ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-১০+১১

0
2387

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১০

★ক্লাসে বসে আছে নূর।পাশেই তানি বসে মোবাইল গুতাচ্ছে। একটু আগেই প্রফেসার ক্লাস নিয়ে চলে গেছে। কিছু স্টুডেন্ট ক্লাসেই বসে আছে, আর কিছু বাইরে চলে গেছে।
নূর অনেকক্ষণ যাবত একটা ম্যাথ নিয়ে বসে আছে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না। একটু পর তানিকে জিজ্ঞেস করলো।
…এই তানি, তুই কি এই ম্যাথটা বুঝতে পেরেছিস?বুঝতে পারলে আমাকেও একটু বলনা?

তানি একটা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বললো।
…নূর তুই দুনিয়াতে আর মানুষ পেলি না?আমার মেধা সম্পর্কে তোর ধারণা নেই? যেখানে তুইই বুঝতে পারছিস না।সেখানে আমি বোঝার তো চান্সই নেই। আর আমি ম্যাথে কতো কাচা তা তুই জানিস।

নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
…হুম, এখন কি করবো? তুই তো জানিসই আমার আলাদা কোচিং করার টাকা বা সময় কোনটাই নেই। কোনরকমে চাচার দেওয়া টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আলাদা কোচিং করতে গেলে অনেক টাকা লাগে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, ছোট মা আমাকে কখনো বাসার কাজ ফেলে কোচিংএ যেতে দিবে না।স্কুল কলেজে থাকতে কোনো সমস্যা হলে চাচা দেখিয়ে দিতো।এখন তো সেও নেই। কিন্তু এখন এই নতুন ম্যাথগুলো কিছুতেই বুঝতে পারছি না। কি করি বলতো?

তানি একটু ভেবে বললো।
…আরে চিন্তা করিস না। যে কোনো একটা উপায় বের হবেই দেখিস।
তানি সামনের সিটে তাকিয়ে একটা ছেলেকে দেখতে পেল। তানি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে নূরকে বললো।
…এই নূর সামনে তাকা ওই ছেলেটাকে দেখ।

নূর একবার ওদিকে তাকিয়ে আবার তানির দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো।
…আমি আছি আমার টেনশনে। আর তুই ছেলে দেখে বেড়াচ্ছিস?

….আরে পুরো কথাটাতো শোন।শুনেছি ওই ছেলেটা অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।কলেজে নাকি টপ করেছিলো। বিশেষ করে ম্যাথ অনেক ভালো পারে।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…তো?

…তো মানে আমরা ওই ছেলেটার কাছে যেয়ে যদি একটু হেল্প চাই। নিশ্চয় মানা করবে না।

নূর বললো।
…কি বলছিস তুই? চিনিনা জানিনা এমন একটা ছেলের কাছ থেকে এভাবে হেল্প চাওয়া কেমন দেখায়?আর তুই তো জানিস।এভাবে হুট করে কোনো অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলতে আমার অস্বস্তি লাগে।

…আরে টেনশন নিচ্ছিস কেন?আমি আছিতো, আমি কথা বলিয়ে দিবো।আর আমরা তো ক্লাসমেট। ক্লাসমেটরা একজন আরেকজনের হেল্প করবে এটাই তো স্বাভাবিক। এতে এতো সংকোচের কি আছে। তুই চলতো।
তানি নূরের হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো। ছেলেটার সামনে এসে দাড়ালো দুজন।

হঠাৎ ওদের দুজনকে সামনে দেখে ছেলেটা হকচকিয়ে যায়। ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
…ইয়েস্? এনি প্রবলেম?কিছু বলবেন আপনারা?

নূরের প্রচুর অস্বস্তি লাগছে। ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তানি একটু মুচকি হেসে বললো।
…হেলো ভাইয়া, আমি তানি আর ও নূর।

…ওহ, আমি জাবিন। নাইস টু মিট ইউ।

তানি একটু বিনয়ী স্বরে নূরকে দেখিয়ে বললো।
…আসলে ভাইয়া ওর একটু হেল্প লাগতো। আপনি যদি কিছু মনে না করেন? ওকে এই ম্যাথগুলো একটু বুঝিয়ে দিবেন প্লিজ?

জাবিন একবার নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর সৌজন্যমুলক হাসি দিয়ে বললো।
…ইয়া শিওর, ওয়াই নট?আমরা তো ক্লাসমেট। একজন আরেকজনের হেল্প করতেই পারি। দেখি দেখাও কোনটা বুঝতে পারছো না।

তানি খুশী হয়ে নূরকে বললো।
…দেখেছিস আমি বলেছিলাম না? ভাইয়া নিশ্চয় আমাদের হেল্প করবে। এখন ম্যাথগুলো দেখা উনাকে।
নূর মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। তারপর বইটা খুলে ম্যাথগুলো দেখালো জাবিন কে।

জাবিন দেখে বললো। এখানেতো অনেক গুলো আছে একটু সময় লাগবে। ক্লাসেতো আবার যেকোনো সময় প্রফেসার চলে আসতে পারে। তোমরা চাইলে আমরা লাইব্রেরীতে যেতে পারি।ওখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করবে না। ভালোভাবে বুঝাতে পারবো। আর তুমি চাইলে নোটও করে নিতে পারবে। কি বলো?

