ওর জীবনটা রঙিন করে তুলতে পারবে।

আবির বললো।
…তারমানে, এখন থেকে নূর রোজ তোকে চুমু দিবে?বাহ্…তুই তো দেখছি ইমরান হাসমিকেও হার মানাবি।হা হা হা…

আদিত্যের অগ্নি দৃষ্টিতে তাকানো দেখে আবিরের হাসা বন্ধ হয়ে গেলো। ও একটু সোজা হয়ে বসে বললো।
…আর ইউ শিওর ভাই? তুই সত্যিই নূরকে পছন্দ করিস না?

আদিত্য বলে উঠলো।
…একবার বললাম শুনলি না?তুই জানিস না? আমি কথা রিপিট করা পছন্দ করিনা?

আবির ব্রেঞ্চের পেছনের দিকে কাত হয়ে, হাত দুটো দুই দিকে ছড়িয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে বললো।
….তোর কথা তুই জানিস। তবে আমার তো পছন্দ হয়ে গেছে। আর শুধু পছন্দ না, একদম সেই লেভেলের ভালো লেগেছে।

আদিত্য আর তাসির দুজনেই ভ্রু কুচকে তাকালো আবিরের দিকে।

আবির আবার বললো।
…মেয়েটা দেখতে কি কিউট। একদম শ্রদ্ধা কাপুরের মতো লাগে।

আদিত্যের খুবই বিরক্তি আর অস্বস্তি লাগা শুরু করে দিলো।তাহলে কি আবির নূরকে পছন্দ করে?

আবির আবারও বলে উঠলো।
…আমি তো ডিসাইড করে ফেলেছি। কাল পরশুই ওকে প্রোপোজ করে ফেলবো।

আদিত্যের এবার চরম রাগ লাগতে শুরু করলো আবিরের ওপর। কিন্তু কেন লাগছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না।

তাসির এবার আবিরকে একটা ধমক দিয়ে বললো।
….এই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কি আবোল তাবোল বলছিস এসব?

…কেন আমি আবার কি বললাম? যা সত্যি তাই বললাম।

…সত্যি মানে? তুই নূরকে কিভাবে পছন্দ করতে পারিস? তুই নাহ…

আবির এবার চমকে তাকায় ওদের দিকে।
….ওয়াটট্? কি বলছিস এসব? আমি নূরকে কেন পছন্দ করতে যাবো?

আদিত্য এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আবিরের দিকে।

আবির বললো।
…নূর তো আমার ভা…আই মিন বোনের মতো। আরে আমিতো ওর কিউট বান্ধবী তানির কথা বলছি।মেয়েটাকে আমার সত্যিই ভালো লেগেছে।

আদিত্য যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। একমুহূর্তের জন্য ওর কি হয়ে গিয়েছিলো ও নিজেই বুঝতে পারছে না। নিজের চিন্তাভাবনার ওপর ও নিজেই চরম অবাক হচ্ছে।মনে হচ্ছে আজকে অবাক দিবস।

——————————

নূর সেই যে দৌড় দিয়েছে,আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায়নি ক্যাম্পাসে।সোজা বাসায় চলে এসেছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। নূর টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো। এখন একটু বেটার ফিল করছে। প্রতিদিন কিভাবে করবে এটা তাই ভাবছে নূর।

বিকাল ৪ টা
নূর বাসার সব কাজ শেষ করে রুমে এলো।নূরের রুমের সাথে ছোট্ট একটা বেলকনি আছে। নূর সেখানে গেলো।বেলকনিতে একটা বেলীফুল গাছ আছে। এই গাছটা নূরের দাদির হাতের। তাই নূর গাছটাকে অনেক যত্নে করে।এই গাছটার কাছে আসলেই ওর মনটা ভালো হয়ে যায়। বেলীফুলের গন্ধে ওর মনটা ভরে যায়। নূর গাছের ফুল গুলাতে হাত বুলাতে থাকে। একটা ফুল নিয়ে কানে গুজে দিল।নূর রোজ একটা করে ফুল নিয়ে ওর চুলে গুজে দেয়। যাতে ফুলের গন্ধটা সবসময় ওর কাছে থাকে। নূর গাছের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, আজকের ঘটনা ভাবতে থাকে। ও ভেবে পাচ্ছে না, কি হচ্ছে ওর সাথে এসব? এ কোন মুসিবতে পরে গেলো। রোজ রোজ এই কাজটা কিভাবে করবে ও।ভাবতে ভাবতে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।

