ভালোবাসা_কেবল_শুরু পর্ব -১৬

0
1713

ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -১৬
#লিখা -নীলকন্ঠী

“যেই দিন জেনেছে এই মন তুমি যে আমার
সেই থেকে যা এ মন সবই যে তোমার
বেদনা মধুর হয়ে যায়
তুমি যদি দাও
বেদনা মধুর হয়ে যায়
তুমি যদি দাও।”

গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে টেবিলের সব গুছিয়ে ফেললো রুহি। শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ানোর আগেই শাশুড়ির সাথে দেখা করতে এলো সে।

—শোবার ঘর এখন থেকে আর আলাদা যেন না হয়। জানিস তো এক সাথে থাকতে গেলেই মায়া বাড়ে। তোরা দুজন দুজন কে ভালোবাসিস ঠিক ই কিন্তু কোথায় যেন একটা বাধা! আদি কে কখনো একা ছাড়িস না ।যা এবার ঘুমাতে যা।

লজ্জায় কুকড়ে উঠে রুহি। এতদিন এ বাসায় ছিলো, সে আদির রুম দখল করে ছিলো। আদি বাসার ড্রয়িং রুমের পাশের গেস্ট রুমেই ছিলো। চেয়েছিলো হয়ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেভাবে ধীরে সুস্থে এগুচ্ছে সেভাবেই এগুতে থাকুক।

শাশুড়ি মায়ের সাথে কথা শেষ করেই রুহি রুমে আসে। শাড়ি পাল্টে একটা ঢিলা ঢালা গোলাপী থ্রি পিস পরে। বাথরুম থেকে বের হয়েই দেখে আদি সব জিনিস পত্র গুছ গাছ করে বের হউয়ার জন্য প্রস্তুত। এক পলক রুহি কে দেখে মুগ্ধতায় ভরে উঠলো মন। একটা মানুষ কে একেক সময় একেক রকম কিভাবে লাগে। এই যে কিছুক্ষণ আগেই পুরো একটা বউ বউ ভাব লাগছিলো , আবার এখন কেমন শান্ত স্নিগ্ধ লাগছে।

রুহির কাছ থেকে দুরে থাকতে ইচ্ছা হয়না। কিন্তু সেদিনের দৃশ্য ভাসলেই নিজের ইগোর সাথে আর পেরে উঠা যায় না। আদি সব টাই শুনেছে সেদিনের কথা। তবু তার সময় প্রয়োজন, নিজেকে বোঝার আর অবশ্যই রুহি কে বোঝার।

—কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি! এই যে, এই ভদ্রলোক, কোথায় যাচ্ছেন, তল্পিতল্পা নিয়ে।

আদি কোন উত্তর না দিয়ে বের হতে নেয়,দরজা আটকে রুহি দরজায় দাড়িয়ে পড়ে।

—-কথার উত্তর চাই। কি? কথা বলা যায় না আমার সাথে?

—-দেখো রুহি আমি স্ট্র্যাট কিছু কথা বলি। আমার এখনো মনে হয় তুমি ঘোরের মাঝেই আছো। আমি ইজি হতে পারছিনা। টাইম লাগবে আমার। তুমি ভেবে দেখো। তোমার ফিউচারের জন্য যা ভালো মনে হবে তাই করো। কারো প্রেশারে আমার এখানে থাকার প্রয়োজন নেই।

আদি আর দাঁড়ালো না। হন হন করে হেঁটে চলে এলো গেস্ট রুমে।

কেন বললো সে এসব! সেকি সত্যি ই রুহির কাছ থেকে দুরে থাকতে চায়? সে নিজেই তো মন কে সান্তনা দিতে পারে না এই ভেবে যে রুহি তার পাশে থাকবে না, এটা সে ভাবতেই পারে না। এভাবে মান অভিমান নিয়ে কত দিন থাকা যায়। একটা ভুল কে ধরে বসে থাকবে কত দিন?