তানি সাথে সাথে বললো।
…হ্যা হ্যা ঠিক আছে। এটাই ভালো হবে। কি বলিস নূর?

নূর কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর খুব অস্বস্তি লাগছে।কিন্তু কিছু করার নেই। ম্যাথগুলো বুঝতে হলে ওনার হেল্প নিতেই হবে। তাই ও রাজি হয়ে যায়। তারপর ওরা তিনজন বেরিয়ে যায় লাইব্রেরীর দিকে। ক্লাসের বাইরে আসতেই তানির ফোনে আবিরের ম্যাসেজ আসে। তানি মুচকি হেসে নূরকে একটু সাইডে নিয়ে বলে।
…নূর শোন না? তুই জাবিনের সাথে যা।আমি একটু পরে আসছি।

নূর হকচকিয়ে বললো।
…তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?আর আমি একা উনার সাথে কিভাবে যাবো?

…আসলে আবির একটু আমাকে দেখা করতে ডেকেছে। তুই যা, আমি একটু পরেই চলে আসবো। ওকে?
তানি আবার জাবিনের কাছে যেয়ে বললো।
…ভাইয়া আমার একটু কাজ আছে, আমি একটু পরেই আসছি।আপনারা ততক্ষণে লাইব্রেরীতে যেয়ে বসুন ওকে?

জাবিন বললো।
…ইয়া, ইটস টোটালি ফাইন।তুমি যাও কাজ সেরে আসো।

তানি চলে গেলো। নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জাবিনের সাথে গেলো।

জাবিন খুবই হাসিখুশি আর মিশুক স্বভাবের।যেতে যেতে জাবিন নূরকে অনেক কথায় বলছে আর হাসছে। নূরের বিরক্ত লাগলেও স্মিত হাসছে। নাহলে আবার রুড দেখাই তাই।

আদিত্য, মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে আবির আর তাসিরের সাথে কথা বলছিল। আদিত্য কথা বলতে বলতেই স্বাভাবিক ভাবেই মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে সামনে আনতেই, এক মূহুর্ত থেমে ঝট করে আবার সিড়ির দিকে তাকায়।আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে,নূর একটা ছেলের সাথে হেটে যাচ্ছে। ছেলেটা কেমন বার বার নূরের দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। আর নূরও তাতে সায় দিচ্ছে।
মূহুর্তেই আদিত্যের মেজাজ কেমন গরম হয়ে গেলো। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
আদিত্যের এমন এক্সপ্রেশন দেখে, আবির আর তাসির অবাক হয়ে গেলো। হঠাৎ ওর আবার কি হয়ে গেলো? ওরা দুজনও আদিত্যের চোখ বরাবর তাকালো।আর তাকিয়েই বুঝতে পারলো রাগের কারণ। আবির আর তাসির দুজনই মুখ টিপে হাসছে।
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…তোরা থাক আমি এক্ষুনি আসছি।
কথাটা বলেই আদিত্য দ্রুত চলে গেলো নূরের পিছে।
আবির তাসিরকে বললো।
….বেচারা ছেলেটা। কি জানি? আজকের পর আর বেচে থাকবে কিনা কে জানে? বলেই আবিরের এক হাত দিয়ে তাসিরের একহাতে তালি দেওয়ার মতো করে হাই ফাই দিয়ে, দুজনেই হাসা শুরু করে দিল।

নূর আর জাবিন লাইব্রেরীর ভেতরে ঢুকে একটা খালি টেবিল দেখে বসার জন্য এগিয়ে যায়।
জাবিন একটা চেয়ার টান দিয়ে নূরকে বসতে বলে। নূর বসার জন্য এগিয়ে যেতেই, হঠাৎ ফ্লোরে থাকা কার্পেটের সাথে পা আটকে পরে যেতে নেয় নূর।পরে যাওয়ার আগেই জাবিন নূরের দুবাহু ধরে পরে যাওয়া আটকায়। নূর ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

ঠিক সেই মূহুর্তে আদিত্য চলে আসে। নূর আর জাবিনকে ওই অবস্থায় দেখে, আদিত্যের সারা শরীরে রক্ত টগবগিয়ে ওঠে।রাগের সপ্তম সীমায় পৌঁছে যায়। চোখ দুটো লালবর্ণ ধারণ করে। হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
দাঁতে দাঁত চেপে বজ্র কণ্ঠে বলে ওঠে।
….কি হচ্ছে এখানে??

আদিত্যের কথায় নূর এক ঝটকায় চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে জাবিন ওকে ধরে আছে। নূর ছিটকে সরে আসে জাবিনের কাছ থেকে। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে নূর আৎকে ওঠে। আদিত্যের এমন ভয়ংকর রক্তিম চোখ দেখে নূরের অন্তর আত্মা কেপে ওঠে। আদিত্যের হঠাৎ এতো রাগের কারণ কি নূর ভেবে পাচ্ছে না।

আদিত্যর এমন রাগ দেখে লাইব্রেরীতে যারা যারা ছিল, সবাই ধীরে ধীরে বেড়িয়ে যায়।
বেচারা জাবিনও ভয়ে শেষ। আদিত্যকে ও চেনে।আর ওর রাগ সর্ম্পকেও শুনেছে।

আদিত্য ওদের আরও কাছে এসে দাড়ালো। একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আবার জাবিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কেউ বলবে এখানে কি হচ্ছে?