রাত ৭-৩০
নূর মাত্রই রাতের রান্নাবান্না শেষ করে রুমে এসেছে। হঠাৎ বাসার কলিং বেলটা বেজে উঠল। নূর রুম থেকে বের হওয়ার আগেই কে যেন দরজাটা খুলে দিলো।নূর ওর রুমের দরজার কাছে আসতেই পা জোড়া থেমে গেলো, ওর বাবার কন্ঠ শুনে। তার মানে ওর বাবা এসেছে। এখন তো আর নিচে যাওয়া যাবে না। নূর দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে, দরজাটা একটু খুলে মাথাটা হালকা বের করে ওর বাবাকে দেখলো।কতদিন পর দেখছে ওর বাবাকে। সবার সাথে কি সুন্দর হাসি খুশী ভাবে কথা বলছে।অথচ আমি সামনে গেলেই সবার হাসি উড়ে যাবে। সবার গলার কাটা আমি। যা না ওরা গিলতে পারে না ফেলতে পারে। এসব ভেবেই নূরের চোখের কোন দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না নূর। তাড়াতাড়ি করে রুমের ভিতরে চলে আসে। বালিশের নিচ থেকে ওর মায়ের ছবিটা বের করে খাটের ওপর বসে পরে। নূর ওর মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো।
… আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে মা?আমাকেও সাথে কেন নিয়ে গেলে না?আমার যে নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কেউ নেই। কেউ ভালোবাসে না আমাকে।জানো মা?ছোট মার কথা আর মারেও অতটা খারাপ লাগে না। যতটা খরাপ বাবার অবহেলায় লাগে। আমাকে দেখলেই তার রাগ লাগে। এজন্যই তো যতক্ষণ বাবা বাসায় থাকে ততক্ষণ আমি তার সামনেই যাইনা।নূর ওর মায়ের ছবিটা বুকে জড়িয়ে শুয় থেকে নিরবে কাঁদতে লাগলো । কাঁদতে কাঁদতে ওভাবেই একসময় ঘুমিয়ে পরলো।

————————-

অফিস থেকে আসতে আজ একটু দেড়ি হয়ে গেছে আদিত্যের।গাড়ি পার্ক করে লিফটের সামনে এসে দাড়ালো।আদিত্যের আশেপাশে মেয়েগুলো হা করে গিলছে আদিত্যকে।
আদিত্য চরম বিরক্ত এদের ওপর ।ও বুঝতে পারে না রোজ আদিত্য যখনই লিফটের সামনে আস।তখনই এই মেয়েগুলো কোথা থেকে উদয় হয়?

লিফট খুলতেই আদিত্য ঢুকে পড়ে। সাথে সাথে মেয়েগুলোও ঢুকে যায়। আদিত্য মাঝখানে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর মেয়েগুলো আদিত্যর চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে থেকে আদিত্যকে দেখতে থাকে।একটু পরে লিফট খুলতেই আদিত্য কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা বেড়িয়ে যায়। আদিত্য বেড়িয়ে যেতেই মেয়েগুলো একজন আরেকজনের ঘাড়ে মাথা এলিয়ে হায় হুতাশ করতে থাকে। হায়,,,, একটা মানুষ এতো গুড লুকিং কিভাবে হতে পারে।

আদিত্য নিজের ফ্লাটে এসে লক খুলে ভেতরে ঢুকে। আজ একটা ডিনার মিটিং থাকায় বাইরেই খেয়ে এসেছে।
আদিত্য ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরে। চোখ দুটো বন্ধ করতেই আবারও নূরের চেহারাটা ভেসে ওঠে। তবে আজ আর অস্থির লাগছে না বরং কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। মনের ভেতর এক তিব্র ভালোলাগা কাজ করছে।আদিত্য চোখ বন্ধ করে নূরের সাথে কাটানো মূহুর্ত মনে করছে আর মুচকি হাসছে। নূরের চেহারা দেখতে দেখতেই একসময় ঘুমিয়ে পরে।