মধ্যরাত্রি! রুহি এখনো ঘুমাতে পারেনি। কস্ট হচ্ছে। ভীষণ কস্ট হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষের অবহেলা না তাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না কোন প্রকার শান্তি দিচ্ছে। হালকা বাতাসে গাছের পাতারা শব্দ করে উঠছে। ধীর পায়ে রুহি আদির রুমের দিকে এগুলো। কপালে হাত রেখে কেমন ক্লান্ত শান্ত হয়ে আদি ঘুমাচ্ছে।

আদির কি মনে নেই আজ থেকে এক বছর আগে রুহি আদির বউ হয়েছে। একটা বার কি আজ রাতে গল্প করার ছলে ও থাকা যেতো না? গুটিশুটি মেরে আদির পাশেই শুয়ে পড়লো রুহি। আদি কে জড়িয়ে ধরতেই আদি নড়েচড়ে উঠলো। আদির বুকের বা পাশের যে ধ্বনি বাজছে সেটা কি শুধু রুহির জন্যই?সাহস করে রুহি আদির বুকে মাথা রাখলো।

—কি করছো রুহি? কেন এসেছো এখানে?

—-তাহলে কোথায় যাবো? আমি তো ঠিক জায়গাতেই এসেছি। যেখানে হয়ত আমার আরো আগেই আসা প্রয়োজন ছিলো।

আদি কিছু বলছে না। রুহি মুখটা তুলে বোঝার চেস্টা করলো,

—তুমি কি এখনো রেগেই থাকবে? কিছু তো বলো?

—-এত রাতে আসা ঠিক হয়নি তোমার।

—কেন ঠিক হয়নি! বলো?

আদি চুপ হয়ে রুহি কে উঠানোর চেষ্টা করলো। তুমি যাও রুহি। আমি চাইনা তুমি আর কোন ভুল করো। সব টা ভেবে দেখো আমাকে বিয়ে করেছো সম্পুর্ন ঝোঁকের মাথায়। হয়ত আবেগ দিয়ে এখন আবার ফিরে এসেছো, না হয় আমাদের আম্মুদের কথায়।

রুহির দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আদির সেই জল মুছতে ইচ্ছা হচ্ছে না। কাঁদুক, যত ইচ্ছা। নিজেকে বুঝতে একটু কান্নার প্রয়োজন, ভাবনার প্রয়োজন।

রুহি ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, এমন ধারণা আমার সম্পর্কে? আচ্ছা আমাদের সম্পর্ক টা কে কি কখনো আমরা সুযোগ দিয়েছি? ভেবে বলুন। কখনো আপনার অভিমান কখনো আমার অভিমান কখ‌নো ভুল বোঝা বুঝি। আমরা নিজেদের জানতে পেরেছি কতটুকু?

আদি চুপ হয়ে রুহির কথা শুনছে। যত টুকু ইম্মেচিউর ভেবেছিলো রুহি কে এত টা না । আসলেই কত টুকু রুহি কে বুঝেছে। আদি রুহি কে সরিয়ে উঠে বারান্দায় চলে গেলো। রুহি ও পিছন পিছন গিয়ে দাঁড়ালো ।

–এখনো চুপ হয়ে থাকবে?

—আগে ঠিক করো তুমি করে বলবা নাকি আপনি করে বলবা? এই তোমার তুমি আপনি তে সব গুলিয়ে যায়। আর প্লিজ কাঁন্না থামাও। এই একটা জিনিসে আমি বেশ দুর্বল।

—-তুমি না চাইলে আর কখনো তোমার কাছে আসবো না। প্রতিবার ই তোমার অবহেলা নিতে কস্ট হয় আমার। যেদিন তুমি আপন করে নিবে সেদিন ই কেবল আসবো আমি।

—অনেক রাত হয়েছে রুহি। তোমার রুমে যাও।

রুহির ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছিলো আদি কে জরিয়ে ধরতে। হয়ত আদির ও হচ্ছিলো। অভিমান গুলোই এমন। কাছে আসতেও দেয় না দুরে থাকতেও দেয় না । শুধু কস্ট ই পেতে দেয়। রুহি আর দাঁড়ায় নি। ছুটে চলে এসেছে নিজের রুমে। বাকি রাত টুকু আর কারো চোখে ঘুম আসেনি । অথচ এক জন আরেক জন কে কাছে টেনে নিলেই হয়ত এখন দু জনের চোখ জুরেই প্রশান্তি বিরাজ করতো।

চলবে ……

বিঃদ্রঃ আপনাদের অপেক্ষা করানোর কোন ইচ্ছা ই নেই আমার। একান্তই অপারগ হয়েই আমি এত দেরি তে গল্প দিচ্ছি। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।