জাবিন কোনরকমে কাঁপতে কাঁপতে বললো।
…কককিছু না ভ ভভাইয়া আমরা তো শুধু পড়াশো….

আর বলতে পারলো না জাবিন। তার আগেই আদিত্য হাত উঠিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো।তারপর গম্ভীর কণ্ঠে জাবিনকে বললো।
…তুমি এখন যাও এখান থেকে। পরে তোমার সাথে কথা বলবো।
জাবিন মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। তারপর নূরের উদ্দেশ্য বললো।
…চল নূর আমরা যাই।

জাবিনের মুখে নূরের নাম শুনে আদিত্যের রাগে যেন আরো ঘি ঢেলে দেয়। আদিত্য রাগে কটমট করতে করতে বললো।
…আমি তোমাকে যেতে বলেছি, ওকে না।সো গো রাইট নাও।

জাবিন আর একমুহূর্তও দেরি না করে দৌড়ে চলে যায় ওখান থেকে।

জাবিন চলে যেতেই আদিত্য রাগী চোখে নূরের দিকে তাকায়।নূর ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আদিত্য নূরের হাত ধরে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে আটকে দেয়। রাগের মাথায় ও কি করছে,তার কোন হুঁশ নেই। আদিত্য নিজের বাম হাত দিয়ে নূরের ডান হাত শক্ত করে দেয়ালে চেপে ধরে রেখেছে আর ডান হাত নূরের বাম পাশে মাথার পাশে দেয়ালে ঠেকিয়ে রেখেছে। আদিত্যের দুই হাতের মাঝখানে নূর চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ওর হাত পা ধরধর করে কাপছে।আদিত্যর হঠাৎ এতো রাগের কারণ ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না।

আদিত্য রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….কি করছিলে ওই ছেলেটার সাথে এখানে? আর ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে টাচ্ করার।আর তুমি ওর সামনে ওরকম ভীতু ফেস করে ছিলে কেন?

নূর কি বলবে। ভয়ে ওর মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না।
নূরের চুপ থাকা দেখে আদিত্যের রাগ আরো বেড়ে যায়। আদিত্য উচ্চস্বরে বলে।
….কথা বলছো না কেন? সে ইট ড্যাম ইট।বলেই ডান হাত দিয়ে দেয়ালে একটা বারি মারে আদিত্য।

আদিত্যের এমন ধমকে নূরের অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে। নূর কোনরকমে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলার চেষ্টা করলো।
… আ আআমরা ম মম্যাথ ক ককরতে…… নূর ঠিকমত বলতেই পারছে না।

নূরের অবস্থা দেখে আদিত্যের এতক্ষণে হুশ আসে। আদিত্য নূরকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে দাড়ায়।চোখ বন্ধ করে চুলের ভেতর দুই হাত ঠুকিয়ে চুল টেনে ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে আদিত্য।

কিছুক্ষণ পরে নিজেকে একটু ঠিক করে নূরের দিকে তাকায় আদিত্য। মেয়েটা ভয়ে একদম চুপসে গেছে।
আদিত্য আলতো করে নূরের হাত ধরে নিয়ে এসে চেয়ারে বসায়। নিজেও নূরের পাশের চেয়ারে বসে পরে। একগ্লাস পানি এনে নূরকে দেয় খাওয়ার জন্য। নূর পনিটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল।আদিত্য নরম সুরে নূরকে বলে।
….ওঁকে রিলাক্স। এতো ভয়ের কিছু নেই। এখন বলো কি করছিলে এখানে ওই ছেলেটার সাথে। আর ওই ছেলেটা কে?

নূর একটু দম নিয়ে আদিত্যকে সব খুলে বললো।
সব শুনে আদিত্য বললো।
…তো ম্যাথ বুঝতে পারছিলে না।সেটা ক্লাস শেষে আমাকে বলতে।আমি বুঝিয়ে দিতাম।ওই ছেলেটাকে কেন বলতে গেলে?

নূর একটু অবাক হয়ে বললো।
…আপনি বুঝাবেন!

…হ্যা, কেন? আমাকে দেখে কি তোমার মূর্খ মনে হয়? লন্ডনের ইউনিভার্সিটি নিশ্চয় আমার চেহারা দেখে আমাকে সাটিফিকেট দেইনি?

নূর আরো একদফা অবাক হয়ে বললো।
আপনি লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন?

….জ্বি ম্যাডাম। এখন বলুন দেখি কি বুঝতে পারছেন না আপনি?