———————————

নূর কাক ডাকা ভোরে উঠে সব কাজ শেষ করে ফেলে। যাতে ওর বাবার সামনে না পরতে হয়।তাই বেলা ওঠার আগেই সব কাজ শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়। আর বের হয় না। ভার্সিটির সময় হয়ে আসলে নূর রেডি হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। যখন দেখে বসার ঘরে কেউ নেই এই সুযোগে নূর আস্তে করে বেড়িয়ে যায়।
রাস্তায় বেড়িয়ে নূর মন মরা হয়ে ভাবে। কি জীবন আমার আজ নিজের ঘর থেকেই চোরের মতো পালাতে হচ্ছে। রাতে কান্না করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো।আবার সকালেও না খেয়ে চলে আসার জন্য মাথার ভেতর কেমন যেন ঘুরছে নূরের।

ভার্সিটি পৌছিয়ে নূর দেখে তানি মাঠের পাশে একটা গাছের নিচে বসে আছে। নূর এগিয়ে গিয়ে তানির পাশে বসে।
নূরকে দেখে তানি রাগী কন্ঠে বললো।
…এই তুই কাল ওভাবে দৌড়ে চলে গেলি কেন?আমি কতো ডাকলাম শুনলিই না?জানিস আমার কতো চিন্তা হচ্ছিল? বাসায় যেয়ে ফোন দিলাম ফোনটাও বন্ধ পেলাম। একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো তানি।

নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
…সরি ফোনে মনে হয় চার্জ ছিলোনা। আমি খেয়াল করিনি।

তানি চিন্তিত হয়ে বললো।
…এই কি হয়েছে তোর বলতো?মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন? খাওয়া দাওয়া করিস নি? আর চোখ টাও ফুলে লাল হয়ে গেছে। এই তুই কি আবার কান্না করেছিস?

নূর তানির দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা আমার সবকিছু কীভাবে বুঝে যায়?

তানি আবার বললো।
…কিরে?বল?কি হয়েছে? ওই মহিলা আবার কিছু করেছে তোর সাথে?

নূর ম্লান হেসে বললো।
…আরে না না। কেউ কিছুই বলেনি।তুই শুধু শুধু চিন্তা করছিস। আসলে রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি তো। তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।

….হুম ঠিক আছে। এখন বলতো কাল কি হয়েছিলো?আর তুই আদিত্য ভাইয়াকে কাল আবারও চুমু দিলি কেন?

নূর তানিকে সব খুলো বললো। সব শুনে তানি উত্তেজিত হয়ে বললো।
…কিহহ? তুই সত্যি বলছিস?আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।তারমানে,যার জন্য সব মেয়েরা পাগল। সেই “দা সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য ” কিনা একটা মেয়ের কাছ থেকে চুমুু চাইছে?এর অর্থ কি হয় তুই বুঝতে পারছিস?

নূর কনফিউজ হয়ে মাথা নাড়ায়। মানে সে বোঝেনি।

….আরে গাধি, মানে হলো আদিত্য ভাইয়া তোকে পছন্দ করে ফেলেছে।

নূর চমকে গিয়ে চোখ বড়ো বড়ো তাকালো তানির দিকে। তারপর বললো।
….কি বলছিস এসব? পাগল হয়ে গেছিস?এমন কিছুিই না।কোথায় উনি আর কোথায় আমি। ওনার মতো মানুষ আমার মতো সামান্য মেয়েকে কেন পছন্দ করতে যাবে? উনি শুধু শাস্তি দেওয়ার জন্যই ওসব বলেছেন আর কিছুই না।

…তুই যত যাই বলিস না কেন?”জেইন কসম “। আমি শিওর যে ভাইয়া তোকে পছন্দ করে।

নূর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
…যাকে নিজের পরিবারের মানুষই পছন্দ করে না।তাকে অন্যকেও কি পছন্দ করবে।

তানি নরম সুরে বললো।
….সবসময় নিজেকে এতো ছোট ভাবিস কেন? তুই কোনো দিক দিয়ে কারো থেকে কম না বুজেছিস।আর আমি তোকে আগেই বলেছি না,যে দেখবি একদিন না কেউ তোর জীবনে আসবে । যে তোকে এই নরক থেকে বের করে নিয়ে যাবে। হয়তো সেদিন বেশি দূরে নেই। কথাটা বলে তানি নূর কে চোখের ইশারায় সামনে তাকাতে বললো।

নূর তানির ইশারায় সামনে তাকাতেই দেখলো,আদিত্য এইমাত্র গেট দিয়ে ঢুকলো। ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে এগুচ্ছে।
নূর এই প্রথম আদিত্যকে ভালো করে খেয়াল করলো। ছেলেটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। একদম গ্রিক দেবতাদের মতো।ফরেনারদের মতো ধবধবে ফর্সা। কালো টিশার্ট আর ব্লু জিন্স পরেছে। চোখে ব্লাক সানগ্লাস, সিল্কি লম্বা চুলগুলো কপাল থেকে কান পর্যন্ত পরে আছে।দেখতে কোনো হলিউডের হিরোর মতো লাগছে।
নূর যখন আদিত্যের সামনে থাকে। তখন ভয়ে কখনো ওর দিকে তাকাতেই পারে না। আজ দূরে আছে তাই ভালো করে দেখতে পাচ্ছে। নূর খেয়াল করলো, শুধু ও না ভার্সিটির সব মেয়েরাই হা করে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে।

নূর মনে মনে ভাবছে। এই তানিটাও পাগল। কি না কি ভেবে বসে আছে। এমন একটা রাজকুমারের মতো ছেলে।যার জন্য সব মেয়েরাই হা করে বসে আছে। সে আমাকে কেন পছন্দ করতে যাবে। হঠাৎ তানির কথায় নূর ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো।

….উহুম,উহুুম।কিরে তুই তো দেখি হারিয়েই গেলি।দুষ্টু হেসে বললো তানি।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
…এ এএমন কিছুই না। আমি তো এমনিই দেখছিলাম।

আদিত্য ফোন রেখে পাশে তাকাতেই কিছুটা দূরে ওদের দেখতে পেল। আদিত্য এগিয়ে যেতে লাগলো ওদের দিকে। হঠাৎ দেখলো,তানি কিসের যেন একটা ছোট্ট প্যাকেট নূরের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। প্যাকেটটা দেখে নূরের চেহারায় কেমন যেন খুশীর চমক দেখা গেল।
আদিত্য ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।

নূর আর তানি খেয়াল করেনি, যে আদিত্য এদিকে আসছে।

আদিত্য হঠাৎ ওদের সামনে আসায় নূর চমকে যায়। মাথা নিচু করে ফেললো। তানি আদিত্যকে দেখে খুশী হয়ে বললো।
…গুড মর্নিং ভাইয়া।কেমন আছেন।

আদিত্য আরচোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…আ্যাম ফাইন।তোমরা কেমন আছো?

তানি হাসি মুখে বললো।
…আমরাও ভালো আছি।

…তা তোমাদের ক্লাস নেই এখানে কি করছো?

…এইতো ভাইয়া এখুনি যাবো।

আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে ইতস্তত ভাবে তানিকে জিজ্ঞেস করলো।
…বাইদাওয়ে তুমি ওকে কি দিলে এইমাত্র?

…ওহ, ওটা? ওটাতো আমের চাটনির প্যাকেট। আসলে নূরের খুব পছন্দ ওটা।তাই আমি মাঝে মাঝে নিয়ে আসি ওর জন্য।

আদিত্য অবাক হয়ে তাকালো নূরের দিকে। সামান্য চাটনি পেয়ে এতো খুশী। মনে মনে হেসে ভাবলো,মেয়েটা সত্যিই একটা পিচ্চি। তারপর বললো।
…ওকে দেন বায়।ক্লাসে যাও তোমরা।

দুজনেই মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।

আদিত্য এবার নূরকে বললো।
…ক্লাস শেষে সময়মতো চলে আসবে কিন্তু। লেট করা আমি পছন্দ করি না।
বলেই চলে গেলো আদিত্য।

নূর আর তানিও ক্লাসে চলে গেলো।

চলবে….