নূর ওর বই বার করে আদিত্যকে দেখালো।কোথায় কোথায় ওর সমস্যা হচ্ছে?
আদিত্য সুন্দর করে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে নূরকে।
নূরও সুন্দর করে বুঝে সেটা নোট করে নিচ্ছে।
নূর নোট করছে আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূরের শরীর থেকে সেই মন মাতানো মিষ্টি গন্ধটা আসছে। আদিত্য ভেবে পায়না নূরের শরীর থেকে সবসময় বেলীফুলের সুভাস কোথা থেকে আসে।এটা কি কোনো পারফিউম? কিন্তু এটাতো কোনো কেমিক্যালের ঘ্রাণ না। একদম পিওর ন্যাচারাল মনে হয়। নূর টেবিলে ঝুঁকে লেখার কারণে ওর মাথাটা নিচু হয়ে আছে। আদিত্যের একটু লোভ হয়।ও এই সুযোগে নিজের মুখটা একটু নিচু করে নাকটা নূরের মাথার কাছে নিয়ে নূরের চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে।নূরের এই মাতাল করা ঘ্রাণে আদিত্যের নেশা ধরে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে আরো গভীর ভাবে এই গন্ধে মেতে থাকতে।
নূরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। ও ওর মতো লিখেই যাচ্ছে।

একটু পরে আদিত্য নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সোজা হয়ে বসে।
ম্যাথ করা শেষ হলে আদিত্য বলে।
…শেষ? নাকি আর কোথাও সমস্যা আছে?

নূর বললো।
…না না আপাতত আর কোনো সমস্যা নেই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমাকে হেল্প করার জন্য।

আদিত্য একটু মুচকি হেসে বললো।
…ধন্যবাদ বলতে হবে না। এরপর থেকে কোনো সমস্যা হলে সোজা আমাকে বলবে বুঝেছো?অন্য কোনো ছেলের কাছে যাবে না ওকে?

নূর মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো।

তারপর একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
…আর একটা কথা। খবরদার আমি ছাড়া কখনো কোনো ছেলের সামনে ভয় পাবে না।তোমার এই ভীতু মুখটা অন্য কোনো ছেলে যেন দেখতে না পায়। তুমি জানো?তোমার এই ভীতু মুখটা কতো সুন…..
আনমনেই কথাগুলো বলতে বলতে আদিত্যের হুঁশ আসে ও কি বলতে যাচ্ছিলো। তাই পুরো কথা না বলেই থেমে যায়।

নূর ভ্রু কুঁচকে তাকায় আদিত্যের দিকে। আদিত্যের কথা সব ওর মাথার উপর দিয়ে বাউন্সার যাচ্ছে। নূর কিছুই বুঝতে পারছে না আদিত্যের কথা।

আদিত্য কথা ঘুরানোর জন্য বললো।
…ঠিক আছে এখন ক্লাসে যাও।ক্লাস শেষে সময়মতো চলে এসো ওখানে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝায়।

আদিত্য চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে বলে।
…আর একটা কথা। ওই ছেলেটার থেকে দূরে থাকবে বুজেঝ?

নূর কিছু না বুঝলেও মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝায়। আদিত্য চলে যায়।
নূর বসে ভাবে, উনার আজ কি হয়েছে? কেমন অদ্ভুত বিহেব করছে।
তারপর নূরও উঠে ক্লাসে চলে গেলো।

চলবে…..

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
# পর্ব -১১

★নূর বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে।তখন লাইব্রেরী থেকে যেয়ে ক্লাস শেষ করে এসে মাত্রই বসেছে।আদিত্যকে আজও প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছে কোনো কাজে।আসতে একটু সময় লাগবে।
নূরের আজকাল এখানে আসতে অনেক ভালো লাগে। তাইতো ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এখানে চলে আসে।
হঠাৎ কিছু একটার শব্দে নূরের ভাবনায় ছেদ পরে। নূর মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে শব্দটা কিসের? নাহ তেমন কিছু দেখতে পায় না।নূরের এবার একটু ভয় লাগতে শুরু করে। কোন ভূত টুত নেই তো?তারপর আবার নিজেই নিজেকে আস্বস্ত করে বলে, আরে না না ভূতরা কি আর দিনের বেলায় আসে নাকি? তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস নূর।

হঠাৎ নূর সামনে একটা গাছের আড়ালে সাদা সাদা কি জেনো দেখতে পেল। নূর ভয় পেলেও মনে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলো দেখার জন্য কি আছে ওখানে।
নূর গাছটার কাছে যেয়ে দেখলো, একটা সাদা ধবধবে ছোট্ট খরগোশ ছানা। মূহুর্তেই নূরের সব ভয় চলে গেলো। চোখে মুখে বিস্ময় আর খুশি চলে এলো। নূর নিচু হয়ে বসে ছানাটাকে হাতে তুলে নিল।ইশশ কি সুন্দর আর মোলায়েম দেখতে। নিশ্চয় মা বাবার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। নূর ছানাটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওর সাথে একা একাই কথা বলছে।

আদিত্য তাড়াতাড়ি করে আসছে নূরের কাছে। আজও লেট হয়ে গেছে। ব্রেঞ্চের কাছে আসতেই আদিত্য চমকে যায়। নূর সেখানে নেই। আদিত্য ভাবছে নূর কি তাহলে চলে গেছে? কিন্তু তাসিরতো আমাকে কিছু বললো না।
হঠাৎ আদিত্যের নজর যায় সামনের গাছটার পেছনে। ওখান থেকে নূরের একাসাইড দেখা যাচ্ছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আদিত্য। তারমানে নূর যায় নি।কিন্তু ও ওখানে কি করছে? আদিত্য ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায় নূরের দিকে। নূরের পিছনে যেয়ে দাড়াতেই দেখে ও কার সাথে যেন কথা বলছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলে।
…কার সাথে কথা বলছো?

হঠাৎ আদিত্যের কথায় নূর চমকে পিছনে তাকায়।আদিত্যকে দেখে নূর উঠে দাঁড়িয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বলে।
…আরে আপনি এসেছেন? এই দেখুন আমি কি পেয়েছি? খরগোশ ছানাটাকে উপরে তুলে দেখিয়ে বললো নূর।

আদিত্য একটু ছিটকে সরে এলো। আসলে ওর পেটস একদম পছন্দ না।

নূর ছানাটাকে আদর করতে করতে আবার বললো।
…কত্ত কিউট না ছানাটা?

আদিত্য জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…হ্যা হ্যা অনেক কিউট। তা কোথায় পেলে ওকে।

…আরে এখানেই তো ছিল। বেচারা, মনে হয় ওর মা বাবার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।

আদিত্য বলে উঠলো।
.…যাই হোক এখন ছেড়ে দেও ওকে।এদের শরীরে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তোমার ইনফেকশন হতে পারে।

নূর অবাক চোখে তাকিয়ে বললো।
…কি বলছেন আপনি? এতো ছোট বাচ্চাকে এভাবে ছেড়ে দিলে,যখন তখন শেয়াল কুকুর ওকে খেয়ে ফেলবে। না না ওকে একদম একা ছাড়া যাবে না।

আদিত্য কপাল কুঁচকে বললো।
…তো তুমি কি এখন এটাকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে নাকি?

নূর খুশী হয়ে বললো।
…হ্যা দরকার হলে তাই করবো। এমনিতেও ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কত্ত কিউট একটা
ছানা।

আদিত্যের এখন বিরক্ত লাগছে। এতো কিউট কিউট করার কি আছে? একটা ছানাই তো,তাকে আবার এতো আদর করার কি আছে?
নিজের ভাবনার উপর নিজেই অবাক আদিত্য। ওর কি এখন এই ছানাটার ওপরও হিংসে হচ্ছে? লাইক সিরিয়াসলি?

হঠাৎ নূরের খুশি মুখটা চুপসে গেলো। ওর বাস্তবতার কথা মনে পরে গেলো। নূরের ছোট মা কখনও এই ছানাকে বাসায় রাখতে দিবে না।ভাবতেই নূরের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এখন কি করবে ও? আর এই ছানাটারই বা কি হবে?

এসব ভাবতে ভাবতেই নূর মুখটা ছোট করে ছানাটাকে নিয়ে ব্রেঞ্চের এসে বসলো।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো নূরের দিকে। এইমাত্রই তো এতো খুশী ছিল। হঠাৎ কি হয়ে গেলো মেয়েটার?
ভাবতে ভাবতে আদিত্যও নূরের পাশে যেয়ে বসে, নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
…কি হয়েছে? মন খারাপ করলে কেন?

নূর কি বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যিটা তো আর উনাকে বলা যাবে না। নূর অসহায় ভাবে বললো।
…আসলে আমার ফ্যামিলিতে এসব কেউ পছন্দ করে না।তাই ওকেও রাখতে দিবে না। এখন ওর কি হবে?

নূরের এমন মন খারাপ হওয়া দেখে আদিত্যের একটুও ভালো লাগে না।একটু আগেই কতো খুশি মেয়েটা।আর এখন মন খারাপ করে আছে।আদিত্য নূরকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললো।
…আরে মন খারাপ করোনা। আমরা অন্য কোন উপায় বের করবো।তুমি চিন্তা করোনা।

নূর কিছু একটা ভেবে ফট করে বলে উঠলো।
…আপনি ওকে রাখবেন প্লিজ?

আদিত্য অবাক হয়ে নূরের দিকে বড়ো বড়ো করে চেয়ে বললো।
…আমিইই?

…হ্যা আপনি। আমি রাখতে পারবো না। কিন্তু আপনি তো রাখতে পারবেন তাই না?আপনার কি কোনো সমস্যা হবে ওকে রাখলে? প্লিজ রাখুন না?

আদিত্য পরেছে বিপাকে।ও কি বলবে এখন নিজেই বুঝতে পারছে না।এসব পেটস ওর কাছে ইরিটেটিং লাগে। কিন্তু এইমূহুর্তে না বললেও আবার নূরের মনটা খারাপ হয়ে যাবে।

নূর অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে আদিত্যের জবাবের আশায়। নূরের এমন চাহনি দেখে আদিত্যের না করার সাহস হয় না।ও রাজি হয়ে যায়।
…ঠিক আছে। আমার কাছেই রাখবো

নূর অনেক খুশী হয়ে যায়। একরাশ হাসি নিয়ে আদিত্যকে বলে।
…ধ্যাংক ইউ,ধ্যাংক ইউ সোওওও মাচ। আপনি সত্যি অনেক ভালো।

নূরের এমন খুশি দেখে আদিত্যের মনপ্রান জুড়িয়ে যায়। ওর মনে হচ্ছে এই মেয়েটার খুশির জন্য ও নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারবে।
নূরের কথায় আদিত্য ভাবনা থেকে বের হয়।

…তাহলে ও এখন থেকে আপনার কাছেই থাকবে। আপনি ওর একটু দেখাশোনা করেন। মাঝে মাঝে আমাকে একটু ওর ছবি তুলে দেখায়েন তাহলেই হবে।

আদিত্য ভাবছে কি দিন এসে গেলো।এখন আমাকে একটা খরগোশ ছানার দেখাশোনা করতে হবে। বাচ্ এটাই বাদ ছিল। আদিত্যের ভাবনার মাঝে নূর আবারো বলে উঠলো।
…তাহলে নিন, ওকে ধরুন।

আদিত্য হ্যা তো বলে দিয়েছে। এখন এটাকে ধরবে কি ভাবে।কিছু একটা ভেবে আদিত্য বললো।
….এক মিনিট দাঁড়াও।
তারপর পকেটে থেকে একটা টিস্যু বের করে সেটা দিয়ে আদিত্য ছানাটাকে ধরে কোনরকমে হাতের ওপর নিলো।
তারপর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…এইযে নিলাম। এখন খুশিতো?এখন ফটাফট তোমার কাজটা করে ফেলো।

নূর চুমু দিয়ে দেয়। আজকের চুমুটা ও খুশি হয়ে দেয়। আদিত্য সেটা বুঝতে পেরে নিজেও খুশি হয়ে যায়।
রোজকার মতোই নূর চুমু দিয়েই চলে যায়।

আদিত্য ওখান থেকে বেড়িয়ে আসতেই তাসির আর আবিরের সামনে পরে।আদিত্যের হাতে খরগোশ ছানা দেখে ওরা দুজনই চরম অবাক। আবির ভ্রু কুচকে আদিত্যকে বললো।
…ভাই তুই এটা কোথায় পেলি?আর তুইতো এসব পছন্দই করিস না।এমনকি আমাদেরও কখনো পেটস আনতে দিস নি।আর আজ নিজেই নিয়ে ঘুরছিস?দিস ইস নট ফেয়ার হাঁহ।
আদিত্য বিরক্ত হয়ে বললো।
…এই তুই থামবি?এতো কথা কিভাবে বলতে পারিস তুই?
তাসির বলে উঠলো।
…ওতো ঠিকই বলেছে আদি।আর তুই এটা কোথায় পেলি?
আদিত্য একটু ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে আমতা আমতা করে ওদের সবটা বললো।
সবকথা শুনে আবির আর তাসির কতক্ষণ একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হঠাৎ দুজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
আদিত্য ধমক দিয়ে বললো।
…সাট আপ।এখানে এতটাই হাসির কি হলো?

আবির কোনরকমে হাসি থামিয়ে তাসিরকে বললো।
…ইয়ার আমার না একটা কবিতা মনে পরেছে, শুনবি।

তাসিরও দুষ্টু হেসে বললো।
..জ্বি জ্বি অবশ্যই বলুন বলুন।

“জরিনা তোর প্রেমে আমার একি হলো হাল,
কখনো মালি,কখনো টিচার, কখনো হলাম রাখাল।”

তাসির নিজের ডান হাত মুখের সামনে নিয়ে বললো।
…ওয়াহ্ ওয়াহ্ ওয়াহ্…. একদম বাথরুম লেভেলের। আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য একটা বদনা এওয়ার্ড।

…শুকরিয়া দোস্ত। একমাত্র তুই বুঝলি আমার ট্যালেন্ট।🤧

এদের কান্ড দেখে আদিত্য বিরক্তির চরম পর্যায়ে। ও ভেবে পায় না এরা এতো ড্রামা কিভাবে করতে পারে। আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…তোরা কি আজ বাসায় যেতে চাস? নাকি হসপিটালে?

আদিত্যের গম্ভীর কণ্ঠের আলটিমেটাম শুনে, ওরা দুজন শুরশুর করে চলে যায়।

——————————-

বিকাল ৫ টা
নূর খাটে বসে একটু বই নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ এমন সময় রবি কোথা হনহন করে এসে নূরের পাশে খাটে বসে পরলো।নূর চেয়ে দেখলো রবি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। চোখে মুখে কেমন রাগ ফুটে উঠেছে। নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কি হয়েছে ভাই? এমন গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?

রবি বললো।
…কারণ আমি রেগে আছি। ওর সাহস কি করে হলো?

…কার সাহস কি করে হলো?কার কথা বলছিস তুই?

…কার কথা আবার,ওই নিনার কথা বলছি।

…কেন? ও আবার কি করলো? ও না তোর ফ্রেন্ড?

…ফ্রেন্ড না। বলো গার্লফ্রেন্ড। আর ও কি করেছে জানো?আমি মানা করার পরেও ওই দিপুর সাথে খেলেছে। আবার ওর দেওয়া চকলেটও খেয়েছে।

…তাতে কি হয়েছে?একসাথে পড়াশোনা করলে সবার সাথেই মিশে থাকতে হয়।এতে এতো রাগ করার কি আছে?

নূরের কথা শুনে রবি নূরের দিকে এমন ভাবে তাকালো,যেন নূর বিরাট একটা ভুল কথা বলে ফেলেছে। যেন এমন কথা নূরের কাছ থেকে একদমই আশা করেনি সে।রবি অবাক হয়ে নূরকে বললো।
…কি বলছ এসব আপু?ও সবার সাথে কেন মিশবে? আমার গার্লফ্রেন্ড শুধু আমার সাথে মিশবে। হ্যা চাইলে মেয়েদের সাথে মিশতে পারে, কিন্তু ছেলেদের সাথে কোনো মিশবে?এটা আমি কখনোই মানব না।

নূর রবির কথা কিছুই বুঝলো না।ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…মানে?কি বলছিস তুই? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

…উফফ আপু তুমিনা আসলেই একটা বোকা।কিছুই বোঝনা। একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে পছন্দ করে। তখন সেই ছেলেটা কখনোই ওই মেয়টার অন্য কোন ছেলের সাথে মেলামেশা পছন্দ করে না।

নূর একটু কৌতুহল নিয়ে বললো।
…সত্যিই??

রবিও একটু ভাব নিয়ে বললো।
..অবশ্যই।আর এটা শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে না, মেয়েদের ক্ষেত্রেও হয়।এটাকে বলে জেলাসি,হিংসা, রাগ,একদম জ্বলে পুড়ে যাওয়া অবস্থা।

নূর খুব মনযোগ দিয়ে রবির কথা শুনছে। মনে হচ্ছে রবি কোন বিজ্ঞ জ্ঞানী ব্যক্তি। আর নূর তার শীর্ষ। যে তার গুরুর কথা একদম মন লাগিয়ে শুনছে।

কিছুক্ষণ পর রবি চলে গেলো। নূর বসে বসে ভাবছে, আজ ভার্সিটিতে আদিত্যও তো এমন রেগে গিয়েছিল। তাহলে কি উনিও আমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখে রেগে গিয়েছিল। তার মানে কি উনিও আমাকে..?? না না কি ভাবছি আমি এসব? উনি কিভাবে আমাকে পছন্দ করতে পারে? কিন্তু রবি যে বললো…?? ধূরর আমি একটু বেশিই ভাবছি।এই রবিটাও না আমার মাথায় কিসব উল্টো পাল্টা জিনিস ঢুকিয়ে দিয়ে গেল।

রাত ৯ টা
আদিত্য খরগোশ ছানার জন্য একটা বাস্কেট নিয়ে এসেছে।বাস্কেটের ভেতর ছোট্ট গদি পেরে ছানার জন্য সুন্দর বিছানা বানিয়ে দিয়েছে। আদিত্য কোন রিস্ক নিতে চায়না। তাই বিকালেই পশু ডাক্তারের কাছে যেয়ে ছানাকে টিকা দিয়ে নিয়ে এসেছে । বাসায় এসে আগে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করিয়েছে ছানাকে। তারপর খাবার খাইয়ে গদি বিছানো বাস্কেটে শুইয়ে দিয়েছে। আদিত্য আজ পর্যন্ত এতো এফার্ট ওর বড়ো কোনো বিজনেস ডিলেও করেনি।আদিত্য ছানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…তুই কতো বড়ো ভি আই পি পারসন জানিস?সয়ং সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য তোর সেবা করছে। আর কি লাগে তোর?তারপর মুচকি হেসে শুয়ে পরে। রোজকার মতো নূরের চেহারা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরে।

নূর বিছানায় শুয়ে শুয়ে রবির বলা কথাগুলো ভাবছে।উপরে উপরে যতই না না করুক। মনে মনে কোথাও না কোথাও এটা ভেবে খুশি লাগছে যে,আদিত্য হয়তো ওকে পছন্দ করে।

——————————-

সকাল বেলা নূর সব কাজ শেষ করে ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছে।
আজ হঠাৎ নূরের একটু সাজতে ইচ্ছে করে। তানি নূরকে সাজগোজের অনেক জিনিস মাঝে মধ্যেই কিনে দেয়। নূর মানা করলেও শোনেনা।জোর করেই কিনে দেয়। কিন্তু নূর ওগুলো কখনোই ব্যবহার করেনি। আসলে তেমন কোন সুযোগই হয় নি।তবে আজ কেন জেনো একটু সাজতে ইচ্ছে করছে ওর।
নূর মুখে একটু স্নো দেয়। তারপর চোখে একটু কাজল দেয়। ঠোটে হালকা পিং কালারের লিপস্টিক দেয়।ব্যাচ্ এটুকুতেই যেন অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।নূর আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। কেন লজ্জা পায় তা ও নিজেই জানে না।

ভার্সিটিতে এসে নূর দেখে তানি একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। নূর ওর দিকে এগিয়ে যায়। তানির কাছে এসে নূর তানিকে বলে।
…কখন এসেছিস?

…এইতো এক….
তানি আর কিছু বলতে পারে না। নূরের দিকে তাকিয়ে ও হা হয়ে যায়।
নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কিরে কথা বলছিস না কেন? এমন হা করে আছিস কেন?

তানি বিস্ময় নিয়ে বললো।
…আফা আপনে কেডা?আফনারে তো চিনবার পারলাম না। আমগো নূর কই গেলো গা?

নূর একটু বিরক্ত হয়ে বললো।
….এই কি বলছিস এসব?পাগল হয়ে গেছিস?
তানি দুষ্টু হেসে চোখ টিপ দিয়ে বললো।
…জানেমন,পাগল আমি না।পাগল তো আজকে অন্য কেউ হবে মনে হচ্ছে। যা লাগছে তোকে, একদম ফাটাফাটি।

নূর লজ্জা পেয়ে গেল। মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বললো।
…এ এএমন কিছুই না।তুই একটু বেশি বেশি বলছিস।সামান্য একটু কাজল আর লিপস্টিকিই তো দিয়েছি। এ আর এমন কি?

….হুম সময় হলেই বুঝবি।বেশি বলছি না কম বলছি।

…আচ্ছা হয়ছে এখন চল ক্লাসে যাই।

…হুম হুম চল। দেখিস আজ ক্লাসের সব ছেলেরা তোর দিকে কেমন তাকিয়ে থাকে।

নূর হালকা রাগ দেখিয়ে বললো।
…থামবি তুই? চল এখন।
নূর তানির হাত ধরে নিয়ে যায় ক্লাসে।

———————————

নূর ক্লাস শেষে ওদের দেখা করার জায়গায় এসেছে।নূর পেছন থেকে দেখতে পাচ্ছে, আদিত্য ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে।
নূরের বুকের ভেতর হঠাৎ ধুকধুক করছে। হার্টবিট অনেক জোরে জোরে চলছে। নূর লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল।
আদিত্য বসে ফোনে কি যেন করছিল। নূর এসে দাঁড়াতেই, আদিত্য বুঝতে পারে নূর এসেছে। ও ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো।
…বসো।
নূর আস্তে করে বসে পরলো।
আদিত্য ফোনটা রেখে বললো।
…কেমন আ….
আর বলতে পারলো না আদিত্য।নূরের দিকে তাকাতেই ও থমকে গেল। চারপাশে সব শুন্য হয়ে গেলো। হার্টবিট প্রচন্ড গতিতে বাড়তে শুরু করে দিল।হা করে চেয়ে রইল নূরের দিকে। এই অতি সামান্য সাজেও কাওকে এতো সুন্দর কিভাবে লাগতে পারে।

আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ওড়নার কোণা ধরে আঙুল দিয়ে প্যাচাতে লাগলো আর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
নূরের লজ্জায় লাল আভা ছড়ানো মুখটা যেন আরো সৌন্দর্য হাজারগুন বারিয়ে দিয়েছে।
আদিত্য তাকিয়ে আছে তো আছেই। আর কোন হুশ জ্ঞান নেই। নূরের ডাগর ডাগর চোখে কাজল দেওয়াতে চোখ দুটো আরো অপূর্ব লাগছে।
হঠাৎ করে আদিত্যের চোখ গেল নূরের ঠোঁটের দিকে। পিংক কালারের লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট দুটো দেখে আদিত্যের সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো। গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকনো ঢোক গিললো আদিত্য।প্রচুর গরম লাগছে ওর। শরীর দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে।
আদিত্য এখনো নূরের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর তিব্র ইচ্ছা জাগছে নূুরের ওই পিংক রসালো ঠোঁট দুটো ছুয়ে দেওয়ার। নাহ আর পারছে না আদিত্য।এক ঝটকায় অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল আদিত্য। হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে নিয়ে নিজেকে অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
আদিত্য চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই নূরকে বললো।
…চুমু দিয়ে চলে যাও তুমি।

নূর একটু অবাক হলো। এমন করে চোখ বন্ধ করে কথা বলছেন কেন উনি?নূরের কেন যেন হালকা মন খারাপও হলো।
নূর চুমু দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়াতেই আদিত্য খপ করে নূরের হাতটা ধরে ফেলে। নূর ভীষণ লজ্জায় পরে যায়। নূর লজ্জায় আর আদিত্যের দিকে ঘুরে তাকায় না
উল্টো দিকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকে।
আদিত্য নূরের হাত ধরে থেকে বলে।
…আর কখনো আমার সামনে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে আসবে না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। কোন ভুল করে বসবো।কথাটা বলেই আদিত্য নূরের হাত ছেড়ে দেয়।
নূর লজ্জায় আর এক মূহুর্তও দাড়াতে পারে না ওখানে। দৌড়ে চলে আসে ওখান থেকে।

আদিত্য ঠোট কামড়ে হাসে।গালে হাত দিয়ে একটু মুছে নিয়ে হাত টা সামনে আনে আদিত্য। দেখে ওর আঙ্গুলের সাথে নূরের লিপস্টিক লেগে আছে। আদিত্য আঙুল নিয়ে নিজের ঠোঁটের ওপর রাখে।তারপর নূরের লিপস্টিকের ওপর চুমু খায়।তারপর বিড়বিড় করে বলে।
..পাগল করে দিবে তুমি আমায় নূরপাখি।💘💘

চলবে……